Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব -৫৩


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -৫৩

ফাঁকা ক্লাসে জেদ ধরে বসে রয়েছে ইনায়া। একমাত্র নীল ব্যতীত কেউই শান্ত করতে পারবে না তাকে সে ভরসা তে আকবর দেওয়ান আর কামরুল দেওয়ান বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। জেদের বসে কিছু করে না বসে তাদের চাওয়া এতোটুকুতেই সীমাবদ্ধ। নীল অনেকক্ষণ শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকে ইনায়ার দিকে। 

তবে ইনায়ার কোনো নড়াচড়া সাড়া শব্দ না পেয়ে বলল,

-ইনু,বাসায় চল।

ইনায়া কোনো জবাব দেয় না। নীল পুনরায় তুলনামূলক উচ্চস্বরে বলল,

-বাসায় চল!

-যাবো না আমি।

নীল নিজেকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করে ইনায়ার হাত চেপে ধরে। টেনে নিজের কাছে নিয়ে বলল,

-আমার কথা বুঝিসনি? বাসায় যেতে বলেছি। আর নিজে থেকে সব বেশি বুঝে নিস কেন? 

ইনায়া নীলের হাত থেকে জোড় করে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। বলে,

-বেশি বোঝা থেকে যদি সত্যি জানা যায় তবে বেশি বোঝা ই ভালো।

-ইনু তর্ক করিস না,পাখি প্লিজ। এমন করে না পাখি। চল…

-ঐ বাড়িতে আমার লা*শ ঢুকতে পারে। আমার আমি যদি যাই ও সবাইকে আমার ম*রা মুখ দেখতে হ…

কথাটা শেষ না করতেই নীল তার ডান হাত দিয়ে সজোরে থাপ্পড় মারে ইনায়ার বাম গালে। ইনায়া মাথা তুলে হতভম্ব হয়ে তাকায় নীলের দিকে। চোখ ভিজে ওঠে তার। 

কাঁপা গলায় বলল,

-আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন? কার জন্যে তুললেন? আপনার বান্ধবীর জন্য?

-শাট আপ ইনু! একটা কথাও বলবি না আর! কোনো কিছু না জেনে শুনে মন্তব্য কেন করিস? 

-কী না জেনে? ফারিন আপনার বান্ধবী না? ছোট ছিলাম,হয়তো মনে নেই কিছু। কিন্তু…মা বড়মার কাছে কিছু শুনিনি?

-তোকে এখন নতুন করে সব মনে করালো কে?

-কেন? সত্যি বলেছে বলে সবাইকেই মারবেন? যেভাবে আমার গায়ে হাত তুললেন।

নীল ইনায়ার আর কোনো কথাই শোনে না। টেনেহিঁচড়েই ক্লাসরুম থেকে বের করে নচে নামিয়ে আনে। বাইকের চাবি রিসানের হাতে দিয়ে ইনায়াকে টেনে গাড়িতে বসায়। নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ফুল স্পিডে গাড়ি টান দেয়।

.

.

.

.

দেওয়ান বাড়িতে সকলের মুখ থমথমে হয়ে আছে।নীল টেনে ইনায়াকে বাড়ি এনে সবার সামনে দাঁড় করালো। ইনায়ার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়েই চলেছে। গালের একপাশে আঙ্গুলের ছাপ বসে গিয়েছে। আয়েশা আক্তার এগিয়ে যান মেয়ের কাছে। বললেন,

-কী হয়েছে মা? এতো কষ্ট পেতে হয়না তো সব বিষয়ে। 

রুবিনা ইয়াসমিন ও এগিয়ে গেলেন। বললেন,

-তুই যা পছন্দ করিস না তাই করার সাধ্য কারো আছে? বোকা মেয়ে!

ইনায়া চোখের পানি মুছে বলল,

-ফারিন এসেছিলো। নীল ভাই এর বান্ধবি ফারিন…

নীল চটে যায়। উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বলল,

-বারবার করে বলছি ইনু! আমার কোনো বান্ধবী নেই!

-আগে ছিলো না নীল ভাই? পুরান সম্পর্ক কেউ ভুলতে পারে না। আপনারা সব প্লান করে করছেন। আমার ভাইকে মারলেন,এখন …

নীল আরো একবার ইনায়ার শরীরে হাত তুলেও নামিয়ে ফেলল। নিজের মাথা চেপে ধরে বলল,

-আমি পারছি না আর! 

কামরুল দেওয়ান আয়েশা আক্তারের মুখোমুখি দাঁড়ায়। গম্ভীর গলায় বললেন,

-আগেই বলেছিলাম তোমার মেয়েকে মানসিক ডাক্তার দেখাও। দিন দিন ওর মানসিক অবস্থার কী হয়েছে ভেবে দেখেছো একবার? 

আয়েশা আক্তার ক্ষুব্ধ হন।বললেন,

-কেন মানসিক ডাক্তার দেখাবো আমি? কোনোদিন আপনি যত্নশীল ছিলেন আমাদের প্রতি? আমার ছেলেটাকে আপনি নিজের পরিবারের স্বার্থে ঐ অন্ধকার জগতে ঠেলে দিয়েছিলেন। 

-চুপ করো আয়েশা!

-অনেক কথাই গায়ে লাগবে এখন। আমার ছেলেটাকে ওর পনেরো বছর বয়স থেকে আপনি এসব শিখিয়েছেন।

কথাটা কামরুল দেওয়ানকে বললেও গায়ে লাগে আকবর দেওয়ান এর। তার হাত ধরেই ইহানের এপথে যাত্রা শুরু হয়। ছেলেটার প্রবল আগ্রহ দেখে আকবর দেওয়ান তাকে সব শিখিয়েছিলেন। কিন্তু অল্প বয়সে এমন শত্রু হবে ইহানের তা কল্পনাতীত ছিলো আকবর দেওয়ান এর কাছে। আয়েশা আক্তারের মুখে এসব কথা শুনে অপরাধী মনে হয় তার নিজেকে। নীরবে স্থান ত্যাগ করেন আকবর দেওয়ান।

.

.

.

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আয়েশা আক্তার ইনায়ার হাত টেনে ধরে। বললেন,

-আমি বরিশাল যাচ্ছি। তুমি যাবে আমার সাথে?

কামরুল হাসান রেগে যান আয়েশা আক্তারের উপর। তেজ দেখিয়ে বললেন,

-যাও যাও!

আয়েশা আক্তার ইনায়ার দিকে তাকিয়ে পুনরায় একই প্রশ্ন করলো। ইনায়া নীলের দিকে তাকায়। নীল কপালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অতীতের সব কথা মনে করে ইনায়ার জেদ হয়। মায়ের হাত ধরে বলল,

-চলো..

নীল ভেবেছিলো ইনায়া আয়েশা আক্তারকে শান্ত হতে বলবে। সারাজীবন যেমন হয়ে এসেছে। মেয়েরা হলো মায়ের প্রাধান শক্তি,সম্বল। তবে আজ ইনায়ার মুখে এমন কথা শুনে আকস্মিক হকচকিয়ে তাকায় ইনায়ার দিকে। অবশেষে নিজেই আয়েশা আক্তারের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

-শান্ত হও ছোটমা। ঘরে চলো।

-না নীল।তোকে আর ইহানকে আমি আলাদা করে দেখিনি কখনো।কই তুই তো রাজনীতি তে ঢুকিসনি কখনো। আমার ছেলে টাকে তাহলে পরিকল্পনা করে এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে না?

-শান্ত হও। ইনু! ঘরে যা।

-ঠিক আছে,শান্ত হবো! শুধু একটা উত্তর চাই,তোকে রাজনীতি তে না ঢুকিয়ে আমার ছেলেকে কেনো ঢোকানো হয়েছিলো?

নীল চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। আয়েশা আক্তার নিজের ঘরে চলে যান ব্যাগ গোছাতে। আজই তিনি বরিশাল যাবেন। আয়েশা আক্তার যেতেই নীল ইনায়াকে প্রশ্ন করল,

-এসব কথা তোর মাথায় আজ কে ঢুকিয়েছে ইনু?

নীলের কপালে ঘাম জমে আছে। চোখ হালকা লাল হয়ে আছে। নীল পুনরায় বলল,

-চলেই তো যাচ্ছিস! যাওয়ার আগে বলে যা।

ইনায়া নিম্নস্বরে বিরক্ত হয়ে বলল,

-আনান ভাইয়া।

-ঠিক আছে।

.

.

.

.

নীল বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। বাইকে উঠে আনানকে কল করে।

-কোথায় তুই?

-ভার্সিটির ছাদে।

নীল বাইক নিয়ে জোড়ে টান দেয় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। কোনো রকমে ভার্সিটি গেইটে বাইরে রেখে দ্রুত এগিয়ে যায় ছাদের দিকে।

আনান বন্ধুদের সাথে সিগারেট খাচ্ছে। নীল ছাদে উঠতেই এমন দৃশ্য দেখে তাজ্জব বনে না গিয়ে আনানের গালে সজোড়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আনান বসা  অবস্থাতে মুখ থুবড়ে ফ্লোরে পড়ে। ঠোঁটের কোণে কেটে র*ক্ত পড়ছে। আনান উঠে দাঁড়াতে নীল পুনরায় হাত মুঠো করে ঘুষি দেয় মুখে। আনানের বন্ধুরা সবাই পাশে সরে গিয়েছে। আনান ঠোঁটের কোনে জমে থাকা র*ক্ত হাতের তালু দিয়ে মোছে। নীল দ্রুত হাত বাড়িয়ে আনানের শার্টের কলার ধরে বলল,

-ইনুকে কী উল্টা পাল্টা কথা বলেছিস?

আনান মাথা নিচু করে হাঁসে। নীল আবার বলল,

-বল আনান! কেন বলেছিস?

-ইনুকে আমি ভালোবাসি। তুমি ওর থেকে সরে যাও।

নীল সজোড়ে ধাক্কা দেয় আনানকে।নিজেকে কোনো রকমে নিয়ন্ত্রণ করে দাঁড়ালো শক্ত হয়ে। বলল,

-ও তোমায় অপছন্দ করে। ওর থেকে সরে আসে ভাইয়া।

-ইনু নীলকে পছন্দ করল আর না করল তাতে নীলের কিছু যায় আসে না। যে আমার সে আমারই। ও আমার বউ। এক আল্লাহ ব্যতীত এই দুনিয়ায় কারো ক্ষমতা নাই যে আমার থেকে ওকে আলাদা করবে! 

.

.

.

আয়েশা আক্তার বাসে বসে রয়েছেন ইনায়াকে পাশে নিয়ে। বাস ছেড়েছে দশ মিনিট হলো। ইনায়ার পাশাপাশি সিটে দুজন ছেলে। বিভিন্ন ধরনের ইশারা,শব্দ করতে থাকে। এদিকে বাসে উঠতে না পারে মেয়েটাও মুখ বুজে বসে রয়েছে। মানসিক কষ্ট শারীরিক কষ্টকে ভুলিয়ে দেয়। পাশে থাকা ছেলেটা নানা ধরনের অঙ্গ ভঙ্গি করে বলল,

-আপু কি বিবাহিত?

আয়েশা আক্তার রাগী চোখে তাকায় ছেলেটার দিকে। তবে ইনায়া তাকিয়েও দেখে না সেদিকে। চোখ বুজে হেলান দিয়ে শুয়ে মনে মনে বলল,

-নীল ভাই জানতে পারলে তোদের চাটনি বানিয়ে রোদে শুকিয়ে রাখতো।

ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ে বাসের কড়া ব্রেকে। ইনায়া উপর হয়ে পড়তে পড়তে নিজেকে ঠেকায়। সিটের গন্ডি থেকে মাথা বের করে একটু উঁকি দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে নীল বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে। ইনায়া বুকে হাত রেখে আয়েশা আক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল,

-আম্মা! নীল ভাই…

আয়েশা আক্তার উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে নীল বাসে উঠে আসে। ইনায়ার হাত চেপে বলল,

-বাসায় চল।

সাথে আয়েশা আক্তারকে বলল,

-আপনি একা গেলে যান বরিশালে। ইনায়া এই বাসে থাকলে বাস আগাতে পারবে না। ওকে আমার সাথে যেতে বলুন তাই।

-কী করছিস নীল! ও যাবে তো আমার সাথে।

-ও যাবে না ছোট মা! 

আয়েশা আক্তার হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকেন নীলের দিকে। মনে মনে ভাবেন, কীসের ভিত্তিতে তে এতো অধিকার দেখাচ্ছে নীল? 

নীল ইনায়াকে টেনে নামতে নামতে বলল,

-কখন বলেছিলেন আমি কেন রাজনীতি তে যুক্ত হয়নি,আর ইহান কেন হয়েছিলো? দুজনেরই ইচ্ছা ছিলো এটা সত্য,বাড়িতেও সবাই সাপোর্ট করতে এটাও সত্য।তবে আমি পিছিয়ে এসেছিলাম,এই মেয়েটার চোখে মুখে রাজনীতি নিয়ে বিরক্ত,রাগ,অভিমান দেখে। যা আপনিও জানেন। আর কোনো প্রশ্ন আছে?

আয়েশা আক্তারও ব্যাগ হাতে নিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ে। নীল ইনায়ার হাতে হেলমেট দিয়ে আয়েশা আক্তারকে বলল,

-ড্রাইভার অন দ্যা ওয়ে। আসছে। অপেক্ষা করুন। আর সুন্দর মেয়েকে নিয়ে একা একা বেরিয়ে পড়েন কেন ছোটমা? বাড়ির সবার তো চিন্তায় কাজ করা হারাম হয়ে যায়।

-বাসের দুটো ছেলে আসলেই খুব বেয়াদব ছিলো। এইজন্যেই আরো নেমে পড়লাম। আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে কি না তা দিয়ে ওদের কী! 

নীল ইনায়ার দিকে তাকিয়ে আয়েশা আক্তারকে বলল,

-বলেননি ও বিবাহিত?

-কী?

-বিবাহিত বললে কেউ বিরক্ত করবে না।

.

.

.

.

ইনায়া নীলের কাঁধে হাত দিবে না দিবে না করতে করতেও হাত রেখেছে। তবে মুখে কোনো কথা নেই। নীল লুকিং গ্লাসটা একটু ঘুরিয়ে ইনায়াকে দেখলো। বলল,

-খুব সাহস তো তোর ইনু! অবাকই হয়েছি আমি।

ইনায়া কোনো জবাব দেয় না। নীল পুনরায় বলল,

-সমস্যা কী? আমি কিছু বলছি না? একটা মিথ্যা বিষয় কল্পনা করে এতো কাহিনী করলি। আনান কল দিয়েছিলো?

-হুম

-কী বললো?

-যা বলতে বলেছিলেন…

-মানে কী? আমি কী বলতে বলব?

-কিছু না। বলল, ফারিনের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই। ভাইয়া আন্দাজে আমাকে ভুল তথ্য দিয়েছিলো। আপনি কোনো ভাবেই রাজনীতির সাথে যুক্ত না।

-দেখেছিস! বলেছিলাম!

-আর কত নাটক করবেন আপনি? আপনাকে আমি ঘৃণা ছাড়া আর করি না এখন।

-ভালোবাসিস না?

-না!

-ওকে ফাইন! বাসতে হবে না।

ইনায়া কপাল কুঁচকে তাকায় নীলের দিকে। মিররে ইনায়াকে দেখে নীল আবার বলল,

-তোর ভালোবাসা দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। যায় আসে তোর থাকা না থাকা দিয়ে। বুঝলি আমার মায়াবতী?

(চলবে……)

#Running 

#episode:53

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:

TAGS:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply