Golpo romantic golpo প্রিয় প্রণয়িনী

প্রিয় প্রণয়িনী সিজন ২ পর্ব ১৬


#প্রিয়_প্রণয়িনী২

#জান্নাত_নুসরাত

(১৬)

রেস্টুরেন্টের এক কোণোয় বসে আছে এশমাম এহসান। দু-জনের মুখে স্পষ্ট চোরের লক্ষণ ভেসে ওঠছে। যে কেউ দেখলে বলবে নির্ঘাত চুরি করে ধরা পড়ে এখানে এসে বসেছে। তাদের সেসবে কোনো পাত্তা নেই। যে যা ভাবার ভাবুক, বর্তমানে তাদের চোখ সবসময় সামনের ম্যামের দিকে থাকবে, আর কোনো দিকে নয়। আর এই অবস্থা কেউ যদি দেখে বলে তাদের চোরের মতো মনে হচ্ছে তাদের কিছু যায় আসে না। এটা তাদের ডিউটি!

দুজনের চোরের মতো বসে থাকার মধ্যে ফোনে কল আসলো হেলাল সাহেবের। কল পিক করে স্পিকারে দিয়ে কানে ধরল এহসান। হেলাল সাহেব অপরপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে জানতে চাইলেন এদিকের পরিবেশ এখন কেমন! গত একঘন্টা কেন তাকে কোনো খবর দেওয়া হয়নি। এশমাম আর এহসান নিজের অপরাগতায় ক্ষমা চেয়ে নিল। হেলাল সাহেব হয়েছে হয়েছে বলে জানতে চাইলেন কী হচ্ছে এখন! এহসান জানাল,”স্যার ম্যাম চশমা পরে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছেন পায়ের উপর পা তুলে৷ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে ক্যাপাচিনো খাচ্ছেন। ঠোঁটের কোণে হাসির রেশ লেগে আছে। মনে হয় কিছু একটা দেখে হাসছেন, কিন্তু কী দেখে হাসছেন তা জানি না!

এহসান কথা শেষ করার আগেই নুসরাত ওঠে দাঁড়াল। এশমাম ফিসফিস করে জানাল,”স্যার ম্যাম এখন ওঠে দাঁড়িয়েছেন। মনে হয় রেস্টুরেন্ট থেকে চলে যাবেন!

দু-জন নুসরাতকে আসতে দেখে নিজেদের মুখ ম্যানু কার্ডের আড়ালে ঢেকে ফেলল। নুসরাত তাদের পাশ কাটাতে কাটাতে ভারী গলায় এহসান আর এশমামের উদ্দেশ্যে বলে ওঠল,”গাধারদল।

এহসান গুরুত্বপূর্ণ খবর হতে পারে মনে করে হেলাল সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলল,”স্যার এই মাত্র ম্যাম আমাদের পাশ কাটাতে কাটাতে গাধারদল বলে গেছেন।

হেলাল সাহেব ফোনের অপরপ্রান্তে মাথায় হাত দিলেন। বিড়বিড় করে কিছু একটা বললেন। তার পরমুহূর্তে আদেশ দিলেন,”তোমরা এখনো রেস্টুরেন্টে বসে আছো?

“জি স্যার”

হেলাল সাহেব ধমক দিয়ে বললেন,

“বসে আছো কেন? যাও ওর পিছু করো। নাহলে একটা টাকা পাবে না।

দু-জন একসাথে ওঠে দাঁড়িয়ে একসাথে বলে ওঠল,

“ইয়েস স্যার।

______________________________________________

উন্দাল কিং কাবাব রেস্টুরেন্টে মেয়েদের ভীরে বসে আছে ইরহাম। চারিদিক থেকে মেয়েরা ইরহামকে ঘিরে রেখেছে। তাদের মধ্যে একজন আশামীর ন্যায় মুখ কুঁচকে বসে আছে সে। নিজের বোকামিতে নিজে বিরক্ত। আজ যদি এখানে না আসত তাহলে এই বিপদ এসে তার মাথায় পড়ত না। ইরহাম ক্ষীণ কন্ঠে বলে ওঠল,”ছোটভাই মনে করে আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার বোনেরা। আমার মতো বাচ্চা ছেলে তোমাদের সাথে এসব করতে পারে? আর করে থাকলে আমি সেটা বুঝে করিনি!

ইরহামের আকুল আওয়াজে করা আর্জিতে এখানে বসা একজন মেয়ের ও ভাবাবেগ হলো না।তারা কঠোর চোখে ইরহামকে লক্ষ কিরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,” আমাদের সাথে এতদিন তুই নাটক করেছিস, আজ আমরা সবাই তকে প্রতারণা মামলায় ফাসিয়ে পুলিশে দিব। এতগুলো মেয়ের সাথে প্রতারণা করতে তোর বুক কাঁপল না। তোর মতো বদমাস ছেলেকে পুলিশের লাঠির বারির হাত থেকে আজ কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

ইরহাম নিষ্পাপ মুখ বানিয়ে বসে থাকল মেয়েগুলোর মধ্যে। নিজ মনে নিজেকে হাজারখানেক গালি দিল।

সৌরভিকে নিয়ে বাহিরে উন্দাল কিং রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছিলেন নিজাম শিকদার। এখানে আসার পর ইরহামকে মেয়েদের দ্বারা এমন ঘেরাও দেখে লজ্জায় চোখ ঢেকে ফেললেন। সৌরভিকে শক্ত কন্ঠে বললেন,”নাউজুবিল্লাহ্! দেখ, তোর বান্ধবীর ভাইয়ের নমুনা। তোকে কতবার আমি না করেছি সৈয়দ বাড়ির এই তিন নমুনার সাথে না মিশতে তুই তবুও আমার নিষেধাজ্ঞা না মেনে ওই বেয়াদবের সাথে থাকিস। আর ওই বেয়াদবের সাথে এই বদমাস সারাদিন আটার মতো লেগে থাকে। এসব দেখেই তো আমার চোখ ঝলসে যাচ্ছে একদম। ছি্হ ছি্হ..! আল্লাহ হেদায়েত দান করুক এদের।

সৌরভি আরষ্ট গলায় নিজাম শিকদারকে আস্বস্থ করে বলে,”আর মিশব না ওদের সাথে।

নিজাম শিকদার রাগে রি রি করা গলায় বললেন,

“দেখো মেয়েদের মাঝখানে কীরকম বসে আছে! পুরুষ মানুষ হয়েও এর চাহনি দেখলে আমার ঘিন্নায় গা ঘোলায়, বদমাসের মতো মেয়েদের দিকে চেয়ে থাকে। আমার দিকে ও কেমন করে তাকায়!

সৌরভি সূক্ষ্ম ঢোক গিলল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,” আর মিশব না ওদের সাথে বলছি তো। এবার তুমি চিৎকার করা বন্ধ করো দাদা।

নিজাম শিকদার সতর্ককীরণ কন্ঠে সৌরভিকে সাবধান করে জানালেন,”মনে থাকে যেন। নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।

সৌরভি হ্যাঁ ভঙ্গিতে মাথা নাড়াল। নিজাম শিকদার খাবার অর্ডার বাদ দিয়ে উঁকি দিয়ে চেয়ে রইলেন ইরহামের সাথে মেয়েগুলো কী করে তা দেখার আশায়।

ইরহাম মেয়েগুলোকে আবার বোঝানোর জন্য বলে,

“প্লিজ আমি বুঝতে পারিনি। নিজেদের ভাই ভেবে আমাকে আজকের মতো ছেড়ে দাও। আর জীবনে এসব করব না।

একটা মেয়ে হাত তুলে তেড়ে আসলো তার দিকে। চোখ রাঙিয়ে ইরহামকে শাসাল। হিসহিস কন্ঠে বলল,” চপ্! একটা শব্দ না। মুখ সেলাই করে রেখে দেব।

ইরহাম মুখ এঁটে বসে রইল। নিজাম শিকদার সৌরভিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”ভালো হয়েছে। বেশ হয়েছে। বেশি কথা বললেই এভাবে ধমক খেতে হয়। বদমাস ছেলে! নির্লজ্জ ছেলে! কতগুলো মেয়ের সাথে রঙ্গলীলা করছিল। অতি চালাকের গলার দড়ি। হুহ…

এর মধ্যে কাচের দরজা ঠেলে নুসরাত প্রবেশ করল রেস্টুরেন্টে। চোখে মুখে তার স্পষ্ট উদ্বেগ ফুটে উঠেছে। চোখ আশে-পাশে ঘুরাতেই ইরহামকে দু-হাত সামনে এনে নিষ্পাপ বাচ্চার মতো ঠোঁট উল্টে বসে থাকতে দেখল নুসরাত। দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসল সেদিকে। নিজাম শিকদার বিড়বিড় করলেন,”আরেক নমুনা আসছে। দেখো এখন এ আবার কী নাটক করে!

সৌরভি নিজের দাদার দিকে চেয়ে রইল পাংশুটে বর্ণের মুখ বানিয়ে। সে আসলে বুঝতে পারে না, তার দাদার নুসরাত আর ইরহামের সাথে সমস্যাটা কোথায়! উঁহু কোনো সমস্যা নেই, এমনি শুধু শুধু নুসরাতের উপর চড়াও হয় বুড়ো লোকটা। সৌরভি আগ্রহী চোখে সামনে উঁকি দিল,দেখার আশায় কী করে নুসরাত! দেখল নুসরাত মেয়েগুলোর মাঝখান থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসছে ইরহামকে। একাই পুরুষালি শরীরটা এক টানে তুলে নিয়ে এসেছে চেয়ার থেকে। তারপর মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে শক্ত চোখে চেয়ে রগরগে কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,”ওকে এখানে এভাবে কে বেঁধে রেখেছে?

একটা মেয়ে নুসরাতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বলে ওঠল,”আমি বেঁধে রেখেছি, কী করবে আমায়? মারবে?

নুসরাত ঘাড় কাত করে হাসল। মেয়েটা আবার চিৎকার করে কিছু বলতে নিবে নুসরাত দু-হাত দিয়ে মেয়েটার মুখ চেপে ধরল। নিজের ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে মেয়েটার কানের কাছে মুখ নিল। মেয়েটা তার তুলনায় কিছুটা খাটো হওয়ায় নুসরাতকে ঘাড় একটু বাঁকাতে হলো। সামান্য ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে ওঠে,”আমি নুসরাত নাছির কী করতে পারি তা তোমার ধারণা বাহিরে, আর ধারণা করতে পারলে তোমার রুহ কেঁপে ওঠবে। প্রথম এবং শেষবারের মতো সাবধান করে দিচ্ছি,, একদম আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলার চেষ্টা করবে না।

নুসরাত নিজের হাতের আঙুলগুলো স্পর্শ করল মেয়েটা গলার কাছে।।মেয়েটার ঘাড়ের চামড়ায় কিছুক্ষণ হাত বুলালো নুসরাত। মেয়েটা একটুক্ষণের জন্য নিজের ঘাড়ে সামান্য ব্যাথা অনুভব করল। তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে নুসরাতকে কিছু বলতে নিবে ইরহাম নুসরাতকে টেনে সরিয়ে দিল পাশে। দু-হাত সামনে এনে জোর করে মাফ চেয়ে নিয়ে বলল,”বোনেরা আমার মাফ করে দাও! তোমাদের হৃদয় নিয়ে ছিনিমিনি খেলায়, আমি মোটেও কষ্ট বোধ করছি না। গর্বে আমার বুক ফুলে ওঠছে বারংবার।

কথাটা শেষ করে নুসরাতের দিকে চোখ বুলাতেই ইরহামের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল। এই মেয়ে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন ওই মেয়ের দিকে! তাকে বাঁচাতে এসে নিজে দ্বন্দে লেগে গেছে পাগলটা। এর জন্মের সময় হয়তো মাথার দু-একটা তার ছিঁড়ে গেছে নয়তো বেঁকে গেছে।

ইরহাম নিজের চিন্তাগুলো করতে করতে মেয়েটার গলার দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আর তখন চোখে ভাসে লাল তরল রঞ্জক। যা ভেবেছিল তাই ব্লেড বসিয়ে দিয়েছে এই পাগল ওই মেয়ের গলায়। ইরহাম নুসরাতকে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে পালানোর চিন্তা করল। এখানে থাকলে নির্ঘাত সে আর নুসরাত গণধোলাই খাবে। তাই গণধোলাই খাওয়ার আগেই পালানো শ্রেয়। নুসরাতকে ধাক্কা দিল মেইন ডোরের দিকে। জেদি মেয়েটা নড়ল না, অটল দাঁড়িয়ে থেকে ওই মেয়ের ঘাড়ের দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি বুলাল। বুঝতে চাইল হয়েছে কী-না ঠিকঠাক ক্ষত! ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে স্থির চেয়ে রইল মেয়েটার দিকে। যেন খুবলে ছিঁড়ে নিবে মেয়েটাকে। নুসরাতের মুখের অবস্থা ভালো না। ইরহাম অনুভব করল এখানে আর দু-মিনিট থাকলে এই মহিলা নিজের রাগের বোমা ফাটাবে। ওই মেয়ের আজ সর্বনাশ নিশ্চিত। তাই নিজে বাঁচতে, নুসরাতকে বাঁচাতে আর ওই মেয়ের জান বাঁচানোর জন্য ইরহাম নুসরাত না নড়া সত্ত্বেও টেনে নিয়ে যেতে লাগল। কিছুটা দূরে গিয়ে পুরুষালি মুখ উল্টে ভেংচি কাটল মেয়েগুলোকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,”তোমরা আমার আর কোনো বাল ছিঁড়তে পারবে না! হা হা..! আমি তো ভেগে গেলাম, তোমরা গাধারা এখন থেকে আমার আর একটা বালের ও সন্ধান পাবে না।

ইরহাম অট্টহাসি হেসে নুসরাতকে ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে নিয়ে বের হলো রেস্টুরেন্ট থেকে। দূরে বসা নিজাম শিকদার নিজের ঘোলাট চোখজোড়া নাতনির দিকে স্থির করলেন। রাগী কন্ঠে বললেন,”দেখেছিস, মুখের ভাষা কী খারাপ? আর এদের সাথে তুই সম্পর্ক রাখিস। এই দেখ, বিশজন মেয়ের মধ্যে একা বসেছিল, একা এদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে ছিল ওই বদমাসটা। এদের সাথে খারাপ কাজ করেনি তার কী কোনো নিশ্চয়তা আছে তোর কাছে? সৌরভি সময় থাকতে শুধরে যা, নাহলে তোর কপালে শনি আছে। এদের সাথে মিশা বাদ দিয়ে দে!

সৌরভি নিজাম শিকদারের সাবধানী বাণী এক কান দিয়ে ঢোকাল অন্য কান দিয়ে বের করে দিল। বিশেষ পাত্তা দিল না দাদার কথায়। হাসি হাসি মুখ করে নিজাম শিকদারের শুভ্র রাগী মুখ অবলোকন করল। আর শব্দ করে শুধু হাসল। হেসে উড়িয়ে দিল কথাগুলো। গায়ে মাখল না মেয়েটা একটা কথা।

______________________________________________

নাছির মঞ্জিলে তোলপাড় চলছে। ইসরাতকে মাঝখানে বসিয়ে রেখে বর্তমানে ফেসবুকে থাকা ট্রেন্ডিং ভিডিওটা বারবার পোজ, জোম করে দেখছে ইরহাম, আহান, আর নুসরাত। ঠোঁটে লেগে আছে সবার ব্যাঙ্গাত্মক হাসি। তাদের মধ্যে শুধু ইসরাত বিরক্তিকর মুখ বানিয়ে বসে আছে। মুখের ত্বক দেখলেই বোঝা যাচ্ছে সে এটা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে। নাহলে তাকে এখানে বসানোর সাধ্য কারোর নেই। নুসরাত পনেরো সেকেন্ডের ভিডিওটা গত দশ মিনিটে শ-খানেক বার দেখে নিয়েছে। ইরহাম আর আহান ভিডিওটা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলেও নুসরাত মনোযোগ সহকারে ভিডিওটা দেখছে। নুসরাতের এত মনোযোগীতা দেখে ইসরাত নিশ্চিত হয়ে গেল এই মেয়ে আজ সারারাত এই বিষয় নিয়ে তাকে হাজারবার টিজিং করবে। শেষ পর্যন্ত সবার অপেক্ষা অবসান ঘটিয়ে রিমোট চেপে ভিডিওটা অফ করে দিল নুসরাত। নুসরাতকে ভিডিও বন্ধ করে দিতে দেখে ড্রয়িং রুমের পরিবেশ নীরব হয়ে আসলো। নুসরাত কিছুক্ষণ নীরব থেকে ইসরাতের পানে চেয়ে হা হা করে হেসে ওঠল। হাসির তোড়ে সারা গা দুলে ওঠল তার। একবার ঢলে পড়ল ইরহামের গায়ে তো একবার আহানের গায়ে। হাসতে হাসতে কথা বলতে নিল ভিডিও বিষয়ক। মুখ দিয়ে একটা শব্দ বের হলো না শুধু ভোঁ ভোঁ আকার কিছু শব্দ বের হলো। এমনি কোনো কারণ ছাড়া সোফায় ঝুলে পেট চেপে হেসে গড়াগড়ি খেল। ইসরাত ভিডিওটার মধ্যে হাসির কোনো কারণ পেল না। এমন হাসির মানে কী! এরা পাগল না-কী এমনি নরমাল একটা ভিডিও নিয়ে হাসছে! হয়তোবা এরা পাগল। এ বাড়ির সব মানুষের মাথায় সমস্যা আছে, সে এতদিনে যা বুঝেছে। আর এই তিনজনের মাথায় সবথেকে বেশি সমস্যা আছে।

নুসরাতের হাসি দেখে ইরহাম ও হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হঠাৎ নুসরাত নিজের মুখ বন্ধ করে নিল, হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখ ভঙ্গি করে ওঠে দাঁড়াল। ইসরাত স্পষ্ট বুঝতে পারল এখন নুসরাত কী করতে যাচ্ছে। আর তাই হলো! নুসরাত সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর মুখ বানিয়ে ইরহামকে বলে ওঠে,”ইসরাত আপনি ঠিক আছেন?

ইরহাম কোমল কন্ঠে গলায় ইসরাতের মতো কিছুটা মিষ্টতা এনে বলে ওঠে,”হ্যাঁ জনাব, আমি ঠিক আছি!

নুসরাত নিজের জায়গায় স্থির থাকল। ইরহাম ততক্ষণে সোফা থেকে ওঠে গিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। নুসরাত তীক্ষ্ণ চোখ করে জায়িনের মতো মুখ ভঙ্গি রাখার চেষ্টা করল। হলো ও সেরকম! মেয়েটা হাত বাড়িয়ে ইরহামের থুতনি চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল,”আর ইউ সিউর বেগম!

ইরহাম আমতা আমতা করে লজ্জার সাগরে ডুবে গিয়ে বলল,”হ্যাঁ জনাব, আমি ঠিক আছি।

দু-জন কথা শেষ করেই অট্টহাসিতে ঢলে পড়ল। টাইলসের মেঝেতে ধুপধাপ হাসতে হাসতে একজন আরেকনের গায়ে পড়ল। ইসরাত মুখ ভঙি শক্ত রাখার চেষ্টা করল। হলো না, দু-জনের টিজিং-এ ইসরাতের গালে লাল আভা পড়েছে। হাত দিয়ে যথাসম্ভব তা ঢাকার চেষ্টা করল, কিন্তু নুসরাতের দৃষ্টি অগোচর হলো না তা। সে হেসে ওঠে ইরহামের বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ইশারা করে বলে,”দেখ, লজ্জা পাচ্ছে জনাবের বেগম!

কথা শেষ করে নুসরাত হে হে করে হাসতে লাগল। আহান ভিডিওটা আবার ওপেন করল। জায়িন যখন পিঠে হাত বুলিয়ে ইসরাতকে জিজ্ঞেস করল,আপনি ঠিক আছেন ইসরাত?আহান সাথে সাথে সেটা কপি করে নাকি স্বরে বলে ওঠল,”আপনি ঠিক আছেন ইসরাত?

নুসরাত ওড়না আড়ালে মুখ ঢাকল। লজ্জা পাওয়ার মতো করে মুখ উল্টো পাশে ঘুরিয়ে নিল। বাংলা সিনেমার আগেকার নায়িকাদের মতো উল্টো পাশ থেকে মাথা ঘুরিয়ে এক হাত দিয়ে কপালে চেপে ধরে অন্যহাত দিয়ে বুকের বাঁ-পাশ চেপে ধরে বলে ওঠল ,” না জনাব আমি আপনার প্রেমে পড়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছি। আমি এখন আর ঠিক নেই। আমি ঠিক নেই! হি হি হাহা হে হে..!

চলবে….

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply