অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (০৬)
সোফিয়া_সাফা
আবেশের চিৎকারে চারপাশ টা ভারী হয়ে উঠল।
“ফুল তুই এমনটা করিস না। আমি তোকে ভালোবাসি। তুই অন্য কাউকে কবুল বলতে পারিস না। আমি তোকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো। তোকে অনেক ভালো রাখব। দরজা টা খুলে দে লক্ষ্মীটি।”
ফুলের গাল বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। এরই মাঝে হুট করে টেবিলের উপরে থাকা কয়েকটা পেপার হাতে নিল উদ্যান। কালক্ষেপণ না করে ছিড়ে ফেলতে উদ্যত হতেই মাহবুবা সুলতানা থামিয়ে দিলেন। উদ্যান জ্বলন্ত চোখে মাহবুবা সুলতানার দিকে তাকাতেই মাহবুবা সুলতানা ফুলের উদ্দেশ্যে বললেন,
“কবুল বলছিস না কেন?”
ফুল অশ্রুসিক্ত নয়নে একবার মামীর দিকে তাকাল তারপর রেহানা বেগমের পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বুক ভরে শ্বাস নিল। নিজেকে ধাতস্থ করে উচ্চারণ করল,
“কবুল…
কাজী সাহেব দ্বিতীয় বারের মতো বললেন,
“তেহজিব উদ্যান খানজাদাকে স্বামী হিসেবে স্বীকার করিয়া থাকিলে বলুন কবুল।”
“কবুল…
কাজী সাহেব শেষ বারের মতো একই কথা বললেন, ফুল এবারও শান্তকন্ঠে
“কবুল…” বলে ফেলল। তারপর রেজিস্ট্রি পেপারেও কম্পিত হস্তে সাইন করে স্বেচ্ছায় উদ্যানের অধীনস্থ হয়ে গেল।
কাজী সাহেব এবার উদ্যানের উদ্দেশ্যে বললেন,
“প্রিমরোজ আমহৃত ফুলকে আনুমানিক ১৮ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি প্রদান করিয়া স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করিয়া থাকিলে বলুন কবুল।”
উক্ত বাক্যটি শুনে সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। তার মানে উদ্যান এই বাড়ির অর্ধেকটা আর বাকি সবকিছুই মোহরানা হিসেবে ফুলের নামে দিয়েছে আবেশের নামে দেয়নি? ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। এরইমাঝে উদ্যান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,
“কবুল… কবুল… কবুল।”
ফুলের ভাবনায় ছেদ পড়তেই ফুল বলে উঠল,
“আমি বলেছিলাম আবেশ ভাইকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে আপনি তাকে না দিয়ে আমাকে দিলেন কেন?”
বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করতে করতে উদ্যান বলল,
“ওর অধিকার না থাকা সত্ত্বেও আমি ওর নামেই দেবো বলেছিলাম। কিন্তু ম্যারিজ রেজিস্ট্রার বললেন বিয়ের রীতি অনুযায়ী তোকে মোহরানা দিতে হবে। মোহরানা না দিলে নাকি বিয়ে হয়না। তাই আমি আবেশকে না দিয়ে মোহরানা রূপে এসব তোকে দিয়েছি।”
উদ্যানের কথার মানে ফুল বুঝতে পারলো না। উদ্যান বারবার আবেশকে এভাবে তুচ্ছ করে বলে কেন? আর অধিকার নেই মানে কি? মাহবুবা সুলতানা কিছু বলতে গেলে রেহানা বেগমের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলেন,
“ফুলের নামে দিয়েছে এটাই অনেক। বেশি বাড়াবাড়ি করতে যেওনা।”
রেহানা বেগমের কথাটা মাহবুবা সুলতানার কাছে ভালো লাগলো না।
“ফুলের নামে দিয়ে আমাদের ভালো কি করলো? ফুলকে তো উদ্যান বিয়ে করে নিয়েছে। ঘুরেফিরে সব তো ওরই থেকে গেল।”
রেহানা বেগম চমকে উঠলেন,
“তুমি একটু বেশিই আশা করে ফেলছোনা ভাবী? ভাইয়ার বউ হিসেবে তুমি অল্রেডি চট্টগ্রামে থাকা জমির অংশীদার হয়েছো। সেখান থেকে তো মাসে মাসে বেশ ভালো অংকের টাকা ভাড়া হিসেবে পাও। তার উপর উদ্যান এতবছর যাবত পারিবারিক ব্যাবসার বিষয়েও নাক গলায়নি। ভবিষ্যতেও গলাবে বলে মনে হয়না। আমি তোমাদের জন্য আমার মেয়ের এতোবড় সর্বনাশ মেনে নিলাম আর তুমি এটুকু মেনে নিতে পারছোনা?”
মাহবুবা সুলতানা চুপ হয়ে গেলেন। তবে শেষের কথাটুকুর সাথে সে একমত হতে পারলেন না। শুধুমাত্র তার আর আবেশের স্বার্থে রেহানা বেগম মেয়েকে বিসর্জন দেয়ার মহিলা নন। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ অবশ্যই আছে কিন্তু কি সেই কারণ?
বিয়ে হয়ে যেতেই উদ্যান বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।
“ম্যানেজার আংকেল আপনি ব্যাবসা সংক্রান্ত সবকিছু দেখেশুনে রাখবেন। আমি আবার কবে নাগাদ আসব বলতে পারছিনা।”
উদ্যান এবার ফুলের উদ্দেশ্যে বলল,
“যাওয়া যাক এবার।”
ফুল একভাবে বসে রইল। উদ্যান শার্টের পকেটে হাত দিয়ে একটা সিগারেট আর লাইটার বের করল। সিগারেটের শেষ প্রান্তে আগুন জ্বালিয়ে ঠোঁটে চেপে ধরে একটান দিল। ধোঁয়া গুলো উপরের দিকে ছেড়ে আশেপাশে থাকা সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে আচমকা ফুলের হাত চেপে ধরল। ফুল কিছু বুঝে ওঠার আগেই উদ্যান তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে লাগল। মাহবুবা সুলতানা, রেহানা বেগম সহ উপস্থিত সবাই নিশ্চুপ থেকে পুরো ঘটনাটা অবলোকন করলেন। এছাড়া তারা আর করবেনই বা কি? মেয়েকে তো নিজেদের স্বার্থে একপ্রকার মে*রেই ফেলেছেন।
ফুলকে নিয়ে উদ্যান দৃষ্টি সীমার বাইরে যাওয়া মাত্রই মাহবুবা সুলতানা ছুটে গেলেন আবেশের কাছে। দরজা খুলে দিতেই আবেশ রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
“ফুল কোথায়? আমার ফুল,”
মাহবুবা সুলতানা ছেলেকে বুকে টেনে নিলেন,
“ওরা চলে গেছে বাবা। ফুলকে নিয়ে উদ্যান চলে গেছে।”
কথাটা শুনে আবেশের পাজোড়া অসাড় হয়ে এলো। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে সে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল।
“এটা তোমরা ঠিক করলে না। আমি তোমাদেরকে কখনও ক্ষমা করবো না মম। তুমি আর কি অধিকার কেড়ে নেবে? আমি নিজেই আজকে পর থেকে তোমাকে আর মম বলে ডাকবো না।”
কথাটা বলে আবেশ নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।
এদিকে উদ্যান সিগারেট ফুকছে আর ড্রাইভ করছে। সিগারেটের গন্ধে ফুলের দম আটকে আসছে।
“উইন্ডো খুলে দিন প্লিজ।”
উদ্যান যেন শুনলোই না। ফুলের সহ্যশক্তি ফুরিয়ে এলো। অনুনয়ের সুরে উদ্যানের সামনে হাতজোড় করে বলল,
“দয়া করে উইন্ডো খুলে দিন নয়তো এসব খাওয়া বন্ধ করুন।”
উদ্যান এবার জোড়ে ব্রেক কষলো। ফুল তাল সামলাতে না পেরে উইন্ডোর সাথে ধাক্কা খেতে নিলে উদ্যান ফুলের হাত চেপে ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়। ফুলকে চমকে দিয়ে সিগারেটের পুরো ধোঁয়াটা তার মুখের উপর ছাড়ল উদ্যান। ফুল এবার গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করে উঠল।
“আমি তোর কি হই?”
উদ্যানের ঠান্ডা গলার প্রশ্নে ফুলের গায়ে কাটা দিল। অক্সিজেন সংকটে ঠোঁট জোড়া আপনা-আপনি ফাঁক হয়ে এলো। বাধ্য হয়ে নিকোটিন যুক্ত ধোঁয়া গুলোই নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিলো।
“ইউ ব্লাডি মিস্টেক। আই এম ইওর মাস্টার, ভুলে যাসনা। তোর এই কর্কশ কন্ঠস্বর আমি সবচেয়ে অপছন্দ করি। তাই কোনো কিছু বলার আগে একশোবার ভেবে বলবি।”
কথাগুলো বলার সময় উদ্যানের চোখজোড়া অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও কঠোর দেখাচ্ছিল। তার এইরূপ দেখে ভীতসন্ত্রস্ত ফুল শ্বাস নিতেও ভুলে গেল যেন। পেছন থেকে হর্নের আওয়াজ ভেসে আসতেই উদ্যান এক ঝটকায় ফুলকে ঠেলে সরিয়ে দিল। তারপর হাই স্পিডে গাড়ি স্টার্ট দিল।
বিকেলের শেষ ভাগে সূর্যের আলো ম্লান হয়ে এসেছে। কান্নাকাটি করার কারণে ফুলের চোখজোড়া লেগে এসেছিল। মুখের উপর পানির ঝাপটা পড়তেই সে ধরফরিয়ে উঠে বসল। অবাক চোখে তাকিয়ে দেখল উদ্যান গাড়ির দরজা খুলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
“বাইরে বেরিয়ে আয়।”
ফুল ধীরপায়ে বাইরে বের হলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল তারা একটা শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
“ফলো মি।”
বলেই উদ্যান হাটা ধরল। ফুলও উদ্যানের কথামতো তাকে অনুসরণ করতে লাগল। কিছুটা হাটার পর উদ্যান একটা কাপড়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। গম্ভীর কন্ঠে দোকানদারকে ডেকে বলে,
“আপনাদের দোকানের সবচেয়ে লো কোয়ালিটির কাপড়গুলো প্যাক করে দিন।”
উদ্যানের কথার ধরন শুনে দোকানদার আহাম্মকের মতো তাকিয়ে রইল। উদ্যানের মতো দেখতে শুনতে স্মার্ট পারসোনালিটির ব্যক্তি কিনা লো কোয়ালিটির ড্রেস চাইছে? এদিকে ফুলও বেকুবের মতো উদ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো? শোনেন নি?”
উদ্যানের ধমকে দোকানদার একটা ঢোক গিলে বলল,
“স্যার আপনাকে মেয়েদের ড্রেস দেখাবো নাকি ছেলেদের ড্রেস দেখাবো?”
উদ্যান ফুলের দিকে ইশারা করে বলল,
“দেখাতে হবেনা, এই মেয়েটার মাপ অনুযায়ী যতগুলো লো কোয়ালিটির ড্রেস আছে সবগুলো প্যাক করে দিন।”
দোকানদার জোরপূর্বক হেসে উদ্যানের কথামতো কাপড় বের করতে লাগল। কিছুক্ষণ যেতেই উদ্যান কাঠখোট্টা গলায় বলে ওঠে,
“লক্ষ্য রাখবেন ড্রেস গুলো পড়ে যেন ওকে সার্ভেন্টের মতো দেখায়।”
দোকানদার মাথা নেড়ে নিজের কাজ করতে লাগল। ফুল এখনো বিস্মিত চোখে উদ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে।
দোকানদার সবকিছু প্যাক করে উদ্যানের দিকে এগিয়ে দিতেই উদ্যান সেগুলো ফুলের হাতে ধরিয়ে দিল।
“এখান থেকে একটা ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করে আয়।”
ফুল মাথা নেড়ে চেঞ্জ করতে চলে গেল।
ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট আটকে উদ্যান গাড়ি স্টার্ট দিল। কিছুটা দূর আসতেই উদ্যান প্রশ্ন ছুড়ল,
“তোর কাছে ফোট টোন নেই তো?”
ফুল একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“না, আমার ফোনটা তো আমার রুমেই রেখে এসেছি।”
উদ্যান পুনরায় নিশ্চুপ হয়ে গেলো। ফুল বন্ধ জানালার এপাশ থেকে বাইরের প্রকৃতি দেখছে। সারি সারি গাছগুলো ছুটে চলেছে। চোখের পলকেই যেন সন্ধ্যার ঘনঘটায় ভাটা পড়ে রাত নেমেছে। ফুল লক্ষ্য করে দেখল আস্তে আস্তে তারা লোকালয় থেকে দূরে চলে এসেছে। ভয় এবার দানা বাধতে শুরু করল মন গহীনে। অজানা আশংকা সারা শরীরে কাপুনি ধরিয়ে দিল। উদ্যান তো একের পর এক সিগারেট শেষ করতে ব্যস্ত। জানালা বন্ধ থাকায় বিষাক্ত ধোঁয়া গুলো পুরো গাড়িকে গ্রাস করে রেখেছে। ফুল একবার উদ্যানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। খুব মনে পড়ছে আবেশের কথা। আচ্ছা আবেশ কি এখনও পাগলামি করছে? তার নাম ধরে কান্নাকাটি করছে? আবেশের কথা ফুলের মনে পড়লেও মায়ের কথা মনে পড়ছেনা। একদমই পড়ছেনা, অভিমানী সুরে নিজেকে এই বলেই সান্ত্বনা দিল ফুল। ফুল আর অভিযোগ করবেনা কারো নামে। জানতেও চাইবেনা কোন ভুলে তাকে বলি হতে হলো। সে মেনে নেবে নিজের ভাগ্যকে,
ভাবনার মাঝেই গাড়ির স্পিড কমে এলো। ফুল জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল বেশ বড়সড় একটা পার্কিং এরিয়া। ডজন খানেক গাড়ি আর বাইক লাইন দিয়ে সাজানো। রাতের নিকষ কালো আঁধারের মাঝেও জায়গাটা আলোয় ফকফকা। গাড়ির ডোর লক হওয়ার আওয়াজে ফুলের ধ্যান ভাঙল। পাশ ফিরে দেখল উদ্যান হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে। ভাবনা চিন্তা সাইডে রেখে ফুল তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে গেল। উদ্যানের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ হাটার পর ফুল লক্ষ্য করল আশেপাশে অনেক মানুষ। সাধারণ মানুষ নয় কালো পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী লোক। এতোগুলো গার্ডস দেখে ফুল কিছুটা বেখেয়ালি হয়ে পড়ল। বেখেয়ালি হয়ে হাটার একপর্যায়ে পথে পড়ে থাকা একটা ইটের টুকরোয় হোচট খেয়ে পড়ে যায় ফুল। সিমেন্টের তৈরি পাকা রাস্তা হওয়াতে ফুলের হাটু ছিলে গেছে। ব্যাথায় ককিয়ে উঠে আশেপাশে তাকাতেই দেখল উদ্যান অনেকটা দূরে চলে গেছে। হাটুর ব্যাথা সম্পূর্ণ ভাবে অগ্রাহ্য করে ফুল উদ্যানের পিছু পিছু দৌড় লাগালো।
হাপানোর আওয়াজ কানে আসতেই উদ্যান ঘাড় বাকিয়ে পেছনে তাকাল। ফুল তো হাত দিয়ে হাটু চেপে ধরে হাপিয়েই চলেছে। উদ্যান একটা বিরক্তির শ্বাস ফেলে দরজায় পাসওয়ার্ড এন্টার করল। দরজা খোলার আওয়াজে ফুল মুখ তুলে বাড়িটার দিকে তাকাতেই থমকে গেল। বাড়িটা দোতলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি। মেইন ফটকে একটা বড়সড় শুভ্র রঙা পাথরের গায়ে খোদাই করে লেখা ‘SOLAR’
“দরজা টা ৩০ সেকেন্ডের মাথায় বন্ধ হয়ে যাবে। পুরোটা রাত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে না চাইলে ভেতরে আয়। পালিয়ে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে খুব একটা লাভ হবেনা। এখান থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গার্ডস আছে। প্লাস আমরা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে আছি।”
উদ্যানের কথাটা শুনে ফুল একটা শুকনো ঢোক গিলল। দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে ফুল একছুটে ভেতরে ঢুকে গেল। উদ্যান আর ফুল আরও কিছুটা দূর যেতেই কয়েকজন গার্ড এগিয়ে এসে উদ্যানের সামনে মাথা নিচু করে কুর্নিশ জানাল। উদ্যান সেদিকে বিশেষ পাত্তা দিলনা। বাড়ির দরজায় কলিংবেল প্রেশ করতেই দুজন সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিল। সাথে সাথেই উদ্যান ভেতরে চলে গেল। এদিকে বাড়ির ভেতরের দৃশ্য দেখে ফুল মাথা ঘুরে পড়ে যাবার উপক্রম। পুরো বাড়ি সবুজ রঙে মোড়া। বাইরেটা অন্ধকারের কারণে পুরোপুরি ভাবে দৃষ্টিগোচর না হলেও ভেতরের সবকিছু চকচক করছে।
উদ্যান সোফাতে গা এলিয়ে দেওয়া মাত্রই দুজন যুবক তার পাশে এসে বসল। তাদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠল,
“তেহুর জন্য আইসড টি আনো এখনই।”
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন সার্ভেন্ট যেতে উদ্যত হতেই উদ্যান উচ্চস্বরে ডেকে উঠল,
“এই মেয়ে। এদিকে আয়,”
উদ্যানের ডাকে ফুল কেঁপে উঠল। খুড়িয়ে খুড়িয়ে উদ্যানের সামনে এসে দাড়াল। এদিকে ফুলকে দেখে উদ্যানের পাশে বসে থাকা দুজন যুবক ভ্রু কুচকে উদ্যানের দিকে তাকাল,
“এই মেয়েটা আবার কে?”
উদ্যান স্বভাবতই জিভের অগ্রভাগ গালের ভেতরের অংশে ঠেকিয়ে বলল,
“মিট হার, শীজ মাই পার্সোনাল মেইড।”
উদ্যানের কথা শুনে দুজনেই বেশ চমকে উঠল। একজন বিড়বিড় করে বলল,
“পার্সোনাল…
আরেকজনও একই টোনে বলল,
“মেইড?”
তাদের থেকেও বেশি অবাক হলো ফুল। উদ্যান তাকে কাজের লোক হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এবার দুজনের মাঝ থেকে একজন উঠে এসে ফুলের সামনে দাড়াল।
“হাই, আমি লুহান। আর তুমি?”
উদ্যান চেচিয়ে উঠল,
“ওই তোকে পরিচিত হতে কে বলেছে? ওকে কিচেন দেখিয়ে দিতে বল। আই নিড আইসড টি কুইক।”
লুহান খানিকটা বিরক্তি মিশিয়ে বলল,
“সবসময় চেচাবি না। তোর পার্সোনাল মেইড বলে কি আমাদেরকে চিনতে হবেনা? ৫ মিনিট দে আগে আমরা পরিচিত হয়ে নিই।”
উদ্যান কিছু বলতে যাবে তার আগেই অপরজন বলে ওঠে,
“মেলোকে হঠাৎ পাঠিয়ে দিলি কেন?”
উদ্যান উত্তর না দিয়ে উঠে দাঁড়াল। গটগট পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। ফুল সেদিকেই তাকিয়ে ছিল। লুহান তার সামনে হাত নেড়ে বলল,
“এই যে? শুনছো?”
ফুল এবার লুহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার নাম ফুল।”
লুহান কিছু বলার আগেই পেছন থেকে অন্য একজন বলে উঠল,
“You mean Fool?”
ফুল ঘাড় বাকিয়ে পেছনে তাকাতেই অন্য আরেকজন যুবককে দেখতে পেল। সোফায় বসে থাকা যুবকটি বলে উঠল,
“সিরিয়াসলি? ফুল কারো নাম হয়?”
ফুল বেশ কনফিউজড হয়ে গেল। এরইমাঝে লুহান বলে ওঠে,
“এইযে ফুল যাও আগে মাস্টারের জন্য আইসড টি বানিয়ে নিয়ে গিয়ে তাকে কুল করো। তারপর নাহয় আমরা পরিচিত হয়ে নেবো। তেহ যেহেতু তোমাকে এই বাড়িতে এনে তুলেছে তার মানে তুমি সাধারণ কেউ হতে পারোনা।”
লুহান এবার একজন সার্ভেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ওকে কিচেনে নিয়ে যাও।”
চলবে,,,
(Solar Estate এ ফুলের সাথে সাথে সবাইকে স্বাগতম। পরবর্তী পর্ব পেতে লাইক কমেন্ট করুন। রিচেক করিনি টাইপিং মিস্টেক থাকলে ধরিয়ে দিবেন।)
Share On:
TAGS: অবাধ্য হৃৎস্পন্দন, সোফিয়া সাফা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ২১
-
অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ২৩
-
অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ৩৩
-
অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ১৫
-
অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ১১
-
অবাধ্য হৃৎস্পন্দন গল্পের লিংক
-
অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ২২
-
অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ১০
-
অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ১৬
-
অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ১২