তাজমহল #দ্বিতীয়_খন্ড
পর্ব_২৫
প্রিমাফারনাজচৌধুরী
শাহিদা বেগম এইবার একটু তাড়াহুড়ো করছেন। আনিসের বিয়েটা তিনি এবার দিয়েই ছাড়বেন। কোমর বেঁধে নেমেছেন মেয়ে দেখার জন্য। রোজ ঘটক আসছে বাড়িতে। আনিস বিরক্ত হয়ে বলে দিয়েছে সে আর বাড়িতেই আসবে না এভাবে চলতে থাকলে। শাহিদা বেগম ভয় পাননি। এই ছেলের সাথে অনেকদিন ভালোই ভালোই কথা বলেছেন। এবার আর না। সে নিজেও বিয়ে করবে না। শাওনেরও কোনো গতি হতে দেবে না।
আফসার সাহেব বললেন,”তুমি ওকে জোরাজোরি করে বিয়ে করাবে নাকি? ও তো বলছে করবে। কিন্তু এত তাড়াহুড়োর কি আছে?”
“করবে না করবে না। বাজে কথা বলছে ওই ছেলে। ওকে আমি হাড়েহাড়ে চিনি। আমার পেটেই তো হয়েছে। আমার ছেলেকে আমি চিনবো না? আমি ওকে জোর করে বিয়েতে বসানোর আগ অব্দি ও স্বেচ্ছায় বিয়ে করবে না।”
দিনদুয়েক পরে একজন ঘটক এল। তাসনুভা উঠোনে এসে তার এমপ্লয়িদের সাথে কথা বলছিল। ঠিক তখুনি ঘটক তার পেছনে দাঁড়িয়ে কাশলেন। তাসনুভা কাশির শব্দ শুনে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। ফোনে কথা বলা শেষ করে সালাম দিয়ে বলল,
“কাকে খুঁজছেন? আব্বু বাসায় নেই।”
“আনিসুজ্জামানের বাড়ি কোনটা আম্মা?”
তাসনুভা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
“ওইদিকে।”
“আপনি কি এই বাড়ির বউ নাকি?”
“জি না, মেয়ে।”
“বিয়াশাদী হয়নি?”
“জি না।”
ঘটক বলল,”আমি ওই বাড়ির ছেলের জন্য একটা মেয়ের খবর নিয়ে এসেছি।”
তাসনুভা কপাল কুঁচকে বলল,
“আনিসুজ্জামানের জন্য?”
“জি আম্মা।”
তাসনুভা ঠোঁট বাঁকালো।
“উনি তো পটিয়ার মহানায়ক। রোজ একটা একটা ঘটক আসছে। এত এত সম্বন্ধ দেখে উনি ভাবের ঠেলায় মহাকাশে উঠে গেছেন। নামাতে পারেন কিনা দেখুন।”
ঘটক বলল,”ছেলে কেমন বলতে পারবেন আম্মা?”
“কেমন মানে?”
“মানে স্বভাব চরিত্র আর কি। দেখতে তো মাশাআল্লাহ। ছেলের কোনো খারাপ রেকর্ড নাই তো?”
“সেটা আমি কি করে জানবো?”
“পাশের বাড়ির ছেলেমেয়েরাই জানে স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে।”
“সরি আঙ্কেল, আমার অত সময় নেই পাশের বাড়ির ছেলে নিয়ে রিসার্চ করার।”
“কি করার?”
“আইমিন খোঁজখবর রাখার।”
“তো আম্মা আপনার বিয়েশাদি হয়নি কেন?”
“আমি করিনি তাই।”
“করেননি কেন আম্মা?”
তাসনুভা রেগে যাচ্ছে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
“ইচ্ছে করে করিনি। বিয়েতে আমার ফোবিয়া আছে।”
“ওটা আবার কি?”
“আতঙ্ক।”
“আতঙ্কিত হবেন কেন?”
“কারণ পুরুষ মানুষকে আমি বিশ্বাস করিনা।”
“তওবা নাউজুবিল্লাহ এরকম কথা বলতে নাই আম্মা। বিশ্বাস না থাকলে তার ঈমান নাই।”
“আচ্ছা আমার ঈমান আছে কি নেই সেটা নিয়ে আমি ভাববো। আপনি আনিসুজ্জামানকে মহাকাশ থেকে নামান। দেখুন কাউকে উনার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিতে পারেন কিনা। আমি আসি।”
বলেই সে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎই থেমে গিয়ে ঘটকের দিকে ফিরলো। বুকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বলল
“আপনার আতরের ঘ্রাণ কড়া। ভালো না।”
বলেই চলে যেতে গিয়ে আবারও থেমে বলল,”ওহ হ্যাঁ যার জন্য সম্বন্ধ নিয়ে যাচ্ছেন তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে একটা ভালো ব্র্যান্ডের আতর কিনবেন।”
“এটার ঘ্রাণ তো কড়া। যেদিকে যাই সেদিকে সবাই প্রশংসা করে আম্মা।”
“কড়া ঘ্রাণেই তো সমস্যা। এইসব সস্তা আতর ইউজ করে কোথাও গেলে মানুষ আপনাকে সস্তা ভাববে। টাকা কম দেবে। বোঝেননি?”
