#প্রেমতৃষা
#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_১১
ঝর্ণাটা ছেড়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে তৃষা। আজ এতটা অসহায় লেগেছিল। বাবা সবসময় বলতেন, ‘এমন ভাবে চলবে যেন গায়ে একটা পিঁপড়াও বসতে না পারে।’ পিঁপড়াটা আজ বসেই গেল। তৃষার অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল তবুও বলতে পারেনি। ওই প্রেম নেওয়াজ আসলেই একটা জঘন্য একটা মানুষ। সম্মান, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা কোনোটাই তার মধ্যে নেই। ওই রকম মানুষরা কেবল ছোট করেই দেখতে পারে। তাদের কাছে মেয়ে মানুষ মানেই তাদের শরীরটা সব। মন, অস্তিত্বের দরকার নেই। মোটেও দরকার নেই। তৃষা গোসল সেরে বের হতেই পাশের রুম থেকে শিমলার মায়ের কটুকথা শুনতে পেল। বিনে পয়সায় এখানে খাচ্ছে, থাকছে, কবে যাবে কিছু ঠিক করে না বললে তো সব বাড়ির মানুষই এমন রিয়াকশন দেখাবে। তৃষা ব্যাগ থেকে পার্সটা বের করল। হাতে টাকা-পয়সা নেই। যা ছিল তাও ফুরিয়ে আসছে। তাকে কিছু তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কাজ খুঁজতে হবে। শিমলাকে সে এই বিষয়ে বলে রেখেছে। টিউশন হলেও চলবে। শিমলা খোঁজ রাখবে বলেছে। এই শিমলা মেয়েটার সঙ্গে প্রথম পরিচয় গত বছরের শুরুর দিকে ফেসবুকে। তৃষার ফেসবুকে উপন্যাস পড়া হয়। পছন্দের একটা লেখিকার মেসেঞ্জার গ্রুপে এড হলো সে একদিন। সেই গ্রুপ থেকেই শিমলার সঙ্গে পরিচয়। পরিচয়হীন একটা মানুষের সঙ্গে যে এত ভালো সম্পর্ক হয়ে যাবে কখনো ভাবতে পারেনি তৃষা। তৃষা শিমলাকে নিজের পছন্দ অপছন্দ সব ধরনের কথাই বলত। পালানোর বিষয়টা নিয়ে যখন বলেছিল তখন সেই বলল এখানে আসতে। মেয়েটা কত্ত ভালো। তৃষা পুরনো আইডিটা নষ্ট করে ফেলেছে। সিমটাও ফেলে দিয়েছে। এখানে এসে সব কেনা নতুন করে। নতুন একটা আইডিও তো খুলেছে। হোয়াটসঅ্যাপটা লগইন করে সেদিন চিত্রার নাম্বারটা সেইভ করেছিল। ফোনটা হাতে নিতেই দেখল চিত্রার দু’টো কল এসেছে। তৃষা বিপদে পড়লে কিংবা সিদ্ধান্ত নিতে গেলে যখন দ্বিধায় পড়ে তখন যেই মানুষটির কাছে নিঃসঙ্কোচে সাহায্য, পরামর্শ চাইতে পারে সে হচ্ছে ফারাজ এলাহীর ভালোবাসার রমণী। ফারাজ এলাহীর নামটা নেওয়ার কারণ আছে, কারণ যতবার চিত্রাকে স্মরণ করবে ততবার ফারাজের চিন্তা আপনাআপনি চলে আসবে। ফারাজের সঙ্গে কখনোই তেমন ভাবে ফোনে কথা হয়নি। আসলে হবে কেমন করে? বউপাগল একটা লোক। অন্য কারো সঙ্গে কথা বলার সময় আছে? তবে চিত্রা স্বামীর জয়গান, প্রশংসা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। সেই বর্ননা, সেই বুলি শুনলে যুবতী কেন বুড়ো একটা মহিলাও আফসোস করে বলবে, ‘আমার একটা ফারাজ এলাহী চাই।’ ফোন দিয়েছিল দুই ঘণ্টা আগে। এখন ব্যাক করা কী ঠিক হবে? ভাবতে না ভাবতে দিয়েই ফেলল। প্রথম কলটা তুলল না চিত্রা। পরের বারেরটা তুলতেই, ওপাশ থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসল, ‘আরে রোমান্সের সময় কোন ছোটলোক ডির্স্টাব করে? এত চুলকানি কেন?’ কথাগুলো যিনি বলেছেন তিনি ফারাজ এলাহী। আর যাকে বলেছেন সে অসময়ে বিরক্ত করা তৃষা। যদিও কে কলটা করেছে দেখেও নি হয়তো। বিরক্ত মনে হয়েছে তাই চিত্রার থেকে ফোনটা কেড়ে বলে দিয়েছে। চিত্রা কিছু বলতে গিয়েও পারল না। ফারাজ ফোনটা কেটে দিলো মুখের ওপর। তৃষার বুঝতে বাকি রইল না, যে-সে একটু নয় বরং পুরোই অসময়ে জরুরী কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। কিন্তু এখন বেলা কয়টা বাজে ইতালিতে? এই ফারাজ নামক লোকটার কী সব সময় এমন জরুরী কাজ থাকে নাকি? যেদিন তৃষা নিজ থেকে কল দেয় সেই দিনই এমন হয়। সেদিন পুরোটা রাত কেবল এপাশ-ওপাশ ফিরে তৃষা। ঘুমাতে পারে না। এতটা কষ্ট লাগে। প্রত্যুষকে কল করেছিল ব্যাক করেনি। লাইনেও এলো না আজকে। থাক তাকে বিরক্ত করে লাভ নেই। তার তো অনেক কাজ। তৃষার মতো বেকার নাকি? তবে যতবার রাতে ভাবল, তার হাতে তো টাকা নেই, বাসায় ফেরার উপায় নেই। বাড়িতে ফিরলে যুবরাজ তুলে নিয়ে গিয়ে হলেও তাকে বিয়ে করবেই। ওই লোককে বিয়ে করা সম্ভব নয়। বয়সে কত তফাৎ তাদের। আর পছন্দ অপছন্দেও। যতই ক্ষমতা হোক, মানুষ তার জন্য পাগল থাকুক না কেন, এমপি হোক না কেন তৃষা ওই রাজনীতিকে চরম ভাবে ঘৃণা করে। ভালো মানুষও রাজনীতি, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে খারাপ পথ বেছে নেয়। ওই পথ কাউকে ভালো থাকতে দেয় না। অসুরে বদলে ফেলে। তবে ভার্সিটির সেই ঘটনার কথা যখন যখন মনে পড়ল তৃষার তখন চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। প্রেম নেওয়াজ খারাপ মানুষ সে জানত, কিন্তু এতটা জঘন্য তা জানত না। ভালো হলে তো ছেলে দু’টো তার সামনে কথাই বলতে পারত না। দিত ধরে কেলানি। এত শরীর ফিট রেখে, বডি করে লাভ কী যদি একটা ছেলে একটা মেয়েকে নোংরা কথা বলে তার প্রতিবাদ না করে উল্টো তালে তাল মেলানো? তৃষা পাশ ফিরল। চোখের জল গিলে বলল, ‘তৃষা তুই তো দূর্বল না? জানোয়ারকে জানোয়ারই ভাববি। মানুষ ভাবার দরকার নেই। আর প্রেমের থেকে এর চেয়ে বেশি কি বা আশা করিস তুই?’
–
সকালবেলা পুরান ঢাকার অলিগলি ভেদ করে হেঁটে গেলে দূরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকটা চোখে পড়ে। চারিদিকে গাছপালা। বিজ্ঞান অনুষদের চারপাশে কতগুলো কৃষ্ণচূড়া ফুল। কি সুন্দর দেখতে যে লাগে। আজকে সকাল থেকে প্রেম নেওয়াজকে দেখতে পাইনি সে। ভালোই হয়েছে। ওই লোককে দেখলে ঘৃণায় শরীর জ্বলবে। ক্লাস শেষে বের হতেই শিমলার ফোনে একটা কল এলো। সে রিসিভ করে কথা বলে তৃষাকে জানালো, ‘ জানিস তোর জন্য একটা গুড নিউজ আর আমার জন্য একটা বেড নিউজ আছে। কোনটা শুনবি আগে?’
‘দুটোই একসঙ্গে বল।’
‘তোর জন্য চাকরি পেয়েছি। একটা ছাত্রী পড়াতে হবে।’
‘আহামরি খুশির কিছু নয়। একটা ছাত্রী পড়ালে কতই বা বেতন পাওয়া যাবে? থাকা-খাওয়া, চলাফেরার খচর উঠে যাবে।’
‘আরে যাবে যাবে।’
‘কিভাবে?’
‘যেই মেয়েকে পড়াতে হবে সে এক নাম্বারের গবেট শুনলাম। মেয়ে মানুষ তো? তার মা আবার মহিলা টিচার চায়। তাও এমন মহিলা টিচার যে তাদের বাড়িতেই থাকতে পারবে আর ২৪ ঘন্টা টাইট দিয়ে মেয়েটাকে সোজা করতে পারবে বদ থেকে। তার মানে তুই সেখানে থাকতে পারবি, খেতে পারবি, মাস শেষে ভালো মাইনেও আছে। এছাড়া তোর দরকারি জিনিসপত্রের খরচ তো তারা দিবেই।’
তৃষার মন খুশিতে ছলছল করে উঠে। তবে এত সুযোগ সুবিধা কী এখনকার যুগে কেউ কাউকে দেয়? একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না? শিমলার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে তৃষা শান্ত চত্বরের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখল সেখানে প্রেমের বাইকটা দাঁড় করানো। সেখানে কেবল যে প্রেমের বাইকটা রাখা সেটা বললেও ভুল হবে। কারণ সেখানে অংকুর,সহ আরো অনেকগুলো ছেলে ছিল। প্রেমকে সবাই ঘিরে রেখেছে। প্রথম দেখায় যে কারো লাগতে পারে কোনো মানুষ মরে গেছে আর সবাই তাকে দেখার জন্য ভিড় করেছে। তৃষা গানের শব্দ পেয়ে দুইপা এগিয়ে যেতেই দেখল ভিড়ের মধ্যে একটা ছেলে বসে আছে। দুইপাশের মানুষ তার দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে মনোযোগ সহকারে। সে এগিয়ে গিয়ে ভালো করে তাকালো সেই ছেলেটির দিকে। ডান হাতে কালো ব্রিডেড ব্রেসলাইট পড়া। গলায় কালো মতো একটা লকেট। মনে তো হচ্ছে কালো একটা কাইটনের সঙ্গে গিটারের মতো দেখতে একটা লকেট লাগানো। ছেলেটির পরনে একা চ্যাক শার্ট। ঝাঁকড়া চুল গুলো পড়ে আছে চোখের সামনে। শার্টের সঙ্গে রোদ চশমাটা ঝুলানো। তৃষা কাছে আসতেই সেই ছেলেটির তীক্ষ্ণ চাহুনি তার দৃষ্টির সঙ্গে মিলিত হয়। ছেলেটি গিটারটা কোলে নিয়ে টুংটাং শব্দ তুলে তৃষার চোখের দিকে চেয়ে গান ধরল,
~আমি তোমাকে আরো কাছে থেকে
তুমি আমাকে আরো কাছে থেকে
আমি তোমাকে আরো কাছে থেকে
তুমি আমাকে আরো কাছে থেকে
যদি জানতে চাও, তবে
ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও
ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও~
হঠাৎ আকাশ ভেদ করে বৃষ্টি নামে। শিমলা তাড়া দেয় তৃষাকে যাওয়ার জন্য। তবে তৃষা একই ভাবে চেয়ে থাকে প্রেম নেওয়াজের দিকে। মানুষজন জায়গা ছেড়ে কোথাও নড়ছে না। প্রেম নেওয়াজের এই বৃষ্টি ভেজা গানের আসর ছেড়ে কোথাও যাওয়া যায় নাকি? শিমলা আর তৃষার সামনে গিয়ে দুটো মেয়ে যাচ্ছিল। তাদের মধ্যকার একজন শিমলাকে বলে, ‘আরে খবর পেয়েছো?’
‘কী?’
‘ওই ছাত্রলীগ নেতা আর তার চামচা এখন হাসপাতালে ভর্তি। আল্লাহ জানে কাল তো ভালো ছিল। কে এমন ভাবে পশুর ন্যায় পেটাতে পারে? জানো কিছু?’
শিমলা মাথা দু’পাশে নাড়াল। সে জানে না কিছু। তবে মেয়ে দু’টো চলে যেতেই একবার প্রেমের দিকে তাকালো। তারপর তৃষাকে হিসহিস করে বলল, ‘কিরে আমার তো মনে হচ্ছে প্রেম ভাই মেরেছে। তুই কিছু জানিস নাকি?’
তৃষার দৃষ্টি এবার আরো গভীর ভাবে মিলল প্রেমের দৃষ্টির সঙ্গে। দু’জনের দৃষ্টি একে ওপরের দিকে। তবুও কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছে না। তৃষা প্রেমের দিকে তাকিয়ে শেষবার মনে মনে সুধিয়ে উঠল, ‘আপনি যে ওই ছেলে দু’টোকে কুত্তার মতো উদম কেলিয়েছেন তা বুঝতে তৃষার নেনো সেকেন্ডও খরচা করতে হয়নি। আহা প্রেম ভাই আপনার এতগুলো রূপ নিয়ে চলাফেরা করতে বুঝি একটু কষ্ট হয় না?’
–
তৃষার ব্যাগ গোছাতে গোছাতে সন্ধ্যা হয়। এখন মনটা ফুরফুরে লাগছে। লাগার কারণ আছে। ওইযে প্রেম নেওয়াজ যে কেলানি দিয়েছিল। শালার ঘরের শালার জন্য কত লিটার চোখের পানি অপচয় হয়ে গেল রে! এসব কত কষ্ট করে বাঁচিয়ে রেখেছিল সে। প্রত্যুষের সঙ্গে যেদিন তার বিয়ে হবে সেদিন একটু কান্না করতে হবে না? না কাঁদলে বিয়ের ফিলিংস আসে নাকি?কিন্তু এত দামি মেক-আপটা যদি খাল্লাস হয়ে যায়? শিমলা ওই বাড়ির ঠিকানা তৃষাকে দিয়েছে। জিনজিরায় বাড়িটা। নামটা এত খেয়াল করেনি। আগে তো ওই এলাকায় গিয়ে পৌঁছাতে হবে। যাওয়ার সময় শিমলা এমন ভাবে কাঁদছিল যেন তৃষা মরে-টরে গেছে। আর কখনো দেখা হবে না। আর ওর মাকে দেখো। সে তো কত ঢং করে বলল, ‘এখানে থেকে গেলেই পারতে মা।’ ইশ কী ঢং। অথচ পাশের রুমে তৃষা এখনো যায় না কেন তা নিয়ে কাহিনী করেছে। ছ্যাহ!
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে শিমলাকে আবার কল দেয়। ভুল কোনো ঠিকানা দিলো না তো? শিমলা নিশ্চিত হয়ে জানালো তার দেওয়া ঠিকানায় কোনো ভুল নেই। ভুল হতেই পারে না। তৃষা গেটের সামনে তাকিয়ে আরো একবার নামফলকের দিকে দৃষ্টি স্থির করল। বাড়ির নাম নেওয়াজ কুঠির। ওই ঘুরেফিরে নেওয়াজই রাখতে হলো? ধ্যাৎ যেখানে যায় সেখানেই নেওয়াজ চলে আসে। আর ভালো লাগছে না রে। তবে নেওয়াজ তো বাংলাদেশে কত নেওয়াজই আছে। প্রেম নেওয়াজের সঙ্গে এই বাড়ির কোনো সম্পর্কে থাকতে পারে না। এটা অন্য কোনো নেওয়াজদের বাড়ি হবে। তৃষা দারোয়ানকে বলে ভেতরে ঢুকতেই দেখল একটা কালো প্রিমিও ভেতর থেকে বের হচ্ছে। প্রথমে দেখতে পায়নি তৃষা। আচমকা গাড়ির সামনে পড়তেই থমকে যায় সে। ড্রাইভিং সিটে বসা ব্যক্তিকে দেখার আগেই সে গ্লাস নামিয়ে আঙ্গুল বের করে ইশারা করে তৃষাকে কাছে আসার জন্য। তৃষা কাছে এসে তাকাতেই থমকে যায়। একই সঙ্গে থমকে যায় সেই মানুষটিও। দু’জনে একসঙ্গে বলে ওঠে, ‘প্রত্যুষ আপনি?’
‘তৃষা তুমি?’
চলবে?
#প্রেমতৃষা
#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_১২
নেওয়াজ কুঠিরের অন্দরমহলে সবাই একত্রিত হয়েছে। প্রত্যুষের আর বাইরে যেয়েও যাওয়া হলো না। তৃষার তো খুশিতে হাতির পাঁচ পা দেখার মতো অবস্থা। এবার মনে হয় এক দফা, এক দাবি আন্দোলন করে হলেও মিসেস দেওয়ান তাকে এই যাত্রায় হতেই হবে। কিন্তু এমন ভদ্রলোককে পটাতে হলেও নিজের ভদ্রলোক হওয়াটা আগে অতিব গুরুত্বপূর্ন। তৃষা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে এখন থেকে সে একেবারে নম্র, ভদ্র আচরণ করবে। কম কথা বলবে, এমন ভাব করবে যেন গালি নামক শব্দ সে ২০ বছরের জীবনে প্রথম শুনল। তাকে এমন ভাব বজায় রাখতে হবে যেন সে মুখ খুলে বলতে পারে, ‘আমি কালি,নলি, খালি,জালি সব শব্দ শুনেছি, এমা এই গালি আমার কী? ওই যে মুরগির পেটে যে গিলা থাকে না ওইটার কথা বলছেন নাকি?’
হেতিজা কাজের মেয়েকে দিয়ে আগেই তৃষার জন্য রুম ঠিকঠাক করে রেখেছেন। প্রথম যখন তৃষাকে দেখলেন তখন কিছুক্ষণ হা করে চেয়ে রইলেন। মেয়ে তো ভারী সুন্দর। পটলচেরা চোখ, গোল-গাল একটা মুখ। চুলগুলো এত একটা লম্বা না। তবুও তো ভীষণ মিষ্টি দেখতে। তাছাড়া মেয়ের ব্যবহার দেখছো? পারিবারিক শিক্ষা আছে বলতে হবে। তবে হেতিজা সবচেয়ে বেশি খুশি তো তখন হয়েছেন যখন জানলেন তৃষা আর প্রত্যুষ একে অপরকে আগ থেকেই চেনে। ছেলে তার মেয়েদের সাথেও কথা বলে তাহলে? যাক ভালোই হলো। ছেলের যদি এই যাত্রায় কাউকে মনে ধরে, একটা গতি হয় ভালোই হবে। হেতিজা তৃষাকে পইপই করে বললেন, ‘শুনো মা আমার মেয়ে প্রেমান্তি কিন্তু হারে বজ্জাত স্বভাবের। কাজের কাজ ছাড়া দুনিয়ার সব অকাজ-কুকাজে এক্সপার্ট। সারাদিন কোরিয়ান ড্রামা দেখে। ওইযে সুন্দর সুন্দর কোরিয়ান ছেলে আছে কতগুলো ওগুলোকে ওপ্পা না আপ্পা ওইসব ও ডাকে। রাতে ওদের ছবি বালিশের নিচে রেখে না ঘুমালে তার নাকি স্বপ্নে ব্যাঘাত ঘটে। দেখো আমি খালি টিউশনের জন্য তোমাকে রাখিনি। ওকে সারাদিন নিজের সঙ্গে রেখে মানুষ করবে বলে রেখেছি। তোমার টাকা-পয়সা, যাবতীয় খরচা কিছু নিয়েই চিন্তা করতে হবে না। তুমি খালি মেয়েটাকে মানুষ করে দাও। মাথায় তার প্রেম পিরিতের ভূত। ওই ভূত তুমি থেরাপি দিয়ে ছাড়িয়ে দাও। দুইবছর ধরে ইন্টারে পরে আছে। এইচএসসি দেওয়া আর হচ্ছে না। এসএসসিটা অনেক কষ্টে দিয়েছে। তাও কোনোমতে পাশ করে। ওর সাথের মেয়েটা পড়ালেখায় ভালো ছিল। ওটাকে ঘুষ দিয়ে সব দেখানোর জন্য রাজি করেছিলাম। কত কাহিনী।’
হেতিজার কথা শুনে প্রথমে তৃষার মাথাটা ভনভন করে উঠেছিল। কি একটা অবস্থা। পরে ভাবল হবু ননদিনীই তো। একটু সাহায্য সহযোগিতা তো সে ফকির-মিসকিনদের কেও করে আর ননদকে করতে পারবে না? এত ছোটলোকও না সে। তৃষা প্রেমার সঙ্গে পরিচয় হয়ে একেবারে রুমে গেল। বড়লোকের সব বড়লোকি করবার। এত আলিশান রুম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডান দিকটায় তাকাতেই অনেকটা দূরে বাতি দেখতে পেল। ভালোই একটা আলো। অন্ধকার তো। তাও রাতের বেলা। এত বুঝল না ওইখানে কী থাকতে পারে। তবে কিছুক্ষণের মাঝেই তার রুমে প্রত্যুষ প্রবেশ করল। তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?’
তৃষা আড়চোখে একবার প্রত্যুষের বুকের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণে বলল, ‘আপনি খালি গায়ে জিম করবেন, গোসল করে এসে নগ্নবুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন আর সেইসব আমি মাঝেসাঝে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখব এর চেয়ে সুবিধা আর কি হতে পারে?’
‘কী চুপ কেন? কথা বলো।’
তৃষার হুঁশ ফিরতেই সে বলল, ‘আরে না না অসুবিধা হবে কেন? যেই সুবিধা আপনারা দিচ্ছেন। তবে এখনো ভাবতে পারছি না আপনার সঙ্গে এমন ভাবে দেখা হয়ে যাবে। আর এখন থেকে সাক্ষাৎ টা রোজ হবে।’
প্রত্যুষ মুচকি হেসে বলল,’চা নাকি কফি?’
‘চা আমার জন্য বেশি কমফোর্ট তবে আজকে একটু কফি হলে ভালোই হবে।’
‘ওয়েট আমি বানাচ্ছি। তারপর ছাদে গিয়ে না হয় কথা হবে।’
‘এই সময়?’
‘কেন ভয় হচ্ছে? ছাদ থেকে ফেলব না। ভয়ের কি আছে?’
‘আরে না ভয় হবে কেন? তবে আজকেই এই বাড়িতে এলাম। আপনার বোনের টিচার আমি। বাড়ির মানুষ কী মনে করবে?’
‘টিচার হওয়ার আগে কিন্তু পরিচয়টা আমার সঙ্গেই হয়েছিল।’
‘তা ঠিক।’ তৃষা মুচকি হাসল।
ছাদে এসে দু’জনে কার্নিশে পাশাপাশি বসে পড়ল। রাত তখন অনেকটাই হয়েছে। শহরের আলো নিচে ঝলমল করছে, তবে ওপরে আকাশ পুরো অন্যরকম। আধখানা চাঁদ ভেসে আছে। চারপাশে অগণিত তারা। প্রত্যুষ চুপচাপ চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর বলল, “চাঁদটাকে যত দেখি, ততই মনে হয়, ও একেবারেই নিঃসঙ্গ। কোটি কোটি তারা আছে চারপাশে, তবুও সে কত একা।”
তৃষা হালকা হেসে জবাব দিল, “চাঁদের এই নিঃসঙ্গতাই তো ওকে আলাদা করেছে। যদি সবার মতো হতো, তাহলে হয়তো আমরা ওর দিকে এমন ভাবে ফিরে তাকাতামই না।”
প্রত্যুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কিন্তু আলাদা হয়ে থাকাটা কি সুখের? আমাদের জীবনও তো এমন,ভিড়ের মধ্যে থেকেও একা হয়ে যাই আমরা। এই একাকীত্ব কি আদৌ সুখ দেয়?”
তৃষা একটু থেমে গম্ভীর হলো। “হয়তো এটাই বাস্তবতা। সবাই ভাবে তার চারপাশে অনেক মানুষ আছে, কিন্তু শেষমেশ নিজের লড়াইটা একাই করতে হয়।”
হাওয়া একটু জোরে বইল। তৃষার চুল উড়ল বাতাসে, প্রত্যুষ চুপচাপ তাকিয়ে রইল।
তৃষা এবার বলল, “আপনি কি খেয়াল করেছেন, দিনের আকাশে আমরা চাঁদকে দেখি না, কিন্তু সে তখনও থাকে। জীবনের অনেক সম্পর্কও এরকম—চোখে দেখা যায় না, অথচ আছে।”
প্রত্যুষ মৃদু হেসে সায় দিল। “হ্যাঁ। হয়তো আমরাও তাই… সব কথা বলি না, তবু আকাশের মতোই চুপচাপ পাশে থেকে যাই। আচ্ছা তুমি খেয়াল করেছো, শহরটা দিনে যত কোলাহল করে, রাতে ততটাই একা হয়ে যায়?”
তৃষা চায়ের কাপটা আঁকড়ে ধরে বলল, “শহর একা হয় না। একা হই আমরা। দিনের ভিড়ে সেটা বুঝি না, রাতে আকাশের নিচে টের পাই।”
প্রত্যুষ হালকা হেসে ফেলল। “তুমি সবকিছুকে এত দার্শনিকভাবে দেখো কেন?”
“এটা দর্শন নয়। এটাই তো বাস্তবতা। আমরা কত দৌড়াই, কত হাসি-আনন্দ করি, অথচ শেষমেশ নিজেদের ঘরে ফিরে আবার চুপ হয়ে যাই। সত্যি কথা বলতে কি, আমি মাঝে মাঝে ভয় পাই। ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই যে পড়াশোনা, কাজ শেষমেষ কি এসবের ভিড়েই আমাদেরকে হারিয়ে যেতে হবে?”
প্রত্যুষ গম্ভীর হলো। “আলাদা হয়ে থাকা সহজ নয়। আবার ভিড়ের সঙ্গে মিশেও নিজের মতো থাকা কঠিন। এই তো আমাদের লড়াই।”
কিছুক্ষণ তারা চুপ করে রইল। ওপরে তারাগুলো মিটিমিটি কেমন জ্বলছে। তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
তৃষা নড়েচড়ে বলল,” আপনি কাউকে ভালোবেসেছেন কখনো?”
‘ভালোবাসার মতো সৌভাগ্য আমার জীবনে আসেনি। তবে একজনকে ভালোবাসতে দেখেছি, ধ্বংস হতে দেখেছি খুব কাছ থেকে। একতরফা ভালোবাসার ক্ষমতা সেদিন অনুভব করেছিলাম।”
তৃষা চুপচাপ শুনছিল। প্রত্যুষ পুনরায় ধীরে বলল, “অদ্ভুত না? একতরফা ভালোবাসা মানুষকে যতটা কষ্ট দেয়, ততটাই বাঁচিয়ে রাখে। মনে হয় কেউ জানুক না জানুক, আমি অন্তত তাকে ভালোবেসেছি—এইটুকুই আমার বেঁচে থাকার কারণ, আমার জন্য এক টুকরো সান্ত্বনা।”
তৃষা ম্লান হেসে সায় দিল। “কিন্তু সান্ত্বনা চিরকাল টেকে না। একসময় সেই ভালোবাসাই একাকিত্ব হয়ে ফিরে আসে।”
দু’জনেই কিছুক্ষণ চুপ। বাতাসে কেবল ঝাপটায় কাগজের শব্দ।
প্রত্যুষ এবার গম্ভীর হয়ে বলল, “ভালোবাসার আসল ভয়টা কোথায় জানো? শুরুতে নয়, শেষের দিকে। যখন বুঝি সব শেষ হয়ে যাচ্ছে—তখনও বুকের ভেতর অনুভূতি থেকে যাচ্ছে, ভালোবাসা থেকে যাচ্ছে। বিচ্ছেদ আসলে ভালোবাসাকে মারে না, বরং আরও জাগিয়ে তোলে।”
তৃষা ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। তার চোখ কোথাও দূরে।
“হয়তো ঠিকই। ভালোবাসা তো শেষ হয় না, শুধু মানুষগুলো আলাদা হয়ে যায়। আমরা ভাবি ভুলে গেছি, আসলে ভুলতে পারি না। বরং নীরবতার ভেতর আরও তীব্র হয়ে ওঠে ভালোবাসার ক্ষত।”
প্রত্যুষ মৃদু হেসে বলল, “তাহলে কি ভালোবাসা মানেই শেষমেশ একাকিত্ব?”
তৃষা উত্তর দিল না। হাওয়ার ঝাপটায় তার চুল এলোমেলো হলো, সে কেবল দম নিয়ে বলল, “হয়তো। তবু মানুষ বারবার ভালোবাসে। কারণ একাকিত্বের ভেতর যে শূন্যতা, সেটা ঢাকতে হলেও ভালোবাসতে হবে। বার বার শতবার, নতুন কাউকে নয়তো একজনকেই বহুবার।”
“জানো, আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমরা এত ভেতরের কথা আকাশের সঙ্গে বলি, অথচ একে অপরকে বলার সাহস হয় না।”
তৃষা কাপ থেকে শেষ চুমুক নিয়ে উত্তর দিল, “কারণ আমরা জানি, কথা বললে হয়তো বাস্তবতা পাল্টে যাবে। আর আমরা কেউই হয়তো সেটা চাই না।”
তৃষা এবার প্রত্যুষের দিকে তাকাল।
প্রত্যুষ আর তাকাল না, কেবল বলল, “চল, নেমে যাই। রাত অনেক হলো। আকাশ থাক তার মতো, আমরা আমাদের বাস্তবতায় ফিরি।”
–
রাতের আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা। দূরের শহরের একটানা মৃদু বাতি আর ধূসর আলো ফাঁকে ফাঁকে ছায়া ফেলছে। রাস্তার ধারে দাঁড়ানো বাইকগুলো। লাইট ঝলমল করছে, ইঞ্জিনের তাপে বাতাস কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। প্রেম নেওয়াজ হেলমেট ঠিক করে বসেছে তার বাইকে। তার পাশে দলমতের কিছু সদস্য।
“প্রস্তুত?” তার দলের একজন জিজ্ঞেস করল।
প্রেম শুধু মাথা নাড়ল। কোনো শব্দ নেই। প্রেমের উপরের দিকে কালো লেদারের জ্যাকেট, কাঁধ এবং কোমরের চারপাশ প্যাডিং দিয়ে তৈরি।। জ্যাকেটের পিছনে সূক্ষ্ম স্ট্রাইপ। যা বাইকের লাইটে ঝলমল করছে।
নিচে পরা ডার্ক গ্রে বা ব্ল্যাক ফিটেড জিন্স।
পায়ে মোটরসাইকেল বুট। পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ঢেকে রাখে যাতে ব্রেক বা স্টান্টের সময় সে নিরাপদ থাকে।
হাতে কালো ফিটেড গ্লাভস। রেস শুরু হলো। রাতের নিঃশব্দতা ভাঙল বাইকের গর্জন দিয়ে। প্রেমের হাত, পা, চোখ সব কিছুই এক ছন্দে। বাইক যেন তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অংশ। চারপাশে অন্য দল।
রাস্তায় বাঁক আসল।প্রেম নিখুঁত কন্ট্রোলে বাইক ন্যাভিগেট করল। বাতাস কেটে যাচ্ছে, চুলগুলো হেলমেটের ভেতরও উড়ছে। প্রতিপক্ষ চেষ্টা করছে তাকে পেছনে ফেলার। কিন্তু প্রেমের চপলতা এবং অভিজ্ঞতা সবকিছু ছাপিয়ে গেছে। শেষ লম্বা সরাসরি পথ। প্রেম তীব্র গতি, প্রতিটি রেসিং লাইন পার করে। ধুলো উড়ছে, কাদা ঝাপসা করছে, কিন্তু সে থামছে না। শেষ ফ্ল্যাগের কাছে পৌঁছতেই। প্রেম নেওয়াজ জিতল। রেসের শেষে, বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলল। সবাই গর্জে তাকে চিয়ারআপ করছে। দলের সবাই পানি, হুইস্কি, ড্রিংকস নিয়ে তার দিকে ছুটে এলো, চিৎকার করে, হাত তুলে চিয়ার করতে।
“দেখেছিস? আমরা জানতাম তুই পারবি প্রেম।” কেউ একজন বলে উঠল। প্রেমের দলের লেডি বাইকারটার হাতে পানির বোতল। সে এগিয়ে দিতে যাবে তখনই হেরে যাওয়া প্রতিপক্ষ বলে উঠল, ” হেরে গেছি তো কি হয়েছে এলিসা? তুমি আজকে রাতটা আমার সঙ্গে কাটিয়ে আমায় জিতিয়ে দাও না।” এলিসার প্রেমের দিকে তাকাতেও এলো না। সে বাইকের ওপর হেলমেটটা রেখে নিচে নেমেই বলা নেই, কওয়া নেই একের পর এক ঘুষি মারতে থাকল ছেলেটিকে। ছেলেটি নিজেও বুঝতে পারেনি। সবাই এসে প্রেমের হাত থেকে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও পারছে না। শেষে অংকুর এসে অনেক কষ্টে প্রেমকে টেনে সাইডে নিয়ে যায়। প্রেম বলে উঠল, ‘আরে ছাড় আমাকে। একে তো হেরেছে তার ওপর আমার দলের বাইকারকে নোংরা কথা বলেছে? ওকে রুমেই পাঠাবো। তবে বেডরুম না, হাসপাতালের রুমে।”
ততক্ষণে ভিড় জমে গেছে। কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠে বলল, ‘আরে প্রেম ভাই এই ছেলের শ্বাস চলছে না।”
অংকুর সেই কথা শুনে প্রেমের দিকে তাকাতেই প্রেম ভাবলেশহীন ভাবে বলল, ‘মাটি খুঁড়ে চাপা দিয়ে দে শালাকে।’
–
কালরাতে আর ঘুম হলো না। প্রত্যুষের সঙ্গে কথা বলার পর আর একটুও চোখ জুড়ে ঘুমেরা এলো না। ভোরের দিকে ঘুম ভাঙল তৃষার। সে উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াতেই এবার ডান পাশটায় চোখ গেল। ওইপাশটায় এত জঙ্গল কেন? লম্বা সব গাছের জন্য তো ভালো করে কিছু দেখাও যাচ্ছে না। তৃষার একটু হাঁটাহাঁটি করা দরকার। সে পানি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো। বাড়ির বাইরে যাবে কি যাবে না ভাবতে ভাবতে চলেই গেল। কত বিঘা জমির উপর এই নেওয়াজ কুঠির? আচ্ছা প্রত্যুষের নামের শেষে তো দেওয়ান পদবী তাহলে বাড়ির নাম নেওয়াজ কেন? অদ্ভুত তো ভীষণ। বাড়ির সামনে ঝরণা। ফলফলাদির গাছের অভাব নেই। কী সুন্দর করে সাজানো গুছানো সব। তৃষা হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেল আরো সামনের দিকে। এখনও পুরোপুরি আলো ফুটেনি। তৃষা হাঁটতে হাঁটতে কখন যে জঙ্গলের দিকে পৌঁছে গেল। এদিকটায় আসার পর বুঝতে পারল ফোনটা সে রুমে রেখে এসেছে। এমন অন্ধকার একটা হাতে বানানো বন। যাও সূর্যের আলো ছিল। এদিকটায় আসার পর সেই অবশিষ্ট আলো গুলোও অন্ধকারে বদলে গেল। জঙ্গলটা একটা সময় ফুরিয়ে গেল। একেবারে ছোট্ট একটা বন। শেষের দিকে আসতেই চোখে পড়ল একটা দোতলা কাঠের বাড়ি। চারিদিকে কেমন ছিমছাম। মাঝে একটা বাড়ি। তৃষা আর এগোবে কিনা ভাবতে ভাবতেই কানে একটা শব্দ এলো। মাটি খোঁড়ার শব্দ। এই অসময়ে কে মাটি খুঁড়ছে? সে এবার একটু ভয় অবশ্য পেল। কিন্তু ভ্রম ভেবে পাত্তা না দিয়ে আরো দুই কদম এগুতেই একটা গুনগুন শব্দ এলো। তার পা মুহূর্তেই থমকে গেল। জমাট বাঁধল। সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে কেউ গান গাইছে। এই গানের সুরটা তার পরিচিত। গানের গলা আরো স্পষ্ট হলো। শরীরের ডান পাশ দিয়ে বয়ে গেল একটা শিহরণ। কেউ গাইছে আর মাটি খুঁড়ছে।
~প্রেম আমার ওওওওও প্রেম আমার।~
তৃষা আরেকটু এগিয়ে যেতেই হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ একজন তার মুখটা চেপে ধরল। তৃষা তার হাতের দিকে তাকালো। কালো একটা হুডি পড়া। তৃষা চিৎকার করার উপায় পাচ্ছে না। হঠাৎ লোকটা তার কানের কাছে এলো। ঘাড়ের কাছে মুখ রাখতেই বলল, “কোন ভুলে তুমি শুলে বলো এই ফুলশয্যায়? স্বপ্নের লাশ কাঁধে নিয়ে ওরা কেন চলে যায়?”
চলবে?
#ইশরাত_জাহান_জেরিন
Share On:
TAGS: ইশরাত জাহান জেরিন, প্রেমতৃষ্ণা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৫+১৬
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৭+১৮
-
প্রেমতৃষা গল্পের লিংক
-
প্রেমতৃষা পর্ব ২+৩
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৯+২০
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৮+৯+১০
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৪+৫
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৬+৭
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৩+১৪