সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
পর্ব_১৩৭
নুরের চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝরছে ।কোন কথা বলতে পারছে না ।যেন একদম স্থির হয়ে গেছে ।যেমন নদীর পানি একদম স্থির কোন ঢেউ নেই কোন গতি নেই ।কোন কিচ্ছু নেই ।চুপচাপ স্থির হয়ে বসে আছে শুধু চোখ বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে নূরের।
নুর কখনো মা হতে পারবে না এটা মানতে নূরের এত কষ্ট হচ্ছে তাহলে সাদাফ ভাই যখন জানবে নুর মা হতে পারবেনা সাদাফ ভাই কি করবে ?নিশ্চয় অনেক কষ্ট পাবে !সারা জীবন নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে সাদাফ ভাই এই কষ্ট মেনে নিবে নূর জানে।
এটাও তো জানে সাদাফ ভাই বাচ্চা কত পছন্দ করে ।বলেছিল বাচ্চা আব্বু বলে ডাকবে সাদাফ ভাইয়ের খুব শখ ।এখন কি হবে ?নূর যে সেই সখ কোনদিনও পূরণ করতে পারবে না। সাদাফের বাবা ডাকার ইচ্ছা কখনোই নূরের মাধ্যমে পূরণ হবে না ।কি করে নূর এই অপূরণীয় ক্ষতি মেনে নিবে ?যে ক্ষতি কোনদিনও সাদাফের নূর পূরণ করতে পারবে না। Nurun Nahar Nila
সবকিছু তো ঠিক ছিল কত সুন্দর সুখে শান্তিতে যাচ্ছিল ।হঠাৎ করে কেন এমন ঝড় নেমে আসতে হলো নূরের জীবনে ?নুর শুধু ভাবছে !উপরের দিকে তাকাল ।আল্লাহর কাছে অভিযোগ করার ইচ্ছে তো নেই কিন্তু আল্লাহর কাছে যেন মনে মনে বলছে ,”আমার সাথে কেন এমন হলো ?কেন আমি মা হতে পারব না ?অন্য কোন অসুখ তো আমাকে দিতে পারতো !এই অভিশপ্ত অসুখ আমাকে কেন দিল আল্লাহ যেখানে উপর থেকে দেখলে তো মনে হবে সুস্থ কিন্তু ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যাবে।
যখন সবাই জানবে তখন সবাই কত আফসোস করবে ।নুরকে সান্ত্বনা দিবে ।কেউ নূরকে অবজ্ঞা করবে ।কেও বানজা বলে খোটা দিবে। কি করবে নুর ?সাদাফ ভাই বা কি করে মেনে নিবে নুরের এই কষ্ট!
আচ্ছা সাদাব ভাই যখন বাহিরে যাবে ১০ জনের সাথে মিশবে সবার কোলে বাচ্চা দেখবে তখন কি সাদাফ ভাইয়েরা আফসোস হবে না ?উনিও চাইলে বাবা হতে পারতো কিন্তু নূর মা হতে পারবেনা তাই সাদাব কোনদিনও বাবা ডাক শুনতে পারবে না।
নুর মুথ বুজে দুহাত দিয়ে চিৎকার করে উঠলো। কিন্তু কেও শুনতে পেলনা নুরের আত্ম চিৎকার।
এদিকে ফজলুর রহমান তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে ।সাদাফ শক্ত হয়ে থাকার চেষ্টা করলেও ভিতরে ভিতরে কেমন যেন ভয় লাগছে সাদাফের ।না জানি আব্বু কি বলবে ?কি শোনার জন্য অপেক্ষা করছে ?সাদাফ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে।
ফজলুর রহমান কোন ভনিতা করলেন না । হুমায়ন রহমানের দিকে তাকালেন ।একবার তাকিয়ে সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললো,” নূর যদি কখনো মা হতে না পারে তারপরও কি তুই নূরকে এখন যেভাবে ভালোবাসছিস সেইভাবে ভালোবাসা আর সম্মান দিয়ে মেনে নিবি?”
সাদাফ চমকে তাকালো হুমায়ূন রহমানের দিকে ।যেন কিছু বোঝার চেষ্টা করছে দুই ভাই যুক্তি করে সাদাফের সাথে মজা করছে কি না। কিন্তু হুমায়ূন রহমানের চোখ দেখে সাদাফ বুঝতে পারল না ফান না। হুমায়ূন রহমান কি আগে থেকে জানে কিনা ভাবলো সাদাফ।
তারপর ঘুরে আবার ফজলুর রহমানের দিকে তাকালো।তাকিয়ে বলল কি বললো,” আমি কি ভুল শুনলাম আরেকবার বলো তো কি বললে? আমি মনে হয় ঠিক মত শুনতে পাইনি !আরেকবার বলতো আব্বু নূরের কি হয়েছে?”
ফজলুর রহমানের ভিতরে কান্না যেন দলা পাকিয়ে আসছে ।যেন গলার শ্বাস রোধ করে রেখেছে কেও।বলতে পারছেন না ।আবারও শক্ত হয়ে বললেন ,”যদি নূর কখনো মা হতে না পারে তাহলে কি তুই নূরকে এইভাবে ভালোবেসে সম্মানের সাথে আগলে রাখবি যেমন এখন রাখতে চাচ্ছিস?”
সাদাফের পা দুটো থেকে যেন মাটি সরে গেল বা মাথার উপর থেকে যেন আকাশ কোথাও সরে গেল ।সাদাফ শুন্যে ভাসছে।আলগা লাগছে সব।যেন নিজেকে স্থির রেখে দাঁড়াতে পারছে না।
সাদাফের সামনে থাকা পিলারে সাদাফ শরীরে ভার ছেড়ে দিয়ে পিঠ ঠেকিয়ে বললো,” কি বললে তুমি ?নূর মা হতে পারবেনা ?কে বলেছে ?কোন ডক্টর বলেছে তোমাকে?”
“কে বলেছে কোন ডক্টর বলেছে সেটা বড় কথা নয় ।আমি বলছি আমার মুখের কথা শোন ।তুই কি করবি যদি এ কথা সত্যি হয়?” জানতে চাইলো সাদাফ।
সাদাফ এক মুহূর্ত দেরি না করে সাথে সাথে উত্তর দিল ,”এখানে আমার কিছু করা না করার প্রশ্ন কোত্থেকে আসে?সব কিছু আগে থেকে যেমন চলেছে তেমনি চলবে ।যেভাবে আমি আগেও নুরকে মাথায় করে রেখেছি এখন আমি নূরকে মাথায় করে রাখবো ।কিন্তু তোমাকে এই কথা কে বলেছেন ও মা হতে পারবেনা ?কোন ডক্টর বলেছে?”
সাদাফ হুমায়ূন রহমানের দিকে তাকিয়ে কান্না কান্না কন্ঠে বললো,” আমার তো কোন সমস্যা নেই বাবা ।নুরের বাচ্চা হোক না হোক আমার তাতে কোন সমস্যা নেই ।তুমি তো জানো আমার শুধু নুরকে দরকার ।এই পৃথিবীতে আমার আর কোন কিছু প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমার নূর ও তো এটা সহ্য করতে পারবেনা বাবা।ও তো শুনলে পা*গল হয়ে যাবে বাবা?
আমি সবকিছু হাসি হাসি মেনে নিব আমার কাছে এটা কোন বড় ব্যাপারই না ।আমার কাছে শুধু নুর ম্যাটার করে ।নুরকে আমি পেয়েছি আমার পৃথিবীতে আর কোন কিছু প্রয়োজন নেই কিন্তু নূরকে তো বোঝাতে পারবো না বাবা ?নুর তো ভেঙ্গে পড়বে ।ওকে কে বুঝাবে?
আল্লাহ আমাকে কেন কোন কঠিন অসুখ দিলো না বাবা ?কেন নূরকে এই সমস্যা দিতে হলো ?সমস্যাটা আমার দিত আমি বাবা হতে না পারতাম আমি জানি নুর আমাকে কখনো ছেড়ে যেত না ।কিন্তু নুরকে কেন দিতে হলে বাবা ?নুর তো ওর এই কমতি সহ্য করতে পারবে না। ও আমাকে বাবা ডাক শোনাতে ব্যর্থ এই অপূর্ণতা নূর মেনে নিতে পারবে না বাবা ।আমি জানি আমার নুরকে ও কোনদিনও সহ্য করতে পারবেনা ।”
বলে সাথে সাথে হুমায়ন রহমানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো সাদাফ।
ফজলুর রহমান সাদাফের কাধে হাত রাখলেন ।তারপর হাত রেখে বললেন ,”শক্ত হো সাদাফ।তুই আমরা যদি এভাবে ভে*ঙে পরি তাহলে নূরের কি হবে ?আমরা ওকে বাইরে নিয়ে যাব ভালো ভালো ডাক্তার দেখাবো ট্রিটমেন্ট করাবো ।আমি শুধু তোর অভিমত জানতে চেয়েছিলাম এখন আমার ভিতরে কোন সংশয় নেই।
নুর তোর ছিল তোরই থাকবে ।তোর হাতে আমি নুরকে তুলে দিব কিন্তু নুরকে কি করে সামলাবো আমার তো কিছুই মাথায় আসছে না সাদাফ। যেখানেই চিকিৎসা করাতে যাই না কেন নূরকে তো জানাতেই হবে ।ওকে না জানিয়ে তো চিকিৎসা করানো সম্ভব নয় ।এতদিন না জানিয়ে আমি ওকে এটা সেটা মিথ্যে বলে নানান বাহানায় ওষুধ খাওয়াতে পেরেছি ও ছোট ছিল ।এখনও ছোট নয় ।এখন ও বিবাহিত এখন ও সবকিছু বুঝবে সবকিছু জানতে চাইবে এখন ওকে আমি কি উত্তর দিব সাদাফ?”
সাদাফ ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে ঝরঝরিয়ে কান্না করে দিল ।এই ভয় সাদাফেরো ।সাদাফ জানে কারো কোন কিছু যায় আসে না নুরমা হতে পারল কি পারল না ।সাদাফের তো কিছুই যায় আসে না কিন্তু নূর ওর অনেক কিছু যায় আসবে কারণ সাদাফ জানে ছোট ছোট বাচ্চা অনেক পছন্দ ।নুর তো ভেবে ও রেখেছে বাড়ি ভর্তি বাচ্চাকাচ্চা হবে। ওর অনেকগুলো বাবু হবে ওতো এটা প্ল্যান করে রেখেছে সবগুলো বাবু বাড়িতে ঘুরে বেড়াবে ছোটাছুটি করবে।সব থেকে কিউট বাবুটা সাদাফ কে বাবা বলে ডাকবে ।মনে করতেই সাদাফে নিজের উপরে রাগ হলো কেন সেদিন বলল সাদাফের বাবা ডাক শুনতে অনেক পছন্দ ।মনে হচ্ছে নিজের কথা যদি নিজেই ফিরিয়ে নিতে পারত ! এখন তো নূর এটাই চিন্তা করবে সাদাফ কে কখনো বাবা ডাক শোনাতে পারবে না তাই ও যে নিজে নিজে হীনমন্যতায় ভুগবে।
আর কিছু ভাবতে পারছে না সাদাফ ।নিজের মাথার চুল নিজে খা*মচে ধরলো ।হুমায়ুন রহমান সাদাফ কে বললো,” সাদাস কেউ দেখে ফেলবে ।এই মুহূর্তে নুর ভিতরে গিয়েছে ।এই মুহূর্তে আমি চাচ্ছি না জানাজানি হোক ।আমরা আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলবো সব কিছু ঠিক করে নুরকে বুঝাবো তারপর চিকিৎসা শুরু করব।
এইভাবে যদি নূর শুনে যায় ওকে বুঝানো ওকে কন্ট্রোল করা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট হয়ে যাবে।”
সাদা বুঝতে পারল ।হুমায়ণ রহমান বা ফজলুর রহমান কি বলছে ।চোখের পানি মুছে নিল সাদাফ।তারপর ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”আব্বু আমার কোন সন্তান প্রয়োজন নেই ।তোমরা তো জানো আমাকে ছোটবেলায় দেখে থেকে দেখেছো ।আমার শুধু নুরকে প্রয়োজন ।নুরকে আমার হাতে দিবে না আমার কাছে রাখবে না এ কথা স্বপ্নেও ভেবো না ।এরপরে নূরের জন্য কি করা উচিত নুরকে কিভাবে বুঝাবো কিভাবে চিকিৎসা করব সবাই মিলে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব ।কিন্তু নূরকে আমার কাছ থেকে দূরে রাখবে এ কথা স্বপ্নেও কখনো ভেবো না বাবা ।তাহলে আমি ম*রে যাব সত্যি!”
ফজলুর রহমান সাদাফের হাত ধরল ।ধরে আশ্বস্ত করলো ,”তুই আমার ছেলে ঠিক সেমনি নুর আমার মেয়ে ।আমি কখনোই নূরকে তোর কাছ থেকে আলাদা করব না ।হয়তো করতামও না শুধু নূরের এই সমস্যাটার কারণে আমি চাচ্ছিলাম না তোকে কিছু না বলে নুরকে তোর হাতে তুলে দিতে ।এখন আমি আশ্বস্ত হয়েছি ।নূর তোর ছিল তোরই থাকবে।”
তারপর সাদাফের দিকে তাকিয়ে ফজলুর রহমান আরও বললেন ,”আমাকে ক্ষমা করে দে ।শুধু নূরের এই সমস্যার কারণে আমি ইচ্ছে করে তোকে বাড়ি থেকে বের করেছি ।যাতে নূরের সাথে তোর ঘনিষ্ঠতা কম হয় ।যদি এক পারসেন্ট ও চান্স থাকতো যে তুই মেনে নিবি না শুধুমাত্র সেই সম্ভাবনার জন্য নূর যেন তোর প্রতি আসক্ত হয়ে না যায় তাই তোকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি।”
সাদাফ বললো ,”ক্ষমা চাইতে হবে না বাবা। আমি জানি আমার ভালোর জন্য করেছো।”
ফজলুর রহমান বললেন ,”তাহলে আজ থেকে এ বাড়িতেই থাক ।আর যেতে হবে না ।”
সাদাফ বললো,” না এই মুহূর্তে না বাবা ।আমাকে দুটো দিন সময় দাও ।আমি দুটো দিন একটু একা থাকতে চাই। এই মুহূর্তে যদি আমি নূরের সামনে আসি হয়তো নূরকে দেখলে আমি নিজেকে নিজে ধরে রাখতে পারব না বাবা ।আর এই মুহূর্তে চলে আসলে নুরেরও সন্দেহ হবে হঠাৎ তোমরা কেন আমাকে মেনে নিলে তাই দুটো দিন সময় দাও।”
বলেই সাদাফ আর দাঁড়ালো না ।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না ।সাদাফেরা এখন একাকীত্ব প্রয়োজন ।নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া প্রয়োজন ।নূরকে কিভাবে মানাবে কিভাবে বুঝাবে সেগুলো বুঝতে সাদাফের একাকীত্বের প্রয়োজন।
রাত বাজে ১১ টা ।সাদাফ ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে নূরকে ফোন দিবে ।কিন্তু সাদাফের কন্ঠ ভেজা। কান্না করার কারণে গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে গেছে ।তাই ফোন দিবে কি দিবে না ভাবছে ।কিন্তু ফোন না দিলে নূর মনে করবে সাদাফ হয়তো ওকে ভুলে গিয়েছে ফোন দিচ্ছে না ।তাই ফোন করে ফেলল সাদাফ।
কয়েকবার রিং হলো কিন্তু নূর ফোন ধরছেনা ।সাদাফের এখন সন্দেহ হচ্ছে নুর কি ঘুমিয়ে গেল নাকি আবার অসুস্থ হয়ে গেল ?সাদাফ ব্যস্ত হাতে আবারো ফোন দিল ।এবার কয়েক রিং হওয়ার পর নূর ফোন ধরল ।সাদাফ ব্যগ্র কন্ঠে বলল ,”কতবার ফোন দিয়েছি কোথায় ছিলি তুই ?ফোন ধরছিলি না কেন?”
নূরের কন্ঠ শান্ত এবং স্থির ।একদিনেই নূর যেন একদম ম্যাচিউর মেয়ে হয়ে গেছে ঠিক সেরকম ।সাদাফ কে বললো,” কেন কোন কারণ ছিল কিছু বলবেন?”
সাদাফ অবাক হলো ।কিছু বলবে মানে ?”কারণ ছাড়া কি ফোন করা যায় না ?”জানতে চাইলে নূরের কাছে।
নূরের কান্না চলে আসছে ।গলা যেন কেউ ধরে রাখছে এরকম মনে হচ্ছে তাও কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,” হুম যায়তো বলুন শুনছি আমি।”
সাদাফের বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো ।নূরের কথা আজ এমন লাগছে কেন ?কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সাদাফ।
চলবে_
যারা নন ফলোয়ার আছেন গল্প পড়েন অবশ্যই গল্পটি ভালো লাগলে আমার আইডিটাকে ফলো দিয়ে রাখবেন।
সুখময়যন্ত্রনতুমি
neela_rahman
পর্ব ১৩৮
ফোনে কথা বলা শেষ করে সাদাফ ফোন কা*টলো ।নূর আজ একটু অন্যমনস্ক ছিল ।হ্যাঁ হুম ছাড়া তেমন কোনো উত্তর দিচ্ছিল না ।সাদাফ ভাবলো হয়তো ক্লান্ত টায়ার্ড এ কয়দিন অনেক রাত জেগেছে হয়তো ঘুম ধরেছে মেয়েটার।
তাই এই ব্যাপারটা বেশি ঘাটালো না ।কিন্তু সাদাফ চিন্তাও করতে পারছে না নূরের ভিতরে কি চলছে বা নুর কি জানে না জানে।
সাদাফের জানামতে নূর মাত্রই বাসায় গিয়েছে আজকে ।কেউ যেহেতু নুর কে বলেনি তাই এ বিষয়ে জানার কথা না ।তাই সাদাফে এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালো না ।সাদাফ আগামীকাল সকাল হলেই ফাইলপত্র নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে ।প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ডাক্তারের সাথে কথা বলবে নুরকে জানানোর আগে।
দেখবে অপারেশন ছাড়া কোথায় ভালো ট্রিটমেন্ট হয় ।প্রয়োজন পড়লে বাইরে দেশে ইন্ডিয়া অথবা অন্য কোথাও নিয়ে যাবে ।থাইল্যান্ড ও যাওয়া যায়।
হয়তো ডক্টর যতটা জটিল ভাবে বুঝিয়েছে অতোটা জটিল নাও হতে পারে ।তাই আশা ছাড়া যাবেনা ।পৃথিবীর প্রত্যেকটা কোনায় কোনায় যাবে সাদাফ তবু নুরকে মা হওয়ার সুখ দিতে চায়।
এদিকে নুর শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছে সাদাফের কথা ।নুর না হয় মা হতে পারবে না এটা নূরের অক্ষমতা কিন্তু সাদাফের সক্ষমতা থাকার পরও কেন বাবা হতে পারবেনা ?নূরের যে খুব কষ্ট হচ্ছে মেনে নিতে।
সবাই যখন জানবে নুরের অক্ষমতা সবাই কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে ?কিভাবে কষ্ট পাবে ?আত্মীয় স্বজন নূরকে কিভাবে খোচা দিবে ?এগুলো ভাবতেই নূরের ছোট্ট কোমল মন দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে বারবার।
যদি নুর সত্যি মা হতে না পারে চিকিৎসা করার পরও যদি অপারেশন করে জরায়ু অপসারণ করতে হয় তখন নূর কি করবে?
