#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা
#সাদিয়া
#পর্ব_৩০
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
আকাশের বুক চিরে সূর্য উঠেছে। চারদিক ঝলমল করছে সূর্যের আলোয়। প্রাকৃতি তার স্বরূপ ফিরে পেয়েছে। রাতের অন্ধকার ঘুচে তো দিন এলো কিন্তু তাজের বিচ্ছেদের যন্ত্রনা ঘুচে এখনও সুখ এলো না। তাজ যশোরে এসেছে আজ সাত দিন। মৌমিতাকে বিরতিহীনভাবে খুঁজে যাচ্ছে সে কিন্তু তার দেখা নেই। তাজের বুক চিরে বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাস, সেদিনের করা সেই একটা ভুলের শাস্তি আজ দেড় বছর ধরে পাচ্ছে, বিচ্ছেদ নামক তীব্র যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে সে। তবুও কি তার শাস্তি এখনও শেষ হয়নি? ঐ একটা ভুলের জন্য আর কত শাস্তি পেতে হবে তাকে? কবে সৃষ্টিকর্তার দয়া হবে তার উপর? তবে সব শাস্তি সে মাথা পেতে নিতে রাজি যদি দিন শেষে উপহার হিসেবে আবার মৌমিতাকে ফেরত পায়।
__________________________________
নতুন নতুন ব্যবসায় যোগদান করে সারাদিন কাজের মধ্যেই যাচ্ছে তাজের। নিঃশ্বাস ফেলার ফুরসত পর্যন্ত পাচ্ছে না সে। তবে বন্ধ নেই মৌমিতাকে খোঁজা। তাকে বিরতিহীন ভাবে খুঁজে চলেছে সে। আজএকটা মিটিং আছে তাজের। মিটিংটা রাখা হয়েছে একটা রেস্টুরেন্টে।
আপাদমস্তক কালোতে সাজিয়েছে তাজ নিজেকে। কালো শার্ট, কালো ব্লেজার, কালো প্যান্ট , কালো শু সাথে আবার চোখে কালো সানগ্লাসও ঝুলিয়েছে সে। ফর্সা শরীরে কালো রংটা মানিয়েছে বেশ। দেড় বছর বিদেশের মাটিতে থাকার দরুন গায়ের রংয়ের উজ্জ্বলতা বেড়েছে কিছুটা। এই মুহূর্তে কোনো মেয়ে তাকে দেখলে নিঃসন্দেহে ক্রাশ নামক বাঁশ খাবে। বিবাহিত পুরুষের উপর ক্রাশ খাওয়া তো বাঁশই হলো তাই না। সঙ্গে রাদীফও এসেছে কলেজের চাকরিটা ছেড়ে এখন তাজের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে জয়েন্ট করেছে। এতে যদিও তার জন্ম মোটা অংকের একটা বেতনও বরাদ্দ করেছে তাজ। সাদামাটা ভাবেই এসেছে সে । শার্ট প্যান্টের সাথে কোনো রকম গায়ে একটা নীল ব্লেজার জড়িয়েছে ।
চার পাঁচজন গার্ড নিয়ে অনেকটা সিনেমা স্টাইলে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো তাজ আর রাদীফ। বেশ বড় রেস্টুরেন্টটা। যশোরের সবচেয়ে নামিদামি রেস্টুরেন্টের মধ্যে এটা একটা। চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মিটিং রাখা হয়েছে বলে কথা নিশ্চই ছোট খাটো রেস্টুরেন্ট হবে না। দুজনে মিলে কিছু ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। হঠাৎই থেমে গেল গেল তাজ, রাদীফ তার মতো হেঁটে যাচ্ছে। কিছুটা দূরে গিয়েই খেয়াল করলো তাজ আসছে না। পিছন ফিরে তাকালো সে দেখলো তাজ দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা লম্বা পা ফেলে তাজের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, বলল – কি রে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন?
তাজের মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো – মৌ….
চমকে গেল রাদীফ। মৌমিতা এখানে? তবে কি ওরা শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেল মৌমিতাকে? আশেপাশে চোখ বুলালো রাদীফ। কই কোথাও তো মৌমিতা নেই। তাহলে তাজ কি আবার মজা করা শুরু করেছে?
বিরস কন্ঠে রাদীফ শুধালো – কোথায় মৌমিতা? মজা করা রাখ তাজ।
তাজ চোখ দিয়ে ইশারা করলো সামনের দিকে। মৌমিতা হেঁটে হেঁটে ওদের দিকেই আসছে। তাজ এক দৃষ্টিতে মৌমিতার দিকে তাকিয়ে আছে। কতদিন পর সে তার প্রেয়শীকে দেখেছে। মেয়েটা এটা সুন্দর হয়েছে আগের থেকে। অবশ্য তাজের চোখে সে সর্বদাই সুন্দর। তাজ বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের চোখকে। আচ্ছা সে কি সত্যি দেখছে? অবশেষে সে খুঁজে পেয়েছে মৌমিতাকে? নাকি সবটাই ভ্রম। এমন ভ্রম তো মাঝে মাঝে হয় তার। তাজ সামনের দিকেই তাকিয়ে রাদীফকে জিজ্ঞেস করলো – আমি যা দেখছি তুমিও কি তাই দেখছো কাকাই?
