#প্রেমতৃষা
#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_১৭
ইটের তৈরি বাড়িটার চারপাশ সবুজে মোড়া অরণ্যকানন। লালচে খোয়া-দাগা ইটের দেয়ালগুলো কোথাও কোথাও শ্যাওলায় ঢাকা, বৃষ্টির জলে আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে রং। বারান্দার খোলা জানালা দিয়ে ভেতরে হালকা হলুদ আলো ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়ির ছাদে টালির আভাস, আর কিছু জায়গায় টিনের চাঁদর, যেখানে টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে অবিরাম। জানালার গায়ে লতা-গুল্ম জড়িয়ে আছে। বাড়ির চারপাশে বিশাল আমগাছ, সুপারি গাছ, কলাগাছ আর বাঁশঝাড় মিলিয়ে ঘন আচ্ছাদন, এতটাই যে দূর থেকে পুরো বাড়িটাই অর্ধেক ঢেকে যায়। উঠোনে কাদা জমে ছোট ছোট জলাশয় হয়ে আছে, তার ওপর ভেসে বেড়াচ্ছে কলাপাতার টুকরো। পাশেই একটা পুকুর, ঘোলা জলে বৃষ্টির ফোঁটা ছড়িয়ে দিচ্ছে তরঙ্গ। ভেজা বাতাসে সোঁদা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে, দূরে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক মিলিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যার অন্ধকারে। আকাশে তখনো মেঘ ঘনীভূত, দূরে কোথাও বিদ্যুতের ক্ষীণ ঝলকানি, সঙ্গে টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ। ইটের দেয়ালে বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ছে, শ্যাওলা ভেজা দেয়াল চকচক করছে অদ্ভুত আলোয়। বারান্দার জানালা আধখোলা, ভেতর থেকে কেরোসিন বাতি কিংবা হলুদ আলো ঝিকমিক করছে। আলো ভিজে বাতাসে ঝাপসা হয়ে বাইরের অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়ছে। চারপাশের আম, সুপারি, বাঁশঝাড়ে বৃষ্টির ফোঁটা জমে টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে। বাতাসের ঝাপটায় পাতার ঘর্ষণ শব্দ মিলেমিশে রাতকে আরও গভীর করে তোলে। পুকুরপাড়ে বৃষ্টির তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে চকচক করছে, মাঝে মাঝে ব্যাঙ ডাকছে কণ্ঠ ফাটিয়ে।
এখানে এত মশা কেন তৃষা জানে না আর জানতেও চায় না। সে একটা একটা করে মশা মেরে জমাচ্ছে। এগুলো ভর্তা করে প্রেম নেওয়াজকে খাওয়াবে। তৃষা বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের হাতটা ভালো করে দেখে। বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী তো তাই কাটাছিড়ায় ভয় নেই তার। রক্ত দেখলেও লাগে না। কিন্তু এমন হুট করে হাতটা কেটে ফেলবে কেউ চোখের সামনে এটা কল্পনার বাইরে ছিল। একটা বার ভাবল না। এমন মানুষ তৃষা এর আগে কখনো দেখেনি। আর কেন সে তৃষার সঙ্গে সবসময় এত রুড ব্যবহার করে তা সে নিজেই ভালো জানে। আবার কিছু জিজ্ঞেস করলে উল্টো আরো শাস্তি পোয়াতে হয়। মুখ খুললেও বিপদ আর না খুললেও। হাতটা কেটে আবার নিজেই ঔষধ লাগিয়ে পট্টি করে দিয়েছে। তৃষা পেছনের দিক থেকে প্রেমের ব্যাক সাইড দেখল। এই লোকের কী জামাকাপড় নেই? নেংটু চলাফেরা করে কেন? ইভটিজিং করছে না তো? তৃষার ফোনটা প্রেমের কাছে। দিচ্ছেও না। আরেকবার চাইলে বোধ-হয় আঁচড়ে ভাঙবে নিশ্চিত।
‘প্রেম ভাই আপনার নুডলস রান্না কী হলো?’
‘এই তো এক মিনিট।’
‘দেখুন আপনি কিন্তু আমায় কিডন্যাপ করেছেন। কিডন্যাপ করেছেন ভালো কথা আবার নুডলসও রান্না করে খাওয়াচ্ছেন। ভালো বাসেন নাকি আমাকে?’
‘আমি যথেষ্ট রুচিশীল মানুষ তৃষা। তোমার মতো বাঁদরমুখিকে দেখলে কেবল আমার গা ঘিনঘিন করে আন্ডারস্ট্যান্ড?’
‘এতই ঘৃণা লাগে তো ছেড়ে দেন। বাড়ি নিয়ে চলুন।’
প্রেম সরু চোখে পেছন ঘুরে দাঁড়াতেই তৃষা আবারও গুটিসুটি মেরে চুপ হয়ে যায়। তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সে দূর্বল নয়। তবে এই পুরুষের সামনে এসে দাঁড়ালে ইদানীং ভয় হয়। আবার ভীষণ রাগও। মাঝে মাঝে মন চায় একে খুন করে রাস্তা ক্লিয়ার করতে। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় কোন দিন না জানি তারই হাতে সে খুন হয়ে যায়। সিদ্দিক নেওয়াজের সঙ্গে ভালো করে কথা বলতে হবে। তার নাতি যে উন্মাদ তা কী সে জানে? পাবনা মানসিক হাসপাতালে একটা সিট প্রি-বুকিং করতে হবে। দেশে যেই পরিমানে পাগলের সংখ্যা বেড়েছে এখন সিট খালি পাওয়াও মুশকিল। প্রেম গরম গরম নুডলস বাটিতে ঢেলে তৃষার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘এটা খেয়ে পেট ভরো। এখানে আপাতত খাওয়ার মতো কিছু নেই। আমার বাইরে গিয়ে কিছু কিনে আনতে ইচ্ছে করছে না।’
‘সমস্যা নেই নুডলস আমার অনেক পছন্দ। এখানে আসার পর একবারও খাওয়া হয়নি।’
‘খাও।’
তৃষা গরম বাটিটা ডান হাতে তুলতে গিয়ে পারল না। হাতটা কেমন ঝিমঝিম করছে। প্রেম লক্ষ্য করে বাটিটা তুলে চামচে নুডলস নিয়ে ফুঁ দিয়ে বলল, ‘হা করো।
তৃষার দিকে এগিয়ে দিলো। তৃষা রিতীমত অবাক। এই লোক একটু আগেই তার হাতের কি হাল করেছে আর এখন ফুঁ দিয়ে খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে? বিষ মেশানো নেই তো আবার? ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে তৃষা বলল,’আমি পারব। আমাকে দেন। শেয়াল মুরগি শিকার করার আগে যেমন করে ঠিক তেমন করছেন। সুবিধার লাগছেন না। ‘
‘মুরগি আমার এননিতেও অপছন্দ। আর তোমাকে না বলেছি কথার অবাধ্য হবে না?’
‘তাই বলে আপনি চাইলেই আমি আপনার হাত থেকে খাব?’
‘হ্যাঁ এমনকি বিষ এনে দিলেও খেতে হবে।’
‘সরি টু সে আমি মাদার তেরেসাও নই, আর মহিয়সী নারীও নই যে আমাকে বিষ পানতে করতে হবে। আপনার ইচ্ছে হলে আপনি পান করতে পারেন। এমনিতেও দেশের যা জনসংখ্যা দুই-চারটে না মরলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম থাকবে কোথায়?’
‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কারিগরকে মেরে সে আবার প্রজন্ম গড়বে। হাউ লেইম।’
‘কিছু বললেন নাকি?’
‘নো।’
‘আমার ফোনটা দেবেন? প্রত্যুষ ভাইকে একটু কল করতাম।’
‘কেন?’ সরু চোখে তাকালো প্রেম।
‘উনি চিন্তায় আছেন হয়তো। বাসায় জানালেও তাকে জানানো হয়নি। তাছাড়া আজকে তো উনি আমাকে নিতেও এসেছিল। তারচেয়ে বড় কথা আপনাকে বলেছিল বাড়ি পৌঁছে দিতে। আর আপনি কী করলেন?’
প্রেম হাতের গরম বাটিটা তৃষার গায়ের ওপর ছাড়তেই মুহূর্তেই চিৎকার করে ওঠে তৃষা।
‘আপনি কি মানুষ? আমি কি করেছি প্রেম ভাই? আমার ভুল টা কোথায়? দুনিয়ায় এত মানুষ থাকতে জীবন কেন আমায় বার বার খুন করার জন্য পেছনে পড়ে আছে?’ তৃষার চোখে জল। গরম নুডলসের জল গুলো পড়েছে তার পেটের ওপর। খুব একটা পরেনি। পড়ার আগে প্রেম ধরে ফেলে।
‘আমি ইচ্ছে করে ফেলেছি নাকি?’
‘না না আপনি ইচ্ছে করে ফেলবেন কী করে? আপনি ইচ্ছে করে কিছু করতেই জানেন না। সব দোষ তো তৃষার।’ চেঁচিয়ে ওঠে তৃষা।
প্রেম মুখ চেপে ধরে তার। চোখ রাঙিয়ে দাত পিষে বলল, ‘আস্তে কথা বলো। মেয়ে মানুষের গলা নিচুতেই সুন্দর। বললাম না আমি ইচ্ছে করে ফেলিনি। আরেকবার আমার সঙ্গে চেঁচালে গলার রগটা টেনে ছিঁড়ে বের করে আনব।’
তৃষা চোখের জল গিলে নিজের জামার দিকে তাকায়। এই জামা আর পড়ার মতো অবস্থায় নেই। প্রেম তাকে টেনে উঠিয়ে কিচেনে নিয়ে গেল। জামাটার ওপরে লেগে থাকা ঝোল পরিষ্কার করার জন্য। তা করতে গিয়ে তো আবার জামাই ভিজে একাকার। প্রেম ওয়ার্সরাবের থেকে খুঁজে খুঁজে একটা শার্ট বের করে বলল, ‘এই বাসায় আমার তেমন জামা-কাপড় রাখা নেই। তুমি এই সাদা শার্টটা পড়ো। প্যান্ট লাগবে না।’
‘কী!’