নূর তো জানে সাদাফের বাবা ডাক শুনতে কত ইচ্ছা ।কিছুদিন আগেই তো বললো সাদাফ। নুর আর কোন কিছু ভাবতে পারছে না ।দুই হাত দিয়ে নিজের মাথাটা চেপে ধরল ।ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে কাতরাচ্ছে ব্যথায়। ভালো লাগছে না কিছু নূরের। Nurun Nahar Nila
পরের দিন সকাল হতেই সাদাফ ভোর আটটার দিকে ফোন দিলো ফজলুর রহমানের মোবাইলে ।ফোন দিয়ে সাথে সাথে বললো,”আব্বু নূরের রিপোর্টগুলো ছবি থাকলে এই মুহূর্তে আমাকে ইমেইল করো ।আমি একটু ডক্টরের সাথে কথা বলবো ।আমার একজন পরিচিত ডাক্তার আছে আমার সাথে একসাথে আমেরিকা ছিল এখানে বাংলাদেশে এসে জয়েন করেছে।
ও হার্ট স্পেশালিস্ট কিন্তু ওর রেফারেন্সে এখানে আমি ভালো সব থেকে ভাল ডাক্তারকে দেখাতে চাচ্ছি।”
ফজলুর রহমানের মোবাইলে রিপোর্ট গুলো pdf করা ছিল তাই সাথে সাথে ইমেইল করে সেন্ড করে দিল সাদাফকে।
ফজলুর রহমান বললেন,” পেয়েছিস?আর বললো ,শোন বেশি চিন্তা করিস না ।ভিতরে ভিতরে এত কষ্ট পাস না যে নিজেই কলাপস হয়ে যাবি ।নুরকে কিন্তু তোকে সামলাতে হবে।”
সাদাফ বললো,” চিন্তা করো না আব্বু ।আমার কিছু হবে না ।নূরের জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমি সবকিছু করব ।তোমরা টেনশন করো না ।আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে ।নূরের দিকে খেয়াল রেখো ওকে সাবধানে রেখো ।যেন কিছু এই মুহূর্তে জানতে না পারে।”
বলেই ফোন রাখলো সাদাফ।রিপোর্টগুলো ইমেইল আসার সাথে সাথে সাদাফ দেখতে পারলো ।রিপোর্টগুলো নিজে কিছুক্ষণ গুগলে সার্চ করলো ।একটু জেনে নিলে নুরের কন্ডিশন সম্পর্কে।তারপর আবার সাথে সাথে উঠে রেডি হয়ে ডক্টরের উদ্দেশ্যে বের হল সাদাফ।
সাদাফ বসে আছে ডক্টর নয়নের চেম্বারে ।নয়ন রিপোর্ট গুলো বারবার দেখছে ।রিপোর্টগুলো দেখে বললো,” আমি এক কাজ করতে পারি বাংলাদেশে একজনকে রেফার করবো উনাকে দেখাবি ।তবে আমেরিকার একজন ডক্টর আছে এগুলোর জন্য স্পেশালিস্ট গাইনি বিভাগের ।আমি রিপোর্ট গুলো পাঠিয়ে দিব উনি কি বলে আমি তোকে জানাবো।”
সাদাফ বললো,” হ্যাঁ তাই কর তাহলে খুব ভালো হয় বুঝতেই পারছিস নুর আমার স্ত্রী বয়স অল্প ।আর তাছাড়া ও এখনো জানে না ওর কি সমস্যা হয়েছে?”
নয়ন সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললো,” বিয়ে হয়েছে কতদিন ?”
সাদা প্রথমে থতমতো খেয়ে গেল ।পরে বললো,” এই তো বেশিদিন হবে না আর দশ দিন হবে।”
নয়ন রিপোর্ট গুলো দেখতে দেখতে আবারো জিজ্ঞেস করল ,”একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি যদি কিছু মনে না করিস ?”
সাদাফ বললো হ্যাঁ কর।
নয়ন সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললো,” যেহেতু নূরের বয়স অল্প আর বিয়ে হয়েছে ।ফিজিক্যাল সম্পর্ক কি তোদের মধ্যে হয়েছে এখনো?”
সাদাফ বললো ,”এটার সাথে কি এটার কোন সম্পর্ক আছে ?”
নয়ন বললো,”না সবকিছু তো আমার জানতে হবে ।তোর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছে কিনা ?হওয়ার সময় নূরের কন্ডিশন কেমন ছিল ?ওর কি বেশি কষ্ট হচ্ছিল কিনা ?সবকিছুই একটার সাথে একটা জড়িত। অনেক সময় অল্পবয়সী কুমারী মেয়ে ফার্স্ট টাইম ফিজিকেল ইন্টারকোর্স এর সময় হালকা একটু ব্লিডিং হতে পারে ।কিন্তু নূরের যেহেতু এই অবস্থা ওর কি বেশি ব্লিডিং হয়েছিল কিনা তাই জানতে চাচ্ছি।”
সাদাফ কিছুই গোপন করলো না ।সাদাফ বললো ,”হ্যাঁ হালকা একটু ব্লিডিং হয়েছিল ।তবে যেহেতু পিরিয়ড থেকে সুস্থ হয়েছিল মাত্র দুই এক দিন তখনই ফিজিক্যাল ইনটিমেসি হয়েছে তাই অতটা ঘাটাইনি।আর অল্প বয়সী মেয়ে ইন্টারকোর্সের সময় ব্যাথা পাবে স্বাভাবিক।তাই বুঝিনি অতোটা।”
“দেখ ডাক্তারি ভাষায় বলি আর গ্রাম্য ভাষায় বলি যেহেতু কুমারী মেয়ে ফাস্ট টাইম ইন্টারকোর্সের সময় হালকা একটু ব্লিডিং হতেই পারে তবে সেটা কি তোর কাছে বেশি মনে হয়েছে নাকি কম মনে হয়েছে ?”জানতে চাইলো ডক্টর নয়ন।
সাদা বললো,” না একদমই অল্প ।যেটা একদম না হলেই নয়। মানে একদমই কম এতোটুকু লেখাপড়া বা জ্ঞান আমারও আছে ।জানি কোনটা বেশি কোনটা কম।”
“আচ্ছা ঠিক আছে দেখা যাক টেনশন করিস না ।আল্লাহ রোগ দিলে সেটার সমাধানও দিয়ে দিবে ।অবশ্যই এখানে না হোক অন্য কোথাও কারো না কারো মাধ্যমে অবশ্যই ভাবি কে সেফা দান করবেন আল্লাহ। আশা রাখা আশাহত হোস না ।মনের সাহস রাখ। তুই মনে যত সাহস রাখবি ভাবি শক্তি পাবে ভেঙে পড়বে না।
আর কোন রোগ আছে এটা জেনে আমি যদি দুর্বল হয়ে যাই চিকিৎসা আমাকে ততটা এফেক্ট করতে পারবেনা ।কিন্তু যদি মনে সাহস থাকে শক্তি থাকে তুই ভাবির পাশে থাকিস উনি যদি স্বইচ্ছায় সমস্ত চিকিৎসা নিতে পারে তাহলে আমি মনে করি চিকিৎসা অবশ্যই উনার ভালো ফল বয়ে আনবে।
তবে সব সময় বিশ্বাস রাখবি আমরা যতই উন্নত হয়ে যাই না কেন সন্তান দেওয়া না দেওয়া এটা আল্লাহর প্রদত্ত ।আল্লাহ যদি চায় দিবে আল্লাহ যদি না চায় তাহলে দিবেনা ।তাই তুই কখনোই ভাবির প্রতি কোন ভাবে অবিচার করিস না ।বয়স অল্প তুই যদি একটু অবহেলা বা সন্তানের প্রতি চাহিদা দেখিয়ে ফেলিস তাহলে হয়তো ওর ছোট্ট মনে আঁচড় কে*টে যাবে ।সব সময় এটা নিয়ে ভাবতে থাকবে ডিপ্রেশনে চলে যাবে।
আর একবার ডিপ্রেশনে চলে গেলে এই রোগ থেকে ভালো হলেও ডিপ্রেশন রোগ থেকে ভালো হবে না ।সে ক্ষেত্রেও কনসিভ করতে পারবেনা ।ওষুধে কোন প্রভাব পড়বে না।”
সাদাফ উঠে দাঁড়ালো ।নয়ন বললো,”তুই যা টেনশন করিস না ।আমি এখানে যে ডক্টর কে বলব ভাবিকে নিয়ে আসবি দেখানোর জন্য ।আর এই ইমেইল টা আমি অবশ্যই আমেরিকা পাঠিয়ে দিব দেখবো ও রিপোর্ট দেখে কি বলে ।অবশ্যই আশা রাখ ভাল কোন নিউজ আসবে।”
সাদাফ কথা শেষ করে চেম্বার থেকে বের হলো ।কেন যেন মনে হচ্ছে নুর অবশ্যই মা হতে পারবে ।ওর ভিতর থেকে ইনার ফিলিংস আসছে ।এখন নূরকে বোঝানোর পালা ।নূরকে যদি বোঝাতে পারে যদি সবকিছু সুন্দরভাবে মেনে নেয় তাহলে হয়তো চিকিৎসাটা করা সহজ হয়ে যাবে।
হসপিটাল থেকে বের হয়ে সাদাফ সাথে সাথে ফোন দিল নুরকে ।প্লান করেছে আজকে নুরকে ঘুরাবে ।নুরের মন সবসময় ভালো রাখার চেষ্টা করবে ।যেহেতু বাবারা মেনে নিয়েছে এখন আর কোন বাধা নেই ।নূর কয়েক রিং হওয়ার পর ফোন ধরল ।সাদাফ বললো,” নূর ?”
নূর বললো,” বলেন ।”
সাদা বললো,” চল রেডি হো তাড়াতাড়ি ।আজকে আমরা ঘুরতে যাবো।”
নুর কথা বলতে পারছে না ।কান্নাগুলো যেন দলা পাকিয়ে গলা চেপে ধরে রেখেছে ।নুরু কোনমতে বললো,” আমার ভালো লাগছে না আজকে ।ঘুরতে যাব না প্লিজ ।আমার অনেক ঘুম পেয়েছে আমি একটু ঘুমাই?”
সাদাফের বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো ।নূরের কন্ঠটা কান্না কান্না লাগলো কেন ?নাকি অসুস্থ ?নাকি এই দুই দিন রাত জাগার ফলে নুরের ঘুম পাচ্ছে ?সাদাফ কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না ।কিন্তু বুকের ভিতর কেমন যেন আনচান আনচান করছে ।মনে হচ্ছে সামনে ভয়ঙ্কর কোন বিপদ আসছে।
চলবে_
গল্প পড়ে অবশ্যই লাইক কমেন্ট শেয়ার করবেন ।এবং অবশ্যই আমার আইডিটাকে ফলো দিয়ে রাখবেন ।যারা নন ফলোয়ার গল্পটি পড়ছেন ফলো দিচ্ছেন না তারা অবশ্যই অবশ্যই ফলো দিয়ে রাখবেন।
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৯
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৩০+১৩১+১৩২
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১২৫+১২৬+১২৭
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৭
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১০৯+১১০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭+৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৪
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৩৫+১৩৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