#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -৫২
আজ বাড়ি ফিরতে ফিরতে নীলের রাত নয়টা বেজে গিয়েছে। মন মেজাজ কিছুই ভালো নেই। পরনের সাদা শার্টে ধুলাবালির দাগ। বাড়িতে কোনো রকমে ঢুকে কারো সাথে কোনো কথা না বলেই নিজের ঘরে যায় নীল। গায়ের থেকে শার্ট খুলে ছুড়ে ফেলে ফ্লোরের উপরে। এসি অন করে লাউঞ্জ সোফায় পা দুটো ছড়িয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে কিছুক্ষণ। সারাদিন ভার্সিটিতে থেকে,বিকেলে ফ্যাক্টরি তে সব হিসাব নিকাশ করেছে। আগামীকাল নির্বাচন, ফ্যাক্টরি থেকে সোজা অফিসে গিয়েছে। এক দফায় ঝামেলা শেষ করে এখন এখানে বসে। নীল সারাদিনের কাজগুলো এক এক করে মনে করে নিল। শরীর ঘেমে ভিজে আছে,একটু ঠাণ্ডা হয়ে লম্বা শাওয়ার নিবে। এরই মাঝে ইনায়া তিরিং বিড়িং করতে করতে ঘরে প্রবেশ করে।
নীলকে খালি গায়ে বসে থাকতে দেখে দ্রুত উল্টো দিকে ঘুরে বলল,
-নীল ভাই!
নীল মাথা উঁচু করে। ঘাড় হালকা কাত করে ।
বলল,
-কী হয়েছে?
-খাবেন না?
-হু
ইনায়া চুপ করে থাকে। নীল দুটো হাত লাউঞ্জের উপরে রেখে ইনায়াকে ডাকলো,
-ইনু!
নীলের মুখে অদ্ভুত কন্ঠে ডাক শুনে চমকে যায় ইনায়া।
লাজে রাঙা মুখ দিয়ে বলল,
-হ্যাঁ..?
-তাকা আমার দিকে
ইনায়া চোখ বুজে নীলের দিকে ঘুরে টিপটিপ করে চোখ মেলে তাকায়। নীল ডান হাত বাড়িয়ে তর্জনী মধ্যমা আঙ্গুল এক করে ইশারায় ডেকে বলল,
-এদিকে আয়।
ইনায়া চোখ বড় করে নীলের দিকে তাকালো।
আমতা আমতা করে বলল,
-কে.. কেন?
নীল তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ ইনায়ার চোখের দিকে। ইনায়াকে অপ্রস্তুত হতে দেখে পাশ থেকে একটা ধূসর রঙের টি-শার্ট নিয়ে গায়ে দেয়।
পুনরায় ইনায়াকে বলল,
-এদিকে আসতে বলেছি।
ইনায়া নীলের কাছে এসে দাঁড়ায়। নরম গলায় বলল,
-কী হয়েছে নীল ভাই?
-ভাই শব্দ টা কানে লাগে ইনু। মাথাটা ব্যাথা করছে। একটু টিপে দে তো।
ইনায়া কাঁপা হাত বাড়িয়ে দেয় নীলের দিকে। নরম হাত আলতো করে মাথায় রেখে বেশ কিছুক্ষণ মাসাজ করে। নীল চোখ বুজে রাখে কয়েক মিনিট। ইনায়া একধ্যানে কাজ করছে।
কিছুক্ষণ পরে নীল চোখ খুলে বলল,
-হয়েছে,আর দিতে হবে না।
ইনায়া হাত সরিয়ে নেয়। নীল টাওয়েল নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-হাত এতো নরম কেন তোমার নীলা?
ইনায়া থমকে যায়।
বিড়বিড় করে বলল,
-এ আবার কেমন প্রশ্ন!
নীল পুনরায় বলল,
-এতো নরম হাত যে তোর,ভেবেছিলাম তোকে দিয়ে থাই ম্যাসাজ করাবো। কিন্তু,যা অবস্থা দেখলাম,তাতে আমার পোষাবে নারে।
-থাই ম্যাসাজ কী?
-যা,খেয়ে নে।
-বলুন না নীল ভাই…আমি শিখে নিব…
-এতো শিখতে হবে না আপনাকে ম্যাম। গিয়ে খেয়ে নিন।
-আপনি খাবেন না?
-দেড়ি হবে একটু….
-আচ্ছা আমি অপেক্ষা করছি।
নীল ভ্রু উঁচু করে মুচকি হেঁসে ওয়াশরুমে যায়।
.
.
.
.
বাড়ির সকলের খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। এদিকে নীল আর ইনায়া সবে মাত্র খেতে বসেছে। আনান হাত ধুতে ধুতে ইনায়াকে বলল,
-ইনু,তোর সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
ইনায়ার কানে কথাটা যাওয়ার আগেই নীল প্রতিক্রিয়া দেখায়,
-কী কথা?
-ভার্সিটির বিষয়ে।
-এখনি বলে যা।
-এখন বলা গেলে বলতাম। পরে বলব যখন বলেছি,তখন পরেই বলব।
আনান এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে চলে যায়। ইনায়া উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। তবে নীলের চোখে মুখে আক্রোশ।
ইনায়াকে ডেকে বলল,
-না খেয়ে কী দেখছিস? খেয়ে পড়তে বসবি। কাল আমি ক্লাসে পরীক্ষা নিব।
ইনায়া অবাক হয়ে তাকায় নীলের দিকে।
বলে,
-কীসের পরীক্ষা? কী পরীক্ষা? কবে পরীক্ষা? কেন পরীক্ষা?
-ইচ্ছা হলো তাই নিব। সারপ্রাইজ টেস্ট। চুপচাপ গিয়ে পড়তে বস ঘরের দরজা বন্ধ করে। এক সেকেন্ডের জন্যে বের হওয়া দেখলে তোর খবর আছে।
শিমু জাহান চোখ বড় করে তাকায় নীলের দিকে।বলল,
-ওর ইচ্ছে নীল! এভাবে কেন বলবে তুমি?
তবে আয়েশা আক্তার নীলকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করে বলল,
-ঠিকই আছে। পরীক্ষা থাকলে এভাবেই পড়তে হবে। খুব ফাঁকিবাজ ও।
ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-বড় ভাই যা বললো তাই যেন করা হয়।
তবে নীল কথা মাঝেই বলল,
-ওর ক্লাস লেকচারার হিসেবে বললাম ছোটমা।আমি কোনোকালেই বড় ভাই এর দায়িত্ব পালন করিনি।
.
.
.
.
ভার্সিটি আসা মাত্র আনান ইনায়ার সাথে আলাদা করে কথা বলার জন্য সুযোগ খুঁজছে।তবে নীলের জন্য তা আর হয়ে উঠছে না। এদিকে আজ সকাল আটটা থেকে নির্বাচন। সারপ্রাইজ টেস্ট নেওয়া শেষ করে নীল ভার্সিটি থেকে রওনা হয়। প্রার্থী হিসেবে আরান এখনো ভোট কেন্দ্রে যায়নি। নীলের সাথেই সে যাবে।
নীল আরানকে সাথে করে ভোট কেন্দ্রে যেতেই দেখে কেন্দ্রের বাইরে চৌধুরী শাজাহান রনি দাঁড়িয়ে। পাশে মেয়ে ফারিন। প্রেস মিডিয়া কাভার করে আরান আর নীলের বুকে জড়িয়ে নিলেন শাজাহান চৌধুরী। নীলের কানে ফিসফিস করে বললেন,
-ইনান, সুন্দর রকমের একটা কামব্যাক দিয়েছো।শক্ত ছেলে তুমি। I like it my boy!
নীল দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় শাজাহান চৌধুরীর দিকে। বলল,
-দেওয়ান নীল গভীর জলের মাছ। ইহান দেওয়ানের মতো বড়শির টোপ খায় না চৌধুরী কাকা।
-তবে যাই বলো,ছেলেটা আমার কথাতেই আজ সফল।
নীল শাজাহান রনির কলার চেপে ধরতে গিয়েও হাত নামিয়ে ফেলে।
হেঁসে বলে,
-আমাকে উত্তেজিত করবেন না কাকা,আমি এতো কাঁচা খেলোয়াড় না যে উত্তেজনা এখনই দেখিয়ে দেবো। ভোট টা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করেন শুধু।
খুব হেঁসে আনন্দে কথা বলে দুই বিপক্ষ দল একে অপরের সাথে।
.
.
.
আকবর দেওয়ান ভোট দিতে এসেছেন। সাথে কামরুল দেওয়ান ও। চৌধুরী শাজাহান রনি এগিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় তাদের দিকে। আকবর দেওয়ান সেদিকে তাকিয়ে সৌজন্যে হাঁসি দিলেও কামরুল দেওয়ান তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ভেতরে চলে যান। নীল বাবা কাকাদের দেখে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যায়।সাথে যায় আরানও। সে সময়ে পেছন থেকে চৌধুরী শাজাহান রনি পুনরায় তাদের ডাকে।
তবে নীল আরানকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-কোনো জবাব দিস না আরান, এমন ভাব কর,যেন ডাক শুনিসনি।
যেমন বলা তেমন কাজ। শাজাহান চৌধুরী তাদের পেছন পেছন যায়। কেন্দ্রের থেকে একটু আড়াল হলে নীল দাঁড়িয়ে পড়ে। পেছন ঘুরে বলল,
-কী হয়েছে কাকা?
-ভাইটার মতো একটু চালাক হও ইনান। যদিও শেষ মেষ তাকে বোকাই বলা চলে। মেয়েবাজ ধরনের ছেলে তো..
কথা টা বলতেই তার গালে নীলের শক্ত মুঠো করা হাত আছড়ে পড়ল। ডান চোখে লেগেছে। হাতের আংটির পাথরের অংশ চোখের ভেতরে চলে যায়। র*ক্তের ছাপ লেগে আসে নীলের হাতে। নীল হাত সরিয়ে এনে আরানের থেকে পানির বোতল নিয়ে হাত ধুয়ে নেয়। দুজন ছেলে নীলকে আরাল করে দাঁড়িয়ে বলল,
-আপনি চলে যান ভাই। এই ঝামেলা আমরা ম্যানেজ করে নেব।
আরান অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,
-তোমরা কী করবে? এই লোক এখন কেস করলে?
নীল শাজাহান রনির দিকে ঝুঁকে পড়ে। বলে,
-কী কাকা! এতো সাহস আছে? বাম চোখ টা খুলে রাখুন।এই যে দুটো ছেলে কে দেখছেন না? তাদের একজন নিজেই অপরাধ স্বীকার করে বলবে,সে আপনাকে মেরেছে।আর আরেকজন কী বলবে জানেন?
নীল তাকায় অপর ছেলেটার দিকে। বলল,
-কী বলবি একটু বলে কাকাকে শুনিয়ে দে তো ভাইয়া।
ছেলেটা হাঁসি হাঁসি মুখটা নাটক করার খাতিরে ভয়ার্ত চাহনি বানিয়ে বলল,
-হ্যাঁ স্যার,আমি নিজের চোখে দেখেছি,ঐ ছেলে ঘুঁষি দিয়ে মারছে।
নীল বাহবা দিয়ে বলল,
-ভেরি গুড।আমি আসছি তাহলে। তোমাদের ভাবি অপেক্ষা করছে।
শাজাহান চৌধুরী মুখ থেকে র*ক্ত মুছে নীলকে পেছন থেকে ডাক দিলো। বলল,
-ইনান…
-নীল,কাকা।
-চাচাতো ভাই এর জন্যে জীবন বাজি রাখছিস যে। আপন হলে কী করতি তাই ভাবলাম…
-জীবন বাজী? তোর মতো নর্দমার কীটের কাছে? তোর থেকে ক্ষমতা বেশি আমার! এই মুখোশের আরালের রূপ জানলে অবশ্য বলতি না । আর চাচাতো ভাই কী? ও আমার ভাই! আমার আপন,আমার কাছের মানুষ ও। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,আমার বেস্ট ভাই,আমার বেস্ট সাপোর্টার,আমার ক্রাইম পার্টনার! আমার সব! চাচাতো শব্দ টা ব্যবহার করে ভুল করিস না।
এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে নীল গাড়িতে এসে বসে।
.
.
.
ভার্সিটির গেইটে ঢুকতেই ইনায়ার সম্মুখীন হয় নীল। গাড়ি থেকে নেমে ইনায়ার এলোমেলো গালে হাত রেখে বলল,
-কী হয়েছে ইনু? এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ক্লাস হচ্ছে না?
ইনায়া পলকহীন ভাবে তাকায় নীলের দিকে। বলে,
-কোথায় ছিলেন আপনি নীল ভাই?
-আরানের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম…
-শুধুই আরান?
-কী হয়েছে তোর?
-ফারিনের সাথে দেখা করেননি?
নীল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে ইনায়ার দিকে। বলল,
-সে কে ইনু? ভেতরে চল তো। কে কী বলেছে শুনি।
ইনায়া ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে নীলের থেকে। জোড়ে চিৎকার করে বলল,
-ধরবেন না আমাকে! ছোঁবেন না! আপনাকে আমি বলেছিলাম…
নীল বুকে টেনে নেয় ইনায়াকে। নীলের বুকে মাথা ঠেকাতেই ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয় ইনায়া।
বলল,
-আপনাকে আমি বলেছিলাম নীল ভাই..।ওদের সাথে কথা বলতে মানা করেছিলাম। এই রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম আমি নীল ভাই। কেন শুনলেন না আপনি?
আবার নিজেকে নীলের থেকে দূরে সরিয়ে নেয় ইনায়া। বলল,
-আমার ভাইকে নিয়ে হয়নি ওদের? এখন আপনাকেও চায়!?
-ইনু শান্ত হ…
-হবো না শান্ত আমি! হবো না! আপনি এখনো এসব রাজনীতি করেন,ফারিনের সাথেও কথা বলেন আপনি। আপনি আমার কথা রাখেননি। কেউ আমার কথা রাখেনি।
ইনায়া নিজের চোখ মোছে। কান্না থামিয়ে বলে,
-ঐ বাড়িতে আমি যাবো না আর।
ইনায়া জোড়পূর্বক হাত ছাড়িয়ে ক্লাসের দিকে যায়।
আকবর দেওয়ান ছিলেন বাংলাদেশের একজন নামকরা রাজনৈতিক নেতা। শুধু ইনায়ার জন্য আজ সবাই রাজনীতি থেকে বিচ্যুত। নীল কল করে তার বাবা আকবর দেওয়ান কে। বলল,
-ইনু ফারিনের কথা শুনেছে…আর এখন আমায় ভুল বুঝেছে। আমি ওকে কন্ট্রোল করতে পারছি না..ওদের জন্যে আমার ইনুর কিছু হলে সব জ্বা*লিয়ে পাতালপুরী বানিয়ে দিবো। কসম করে বলতেছি,একটাকেও ছারবো না! বলে আসবেন কথাটা।
কথাটা বলেই নীল কল কেটে দেয়। একটু ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতেই সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
(চলবে……)
#Running
#episode:52
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -২৮
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩০