০৩
বিয়েবাড়ির মেহমানরা আসতে শুরু করেছে। আজকে এসেছেন আমার ফুফু, ফুফাতো ভাই বোনেরা। আমার মেজো আপাও বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে চলে এসেছে। সবার সঙ্গে গল্প আড্ডায় মুহুর্ত গুলো খুবই ভালো কাটছে আমার।
সন্ধ্যায় আসলো ছোট চাচা। সবাই জড়ো হয়ে চাচার মুখে বিদেশের গল্প শুনলাম। বাচ্চাকাচ্চারা মিলে চকোলেট নিয়ে কয়েক দফা কাড়াকাড়ি হয়ে গেলো।
রাতে ঘুমাতে এলাম চাচাতো, ফুফাতো বোনদের সঙ্গে। মেঝেতেও বিছানা করা হয়েছে। কেউ খাটে, কেউবা মেঝেতে জায়গা করে নিলাম। তারপর শুধু খুনসুটি আর হাসাহাসি। জীবনের এই দিনটার কথা আমার সবসময় মনে পড়বে।
সকালবেলা হাঁটতে বের হলাম কয়েকজন মিলে। কাঁচা রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ হাঁটবো। হঠাৎ দেখি একটা ভ্যান গাড়ি এদিকেই আসছে। ভ্যানে বসে আছে বাবরি চুলওয়ালা! এত সাত সকালে সে কিভাবে আসলো? এক পলক তাকিয়ে আমি আর ওনার দিকে তাকালাম না।
ছোট এক বোন ওনাকে দেখে “হাই” বলে হাত নাড়ালো। বাবরিচুল নিজেও হাত নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি অবস্থা?’
ভ্যানগাড়ি দ্রুত চলে যায়। আড়াল হতেই আমার নতুন আসা ফুফাতো বোনেরা জিজ্ঞেস করলো, ‘কে রে ওইটা?’
এক কাজিন উত্তর দিলো, ‘মীরা আপু ভালো জানে।’
এবার প্রশ্ন এলো আমার দিকে, ‘কি রে মীরা, তুই ভালো জানিস মানে? আমাদেরকে বলবি না? কে ওই ছেলেটা?’
আমি ভ্রুক্ষেপহীন স্বরে উত্তর দিলাম, ‘আব্বুর দোকানের স্টাফ।’
‘স্টাফ? এত হ্যান্ডসাম স্টাফও হয় নাকি? ওকে দেখার জন্য তো মেয়ে কাস্টমাররা প্রতিদিন আসবে।’
‘ও হ্যান্ডসাম?’
আমি ঠোঁট বাঁকা করে তাচ্ছিল্যের সুরে অন্যদিকে তাকালাম। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম অনেক দূর। গল্প করতে করতে আবারও ফিরে এলাম বাড়িতে।
এসে দেখি প্যান্ডেল সাজানো হচ্ছে। আজকে বিকেলে গায়ে হলুদ। খুবই ব্যস্ত ভঙ্গীতে ছোটাছুটি করে বিভিন্ন কাজ করছে বাবরি চুলওয়ালা। মনে হচ্ছে তার আপন বোনের বিয়ে! ব্যাপারটা ভালোই লাগছে আমার।
দুপুরের দিকে আমরা শাড়ি পরে সাজগোজ করছি। আমার ছোট ফুফুর শাড়ি ঠিক করে দিয়ে যখন কাঁধের ওপর পিন গুঁজে দিবো, ফুফু বললেন, ‘তোর জামাইকে দেখলাম।’
আমি ভাবলাম মজা করছে। মাঝেমাঝে বিভিন্ন বয়স্ক লোকদেরকে নিয়ে সবাই মজা করে আমার সঙ্গে। গুরুত্ব দিলাম না।
ফুফু আবারও বললেন, ‘ছেলেটা ভালোই আছে। মানাবে। তাই না রে?’
আমি ভাবলাম যে বোনটার বিয়ে হচ্ছে, তার কথা বলছে। বললাম, ‘ছেলেকে আমি দেখি নাই। তুমি দেখছো?’
‘তুই দেখিস নি?’
‘না। তুমি কোথায় দেখলা?’
