উড়ালমেঘেরভেলায়
লেখনীতে— #ঝিলিক_মল্লিক
পর্ব_৯
[কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।]
রানিয়া বর্তমানে তার নিজ বাসায় অবস্থান করছে। এখানে আসতে চায়নি ও। বলা চলে, ওকে একপ্রকার ধরে-বেঁধে এখানে আনা হয়েছে। না ঠিক শারীরিকভাবে ধরাবাঁধা নয়, এটা হলো মানসিকভাবে ধরাবাঁধা করে আনা। রানিয়াকে এই বাড়িতে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ডেকে আনা হয়েছে। এই একটা কারণে পরিবারের মানুষজনের ওপরে ভীষণ বিরক্ত হয় রানিয়া।
বাড়িতে এসেই নিজের রুমের মধ্যে ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে আছে ও। সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখান থেকে আগামী তিন দিবস অবধি বের হবে না। যা-হোক, যা কিছু হয়ে যাক না কেন; ও বের হবে না। বিকালের দিকে নাকি শ্বশুরবাড়ির মানুষজন আসছে। অথচ ওর আম্মা এমনভাবে জরুরি তলবে ডেকে আনলেন যে, কারো ইমার্জেন্সি মিলাদ পড়ানো হবে। এখুনি আসতে হবে মানে হবেই। এদিকে রানিয়ার পেয়েছে ভীষণ খিদে। পয়তাল্লিশ কেজি ওজন মাত্র পনেরো দিনের মাথায় ছেচল্লিশে গিয়ে ঠেকেছে। এটা যে খুব বাড়তি ওজন — তা ঠিক নয়। তবে একটু অস্বাভাবিক বটে। রানিয়ার কাছে না হলেও ওর খুব কাছের মানুষদের কাছে অস্বাভাবিক। এই বাসায় আসার পরে ওর মা তো ওকে দেখে বলেই ফেলেছেন, “হঠাৎ মোটা হলে যে? মোটা হওয়ার জন্য কোনো মেডিসিন খাচ্ছো নাকি? যাক ভালোই হয়েছে। খগেন শরীরটা এবার মানুষের বাচ্চার মতো লাগবে।”
অন্যসময় হলে রানিয়া হাসতে হাসতে ফিট খেয়ে যেতো। তবে আজ ও হাসেনি। গম্ভীর মুখ করে শুধু ‘হু’ জবাব দিয়ে এসেছে। রানিয়া আগে তিনবেলা খাবার খেতো আবার ঠিকমতো খেতোও না। সকালটা বলা চলে একেবারেই বাদ যেত। দুপুরের খাবারও অনিয়ম করে বেশিরভাগ সময় সন্ধ্যার দিকে খেতো। এজন্য আর রাতে খাওয়ার প্রয়োজন পরতো না ওর। সেই মেয়ে এখন তিনবেলার জায়গায় ছয়বেলা করে খাচ্ছে। এই অসময়েও ওর ভীষণ খিদে পেয়েছে। রানিয়া বসা থেকেই আধখোলা দরজার বাইরে উঁকি দিলো। দেখলো, ওদিক দিয়ে ওর ছোটভাই রেহান যাচ্ছে। রানিয়া চাপা স্বরে রেহানকে ডাক দিয়ে ভেতরে ডাকলো। রেহান আসতেই ওকে জিজ্ঞাসা করলো, “বাসায় খাবার কী কী আছে রে রোহু?”
রেহান এগারো বছরের ছোট একটা বাচ্চা ছেলে। সারাদিন খেলাধুলা, ফোনে গেইম খেলা আর পড়াশোনা — এই নিয়েই সময় কেটে যায় ওর। আর এর মাঝে ফাঁকে ফাঁকে এসে বোনের সাথে গল্প করে। বড়বোন ওকে খুব আদর করে। এজন্য বোনের সঙ্গ ওর বেশি ভালো লাগে। রেহান জানে, বাসার কোথায় কি খাবার রাখা আছে। তাই ওকেই জিজ্ঞাসা করেছে রানিয়া। রেহান জানালো, রান্নাঘরে বয়ামে আচার, সন্দেশ, শোন্-পাপড়িসহ মোটামুটি সবই আছে। কিন্তু ও গিয়ে আনতে পারবে না। কিছুক্ষণ আগেও এক খাবলা উঠিয়ে এনেছে। এজন্য আম্মা ওকে বকাঝকা করেছে অনেক।
বাধ্য হয়ে রানিয়াকেই উঠতে হলো। ও সতর্কভাবে রান্নাঘরের দিকে পা টিপে এগোলো। রান্নাঘরের বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে দেখলো, ওর মা রান্না করতে ব্যস্ত। বিকালে মেহমান আসবে, তার-ই আয়োজন চলছে। রানিয়ার আর ধৈর্য হলো না। ও রান্নাঘরে ঢুকে খাবারের বৈয়াম ওলট-পালট করে দেখতে লাগলো। নাজমা পারভীন মেয়ের উপস্থিতি টের পেয়েছেন। তবে কিছু বলছেন না। তিনি চুপচাপ রান্নার কাজে মনোযোগ দিচ্ছেন। রানিয়া আচারের বৈয়ামটা দেখে সেটা খপ করে টেনে নিলো। বৈয়ামের মুখা খুলে এক খাবলা আচার তুলে নিয়ে মুখে দিলো। ইদানীং আচার দেখলেই প্রচন্ড ক্রেভিংস হয় ওর। নিজেকে সামলাতে পারে না। জিভে জল চলে আসে।
রানিয়াকে গপাগপ আচার খেতে দেখলে একটু অবাকই হলেন নাজমা। মেয়ে তো তার সচারাচর আচার খায় না। বরং, আচারের প্রতি চরম অভক্তি ওর। দশমাসে হাতেগোনা এক চামচও আচার মুখে তোলে না ও। সেই মেয়ে কিনা সারি বেঁধে রাখা চার-পাঁচটা আচারের বৈয়াম থেকে বিভিন্ন রকমের আচার খাবলে নিয়ে খাচ্ছে! একটু বেশিই আশ্চর্য বনে গেলেন নাজমা। মেয়ের আচরণ কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে তার। তবে ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না মেয়েকে। সরু চোখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন রানিয়ার দিকে। মায়ের চোখে চোখ পরতেই রানিয়া অপ্রস্তুত হলো। চরম অস্বস্তিতে পরে সৌজন্যতামূলক হাসি দিতেই নাজমা পারভীন ওকে কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলেন, “হঠাৎ আচার খাচ্ছো যে?”
রানিয়া জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো, “খিদব পেয়েছে অনেক, তাই আরকি।”
“তুমি তো আচার খাও না। অনেক খিদে পেলেও না।”
“এমনি আরকি।”
“ওখানে টোস্ট-বিস্কুট আছে। দুধ-চা বানিয়ে দিচ্ছি, ঘরে নিয়ে খাও।”
রানিয়া মায়ের কথায় সামান্য হেঁসে টোস্টের বৈয়াম নিয়ে রান্নাঘর থেকে দ্রুত পালিয়ে গেল।
.
.
রানিয়া একটা ঘুম দিয়েছিল বিকালের দিকে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই ঘুমিয়ে কেটে যায় ওর। কোচিং আর পড়াশোনা বাদে বাকি সময়ে আর কোনো কাজ নেই। সেই সময়টুকু ঘুমিয়ে থাকে ও। আগে এতোটা ঘুমাতো না। এখন ইদানীং ঘুমের মাত্রা লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে গেছে ওর। আগে ঘুমাতো সাত ঘন্টা। এখন ঘুমায় মোটমাট মিলিয়ে প্রায় বারো-তেরো ঘন্টা। অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে ওর হালকা মুখও প্রায়ই ফুলে থাকে। আজও ঘুমাবে না ভেবে জোরপূর্বক জেগে থাকার চেষ্টা করেও দুপুরের খাবার খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পরেছিল ও। ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে। বেশিক্ষণ ঘুমায়নি ও। হঠাৎ ডাকে ঘুম ভাঙতেই ধড়ফড় করে উঠে বসলো। তাকিয়ে দেখলো, ওর আম্মা সামনে উদ্বিগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷ রানিয়াকে উঠে বসতে দেখে তিনি তাড়াহুড়ো করে বললেন, “দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে বাইরে আসো। বেয়াই বাড়ির সবাই চলে এসেছে।”
শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসেছে শুনে রানিয়া চটজলদি উঠে পরলো। ওর আম্মা তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন। রানিয়া ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আসলো৷ পরনের কামিজটা ভালোভাবে টেনেটুনে নিলো ও। বাসায় নিজ রুমে সচারাচর জর্জেটের ওড়না পরে ও। জর্জেটের ওড়নাটা খুলে সুতির ওড়না গায়ে-মাথায় টেনে দিলো৷ আয়নায় একবার মুখটা দেখে এরপর রুমের বাইরে বের হলো ও। ড্রয়িংরুমে যেতেই দেখলো, একগাদা মানুষ। এতো মানুষ আসার কারণ কি, তা জানে না রানিয়া৷ ওর শ্বশুর বসে আব্বার সাথে গল্প করছে। শাশুড়িসহ বাকি সবাই একসাথে বসে আছে। রানিয়া গুনে দেখলো, এখানে প্রায় জনা পনেরো মানুষ। সবাইকে চেনে না ও। এরমধ্যে বেশকিছু অপরিচিত মুখ রয়েছে। পরিচিত মুখগুলো হলো, ওর শ্বশুর-শাশুড়ি, ছোট মামাশ্বশুর, তারপাশে বসা ছোট মামি হবেন বোধহয়, ছোট খালাশাশুড়ি আছেন। ইনাদের বিয়ের সময়ে দেখেছিল রানিয়া। এজন্য চিনতে পেরেছে। যতদূর জানে, তারা সিলেটে থাকেন। সিলেট থেকে হঠাৎ ঢাকায় আসার কারণ কী? আর আসলেও রানিয়াদের বাসায় কেন? এমনিই? নাকি বিশেষ কোনো উপলক্ষ? রানিয়া ভেবে পেল না। ওর আম্মা সবাইকে আপ্যায়ন করছেন। তার চেহারা দেখে মনে হলো, তিনি এতোজন মানুষ আসার ব্যাপারে জানতেন। রানিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিল, তখনই ওর দুই ননদ এসে টেনে নিয়ে সোফায় নিজেদের পাশে বসালো ওকে। ননদ দু’টোর নাম আলিশা আর মাইশা। ওরা রানিয়ার বছরখানেকের ছোট। যদিও দেখলো বোঝা যায় না। তবে ওরা ওর আপন ননদ নয়। খালাতো এবং মামাতো ননদ। আভিয়ানের আপন কোনো ভাইবোন নেই। এক বাপের এক ছেলে।
রানিয়াকে টেনে ধরে আলিশা আর মাইশা ফিসফিস করে বললো, “কী ভাবি? ভাইয়াকে খুঁজছো নাকি? ভাইয়া তো আসেনি।”
আভিয়ানের কথা বলতেই এবার খেয়াল হলো রানিয়ার। এতোক্ষণ ও খেয়াল-ই করেনি যে, আভিয়ান এখানে আসেনি। এতো মানুষের ভীড়ে লোকটাকে দেখা গেল না। রানিয়া মনে মনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো যেন। তখনই ওর সকল খুশিতে পানি ঢেলে দিয়ে ওপাশ থেকে ওর শাশুড়ি ওর আম্মাকে বলে উঠলো, “আপা, আমার বৌমাকে কিন্তু আমি দিন পনেরোর জন্য নিয়ে যাচ্ছি।”
রানিয়া কথাটা শোনামাত্র-ই চমকে উঠলো যেন। ভ্রু কুঁচকে তাকালো বিপরীত দিকে। দেখলো, ওর মা-শাশুড়ি কথা বলায় ব্যস্ত। মায়ের মুখে চমৎকার হাসি দেখে ভ্রুকুটি আরো বাঁকা হলো রানিয়ার। ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তাদের কথাবার্তা শুনতে লাগলো মনোযোগ সহকারে। ওর আম্মা শাশুড়িকে বলছেন, “আপা, মেয়েকে কি উপলক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন সেটা কিন্তু বললেন না।”
“আসলে আমার বড়ভাইয়ের বড় ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। সেই উপলক্ষে আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে। বলেছে, বৌমাকে যেন অবশ্যই নিয়ে যাই। বড়ভাই দেশের বাইরে থাকার কারণে আমার আভিয়ানের বিয়েতে আসতে পারেনি। এজন্য বৌমাকেও দেখা হয়নি ওদের। তাই ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেছে। সেখানে আমাদের চৌদ্দ-পনেরো দিনের মতো থাকতে হবে। আগামীকাল-ই ভাইবোনদের সাথে রওয়ানা দেবো সবাই। এজন্য রানিয়াকে আমরা এখন তাড়াহুড়ো করে নিতে এসেছি। আপনি প্লিজ না করবেন না আপা।”
রানিয়ার শাশুড়ি আশফি বেগম এমনভাবে অনুরোধ করলেন যে নাজমা মুখের ওপর না করতে পারলেন না। রানিয়াকে আরো একবার বিস্মিত, হতভম্ব করে দিয়ে তিনি বললেন, “ওকে নিয়ে যেতে পারেন আপা। কোনো সমস্যা নেই। এমনিতেও মেয়েটা সারাদিন পড়াশোনার চক্করে ক্লান্ত হয়ে পরেছে৷ এখন একটু ঘুরে আসা প্রয়োজন ওর। তাছাড়াও নতুন একটা জায়গায় যাবে, ভালো লাগবে ওর।”
রানিয়ার মনে হলো, ওর আম্মা ওর হোস্টেলে থাকার বিষয়টা চেপে যাচ্ছেন। বেয়াদবি হয়ে যাবে বলে রানিয়া আগ বাড়িয়ে কিছু বললো না। কিন্তু মায়ের ওপর রাগ হলো ভীষণ। ও কি একবারও বলেছে, পড়াশোনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে, ওর ঘুরে আসা প্রয়োজন! এ-কি মুসিবত!
রানিয়াকে তৎক্ষনাৎ টেনে ওর ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো।নাজমা পারভীন মেয়েকে ভালোভাবে সতর্ক করে গেলেন, যেন সব জামাকাপড় আর দরকারি জিনিস এখনই গোছগাছ করে নেয়। চৌদ্দ-পনেরো দিনের ঘোরাঘুরি তো কম কথা নয়। দু’টো লাগেজ বের করে দিয়ে গেলেন তিনি৷ আর রুম থেকে বের হওয়ার সময় রানিয়াকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলে গেলেন, যেন ওখানে গিয়ে কোনো ভুল করা না হয়, সবার সাথে মিলেমিশে চলতে হবে, সবার সাথে হাসিমুখে থাকতে হবে। রানিয়া মুখে কিছু বললো না। শুধু মাথা নাড়লো।
.
.
আভিয়ানদের বাসা বনানীতে। তিন তলা বিল্ডিংয়ের দোতলায় থাকে ওরা। বাকি দু’টো ফ্লোরে ভাড়াটিয়া। ফ্ল্যাটটা বেশ বড়। গেস্ট রুম-ই তিনটা। আভিয়ানের রুমটা আলাদা। ব্যালকনির ওপাশে। সব রুম থেকে দূরে। ড্রয়িংরুম ঘেঁষে শ্বশুর-শাশুড়ির রুম। রান্নাঘর বিপরীত পাশে।
রানিয়া এই বাসায় প্রথম এসেছে আজ। আসার পরপরই ড্রয়িংরুমে বসানো হয়েছে ওকে৷ সবাই মিলে ওর আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত। বড়রা বিপরীত দিকে বসে সব পরিকল্পনা করছেন। আগামীকাল ভোরে বের হতে হবে এখান থেকে। দুটো মাইক্রোবাস যাবে। লাগেজ গোছানো বাকি এখনো। কিছু কেনাকাটা করতে হবে৷ শ্বশুর, মামা-মামি, আর খালারা এসব নিয়েই বৈঠক বসিয়েছেন। এরমাঝে ওর শাশুড়ি গিয়েছেন ওর জন্য শরবত আর নাস্তা বানাতে।
বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো প্রায়। রানিয়া এখানে এসেছে আধাঘন্টার মতো হলো৷ এখনো আভিয়ানকে দেখেনি ও। দেখতেও চাইছে না। লোকটার সামনে না পড়ুক— মনেপ্রাণে এই দোয়া করছে ও। ওর সাথে বসে আছে ওর দুই খালাতো ননদ আর একজন মামাতো দেবর। দেবরটার বয়স বছর পনেরোর মতো হবে। নাম ওর কাঁকন। ছেলেটা মানুষ হাসাতে পারে ভালো। এতোক্ষণ নানান জোকস বলে রানিয়াদের হাসাচ্ছিল। রানিয়া গল্প করতে করতে বারবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। সাবধানের মার নেই। আভিয়ান আসলেই মুখ লুকাবে ও। আচ্ছা, লোকটা কি জানে ও এখানে এসেছে? জানার কথা নিশ্চয়ই। কি জানি! ঠিক বুঝতে পারছে না রানিয়া। তখন আলিশা আর মাইশা বললো, “ভাবী আজ আমরা অনেক আড্ডা দেবো আর গল্প করবো। অনেক মজা হবে দেখো। আর আমরা যখন সিলেট যাবো, তখন অনেক জায়গায় ঘুরবো দেখো। সিলেটে আমরা বেশ কয়েকবার গিয়েছি। তুমি গিয়েছো কখনো?”
“উহুঁ। আমার সিলেটে যাওয়া হয়নি কখনো৷ তাবে শুনেছি, সিলেট শহরটা নাকি ছবির মতো সুন্দর।”
“হ্যাঁ সুন্দর তো। দারুণ সুন্দর। চোখ ধাঁধিয়ে যাবে তোমার। একবার শুধু চলো, সেখান থেকে আসতেই ইচ্ছা করবে না।”
রানিয়া মুচকি হাসলো। মেয়ে দুটো বেশ মিশুক তো। এদের সাথে অল্প সময়েই দারুণভাবে মিশে গেছে রানিয়া। মাইশা ফিসফিস করে বললো, “আজ আমরা রাতে ভূতের গল্প শুনবো ভাবি।”
“আচ্ছা শুনবো।”
রানিয়া হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই ওদের বললো, “আজ আমরা সবাই একসাথে ঘুমাই? অনেক আড্ডা দেওয়া হবে। আমাকে নেবে তোমাদের সাথে ঘুমাতে?”
“হ্যাঁ, অবশ্যই নেবো। কাঁকন বজ্জাতটাও থাকবে রাত দুই-তিনটা পর্যন্ত। এরপর আমরা ঘুমাতে যাবো। কাল নাকি আবার ভোরে ওঠা লাগবে। ধুরর!”
কাঁকন বললো, “চলো ভাবি, আমরা রুমে যেয়ে লুডু খেলি সবাই মিলে। এখানে তো বড়রা আলোচনা করছে।”
ওরা উঠে গেল। মাইশা রানিয়ার হাত ধরে রেখেছিল। ব্যালকনি পার করে যাওয়ার সময়েই হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটলো। আচানক একজনের সামনে পরলো রানিয়া। আভিয়ান! বড়ভাইকে দেখে মাইশা, কাঁকন ওরা সরে গেল। আভিয়ান উদাম শরীরে দাঁড়ানো ওর সামনে। চুলগুলো এলোমেলো। চোখ হালকা লাল। পরনে একটা ট্রাউজার। দেখে যেকেউ বুঝবে, এই লোক সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেছে। রানিয়ার বুক দুরুদুরু কাঁপতে লাগলো। ও আভিয়ানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই লোকটা হঠাৎ হাত দিয়ে আঁটকে দিলো ওকে!
চলবে
🔺
Share On:
TAGS: উড়াল মেঘের ভেলায়, ঝিলিক মল্লিক
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ১১
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৭
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৪
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৫
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৬
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ১২
-
উড়াল মেঘের ভেলায় গল্পের লিংক
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৩
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৮
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ১