#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:৭
#তানিশা সুলতানা
নেহাল নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে পারছে না। একমাত্র আদরের ছোট বোন। কোনোদিনও তার কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখে নি সে। না কাউকে চোখ তুলে তাকাতে দিয়েছে বোনের দিকে। বাবা মা কেউ ই তার ভয়ে স্বাসন করতে পারে নি তার বোনকে। অথচ আজকে সেই বোনটাকে একটা বেয়াদব বিয়ে করে নিলো। সে কিচ্ছু করতে পারলো না। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় বোধহয় নেহাল।
নওয়ান এর ছেলেপেলেরা সকলের হাত পা মুখ খুলে দিয়েছে। নুপুর নেহালকে জাপ্টে ধরে বসে আছে। ভাইয়ের রাগ সম্পর্কে সে জানে। এখুনি নওয়ানের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করে দিতে পারে। সেই জন্যই ভাইয়ের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে।
নওয়ান তামিমকে ইশারা করে। সে মুহূর্তেই মনিটরের সঙ্গে ফোন কানেক্টেড করে দেয়। মনিটরের স্কিনে এমপি শাহাবুদ্দীনকে দেখা যাচ্ছে। বড্ড অসহায় স্বরে বলছে
“চেয়ারম্যান নাসির শিকদার সেইদিন শিক্ষা মন্ত্রীর নামে যা যা বলেছে সবাই আমি বলিয়েছি তাকে দিয়ে। শিক্ষা মন্ত্রী ভীষণ এবং দায়িত্বশীল মানুষ।
এমন আরও অনেক অনেক কথা বলছে এমপি। তার কথার সারমর্ম হচ্ছে “বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এমপিকেনদিয়ে এসব করিয়েছে আর এমপি চেয়ারম্যানকে দিয়ে।”
নাসির হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। মনিটরের স্কিন থেকে দৃষ্টি ফেরায়। সোনিয়া বলে ওঠে
” তোমাদের ঝামেলা তো মিটেই গিয়েছিলো। তাহলে আমার মেয়েকে কেনো বিয়ে করলে?
ঠোঁটের ভাজে থাকা সিগারেট হাতের ফাঁকে নিয়ে নেয় নওয়ান। শার্টের বোতাম সব গুলো খোলা। ফর্সা বুকের কালো লোম গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। শার্টের কলার টেনে পায়ের ওপর পা তুলে আরাম করে বসে নওয়ান।
“ভাল্লাগছে তোর মেয়েকে।
নুপুর আঙুল তুলে বলে
” সম্মান দিয়ে কথা বলুন মিস্টার বেয়াদব। সে আপনার সমবয়সী নয়।
নওয়ান ঠোঁট বাঁকায়। পায়ের ওপর থেকে পা নামিয়ে কপালে হাত তুলে বলে
“আসসালামু আলাইকুম শাশুড়ী। সম্মানের সাথে জানাচ্ছি যে আপনার মেয়ে মারাক্তক হট। তাই তাকে বিয়ে করেছি। সম্মানের সঙ্গে আরও জানাচ্ছি নয়মাস পরে নাতির মুখ দেখতে পাবেন।
নুপুর চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। বল্টু খিক খিক করে হেসে ওঠে। নাসির এবং নেহাল মাথা নিচু করে।
সোনিয়া গম্ভীর স্বরে বলে
” তুমি আমার বাড়ি থেকে বের হও।
বেয়াদব
দুই ভ্রু জোড়া আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে ফেলে নওয়ান। সিগারেট ঠোঁটের ফাঁকে গুঁজে বলে
“সত্যি কথা বললে সবাই বেয়াদব ডাকে কেনো রে বল্টু?
সরল বল্টু সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়
” ভাই সত্যি কথার ভাত নাই।
তাই তো আপনি সিগারেট খান।
নওয়ান শুধু বল্টুর মুখ পানে তাকায় এক পলক। জবাব দেয় না। ঘড়ির কাটায় বারোটা পেরিয়ে গিয়েছে। নওয়ান এর পকেটে থাকা ফোন খানা অনবরত বেজে চলেছে। এতোক্ষণ ইগনোর করলেও এবার পকেট থেকে ফোন খানা বের করে নওয়ান।
রিসিভ করে কানে তুলে বলে ওঠে
“ডিস্টার্ব করছিস কেনো বাল? মরছিস না কি?
স্নেহার মুখের কথা মুখেই রয়ে যায়। অগোচরে কল কাটে। নওয়ান পূণরায় ফোন খানা পকেটে রেখে তামিমকে বলে
” এই শালারে সরা চোখের সামনে থেকে।
সঙ্গে সঙ্গেই হুজুর নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে দৌড়ে চলে যায়। যেতে যেতে বলতে ভোলে না “সিগারেট খেতে খেতে বিয়ে এই প্রথম দেখলাম ভাই। দ্বিতীয় বার এমন বিয়ে দেখতে চাই না”
তামিম এবার নওয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে
“ভাই গাড়ি আনতে বলবো না কি?
নওয়ান বোধহয় বিরক্ত হলো। সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে বলে
“বাইকেই চলবে।
বলেই দাঁড়িয়ে পড়ে। ধীর গতিতে পা বাড়িয়ে নুপুরের দিকে এগোয়।
নুপুরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে
” সম্মানিত শাশুড়ী এবং সম্মানিত শশুর মশাই। সম্মানের সঙ্গে আপনাদের কন্যাকে তুলে নিয়ে গেলাম।
সম্মানের সঙ্গে জানাই টাটা
নুপুর তার হাত ধরছে না বলে নওয়ান নিজেই নুপুরের হাত খানা মুঠো করে ধরে এবং এক টানে দাঁড় করায়। নেহালও দাঁড়িয়ে পড়ে। কিছু বলবে তার আগেও নওয়ান বলে
“শালা ডোন্ট টক
সী ইজ মাই লেডি
নেহাল চুপ করে যায়। নওয়ান মুহূর্তেই নুপুরকে কোলে তুলে নেয়। এবং বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায়। বল্টু তামিম সহ বাকিরা নুপুরের বাবা মাকে সালাম দিয়ে নওয়ানের পেছন পেছন বেরিয়ে যায়।
নুপুর কে বাইকে বসিয়ে দেয় নওয়ান এবং নিজে সামনে বসে।
পরপর আরো চার-পাঁচটা বাইক সবাই পজিশন নিয়ে নিয়েছে। নওয়ান চলতে শুরু করলে তারাও পেছন পেছন যাবে।
___
আজকে স্নেহার জন্মদিন। ঠিক বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সকলেই উইশ করেছে তাকে। কেক এবং গিফটও দিয়েছে।
তবে এইবার কারো গিফট হাতে নেয় নি স্নেহা। সে নায়েব তালুকদারের সামনে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত এক আবদার জুড়ে দিয়েছে।
” চাচ্চু ২২ তম জন্মদিনে তোমার কাছ থেকে অনেক বড় গিফট চাই আমি।
কথা দাও দিবে?
নিজের হাত খানা নায়ের তালুকদারের দিকে এগিয়ে দেয় স্নেহা।
দুচোখে টলমল করছে অশ্রুকণা। যেনো নায়েব তালুকদার রিজেক্ট করে দিলেই সে কেঁদে ফেলবে।
কিন্তু স্নেহাকে ভুল প্রমাণ করে নায়েব মৃদু হাসে এবং জড়িয়ে ধরে তাকে। বলে
“কি চাই তোমার? শুধু একবার বলো।
স্নেহা সঙ্গে সঙ্গে বলে
“তোমার ছেলেকে চাই আমার। নওয়ান তালুকদারকে চাই আমার সারা জীবনের জন্য।
“দিয়ে দিলাম।
আমি তো আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। আমার বেপরোয়া ছেলেকে স্নেহা মায়ের হাতে তুলে
বাকিটা শেষ করার আগেই তালুকদার বাড়ির ড্রয়িং রুমে আগমন ঘটে নওয়ান তালুকদারের। মোটেও সে একা নয় তার কোলে নুপুর নামক রমণীর।
চলবে
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২২
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৬
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৫
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৫(৫.১+৫.২)
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৯
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৪