নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা
নাজনীননেছানাবিলা
পর্ব_৮
অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌❌❌❌❌
রাতেই আরেকটি পর্ব আসবে। বোনাস পর্ব।
ইরফানের চোখে ঘুম নেই।সে ঘরে এসে পায়চারি করছে কিছুতেই সে নীলা কে প্যারিস যেতে দিবে না।
আরশি বিছানা উপর বসে বসে ইরফানের কর্ম কান্ড দেখছে।তার ভীষণ বিরক্ত লাগছে ইরফানের নীলার জন্য এত আকুলতা দেখে।এত আদিখ্যেতা দেখানোর কি আছে তা তার মাথায় ঢুকে না।সে কন্ঠে কোমলতা এনে ইরফানের উদ্দেশ্যে বলল_
ইরফান জান এখানে আসো না একটু।
ইরফানেন মেজাজ এমনিতেই বিগড়ে ছিল এমন সময়ে আরশির ন্যাকামি তার বিন্দু মাত্র ভালো লাগলো না। বিগড়ে যাওয়া মেজাজ আরো বিগড়ে গেল।সে আরশির দিকে না তাকিয়েই ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল_
ওহ বেশি কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়ো। আমাকে আমার মত থাকতে দাও। দেখছো এমনিতেই টেনশনে আছি। এমন ভাব করছো যখন তুমি জানো না নীলা প্যারিসে গেলে কি হতে পারে। নিজে তো কিছু ভাবছো না অন্তত আমাকে ভাবতে দাও।
কথাগুলো বলেই ইরফান রুমের বারান্দায় চলে গেল।আরশি তার যাওয়ার পানে চেয়ে রইল। চোখে মুখে তার রাগের ছাপ স্পষ্ট। ইরফান বারান্দায় চলে যেতেই আরশি রেগে বিছানার উপর থেকে বালিশ মেঝেতে ছুড়ে ফেলল। তারপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল_
এই নীলা সবসময় জিতে যায়। তার কাছ থেকে আমি কখনোই কিছু কেড়ে নিতে পারলাম না। ছোট্ট বেলা থেকেই সবার প্রশংসা পেয়ে এসেছে।এত চেষ্টা করেও কখনো তার থেকে বেশি ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি। সব সময় পাঁচ কি দশ নাম্বার কম পেতাম।
আরশি চলে গেল অতীতের ভাবনায়,
অতীত_
আরশি আর নীলা সবে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করল।এখন তারা দুজনেই ফ্রি। তাই সিদ্ধান্ত নিল আজ তারা ঘুরতে যাবে। মূলত আরশি নাকি নীলাকে কিছু একটা বলবে তার জন্যই দুজন মিলে ঘুরতে গেল। দুজনে মিলে রমনা পার্কে বসে বসে বাদাম খাচ্ছে।
নীলা বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল_
কিরে কিছু বলছিস না যে? কিছু একটা বলবি বলে তো এত তাড়াহুড়া করে আমাকে এখানে আনলি এখন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছিস কেন?
আরশি কিছুটা লজ্জা পেল নীলার কথায়। তারপর যেইনা কিছু বলতে যাবে অমনি তাদের স্কুলে পড়তো এক সিনিয়র এসে নীলা কে উদ্দেশ্য করে বলল_
আরে নীলা এই খানে যে? অনেকদিন পর দেখা হলো। পরীক্ষার পর তো আর দেখাই হলো না।
নীলাও ছেলেটির প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো হাসিমুখে। ছেলেটি তাদের স্কুলেই পড়তো। তাদের ২ ব্যাচ বড়। ছেলেটির নাম ইভান। এখন অবশ্য ছেলেটি কলেজে পড়ে। কিন্তু ছেলেটির মা তাদের স্কুলের শিক্ষিকা হবায় ছেলেটি প্রায়ই তাদের স্কুলে আসে এবং তাদের সাথে প্রায় দেখা হয়।
ইভান শুধু নীলার সাথেই কথা বলছে তার পাশে যে আরশি বসে আছে এটা সে খেয়ালই করছে না। যা আরশির মোটেও পছন্দ না।আরশি ক্লাস সেভেন থেকেই ইভান কে পছন্দ করতো। একবার সবাই মিলে পিকনিকে গিয়েছিল স্কুল থেকে এবং জুনিয়রদের ৬ জন করে টিম করা হয় সেখানে একজন করে সিনিয়র টিম লিডার থাকে। এবং সে আর নীলা ইভানের টিমে পরেছিল। তখনই তার ইভান কে দেখে মনে ভালো লাগার জন্ম হয়। যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট। কিন্তু এই সম্পর্কে সে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড কেও কিছু বলে নি কারণ তার ভালোবাসা ছিল একতরফা। সে এই কথাটি বলার জন্যই আজ নীলা কে মূলত এখানে ডেকেছে।
ইভান নীলা কে বলল_
যাক ভালই হয়েছে তোমার সাথে দেখা হয়ে গিয়েছে। তোমার সাথে কিছু কথা ছিল আমার।
নীলা স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল_
জি ভাইয়া বলুন শুনছি।
আরশি ও নড়ে চড়ে উঠলো।সে শুনতে চাই ইভান নীলাকে কি বলে। ইভান দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে সাহস জোগায় তারপর নীলার চোখে চোখ রেখে বলল __
সাল টা ছিল (কাল্পনিক)আমি ক্লাস নাইনে পড়তাম। সব সময় পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম কখনো প্রেমে জড়ায়নি। কিন্তু জানি না পিকনিকে গিয়ে কি করে এক ছোট্ট মেয়ের মায়ায় জড়িয়ে পড়লাম।
কথাগুলো বলেই ইভান থামলো। সামনে যা বলতে যাচ্ছে তার জন্য আরো সাহস জুগিয়ে নিল।নীলা অবুঝের মত ইভানের দিকে তাকিয়ে রইল। আর আরশি কিছু একটা আন্দাজ করে অবাক বৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার মনে এক অদ্ভুত ভয় ঢুকে গেল। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর ভয়।
ইভান আবার বলতে শুরু করল _
এই ছোট্ট মেয়েটি আর কেউই নয় বরং তুমি। সেই পিকনিকে যখন তুমি আমার টিমে পড়েছিলে তখনই তোমাকে দেখে তোমার মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম।
নীলার চোখে বিস্ময় ফুটে উঠল।আর আরশি? তার হাত-পা রীতিমত কাঁপতে শুরু করল। ক্লাস সেভেন থেকে যাকে ভালবেসে আসছে সেই মানুষটি আজ তার সামনেই তার বেস্ট ফ্রেন্ড কে নিজের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করছে এটা যেন সে মানতেই পারল না। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইল ইভানের দিকে।নীলা কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না। পিকনিকের দিন যখন ইভান তার অনেক কেয়ার করেছিল তখন সে ইভান কে নিজের বড় ভাইয়ের মতো দেখেছিল। ইভানের প্রতি তার মনে সম্মান তৈরি হয়েছিল। এর বেশি আর কিছুই না কারণ সে তো তার ইরফান ভাইকে ভালোবাসে।
ইভান আবার বলতে শুরু করল _
এরপর থেকে সারাক্ষণ তুমি আমার মনের বসবাস করতে। অনেক কষ্টে পড়া শোনাতে মনোযোগ দিতে হতো আমার। আমি আগে রেগুলার স্কুল যেতাম না। কিন্তু সেই পিকনিকের পরের দিন থেকে আমি রেগুলার স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলাম। তুমি যেখানে প্রাইভেট পড়তে তোমার পেছন পেছন সেখানেই চলে যেতাম। আমার বাসা দক্ষিণের দিকে থাকা সত্ত্বেও তোমার বাসা পশ্চিমের দিকে ছিল বলে স্কুল শেষে প্রতিদিন তোমার পেছন পেছন যেতাম। তুমি স্কুলে না আসলে তোমার বাড়ির সামনে গিয়ে ঘোরাফেরা করতাম কেবল তোমাকে এক নজর দেখার জন্য। আই লাভ ইউ নীলা। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায়?
আরশি আর বসে থাকতে পারলো না।হাত পা তার অবশ হয়ে আসছে।সে কিছু না বলেই সেখান থেকে দৌড়ে এসে পড়ল।নীলা আরশি কে এভাবে চলে যেতে দেখে অবাক হয়ে গেল এবং নিজেও বসা থেকে উঠে পড়ল।
তখনই ইভান বলল_
হয়তো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমাদের কেউ প্রাইভেসি দিতে চায়।
নীলারও তাই মনে হলো এবং সে ইভানের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল_
দেখুন ভাইয়া আমি কখনোই আপনাকে এমন চোখে দেখিনি। পিকনিকের দিন আপনি অনেক ভালো ব্যবহার করেছিলেন অনেক কেয়ার করেছিলেন তাই আপনার জন্য আমার মনে সম্মান জন্মে ছিল। আপনাকে নিজের বড় ভাই হিসেবে দেখেছি আমি। আর তাছাড়াও ছোটবেলা থেকে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আমি আপনাকে আঘাত করতে চাই না। তাই আমাকে ভুলে গিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করুন। অবশ্যই আল্লাহ আপনার জন্য ভালো কাউকে রেখেছে। আসছি ভালো থাকবেন।
কথাগুলো বলেই নীলা বড় বড় কদমে সেই জায়গা ত্যাগ করল।আর অশ্রুসিক্ত নয়নে তার যাওয়ার পানে চেয়ে রইল ইভান।সে সত্যিই নীলা কে খুব ভালোভাসতো কিন্তু নীলার খুশির জন্য নীলা কে আর সে বিরক্ত করবে না।
আরশি বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।চোখ দিয়ে তার অনবরত পানি পরছে।তার সামনে তার ভালোবাসার মানুষ নীলা কে প্রপোজ করেছে এটা তার সহ্য হচ্ছে না। বিছানার পাশে একটি ছোট্ট টেবিলের উপর তার আর নীলার ছবির ফ্রেম ছিল।আরশি সেই ফ্রেম ধরে মেঝেতে ছুড়ে ফেলল। ফ্রেমের কাজ ভেঙে গেল। ফাটল ধরল তাদের দুজনের ছবির মাঝে কিন্তু কেবল কি তাদের ছবির মাঝেই ফাটল ধরেছে?
আরশি নীলার ছবির উপর পা রেখে আয়নার নিজেকে দেখে বলতে লাগলো_
তোর থেকে দেখতে কোন অংশে কম না তো আমি বরং তোর থেকে দেখতে অনেক বেশি সুন্দর। আমার চুল কোমরের নিচে পড়ে এত লম্বা এবং ঘন। গায়ের রং ধবধবে সাদা। তোর মত বোরখা পরে আন্টি সেজে ঘুরি না সবসময় ফিটফাট থাকি। তবুও কেন মানুষ তোকে পছন্দ করে? এমনকি আমার ভালোবাসার মানুষটিও তোকে ভালোবাসে। তুই এটা কি করে করতে পারলি নীলা? আমার যে কষ্ট হচ্ছে আমার ভালবাসার মানুষটিও আমাকে ভালবাসে না।তুই কি বুঝিস ভালোবাসার মানুষটি ভালো না বাসলে কেমন লাগে? আল্লাহ আমার কষ্ট হচ্ছে। আমরা যাকে ভালোবাসি তারা কেন আমাদের ভালোবাসে না। আর তারা আমাদেরকে ভালো না বাসলে তাদের প্রতি কেন আমাদের এক আকাশ সমান নিঃস্বার্থ ভালোবাসা জন্মায়? কেন তারা আমাদের নসিবে থাকে না? কেন তারা আমাদের ভালোবাসার বদলে বিন্দুমাত্র ভালোবাসা দিতে পারে না আমাদেরকে। কেন আল্লাহ কেন?
কথাগুলো বলেই আরশি কান্নায় ভেঙে ফেলল। তার বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। গলা ফাটিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কান্না করে নিজের কষ্টের কথা কাকে বলবে? মা বাবাও তো তাকে না ভালবেসে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। ভাই একটা বিদেশে। আপন বলতে তো তার কেউ নেই। এসব মনে করেই আবার কাঁদতে শুরু করলো সে। অনেক্ষণ কান্না করার পর থামল তারপর আবার টেবিলের উপর রাখা আরেকটি ছবির ফ্রেমের দিকে তার চোখ গেল। সেখানে সে নীলা এবং ইরফান। মূলত ইরফান প্যারিসে যাওয়ার আগে নীলা কে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল এবং তাদের সাথে আরশিও যায়। তখনই এই ছবিটি তোলা হয়েছিল। এবং তিনজন মিলে এই ছবিটি ফ্রেম বের করলো।আরশি ছবিটির ফ্রেম হাতে নিল। তার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। সে ছবির ফ্রেম থেকে ছবিটি বের করল। তারপর নীলার ছবি সাইডেরথেকে ছিড়ে ফেললো।আরশি মাঝখানে ছিল তার একপাশে নীলা এবং অন্য পাশে ইরফান ছিল।সে ড্রয়ার থেকে ম্যাচ লাইট বের করে নীলার ছবিতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করল__
তুই যেমন আমার ভালোবাসার মানুষকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিস। আমিও ঠিক তেমনি তোর কাছ থেকে তোর ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নেব। দিনশেষে তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই না। তাই যেমন সুখে দু’জন একসাথে থেকেছি তাহলে দুঃখে কেন আমি থাকবো? তোকেও আমি যেই পরিমাণ কষ্ট যন্ত্রণা পেয়েছি সেই পরিমাণ কষ্ট যন্ত্রণা অনুভব করাবো।
কথাগুলো বলেই সে পাগলের মত হাসতে লাগলো।
তারপর আবার নীলার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে শুরু করল। তার ভাই প্যারিসেই থাকে।আর এখন ইরফানও প্যারিসে থাকে।তাই তার প্ল্যান মাফিক কাজ করতে সুবিধা হবে।নীলা তাকে সেইদিন কেন চলে এসেছে এই কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বাহানা দিয়ে বলল _
আমি তোদেরকে প্রাইভেসি দিতে চেয়েছিলাম।
তারপর নীলা সেই দিনের সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল। কিন্তু তারপরও আরশির মনে নীলার প্রতি ক্ষোভ হিংসা কোনটাই কমলো না। নীলা যখন আবার জিজ্ঞেস করল __
তুই সেদিন আমাকে কিছু একটা বলবি বলেছিল এখন বল কি বলবি।
আরশি বাঁকা হেসে বলল_
আমি প্যারিসে যাচ্ছি। ভাইয়া অনেক আগেই আমার জন্য পাসপোর্ট করতে দিয়েছিল যাতে তার কাছে মন চাইলেই যেতে পারি। পাসপোর্ট হয়তো সপ্তাহখানেক এর ভেতর চলে আসবে। তারপর আমি প্যারিসে চলে যাব।
এইটা শুনে নীলা কিছু কষ্ট পেল কারণ তার বেস্ট ফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে চলে যাবে কিন্তু পরক্ষণেই উৎফুল্ল হয়ে বলল_
ইরফান ভাইয়াও তো তোর ভাইয়া যেখানে আছে সেখানেই আছে। ভালোই হয়েছে সেখানে গিয়ে তার ওপর নজরদারি করতে পারবি।
আরশি কেবল হাসলো।
বর্তমান _
এই সব কথা ভাবতে ভাবতে আরশি অতীত থেকে ফিরে এলো। চোখ দিয়ে তার দুই ফোটা অশ্রু উড়িয়ে পরল। নিজেকে ধাতুস্ত করে বলল_
কখনো ভালোবাসা পায় নি নীলা।তোর সাথে বন্ধুত্ব হবার পর তোর থেকে এবং তোর পরিবার থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়ে। কিন্তু তুই আমার ভালোবাসার মানুষটিকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিস। তাই আমিও তোর কাছ থেকে তোর ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নিলাম। মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয় আমাদের পুরনো দিনের কথা মনে পড়তেই। কিন্তু তোর প্রতি যে ক্ষোভ মনে তৈরি হয়েছে তা কখনোই আমাকে দুর্বল করে না বরং তোর প্রতি ঘৃণা আরো জন্মায়। তোর জীবনকে আরো অগোছালো করে দেবো আমি। জানিনা এই লড়াই কতদিন লড়তে হবে। কিন্তু তবুও আমি হার মানবো না।
ইরফান বারান্দার চেয়ারে বসে বসে ভাবছে নিজের অতীতের করা কুকাজ। কাকে প্যারিসে ঠকিয়ে ছিল কিভাবে ঠকিয়েছিল।সেই সব ভাবতেই গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায় তার।নীলা কে সে হাতছাড়া করতে পারবে না। যেভাবেই হোক নীলার প্যারিসে যাওয়ার কথা হবে। সে নিজের মাথার চুল খামচে ধরলো এবং একা একা বিড়বিড় করতে লাগলো_
কি করে কি করে কি করে আমি আটকাই।
হঠাৎ তার মাথায় এক দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। সঙ্গে সঙ্গে ফোন বের করে নিজের এক বন্ধুকে কল লাগালো। তার বন্ধু কল ধরতেই সে বলল__
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিছু লোকের ব্যবস্থা কর যারা এক্সিডেন্ট করাবে। এটা করিস না কোন সিরিয়াস কিছু না। আমার অ্যাক্সিডেন্ট করাতে হবে। সিরিয়াস এক্সিডেন্ট না মোটামুটি যাতে ইনজুরি হই এমন। তুই তাড়াতাড়ি লোক যোগাড় কর যাতে আমি যখন চাই তখনই এটা সম্ভব হয়।
তার বন্ধু কিছু জানতে চাইলে সে বলল_ যেটা বলেছি সেটা কর আগে। সব পরে বুঝিয়ে দিও। বলেই ফোন কেটে দিবো। তারপর নিজে নিজেই বলতে লাগলো __
অনেক উঁচুতে করছো তুমি নীলা পাখি। তোমার ডানা কিভাবে না কেটেও তোমার উড়া বন্ধ করতে হয় তা এই ইরফান মির্জার খুব ভালো করেই জানা আছে। তোমার উড়া বন্ধ করার জন্য না হয় নিজের হাত পা ভেঙে কিছুদিন বেডে থাকলাম।তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমাকে যেভাবেই হোক নিজের অতীত থেকে অজানা রাখবো আমি। এমনকি তোমার না জানা এক অতীত আছে সেই অতীত থেকেও আমি অজানা রাখবো।
কথাগুলো বলেই সে হাসলো।
চলবে??
কারেন্ট মাত্র আসলো 🙂
নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা
নাজনীননেছানাবিলা
বোনাস_পর্ব
অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌❌❌❌❌
টকবক,টকবক করে ঘোড়া ছুটিয়ে যাচ্ছে মিহাল খান। প্রফেসরের পাশাপাশি যদি তার আরেকটি পরিচয় থাকে সেটা হল একজন অভিজ্ঞ হর্স রাইডার। হর্স রাইডিং করতে তার বেশ ভালো লাগে। যেখানে এই যুগে এসে সবাই বাইক রাইডিং করে সেখানে এখনো সে হর্স রাইডিং করতে বেশি স্বাচ্ছন্ন বোধ করে।
ভার্সেইলস (Versailles) বলতে সাধারণত ফ্রান্সের প্যারিসের কাছে অবস্থিত বিখ্যাত প্যালেস অফ ভার্সেইলস (Palace of Versailles) বা ভার্সেইলস প্রাসাদকে বোঝানো হয়।সে সেখানেই নিজের ঘোড়া দৌড়াচ্ছে।কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। পরনে তার কালো প্যান্ট, এস কালারের টি-শার্ট এবং তার ওপর কালো কালারের জ্যাকেট। খুব জোরে ছোটাচ্ছে সে ঘোড়া। এরকম পর্যাপ্ত সময় নিয়ে প্র্যাকটিস করে সে থামল। খুব সাবধানতা অবলম্বন করে ঘোড়ার উপর থেকে নেমে পড়ল। তারপর ঘোড়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেল। মা বাবার পর সে তার নরম দিক কেবল মুনভি কে দেখাতো। কিন্তু তাছাড়াও যদি তার নরম দিক সম্পর্কে কারো জানা থাকে সেটি হলো তার ঘোড়া মুনসশাডো। কোন এক রাতের আঁধারে তার সামনে চাঁদের ছায়া হয়ে এসেছিল এই ঘোড়া তাই ঘোরাটির নাম সে দিয়েছে মুনসশাডো।মুনসশাডোর সাথে আরো কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করে তারপর সেখান থেকে বের হয়ে গেল। এবং সেখান থেকে বের হতে না হতেই তার মুখে আবার সেই আগের গম্ভীর্য ফুটে উঠলো। যেন তাকে দেখলেই যে কোন মানুষ নিঃসন্দেহে বলতে পারবে তার মধ্যে কোন অনুভূতি নেই। অনুভূতি তো দূরের কথা অনুভূতি দিয়ে হৃদয়ে থাকে সেই হৃদয় নেই। কলেজেও তাকে স্টুডেন্ট এবং অন্যান্য তার কলিগরা হার্টলেস হিসেবেই চেনে। অথবা সেলফিশ ম্যান। সে বরাবরই নিজের ভালো আগে বেছে নেয়। কারো কাছে নিজের ভালো দিক সহজে প্রকাশ করে না। তার মতে এগুলো মানুষ সিম্প্যাথি নেওয়ার জন্য করে। কিন্তু সে কারোর সিমপ্যাথি নিতে প্রস্তুত নয়। তার কাছে তার ইগো আগে, এটিটিউড আগে তারপর বাকি সব। কিন্তু হ্যাঁ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সে যতই হৃদয়হীন হোক, এবং স্বার্থপর মানুষ হোক নিজের স্বার্থ খুঁজতে গিয়ে কখনোই অন্য কারোর ক্ষতি করে নি।
মিহাল নিজের ব্ল্যাক মার্সিডিসে উঠে বসলো। তখনই তার ফোনে কল এলো। ফোনের স্ক্রিনে নাম্বার দেখে বাঁকা হাসলো এই কলেরই সে অপেক্ষা করছিল।ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো।
অপর পাশের ব্যক্তিটি বলল__
বস আমি আমার লোকদের দ্বারা যতটুকু জানতে পেরেছি ততটুকুর ভেতর একদম কনফার্ম হয়ে বলছি যে মেয়েটির ফ্ল্যাইট আগামী সন্ধ্যায়।
মিহালের ঠোঁট স্মিত হাসি ফুটে উঠলো।সে ঠোঁটের হাসি বজায় রেখে বলল__
ওয়েল ডান। যে করেই হোক মেয়েটি যেন একদম নিরাপদ ভাবে এখানে পৌঁছায়। কেউ যদি কোন রকম বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে প্রয়োজন পড়লে তাকে পথ থেকে সরিয়ে দিবে। কিন্তু হ্যাঁ জানে মারবে না। সেটার জন্য তো আমি আছি। কিন্তু মেয়েটি যেকোনো হালে যেন সঠিক সময় নিজের ফ্ল্যাইট পেয়ে যায়।
উপর পাশের ব্যক্তিটি ওকে বস বলে ফোন কেটে দিল। মিহাল বাঁকা হেসে বলল__
অনেক লুকোচুরি খেলেছিস তুই আমার সাথে। আমার কাছের মানুষ হয়ে তারপর আমাকে ঠকিয়েছিস। আমিও তোর কাছের মানুষের মাধ্যমে তোকে ঠকাবো। তার জন্য যত নিচে নামতে হয় আমি নামবো। কাউকে মাথায় তুলে আছাড় দেওয়ার জন্য আগে নিচে বসে তাকে মাথায় চড়ার সুযোগ দিতে হয়। আমিও তাই করব। কিন্তু তুই আমার হাতে ধ্বংস হবি। যেসব অতীত মাটির তলায় চেপে রেখেছিলাম সেগুলো আস্তে আস্তে মাটি খনন করে বের করব। দেখা যাবে অতীত কে বের করতে গিয়ে মাটি খনন করার সময় হীরা পেয়ে গেলাম।
নীলার ব্যাগ পত্র সব কিছু একদম গোছানো শেষ। তার মা চাচীরা মিলে সবকিছু গুছিয়ে দিয়েছে। এক লাগেজে যদি তার কাপড় তো আরেক লাগেজে তার মা চাচী না মিলে নিজেদের হাতে বানানো খাবার ভরে দিচ্ছে। যেমন মুড়ির মোয়া, হাতের বানানো আচার, আমসত্ত, নারিকেলের নাড়ু এইসকল কিছু। এমন সময় তার বাবা চাচারা তার রুমে এলো।নীলা বসে বসে ইবাদ এবং আবিরের সাথে কথা বলছিল।আবির নীলা প্যারিসে চলে গেলেই সেও নিজের মেডিকেলে তে চলে যাবে। বাড়ি সম্পূর্ণ খালি হয়ে যাবে বলে ইবাদের মন খারাপ। এখন সেও জেদ ধরছে যে সে হোস্টেলে চলে যাবে। কিন্তু এত অল্প বয়স হয়ে তো আর তাকে হোস্টেলে দেওয়া যাবে না। আর বাড়ির সব ছোটরা যদি একসাথে চলে যায় তাহলে বড়দের খুব খারাপ লাগবে। তাই নীলা এবং আবির মিলে ইবাদ কে বোঝাচ্ছে।
ইমরান মির্জা,আকাশ মির্জা এবং নিলয় মির্জা লাগেজ খুলে নিজেদের মত দেখতে লাগলেন। যাকে বলে মনের সন্তুষ্টি। হঠাৎ ইমরান মির্জা নারিকেলের নাড়ুর বোয়ম হাতে নিয়ে ভাঙা কণ্ঠে বললেন __“
হাতের তৈরি নারিকেলের নাড়ু মিনুর খুব প্রিয় ছিল।
সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।আকাশ মির্জা এবং নিলয় মির্জার চোখে পানি। এবং তাদের স্ত্রীরা মিনু কে নিজ চোখে সামনাসামনি না দেখলেও তাদের মুখ থেকে এত প্রশংসা শুনেছেন যে তারাও মিনুর ভক্ত হয়ে গিয়েছেন। তারা এসে নিজেদের স্বামীদেরকে সান্ত্বনা দিলেন। পিছনে আবির ইবাদের সাথে কথা বলাতে ব্যস্ত থাকলেও নীলার মনোযোগ বড়দের দিকে ছিল। বিশেষ করে মিনু নামটা শুনে তার নজর এদিকে চলে এলো। তার মনে আবার পুরোনো করে কৌতূহল জেগে উঠলো। কিছুদিনের ঝামেলা সে এই বিষয় সম্পর্কে ভুলে গিয়েছিল। এখানে সবাইকে ব্যস্ত দেখে সে চুপচাপ উঠে পরলো এবং নিজের বাবার রুমে চলে গেল। তারপর কিছু একটা খুঁজতে লাগলো। এবং সেই কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি খুঁজেও পেলো। দরজার দিকে গিয়ে আরেকবার উঁকি দিয়ে দেখল কেউ আসছে কিনা। যখন দেখলো কেউই তখন আবার রুমে এসে কাঙ্খিত বস্তুটি খুললো। তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রুও গড়িয়ে পড়ল। এমন কিছু সে জানতে পারবে তা সে কল্পনাও করতে পারে নি। একের পর এক ধাক্কা যেন সে পেয়ে যাচ্ছে। তবুও প্রত্যেকটি ধাক্কা পাওয়ার পর দুর্বল না হয়ে বরং আরো বেশি পাথর হয়ে উঠছে। সে কাঙ্খিত বস্তু জায়গামতো রাখার আগে নিজের ফোন বের করে প্রয়োজনীয় কিছু ছবি তুলে নিল। তারপর চুপচাপ কাঙ্খিত বস্তু জায়গা মতো রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
ইরফান বাড়ির সবাই কে বলে বের হয়েছে।আজ সন্ধ্যায় নীলার ফ্ল্যাইট এখন সকাল ১১ টার বাজে। বিকাল তিনটার দিকে নীলা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হবে। দুপুরের মধ্যেই তার নিজের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। বাড়ি থেকে বের হয়ে কাউকে কল দিল। তারপর গাড়ি নিয়ে ছুটলো নিজের গন্তব্যে। যেভাবেই হোক তাকে নীলার প্যারিসে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। নয়তো অনেক বড় বিপদে পড়ে যাবে সে নিজে। আর নীলা দেশে থাকলে তারই লাভ। যেভাবেই হোক নীলার মন গলিয়ে নীলার কাছ থেকে অফিসের নীলার অংশ সে নিজের নামে করবে। যেটা নিয়ে একবার আশা করেছে সেটা সে হাত ছাড়া হতে দিবে না। চার রাস্তার মোড় দিয়ে এসে গাড়ি চালাচ্ছিল। এমন সময় এক বড় ট্রাক এসে তার গাড়ি ধাক্কা দিল। ফলস্বরূপ সে গাড়ির ব্রেক কষতে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেল। এবং মাথা লাগলো গাড়ির স্টিয়ারিং এ। কপাল থেকে রক্ত বের হতে শুরু করল। গাড়ির গ্লাস ভেঙে কিছু টুকরা তার গায়ে এসে লাগল। আসলে সবকিছু তার মনের মতই প্ল্যান করা ছিল। কিন্তু সে নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিল বলে ভুলে গিয়েছিল এখানে তার প্ল্যান সফল হবে। তাই এক্সিডেন্টে কিছুটা গুরুতর আহত হয়ে গেল। যে এক্সিডেন্ট করেছি সেটার কথা মতোন পালিয়ে গেল। আশে পাশের লোক এসে তাকে গাড়ি থেকে বের করে হসপিটালে নিয়ে গেলাম এবং ভর্তি করিয়ে দিল।
ইকরা নীলার বাড়িতে চলে এসেছে দুজন মিলে একসাথে বের হবে। নীলার বাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়া সোজা। ইকরার বাড়ি কিছুটা দূর তাই চলে এসেছে আগে আগে।ইকরার সাথে তার মা বাবা এসেছে। মেয়েকে এয়ারপোর্ট দিয়ে তারপর ওনারা বাড়ি ফিরে যাবেন। সবাই মিলে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ জিরিয়ে সবাই এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। আরশি আর নিচে খেতে এলো না কারণ নীলার প্রতি সবার আদিখ্যেতা তার পছন্দ হবে না।
সবাই খাওয়া শেষ করে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসল। বড়রা মিলে দুই মেয়েকে এটা সেটা বোঝাচ্ছে যেহেতু প্রথমবার দেশের বাহিরে যাবে একা একা। এমন সময় ইমরান মির্জার ফোনে কল আসলো। তিনি কল ধরতেই কেউ একজন বলল_
আমরা হসপিটাল থেকে কল করেছি। আপনার ছেলে ইরফান মির্জার এক্সিডেন্ট হয়েছে। এখন আইসিইউ তে ভর্তি তার গুরুতর অবস্থা।
কথাটি শুনেই ইমরান মির্জার হাত থেকে ফোন মেঝেতে পড়ে গেলে। অস্পষ্ট সরি কেবল বললেন__
ইরফানের এক্সিডেন্ট হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে ড্রয়িং রুমে নীরবতা নেমে এলো। সবার চোখ মুখে আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠলো।
চলবে????
Share On:
TAGS: নাজনীন নেছা নাবিলা, নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৪
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৭
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ১
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা গল্পের লিংক
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৫(প্রথমাংশ+শেষাংশ)
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৯ প্রথম অংশ
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ২
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৬(প্রথমাংশ + শেষাংশ)
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৩+বোনাস পর্ব