এতদিন পর মৌমিতাকে চোখের সামনে দেখে রাদীফও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। তাজ তখন বলার পর সে দুই পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখেছে মৌমিতা কোথাও নেই। কিন্তু সামনে তাকায়নি সে আর তার সামনেই রয়েছে মৌমিতা। রাদীফ অবাক কন্ঠে বলল – মৌমিতা।
হাসি ফুটে উঠল তাজের ঠোঁটে। তার মানে সে এতক্ষন ভুল দেখেনি। সত্যিই মৌমিতা তার সামনে , সে খুঁজে পেয়েছে মৌমিতাকে। মনের মধ্যে একটা সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। দীর্ঘ দিনের হারিয়ে যাওয়া প্রিয়তমাকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দে লাফিয়ে উঠছে হৃৎপিণ্ড। ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে মৌমিতাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিতে তবে যদি একটু শান্তি পেতো। আগের মতো বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ” একটু জড়িয়ে ধরো না প্লিজ । “
মৌমিতা বোধহয় এখনও দেখেনি তাজকে সে ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে। আশে পাশে সামনে পিছনে কোথাও কোনো খেয়াল নেই তার। কিছুটা এগিয়ে আসতেই ভ্রু কুঁচকে এলো তার। পথিমধ্যে একটা খাম্বার মতো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে একটু নড়ছেও না। পাশেই আবার অন্য আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে সেও নড়ছে না। কি ধরনের ব্যবহার এটা? পথ আগলে যদি এভাবে খাম্বার মতো দুটো মানব দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে অন্যরা চলবে কোথা থেকে? বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এলো মৌমিতার। মাথা তুলে উপরে তাকাতেই থমকে গেল সে। বিরক্তির জায়গায় চোখ মুখে জায়গা পেল একরাশ বিস্ময়। এতদিন পর এভাবে এই মানুষটাকে নিজের সামনে দেখতে পাবে কখনও ভাবতেও পারেনি মৌমিতা। গলা দিয়ে কোনো স্বর বেড় হচ্ছে না। মোবাইলের ওপাশ থেকে কেউ লাগাতার হ্যালো হ্যালো করছে কর্নগোচর হচ্ছে না তার। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের কালো পোশাক পরিহিত যুবকের দিকে। বুকের মধ্যের হৃৎপিণ্ডটা ধ্বক ধ্বক করে লাফিয়ে চলছে।
আচ্ছা মানুষটা কি মনে রেখেছে তাকে নাকি ঘর বেঁধেছে অন্য কারো সাথে। মনের কোনে কি অন্য কাউকে জায়গা দিয়েছে নাকি এখনও অপেক্ষা করছে তার জন্য। মৌমিতা, তাজের থমকানো আর ভাবনার মধ্যে থেকে টেনে হিচড়ে বের করলো এক শক্ত পোক্ত পুরুষালী কন্ঠস্বর।
– মৌমিতা, তুমি কল কেন কেটে দিলে?
তাজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো পেছন ফিরে। দেখা মিললো এক সুদর্শন যুবকেরষ? তবে চোখে তার বিজ্ঞদের মতো চশমা। কে এই যুবক? মৌমিতাই বা কি করছে এই যুবকের সাথে? তাজকে পাশ কাটিয়ে মৌমিতা গিয়ে দাঁড়ালো ঐ নাম না জানা সুদর্শন যুবকের সামনে। কপট রাগ দেখিয়ে বলল – এই আপনার আসার সময় হলো কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি জানেন আপনি?
ঠোঁট এলিয়ে দিল ছেলেটি। অপরাধী কন্ঠে বলল – স্যরি স্যরি তুমি তো জানোই অফিসে এখন কতটা কাজের চাপ। কিছুদিন পরই ছুটি নেব তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।
ধক করে উঠল তাজের বুকটা। বিরস মুখে একবার ঐ যুবকের দিকে তাকালো একবার নিজের দিকে। ঐ যুবক কি ওর থেকে দেখতে সুন্দর। মিটিং শুরু হয়ে গেছে তাজের। মিটিং টাতেও যোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ না হয় কোম্পানির বড় একটা লস হয়ে যাবে। মৌমিতাকেও ধরে রাখা প্রয়োজন ন হয় আবার যদি হারিয়ে যায়? কতদিন পর তাকে হঠাৎ করেই এভাবে খুঁজে পেয়েছে তাজ। রাদীফ টেনে টুনে মিটিং – এ বসালো তাজকে। আর মৌমিতা ঐ ছেলেটা সহ একটা টেবিলে বসে পড়েছে। চারপাশে কালো পোশাকধারী কিছু গার্ড ঘুরছে সবার চোখের আড়ালে। মৌমিতা যেন চাইলেই এখান থেকে চলে না যেতে পারে তাই এই ব্যবস্থা।
মিটিং – এ বসে আশে তাজ আর রাদীফ। মূলত মিটিং – এ তাজের কোনো খেয়াল নেই তার সম্পূর্ণ মনোযোগ মৌমিতার টেবিলে। মিটিং – এ সবাই কথা বলছে তাজ কিছু না শুনেই শুধু হ্যা তবে হ্যা মিলাচ্ছে না তে না মিলাচ্ছে। ছেলেটার সাথে কি যেন বলছে মৌমিতা। তাজ ফুঁসে উঠেছে। ইচ্ছে করছে উঠে মৌমিতার কাছে চলে যেতে তাও পারছে না। ঠোঁট নাড়ানো দেখে মৌমিতা আর ছেলেটার কথা বোঝার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। এমন হবে আগে বুঝলে এই ঠোঁট নাড়ানো সম্পর্কে ট্রেইনিং নিতো সে। কোনো রকম মিটিং শেষ করেই ছুটে গেল মৌমিতার টেবিলে। হুমড়ি খেয়ে পড়লো। চমকে উঠলো মৌমিতা এবং ছেলেটা। কিন্তু কথা বলল না কেউই। কিছু না বোঝার ভান ধরে আছে তারা। তাজ নিজেকে ঠিক করে আস্তে ধীরে মৌমিতার পাশে বসলো। শান্ত কন্ঠে শুধালো – ছেলেটা কে?
মৌমিতা ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিল – বয়ফ্রেন্ড আমার।
তাজ ভাবলেশহীন ভাবে বলল – শুধু বয়ফ্রেন্ড বিয়ে তো আর করোনি।
সামনের ছেলেটা বলে উঠলো – তাঁতে কি বিয়েটাও করে নেব খুব তাড়াতাড়ি।
ফুঁসে উঠলো তাজ। এতদিন পর নিজের প্রেয়শীকে খুঁজে পেয়েছে কি অন্য ছেলের বউ হতে দেখার জন্য? ব্যাটা বজ্জাত অন্যের বউ নিয়ে টানাটানি করছে। তাজ গম্ভীর কন্ঠে বলল – লজ্জা করছে না অন্যের বউকে নিজের বউ করার কথা ভাবতে?
– উঁহু একটুও লজ্জা করছে না আমার। বাই দ্যা ওয়ে আপনি কে?
– আমি আপনার গার্লফ্রেন্ডের বিবাহিত জামাই।
– ওহ আচ্ছা ডিভোর্স করিয়ে দেবো।
তাজের রাগ যেন তরতর করে বেড়ে চলছে কিন্তু এই সময় রাগা যাবে না। রেগে গেলে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবে। এতদিন পর মৌমিতাকে খুঁজে পেয়ে আবার হারিয়ে ফেলতে পারবে না তাকে, কিছুতেই না। এই ছেলেকে তো পরে দেখে নেবে আগে মৌমিতার সাথে কথা বলা দরকার। মনে মনে ছেলেটাকে দুইটা অ’শ্রা’ব্য গা’লি দিয়ে মৌমিতার দিকে ফিরে তাকালো সে। মৌমিতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাজের দিকে। এত কথার পরও তাজকে রাগতে না দেখে বোধহয় অবাকই হয়েছে সে। এখানে আগের তাজ হলে তো এতক্ষনে এত কথার পর রেগেমেগে ভেঙেচুরে সব গুঁড়িয়ে দিতো তাজ। মৌমিতার অবাকতার মধ্যেই তাজ বলল – পরকিয়া করছো তুমি মৌ? বিবাহিত স্বামী থাকা সত্ত্বেও বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে তার সাথে আবার ঘুরছো?
মৌমিতা কিছু বলার আগেই ছেলেটা উঠে বলল – প্রমান কি যে আপনি ওর বিবাহিত স্বামী?
তাজ দাঁতে কিড়মিড় করে উত্তর দিল – আমি আপনার সাথে কথা বলছি না আমার বউয়ের সাথে কথা বলছি।
– আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন ও আমার গার্লফ্রেন্ড।
– স্বামী আগে নাকি বয়ফ্রেন্ড?
– আপনি যে ওর স্বামী তার প্রমান কি?
– আমি আপনাকে প্রমান দিতে বাধ্য নই।
– তাহলে আমিও আপনার কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য নই।
তাজ অগ্নী দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকালো। ছেলেটাও একইভাবে অগ্নী দৃষ্টিতে তাজের চোখের দিকে তাকালো। মৌমিতা হতবম্ব হয়ে দুজনকে দেখছে।
চলবে….
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৫
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা গল্পের লিংক
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৯