#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -৫১
এখন বাজে রাত বারোটা। আরান নীলকে কল করে ডান হাত দিয়ে ফোন কানে চেপে রেখেছে। বাম হাত দিয়ে ঝেড়ে ঝেড়ে এপাশ ওপাশ করে মশা তাড়াতে তাড়াতে নীলকে বলল,
-শা*লা তোর জন্য আমার বউ আমাকে ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না। পাসওয়ার্ড টার মানে বল শা*লা!
নীল হায় তুলতে তুলতে জবাব দিলো,
-তুই বলদ?
-আরান খান ,যে ভবিষ্যত এমপি! তাকে তুই বলদ বললি?
-একটা কলের মাধ্যমে আপনাকে এমপি থেকে জেএম বানিয়ে দিতে পারবো।
-জে এম কী?
-জোকার অব পার্লামেন্ট।
-ধুর্ নীল! পাসওয়ার্ড এর মানে টা বল ভাই। মশার কামড় খেতে খেতে তোর জোকস্ শুনতে ভালো লাগছে না।
-আচ্ছা,স্বীকার করে নে।
-হ্যাঁ ভাই আমি গাঁধা,গরু,ছাগল, ভেড়া,মহিষ,মশা,মাছি,বাঘ, সিংহ..
-হাতি,গন্ডার,শু..
-থাম। সব আমি। বল এখন মানে টা পাসওয়ার্ডের।
নীল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বড়সড় লেকচার দেওয়ার জন্য।
বলল,
-প্রথম আর তৃতীয় অঙ্ক দিয়ে তারিখ বুঝিয়েছে আমার বউ। আর দ্বিতীয়, চতুর্থ অঙ্ক গুলো দিয়ে বুঝিয়েছে মাস।এবার হিসেব করে বল তো কী হলো।
আরান একটু সময় নিয়ে ভেবে বলল,
-১ সেপ্টেম্বর আর ৬ জুন।মানে তোর বউ,আর তোর বার্থডে ডেট!
-হ্যাঁ। এখন পরের সংখ্যাতে আসি। তো আমার বউ যখন তারিখ সব ঠিকঠাক দিলো তারপর তার মনে হলো সাল দেওয়া উচিত। কিন্তু সাল লিখতে গেলে তো পুরোটা সম্ভব হতো না। তখন সে তার ছোট্ট মাথা থেকে বুদ্ধি বের করলো আমার আর তার বয়সের পার্থক্য বের করবে।
-মানে দশ বছর?
-yesss
-ওকে বাই।
-কাজ শেষ খোদা হাফেজ?
-মশার কামড় থেকে আপাতত বাঁচি,পরে বাকিটা দেখছি। রাখি রাখি।
আরান কল কেটে দেয়।
.
.
.
চৌধুরী শাজাহান রনিকে গতকাল নীল ভরা সভায় অপমান করাতে তা ভীষন ভাবে গাঁয়ে লেগেছে মেয়ে ফারিন চৌধুরীর। সকাল সকাল ভার্সিটিতে এসে হাজির। সোজা যায় নীলের ক্লাস রুমে। ভরা ক্লাসেই নীলকে উদ্দেশ্য করে ডাক দেয়,
-ইনান!
নীল বই নামিয়ে দরজার দিকে তাকায়। শান্ত চোখে তাকিয়ে ইশারায় বোঝালো,
-কিছু হয়েছে?
-বাইরে এসো,কথা আছে।
নীল বই নামিয়ে বেরিয়ে আসে। এদিকে ইনায়া হা করে তাকিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করে।
শর্মী ইনায়ার হাতের উপর হাত রেখে বলল,
-কে রে এই মহিলা? কত্তো সুন্দর, স্মার্ট। কী সুন্দর করে শাড়ি ক্যারি করে দেখেছিস?
শর্মীর মুখে মেয়েটার এতো প্রশংসা শুনে ইনায়া তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।
মনে মনে বলল,
-এই মেয়ে কি সেই মেয়ে? নীল ভাই যে বলেছিলো ভার্সিটিতে একসাথে জয়েন করবে।
শর্মীর দিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে বলল,
-এ আমাদের নতুন ম্যাম না তো?
-তুই ই ভালো বলতে পারবি।
ইনায়া সময় নষ্ট না করে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নীলকে খুঁজতে দিশেহারা লাগছে এখন। এদিক ওদিক করে ইনায়া ঠিক করে অফিস রুমে যাবে।
লিফটে উঠে বিড়বিড় করে বলল,
-বড় বাবার কাছে শুনবো,নতুন কোনো প্রফেসর জয়েন করেছে কিনা। ঐ মহিলা হলে,আমি তাকে কিছুতেই রাখতে দিবো না।
ইনায়া অফিস রুমের দরজা খুলতেই দেখে ফারিন টেবিলে হাত রেখে রাগান্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নীল পাশে হাত ভাঁজ করে তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। ইনায়াকে দেখতেই নীল তার দিকে এগিয়ে যায়।
শীতল কণ্ঠে বলল,
-এখানে এসেছিস কেন?
-কী হয়েছে নীল ভাই?
-কী হবে? কিছুই হয়নি। ক্লাসে যা।
ফারিন ইনায়াকে থামিয়ে বলল,
-কেন ! ও যাবে কেন? ও থাকুক।
নীল রেগে তাকায় ফারিনের দিকে। যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে ।
রেগে বলল,
-একটা বেশি কথা বললে রাস্তার মানুষের দিয়ে থাপ্পড় দেওয়াবো। আর মেয়েদের শরীরে আমি স্পর্শ করলে এখন এই হাতের ছাপ তোমার গালে বসতো।
ইনায়ার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলল,
-ইনু তুই ক্লাসে যা।
ইনায়া তবুও দাঁড়িয়ে থাকলে নীল আনানের দিকে তাকিয়ে আদেশ করে বলে,
-ওকে ক্লাসে নিয়ে যা আনান।
আনান বেরিয়ে যায় ইনায়াকে নিয়ে। ইনায়ার নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও আনানের জবাব একটা ই থাকে,
-আমি জানি না কিছু।
ইনায়া হতাশ হয়। অবশেষে ইনায়া খুব জোড় দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-শুধু একটা জিনিস বলো ভাইয়া.. উনি কি প্রফেসর হিসেবে জয়েন করবে?
-না না!
-ওহ্ বাঁচলাম! আলহামদুলিল্লাহ
আনান আড় চোখে তাকায় ইনায়ার দিকে। কি ভয়ানক মায়াবী লাগছে তাকে।
.
.
.
ইনায়া কোনো রকমে ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। তবে নীল আজ শুরু থেকেই ইনায়াকে নজরে রেখেছিলো। যেহেতু অফিস রুম থেকে ইনায়াকে সোজা ক্লাসে যেতে বলেছিলো কিছু না জানিয়েই। ইনায়ার বের হওয়া দেখেই নীল তাকে পেছন থেকে গিয়ে হাত টেনে ধরে।
শক্ত কন্ঠে বলল,
-কোথায় যাচ্ছিস?
-বাসায়।
-এখনি কেন? আমার জন্যে অপেক্ষা করবি না?
ইনায়া নিজের হাত নীলের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,
-আমার ভালো লাগছে না নীল ভাই..হাত ছাড়ুন।
-হাসব্যান্ড কে ভাই বলতে ভালো লাগে?
-আপনি তো আমার হাসব্যান্ড না। আগে হবেন,তারপর এমন প্রশ্ন করবেন।
নীল হাত ছেড়ে দেয় ইনায়ার। আকস্মিক হাত ছাড়ায় ইনায়াও নিজের তাল সামলাতে পারে না। তবে বুঝতে পারে তার বলা কথা তে নীল কষ্ট পেয়েছে। অনুতপ্ত হয়ে নীল কে কিছু বলতে যাবে,তার আগেই নীল পেছন ঘুরে চলে যায়। ইনায়া দাঁড়িয়ে থাকে একই জায়গায়।
বিড়বিড় করে বলে,
-রাগ করার কথা কার! আর রাগ করে কে!
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ইনায়া নিজের জায়গা থেকে নড়ে না। নীলকে দেখে বলল,
-এমন কাউকে তো চাইনি নীল ভাই,যে রাগ না ভাঙিয়ে উল্টো নিজে রাগ দেখাবে….
ইনায়া দু হাত মেলে দেয় বৃষ্টি তে। চোখ বুজে মাথা উঁচু করে রাখে। তবে বৃষ্টির পানি ইনায়ার মুখে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। নীল ইনায়াকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজের পরনের কোট খুলে ইনায়ার মাথার উপরে ধরে রেখেছে। এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তার চোখে চোখ রেখে বলল,
-মাথা ব্যাথা করলে খুব ভালো লাগে?
ইনায়া জবাব দেয় না। নীল পুনরায় বলল,
-ভেতরে চলুন ম্যাম। এতো রাগ করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমার মায়াবতী বউকে রাগী চেহারাতে মানায় না।
ইনায়া ফিক করে হেসে দেয় নীলের কথা শুনে।
বলল,
-ভালোই তো যত্নশীল আপনি। আগে এতো আড়ালে আড়ালে থাকতেন কেন?
-এখন থাকি না?
-নাহ্! এখন তো সব জানিই।
-Are you sure mam?
ইনায়া সন্দেহের চোখে তাকায় নীলের দিকে। বলে,
-আড়ালে কিছু করবেন না নীল ভাই। আমার ভালো লাগে না…..
নীল প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। বলে,
-ভিজে যাচ্ছিস তুই ইনু। জ্বর আসলে তোকে শেষ করে ফেলবো একদমম্। দ্রুত চল।
.
.
.
আনান টেবিলে কো*কেন নিয়ে বসেছে। ছোট সাদা পলিথিন প্যাকেট খুলে পাওডার টেবিলে ঢেলে সেদিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। কো*কেন নেওয়ার জন্য আনানের বন্ধুরাই তাকে বলেছে। পকেট থেকে চকচকা একটা ব্লেড বের করে কো*কেনের দিকে তাকিয়ে হাতের শিরার উপরে ধরলো।
শিরার উপরে সূক্ষ্ম একটা দাগ ফেলে বলল,
-এই বরাবর কাটলেই সব শেষ! ইনু কি কান্না করবে আমার জন্যে? এটা দেখার জন্য হলেও আমার ম*রা উচিত।
আনান কো*কেনের ঘ্রান নেয়। বলে,
-মাতাল অবস্থা তে মানুষ সব করতে পারে।ব্যাথাও লাগে না… কিন্তু ইনু কান্না করলে আমি দেখতে পাবো?
আনান শিরার উপর থেকে ব্লেড সরায়।
-নাহ্ ম*রলে হবে না।
ব্লেড দিয়ে সাদা পাওডার টেবিলে সুন্দর করে ছড়িয়ে দেয়। এরপর ব্লেড দিয়ে চেপে চেপে কয়েকটি লাইনে তা ভাগ করে। প্যান্টের পকেট থেকে হাজার টাকার একটা নোট বের করে তা গোল করে মুড়িয়ে টেবিলের উপর একটু ঝুঁকে যায়। এক নাক বন্ধ করে মুড়ানো কাগজ দিয়ে অপর নাক দিয়ে শ্বাস টেনে নেয়। কয়েক সেকেন্ডের জন্য সব ঝাপসা হয়ে আসে আনানের।মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে বসতেও মনে হতে লাগে আসে পাশে সব ঘুরছে। মাতাল কন্ঠে বলল,
-আহ্! বাড়ি কি শূন্যে ভেসে গেলো?
আনান আরেক নাক বন্ধ করেও পূর্বের পদ্ধতিতে অপর নাক দিয়ে শ্বাস নেয়। অতঃপর হাত পা ছড়িয়ে চেয়ারে বসে থাকে কিছুক্ষণ। অতঃপর নাক ঝেড়ে সব টেবিল পরিষ্কার করে আনান।
এতোক্ষণ ধরে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে,
-আগামীকালই ইনুকে ফারিনের বিষয়ে বলবো। বলবো ও ই ইহান ভাই এর সেই ফারিন।
(চলবে……)
#Running
#episode:51
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৭
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৫
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৭