#আড়ালে_তুমি |৩৬|
#_সাইদা_মুন
আজ ইলেকশনের দিন, এই অসুস্থ শরীর নিয়েও রুদ্র বেরিয়ে গেছে। সারাদিন খুব ব্যস্ততার মধ্যে যাচ্ছে তার, এক মিনিট বসারও উপায় নেই। পরিবারের সবাই চিন্তিত রুদ্রকে নিয়ে। বিকেলে ফলাফল বের হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রুদ্রের আর দেখা মিলবে না।
দুপুরের দিকে খাওয়ার সময় পিহু একা একাই মিটিমিটি হাসছিল, মেঘ জিজ্ঞেস করলে কিছুনা বলে কাটিয়ে নেয়। কিছুদিন ধরে মেঘ লক্ষ্য করছে পিহু একা একা লজ্জা পায়, ফোনে কিছু দেখে আর মুচকি মুচকি হাসে। তবে কি পিহু কারো প্রেমে পিছলা খেলো? দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা।
খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে গুটি গুটি পায়ে পিহুর রুমে ঢুকে। দেখে একই অবস্থা, মোবাইলে কিছু দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। মেঘ আস্তে আস্তে প্রবেশ করে পিহুর পেছন থেকে উঁকি দেয়। দেখতে পায় একটা ছেলের ছবি। মেঘের ভুরু কুঁচকে যায়, কেমন চেনা চেনা লাগছে। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখতেই চিনে ফেলে,
-“আরে এইটা তো সেদিনের লোকটি… কি যেন নাম… হ্যাঁ মনে পড়েছে, ফারহান…”
হঠাৎ কারো গলায় পিহু লাফ মেরে উঠে, হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। পেছন ফিরে মেঘকে দেখে বুকে থু থু দিতে দিতে বলে,
-“বেয়াদব বেডি, ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। এমনে কেউ আসে নাকি…”
মেঘ দুষ্টু হেসে বলে,
-“তা ভয় কি আমার জন্য পেয়েছিলে, নাকি ধরা খাওয়ার জন্য পেয়েছিলে…”
পিহু মেঘের কথা শুনে আমতা আমতা শুরু করে, এদিক সেদিক তাকায়,
-“না মানে তুই যা ভাবছিস তা না… ওই আসলে…”
এবার মেঘ সিরিয়াস ভঙ্গিমায় বলে,
-“এতো আসলে-নকলে জানিনা, এখানে বসছি। এ টু জেড সব খুলে বলো ননদিনী…”
পিহুও ঠুস করে মেঘের পাশে বসে পড়ে। আস্তে আস্তে বলা শুরু করে,
-“উনি ফারহান রাশেদ ভূঁইয়া…”
-“হু জানি, পরের কাহিনি শুরু কর…”
পিহু অবাক হয়ে বলে,
-“তুই জানিস কিভাবে?”
-“ওইদিন উনাকে দেখতে হসপিটালে এসেছিল… তবে ওদের কথা শুনে যা বুঝলাম, সাপে-নেউলে সম্পর্ক।”
পিহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“হু, উনি ভাইয়ার বিপক্ষ দলের। সবসময় ভাইয়ার সাথে উনার ঝামেলা লেগেই থাকে…”
একটু থেমে আফসোসের স্বরে বলে পিহু,
-“আমি একটা ভুল করে ফেলেছি রে মেঘ… আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি চাইলেও এসব অনুভূতি মন থেকে সরাতে পারছি না। সেই কিশোরী মনে জায়গা করে নেওয়া পুরুষকে কি এতো সহজে ছাড়া যায়?”
মেঘ মনোযোগ দিয়ে শুনছে পিহুর কথা। পিহুর কথায় একটা চাপা কষ্ট অনুভব করছে সে,
-“কিশোরী মনে জায়গা মানে, তুই ছোট থেকেই…”
-“হ্যাঁ, যখন প্রথম কলেজে ভর্তি হই, তারপর আব্বু আমাকে ফার্স্ট টাইম মোবাইল গিফট করেছিল। বান্ধবীদের দেখে আমিও প্রথম ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলি। একদিন ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে সাজেস্টে উনার আইডি চলে আসে। বিশ্বাস কর, প্রথম দেখাতেই আমি আটকে গিয়েছিলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম ক্রাশ, এভাবে প্রায় ১ বছর আমি তার আইডি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছি। তারপর বুঝতে পারলাম, না আমি আসলে ভালোবেসে ফেলেছি। তারপর সিদ্ধান্ত নেই যে এবার মনের কথা বলবোই। তবে তখনই বাধে বিপত্তি…”
-“কি?”
-“একদিন ভাইয়া বাসায় ফিরে একদম বাজে অবস্থা নিয়ে, হাত-পায়ে, কপালে ব্যান্ডেজ। আমরা সবাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। কে করলো এই অবস্থা জানতে চাইলে, ভাইয়ার বন্ধু শান্ত ভাইয়া বলেন, ফারহান করেছে এমন। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলতো, সেদিন ভাইয়াকে একা পেয়ে ১৫-২০ জন মিলে মেরেছিল। তখন আমি জানতে পারি উনিই সেই ফারহান যাকে আমি মন দিয়ে বসেছি।”
মেঘ অবাক হয়ে পিহুকে দেখছে। তার চোখে পানি টলমল করছে। পিহু চোখ বুঝতেই একফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে,
-“আমি চেষ্টা করেছি উনাকে ঘৃণা করার, আমি জানি এটা আমার ফ্যামিলি মেনে নেবে না। ইনফ্যাক্ট, আমার ভাইয়ার শত্রুকে তো আমিও মেনে নেব না। কিন্তু আমি পারিনি মেঘ… আমি ব্যর্থ রে। আমি ব্যর্থ, উনাকে মন থেকে সরাতে পারিনা। মনের কথা বলিনি, তবে মন দিয়ে বসে আছি। প্রতিদিন তার আইডি ঘুরি, ছবি দেখি, তা না করলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।”
মেঘ পিহুর কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“আমি বলছিনা তাকে ভুলে যা বা ছেড়ে দে। কিন্তু সে তোর জন্য বিপদজনক। কারণ তুই তার শত্রুর বোন…”
পিহু চটজলদি বলে,
-“না না মেঘ, তুই ভুল বুঝছিস। উনি মোটেও এমন না, একবার আমি রাস্তায় ফেঁসে গেছিলাম, উনি আমাকে সেদিন উদ্ধার করে ছিলেন। উনি যখন জানতে পারেন আমি রুদ্রের বোন, উনি তখনও আমার দিকে খারাপ ভাবেও তাকায়নি। উলটো বলেছিলেন, মেয়ে মানুষ একা চলাফেরা করা উচিত না, সেইফে থাকবে। নিজেই আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন… তুই বল, উনি চাইলেই কি আমার ক্ষতি করতে পারতেন না? কিন্তু করেননি, কারণ উনার মধ্যেও ভালো মানুষ আছে। সেই ঘটনার পর আরও উনি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে।”
মেঘ কিছু একটা ভেবে বলে,
-“একটা চান্স নিয়ে দেখতে পারিস। কাউকে তার আড়ালে ভালোবেসে তাকে হারিয়ে ফেললে তখন যেই পরিমাণ খারাপ লাগে, তাকে বলে রিজেক্ট হলেও সেই পরিমাণ খারাপ লাগে না।”
পিহু মন খারাপ করে বলে,
-“এখন না, দেখি আরও কিছুদিন…”
———
বিকেল ৫টা, সবাই টিভির সামনে বসা। টানটান উত্তেজনার সময়। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ পাবে। এদিকে এদের বাপ বেটা কাউকেই কল দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না, সাদ ও তাদের সাথেই।
বিকেল ৫:১৫ হঠাৎ পিহু, সামিয়া, তাহমিদ “ইয়েএএএ!” বলে চিৎকার করে উঠে। খবরের হেডলাইনে লেখা,
“পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন পেয়েছেন রুদ্র চৌধুরী দ্য ইয়াং স্টার, মাত্র কিছু ভোটের জন্য জায়গা করে নিতে পারেননি ফারহান রাশেদ ভূঁইয়া। তবে শোনা যাচ্ছে, তাকেও সরকারের অনুমতিতে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।”
সিদ্দিকা বেগম দৌড়ে রান্নাঘর থেকে আসেন,
-“কিরে চিৎকার করছিস কেনো? ফলাফল প্রকাশ হয়েছে?”
পিহু মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“ইয়েস মাদার বাঙালি, তোমার ছেলে জিতেছে।”
সিদ্দিকা বেগম খুশি হয়ে বলেন,
-“আলহামদুলিল্লাহ…”
সবাই খুব খুশি, কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যান্ড পার্টির শব্দে সবাই বেরিয়ে আসে। দেখে রুদ্রকে ঘুরায় বসিয়ে ব্যান্ড পার্টি সাইডে, আর সামনে এরশাদুল চৌধুরী, এনামুল চৌধুরী, সাদ এবং তাদের পরিচিত আরও অনেকেই আছেন। সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পুরো ঢাকা শহরের রাস্তা হেঁটে হেঁটে বেশ এঞ্জয় করেই এসেছেন। অবশ্য কঠোর সিকিউরিটি সাথে নিয়েই।
সবাই বেশ খুশি, পুরো এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়ে গিয়েছে অলরেডি, আত্মীয়দের বাসায়ও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পরশুদিন এই উপলক্ষে পার্টি রেখেছে এবং সেই পার্টিতে আরও একটি সারপ্রাইজ থাকবে এরশাদুল চৌধুরীর পক্ষ থেকে।
মেঘ শরবত বানিয়ে দ্রুত ঘরে আসে। রুদ্র চোখ বন্ধ করে বসে আছে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তাকে, কপালে-ঘাড়ে ফোটা ফোটা ঘাম।
-“নিন, আপনার শরবত…”
রুদ্র চোখ খুলে মেঘকে দেখে হালকা হেসে শরবতের গ্লাসটা হাতে নেয়। মেঘ সেই ফাঁকে নিজের ওড়না দিয়ে রুদ্রের ঘাম মুছে দিতে থাকে। রুদ্র একটানে শরবতটুকু খেয়ে নেয়।
মেঘ মিষ্টি হেসে বলে,
-“কংগ্র্যাচুলেশন, মন্ত্রী মশাই…”
রুদ্রও বিপরীতে হেসে বলে,
-“থ্যাংক ইউ, মন্ত্রী সাহেবা…”
মেঘ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
-“আমি আবার মন্ত্রী কিভাবে?”
-“বাইরে আমার শাসন চললেও, ঘরে তো তোমার শাসনই চলে। তাই তুমি ঘরের মন্ত্রী…”
মেঘ ফিক করে হেসে দেয়। রুদ্র হঠাৎ মেঘের কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,
-“নিজে তো বেশ মিষ্টি খেলে, তা আমার মিষ্টি কোথায়?”
-“ওমা! আপনিও তো খেলেন, আরও খাবেন বুঝি? দাঁড়ান, এনে দিচ্ছি…”
রুদ্র মেঘের ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বলে,
-“ওই মিষ্টি না, এই মিষ্টি চাচ্ছি।”
রুদ্রের এমন কথায় মেঘ লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ে। তখনই সাদ সিঁড়ি দিয়ে রুদ্রকে ডেকে ডেকে উঠছে,
-“রুদ্র ভাইইইই! নিচে আসো, খাবার খেতে ডাকছে!”
তা শুনে রুদ্র মেঘকে বলে,
-“ফাস্ট…”
সাদের কণ্ঠ আরও স্পষ্ট হচ্ছে, তার মানে রুমের কাছেই চলে এসেছে। মেঘ কি করবে না করবে ভেবে ঠুস করে রুদ্রের গালে চুমু দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। তখনই প্রবেশ করে সাদ,
-“কি ভাইয়া, শুনত…”
আর কিছু বলতে পারেনি, রুদ্রের কথায় থেমে যায়,
-“তোর বিয়ের প্রথম ১ মাস তুই আর তোর বউকে আলাদা রুমে রাখবো…”
সাদ আতঙ্কিত হয়ে বলে,
-“হুয়াই ব্রো? এতো বড় শাস্তি কেনো? আমি কি করেছি?”
-“তুই কিছু করিসনি, শুধু অসময়ে চলে আসিস।”
সাদের মুখটা চুপসে যায়। বেচারা টেনশনে আছে, সত্যি যদি এমন হয়,
-“মাই গড! আমি তো এতিম হয়ে যাবো থুক্কু… বিধবা হয়ে যাবো…”
রুদ্রের সামনে গিয়ে বেচারা কাদু কাদু ফেস করে বলে,
-“ও ভাইয়া, তুমি আমাকে একটা রুটিন বানাই দাও, সেখানে তোমাদের ইটিসপিটিসের সময়গুলো লেখা থাকবে। সেই সেই সময় আমি এই বাড়িতে বা এলাকার আশেপাশেও থাকবো না, প্রমিস! তাও এতো বড় শাস্তি দিও না প্লিজ!”
রুদ্র এই পাগলের প্যাঁচপ্যাঁচানি কানে না নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে ফ্রেশ হতে। তারপর নিচে নামে, সবাই একসাথেই রাতের খাবার খেয়ে নেয়।
রাতে ঘুমানোর সময় রুদ্র হঠাৎ কি মনে হতে মোবাইল অন করে ফারহানের মেসেজের রিপ্লাই দেয়,
“বউ আর ক্ষমতা, কখনোই কেউ আমার থেকে কেড়ে নিতে পারে না। অপেক্ষায় ছিলাম মোক্ষম সময়ের। আসলে জানিসই তো, রুদ্র চৌধুরী কথায় না… কাজে।”
———
ক্যাম্পাসে বসে আছে সবাই রিককে ঘিরে।
মেঘ অতিষ্ঠ হয়ে বলে,
-“এই হেবলা, তুই কি মেয়ে? আমি মেয়ে হয়েও তো এতো লজ্জা পাই না…”
রিক যেন আরও লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
সুমনা রেগে বলে,
-“শালা, হুদাই বসিয়ে রেখেছিস। খাবার দিয়ে তারপর যতক্ষণ খুশি বসিয়ে রাখ…”
পিহু সুমনার মাথায় চাটি মেরে রিককে বলে,
-“তুই কি কিছু বলবি, কি হয়েছে? না হলে আমরা চলে যাচ্ছি…”
এবার রিকের মুখ খুলে,
-“আরে না না, শোন শোন… আসলে আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি…”
“কিইইইই!” সবাই একসাথে চিৎকার করে ওঠে, সাথে অবাকও হয় এই পাতলা খান আবার ভালোও বাসতে পারে?
-“আরে ভাই, চিৎকার করছিস কেনো? আই এম সিরিয়াস…”
পিহু শিকারির চোখে তাকিয়ে বলে,
-“তলে তলে এত কিছু! বল, মেয়েটা কে?”
-“ইয়ে মানে… আমাদের সাথেরই কিন্তু অন্য ডিপার্টমেন্টের। আমি আসলে চাচ্ছিলাম আজকেই প্রপোজ করবো। তাই এই যে…”
বলেই ব্যাগ থেকে গোলাপ ফুলের তোড়া বের করে,
-“এইটা নিয়ে এসেছি।”
-“কিইই! এতোদূর চিন্তা চলে গেছে আর আমাদের এখন বলছিস?”
রিক অসহায় হয়ে বলে,
-“আরে মেরি মা, এতোদিন আমি সিউর ছিলাম না। চাইলে তো প্রপোজ করেও তোদের বলতে পারতাম, তবে করিনি তো। তোদের সাথেই নিয়েই প্রপোজাল দিবো।”
মেঘ ঘাসের উপর থেকে উঠে জামা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
-“আমি এসবে নেই, যাচ্ছি…”
পিহুও উঠে যাচ্ছে, তা দেখে রিক দ্রুত তাদের আটকায়,
-“প্লিজ প্লিজ, এমন করিস না, প্লিজজজজ…”
পিহু ভুরু কুঁচকে বলে,
-“ওকে, যাবো। তবে গেলে এর বদলে কি পাবো?”
-“খবিশের দল, তোরা যে ট্রিটের জন্যই নাটক করছিস জানি তো। যা, আজকে ক্লাস শেষে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবো।”
রিকের কথায় সুমনা হন্তদন্ত হয়ে বলে,
-“এই না না, আজকে না! আজকে না…”
সবাই ভূত দেখার মতো করে তাকায় সুমনার দিকে। এই মেয়ে? না মানে… এই খাদক খেতে যেতে মানা করছে ভাবা যায়?
পিহু বলে উঠে,
-“সুমনা, তুই ঠিক আছিস?”
সুমনা কিছুটা থতমত খেয়ে বলে,
-“না মানে… আজকে ছুটির পর আমার একটা কাজ আছে, তাই বলছিলাম কাল…”
রিক ফট করে বলে,
-“ওকে তাহলে কালকেই। এখন চল, চল… ওই যে মেয়েটা চলে এসেছে…”
বলেই রিক দ্রুত সেদিকে এগিয়ে যায়। মেয়েটিকে ডাকতেই দাঁড়ায় সে। রিক গিয়ে একদম মেয়েটির বরাবর দাঁড়ায়। লজ্জায় লাল-নীল হচ্ছে। তার পিছে মেঘ, সুমনা, পিহু দাঁড়িয়ে কাহিনি দেখছে জাস্ট।
মেয়েটি এদের এভাবে দেখে বলে,
-“কিছু বলবে?”
রিক মাথা চুলকে বলে,
-“ইয়ে মানে… কিভাবে শুরু করবো বুঝছি না…”
পাশ থেকে পিহু বলে,
-“আসসালামু আলাইকুম আপা দিয়ে শুরু কর…”
রিক কটমট চোখে তাকাতেই পিহু মুখ টিপে হেসে চুপ হয়ে যায়। রিক আবার বলা শুরু করে,
-“আসলে আমি অন্য সব ছেলেদের মতো না…”
মেঘ পাশ থেকে চিৎকার করে বলে,
-“কিইইই! তাহলে কি তুই ওইটা নাকি…”
রিক ভুরু কুঁচকে ফিরে তাকায়,
-“ওইটা আবার কোনটা?”
পিহু হাতে তালি দিয়ে বলে,
-“আরে ওইটা ওইটা…”
সাথে সাথে মেঘদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়। বেচারা রিক ক্রাশের সামনে এমন অপদস্ত হয়ে মিইয়ে যায়।
মেয়েটি তাড়া দিয়ে বলে,
-“আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে, আসি…”
রিক বলে,
-“আরে দাঁড়াও দাঁড়াও, শুনে যাও!”
পাশ থেকে সুমনা বলে,
-“ডেকে লাভ নেই, ইন্ডিরেক্টলি মেয়েটি তোকে রিজেক্ট করেছে বস…”
-“কেমন করে?”
-“ক্লাস শুরু হতে আরও ১৫ মিনিট বাকি, আর এই মেয়ে ক্লাস শুরুর এক্সকিউজ দিয়েছে। চান্দু, বুঝোনা ব্যাপারটা?”
বেচারা রিকের মুখ এমন ভোঁতা হয়েছে, যা দেখার মতো ছিল। প্রেম করার আগেই ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাঁকা হয়ে গেছে। ক্লাসের দিকে যেতে যেতে বলে,
-“তোদের সাথে আনাই ভুল হয়েছে। আগেই বুঝা উচিত ছিল ডাইনির দল…”
পিহুরা হেসে হেসে রিকের পিছে পিছে নিজেদের ক্লাসে চলে যায়।
———
ক্লাস শেষ করে রিকশা নিয়ে রওয়ানা দেয় কাঙ্খিত জায়গার উদ্দেশ্যে। রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখে বেশ নামিদামি রেস্টুরেন্ট, একটু এগুতেই দেখা মিলে অপেক্ষাকৃত সেই মানুষের।
সুমনাকে দেখে সেই মানুষটিও এগিয়ে আসে,
-“আরে ম্যাম আসতে সমস্যা হয়নি তো? বলেছিলাম আমি নিয়ে আসি শুনলে না…”
-“আরে না না সমস্যা হয়নি…”
টেবিলে বসতেই খাবার অর্ডার দেয় দুজনেই। নিরব হঠাৎ সুমনা বলে উঠে,
-“কেমন আছো সাদ…”
সাদ প্রতি উত্তরে বলে,
-“এইতো আলহামদুলিল্লাহ, তুমি?”
এর মধ্যে খাবারও চলে আসে। ব্যস সুমনা কি আর কিছুতে মনোযোগ দিবে? সে খেতে লাগে, আর সাদ প্রথমে রোমান্টিক নায়কের মতো ভঙ্গিতে তার প্রেয়সিকে দেখতে থাকে।
তাদের রিলেশনের ৭ দিন হয়ে গেছে, আজ ডেটে এসেছে।
পরক্ষণেই সাদের রোমান্টিক ভাব অবাকে পরিণত হয়। মেয়েটি তাকে একবারো খেতে বলেনি, উল্টো দুজনের খাবার একাই সাফ করে ফেলেছে। বেচারার একটু রাগ হয়, তারও তো খিদা লেগেছে। সুমনার খাওয়া শেষ, সে আরামসে লাচ্ছি খাচ্ছে। সাদের হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই, সুমনাকে জিজ্ঞেস করে,
-“তোমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা কে বেবি..?”
সুমনা মুচকি হেসে বলে,
-“কেনো বেবি, তুমিই তো…”
মুহূর্তে সাদের চেহারা বদলে যায়, রাগী কণ্ঠে বলে,
-“আকাশ, সামি, রিফাত.. এরা কে..?”
সুমনা কিছুটা হতবাক হয়ে যায় এই জানলো কেমনে। মুহুর্তে বলে,
-“কি বলছো? শুনছি না.. তো,”
সাদ গরম দেখিয়ে বলে,
-“নাটক করছো?”
সুমনা ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,
-“বিশ্বাস না হলে, এখানে বসে দেখো…”
সাদ আবুল বনে যায়, আসলেই কি শোনা যায় না? দেখি তো, ভেবে বলে,
-“ওকে।”
সুমনার জায়গায় বসতেই সুমনা বলে,
-“সায়রা, ফারিহা, সিনহা, ফাহমিদা, লিমা এরা কে…?”
সাদ চমকে যায়, আরে ধরা পড়ে গেছে..,
-“আরে সত্যি তো কিছু শোনা যায় না…”
-“লাইনে আসছো চান্দু..”
সাদ আমতা-আমতা করে বলে,
-“ইয়ে মানে বাবু, চলো, ওইদিকটায় ঘুরে আসি।”
সুমনাও মুচকি হেসে বলে,
-“হ্যাঁ হ্যাঁ চলো বেবি…”
চলবে……
[গল্পের হ্যাপি এন্ডিং হবে, সুতরাং এতো হাইপার হবেন না।]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৩
-
আড়ালে তুমি গল্পের লিংক সাইদা মুন
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৪