#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা
#সাদিয়া
#পর্ব_৩৭
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
আষাঢ়ের দিন। আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা তবে বৃষ্টি নামেনি এখনও। মেঘের গুরুগুরু আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তাজ কলেজে এসেছিল মৌমিতাকে ভর্তি করতে। পড়াশোনা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলে সে। তাজ চায় মৌমিতা আবার পড়ুক , নিজের পায়ে দাঁড়াক। এই সমাজে কেউ যেন তাকে কোনঠাসা না করতে পারে। হীরা বেগমের মতো মহিলারা যেন কখনও মৌমিতার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলতে পারে। ভালো তো বেশি দেড়ি হয়নি মাত্র দেড় বছর। মৌমিতাকে কলেজে ভর্তি করে দিয়ে তাকে নিয়ে গাড়ির কাছে আসলো তাজ। দু’জনে গাড়ির দুদিকের দরজা খুলবে তার আগেই হঠাৎ কোথা থেকে দুটো লোক তাজ আর মৌমিতার নাকে কাপড় জাতীয় কিছু ধরলো। দুজনেই ঢলে পড়লো।
_______________________________________
পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো তাজ। এতক্ষন চোখ বন্ধ রেখে হঠাৎ চোখে তীব্র আলো পড়ায় নাক মুখ কুঁচকে চোখ বন্ধ করে নিল সে। ক্ষানিক সময় নিয়ে আবার চোখ খুলে তাকালো সে। হাত পা নাড়াতে গিয়ে টের পেল দড়ি দিয়ে শক্ত করে তার হাত পা বেঁধে রেখেছে কেউ। কতক্ষন এভাবে বেহুঁশ ছিল জানা নেই তার। পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পাশ ফিরে তাকালো তাজ , চোখে পড়লো মৌমিতার ঘুমন্ত মুখশ্রী। মুখটা চুপসে গেছে মেয়েটার। মৌমিতার দিকে একবার শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনে ফিরে তাকালো সে। কোথায় আছে তারা? জায়গাটা চেনা বলে তো মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে পুরোনো কোনো ভাঙাচোরা বাড়ির এক রুমে এক দড়িতেই বেঁধে রেখেছে ওদের দুজনকে। কেন কি উদ্দেশ্যে এভাবে ওদের ধরে আনলো কেউ ভেবে পাচ্ছে না তাজ। তাজ ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখলো চারপাশ। দেওয়ালের রং চং ওঠ, ভাঙাচোরা দরজা জানালা , রুমের ছাদটাও ভাঙাচোরা, শুকনো পাতা আর বালিতে ভরে রয়েছে মেঝে। তাজ কতক্ষন মোড়ামোড়ি করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো তবে পারলো না। শক্ত দড়িতে টানা হেঁচড়া করার জন্য হাতটা ছিলেও গেছে বেশ। হঠাৎ কিছু পায়ের শব্দ শুনে শান্ত হলো তাজ। ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো নিজের স্থানে। ভাঙাচোরা দরজাটা ঠেলে জন তিনেক মানুষ ঢুকলো ভিতরে। লোকগুলোর কথা শুনে তাজ বুঝতে পারলো মাঝখানে রোগা পটকা কালো করে লোকটা ওদের নেতা। দুই পাশে দাঁড়ানো অল্প বয়সী ছেলে দুটো মধ্যের ঐ কালো লোকটাকে বারবার বস বস বলে সম্বোধন করছিল। হঠাৎ তাজ গর্জে উঠলো, বলল – আমাদের এখানে তুলে এনেছিস কেন?
হঠাৎ তাজের গর্জে ওঠা আওয়াজে চমকে উঠলো তিনজনই। তাজের যে জ্ঞান ফিরেছে খেয়াল করেনি কেউই। মাঝখানের রোগা পটকা লোকটা এগিয়ে গেল তাজের দিকে, বলল – জ্ঞান ফিরেছে তোর? তোর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি সেই কখন থেকে।
– কয়টা বেজেছে এখন?
লোকটা ঘড়ি দেখে বলল বিকাল সাড়ে চারটা।
– তার মানে সেই সকাল ১১ টা থেকে আমি এখানে আছি? আর বেহুঁশ হয়েছিলাম?
– ঠিক ধরেছিস। আর তোর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় এতক্ষন ছিলাম আমরা।
– কে তোরা কেন ধরে এনেছিস আমাদের?
– কি বলছিস তুই আমাকে চিনিস না। আমি কালু গুন্ডা , আমার ভয়ে এই এলাকার সবাই কাঁপে আর তুই কিনা আমাকে চিনিস না?
খিলখিল করে হেসে উঠলো মৌমিতা। হঠাৎ নারী কন্ঠের শব্দে ভরকে গেল প্রত্যেকে। মৌমিতার দিকে ফিরে তাকালো সবাই। কিছুক্ষণ আগেই হুশে ফিরেছে সে। তবে এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে শুনছিল তাজ আর কালু গুন্ডার কথাপকথন। মৌমিতা হেসে হেসে বলল – আপনার সাথে আপনার নাম মানিয়েছে বেশ, কি নাম? কালু গুন্ডা।
আবার হেসে উঠলো মৌমিতা। ধমক দিল কালু গুন্ডা , বলল – রসিকতা হচ্ছে আমার সাথে?
চুপসে গেল মৌমিতা। আর কিছু বলল না সে। আড় চোখে তাজের দিকে তাকিয়ে দেখলো তাজ মিটিমিটি হাসছে। ভ্রু কুঁচকে এলো মৌমিতার। এই লোক হাসছে কেন? পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি আবার?
মিনিট খানেক নীরবতায় ছেয়ে গেল রুমটা। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে তাজ বলল – এই যে কালু গুন্ডা শোন।
– কি?
– কাছে আয় তোকে দুটো চুমু খাই।
হকচকিয়ে গেল কালু গুন্ডা। এই প্রথম কোনো বন্দী কিনা তাকে চুমু খেতে চেয়েছে তাও বন্দী থাকা অবস্থায়। কালু গুন্ডা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। তাজ আবার বলল – তোকে চুমু খাই দুটো আয়। বউ আমার একদম কাছে আসে না শুধু দূরে দূরে থাকে। তুই ভাগ্যিস আমাদের এক দড়িতে বেঁধে রেখেছিস। তাও তোর দরুন আমার বউ আমার কাছাকাছি এসেছে।
কটমট করে তাজের দিকে তাকালো মৌমিতা। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – তোমাকে আমি আমার কাছে আসতে দেই না তাই না? তুমি কাল রাতেও সারারাত আমাকে জড়িয়ে ধরে নাক ডেকে ঘুমিয়েছো আর এখন বলছো কাছে আসতে দেই না। বদনাম করছো আমার নামে?
তাজ আমতা আমতা করে বলল – তা তো আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম বলে জড়িয়ে ধরতে দিয়েছো।
– দিয়েছি তো। এরপর তাও দেব না। বাইরে এসে আমার নামে বদনাম করেছো তাই না আজ থেকে তোমার আর আমার রুম আলাদা।
তাজ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল – এই না না কান ধরেছি আর বলবো না। তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে যে আমার ঘুম আসে না বউ।
– সেটা আমার নামে বদনাম করার আগে মনে ছিল না?
হঠাৎ ধমকে উঠলো কালু গুন্ডা। দুই হাত দিয়ে কান চেপে বলল – ছিঃ ছিঃ এ কাদের ধরে আনতে বলেছে হীরা ম্যাডাম? নিজেদের লজ্জা শরম তো নেইই আর আমাদের লজ্জা শরমও নিলামে তুলে দিয়েছে।
হীরা বেগমের নাম শুনেই চমকে উঠলো তাজ এবং মৌমিতা। চকিত দৃষ্টিতে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওই করছে তারা। এর মানে হীরা বেগমের কথায় এরা ওদের তুলে এনেছে। হীরা বেগম শেষে এত নিচে নেমেছে যে ওদের অপহরণ পর্যন্ত করিয়েছে। ফুসে উঠলো তাজ। চোখে মুখে তার রাগ স্পষ্ট তবুও সে নিয়ন্ত্রণ করলো নিজেকে। এই মুহূর্তে রাগ করা যাবে না কিছুতেই। ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি করে এখান থেকে বের হতে হবে। তাজ শান্ত কন্ঠে শুধালো – হীরা বেগম ধরে আনতে বলেছে আমাদের?
– হ্যা তা নয়তো কি? দেখ ভাই তোর সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। টাকার বিনিময়ে কাজ করি আমি। হীরা ম্যাডাম টাকা দিয়েছে তোকে আর তোর বউকে তুলে এনেছি আমরা।
– এই কাজের জন্য হীরা বেগম কত টাকা দিয়েছে তোকে?
কালু গুন্ডা বুক ফুলিয়ে বলল – এক লাখ।
– আমি তোকে তিন লাখ দেব। আমাদের ছেড়ে দে।
টাকার কথা শুনেই চোখ দুটো চকচক করে উঠলো কালু গুন্ডার, বলল – আমি তোকে বিশ্বাস করবো কিভাবে যে তোকে ছেড়ে দিলে তুই আমাকে তিন লাখ দিবি?
– আমার বাম পকেটে ১ লাখ টাকার একটা চেক রয়েছে। আমার সাক্ষরও করা আছে। ওটা নে , তোর অ্যাডভান্স বাকিটা পাবি আমাদের ছেড়ে দেওয়ার পর। আর ছেড়ে না দিলে আর পেলি না কোনো টাকা।
কালু গুন্ডা হাত দিল তাজের বাম পকেটে। তাজের কথা মতো সত্যিই এক লাখ টাকার একটা চেক পেল সে। চেকটা দ্রুত হাতিয়ে নিল কালু গুন্ডা। খুশি মনে ছেড়ে দিল তাজ আর মৌমিতাকে। তাজ কালু গুন্ডাকে আর একটা চেক দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
______________________________________
ঝিঁঝিঁ পোকার গান শোনা যাচ্ছে বাইরে। অন্ধকারে ছেয়ে গেছে প্রাকৃতি। চারদিকে নিস্তব্ধ নীরবতা বিরাজমান। রাত প্রায় বারোটা, তাজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে অন্ধকারের দিকে। মৌমিতা ঠিক বুঝেছে তাজের মন খারাপ, কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। হয়তো অতীতের বিষাক্ত স্মৃতিগুলো আজকের ঘটনায় আবার মনে পড়েছে তার। দীর্ঘশ্বাস ফেলল মৌমিতা। তাজের হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো রুমের ভিতরে। তাজ “আহ” করে ব্যথাতুর আর্তনাদ করে উঠলো। হকচকিয়ে উঠলো মৌমিতা। অস্থির কন্ঠে শুধালো – কি হয়েছে? দেখি দেখি…
তাজের হাত উল্টে দেখলো ছুলে গেছে অনেকখানি । তাজকে বিছানায় বসিয়ে পরম যত্মে মলম লাগিয়ে দিল মৌমিতা। শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো তাজের পানে। তাজ দুষ্ট হেসে বলল – ছিঃ মৌ তুমি তোমার চোখ দিয়ে আমার মতো একটা নিষ্পাপ ছেলের ইজ্জত লুটে নিচ্ছো? লজ্জা করছে না তোমার?
– উহু একটুও লজ্জা করছে না।
মৌমিতা একটু ঝুঁকে গেল তাজের দিকে। নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল – তোমার ইজ্জত তো সেই প্রায় দুই বছর আগেই লুটে নিয়েছি, সেই রাতে।
থমকে গেল তাজ। অবাক চোখে মৌমিতার দিকে তাকালো। মৌমিতার চোখে মুখে দুষ্টুমি। মৌমিতা আবার ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো – তুমি চাইলে আজ আবার একবার তোমার ইজ্জত লুট করে নিতে পারি।
আরেক দফায় চমকালো তাজ। মৌমিতার ইশারা বুঝতে পেরে হাসি ফুটে উঠল ঠোঁটে। আর দেরি করলো না সে। টেনে নিজের কাছে নিয়ে নিল মৌমিতাকে। দুজনে ডুব দিল এক অজানা সুখের সাগরে। সকল রাগ অভিমান ঘুচিয়ে দু’জনে আবার কাছাকাছি এলো, একে অপরের কাছে ধরা দিল। পূর্ণতা পেল ভালোবাসার। আবার মিলন ঘটলো দুটি মনের।
রাতের আঁধার কাটতে শুরু করেছে কেবলই। নিভু নিভু আলো ছড়িয়েছে চারদিকে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মৃদু বাতাস বইছে বাইরে। মৌমিতা তাজের বুকের সাথে লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে। তাজ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়শীর পানে। কি আছে ঐ মুখশ্রীতে যা মুহুর্তেই তাজের নেশা লাগাতে সক্ষম। সারাজীবনও যদি তাজ এই মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে তবুও তার মুগ্ধতা কাটবে না। তাজের ঠোঁটে লেগে আছে মিষ্টি হাসি। নিজের প্রেয়শীকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দে আজ আনন্দিত সে। ঘুমায়নি সারারাত। প্রেয়শীর মুখের দিকে তাকিয়েই রাত কাটিয়ে দিয়েছে সে।
হঠাৎ নড়েচড়ে উঠলো মৌমিতা। তাজ চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে ঘাপটি মেরে আছে। এখন যদি মৌমিতা উঠে পড়ে আর তাজকে দেখে না ঘুমিয়ে আছে সারারাত তাহলে আর আস্ত রাখবে না তাকে। এখনই থ্রেট দিবে অন্য রুমে চলে যাওয়ার। মৌমিতা মাথা উঠালো তাজের বুক থেকে, ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালো তাজের মুখ পানে। ঘুমিয়ে আছে তাজ। কি নিষ্পাপ লাগছে তাজের মুখখানা। মৌমিতা একটু ঝুঁকে গেল তাজের দিকে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো তাজের ঠোঁটে। আবার নেমে এলো তাজের বুকে, পাড়ি দিল ঘুমের দেশে। তাজের ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি।
চলবে….
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৬