নিষিদ্ধ_রংমহল 🥀
পর্ব_১১
তখন পড়ন্ত বিকেল। গোধূলির আলো বহন করছে দিন ফুরানোর বার্তা। জমিদার সিকান্দার গজনবীর খাস কামরার ভেতরেও বিকেলের সেই ম্লান আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে অজানা বিষণ্ণতা।
কক্ষের পরিবেশ বেশ ভারী। যেন ভেতরের হাওয়াও জমিদারের উদ্বেগ ঠাহর করতে পেরেছে।
জমিদার সিকান্দার গজনবী তার আরামদায়ক আসনে হেলান দিয়ে বসে আছেন। তার হাতে ধরা হুক্কার নল। তিনি যথেষ্ট ধীরেসুস্থে সুগন্ধি তামাকের ধোঁয়া ছাড়ছেন বটে, কিন্তু সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলীও তার ভেতরে জমে থাকা গভীর দুশ্চিন্তাকে আড়াল করতে পারছে না কোনোক্রমেই।
তার চোখে-মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে বংশের সম্মান রক্ষার আকাঙ্ক্ষা। বড়পুত্র তাইমুরকে নিয়ে সে বড় চিন্তায় আছে।
তার ঠিক সামনে, প্রায় সাত হাত দূরত্বে, মাথা নুয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাইমুরের প্রধান খিদমতগার, শোবহান মির্জা। তার মুখমণ্ডল বিনয়ের প্রতিচ্ছবি সুস্পষ্ট।
কিন্তু শরীরের ভঙ্গিতে মিশে আছে জড়তা। সে জড়তা বলে দিচ্ছে, সে আজ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। তার কাধের ওপর যে পাহাড়সমান বিশ্বস্ততার ভার, আর সেই ভার জমিদারের মুখপানে তাকে তাকাতে দিচ্ছে না।
জমিদার নলের মুখ থেকে চোখ না সরিয়েই প্রশ্ন শুরু করলেন। তাঁর কণ্ঠস্বর ধীর এবং শান্ত হলেও প্রতিটা শব্দে যেন এক গভীর প্রত্যাশার দেখা মিলল,
- মির্জা, এত দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কাছে এসো।
শোবহান মির্জা মাথা নিচু রেখেই সামান্য এগিয়ে গেল।
সিকান্দার বললেন,
- তুমি তো আমার পুত্রের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছায়া। তার গত কয়েক রাতের হিসেবটা আমায় দাও দেখি!
শোবহান বিস্মিত দৃষ্টি মেলে এক মুহুর্তের জন্য তাকাল জমিদারের পানে। পরক্ষণেই মাথা নিচু করে ফেলল। তার মধ্যকার দ্বন্দ্ব বুঝতে পারলেন জমিদার। বললেন,
- খোলাখুলি বলো, মির্জা। আমার বড়পুত্র তাইমুর কি আগের মতো দাসী কিংবা শয্যাসঙ্গিনীকে তার কক্ষে তলব করছে? সত্যটা বলবে।
শোবহান মির্জা আরও খানিকটা মাথা নত করল। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার গুরুত্ব সে ভালো করেই জানে। সে বিনম্র কণ্ঠে দৃঢ়ভাবে উত্তর দিল,
- না, হুজুর। গত কিছুদিন ধরে ছোট হুজুর কাউকে তার একান্ত কক্ষে নেননি। তিনি বেশিরভাগ রাত তার কক্ষের সাথে সংযুক্ত ছোট পাঠাগারটিতে কাটান। কখনো বা ছাদের বাগিচায় শীতল পাটি বিছিয়ে শুয়ে থাকেন। কিন্তু কোনো সঙ্গিনীর তার সান্নিধ্যে আসেন নি, হুজুর। আমি শপথ করে বলছি, আপনার পুত্র তার কক্ষে একাকী ছিলেন।
সিকান্দার গজনবীর ভ্রু যুগল মুহুর্তেই কুঞ্চিত হল। তিনি হুক্কাটি নামিয়ে রেখে আসনে সোজা হয়ে বসলেন। তাঁর কণ্ঠস্বরে খানিকটা অবিশ্বাস আর হতাশার মিশেল।
- একজন তরুণ, যার রক্তে পুরুষোচিত তেজ আর নবাবী মেজাজ, সে কিনা এই ভরা যৌ/বনে স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? এ তো অস্বাভাবিক, মির্জা! এর কারণ কী হতে পারে? তুমি তো তার একান্ত সঙ্গী, তুমি কি কিছু আঁচ করতে পারোনি? কোনো গোপন কথা? কোনো দৈহিক অসুস্থতা?
মির্জার নীরবতা আরোও দীর্ঘ হলো। তার চোখ মেঝের দিকে স্থির। সে জানে, এই নীরবতা জমিদারের কৌতূহলকে আরোও উসকে দেবে।
কিন্তু তাইমুরের বর্তমান দুর্বল দিকটি, তার বর্তমান আবেগের কারণ, জমিদারের সামনে প্রকাশ করলে তার বিশ্বস্ততার সঙ্গে চরম প্রতারণা করা হবে।
- চুপ কেন, মির্জা? তুমি কি ভুলে গেছো, তোমার জীবনের প্রতিটা নিঃশ্বাস এই পরিবারের প্রতি বিশ্বস্ততার জন্য উৎসর্গীকৃত? ভুলে যেও না, নীরবতা অনেক সময় মিথ্যার চেয়েও ভয়ংকর। আমি যা জানতে চাইছি, তার উত্তর দাও। তোমার এই নীরবতা কিসের প্রতীক? আনুগত্যের নাকি অন্য কিছু আড়াল করার?
খানিকটা হুংকার দিয়ে বলল জমিদার সিকান্দার গজনবী।
মির্জার কণ্ঠস্বর এবার ক্ষীণ শোনালো। বলল,
- হুজুর, আমার সত্যিই এমন কিছু জানা নেই। আমার চোখে পড়ে নি। তিনি কেবল নিজের সাথে সময় কাটাচ্ছেন।
সিকান্দার গজনবী এবার তার আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। তার সুঠাম দেহের ছায়া মির্জার ওপর পড়ল। জমিদার তার দিকে এগিয়ে এলেন।
- না, মির্জা। আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছি না। তাইমুর কখনো শান্ত থাকার মানুষ ছিল না। তার এই হঠাৎ নীরবতার পিছনে অবশ্যই কোনো গভীর কারণ আছে। যা তুমি আমাকে বলতে চাইছো না। এখন আমি সরাসরি জিজ্ঞাসা করছি। আমার পুত্রের এই অস্বাভাবিক অনীহার কারণ কি ওই বাঈজী হেমাঙ্গিনী? বলো! সত্যটা স্বীকার করো!
সিকান্দারের বজ্রকণ্ঠে মির্জার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। তার ভেতরের নীরব প্রতিরোধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলো।
- সে কি তার সাথে দেখা করতে যায়? তুমি কি তাকে বাঈজী মহলের আশেপাশে দেখেছো?
শোবহান এবারো নিরুত্তর।
- হেমাঙ্গিনীর সাথে তাইমুরের কি কোনো গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে? সে কি হেমাঙ্গিনীর সাথে কোনো একান্ত মুহূর্ত কাটিয়েছে? একবার শুধু মুখ ফুটে বলো, মির্জা। তার চোখে তুমি হেমাঙ্গিনীর জন্য কিছুই দেখোনি এতো অবিশ্বাস্য!
শোবহান মির্জার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ার উপক্রম হল। না সে মিথ্যা বলতে পারল, না সে তার মনিবের বিশ্বস্ততা ভাঙতে পারল। তার নীরবতাই যেন সকল উত্তর দিয়ে দিল।
সিকান্দার গজনবীর গালে এবার শীতল হাসি ফুটে উঠল। তিনি হাসলেন বটে, তবে সে হাসি হতাশা ও ক্ষোভে ভরা। তিনি পায়চারি করতে করতে মির্জার কাছ থেকে দূরে সরে গেলেন।
- তোমার এই নীরবতা আমায় যা বোঝানোর তা বুঝিয়ে দিয়েছে, মির্জা। এই মুহূর্তে তোমার মুখ থেকে আর কোনো শব্দ আমি শুনতে চাই না। তোমার বিশ্বস্ততার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই বিশ্বস্ততা আমার বংশের মর্যাদার চাইতে বড় নয়। তুমি এখন যেতে পারো, মির্জা।
শোবহান মির্জা নতজানু হয়ে, অতি নিমজ্জিত স্বরে প্রায় ফিসফিস করে বলল,
- আপনার আদেশ শিরোধার্য, হুজুর।
সে দ্রুত জমিদারের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে কক্ষ ত্যাগ করলেন। তার বুকে তখন এক গভীর ক্ষত।
জমিদারের কাছে সত্য লুকানোর যন্ত্রণা এবং তাইমুরের গোপন কথা প্রকাশ না করার এক নৈতিক বিজয়।
শোবহান মির্জা বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই জমিদার সিকান্দার গজনবী দাউদকে তলব করলেন। দাউদ ছুটে এলো। তার চোখে-মুখে প্রশ্ন।
- দাউদ, আমার বড়পুত্র তার বাবার সম্মান ভূলুণ্ঠিত করছে। এখুনি ব্যবস্থা করো। কোনো বিলম্ব নয়। এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং খ্যাতিমান ব্যবসায়ীদের তুমি আমার দরবারে আমন্ত্রণ জানাবে। কাল যেন অবশ্যই তারা সপরিবারে আমার সাথে দেখা করে। তাদের কন্যাদের সম্পর্কেও গোপনে খোঁজ নেবে। আমি তাইমুরের বিবাহ দেব।
দাউদ খানিকটা হতভম্ব হয়ে গেল। এই সিদ্ধান্ত যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। এত বড় পদক্ষেপ, আর এত তড়িঘড়ি!
- হুজুর, আপনার আদেশ শিরোধার্য। তবে, আমি একটি কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। আপনার ছোট পুত্র নাইমুর, আমাদের ছোট সাহেব, তিনি তো এখনো বিলেত। তার পড়াশোনা শেষ হতে আরোও এক বছর বাকি! তার অবর্তমানে এত বড় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলে রীতিনীতির দিক থেকে কি ভালো দেখাবে? লোকে কী বলবে, হুজুর? এটি কি তার প্রতি অবিচার হবে না?
সিকান্দার গজনবী হাত তুলে দাউদকে থামিয়ে দিলেন। তার চোখ তখন জ্বলছে হতাশায় এবং ক্রোধে। তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন।
গোধূলির মায়াজাল থেকে এ ধরনী তখন মুক্ত। রাতের আঁধার জমিদারবাড়ির বিশাল চত্বর গ্রাস করতে শুরু করেছে। সেই অন্ধকার গ্রাস করল সিকান্দারের মুখটিকেও। তিনি বললেন,
- ভালো দেখাক বা না দেখাক, দাউদ। আমার নিকট আর কোনো পথ খোলা নেই। পরিস্থিতি সামলাতে আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। নাইমুরের কথা ভেবে পরে অনুশোচনা করার সময় এখন নেই। আমি তা করতেও চাই না। তাইমুর এখন যে পথের পথিক হতে চলেছে, তাতে আমার বংশের সম্মান ধূলিসাৎ হতে বেশিদিন সময় নেই।
দাউদ তার মনিবের শঙ্কা বুঝতে পারলেন।
সিকান্দার আরোও বললেন,
- হেমাঙ্গিনী! ওই বাঈজী আমাদের বংশের গায়ে কলঙ্ক লেপন করতে চলেছে। যদি তাইমুর বিবাহ না করে, তবে সে লাগামহীন হয়ে যাবে। এই বিবাহই তাকে দায়িত্বশীল করে তুলবে। তাকে তার কর্তব্য, তার ভবিষ্যৎ পত্নী, এবং তার পরিবার সম্পর্কে সচেতন করবে। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। বাঈজীর প্রতি তার আসক্তি আর উদাসীনতা, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। কিছুই করার নেই, দাউদ। এই মুহূর্তে এটাই আমার একমাত্র সমাধান।
দাউদ মাথা নত করে বলল,
- হুজুর, আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু বড় সাহেব যদি এই বিবাহে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন? তিনি তো এমনিতেই একগুঁয়ে। যদি তিনি বিদ্রোহী হন?
সিকান্দারের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।
- বিদ্রোহ? আশা করি তাইমুর ভুলে যায় নি, সে জমিদারের বড়পুত্র। তার ইচ্ছার চেয়ে বংশের ঐতিহ্য বড়। আমার কথা তাকে মানতেই হবে। সে যদি বিদ্রোহ করে, তবে তাকে আমি আমার সমস্ত সম্পত্তি ও বংশীয় অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করব। আমি আমার বংশের সম্মান বিক্রি হতে দেব না, দাউদ। কাল সকালের মাঝেই তুমি ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানানোর ব্যবস্থা করো।
দাউদ আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস পেল না। সিকান্দারের কণ্ঠের দৃঢ়তা তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আর কোনো সন্দেহ রাখেনি। সে মাথা নত করে আদেশ পালনের জন্য দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করল।
জমিদার সিকান্দার গজনবী এবার কক্ষে একা হয়ে গেলেন। তিনি জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলেন। তাঁর দৃষ্টিতে এখনো গভীর উদ্বেগ। তিনি নিজের মনেই বিড়বিড় করে বললেন,
- তাইমুর, তুমি আমাকে এই কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য করলে। তোমার এই পরিণতির জন্য তুমি নিজেই দায়ী।
★★ ★★ ★★ ★★ ★★ ★★
জমিদার বাড়ির মাহফিলে আজ হেমাঙ্গিনীর দেখা মিলল না। আশেপাশে বিলকিস বানুও নেই।শুধুমাত্র সিমরান এসেছে তার দল নিয়ে৷
তাইমুরের বুকের ভেতরে এক চাপা অস্থিরতা শুরু হলো। হেমাঙ্গিনী কেন আসেনি? তার অনুপস্থিতি মেনে নিতে প্রচুর কষ্ট হল জমিদারপুত্রের৷
গান বাজনার সুর, ঘুঙুরের শব্দ, কোনো কিছুই যেন তার কানে পৌঁছল না। তাইমুরের মাহফিলে উপস্থিতি যেন নিছক এক প্রথা পালন। একসময় তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না। কোনোদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে, নিঃশব্দে মাহফিল ছেড়ে নিজের কক্ষের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।
তাইমুর সোজা প্রবেশ করলেন তার ব্যক্তিগত পাঠাগারে। কক্ষটি নীরবতার এক অভয়ারণ্য। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উঁচু কাঠের তাকে সাজানো শত শত চামড়ার মলাটের বই, পুরাতন পুঁথির গন্ধ আর তেলের প্রদীপের মৃদু আলো। এটিই যেন তাইমুরের একান্ত আশ্রয়স্থল।
তিনি তার প্রিয়, মসনদের কাছে রাখা ছোট টেবিলটিতে বসলেন। কলম এবং দোয়াত নিলেন। মাহফিলের সেই অস্থিরতা আর হেমাঙ্গিনীর অনুপস্থিতির বেদনা তার হৃদয়ে এক কাব্যিক ঢেউ তুলল। নিবিষ্ট মনে তিনি হেমাঙ্গিনীর জন্য চার লাইন কবিতা লিখলেন। তার লুকিয়ে রাখা আবেগ মুক্তি পেল কালির প্রতিটি অক্ষরে।
কবিতা লেখা শেষ হতেই তাইমুর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল, হেমাঙ্গিনীকে তার একবার দেখতে যেতে হবে। যেতেই হবে। দেরী না করে অস্থির পদক্ষেপে তিনি বাঈজী মহলের পানে অগ্রসর হলেন।
বাঈজী মহলের সামনে এসে তিনি নিজেকে কিছুটা সামলে নিলেন। কণ্ঠস্বরে দৃঢ়তা আনার চেষ্টা করলেন।
প্রহরীদের আদেশ দিলেন, হেমাঙ্গিনী কে তলব করা হোক।
কিছুক্ষণের মাঝেই অতি সাধারণ পোশাকে হেমাঙ্গিনী বেরিয়ে এল মহলের ভেতর থেকে।
সামনে দাঁড়ানো হেমাঙ্গিনীকে দেখে তাইমুর এক মুহূর্তের জন্য অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। তার বুক ধড়ফড় করে উঠল। তার নবাবী গাম্ভীর্যের বাঁধন যেন হেমাঙ্গিনীর পবিত্র সৌন্দর্য আর দুর্বলতার সামনে দুমড়েমুচড়ে ভেঙে পড়ল।
নিজেকে একটু সামলে নিয়ে তাইমুর উদ্বেগের স্বরে শুধালেন,
- আপনি আজ মাহফিলে আসেন নি যে? কোনো সমস্যা?
হেমাঙ্গিনীর দৃষ্টি মাটির দিকে আটকে রইল। সে এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতে চাইল। সে জানে আজ তাকে মাহফিলে অন্তর্ভুক্ত না করার কারণ হল – সিমরান এবং তার ব্যক্তিগত ঈর্ষা। কিন্তু তাইমুরের সামনে সে সত্যটা গোপন করল।
- আমায় ক্ষমা করবেন, হুজুর। আজ আমার শরীরটা বিশেষ ভালো নয়। সামান্য অসুস্থ বোধ করছি।
‘অসুস্থ!’ হেমাঙ্গিনীর মুখে এ কথাটি শুনে তাইমুরের অস্থিরতা যেন বৃদ্ধি পেল। তার সকল আভিজাত্য, সকল নবাবী চালচলন মুহূর্তের মাঝে উধাও হয়ে গেল। ফলাফল না ভেবেই তাইমুর হেমাঙ্গিনীর দিকে ঝুঁকলেন। বললেন,
- অসুস্থ! কেন অসুস্থ হলেন? দাঁড়ান!
তাইমুর কোনো আনুষ্ঠানিকতা কিংবা অনুমতির অপেক্ষা করলেন না আজ। খুব ধীরে তার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তার আঙুলগুলো হেমাঙ্গিনীর কপাল স্পর্শ করল।
প্রথম স্পর্শ!
উক্ত মুহূর্তটি তাদের দুজনের মাঝেই ছড়িয়ে দিল প্রবল উত্তেজনা। শরীরে যেন প্রবাহিত হল বিদ্যুৎ। তাইমুরের হাত সামান্য কেঁপে উঠল। কম্পিত হল হেমাঙ্গিনীর গোটা দেহও। এ যেন এক অদ্ভুত শিহরণ জাগানো অনুভূতি! তবে এ কোনো কা/মুক স্পর্শ নয়। এ হল নিখাদ ভালোবাসার প্রথম অঙ্গীকার। হেমাঙ্গিনী চোখ বুঁজে ফেলল।
তাইমুর দ্রুত হাত সরিয়ে নিলেন। তার মুখমণ্ডল লজ্জায় রক্তিম। তিনি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন।
- মাফ করবেন, বাঈজী সাহেবা। আমি দেখতে চাইছিলাম জ্বর আছে কি না। যাই হোক, আপনি যেহেতু অসুস্থ, আমি বেশি সময় নেব না। তবে…
- তবে কি, হুজুর?
- আমি আপনার জন্য একটি উপহার এনেছি।
হেমাঙ্গিনী বিস্ময়ে মাথা তুলল। বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
- উপহার? কিসের উপহার, হুজুর?
তাইমুর মৃদু হাসলেন। তিনি পকেট থেকে ভাঁজ করা কাগজটি বের করলেন। মাথার ওপরে তখন জ্বল জ্বল করছে লক্ষ তারকারাজি। সেই নভমন্ডলের নিচে দাঁড়িয়ে তাইমুর নিজের রচিত কবিতাটি আবৃত্তি করলেন। সে আবৃত্তিতে বেরিয়ে এলো তার হৃদয়ের একান্ত অনুভূতি।
”শুনুন হেমাঙ্গিনী, নিশীথের এই নীরবতা সাক্ষী
আপনার অভাবে আমার প্রাণ যে হয় বড়ই দুখী।
আপনি ছাড়া শুধু মাহফিল নয়, সবই যেন অর্থহীন
অপূর্ণ এই চাঁদনি রাত, অপূর্ণ সব, দ্যুতিহীন” ~
কবিতাটি শুনে হেমাঙ্গিনীর চোখজোড়া মুহুর্তেই জলে ভরে এল। এই উপহার হীরা-মুক্তা খচিত নয়, বরং তাইমুরের অভ্যন্তরীণ গভীরতম আবেগ ও প্রেমপূর্ণ স্বীকারোক্তি। উপহারের সজোরে বক্ষে আঘাত হানল তার।
- আমি এখন চলি, বাঈজী সাহেবা। আপনি বিশ্রাম নিন। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। এই কামনা রইল। চলি।
তাইমুর আর দাঁড়ালেন না। তিনি দ্রুত ফিরে গেলেন নিজ কক্ষে। তার হৃদয় তখন এক নতুন, অব্যক্ত প্রেমে পরিপূর্ণ।
অবশ্যই ৫০০ কমেন্ট সম্পন্ন করবেন। ৩০০০ লাইক সম্পন্ন করবেন। নয়ত আগামীকাল পরবর্তী পর্ব আসবে না। ★★
উপন্যাসঃ #নিষিদ্ধ_রংমহল
লেখনীতে, Atia Adiba – আতিয়া আদিবা
Share On:
TAGS: আতিয়া আদিবা, নিষিদ্ধ রংমহল
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৬
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১২
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৩
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৭
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১০
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৩
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৫
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৪
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ২