Golpo প্রণয়ের ব্যাকুলতা

প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৭


#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা

#সাদিয়া

#পর্ব_১৭

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

তাজ খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। মাথার চুল বেয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। শরীরের নীল রঙা শার্টটা ভিজে লেপ্টে রয়েছে শরীরের সাথে। পার্কটাও জনমানবহীন, বৃষ্টির কারনে পার্কে কেউই নেই এই দুজন নরনারী ব্যতীত। একটু পর মৌমিতার হাত ধরেও বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়ি করিয়ে দিল তাজ। আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত দুটো দুদিকে ছড়িয়ে দিল চিৎকার করে বলল – আই লাভ ইউ মৌ, খুব ভালোবাসি তোমাকে খুব।

মৌমিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। আদুরে কন্ঠে আবার বলল – খুব ভালোবাসি আমার মিষ্টি পরীটাকে।

মৌমিতা আলতোভাবে হাত রাখলো তাজের পিঠে। শান্ত কন্ঠে বলল – আমিও খুব ভালোবাসি আপনাকে মিস্টার আগুন চোখা আধু ভাই।

__________________________________

বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক আগেই তবে আকাশটা পরিষ্কার নয় এখনও মেঘে ঢেকে আছে যেন মেঘগুলো অভিমান করে আছে। যেকোনো সময় মেঘ তার অভিমান ভেঙে অঝড়ে কেঁদে দিবে। বিকালের সময় মৌমিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রাকৃতি উপভোগ করছিল। বাহিরে একটা শীতল হাওয়া বইছে। তার এই উপভোগের মধ্যে ব্যাগাত ঘটালো ফোনের কর্কশ ধ্বনি। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এলেও ফোনের স্ক্রীনে নাম দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল । দ্রুত কলটা রিসিভ করেই মিষ্টি করে বলল – আসসালামুয়ালাইকুম।

– ওয়ালাইকুমুস সালাম। তুমি কি আমাকে হার্ট অ্যাটাক করিয়ে মারার প্ল্যান করছো?

তাজের এমন উদ্ভট কথায় নাক মুখ কুঁচকে এলো মৌমিতার। ‌চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল – মানে?

– এত মিষ্টি করে সালাম দিলে তো আমি হার্ট অ্যাটাক করবো।

– সবসময় বাজে কথা , সালাম আবার মিষ্টি আর তিতা হয় নাকি।

– তা অবশ্য ঠিক, তোমার সবকিছুই তো মিষ্টি, তুমি মানুষটাই মিষ্টি ইচ্ছে করি খেয়ে ফেলি।

লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেল মৌমিতার। নাকের ডগাও লাল বর্ন ধারন করেছে। হঠাৎ তাজ উঠে বলল – খুব ক্ষুদা লেগেছে আমার। দুপুরে খাইনি।

– কি কেন? এখন কয়টা বেজেছে জানেন? তাড়াতাড়ি খেয়ে আসুন।

– কি খাব বাসায় নেই তো কিছু।

– কিছু নেই মানে? সার্ভেন্টরা কিছু রান্না করেনি?

– আসেনি তারা আজ।

– কেন?

– আমি ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম তাদের। ভেবেছিলাম আজকে তোমাকে নিয়ে বাইরে খাবো কিন্তু বৃষ্টিতে তো কিছুই হলো না সেই থেকে আমি না খেয়ে আছি।

মৌমিতার কলিজাটা ধক করে উঠল। মানুষটা না খেয়ে আছে , মৌমিতা অস্থির কন্ঠে বলল – আর একটু অপেক্ষা করুন আমি এক্ষুনি আসছি।

কলটা কেটেই তাজ দৌড়ে গেল রান্না ঘরে সার্ভেন্টদের সব ঠেলেঠুলে বাড়ি পাঠিয়ে যা যা রান্না করা ছিল সব ফেলে দিল। মৌমিতাও কলটা কেটেই যে জামা পড়নে ছিল সেটা পড়েই বেড়িয়ে পড়েছে। এখন সময় নষ্ট করা যাবে না। মানুষটা নিশ্চই ক্ষুধায় ছটফট করছে। ভাবতেই ক্ষনে ক্ষনে অস্থির হয়ে উঠছে মৌমিতার মন। দোকানে গিয়ে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি কিনেই গাড়িতে উঠলো।

মিনিট তিরিশ পর মৌমিতা তাজের বাড়িতে পৌঁছে গেল। দরজা খুলেই বিশাল এক হাসি দিল তাজ। মৌমিতা বিনা বাক্যে দ্রুত ভিতরে ঢুকেই রান্নাঘর থেকে একটা প্লেট এনে বিরিয়ানি বেড়ে তাজের সামনে ধরলো।

– তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন। নিশ্চই খুব ক্ষুধা লেগেছে।

তাজ হাত গুটিয়ে বাচ্চাদের মতো বলল – খাইয়ে দেও তুমি।

ইতস্তত করছে মৌমিতা। কেমন লজ্জা লজ্জা করছে। এর আগে ভাইকে ছাড়া আর কখনও কাউকে খাইয়ে দেয়নি সে। আমতা আমতা করে বলল – নিজের হাতেই খেয়ে নিন না।

তাজ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলল – তুমি না খাইয়ে দিলে আমি খাবো না। ভুলে যেও না আমি কিন্তু দুপুরে কিছু খাইনি।

উপায় না পেয়ে মৌমিতাকে খাইয়ে দিতে হলো তাজকে। তাজও বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে নিচ্ছে। পেট ভরা তবুও খেতে হবে না হলে মৌমিতার কাছে ধরা পরে যাবে সেই ভয়ে খেয়ে নিচ্ছে চুপচাপ। খাওয়ানোর পর মৌমিতার ওরনায় মুখ মুছলো তাজ। প্লেটে মৌমিতা হাত ধুতেই তাজ শুয়ে পড়লো মৌমিতার কোলে মাথা রেখে। একহাত টেনে নিজের মাথার উপর রেখে বলল – মাথায় হাত বুলিয়ে দেও ঘুমাবো আমি।

তাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল মৌমিতা। তাজ চোখ বন্ধ করে মৌমিতার কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। ক্ষানিক পর মৌমিতা বলল – শুনছেন?

তাজ চোখ বন্ধ রেখেই উত্তর দিল – হুম।

– সন্ধ্যা হয়ে এসেছে আমাকে এখন যেতে হবে।

– না আজ তুমি আমার বাড়িতেই থাকবে।

আঁতকে উঠলো মৌমিতা, উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল – পাগল হয়েছেন আপনি ? আমি আপনার বাড়িতে থাকবো কেন?

– যেভাবে বলছো মনে হয় আগে কখনও আমার বাড়িতে তুমি থাকো নি।

– থেকেছি কিন্তু তখনকার থাকা আর এখনকার থাকা আলাদা। একবার থেকেছি বিপদে পড়ে আর একবার আপনার অসুস্থতায়।

– তো?

– দেখুন আপনি একটু বোঝার চেষ্টা করুন এভাবে অবিবাহিত অবস্থায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে আর মেয়ের এক বাড়িতে থাকা যায় না । মানুষ দেখলে কি বলবে?

– মানুষ দেখবে কি করে। এই গাছপালায় ঘেরা আমার বাড়িতে কেউ আসে না। আর এখানে আশে পাশে কোনো বাড়িঘরও নেই।

– দেখুন……

উঠে বসলো তাজ, হুংকার দিয়ে বলল – এক কথা বারবার বলতে আমার ভালো লাগে না। বলেছি না তুমি আমার বাড়িতে থাকবে আজকে তার মানে তোমাকে আমার বাড়িতেই থাকতে হবে ।

আঁতকে উঠলো মৌমিতা। তাজের চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে। নিশ্চই মানুষটা ভীষণ রেগে গেছে। এই মুহূর্তে কে কি কেন কিছুই মাথায় আসলো না মৌমিতার‌ । তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে তাজকে শান্ত করতে হবে না হলে ভয়ংকর কিছু ঘটে যেতে পারে‌। রাদীফও বাড়িতে নেই যে সামলাবে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাজকে ‌‌। পিঠে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বলল – আমি কোথাও যাব না , আপনার বাড়িতেই থাকবো। আপনি শান্ত হন।

আস্তে আস্তে শান্ত হলো তাজ। নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মৌমিতাকে। শান্ত কন্ঠে বলল – তুমি আমার কাছে থাকলে আমি শান্তি পাই না হলে আমার দম বন্ধ লাগে, খুব অস্থির লাগে। ক্ষনে ক্ষনে কোনো কারন ছাড়াই রাগ ওঠে ‌।

___________________________________

তাজের রুমে বসে আছে মৌমিতা। তাজও সটান হয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। মৌমিতা প্রায় ১ ঘন্টা ধরে এক কথাই জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে সে কোথায় ঘুমাবে আর তাজ কোনো উত্তর দিচ্ছে না। সে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। রাগ উঠে যাচ্ছে মৌমিতার। এতক্ষন অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করেছে সে। এবার আর না পেরে চেঁচিয়ে উঠলো – সমস্যা কি আপনার? কথা বলছেন না কেন?

ধরফরিয়ে উঠে বসলো তাজ। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল – কি হয়েছে চোর পড়েছে নাকি ডাকাত? এত জোরে চিৎকার কেন করলে?

মৌমিতার রাগ তরতর করে বেড়ে গেল। এতক্ষন ধরে এত কথা বলল এই লোকের সাথে আর এখন সে কি না বলছে চোর পড়েছে নাকি ডাকাত? মৌমিতা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল – আমি কোথায় ঘুমাবো?

তাজ একটা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল – ওহ এই কথা এর জন্য এত জোরে চিৎকার করলে?

– ফালতু কথা বাদ দিয়ে বলুন আমি কোথায় ঘুমাবো?

– কেন আমার সাথে আমার পাশে।

চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল মৌমিতার। অবাক হয়ে বলল – পাগল হয়ে গেছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে? আমি আপনার সাথে একসাথে ঘুমাবো?

– হ্যা ঘুমাতেই পারো সমস্যা কি?

মৌমিতা একটা বালিশ ছুঁড়ে মারলো তাজের মুখে তাজ সাথে সাথে বালিশটা ক্যাচ করে হেসে ফেললো। মৌমিতা কটমট করে বলল – এখনই বের হন এই রুম থেকে। আমি ঘুমাও।

– আমার রুম থেকে আমাকেই বের করে দিতে চাইছো, সাহস তোমার কম না মেয়ে।

মৌমিতা উঠে দাঁড়ালো, বলল – আপনি যাবেন না তো , ঠিক আছে আমিই বেড়িয়ে যাচ্ছি বলে হাঁটা ধরলো।

পিছন থেকে হাত টেনে ধরলো তাজ, বলল – থাক আমিই যাচ্ছি তুমি থাকো।

যেতে যেতে আবার ফিরে এলো, অসহায় মুখ করে বলল – একসাথে ঘুমালে কিন্তু খারাপ হতো না। আমি কিছু করতাম না শুধু একটু ঘুমাতাম।

মৌমিতা অগ্নী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তাজের দিকে। ঢোক গিলল তাজ । মেকি হেসে বলল – ওভাবে তাকাচ্ছো কেন? যাচ্ছি তো আমি।

চলবে….

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply