সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
neela_rahman
পর্ব_৬২
আজ হসপিটালে দ্বিতীয় দিন সাদাফের জ্বর কমে গিয়েছে তবে শরীর জাস্ট একটু দুর্বল আজকের দিনটা হসপিটালে রেখে ডিসচার্জ করে দিবে। সাদাফ এখন অনেকটা স্টেবল ।হঠাৎ এত জ্বর এবং ব্যাথা ধকলটা নিতে পারছিল না।
সামিয়া বেগম সাদাফের বেডের কাছে দাঁড়িয়ে আছে ।দাঁড়িয়ে আছে হুমায়ন রহমান ও ফজলুর রহমান।সাদাফ ফজলুর রহমান এর দিকে তাকিয়ে বললো,”আব্বু দাঁড়িয়ে আছো কেন বলছ না কেন?”
সাদাফের মুখ থেকে আব্বু ডাকটা শুনলে বরাবর ফজলুর রহমান গলে যায়। কাছে এসে আমতা আমতা করে বলল ,”কি অবস্থা তোর?”
সাদা অভিমানে নজরে হুমায়ূন রহমানের দিকে তাকালো তারপর চোখ ঘুরিয়ে আবার ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”যেমন খুশি তেমন থাকি ।কেউ যেন আমার জন্য কোন দরদ দেখাতে না আসে।”
ফজলুর রহমান জানেন সাদাফ অভিমান করেছে ।হুমায়ূন রহমান বলল ,”এভাবে কথা বলছিস কেন?”
সাদাফ নিশ্চুপ রইল ।বাবা চাচা দুজনের উপরেই অনেক অভিমান হয়েছে সাদাফের ।এই দুইদিন তারা কম ভোগাইনি ।এখন এসেছে দরদ দেখাতে তাই সামিহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”আম্মু আমি একটু পানি খাব পানি দাও।”নীলা রহমান লেখিকা
সামিহা বেগম দৌড়ে গেলেন পানি আনতে ।নওরিন আফরোজ দুপুরে খাবার আনার জন্য বাসায় গিয়েছে ।রান্না করে নিজ হাতে ছেলের জন্য খাবার আনবে তাই।
পানি এনেই সাদাফের হাতে দিয়ে বলল ,”নে বাবা পানি খা।”
সাদাফ মুচকি হেসে সামিহা বেগম এর কাছ থেকে পানি নিয়ে পানি খেলো ।তারপর ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল,” কি হয়েছে এখন কি চাই আমার কাছে ?দুই ভাই কি বুদ্ধি করে এসেছ?”
“আমরা দুই ভাই বুদ্ধি করেছি ?আর তুই যে অপরাধ করেছিস সেটা ?” বললো ফজলুর রহমান।
সাদাফ হুমায়ূন রহমান ও ফজলুর রহমানের দিকে পরপর চাইল ।তারপর বলল ,”অপরাধ মানে ?কি অপরাধ করেছি আমি?”
ফজলুর রহমান চুপ করে গেলেন ।এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলেন সামিহা বেগম এখানে আছে ।তাই আর কথা বাড়ালেন না । কথা বাড়ালে সামিহা বেগম এমনি সাদাফ এর নাম শুনতেই অজ্ঞান পরে আরো অজ্ঞান হয়ে যাবে।তাই বললেন ,”কি অপরাধ করেছিস নিজেই চিন্তা কর ।তুই নিজে এসে স্বীকার করবি তুই কি অপরাধ করেছিস?
সাদাফ চোখ তুলে তাকালো হুমায়ুন রহমানের দিকে ।সাদাফ এখন আসলে বুঝতে পারছে না কোন অপরাধের কথা বলছে ?এই সাত আট দিনে তেমন কিছু করেনি যেটা নিয়ে ছোট আব্বু কথা বলার কথা।
সামিহা বেগম এবার বললেন ,”থামবেন আপনারা ?ছেলেটা হসপিটালে এসেছে অবধি আপনারা দুজনের ক্লাস নিয়ে যাচ্ছেন ।কি করেছে আমার ছেলে শুনি ?আমাদের চোখে তো এরকম কিছু পড়লো না কোন অনুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে বসেছিলেন ওর অপরাধ দেখার জন্য?”নীলা রহমান
ফজলুর রহমান থতমতো খেয়ে গেলেন স্ত্রী সামিরা বেগমের কথা শুনে ।পর মুহূর্তেই আমতা আমতা করে বললেন ,”তোমাকে না বলেছিলাম তুমি আমাদের মধ্যে কথা বলবে না এটা হচ্ছে বাবা আর ছেলের মধ্যে কথা।”
সামিহা বেগম বললেন ,”রাখুন বাবা আর ছেলের মধ্যে কথা ! ছেলে টা অসুস্থ আর মোটেও ভাববেন না যে ওকে অসুস্থ পেয়ে যা ইচ্ছা তাই দুই ভাই বলে যাবেন ।আর সব কিছু ওর উপরে চাপিয়ে দিবেন ।ওর দুই মা এখনো আছে।”
ফজলুর রহমান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ।জানে স্ত্রী এবং ভাবি বা পরিবারের অন্য কারো সামনে সাদাবকে কিছু বলা যাবে না ।সবার অত্যাধিক প্রিয় এবং সবার নিকট অত্যাধিক ভদ্র একটা ছেলে সাদাফ। তবে হুমায়ূন রহমান জানে ছেলেটা কতো একরোখা জেদী। এখন ফজলুর রহমান ও জানে যতটুকু ভদ্র দেখা যায় ছেলেটা ততটুকু ভদ্র না মোটামুটি লেভেলের একটু বাঁ*দর আছে।
তাই সামিহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”ওকে ঘাট হয়েছে কিছু বলবো না তোমাদের ছেলেকে তোমাদের সামনে।”
সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”তোর সাথে পরে আমার একা একা পার্সোনাল কথা আছে।”
এদিকে নুর মামা মামির সাথে তোর জোর করে রাজি করিয়েছে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য ।মামাও রাজি হয়েছেন ড্রাইভার এর সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিবে ।যেহেতু মেয়েটা মন টিকছে না কোনভাবে ।তাই জোর করে তো আর বেড়াতে রাখা যায় না তাই ড্রাইভার করে নূরকে পাঠিয়ে দিলেন ।বাসায় ফোন করে নওরিন আফরোজকে জানিয়ে দিলেন ।নওরিন আফরোজা কাউকে জানায়নি যে নূর বাসায় চলে আসছে।
নুর নওরিন আফরোজের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল ,”আম্মু রান্না করছো কার জন্য ?আর বাড়ির সবাই কোথায় কোথায় গিয়েছে?”
নওরিন আফরোজ বলল ,”একটু পরে আমি এক জায়গায় যাব ।যাবি আমার সাথে ?খাবার আমি সেখানেই নিয়ে যাচ্ছি ।”
নুর আমতা আমতা করে বলল ,”আচ্ছা ঠিক আছে যাব ।কিন্তু বাড়ির সবাই কোথায় গিয়েছে আম্মু?”
নওরিন আফরোজ নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”সবাই সেখানেই আছে ।এজন্য তো বেশি করে খাবার নিয়ে যাচ্ছি ।তুই গিয়ে তাড়াতাড়ি গোসল করে রেডি হ। দুপুরে খাবার নিয়ে একবারে বের হব আমরা।”
নুর সাথে সাথে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে উপরে নিজের রুমের দিকে চলে গেল ।গিয়ে কাপড়চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো ।ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাদাফের সাথে বলা শেষ কথাগুলো মনে করতে লাগলো ।আর মাত্র ২০ দিন বলেছিল।তার মধ্যে ৩ দিন শেষ।আর ১৭ দিন।
ভাবতেই নূর ল*জ্জায় লাল নীল হয়ে গেল ।কি অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলছিল সাদাফ ভাই ।অফ হোয়াইট কালারের সাদা শাড়ি পড়তে বলেছিল খোপায় দিতে বলেছিল কাঠগোলাপ আর গলায় বেলী ফুলের মালা।আচ্ছা এগুলো নূর পাবে কোথায় ?এগুলো কি সাদাফ ভাই কিনে এনে দিবে?
ভাবতেই নিজে নিজে মুচকি হাসলো নূর ।তারপর ভাবল তাড়াতাড়ি গোসল করে বড় আম্মুর সাথে কোথায় যেতে হবে ।যাবে কিন্তু সাদাফ ভাই ফোন করছে না কেন ?ফোনও যাচ্ছে না কি হলো উনার সাথে কি বাড়িতে কারো সাথে যোগাযোগ নেই ?গোসল থেকে বের হয়ে বড় আম্মুকে জিজ্ঞেস করবেন নুর।
দুপুর ১:৩০ টা হসপিটালে ক্যাবিন এর ভিতর বসে আছে হুমায়ুন রহমান এবং ফজলুর রহমান ।খবরের কাগজ পড়ছে ।সাদাফের পাশে বসেই আপেল কে*টে কে*টে সাদাফ কে খাওয়াচছে সামিহা বেগম।
হপিটালের বাইরে গাড়ি থামতে নূর অবাক হয়ে গেল ।অবাক হয়ে নুর বললো,”এটা তো হসপিটাল বড় আম্মু? আমরা হসপিটালে কেন এসেছি ?আর খাবার কার জন্য নিয়ে এসেছি ?সবাই হসপিটালে কেন কার কি হয়েছে?”
নওরিন আফরোজ প্রশ্নের উত্তর দিবে তার আগে নুর আবারও বলল ,”উত্তর দিচ্ছ না কেন আম্মু ?কার কি হয়েছে বল ?সাদাফ ভাই এর কিছু হয়নি তো ?উনি তো দুইদিন ধরে কারো সাথে ফোনে যোগাযোগ করছেনা ।কথা বলছে না ।”
অদ্ভুত এক চিন্তা হতে লাগলো নূরের ।ভিতরে কেমন ছটফট করছে নুর।দুদিন ধরে খুব ছটফট করছিল নুর ।নওরিন আফরোজ আমতা আমতা করে বলল ,”থার্ড ফ্লোর ২৪ নাম্বার কেবিন।”কথাটি শুনেই নূর আর এক মিনিটও দেরি করল না সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমেই হসপিটালে ভিতরে দৌড় দিল।
ড্রাইভারের হাতে খাবার দিয়ে বললো ,”উপরে নিয়ে আসতে ।নউরিন আফরোজ ও সাথে সাথে নূরের পেছনে ছুট লাগালো। আর বলতে লাগলো পাগলামি করিস না নুর দেখে দৌড়া পড়ে যাবি আস্তে যা।”
নূরের সেদিকে কোন খেয়াল নেই ।হঠাৎ করে নূর যেন সবকিছু ভুলে গেলো।সব ছেড়েছুড়ে শুধু একটাই চিন্তা সাদাফের কাছে যে পৌঁছাতে হবে ।দুইদিন ধরে এমনি মনে অনেক কু গাইছিলো। শুধু কারো সাথে শেয়ার করতে পারেনি।
লিফ্ট তাড়াতাড়ি না পেয়ে নূর তিন তলা পর্যন্ত দৌড়ে উঠলো। হাঁপাতে হাঁপাতে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কাছে ২৪ নাম্বার কেবিন। রুম পর্যন্ত আসলে দেখলো রিমা এবং সাইমন বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
সাইমন আর রিমা নূরকে হঠাৎ এই সময় এভাবে দেখে অবাক হয়ে গেল ।পিছনে দেখল নওরিন আফরোজও আছে ।সায়মন কি বলবে বুঝতে পারছে না।নুর কারো কোনো কথাই শুনলো না সপাট করে দরজা খুলে ফেলল।
দরজা খুলেই নিজের চোখের সামনে দেখলো সাদাফ। হাতে কেনুলা করা বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে ।পাশে সিটে বসে আছে সামিহা বেগম ।নুর আর এদিক ওদিক কোথাও তাকালো না রুমের ভিতর হুমায়ূন রহমান ও ফজলুর রহমান আছে তাও খেয়াল করল না।
দরজা খোলার শব্দেই সাদাফ তাকিয়ে নূরকে দেখতে পেল ।সাদাফ মুখে আর কোন কথাই বলল না ।এক দৃষ্টিতে শুধু নূরের দিকে তাকিয়ে রইল।
সাদাফের বুকে এই দুই তিন দিন পর যেন একটু শীতল হাওয়া বইতে শুরু করল ।সাদাফ চুপচাপ রইলো আর কোন কথাই মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
নুরের ভিতরে এ কেমন লাগছে এই মুহূর্তে সাদাব কে এই অবস্থায় দেখে নূর বোঝাতে পারবে না ।আশেপাশে পরিবেশ সবকিছু ভুলে গেল নুর ।পাশে মা বসা আছে সবকিছু ভুলে গেল নুর ।রুমের ভিতর কেউ থাকতে পারে সেটা ভুলে গেলো নুর । নূর শুধু জানে ওর মনের ভিতর এই ছটফটানি এই অদ্ভুত অনুভূতি শুধুমাত্র সাদাফের কাছে গেলেই কমবে।আর এদিক ওদিক কোথাও না তাকিয়ে সোজা দৌড়ে সাদাফ এর কাছে এসে সাদাফকে জড়িয়ে ধরল নুর।
সাদাফ ব্যথা হাতে আরো ব্যথা পেলেও কিছুই বললো না।ধীরে ধীরে কেনুলা করা হাতটা তুলে নূরের মাথায় রাখল।
নুর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ।সাদাফ মাথায় হাত রাখতে যেন অদ্ভুতভাবে সবকিছু শান্ত হয়ে গেল নূরের ।চোখ বন্ধ করে ফেলল নুর।
চলবে………….
Neela Rahman
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৭
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৩+২৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৯
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি গল্পের লিংক