‘আরে তুমি যেই প্যান্ট পড়ে আছো চালিয়ে দেও না ওইটা দিয়েই রাতটা। এই ওয়েট এক মিনিট। লুঙ্গি পড়বে তৃষা?’
‘আপনার লুঙ্গি আপনিই পড়েন।’
‘শর্ট প্যান্ট দেব নাকি?’
‘প্রেম ভাই!!!!’
‘আচ্ছা তুমি প্যান্ট ছাড়াই থাকো। যদিও তোমাকে ওই অবস্থায় হলিউডের নাইকা লাগবে না। তুমি তৃষার বাচ্চা, তৃষার বাচ্চাই থাকবে।’
তৃষা ঝাড়ি খেয়ে ওয়াশরুম থেকে শার্টটা পড়ে এসে টানাটানি করে। যদিও বাসায় সে স্কার্ট আর টিশার্ট, শার্ট বেশি পড়ে। কিন্তু আজ প্রথম পুরুষ মানুষের শার্ট পড়েছে। একটা অদ্ভুত রকম আকর্ষণ করার মতো গন্ধ লেগে আছে শার্টটায়। আফিম মেশানো নাকি? এত নেশা নেশা লাগছে কেন তৃষার? তৃষার নিচে সেই ঢিলাঢালা জিন্স প্যান্টটাই। সাদা শার্টের সঙ্গে ভালোই বোধহয় লাগছে তাকে। চুলগুলো খুলেছে। বেশিক্ষণ চুল বেধে রাখলে মাথা ব্যথা হয়ে যায়। তখন নিজের চুল নিজেকেই টানতে হয়। প্রেম ভাইয়ের না হয় বিশেষ কামলা তৃষা আছেই। যাকে দিয়ে সে বেকার খাটুনি করিয়ে নেয়। কিন্তু তৃষার তো এখনো তেমন কেউ হয়ে উঠছে না। যাও একটু লাইন-ফাইন করতে চায় মাঝ দিয়ে প্রেম ভাই সব কিছুকে একেবারে জগাখিচুরি করে দেয়। তৃষা বের হয়ে দেখল প্রেম কানে এয়ারফোন গুজে গান শুনছে আর আপেল খাচ্ছে। তৃষা বের হতেই প্রেম একবার তাকে দেখেই চোখ সরিয়ে নিলো। তৃষা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতেই পেছন থেকে প্রেমের গলা ভেসে এলো। সে মিনমিন করে বলল, ‘মানুষ নিজেকে কী যে মনে করে? নিজেকে তারা যতই মৎস্য কন্যা এরিয়েল ভাবুক না কেন বস্তুত তারা হচ্ছে সমুদ্রের ডাইনি আর্সুলা।’
তৃষা মুখটা ভেংচি দিয়ে হাই তুলল। তার শরীর আজ অনেক ক্লান্ত। ঘুম পাচ্ছে তার। সে বিছানায় শোয়ার জন্য আসতেই প্রেম তাকে বিছানা থেকে নামিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলল, ‘আরে বিছানা নোংরা করবে না। আমি নোংরা বিছানায় ঘুমাতে পারি না।’
‘তো আপনি ফ্লোরে গিয়ে ঘুমান। পরিষ্কারই তো আছে।’
‘এটা আমার বাড়ি, আমার সবকিছু। তাই বিছানায় শোয়ার অধিকার একমাত্র আমার। আর আমার বিছানায় একা না ঘুমালে ঘুম আসে না। আর তোমার সঙ্গে কী করতে শুবো? তুমি আমার বউ লাগো নাকি? আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে। মালিক আর কাজের মেয়ের মধ্যকার পার্থক্য কী বুঝো না? যাও তুমি গিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়ো।’
তৃষা কপাল কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইল। প্রেম তাকে পাত্তা না দিয়ে ফ্রিজ থেকে হুইস্কির বোতলটা বের করে ডাকনা খুলে গটগট করে গিলতেই তৃষা বলল, ‘ছি প্রেম ভাই আপনি আর কত নিচু হবেন ? দুনিয়ার সব বাজে অভ্যাস আপনার মধ্যে। এসব খাওয়া ভালো না তা জানেন? এসব খেলে বেশিদিন বাঁচবেন না বলে দিচ্ছি। আপনার তো আপনার হবু বউয়ের জন্য মায়া-মমতা বলে কিচ্ছু নেই। অকালে বউটা আপনার বিধবা হবে।’
প্রেম পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে বিছানায় ছুড়ে মারতেই তৃষা চুপসে গেল। এই লোকের সঙ্গে ভালো কথা বললেও ভয় দেখায়। এক কাজ করা যাবে। রাতে প্রেম ভাইয়ের বাইকটা হয় চালিয়ে আর নয় কাঁধে তুলে হাঁটা ধরবে তৃষা। এটা বেঁচে প্রতিশোধ নেবে। ঘুমাক আগে এই লোক। তবে তৃষা শুনেছে মদ খেলে নাকি চারপাশ চোখের সামনে ঘোরে। তাছাড়া কেমন একটা মাতাল মাতাল লাগে। তৃষার মদ খাওয়ার মতো টাকাই নেই তাই কখনো ট্রাই করা হয়নি। একটা গ্লাস নিয়ে এসে পিটপিট করে প্রেম ভাইয়ের দিকে চেয়ে বলবে কী,’ প্রেম ভাই আপনার মদ খাওয়া দেখে আমারও খেতে ইচ্ছে করছে। দেবেন কী একটু? গুঁড়া দুধ ভেবে চেটেচেটে খাব।’
পরক্ষণেই তৃষার মনে হলো প্রেম ভাই তো হারে বজ্জাত হাইব্রিড করলা। সে জীবনেও দেবেনা। ভীষণ কিপ্টে লোক একটা। উল্টো নাক কুঁচকে হয়তো বলবে, ‘চেটেচেটে কারা খায় জানো তৃষা? কুকুর নামক একটা প্রজাতি। তোমার না ছবি পোস্ট করার অনেক শখ? তুমি চাটার সময় একটা ছবি তুলে দেবনি। পোস্ট করার আগে তার সঙ্গে কুকুরের একটা ছবি কলাজ করে লাগিয়ে ক্যাপশনে বড় বড় দেবে, একই মোরা তবুও কেন আলাদা? আহা কী হৃদয়বিধারক পোস্ট মাইরি।’
তৃষা ভ্রম থেকে বের হয়ে একবার প্রেমের দিকে তাকালো। সে একটু করে মদ খাচ্ছে আর ফোনে গোলাগুলির গেইম খেলছে। দিতে মন চাইছে তার পেছনে একটা গুলি ঢুকিয়ে। তৃষা সোফার ওপর থেকে বালিশ নিয়ে ফ্লোরে এসে শুয়ে পড়তেই প্রেম বাতি বন্ধ করে দিলো। তাতেই তৃষা চিৎকার করে উঠল, ‘আরে বাতি তো জ্বালান। আপনাকে আমার সুবিধার মনে হয় না। চেহারা দেখলেই মানুষ চিনতে পারি।’
প্রেম বাতি জ্বালালো না। কেবল নিজের ডান হাতের ওপর মাথাটা রেখে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মানুষ চিনলেই হবে? মনটাও চেনা দরকার। আর শুনো তোমায় দেখলেই শরীরের লোমকূপ অব্দি নড়ে উঠে। বিছা পোকা চেনো? ওইসব দেখলে গা যেমন করে ঠিক তোমার মুখটা দেখলেও প্রেম নেওয়াজের ওইরকম একটা ফিলিংস হয়।’
তৃষা মুখ বাঁকিয়ে উল্টো পাশে ফিরে বলল, ‘আপনাকে দেখলেও আমার কোনো বিশেষ ফিলিংস আসে না প্রেম ভাই। উল্টো অবশিষ্ট ফিলিংস গুলোও নষ্ট হয়ে যায়।’
প্রেমের আর জবাব এলো না। ঘুমিয়ে গেছে নাকি আবার? যাক যাক ভালোই হবে। তৃষার মাথায় কিছু একটা চলছে। ব্যাটা ঘুমাক তারপর সে নাহয় কিছু একটা করবে।
আজকের সকালটা কত সুন্দর। মেঘের আড়ালে সূর্য লুকোচুরি খেলছে। আকাশে ম্লান ধূসর আভা। ভেজা হাওয়ায় সামান্য ঠান্ডা ভাপ মিশে আছে। ইটের পুরনো বাড়ির দেয়ালগুলো বৃষ্টির আর্দ্রতায় গভীর লালচে রং ধারণ করেছে। বারান্দার কাঠের রেল ভিজে কাতর, ভিজা মাটির ঘ্রাণ চারপাশে ভেসে আছে। ফুলের বাগানটা থেকে অন্যরকম একটা গন্ধ ভেসে আসছে। ফুলের ছোট কুন্ডিতে জমে থাকা জল আকাশকে ধারণ করেছে। আর তার ওপর ভেসে উঠছে ভোরের প্রথম নরম আলো। ঘড়িতে কয়টা বাজে তৃষার জানা নেই। রাতে কখন ঘুমিয়েছে তাও নয়। বাইরে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। সে প্রেমের বুকের মধ্যে একেবারে গুঁজে যায়। উষ্ণবুকে কেবলই একরাশ উষ্ণতা ছড়িয়ে আছে। তৃষা হাত দিয়ে শক্ত করে প্রেমকে জড়িয়ে ধরে আছে। পা উঠিয়ে দিয়েছে প্রেমের গায়ে। আরাম আরাম ঘুম দিয়ে হয়তো ভাবছে কোলবালিশটা আজ যেন অন্যরকমই লাগছে। হঠাৎ নড়েচড়ে হালকা চোখ ফেলতেই তৃষার তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। সে এক ঝটকায় উঠে বসে চেঁচিয়ে উঠে, ‘প্রেম ভাই আপনি আমার সঙ্গে কী করেছেন? আমি বিছানায় কেন? সর্বনাশ হয়ে গেল রে। পাশ থেকে প্রেম তৃষার বালিশটা নিজের মুখের ওপর দিয়ে বলল, ‘আরে ভাই ঘুমাতে দিবি? সর এইখান থেকে। নইলে মারব এক লাথি। ‘
‘প্রেম ভাই অনেক হয়েছে। আপনি আমি এক বিছানায় কেন? আপনি আমার সঙ্গে লেপ্টে ছিলেন কেন?’
প্রেমের চোখে তখনও ঘুম। সে ঘুমচোখে মুখের ওপর থেকে বালিশটা সরিয়ে কোনো মতে চেয়ে বলল, ‘তুমি আমার বিছানায় আছো তৃষা নুজায়াত। আমার এখানে তুমি এসেছো। ছেলে দেখলে মাথা নষ্ট হয়ে যায় তাই না? আমার সর্বনাশ করে এখানে ভালো সাজার নাটক করছো তৃষা? বাই দ্য ওয়ে রাতে আমাদের মধ্যে কী হয়েছে মনে নেই? না থাকারই কথা। লোড বেশি পড়লে মানুষ অনেক কিছুই ভুলে যায়। ‘
‘এ্যাঁ?’
‘সোনা এ্যাঁ না বলো হ্যাঁ। প্রেম নেওয়াজের বাচ্চার আম্মু হওয়ার জন্য এত নিচু উপায় ব্যবহার করলে? ছিঃ তৃষা ছিঃ! তোমার আইনের লোক প্রত্যুষের কাছে রিপোর্ট করছি ওয়েট।’
তৃষা কাঁদো কাঁদো গলায় ঘাবড়ে বলল, ‘এই না প্রেম ভাই। তাকে কিছু বলবেন না।’
‘বদলে আমার সব কথা শুনবে তো?’
‘হুম।’
‘সব?’
‘হুম সব।’
প্রেম স্বাভাবিক হয়ে বলল, ‘তাহলে কাছে আসো।’
চলবে?
(সবাই বেশি বেশি রেসপন্স করবেন। আজকে কিন্তু
এত বড় পর্ব জুড়ে কেবল প্রেম আর তৃষা ছিল।)
#প্রেমতৃষা
#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_১৮
কাছে আসতে বলে প্রেম নেওয়াজ তৃষাকে দিয়ে জোর করে বিছানাটা গুছিয়ে নিয়েছে। সেই মহারাজ এখন আবার গোসলে গেছেন। এই বৃষ্টির মধ্যে কে এত সকাল সকাল গোসল করে? এমন আবহাওয়া চলতে থাকলে তো তৃষা এক মাসও গোসল না করে থাকতে পারবে। এই প্রেমকে যে করেই হোক শায়েস্তা করতেই হবে। রাতে কী করে উপরে গেল মনে পড়ছে না। তবে খুব ভালো করেই মনে পড়ছে প্রেম ভাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সে চোরের মতো ফ্রিজ থেকে একটা কোক নিয়ে গটগট করে পান করেছে। কোকাকোলাই তো ছিল তবে স্বাদ বড্ড অন্যরকম। তারপর কী হয়েছে মনে নেই। কোকাকোলা খেয়ে আবার মাতাল হয়ে যায়নি তো? আর তখন মনে হয় প্রেম ভাই তাকে বিছানায় শুইয়েছে। কিছু হয়েছে কী তাদের মধ্যে? শরীরটা ব্যথা করছে। বমি বমিও লাগছে। চক্কর দিচ্ছে মাথা। সে আবার কোনো কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল নাতো? তৃষা রুমের মধ্যে পায়চারি করে পেছনে হাত দিয়ে। কী করবে ভাবতে ভাবতে শেষে গিয়ে বেসিনের সামনে থেকে হ্যান্ডওয়াশ এনে ফেনা করে বাথরুমের সামনে ঢেলে দেয়। আজকে প্রেম ভাই বের হবে আর তার কোমড়টা যাবে। ব্যাটা হাইব্রিড করলার মুখ তো নয় লাগাম ছাড়া ঘোড়া। আর একটা শরীর আছে বলে যা তা করবে নাকি? কিসের প্যাক ফ্যাক বুকের মধ্যে গজিয়েছে তার জন্য কী এখন জামা কামড় ছাড়া ঘুরতে হবে? ওই প্রত্যুষ তো এমন নেংটু চলাফেরা করে না। জন্মের সময় হয়তো এই প্রেম পাতলাখানকে তার মা চোখের নিচে কাজল দেয়নি। কাজলের অভাবে হয়েছে একটা নিলর্জ্জ হতচ্ছাড়া। প্রেম গোসল খানা থেকে বের হয় কালো রঙের একটা তোয়ালে নিচে পেঁচিয়ে। গলায় সেই কালো কাইটনের মতো দেখতে চেইনটা ঝুলছে। সম্ভব ওটা কাইটনই হবে। কেবল তার মাথায় একটা গিটারের লকেট আলাদা করে এডজাস্ট করা। প্রেম ভাইয়ের ঝাঁকড়া ঘাড় ছুঁইছুঁই চুল গুলো থেকে টুপটাপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। চুলের সেই পানি সুঠাম দেহে গড়িয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আকর্ষণের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে এই পুরুষ হয়ে উঠেছে মাত্রাহীন সুপুরুষ। তার বাদামি রঙের চোখের মণিতে অদ্ভুত আকর্ষণ লুকিয়ে। চাহুনি নেকড়েদের মতো। এগুলোকে ফক্সআই বলে তাই না? প্রেম গোসল খানার দরজার সামনে আগে দাঁড়ায়। বাইরে আর পা রাখে না। তৃষা সঙ্গে সঙ্গে বলে, ‘আসেন প্রেম ভাই। দেখেন আমি আপনার জন্য জামা কাপড় বের করে রেখেছি। সঙ্গে দেখেন কালো রঙের একটা জাঙ্গিয়া। কম্বিনেশনটা জোস না?’
‘রাতে এত কিছু হলো তুমি গোসল করবে না? এদিকে আসো।’
‘হলো মানে?’
‘থাক লজ্জা পেতে হবে না। কাম।’
‘আসব না। লজ্জা নেই আপনার। আপনাকে আমি ভাইয়ের চোখে দেখি।’
‘ভাইয়ের চোখে দেখেও কাল রাত নিজের কার্য উসুল করলে, না জানি স্বামীর চোখে দেখলে কী করতে।’
‘আপনি বের হন। দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’
‘আমি এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনব। তারপর এক মুহূর্ত জাস্ট দেরি হলে ভিডিও কিন্তু সোজা ভাইরাল।’
‘ভিডিও মানে?’
‘সেটা ভাইরাল হলেই বুঝবে। রাতে ফ্রিজ থেকে কোক চুরি করে খাওয়া। ওই কোকের সঙ্গে মদ মিশ্রিত ছিল। ওইসব খেয়ে আমার সঙ্গে কী করেছো দেখাব? আমি কাউন্ট শুরু করলাম। এক…..দুই…..ত’
‘আসছি ওয়েট।’
‘দ্যাটস মাই গার্ল।’
তৃষা ফেনাযুক্ত স্থান থেকে খানিকটা দূরেই থাকে। তা দেখে প্রেম সরু চোখে বলে, ‘এখন কী কাছে আসার জন্য ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প শোনাতে হবে?’ বলেই সে তৃষার হাত ধরে টান দিতেই তৃষা ফেনার সঙ্গে পিছলা খেয়ে ধপাস করে পড়ে যায়। প্রেম ভাই তো তাকে সাহায্য করলই না উল্টো হাতটা ছেড়ে দিলো। তৃষা মাটিতে পড়ে, ‘ওওওওওও মাগো বলে চেঁচিয়ে উঠতেই প্রেম ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে পুনরায় ভেতরে ঢুকে যায়। যাওয়ার আগে বলে, ‘জাস্ট দুই মিনিটের মধ্যে যেন এই ফেনা পরিষ্কার করা হয়। নইলে এবার মান্দার গাছ থেকে পিটিয়ে বাকি হাড় গুলো ভাঙবো সোনা।’
নেওয়াজ কুঠিরে প্রেমের বাইকটা ঢুকতেই তৃষা যেন শান্তি ফিরে পায়। তার অনেক ক্ষুধা পেয়ছে। প্রেম একা একা খেয়েছে। তাকে একটু সাধল না। কেবল বলল, ‘খাবার সামনেই আছে সাধতে পারব না। মন চাইলে খাবে না মন চাইলে অনাহারে মরবে।’ এই কথা শোনার পর কার খেতে মন চায় । ব্যাটা ডিম আর পাউরুটিগুলো নিজের পেটে সেটিয়েছে। আর অদ্ভুত মানুষ সে। সারাদিন খালি স্ট্রোবেরি খায়। একটা মানুষ এত স্ট্রোবেরি কেমনে খায়? তাও আবার ডার্ক চকলেটের মধ্যে চুবিয়ে? বাড়ির মধ্যে তৃষা ঢোকার আগেই প্রেম বাইক থেকে নেমে পেছন থেকে তার ওড়না টেনে ধরে বলে, ‘এই যে মিস এলার্জির ঔষধ যে এতগুলো খেতে হলো আপনার জন্য। ঔষধের টাকা কিন্তু রাতে উশুল করে ছাড়ব।’
‘দূরে গিয়া মর লুইচ্ছা বেডা। রাতে তোকে আমি বিষ দেব বুঝলি।’
‘ভিডিও ভাইরাল করব নাকি তোর? মুখে কিন্তু খই ফুটছে।’
‘এই না! সরি।’
তৃষা বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই দেখল খাবার টেবিলে বসে সবাই নাস্তা করছে। প্রত্যুষও সেখানে বসে আছে। তৃষাকে দেখতে পেয়ে হেতিজা বলে উঠলেন, ‘এখন তোমার বান্ধবীর বাবা কেমন আছেন? সুস্থ হয়েছেন তো?’ তৃষা একবার পাশ ফিরে প্রেমকে দেখল। প্রেম তখন টেবিলের ওপর থেকে একটা স্ট্রোবেরি নিয়ে মুখে দিয়ে তৃষাকে চোখ মারতেই রাগে তৃষা চোখ সরিয়ে হেতিজাকে হাসি মুখে উত্তর দিলো, ‘জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।’ এই প্রেমের জন্য এখন তাকে মিথ্যাও বলতে হচ্ছে। সবচেয়ে কষ্ট লাগছে প্রত্যুষকে মিথ্যা বলতে। লোকটা যদি কখনো শুনে পুরো একটা রাত সে তার ভাইয়ের সঙ্গে কাটিয়েছে তবে কখনো কী তৃষাকে আপন করবে। এই একটা কথা ভাবলেই কেমন কান্না পাচ্ছে তৃষার। সিদ্দিক নেওয়াজ টেবিল ছেড়ে উঠতেই হেতিজা বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য উঠে যায়। প্রেমা আজকে না খেয়েই কলেজে গেছে। তৃষা প্রত্যুষের পাশের টেবিলে বসেছে। আর প্রেম বসেছে একেবারে তৃষার মুখোমুখি। নজটা বাজপাখির মতো। তৃষা কমলার জুসটা হাত বাড়িয়ে নিতে গেলেই প্রত্যুষ তার হাত চেপে ধরে বলল, ‘আল্লাহ হাতে কী হয়েছে?’
‘তা কিছু না।’
‘কিছু না হলে কী ব্যান্ড এইড লাগানো?’
প্রত্যুষ তার হাত ধরে বলল, ‘চলো ডাক্তারের কাছে যাই।’ তৃষা আড়চোখে সামনে বসে থাকা প্রেমের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। কেমন ভয়ানক ভাবে তাকিয়ে আছে। প্রেম উঠে যায়। সে উঠে যেতেই প্রত্যুষ তাকে পেছন থেকে ডাক দেয়, ‘এই তোর সঙ্গে কথা আছে।’
প্রেম গিয়েও থমকে যায়। বাঁকা হেসে পেছন ফিরতেই বলল, ‘আইনের লোক আবার বেআইনের লোককে কেন ডাকে?’
প্রত্যুষ গলার টাই ঠিক তৃষাকে বলল, ‘তৃষা চাবি নিয়ে তুমি আমার গাড়িতে উঠে বসো।’
‘তার দরকার নেই।’
‘যাও উঠে বসো গিয়ে।’
তৃষার মনটা আজকে কেমন যেন লাগছে। এই যে প্রত্যুষ তার হাতে ব্যান্ড এইড দেখে কেমন বিচলিত হলো। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বলে ঠিক করল। অন্যদিন হলে এসব নিয়ে তৃষার খুশির সীমা থাকত না। তবে আজকে কেমন জানি একটা না চাইতেও লাগছে। তৃষা বাইরে চলে যেতেই প্রত্যুষ প্রেমের কাছে এসে বলল, ‘আমি অনেক কিছুই লক্ষ করছি প্রেম। বি কেয়ারফুল।’
‘কেয়ার ফেয়ার তোমায় মানায় আইনের লোক।’
‘একটু আগে তৃষার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিলি কেন?’
‘আল্লাহ চোখ দিয়েছে সৌন্দর্য দেখার জন্য।’
‘প্রেম তৃষার জীবন যেন নষ্ট না হয়।’
‘জীবন নষ্ট করার মালিক আল্লাহ। আমরা তো কেবল উছিলা। বাই দ্যা ওয়ে মেয়ে মানুষ নিয়ে তোমার এত মাথা ব্যথা কেন? শুনলাম ওই সাইকোটাকে নাকি এখনো ধরতে পারোনি? পারবেও না। চেষ্টা চালাতে থাকো। প্রমাণ পাবে না। কারণ ওমন যোগ্যতা তোমার ভেতর নেই। আমার রাস্তায় পা না দিয়ে নিজের ডিউটি মন দিয়ে করো। খালি মাসে মাসে সরকারি মাইনে আর রেশন নিলেই তো হবে না, ঠিক করে কাজটাও করতে হবে।’
প্রত্যুষ রাগে কটমট করে চোখে চোখ রাখল প্রেমের। প্রেম তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। রাগটা যেন আরো বেড়ে গেল। সে দাঁত পিষে বলল, ‘তোকে টেনে জেলে ফেলতে আমার এক সেকেন্ডের খেল। কেবল নানাভাইয়ের কারণে এখনো দুনিয়ার হাওয়া খাচ্ছিস। তবে ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে।’
‘দেখো ভাই যেটা প্রেম নেওয়াজের সেটার দিকে অন্য কারো নজর আমার সহ্য হয় না। তবে সমস্যা হলো যা প্রেমের ভালো লাগে তার দিকে আবার অন্যকারো নজর বেশি যায়। আই ডোন্ট লাইক ইট ব্রো। যেটা আমার সেটা আমি ছিনিয়ে হলেও নিজের করে নেই। আমার জিনিসে অন্যকারো নজর পড়লে আমি জিনিসটাও নষ্ট করি আর যে নজর দিয়েছে তাকেও। মাইন্ড ইট।’ বলেই প্রেম টেবিল থেকে পুরো স্ট্রোবেরির ঝুড়িটা হাতে তুলেই প্রত্যুষের সামনে থেকে বেড়িয়ে যায়।
–
বাগান জুড়ে রাতের আবহাওয়া আজ অন্যরকম লাগছে। মৃদু শীতল বাতাস বইছে। পাতার ডগা নড়ে উঠছে টুপটাপ শিশিরে। দূরে কোথাও ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে নীরবতা আরও গভীর হয়ে উঠছে। আকাশের গাঢ় নীল রঙে ছড়িয়ে আছে আধো আলো-আঁধারি, মাঝে মাঝে মেঘের আড়াল থেকে চাঁদের আলো গাছপালার ফাঁক গলে নেমে আসছে বাগানের সরু পথে। তৃষা ধীর পায়ে হাঁটছে প্রেমার পাশে। দুজনার পায়ের শব্দ নরম ঘাসে মিশে প্রশান্তি তৈরি করছে। গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরে চাঁদের প্রতিফলন ঝিকিমিকি করছে। কথায় কথায় তৃষা প্রেমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা প্রত্যুষ ভাই আর প্রেম ভাইয়ের মধ্যে তেমন মিল নেই কেন?’
‘চোর আর পুলিশে কখনো মিল হয় শুনেছো? সময় হোক জানতে পারবে।’
‘প্রেম ভাই এমন অদ্ভুত কেন? বাবা-মা কোথায় তার?’
‘তারা নেই। তাই হয়তো এত অদ্ভুত।’
তৃষা আর কোনো প্রশ্ন করল না। হাতটার দিকে তাকালো। বার বার প্রত্যুষের স্পর্শ অনুভব করতে চাইলেও চোখের সামনে ভেসে উঠছে প্রেম নেওয়াজ। যার বুক সে এই হাতটা দিয়ে স্পর্শ করেছিল ঠিক সেই হাতটা। এমন কেন হচ্ছে? ওই অসভ্য লোকটার জন্য এত অনুভূতি কিসের? এসব তো মোটেও হওয়ার কথা নয়। গুড বয় কে রেখে বেড বয়ের প্রতি এত অনুভূতি সৃষ্টির কোনো দরকার নেই। তৃষা আরেকটু এগিয়ে যেতেই হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন প্রেমাকে ডাকল, ‘এই যে প্রেমা ডার্লিং শুনছো? তোমার জন্য পাবনা ছেড়ে চলে এলাম আর তুমি আমায় পাত্তাই দিচ্ছো না?’
প্রেমা পেছনে তাকাতেই বলল, ‘কালু তুমি আবার এলে? আমার ভাইয়ের কাছে বিচার দিব।’
‘দজ্জাল মহিলা তোরে আমি ভালোবাসি এটা মাথায় ঢুকে না। খালি ভাইয়ের ভয় দেখাস।’
তৃষার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তবে সামনের ছেলেটিকে সে চেনে। ওইযে সিদ্দিক নেওয়াজের ডান হাত মোখলেসের ছেলে এটা। নাম মেহরাব। কিন্তু সবাই কালু বলেই ডাকে। রঙটা একটু কালো। তাতে কম কোথায়? ঝাক্কাস দেখতে। মেহরাব পুনরায় প্রেমাকে বলল, ‘চিপায় আসো কথা আছে।’
‘যাব না তোমার সাথে চিপায়।’ প্রেমা মুখ বাঁকিয়ে উত্তর দিলো।
‘আরে তোমার জন্য কোরিয়ান একটা জিনিস এনেছি। আসো না দেখাই।’
সেই কথা শুনে প্রেমার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। সে তৃষার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘শুনে আসি ওই মদন কী দেখাবে। নইলে এখানেই দাঁড়িয়ে নাটক করতেই থাকবে। তুমি একটু ওয়েট করো।’
তৃষা ইশারায় সম্মতি দিলো। ভালোই সময় চলে গেল কিন্তু প্রেমার এখনো আসার নাম নেই। হঠাৎ মনে হলো কেউ তার চুলে হাত দিয়েছে। একটা অসাধারণ সুগন্ধি নাকে আসে তৃষার। তৃষার এই সুগন্ধিটা পরিচিত। সে অনুভব করল কেবল তার চুলেই হাত দেওয়া হয়নি বরং তার চুলে মুখ গুঁজে কেউ একজন তৃপ্তি খুঁজে নিচ্ছে। পেছনে তাকানোর আগেই সেই ব্যক্তি তার থুতনিটা তৃষা কাঁধে রেখে বলল, ‘হ্যালো সুইটহার্ট।’
চলবে?
Share On:
TAGS: ইশরাত জাহান জেরিন, প্রেমতৃষ্ণা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৩+১৪
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৯+২০
-
প্রেমতৃষা গল্পের লিংক
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৬+৭
-
প্রেমতৃষা পর্ব ২+৩
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৮+৯+১০
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১১+১২
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৪+৫
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৫+১৬