Golpo প্রণয়ের ব্যাকুলতা

প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৮


#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা

#সাদিয়া

#পর্ব_১৮

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

মিনিট খানেক পর তাজ আবার দৌড়ে রুমে ঢুকলো চট করে মৌমিতার গালে একটা চুমু দিল আবার দৌড়ে চলে গেল। মৌমিতা হতবম্ব, স্তব্ধ। এই ছেলেটা প্রচুর পরিমাণে দুষ্টু হয়ে গেছে।

____________________________

আকাশে সূর্য উঠেছে। সূর্যের পাশে মৃদু মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। তাজ লাইব্রেরীতে অপেক্ষা করছে মৌমিতার জন্য, মৌমিতার দেখা নেই। তাজ ঠোঁট কামড়ে বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে কই মৌমিতা কই? ইদানিং মেয়েটাকে একটা পলক না দেখে থাকা যাচ্ছে না, অস্থির অস্থির লাগে খুব। মিনিট পাঁচেক পর অবসান ঘটলো তাজের অপেক্ষার। মৌমিতার হেলে দুলে লাইব্রেরীর দরজা থেকে ঢুকলো। তাজের ঠোঁটে ফুটে উঠল এক টুকরো প্রশান্তির হাসি। কিন্তু পরক্ষনেই মৌমিতার পিছনে তাকাতেই মেজাজটা বিগড়ে গেল। মৌমিতার পিছু পিছু সেদিনের সেই ছেলেটা ঢুকছে। কি যেন নাম, নিশান। তাজ অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। এক কেজি আটার প্যাকেটের মধ্যে চেপে চুপে দের কেজি আটা যেভাবে ভরা হয় তবুও যেন প্যাকেট ফেটে আটা বেরিয়ে যেতে চায়। তাজের রাগ নিয়ন্ত্রণও এই মুহূর্তে অনেকটা তেমনই। অনেক কষ্টে চেপে চুপে নিজের রাগকে আটকে রেখেছে।

মৌমিতা ধপ করে তাজের সামনে এসে বসে পড়লো। তাজ মৌমিতার দিকে না তাকিয়েই বলল – আমার পাশে এসে বসো।

তাজের কন্ঠে স্পষ্ট রাগ , গম্ভীরতা। হঠাৎ রেগে কেন গেল এই লোক বোধগম্য হচ্ছে না মৌমিতার। অবশ্য এই লোকের রেগে যেতে যে কোনো ন্যায়সংগত কারন লাগে না তা মৌমিতার জানা। মৌমিতা আস্তে ধীরে তাজের পাশে বসলো। টেবিলের নিচ থেকে আলতোভাবে তাজের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিল। শান্ত কন্ঠে বলল – রেগে আছেন কেন? আমি কি কিছু করেছি?

তাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মৌমিতার দিকে তাকালো, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল – ঐ ছেলেটা তোমার পিছু পিছু কি করছিলো?

– কোন ছেলেটা?

তাজ চোখের ইশারায় লাইব্রেরীর ভিতরে নিশানকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল – ঐ ছেলেটা।

– আমি কি করে জানবো, আমি তো পিছু ফিরে দেখিনি কে বা কারা আমার পিছু পিছু আসছে।

রাগ বোধহয় একটু কমলো তাজের। তবুও গম্ভীর কন্ঠে বলল – ঐ ছেলের সাথে কখনও কথা বলবে না।

মুচকি হাসলো মৌমিতা, হাসি মুখেই বলল – জ্বলছে?

– জ্বলছে না শুধু দাবানলের মতো পুড়ছে।

ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো মৌমিতা, আদুরে কন্ঠে বলল – আমার একজন পার্মেনান্ট সুদর্শন মিষ্টি পুরুষ আছে। তাকে রেখে না আমার অন্য কোনো পুরুষের দিকে তাকানোর প্রয়োজন আছে আর না অন্য কোনো পুরুষের সাথে কথা বলার প্রয়োজন আছে।

টেবিলের নিচ থেকে মৌমিতার ধরে রাখা হাতটা আরও শক্ত করে ধরলো তাজ। শান্ত কন্ঠে বলল – এত কেন ভালোবাসো আমাকে? আমার মতো একজন মানসিক বিক্ষিপ্ত ছেলের কি আদও এত ভালোবাসা প্রাপ্প। আমার দ্বারা যে তোমার ধ্বংস হতে পারে।

– ধ্বংস তো আমি অনেক আগেই হয়েছি যেদিন তোমার চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম। সেদিনই তো তোমার মা’দ’ক’তা’য় আমি আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম। এই পৃথিবীতে ভা’লো’বা’সা নামক মা’দ’ক’তা’য় আসক্তির থেকে বড় ধ্বংসের বস্তু আর কিছু আছে বলে তো আমার মনে হয় না।

তাজ একটা প্রশান্তির হাসি হাসলো। হাত দুটো বাড়িয়ে দিল মৌমিতাকে জড়িয়ে ধরবে কিন্তু বাধা দিল মৌমিতা। এদিক ওদিক তাকিয়ে লজ্জালু ভাব নিয়ে বলল – একদম না। এটা লাইব্রেরী সবাই দেখছে।

মুখটা ছোট করে হাত গুটিয়ে নিল তাজ। বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।

তাজের ফুলানো গাল দেখে লোভ লাগলো মৌমিতার। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিল কেউ দেখছে কিনা। চট করে একটা চুমু খেল তাজের ফুলানো গালে। লজ্জায় আর দাঁড়িয়ে না থাকতে পেরে উঠে দৌড়ে এক প্রকার পালিয়ে গেল। হতভম্ব তাজ, কিন্তু পাশে তাকিয়ে দেখে মৌমিতা নেই। হাওয়া হয়ে গেছে। হাসি ফুটে উঠল তাজের ঠোঁটে।

কলেজের বারান্দা থেকে একা একা হাঁটছিল মৌমিতা। চোখে মুখে তার রাজ্যের লজ্জা। একটু আগের কথা মনে পড়লেই লজ্জায় লাল নীল বর্ন ধারন করে সে। একটু আগে সে কিনা তাজকে চু’মু খেয়েছে। মৌমিতার এই আকাশ পাতাল ভাবনার মধ্যেই পিছন থেকে কেউ একজন তার নাম ধরে ডাক দিল। পিছু ফিরে তাকালো মৌমিতা। নিশান ওকে ডাকছে। ভ্রু কুঁচকে এলো মৌমিতার। এই ছেলের কি লাজ লজ্জা বলে কিছু নেই? সেদিন তাজের হাতে বিশাল সাইজের একটা ঘুষি খেয়েও আবার মৌমিতাকে ডাকছে। একটু আগেই তাজ এই ছেলের সাথে কথা বলতে ওকে বারন করেছে। এখন যদি আবার দেখে সেই ছেলে ওকে ডাকছে ভীষণ রেগে যাবে তাজ। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে মৌমিতার। মৌমিতা সামনে ঘুরে ধপধপ পা ফেলে আগাতে লাগলো। কিন্তু ভাগ্য বোধহয় সেটা চায়নি। নিশান দৌড়ে এসে মৌমিতার সামনে দাঁড়ালো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল – কোথায় যাচ্ছো তোমাকে যে ডাকলাম শোনোনি?

ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো মৌমিতার। এই ছেলে ওকে তুমি তুমি কেন করছে। আগে তো ওকে আপনি আপনি করেই বলতো। একরাশ বিরক্তি নিয়ে মৌমিতা বলল – আপনি থেকে তুমিতে নামলেন যে। আপনার মুখে আমি আপনিটাই আশা করবো।

– সে তো আর হচ্ছে না। এমনিতেও তুমি আমার থেকে ছোট তাহলে তুমি করে তো বলাই যায়।

মৌমিতা বুঝেছে এই ছেলের সাথে কথা বলে লাভ নেই। ছেলেটা বড্ড গায়ে পড়া স্বভাবের। উল্টো এই ছেলের সাথে তাজ ওকে দেখে পেলে কুরুক্ষেত্র বেধে যাবে। মৌমিতা রাগী কন্ঠে বলল – পথ ছাড়ুন যাব আমি।

– ছেলেটা কে?

মৌমিতা ভ্রু কুঁচকে শুধালো – কোন ছেলেটা?

– যে সেদিন আমাকে ঘুষি মারলো, আজ যার সাথে লাইব্রেরীতে ছিলে।

– আমার জীবনের বাবা আর ভাই ছাড়া একমাত্র সুদর্শন পুরুষ।

– সে কি আমার থেকে সুদর্শন বেশি?

– আমার চোখে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ।

নিশান কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না তার আগেই বিশাল সাইজের একটা ঘুষি পড়লো নিশানের গালে। তখন মৌমিতার পিছু পিছু এই ছেলেকে দেখে নিজের রাগ সংবরণ করতে পারলেও এবার মৌমিতার সাথে কথা বলতে দেখে রাগটা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি তাজ। লাইব্রেরী থেকে বেড়িয়ে মৌমিতাকেই খুঁজতে এসেছিল সে। এসেই দেখে নিশানের সাথে কথা বলছে মৌমিতা।

আঁতকে উঠলো মৌমিতা। ভয়ংকরভাবে রেগে গেছে তাজ। তাজের চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। এই মুহূর্তে তাজকে শান্ত করতে হবে। রাদীফও নেই এখানে। সে কয়েকদিন আগে ছুটি নিয়ে কোনো জরুরি কাজে গিয়েছে। তাজের দায়ভার দিয়ে গেছে মৌমিতার কাছে। অবশ্য রাদীফও গেছে তাজের জন্যই এক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তাজকেও নিয়ে যাবে চিকিৎসার জন্য।

তাজ নিশানকে তুলে আবার একটা ঘুষি মারলো সজোরে। নিশান ছিটকে পড়ে গেল নিচে। মৌমিতা গিয়ে তাজের হাতটা ধরে নিল। ব্যগ্র কন্ঠে বলল – শান্ত হন প্লিজ। ওকে ছেড়ে দিন।

শান্ত হলো না তাজ। ঘাড় কাত করে মৌমিতার দিকে তাকালো। খপ করে ধরলো মৌমিতার হাতটা। টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো নিজের সাথে। মৌমিতাও বাধা দিচ্ছে না। এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাওয়াটাই উত্তম। মৌমিতা চায় না কেউ জানুক তাজের সত্যিটা, কেউ তাজকে খারাপ বলুক বা কেউ বলুক তাজ মানসিকভাবে অসুস্থ। বদ্ধ ঘরে তাজের হাতে মরে যেতেও রাজি কিন্তু মানুষের সামনে তাজকে ছোট করতে পারবে না।

মৌমিতাকে টেনে হিচড়ে তাজ নিজের বাড়িতে এনে ছুড়ে ফেলল। এক হাত দিয়ে গাল চেপে ধরে বলল – তোকে বললাম না তুই ঐ ছেলের সাথে কথা বলবি না। তবুও কেন বলেছিস?

কথা বলতে পারছে না মৌমিতা। এত জোরে গাল চেপে ধরেছে মৌমিতা যে মনে হচ্ছে দাঁতগুলো গাল ভেদ করে বেরিয়ে আসবে। অঝড়ে গড়িয়ে পড়ছে তাজের চোখের পানি।

মৌমিতার গাল ছেড়ে দিল তাজ। হয়তো ওর চোখের পানি তাজকে ঠান্ডা করতে পেরেছে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মৌমিতাকে। ডুকরে কেঁদে উঠলো তাজ। কাঁদতে কাঁদতে বলল – আমাকে মাফ করে দেও প্লিজ। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। প্লিজ তুমি দূরে কোথাও চলে যাও। আমি যে মানসিক ভাবে অসুস্থ। আমি নিজের অজান্তেই তোমাকে বারবার কষ্ট দিয়ে ফেলবো। তোমার কষ্ট যে সহ্য হবে না আমার। চলে যাও তুমি।

এক ধাক্কায় নিজের থেকে তাজকে ছাড়িয়ে নিল মৌমিতা। সপাটে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল তাজের গালে। তাজ হতবম্ব। নিজের অজান্তেই হাত চলে গেল নিজের গালে। মৌমিতা ওকে চড় মেরেছে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তাজ। তবে কি মৌমিতা সত্যিই ওকে ছেড়ে চলে যাবে। আজ তাজের করা ব্যবহারে মৌমিতা কি ওর উপর রেগে গেছে। মৌমিতা চলে গেলে ও বাঁচবে কিভাবে। ও তো এমনি আবেগের বশে কথাগুলো বলে ফেলেছে। মৌমিতা কি সব কথা সিরিয়াস ভাবে নিয়ে নিবে? কিন্তু ও তো কিছু ইচ্ছে করে করেনি। ওর নিজের উপর নিজের যে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

চলবে….

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply