জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_১১
আদ্রিসের চোখ তখনো আদ্রিতার ফোস্কা পড়া স্থানে স্থির। আদ্রিসের ঘাড়টা কাত হয়ে আছে।
মাধবী বেগম এসে আদ্রিসকে জড়িয়ে ধরেছে। আদ্রিতা তখন পিছিয়ে যায়। আদ্রিসের তখন ধ্যান ফিরে। চোখ দু’টো রাগে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
আদ্রিস, মাধবী বেগমের থেকে সরে আদ্রিতার হাত ধরে। আদ্রিতা কেঁপে উঠে। আদ্রিতা মাথা তুলে তাকায়।
সময়ের সাথে লোকটা কতটা সুদর্শন হয়েছে। শরীরে পরিবর্তন এসেছে। বাচ্চা ভাবটা আর নেই। এ যেন সুঠাম দেহের এক সুদর্শন পুরুষ।
আদ্রিতাকে কাঁপিয়ে দিয়ে হটাৎ হুঙ্কার ছেড়ে উঠল আদ্রিস,
“মি. আসরাফ খান। কোথায় আপনি?”
মাধবী বেগম এগিয়ে আসেন,
“আদ্রিস কি করছিস এইসব। বাবাকে কেউ এভাবে ডাকে।’
আদ্রিস যেন কথাই শুনছে না কোন। আদ্রিতার হাত ধরে জোরে জোরে চিৎকার করে চলেছে। রেভান দাঁড়িয়ে দেখছে। রেভানের চোখ আদ্রিতার উপর পড়ে। সাদামাটা একটা জামা পরে আছে মেয়েটা। চুল গুলো ক্লিপে গোজা। কেন আদ্রিস এতটা পাগল তা আদ্রিতাকে দেখে বুঝে গিয়েছে রেভান। সাদামাটা মেয়েটার ভেতরে অদ্ভুত এক আকর্ষণ আছে।
আসরাফ খান শহ পরিবারের সবাই নিচে চলে এসেছে। আদ্রিসকে দেখে আসরাফ খান এগিয়ে আসতে নিলে আদ্রিস পিছিয়ে যায়।
“আমাকে স্পর্শ করার আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন৷”
“কি হয়েছে বাবা? “
আদ্রিস, আদ্রিতার হাত উঁচু করে ধরে। হাতের পিঠে কব্জি পর্যন্ত বাজে ভাবে পুড়েছে। ফোস্কা পড়ে গিয়েছে। কালো বর্ণ ধারণ করেছে জায়গাটা।
আসরাফ খান এ দৃশ্য দেখে মাধবী বেগমের দিকে তাকায়।
মাধবী বেগমের ইচ্ছে ত করছে এক্ষুনি মেয়েটাকে কশিয়ে দু’টো চড় মারতে। কিন্তু এত সিনক্রিয়েট এর মাঝে আর সিনক্রিয়েট তিনি করতে চাচ্ছেন না।
ইতিমধ্যে আদ্রিসের আসার খবরের থেকে আদ্রিসের আচরণ সবাইকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে।
প্রিয়ার চোখে পানি। সে চাইত কেউ আসুক। আদ্রিতার পক্ষ হয়ে পুরো পৃথিবীর সাথে লড়ুক। সে জানত তার ভাই ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
“মি. খান আমার আমানতের দায়িত্ব নিশ্চয়ই আপনার ছিল? আমি বলেছিলাম।আমি আমার সম্পদ রেখে গেলাম। আপনিও কথা দিয়েছিলেন আপনি আমার সম্পদের কোন ক্ষতি হতে দেবেন না। তাহলে এগুলো কি? তবেকি আপনি আদ্রিস খানকে ধোঁকা দিয়েছেন? আই হেট লায়ার’স মি.খান। আমি কারোর উপর দয়া দেখাই না।
কথা গুলো বলার সময় আদ্রিসের হাত আদ্রিতার হাতে শক্ত হয়ে আসছিল। আদ্রিতা ছলছল দৃষ্টিতে আদ্রিসের দিকে তাকায়।
আদ্রিসের শরীর ভয়ঙ্কর ভাবে কাঁপছে।
” আদ্রিস কথা শোনো। এত রাগ ভালো নয়।”
আদ্রিসের রাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। রেভেন বুঝতে পারছে না কি করবে। আদ্রিস যদি বাবার দিকে ধেয়ে যায় তখন। রেভেন গিয়ে আদ্রিসের পাশে দাঁড়ায়,
“বস। প্লিজ শান্ত হন। আমাদের এখানে অনেক কাজ। এভাবে ঝামেলা করে কিছুই হবেনা। এটা রাশিয়া নয় বাংলাদেশ।”
আদ্রিস, ফিরে তাকায়। কিছু একটা ভেবে শান্ত হয়ে যায়।
প্রিয়া দৌড়ে জড়িয়ে ধরে আদ্রিস কে।
“ভাইয়া। কেমন আছো? জানো তোমায় কত মিস করেছি।”
আদ্রিস এক হাতে প্রিয়ার পিঠে হাত রাখে।
মিশু আদ্রিসকে দেখে দৌড়ে গেছে ঐশীকে কল করতে। আদ্রিস তখনো আদ্রিতার হাত ধরে রেখেছে।
আদ্রিতা নীরবে কাঁদছে। ওর কান্নায় কোন শব্দ নেই। তবে চোখ বেয়ে অঝর ধারে অশ্রু বইতে আছে। কেন বাঁধ ভাঙা কোন নদীর প্রবাহ।
“স্টপ ক্রাইং ড্যামেড।”
আদ্রিসের ধমক শুনে কেঁপে উঠে আদ্রিতা।
কিন্তু কান্না থামার বদলে বেড়ে যায়।
আদ্রিস দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“কান্না থামা নয়ত মেরে এখানেই পুঁতে রাখব।”
আদ্রিতা ভয় পাচ্ছে কান্না থামছে না তার।
“আদ্রিস বাবা আমার কথাটা।”
“আমার রেস্ট প্রয়োজন। রেভেন কিপ মাই কার। তোর মেশন রেডি আছে।”
“ওকে বস।”
রেভেন বেরিয়ে যায়। আদ্রিস বাবার চোখে চোখ রাখে,
“ড্যাড আমি সব জানি। কিছু ভুলিনি। গত এ বছরের প্রতিটা সেকেন্ড এর হিসাব আছে আমার কাছে। সবাইকে রেডি থাকতে বলেন। রক্তের কান্না করাব।”
কথাটা বলে আদ্রিস, আদ্রিতাকে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যায়।
মাধবী বেগম পেছনে যেতে নিলে আসরাফ খান হাত ধরে বসে।
“কি করছো আসরাফ দেখছো না ছেলেটা আমার পাগল হয়ে গিয়েছে।”
“থামো। এখন ওর কাছে গেলে ওর আরও রেগে যাবে। আমাদের আলাদা কোন প্লান করতে হবে। তুমি রুমে যাও। ও এসেছে ওকে শান্ত হতে দেও।”
“আমি বলে রাখলাম তোমাকে ওই মেয়ে আমার ছেলের বউ হবেনা।”
আসরাফ খানের কপাল কুঁচকে ওঠে,
“এতদিন কোথাও না কোথাও আমার আদ্রিতার জন্য খারাপ লাগত কিন্তু আমার ছেলে ওই মেয়ের জন্য আমার নাম ধরে ডেকেছে আমাকে।
আমিও দেখি আদ্রিস কি করে ওকে এ বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।”
আসরাফ খান রুমে চলে যায়। মাধবী বেগমও।
মিশুর রুমে,
“ঠিক বলছোত মিশু আপু?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। তোকে ঠিক বলব নাত কাকে বলব। আদ্রিস ভাইয়া মাত্রই এসেছে।”
“কেমন হয়েছে দেখতে?”
“মারাত্মক সুদর্শন ভাই। ফর্সা হয়েছে যেন আগে থেকে বেশি। আর জানিস। কি স্টাইল। একটা কালো হাই নেক আর হাই কোর্ট ছিল পরনে। চোখ দু’টো কি ভয়ানক সুন্দর দেখতে। বড় বানিয়েছে ভাই।”
“কি বলছো আমিত ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে যাচ্ছি।”
“আচ্ছা শোন তুই আন্টিকে নিয়ে চলে আয়।”
“দাঁড়াও কাল আসব। আজ আসলে ভালো দেখাবে না।”
“ওকে দ্রুত আয়। “
“ওকে।”
অদ্রিসের রুমটা সব সময় পরিষ্কার থাকে। মাধবী বেগম সব সময় আদ্রিসের রুম পরিষ্কার করিয়ে রাখে।
আদ্রিস দরজা খুলে আদ্রিতাকে বিছনায় ছুঁড়ে ফেলে।
আদ্রিতা তখনো শব্দ করেনা। সে ফিরে তাকায়।
আদ্রিস এদিক ওদিক কিছু খুঁজছে। আদ্রিতা ভয় পায়। ভাবে হয়ত এবার মার খাবে।
হটাৎ আদ্রিস, আদ্রিতার সামনে এসে বসে।
আদ্রিতা চোখ বন্ধ করে নেয়।
আদ্রিস পোড়া জায়গায় ঔষধ লাগায়। আদ্রিতা চোখ খুলে তাকায়।
আদ্রিস ফু দিচ্ছে আর ঔষধ লাগাচ্ছে। যেন যন্ত্রণা তার হচ্ছে।
আদ্রিতা তাকিয়ে আছে আদ্রিসের দিকে।
কিছুক্ষণ পর আদ্রিস ফাস্টএইড বক্সটা ঠিক করে রাখে।
আদ্রিতার ভয় কাটতে না কাটাতে আদ্রিস, আদ্রিতার ঘাড় ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর ওষ্ঠদ্বয় আঁকড়ে ধরে।
আদ্রিতা ঝুঁকে যায়। আদ্রিসও ঝুঁকে গিয়েছে। আদ্রিতা বিছনায় পড়ে যায়। ওর শরীর বাউন্স করে ওঠে।
আদ্রিসের ভেতর আকর্ষণ সৃষ্টি হচ্ছে। সে আদ্রিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আদ্রিতার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে লাগে। সে আদ্রিসের ফোর্স এর সামনে কিছুই করতে পারছে না।
আদ্রিস বেসামাল হতে লাগে। আদ্রিতা নিঃশ্বাস না নিতে পেরে ডান হাতে আদ্রিসের বুকে রাখতে গেলেই ব্যাথায় আঁতকে ওঠে।
আদ্রিসের ধ্যান ফিরে সে একটু উঁচু হয়ে যায়। আদ্রিতা ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
আদ্রিস বৃদ্ধ আঙ্গুল ছোঁয়ায় আদ্রিতার ঠোঁটে। আদ্রিতার ঠোঁট দু’টো গ্লসি হয়ে উঠেছে। এবং লাল ও হয়ে গেছে।
আদ্রিস সরে আসে। এই মুহুর্তে সে নিজেকে সামলাতে পারবে না। আর এখনি এসব সম্ভব নয়। তাকে আরেকটু সময় নিতে হবে।
“তোর হাত পুড়েছে কিভাবে?”
আদ্রিতা উঠে বসে নিজের ওড়না ঠিক করে নেয়।
“ও ওই দুধ উতলে হাতে এসে পড়েছে।”
“তুই সব কাজ করিস?”
“হ্যা।”
আদ্রিস হাত মুঠো করে নেয়। রাগ হচ্ছে তার।
“ইচ্ছে করছে তোকে ইচ্ছে মত মারি।”
“ক কেন?”
“তোর গোবর ভরা মাথায় ডুকবে না।”
আদ্রিতা মাথা নুইয়ে নেয়।
আদ্রিস উঠে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ায়,
“খবরদার নড়বি না। এক ইঞ্চি এদিক ওদিক হলে খবর আছে।”
চলবে?
( জানি ছোট হয়েছে। আরেকটা গল্প লিখতে হবে তাই ছোট হয়েছে)
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৮
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৯
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১০
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৭
-
জেন্টাল মন্সটার গল্পের লিংক