‘বাইরে। প্যান্ডেলে কাজ করছে।’
বিয়ের বর কেন প্যান্ডেলে এসে কাজ করবে, আমার মাথায় ঢুকলো না। তবুও এক দৌড়ে জানালার কাছে এসে বাইরে তাকালাম। উঁকিঝুঁকি মেরে বোঝার চেষ্টা করলাম নতুন বর কোথায়? তেমন কাউকে দেখতে পেলাম না।
ফুফুকে বললাম, ‘দাঁড়াও দেখে আসি।’
‘কাকে দেখতে যাবি?’
‘নতুন জামাইকে।’
‘পাগল..’
ফুফু কী যেন বলতে যাচ্ছিলো। শোনার আগেই দৌড়ে বেরিয়ে এসেছি। প্যান্ডেলের কাজে ডেকোরেটরের লোকজন আর বাবরি চুল ছাড়া কেউ নেই। আমি সেখানে এসে এদিক সেদিক খুঁজছি। বাবরিচুল জিজ্ঞেস করলো, ‘কাউকে খুঁজছেন?’
আমি অন্যমনস্ক স্বরে উত্তর দিলাম, ‘নতুন জামাইকে দেখেছেন?’
‘কোন নতুন জামাই?’
‘যার বিয়ে হচ্ছে।’
‘উনি এসেছে নাকি?’
‘আসে নি?’
‘না।’
আমি চুপ করে ভাবতে লাগলাম ফুফু কেন আমার সঙ্গে এরকম মশকরা করলো! আবারও বাড়ির দিকে পা বাড়াবো এমন সময় বাবরি চুল বললো, ‘আপনি খোপায় গাঁদা ফুল গুজেছেন কেন? আপনার তো বিয়ে নয়।’
‘মেয়েরা হলুদের অনুষ্ঠানে এভাবে খোপায় গাদা ফুল দেয়।’
‘ওহ আচ্ছা। জানা ছিলো না। সুন্দর লাগছে।’
আমি চমকে উঠলাম। ছেলেটা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। যেন ক্ষণিকের জন্যও চোখের পলক ফেলবে না। তার চোখের ক্যামেরায় শুধু আমাকেই ফোকাস করা হয়েছে। দুনিয়ার আর কোনো কিছুই হয়তো সে দেখতে পাচ্ছে না। আমার দ্রুত হৃদস্পন্দিত হতে লাগলো। এক দৌড়ে পালিয়ে এলাম আমি।
বাড়িতে ঢুকে আর কারো সম্মুখে যেতে ইচ্ছে করছে না আমার। চুপচাপ একটা অন্ধকার রুমে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ছেলেটার চোখ দেখে আমার খুব অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে! অস্থির লাগছে বড্ড। যদিও এই দৃষ্টি আমার অচেনা। তবুও আমি জানি এর নাম কী! আমি অনেক বইতে পড়েছি, ঠিক এভাবেই গল্প উপন্যাসের নায়কেরা নায়িকার দিকে তাকায়। এভাবেই প্রেম হয়। তারমানে!
হঠাৎ আমার বাবার প্রতি আমার পরম শ্রদ্ধা জেগে উঠলো। এই কারণেই বাবা আমাকে ওর আশেপাশে যেতে নিষেধ করেছে। এবার বুঝলাম। বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসে এটা সত্যি। আমি যখন যা চাই, সেটাই এনে দেয়। কিন্তু তাই বলে যার তার সঙ্গে তো আর বিয়ে দিতে পারবে না। যদি হুট করে কোনো ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি, আর তাকে বিয়ে করতে চাই, বাবা তো না বলতে পারবে না। আর “না” বললেও আমি কষ্ট পাবো!
অনেক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পরে খেয়াল হলো “মীরা, মীরা” বলে কেউ ডাকছে। আমি এবার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলাম।
মেজো চাচী বললেন, ‘কই ছিলা?’
আমি চুপ করে রইলাম। চাচী বললেন, ‘মন খারাপ?’
‘না।’
চাচীর শাড়ির কুচি ঠিক করে দিতে বললেন আমায়। এই কাজটা আমি খুব ভালো পারি। তবুও এবার ঠিকঠাক ধরতে পারছি না। সবকিছু এলোমেলো করে ফেলছি। একসময় চাচী আমার হাত ধরে বললেন, ‘কী হয়েছে তোমার বলো তো?’
‘কিছু না তো।’
‘এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?’
‘এমনিই।’
‘মীরা, আমাকে বলো কি হয়েছে?’
‘আব্বুকে এতদিন ভুল বুঝতাম আমি। এখন মনে হচ্ছে আব্বুই ঠিক। আমার আসলেই কোনো যুবকের আশেপাশে যাওয়া উচিত না।’
‘কেউ কিছু বলেছে তোমাকে?’
‘না।’
‘আচ্ছা তুমি বসো। শাড়ি ধরতে হবে না।’
চাচী চলে গেলেন রুম থেকে। শুন্য ঘরে একা বসে রইলাম। অনেক্ষণ পর কল দিলাম আব্বুর নাম্বারে।
‘হ্যালো মীরা। বলো।’
‘আব্বু..’
‘হুম।’
আমি চুপ করে আছি। কয়েক সেকেন্ড এভাবেই কেটে গেলো। এরপর আব্বু বললেন, ‘কি হয়েছে মা?’
‘তুমি খুব ভালো।’
‘ধুর পাগলী। সব বাবাই ভালো।’
‘তুমি অনেক বেশী ভালো। কখন আসবা?’
‘এইতো পথে। রওনা দিয়েছি।’
‘সাবধানে আসো। আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসো। আর হ্যাঁ, এসেই আমার সঙ্গে দেখা করবা। আমি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরবো আব্বু। আই মিস ইউ।’
‘পাগলী মেয়েটা।’
আব্বু কল কেটে দিলেন। আমার মনটা ভালো হতে শুরু করেছে। আমি ঠিক করলাম আর কখনো ওই বাবরি চুলওয়ালার সামনে যাবো না। তাহলেই সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে। কোনোভাবেই ওনাকে আমার কিংবা আমাকে ওনার প্রেমে পড়তে দেয়া যাবে না।
এমন সময় আমার সেই ফুফু রুমে আসলেন। হাসিমুখে বললেন, ‘জামাইকে দেখে আসলি?’
‘তুমি মিথ্যা বলেছো কেন আমাকে? পাত্রপক্ষের বাড়ি থেকে কেউ আসেনি।’
‘কিসের পাত্রপক্ষ? আমি তো তোর জামাইয়ের কথা বলেছি।’
‘আমার জামাই কে আবার? মশকরা করিও না তো।’
ফুফু আমার কাছাকাছি এসে বললেন, ‘জানলা দিয়ে দেখছি না আমি? তুই যে তোর জামাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বললি, চোখে চোখে সে কী তাকানো..’
‘মানে কি এসবের? ওনাকে আমার জামাই বলছো কেন? ছি।’
ফুফু হেসে বললেন, ‘ছি করছো কেন পাখি? নিজে গিয়ে জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করে আসলা আবার বলো ছি।’
আমি মুখ কঠিন করে তাকিয়ে আছি ফুফুর দিকে। প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে আমার। ফুফু খানিকক্ষণ হাসলেন। হঠাৎ হাসি থামিয়ে বললেন, ‘তুই কি আসলেই কিছু জানিস না মীরা?’
‘না তো। কি জানবো?’
‘ওই ছেলেটার সঙ্গে ভাইজান তোর বিয়ে ঠিক করেছে। এটা তুই জানিস না?’
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। হঠাৎ একটা তীব্র বাতাসে কান তালি লেগে যাওয়ার মতো অনুভূতি হলো আমার। হাত পা শিরশির করে উঠলো। আমি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছি। চাহনি দেখেই ফুফু বুঝে গেলেন আমি এ ব্যাপারে জানিনা কিছুই।
ফুফু বললেন, ‘ছেলেটাকে তোর বাবার অনেক পছন্দ। সে মনেমনে ঠিক করে রেখেছে ওর সঙ্গে তোর বিয়ে দিবে। আরেকটু ভালো করে জানাশোনার জন্য ছেলেটাকে বাসায় থাকতে দিয়েছে। যাতে ওর স্বভাব, চরিত্র, অভ্যাস সবকিছু ভালো করে বোঝা যায়। কিন্তু তোর বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যখন, তখন এটা করেই ছাড়বে। সবাই তো ছেলেটার প্রশংসা করছে শুনলাম। সবারই ওকে খুব পছন্দ হয়েছে। আর তো যাচাই বাছাইয়ের দরকার নেই। আমরা সবাই খুশি। বিয়ের পর তোকে বাড়িতেই রাখতে পারবে। ভালোই হলো। আমরাও তো সবাই এরকমই চেয়েছিলাম। যাতে আমাদের মীরা মনি বাসাতেই থাকে। আবার ভালো একটা ছেলের সঙ্গে বিয়েও দিতে পারি।’
আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি সত্যিই। আমার মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেলো আমার সম্মুখে। আমার বাবাকে আমি চিনি। নিজের আপনজন ছাড়া বাইরের কাউকে উনি বাসায় এনে রাখার লোক নন। এজন্যই তাহলে বাবরিচুলকে আশ্রয় দেয়া! এতকিছু হয়ে গেছে অথচ আমাকে কিছুই জানানো হয় নি। কিন্তু কেন!
আমি শান্ত স্বরে বললাম, ‘তুমি কি শিওর এ ব্যাপারে?’
‘তোর মা আমাকে বলছে।’
‘মা আমাকে কেন বললো না?’
‘তুই বেশী লাফালাফি করিস। যদি কান্নাকাটি শুরু করে দিস এজন্য বলে নাই। আবার দেখা যাবে সবার সামনে সবকিছু বলে ফেলবি। এই ভয়ে তোকে জানানো হয়নি।’
‘বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে সবাইকে জানালেই বা কি? তোমরা তো সবাই জেনেই গেছো।’
‘হ্যাঁ। কিন্তু তোর তো কথার ঠিক নাই। যদি ছেলেটার সামনে কিছু বলে ফেলিস? ছেলেটা তো জানেনা। ওকে এখনো প্রস্তাব দেয়া হয় নাই। ভাইজান নাকি বলছে আরও কিছুদিন পরে ছেলেটাকে প্রস্তাব দেবে।’
আমি অস্ফুটে বলে ফেললাম, ‘তখন যদি উনি আমাকে পছন্দ না করে?’
‘তোকে পছন্দ করবে না এরকম কেউ জগতে আছে নাকি? তুই আমাদের রাজকন্যা।’
‘ওর আশেপাশে যেতে আমাকে নিষেধ করেছে কেন তাহলে? যার সঙ্গে বিয়ে হবে তার আশেপাশে গেলে সমস্যা কোথায়?’
ফুফু এবার বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘তোর মাথায় বুদ্ধিসুদ্ধি একটু কম। এজন্য বলছে। সবকিছু জেনে-বুঝেও তুই যেসব পাগলামি করিস, এসব দেখলে কোনো ছেলেই বিয়ে করতে রাজি হবেনা। তুই সুন্দরী, তোকে দেখলেই যেকেউ বিয়ে করতে পাগল হয়ে যাবে। এখন একটু ম্যাচিউর হতে হবে মা মীরা। হুটহাট পাগলামি করা যাবে না। যা মুখে আসে বলে ফেলা যাবে না।’
আমি বিষাদগ্রস্ততায় ডুবে যাচ্ছি। চোখ ভিজে আসছে। ফুফুকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না। কোনোমত বললাম, ‘এটা ঠিক না। যার সঙ্গেই বিয়ে হোক, তার জানা উচিত আমি কেমন। যে আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে আমার তাকেই বিয়ে করা উচিৎ।’
ফুফু হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। আমি রুম থেকে দ্রুত বের হয়ে এলাম। আমার কান্না আসছে ভীষণ। এই কান্না আমি কাউকে দেখাতে চাইনা। পেছন থেকে ফুফুর গলা শোনা যাচ্ছে, ‘কোথায় যাচ্ছিস তুই? মীরা, এই মীরা। যাস না মা। কিছু বলিস না ছেলেটাকে। ও মীরা…’
চলবে..
(সম্মানিত পাঠক, এই পেইজের সব লেখাই বিনামূল্যে পাবলিশ করা হয়। তবে আপনি চাইলে লেখক’কে ট্রিট দিতে সম্মানী প্রদান করতে পারেন। যেকোনো এমাউন্টের সম্মানী প্রদান করতে ইনবক্সে যোগাযোগ করুন।)
Share On:
TAGS: বাবরি চুল ওয়ালা, মিশু মনি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ১২
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ৯
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ৫
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ১৫
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ৮
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ১৩
-
বাবরি চুলওয়ালা পর্ব ১
-
বাবরি চুলওয়ালা পর্ব ২
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ৪
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ১১