“বুঝলাম আম্মা। এমন সৎ পরামর্শ দেওয়ার জন্য আপনাকে দোয়া করে দিলাম। খুব শীঘ্রই আপনার বিয়েশাদী হবে। আরেকটা কথা বলে যান আম্মা।”
“কী কথা?”
“ছেলেটার খাসিয়ত শুনছি ভালো। সেটা নিয়ে সন্দেহ নাই। শুনছি ব্যাংকের চাকরিতে পঁয়ষট্টি হাজার টাকা বেতন পায়। এটা সত্যি না মিথ্যা?”
“সেটা আমি কি করে জানবো?”
“নইলে কাবিন কম দিতে চায় কেন? মেয়ের বাবারা তো এজন্যই মেয়ে দিতে গিয়ে আবার পিছিয়ে যাচ্ছে। ছেলের মা বাপ বলছে দশ বারো লাখ দেবে। কাগজেই তো লেখা থাকে সেটা। কিন্তু ছেলে বলছে পাঁচ লাখ টাকা কাবিন দেবে। তার কথা হলো সে যা বউকে দিতে পারবে না তা কাগজে লিখে লাভ কি? কিন্তু আপনি বলেন আম্মা এত কম কাবিনে কে মেয়ে দেবে? ছেলের মা বললো বিয়ে না করার জন্য ছেলে এমন ফঁন্দি আঁটছে। এখন আমি কি করি?”
তাসনুভা কপাল কুঁচকে শুনে যাচ্ছে। কি আশ্চর্যের কথা! আনিস ভাই এত কিপ্টা? উনার বউয়ের কপালে তো মহাদুঃখ আছে। তাসনুভা শ্রাগ করে বলল,
“হয়তো অন্য কারণ আছে। আপনি ভালো করে খোঁজ নিন। আসি। আসসালামু আলাইকুম।”
ঘটক গলা টেনে টেনে সালামের জবাব দিল। বলল,
“আম্মা আপনার জন্য কোনো সম্বন্ধ আনবো নাকি?”
তাসনুভা যেতে যেতে বলল,
“জি না। আমার বিয়ের ঘটক আমি নিজেই হবো। এমন বাজে আতরমাখা ঘটকের দরকার নেই।”
~~
আনিসের ব্যাপারে বলতে বলতে শাহিদা বেগম কেঁদেই ফেললেন। শাইনা ফোনের ওপাশে এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল মায়ের সব অভিযোগ। এবার সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
“আচ্ছা কেঁদো না। ভাইয়া রাজি না হলে তুমি জোরাজোরি করে তো পারবে না আম্মা। সংসার তো ভাইয়া করবে তাই না? আমার মনে হচ্ছে ভাইয়ার মেয়ের পছন্দ হচ্ছে না। মানে যে ধরণের মেয়ে চাইছে ওই ধরণের মেয়ে পাচ্ছে না।”
“আরেহ না কি বলিস! এতগুলো মেয়ে দেখলামা। একবারও বলেনি সুন্দর না। প্রতিবারই বলে মেয়েটা সুন্দর আছে আম্মা। ভালো লেগেছে আম্মা। কিন্তু এত কাবিনে হবে না।”
“এত কম কাবিন কিভাবে মানবে মেয়েরা বাবা?”
“সেটাই তো বুঝিয়ে উঠতে পারছিনা। বলছে আমি কাবিনের টাকা ধরবো যতটুকু আমার দেয়ার সামর্থ্য আছে। লম্বা পা টানতে পারবো না।”
শাইনা ওপাশে আবারও নীরব রইলো। তার পাশে তাজদার বুকের উপর মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে।আছে। শাইনা কথা বলতে বলতে বাবা মেয়ের দিকে তাকালো। বুক থেকে গড়িয়ে পড়ে যাবে এমনটা ভয় হচ্ছে তার। তাই কিছুক্ষণ পরপর মেয়ের পিঠে হাত রাখছে। সে বাবার খোলা বুকের উপর গাল লাগিয়ে নিশ্চিন্ত ঘুমোচ্ছে। কি বদভ্যাস হচ্ছে আল্লাহ মালুম! বাবা যখন থাকবে না তখন তার উপর ঝড় যাবে।
“আমার নাতিন কোথায়?”
“বাপ মেয়ে ঘুম। দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু শুয়েছে। রাতে নাকি কোথায় দাওয়াত পেয়েছে।”
“ময়নাকে এখন ঘুম দিচ্ছিস কেন? রাতে জ্বালাবে না?”
“জ্বালায়। বাপ মেয়ে উঠে খেলনাপাতি দিয়ে খেলা করে। দিনে আরও বেশি জ্বালায়। ওখানে সবার কোলে ঘুরতে ঘুরতে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখানে কোল না পেয়ে কাঁদে।”
“আর ক’দিনই তো। বাড়ি চলে এলে ঠিক হয়ে যাবে। তো দুপুরে কি রেঁধেছিস?”
“কিছু রাঁধিনি। ফ্রিজে ছিল। গরম করে খেয়ে নিয়েছি।”
“তওবা তওবা তুই জামাইকে বাসি তরকারি খাওয়াচ্ছিস?”
“বাসি আবার কি? মাংস আর মাছ রেঁধে রেখেছিলাম। ওখান থেকে কিছু ভুনা করলাম। আর ডাল দিয়ে খেয়ে ফেলেছি। উনি তো অল্প করে ভাত খায়। আমাকে বললো আর সবজি না রাঁধতে। দুপুরে হয়ে যাবে। রাতে রাঁধবো কিছু একটা। দুলাভাইরা আসেনি?”
“এসেছিল। ঘটকের সাথে চা নাশতা খেয়ে আবার বেরিয়ে গেছে। তোর ভাই আমার জামাইগুলোকে পর্যন্ত শান্তি দিচ্ছে না। ওরা এত করে বোঝাচ্ছে ও এককথায় স্থির। বিয়ে ও করবে না এখন। মেয়ের বাপের কাছ থেকে নাকি একটা কানাকড়িও নেবে না। বেশি কাবিনও দেবে না। কোনো জোরাগাঁথা, আকদ আগেভাগে হবে না। সোজা বিয়ে হবে। অল্প কিছু মানুষ গিয়ে বউ তুলে আনবে। এভাবে বিয়ে হয় এখন? তুই বল। এমন হাজীনওয়াজি কখন হলো এই ছেলে আমি তো বুঝতে পারছিনা।”
শাইনা এবার হেসে ফেললো।
“আম্মা বাদ দাও। তুমি জোর করে কোনো লাভ হবে না। ভাইয়া তার মর্জিমতো বিয়ে করবে। বাদ দাও। একদম চুপ হয়ে যাও। দেখবে তখন নিজ থেকে বলবে। আর ভাইয়ার পছন্দের কেউ থাকলে বলার সুযোগ করে দাও। সবাই মিলে এভাবে চেপে ধরলে তো বলার সুযোগ পাবে না।”
“না না না, ওর কোনো পছন্দ নেই। ওই ছেলে করবে পছন্দ। কতবার বললাম মেয়েদের সাথে একটু ফোনে কথাবার্তা বল। কফিশপে গিয়ে দেখা করে চা কফি খা। না, আমার পেটে এক ছেলে ধরছে। মেয়েদের সাথে কথা বললে ওর কানকাটা যাবে। শাওনের মতো হলেও এতদিনে দুই তিন বাচ্চার বাপ হয়ে যেত। কিছুদিন পর চুলে পাক ধরবে। দাড়ি গোঁফ পেকে বুড়ো হবে। তোর ভাই তখন করবে বিয়ে।”
একনাগাড়ে ছেলেকে বকাবকি করে থামলেন তিনি। শাইনা শান্তভাবে বলল,
“তুমি এরকম করলে তো জীবনেও রাজি হবে না আম্মা। তুমি একটু জিরোও। বড়ো ভাইয়া কি বলে?”
“ও কাল রাতে অফিস থেকে এসে অনেক বুঝিয়েছে। ভাইয়ের সামনে সাধু। মাথা দুলিয়েছে তখন। চুপচাপ শুনেছে। কিন্তু ঘরে গিয়ে আমাকে বললো আম্মা তুমি বড়ো ভাইকেও জ্বালিয়ে মারছো? কত বড়ো বেয়াদব ছেলে দেখেছিস? আমি নাকি আমার নিজের ছেলেকে জ্বালিয়ে মারছি!”
শাইনা এবার শব্দ করে হেসে ফেললো। হাসি থামাতে থামাতে বলল,
“তুমি বলো তুমি ছোটো ভাইয়ার জন্য বউ নিয়ে আসবে। তখন লজ্জায় মত দিয়ে দেবে।”
“ওই বিয়েপাগল ছেলের বিয়ের নাম ধরবো আমি? টাকাপয়সা যা কামায় আমি তো চোখে দেখিনা। এককেজি আলু আর এককেজি মাছ এনে দিয়ে বলে আম্মা আমার বউ বাচ্চা নেই। মনে রেখো এগুলো এডভান্স দিচ্ছি। পরে আমার বউকে বলতে পারবে না তোমার জামাই বিয়ের আগে খরচাপাতি দিত না ঘরে। ওই বেয়াদবকে বিয়ে করাবো বলতে হবে না। একটু ইঙ্গিত দিলে পরদিন বউ নিয়ে হাজির হবে। তারপর আমার কাঁধে বউয়ের ভারবহন সব তুলে নিয়ে সে কেটে পড়বে। ও আল্লাহ! তুমি আমার পেটে এত রকমের ছেলে কেন দিলে খোদা?”
শাইনা বলল,”আর কোনো উপায় তো দেখছি না।”
“ও শানু!”
“হ্যাঁ বলো।”
“ময়নার আব্বাকে একবার বলে দেখবি?”
“কী?”
“আনিসকে একটু বোঝাতে।”
“উনি ভাইয়াকে কি বোঝাবেন? একবার নাকি বলেছিলেন বিয়ের জন্য। ভাইয়া নাকি বলেছে মেয়ে ভালো হবে কি, হবে না এটা নিয়ে টেনশন হয়। তোমার আর ভাবির সাথে না মিললে তো সংসার আলাদা করতে হবে।”
শাহিদা বেগম এতক্ষণ পর একটু চুপ করলেন। শান্ত কণ্ঠে বললেন,”কি বলিস? এরকম বলেছে?”
“হুম।”
“ওমা! বড়ো বউয়ের মতো না হলে আলাদা থাকবে সমস্যা কি? তাই বলে বিয়ে করবে না? আর বড়ো বউকে আমি আমার ছেলেপেলে আর মেয়েদের ঝামেলার মধ্যে রাখছিলাম বিয়ের পর? ওরে তো শহরে বাসায় রাখছিলাম। ও নিজেই চলে এল শ্বশুরবাড়িতে সবার সাথে থাকবে বলে। ওর বউ না চাইলে থাকবে না। বাসায় না গেলে দরকার পড়লে নিজের ঘরে রেঁধে নিজে খাবে। এটা কোনো কথা হলো? এই ছেলে এইসব ভাবে বসে বসে? হায় হায় এভাবে তো ভেবে দেখিনি। ছেলেটা আমাকে কেন সব খুলে বলেনা আল্লাহ মালুম। দরকার পড়লে ও বিয়ে করে বউ বাসায় তুলুক। ওখানে থাকুক। এখানে আসতেই হবে না। কিন্তু এটা ভেবে বিয়ে না করলে হবে? আমরা কদিন বাঁচবো? বউ বাচ্চা তো লাগবে। শক্তিসামর্থ্য থাকতে ওদের ছেলেপেলে মানুষ করে দিতে চাইছি আর ছেলেগুলো আমার কথা বোঝার চেষ্টা করে না। আচ্ছা রাখ। দেখি ওর সাথে কথা বলে।”
“আচ্ছা।”
“আচ্ছা রাখ। আমার নাতনিকে দেখে রাখিস। জামাইয়ের দেখভাল করিস একটু। আবার চলে যাবে। বউ বাচ্চা ছেড়ে একা একা থাকে ভিনদেশে। আচ্ছা রাখি তাহলে।”
রাখি রাখি বলতে গিয়েও শাহিদা বেগম ফোন রাখলেন না। বললেন,
“জামাইকে বলিস আনিসের সাথে আরেকটু কথাবার্তা বলতে। পেটের কথা বন্ধুদের বলতে পারে।”
“আচ্ছা ঘুম ভাঙুক। উনাকে বলবো। তুমি আর ভাইয়ার সাথে এ নিয়ে কথা বলো না।”
“না না আমি কাল রাত থেকে ওর সাথে কথা বলছিনা।”
“এটা কেমন কথা আম্মা?”
“না বলবো না কথা। ওই ছেলে আমার দুখসুখ বোঝেনা। বলবো না। তোর বাপকেও মানা করে দিয়েছি কথা না বলতে। কিন্তু ওই ব্যাটা তো আরেক ছেলেমেয়ে দরদী।”
ফোন রাখার পর শাইনা বালিশে মাথা রাখল। কিছুক্ষণ পর বালিশে কনুই ঠেকিয়ে গালে হাত রেখে স্বামী সন্তানের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। ধীরে ধীরে মেয়ের পিঠে আর গালে আলতো করে চুমু দিল বেশ চেপে। তারপর সরে যাওয়ার সময় দৃষ্টি আটকে গেল তাজদার সিদ্দিকীর ঘুমন্ত মুখে।
সংকোচের দেয়ালটা ভাঙতে অনেকটা সময় নিল। তাজদার সিদ্দিকীর মুখের কাছে এসে স্থির চোখে তাকিয়ে রইল। ঘুমের ভেতরে কতটা শান্ত! আরেকটু ঝুঁকলো। কপাল ছুঁয়ে দেওয়ার ঠিক মুহূর্তেই তাজদার সিদ্দিকী হঠাৎ চোখ মেলে জিজ্ঞেস করল,
“ক’টা বাজে?”
একেবারে মুখোমুখি! শাইনা চমকে সরে গেল। তড়িঘড়ি করে হাতড়াতে লাগল চারপাশে। তাজদার শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফোনটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না সে।
“একি কোথায় রাখলাম!”
তাজদার কিছুক্ষণ পর ধীরস্বরে বলল, “এখানে।”
শাইনা তার দিকে তাকাল। তাজদার তার পাশ থেকে ফোনটা তুলে তার দিকে বাড়িয়ে দিল। মুহূর্তেই শাইনার গালে লজ্জার লালচে ছায়া নেমে এল।
“সরি।”
বলেই সে দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে গেল। কিচেনের দিকে চলে গেল। তাজদার সিদ্দিকী ঠোঁটের কাছে হাত রাখলো।
~
বাড়ির পেছনের দরজা খোলামাত্রই দমকা হাওয়া এসে তাসনুভার চুল উড়িয়ে দিল। শাহিদা বেগমের হাসি-হাসি চেহারা আর হাতে মিষ্টি দেখে সে জানতে চাইল,
“কার বাচ্চা হয়েছে?”
“আল্লাহ চাইলে আগামী বছর বাচ্চা হয়ে যাবে। তোমার আনিস ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির মিষ্টি।”
“বিয়ে ফাইনাল? ভাইয়া যাওয়ার আগে হবে?”
“ফাইনাল টাইনাল জানিনা। মেয়ের বাপ ভাই ঘরবাড়ি দেখতে এসেছে। সাথে মিষ্টি নিয়ে এসেছে। এই নাও এগুলো রাখো। কাউকে দিচ্ছি না। শুধু বেয়াই বাড়িতে দিচ্ছি। বিয়ে ঠিক হলে পুরো বাড়িতে মিষ্টি বিলাবো।”
“বিয়ে কবে নাগাদ হতে পারে? ভাইয়া তো আর তিন চারদিনের মতো আছে দেশে!”
“জামাই যদি আর এক সপ্তাহ সময় নেয় তাহলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে বউ নিয়ে আসতে পারি কিনা দেখি। অত আয়োজন তো করবো না। কিন্তু তোমাদেরকে দাওয়াত দেব মা। তোমাদের ছাড়া কিভাবে খাব?”
তাসনুভা মিষ্টির প্লেট নিয়ে বলল,”খুব বেশি দেরী হয়ে যাচ্ছে না? কালই বউ নিয়ে আসা যায়। ভাইয়াও দেখে যেতে পারলো।”
শাহিদা বেগম সরলমনে বলে গেলেন,
“ওই ছেলের কথা আর বলো না মা। তবে এভাবে হুট করে কথাবার্তা আগাবে আমি ভাবতেই পারিনি। তোমার আনিস ভাই শেষমেশ মত দিয়েছে। আমি এত দুশ্চিন্তা করছিলাম দেখে বলেছে যেটা আমি পছন্দ করে নিয়ে আসবো ওটার সাথেই সংসার করবে। আল্লাহ মুখ তুলে চেয়েছে। প্লেটটা দিয়ে ফেলো মা।”
তাসনুভা মিষ্টি রেখে প্লেটটা ধুয়ে ফ্রিজের কাছে গেল। ফ্রিজ খুলে প্লেট ভর্তি কালো আঙুল নিয়ে শাহিদা বেগমের দিকে বাড়িয়ে দিল।
শাহিদা বেগম বললেন,”ধুর এই মেয়ে করে কি! ঘরে ফলমূলে ভরে গেছে। খাওয়ার মানুষ নাই। রাখো এগুলা। তুমি খাও। অনেক শুকায় গেছো। অবিবাহিত মেয়েমানুষের শরীর তেলতেলে থাকলে ভালো।”
“আমার তেলতেলে শরীর পছন্দ নয়। নিজেকে ফিট রাখতে ডায়েট কন্ট্রোল করতে হয়।”
“শাবরিনও মাঝেমধ্যে করে। পরে জামাই দই মিষ্টি আনলে গপগপ করে খেয়ে পরে নাকিকান্না কেঁদে বলে আম্মা ওজন বেড়ে যাচ্ছে। মেয়েমানুষের শরীর শুকনা হলে ভালো লাগে না বুঝলে? একটু গায়ে রসকষ থাকা লাগে। তবেই তো দেখতে ভালো লাগে। আজকালকার মেয়েরা ফোন দেখে দেখে কি ডায়েট ফায়েট শিখছে কে জানে! আচ্ছা আমি আসি।”
তাসনুভা কাঁটা চামচে করে মিষ্টি খেতে খেতে নিজের ঘরে চলে গেল। তিতলি এসে মিষ্টি দেখে একটা আঙুল দিয়ে মুখ টুপ করে মুখে পুরে, আরেকটা হাতে নিয়ে তৌসিফের ঘরের দিকে চলে গেল। তাসনুভা নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে মিষ্টি খেয়েই চললো। ঝিমলি ডাকল,
"নুভারাণী!"
নুভা তার দিকে ফিরলো।
"ফ্রিজে মিষ্টি না শেষ হলো? এটা কোথাথেকে? আর অসময়ে মিষ্টি খাচ্ছ কেন?"
"পাশের বাসার মিষ্টি। বউ ঠিক হয়েছে।"
"আনিস ভাইয়ের নাকি?"
"পাশের বাসায় অবিবাহিত ছেলে ক'জন আছে?"
"হা হা ফাইনালি!"
"এটা রাখো। অলরেডি দুটো খেয়ে ফেলেছি। খেয়ালই করিনি।"
ঝিমলি এসে প্লেটটা হাতে নিল। বলল,
"মিষ্টি তো ভালোটা এনেছে। কোনটা ঠিক হলো কে জানে। আনিস ভাইয়ের ফোনে ওইদিন যেটা দেখলাম সেটা হলে বেশ ভালো হবে। ওই মেয়েটাকে শান্তশিষ্ট লেগেছে। আনিস ভাই যা মানুষ। বউ শান্তশিষ্ট না হলে কিন্তু চাচীমার কপালে দুঃখ আছে। তখন পরিবারকে দোষারোপ করবেন উনি।"
"বিয়েটা হলেই হলো। আনিস ভাইয়ের যা রঙঢঙ!
উনার ঢঙ দেখার চেয়ে হিরো আলমের গান শোনা ভালো।"
"আপনার ভাইয়াও দেখাতো। বিয়ের পর সাধু হয়েছে। আনিস ভাই অবিবাহিত ছেলেমানুষ। ঢঙ দেখাবেন না কেন?"
"আমি ঘরে যাচ্ছি। কিছু ফোনকলস আছে। আমি মেজো ভাইয়াকে ইনফর্ম করেছি ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠবো পরশু। কিছু ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে ডিল আছে।"
"মেজো ভাই তো চলে আসবে বউ বাচ্চা নিয়ে। তুমি একা থাকবে?"
"সো হোয়াট! ওখানে আমার ফ্রেন্ডস আছে অনেক। ওদের একজনকে নিয়ে আসবো। জুথি রাজি হয়ে যাবে।"
"ভাইয়া চলে যাবে তুমি থাকবে না?"
"কিছু করার নেই। নতুন কালেকশনগুলো এখনো পেজে তুলতে পারিনি। অনেক কাজ পড়ে আছে।"
তাসনুভা চলে যাচ্ছিল ঝিমলি বলল“You look distracted.
"এমনটা মনে হওয়ার কারণ?"
"তাসনুভা সিদ্দিকী ভুলেও একচামচ চিনি বেশি খায় না সেখানে দুটো মিষ্টি? বিশ্বাসযোগ্য?"
"I’m just bored.”
"কারণ?"
"আমি লস ফেস করছি। যে ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করছি সে অ্যাগ্রিমেন্ট পেপার অনুযায়ী কাজ করছে না। এমন চলতে থাকলে আমাকে অন্য কোনো প্ল্যান ভাবতে হবে। এদের বেশি প্রায়োরিটি দেয়া যাবে না। নিজেদের কি না কি ভেবে বসেছে। অথচ সবকটার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করলে দেখা যাচ্ছে দে হ্যাভ নো কোয়ালিফিকেশন। জাস্ট ট্রেন্ডি, ভাইরাল প্রেজেন্স আছে। বিজনেস কেন এই সো কল্ড ভিউজ ব্যবসায়ীদের উপর ডিপেন্ডেড হবে?"
"আচ্ছা ব্যবসায়ে লাভ লোকসান থাকবে। এত টেনশন নেয়ার দরকার নেই।"
"আমি মেজো ভাইয়াকে ফোন করে কথাটা জানিয়ে রাখি। পরে নয়তো আমাকে বকবে।"
ঝিমলি হঠাৎই বলল,"তোমার ভাইয়া আমাকে বলতে বলেছে।"
তাসনুভা থেমে তার দিকে ফিরলো।
"বিয়ের কথা?"
"হুম।"
"সরি আমার ওসব নিয়ে ভাবার সময় নেই এখন। বিজনেসটা একটা পজিশনে নিয়ে যাওয়ার পর ভাববো।"
"সম্ভবত মেজো ভাইয়াও ফোন করলে তোমাকে একই কথা বলবে। আব্বুর সাথে তাদের দুই ভাইয়ের কথা হয়েছে।"
"আমাকে এত প্রেশার দিয়ে কোনো লাভ আছে?"
"প্রেশার নিতে হবে না। আপনি ধীরেসুস্থে সিদ্ধান্ত নিন। বিয়ে তো করতেই হবে। তাই না? তাছাড়া লাইফপার্টনার জরুরি। ভালো লাইফপার্টনার আরও বেশি জরুরি। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাওয়া তারচেয়েও বেশি জরুরি। আমরা যতই যা-ই করি না কেন, একটা সংসার কিন্তু আমাদের লাগেই।"
তাসনুভা চুপচাপ শুনলো। পাশ দিয়ে তখুনি তাশফিন যাচ্ছিল। ঝিমলি ডেকে নিল,
"নবাব বাহাদুর এদিকে আসেন। মিষ্টি খান।"
তাশফিন লাজুক হেসে এগিয়ে গেল।
"কীসের মিষ্টি?"
"আনিস ভাইয়ের বিয়ের।"
ঝিমলি তাকে মিষ্টি খাইয়ে দিল। তাশফিন মিষ্টি মুখে নিয়ে আর কথা বলতে পারলো না। ঝিমলি পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল,
"যান! পানি খেয়ে নেবেন।"
সাথে সাথে একটা নোটবুক ছুটে এল তাসনুভার পাশ দিয়ে। সে আর ঝিমলি দুজনেই হকচকিয়ে সামনে তাকালো। তিতলি হাসতে হাসতে তাসনুভার পেছনে এসে লুকিয়ে পড়েছে। তাসনুভা বলল,
"হোয়াট ইজ দিজ ভাইয়া?"
তৌসিফ রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল,
"আমার জন্য মিষ্টি নিয়ে গেছে তোর বাঁদর বোন। আমি হাত বাড়িয়ে নিতে গেলাম। আর সে নিজের লালা লাগিয়ে দিয়ে আবার আমাকে দিকে বাড়িয়ে দিল খাওয়ার জন্য। ওকে তো জুতার মালা পরানো উচিত।"
তিতলি তাসনুভার আড়ালে দাঁড়িয়ে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে মিষ্টির গায়ে এখনো লালা লাগিয়ে যাচ্ছে।
"ছিঃ তিতলি!"
তাসনুভা তার দিকে ফিরতেই তিতলি মিষ্টিটা দেখিয়ে দেখিয়ে তৌসিফকে বলল,
"আহা টমেটো বড়ো মজাদার। আহা টমেটো বড়ো মজাদার।"
তাসনুভা খপ করে তার হাত ধরে ফেললো। বলল,"ভাইয়া ধরো ওকে। জোরে একটা থাপ্পর দাও।"
তৌসিফ দৌড়ে এসে তিতলিকে শক্ত করে ধরলো। তিতলি সাথে সাথে মিষ্টি মুখে পুরে দিল। গলায় আটকে গেছে এমন ভান ধরলো। গলা ফুলিয়ে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালো। তাসনুভা তৌসিফ ভয়ে তাকে ছেড়ে দিল। সেই ফাঁকে তিতলি সোজা বাড়ির বাইরে।
~
“ঢাকাশহরে একা কিভাবে থাকবে তুমি?”
তাসনুভা লাগেজে কাপড় সাজাতে সাজাতে বলল,
“পারব। আমি ওখানে বেড়াতে যাচ্ছি না আম্মু। কাজের জন্য যাচ্ছি। সবকিছুতে এত কৈফিয়ত দিতে ভালো লাগেনা আমার।”
রওশনআরা কিছুক্ষণ প্যানপ্যান করে চলে গেল। দাদিমা এসেও বললেন একই কথা। তাজউদ্দীন সিদ্দিকীও এসে বুঝিয়ে বললেন একা না যেতে।
শেষমেশ ঝিমলি এসে তাদের সবাইকে কোনোমতে সরাল ঘর থেকে। তারপর বলল,
“আজ রওনা দেবেন নাকি?”
“মেজো ভাইয়া বললো আজই যেতে। মেবি কিছু প্ল্যান করেছে। শাইনাকে জিজ্ঞেস করলাম। সে বললো ও কিছু জানেনা। আ’ম সিউর ভাইয়া ওকে মানা করেছে।”
ঝিমলি হাসলো।
“এত চালাক হলে তো সমস্যা।”
তাসনুভা সব গোছগাছ করতে লাগলো। ঝিমলি তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর আরাম করে বিছানায় বসতে বসতে বলল,
“আনিস ভাইয়ের বিয়ের আগে ফিরবেন না?”
“উনার বিয়ের কোরমা খেজুরের চাইতে আমার বিজনেসের ডিল অনেক বেশি ইমপোর্টেন্ট।”
“হুমমম!”
ঝিমলি চুপ রইলো। কিছুক্ষণ পর কোনো ভণিতা না করে সরাসরি প্রশ্ন করলো,
“চোর বেশিদিন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারে না।”
“কে চোর?”
“আপনি?”
“মানে?”
“You’re feeling something for Anis bhai.”
তাসনুভা চমকে উঠলো! কিছুক্ষণ স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ঝিমলির দিকে। হাত থেমে গেছে। তারপর সে কানের পেছনে চুল গুঁজতে গুঁজতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
বারান্দায় চলে গেল একমগ কফি নিয়ে। ঘাড়ের রগ টানছে। মাথার রগ দপদপ করছে। পায়চারি করতে করতে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে সে দেখলো তাজদার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ করেছে,
“ট্যুরে আর কে কে যাচ্ছে? দ্রুত ফাইনাল করা হোক।”
ঝিমলিকেও এড করা আছে। সে আগের প্রায় দেড়শো দুশোটা মেসেজ সিন করার পর রায়হানকে মেনশন দিয়ে বলল,
“আমাকে বলেননি মিস্টার সিদ্দিকী।”
“সরি, আমি ভুলে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে জানাতাম অবশ্যই।”
“রাগ করেছি।”
“সরি। আর হবে না।”
“থাক বাদ দিন। আপনি এক বাচ্চার বাবা হয়ে ভুলোমনা হয়ে যাচ্ছেন।”
সবাই তাদের মেসেজ দেখছে চুপচাপ। ঝিমলি বলল,
“সবাই তো দেখছি যাওয়ার জন্য একপায়ে খাঁড়া। আনিস ভাই আর নুভারাণী বাদ যাবে কেন? আপনারা কোথায়?”
দুজনকেই একসাথে মেনশন করেছে সে।
আনিস রিপ্লাই করলো,”জি ভাবি।”
“আপনি যাবেন না? বিয়ের খুশিতে সবাইকে ট্রিট দিন।”
“জি অবশ্যই।”
“এভাবে বললে শুনবো না। যাচ্ছেন কিনা বলেন।”
“সবাই যখন যাচ্ছে তখন যাব না কেন?”
“নুভারাণী?”
“ইয়েস!”
“আপনি চুপ কেন?”
তাসনুভা রিপ্লাই করলো একটু পর,
“আমি যেতে পারব না। সরি।”
বলেই সে বাকি কফিটা আনিসের মেজো চাচাদের উঠোনের কোণায় ছুঁড়ে মারলো। আনিস সেখানে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কুকুরগুলোকে খাবার দিয়েছে শাহিদা বেগম না দেখেমতো। কফিটা এসে তার সাদা শার্টের পিঠে পরলো।
চলমান…
Share On:
TAGS: তাজমহল সিজন ২, প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১১
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১৭+১৮
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ৭+৮
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১৫+১৬
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ৯
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ৫
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১৪
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ২
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ৩
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ২৩