#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব: ২১
#তানিশা সুলতানা
বর্তমানে রানিং প্রধানমন্ত্রীর এক ছেলে এবং এক মেয়ে। মেয়ে পড়াশোনার সুবিধার্থে সিঙ্গাপুর বসবাস করলেও ছেলে বাংলাদেশেই থাকে। রাজনীতি পছন্দ না বলে বরাবর এটা থেকে দূরে থাকে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রী এবং তার ছেলের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি মেনে নিতে পারছে না সে। অহেতুক তার বাবাকে হয়রানি করা হচ্ছে এবং মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
তাইতো অপছন্দের রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে। বাবার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে ভরসা দিয়ে প্রতিজ্ঞা করে বলেছে “আমি আছি তোমার সাথে”
নওয়ান সম্পর্কে সকল খোঁজখবর নিতে গিয়ে অভির নজর পড়েছে নুপুরের পানে। হালকা ব্রাউন রঙের চোখের মনি দুটোতে দৃষ্টি আটকে গিয়েছে তার। লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। ২৯ বছরের অভি জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়েকে দেখে মুগ্ধ হয়েছে।
বলা বাহুল্য নওয়ান তালুকদারের বউয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছে। ভীষণ বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে মায়া ভরা ওই মুখটার পানে তাকিয়ে।
গতকাল রাত থেকে এই পর্যন্ত কতবার যে নুপুরের ফটো খানা দেখেছে সে তার হিসেব নেই। অভি কখনোই জেদি ছিলো না। “আমার এটা ভালো লেগেছে মানে এটা আমার চাই ই”
এই স্বভাবটা তার নেই। বরং নিজের পছন্দের জিনিসগুলো অন্যদেরকে দিয়ে দেওয়াই তার স্বভাব। কিন্তু এই প্রথমবার জেদ করতে ইচ্ছে করছে তার।
প্রচন্ড আবেগ নিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে “এই মেয়েটিকে আমার লাগবে। যেভাবেই হোক তাকে আমার চাই ই চাই”
অভির ভীষণ কাছের একটা বন্ধু আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম যেদিন পা রাখে সেদিন থেকে নেহালের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়েছে। একদম জানের বন্ধু যাকে বলে। নিজের মনের সকল কথা সে নেহালের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। এই মুহূর্তেও নেহাল কে দরকার।
তাইতো ডায়াল করে ওর নাম্বারে। রিং হতে হতে কল কেটে যায়। কিন্তু রিসিভ হয় না। চিন্তিত অভি আবারও কল করে। এভাবে পরপর আঠারো বার কল করে ফেলে। শেষবার কল দিতেই ওপাশ থেকে একটা মেইলি কন্ঠস্বর ভেসে আসে। ভীষণ সুন্দর করে বলছে “আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।”
অধৈর্য অভি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সে মানিকগঞ্জ যাবে। দেখা করবেন নেহালের সঙ্গে। এবং নওয়ান তালুকদার নামক মানুষটিকেও সে দেখবে। তাছাড়া নুপুরও তো মানিকগঞ্জ রয়েছে।
ভাবনা মতো তখুনি জামাকাপড় প্যাক করা শুরু করে দেয় অভি। বাবার নাম্বারে ছোট্ট একটা টেক্সট করে
“এ’ম গোইন টু মানিকগঞ্জ”
___
সুখ আসলে কিসে পাওয়া যায়?
কত টাকা হলে সুখ কেনা যায়?
সুখের সঙ্গা জানতে বড্ড ইচ্ছে করে আমিনার। সুখ আসলে কাকে বলে?
এক জীবনে সব পেয়ে গেলেই কি সে সুখ সুখী? তার তো সবই রয়েছে। সুন্দর একটা পরিবার, স্বামী, সন্তান, বিলাসবহুল জীবন। তবুও সে কেনো প্রাণ খুলে হাসতে পারে না? একাকিত্বের সময়ে নিজেকে নিজে কেনো বলতে পারেনা “আমার থেকে সুখী ব্যক্তির দুনিয়াতে দুটো নেই”
কেনো মধ্যরাতে তার চোখ দুটো ভারি হয়ে ওঠে। বুক চিঁরে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। বড্ড আফসোসের স্বরে বলে ওঠে “এমন জীবন যেনো আর কারো না হয়”
আমিনা বেগম এর বাবার চারতম মৃত্যুবার্ষিকী আজকে। কালকে রাত থেকে ভাইয়েরা অনবরত কল করছে। আমিনা বেগমকে যাওয়ার জন্য হাজার বার বলে যাচ্ছে। কিন্তু উনি না করে দিয়েছেন।
কি করে যাবে? বিয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত স্বামীকে নিয়ে কোনদিনও বাবার বাড়িতে যেতে পারেননি। তার বাবার মৃত্যুর দিনও নায়েব তালুকদার যায় নি। অথচ আমিনা আশা করেছিলো মানুষটা যাবে। তাকে বুকে জড়িয়ে ভরসা দিয়ে বলবে “আমি আছি তো।”
ছেলেটাকেও কোনদিনও বাবার বাড়িতে নিতে পারিনি।
শেষবার বাবা যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলো। আকুতি মিনতি করে আমিনার হাত ধরে বলেছিল
“তোর ছেলেটাকে একবার আন। শেষবার তাকে দেখতে চাই।
আমিনা কল করে নওয়ানকে। সে রাজনৈতিক কাজে বাবার সঙ্গে ঢাকায় গিয়েছিলো। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শিক্ষা মন্ত্রীর সনদ হাতে পাওয়ার দিন। আমিনার কল পেয়ে সেখানকার ঝামেলা মিটিয়ে নওয়ান এসেছিলো নানা কে দেখতে। কিন্তু সে আসতে আসতে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছিলেন আমিনার বাবা। শেষ ইচ্ছেটা পূরণ হয় না তার বাবার।
আজকে বাবার বাড়িতে গেলে তাকে একা যেতে হবে। সবাই জিজ্ঞেস করবে “তোমার স্বামী সন্তান আসলো না কেনো?”
আমিনা কি জবাব দেবে?কিভাবে তাদের বলবে “আমার স্বামী এবং ছেলের কাছে আমার কোনো মূল্য নেই। তারা তাদের মতো ব্যস্ত”
বাবার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে এতিম খানায় কিছু খাবার এবং টাকা দিতে গিয়েছিলো আমিনা। টাকা গুলো নওয়ান দিয়েছিলো তাকে।
আসলে পড়াশোনা জানা হাউজওয়াইফ দের কোনো ইনকাম সোর্স থাকেনা। বিনা বেতনে ১২ মাস খেটে যায় তারা। তাদেরও কোনো শখ আহ্লাদ থাকতে পারে, দিনশেষে তাদেরও দুটো টাকার প্রয়োজন হতে পারে এই কথাটা বোধহয় এই সমাজ জানে না। তাইতো মেয়ে মানুষ স্বামী কিংবা সন্তানের কাছে টাকা চাইলে তারা সবার আগে জিজ্ঞেস করে “কি করবে টাকা দিয়ে? “
তবে আমিনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। তার সন্তান কখনোই তাকে জিজ্ঞেস করে না কি করবে টাকা দিয়ে।
বরং যত টাকা দাবি করে তার থেকে দ্বিগুণ বেশি টাকা দিয়ে দেয়। সন্তান বড় হওয়ার পর থেকে কোনদিনও সে স্বামীর কাছে টাকা চাইনি। তার স্বামীও তাকে সেধে দুটো টাকা দেয়নি।
এই মুহূর্তে আট বছরের ছোট্ট একটা বাচ্চাকে নিয়ে তালুকদার বাড়িতে ঢুকে পড়ে আমিনা। বাচ্চাটার চোখে মুখে কি দারুন মায়া। ভাসা ভাসা চোখ দুটোতে পানি টলমল করছে। বড় বড় পাপড়ি গুলো ভিজে আছে। পোশাক আশাক দেখে বোঝাই যাচ্ছে খুবই ধনী পরিবারের কেউ।
নায়েক তালুকদার, রাশেদুল তালুকদার এবং মজনু তালুকদার ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
এমন মুহুর্তে আমিনার সঙ্গে একটা বাচ্চা দেখে সকলেই অবাক হয়। নায়েব উঠে দাঁড়িয়ে বলে
” আমিনা এটা কে?
পা জোড়া থামে আমিনার। শান্ত নয়নে তাকায় স্বামীর মুখ পানে। কিছু মুহুর্ত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দেখে নেয় মানুষটিকে।
তারপর শান্ত স্বরে জবাব দেয়
“আমার সন্তান। আজকে থেকে আমি ওর মা। আমার সঙ্গেই থাকবে।
মজনু তালুকদার বলে ওঠে
” আমাদের অনুমতি ছাড়া তুমি একে এখানে রাখার সাহস করো কিভাবে?
ভুলে যেয়ো না এখনো তোমার শশুর শাশুড়ী বেঁচে আছেন।
আমিনা মাথা নিচু করে জবাব দেয়
“ক্ষমা করবেন বাবা। তবে এই বাচ্চাটি আমার সঙ্গেই থাকবে।
নায়েব তালুকদার বলে ওঠে
” থাকবে না। এখুনি একে বাইরে রেখে এসো।
আমিনা এক হাতে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে। একটু কঠিন স্বরে বলে ওঠে
“ও আমার সাথে এখানেই থাকবে। বাবা আমি বাড়ির বউ। কিছুটা অধিকার আমারও আছে।
মজনু তালুকদার দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে
“সাহস বেড়ে গেছে তোমার। অধিকার দেখাচ্ছো?
বউ তুমি এ বাড়ির মালকিন নয়। তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে দুবার ভাববো না।
পেছন থেকে নুপুর বলে ওঠে
“আপনি বোধহয় জানেন না সাধারণত বাড়ির বউরাই বাড়ির মালকিন হয়। তারা না থাকলে একটা বাড়ি অসম্পূর্ণ। এই যে আমার শ্বশুরমশাই মাসে কয়েকদিনের জন্য বাড়িতে আসে। তাতে কিন্তু কারো কিছু এসে যায় না। তিনি থাকলেও চলে না থাকলেও চলে।
কিন্তু আমার শাশুড়ি কিংবা চাচিশাশুড়ি তারা এক বেলা বাড়িতে না থাকলে গোটা বাড়িটাই থমকে যায়।
তাহলে কি দাঁড়ালো?
এই বাড়ির মালকিন আমার শাশুড়ি এবং চাচি শাশুড়ি।
তো তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার অধিকার আপনার নেই।
বরং তারা চাইলে আপনাদের বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারে।
রাগে থরথর করে কেঁপে ওঠে মজনু তালুকদার। নায়েব তালুকদার নুপুরের দিকে দুই পা এগিয়ে যায়।
এবং বলে
“চাপকে তোমার সবগুলো দাঁত ফেলে দেবো আমি।
বেয়াদব মেয়ে
অতিরিক্ত বেড়ে গেছো তুমি। তোমাকে থামাতে আমার দুই সেকেন্ড লাগবে না মনে রেখো।
নুপুর নায়েব তালুকদারের চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে
“বাড়াবাড়ির এখনো কিছুই দেখেননি।
সবে তো শুরু। পারলে আমায় থামিয়ে দেখান।
আমিনা বেগম নুপুরের হাত ধরে।
“তুমি তোমার ঘরে যাও। বড়দের সাথে এভাবে তর্ক করতে হয় না।
নূপুর পাল্টা বলে ওঠে
“আমি তো তর্ক করছি না। সত্যি কথাটা বলছি।
হঠাৎ নায়েব তালুকদার হেসে ওঠে। এক হাত কোমরে রেখে আরেক হাত চোখের উপর দিয়ে হো হো করে হাসতে থাকে। নুপুর ভ্রু কুঁচকায়। এখানে হাসির মতো কি বলেছে সে বুঝে উঠতে পারে না।
খুব বেশিক্ষণ তাকে ভাবতে হয় না। নায়েব তালুকদার হাসি থামিয়ে বলে
“তোমার একটা বন্ধু ছিল না আনুস্কা নামের।
সে কোথায় আছে এটা আমি জানি। শুধু জানিনা তাকে আমার কথাতেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর তোমার পালা।
বি কেয়ারফুল
তারপর আমিনার পানে তাকিয়ে বলে
” বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে যেখান থেকে এনেছো সেখানে রেখে আসো।
বলেই বড় বড় পা ফেলে চলে যায়।
আমিনা বেগম বাচ্চাটিকে নিয়ে নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হয়। মজনু তালুকদার নুপুর কে বলে ওঠে
“রাজনীতি এটা কোন ছেলে খেলা নয়।
সময় থাকতে চুপচাপ এই বাড়ি থেকে কেটে পড়ো। না হলে তোমার লা*শটাও তোমার বাবা মা খুঁজে পাবে না।।।
নুপুর কিছু মুহূর্ত মজনু তালুকদারের মুখ পানে তাকিয়ে থাকে। বয়স সত্তর ছাড়িয়েছে। দাড়ি এবং চুল সবগুলো সাদা হয়ে গেছে। যৌবনকালে খুবই সুদর্শন পুরুষ ছিলেন সেটা তার চেহারার আমেজেই বোঝা যায়।
ছোটবেলায় একবার নুপুরের দাদা গল্প করেছিলো।
মজনু তালুকদারের প্রথম স্ত্রীর নাম ছিলেন রেবেকা। ভীষণ ভালো এবং ধার্মিক মানুষ ছিলেন তিনি। তার মুখটা পর্যন্ত কেউ কখনো দেখেনি। সর্বক্ষণ পর্দার আড়ালে থাকতেন।
কিন্তু একদিন সেই মহিলাটির অর্ধ উলঙ্গ লা*শ পাওয়া গিয়েছিলো বেওথা নদীর পাড়ে।
গোটা এলাকা আতঙ্কিত হয়ে গিয়েছিলো। বাচ্চা বুড়ো থেকে শুরু করে সকলেই ভয়ে শিউরে উঠত যখনই ওই মৃত লা*শটার কথা মনে পড়তো।
তারপর রেবেকা বানুর কবর দেয়া হলো বেউথা জামে মসজিদের পাশের কবরস্থানে। কারো চোখে না ছিল পানি না ছিল কোন আফসোস।
চারটা সন্তান তার অথচ মায়ের মৃত্যুতে তাদের একটু কান্না পেলো না। যেনো এটা হওয়ারই ছিল।
সেই পাষাণ মজনু তালুকদার।
যে একটা মানুষের সঙ্গে ৩০ বছর সংসার করার পরে তার মৃত্যুতে একফোঁটা আফসোস করেনি সেই ব্যক্তি কি করে অন্যদের কথা ভাববে?
নূপুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
“মৃত্যুকে ভয় পাইনা আমি। হয় একা মরবো না হয় আপনাদের সঙ্গে নিয়ে মরব। মরতে তো হবেই।
____
সোনিয়া বেগমের একাউন্টিং ক্লাস রয়েছে। সব স্টুডেন্টরা নিজেদের জায়গা দখল করে বসে পড়েছে। ম্যাম ক্লাসে ঢুকে হাজিরা খাতা খুলতে যাবে তখনই ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ে নওয়ান তালুকদার। সব স্টুডেন্টরা দাঁড়িয়ে তাকে সালাম করে। নওয়ান হাতের ইশারায় সবাইকে বসতে বলে। সোনিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে নওয়ানের মুখ পানে। এখনো বেয়াদবটার ঠোঁটের ভাজে সিগারেট। কপালের একপাশটা ফেটে গেছে। সেখানে র*ক্ত শুকিয়েছে জমাট বেঁধেছে। কালো রঙের একটা শর্ট পড়েছে শার্টের নিচে সাদা টিশার্ট। শার্টের সবগুলো বোতাম খোলা।
বাম হাতের কব্জিতে কালো রঙের একটা ঘড়ি ঝুলছে।।
নওয়ান সিগারেট খানা হাতে নিয়ে ছেলেদের উদ্দেশ্য করে বলে
“আজকে কোনো ক্লাস হবে না আমরা সবাই মিলে সমাবেশে যাবো।
ব্যাস সবগুলো ছেলে নিজেদের জায়গা থেকে উঠে পড়ে এবং একে একে বেড়ে যায় ক্লাস রুম থেকে। শুধু থেকে যায় মেয়েরা।
নওয়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে। তারপর চোখের সানগ্লাস খুলে সোনিয়া বেগমের দিকে তাকায়। কপালে হাত তুলে সালাম দিয়ে বলে
“আসসালামু আলাইকুম শাশুড়ি আম্মা
আপনার মেয়েটা না বড্ড খারাপ
একটা কথাও শুনে না। সারাক্ষণ শুধু ইঁদুরের মতো লাফালাফি করে।
সোনিয়া শক্ত গলায় জবাব দেয়
“সাবধানে থেকো
আমার মেয়েটা সুবিধার নয়। লাফালাফি করতে করতে কখন তোমার কলিজাটা টেনে ছিঁড়ে দেয় তার তো কোন গ্যারান্টি নেই।
আবারও হাসে নওয়ান। বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলে
“কলিজায় তো অলরেডি জায়গা করে নিয়েছে। এখন শুধু ছিঁড়ে ফেলা বাকি।
মুখ খানা সোনিয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলে
” শাশুড়ী আই এম ইন লাভ ইউথ ………..
তারপর চোখে সানগ্লাস পড়তে পড়তে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যায় নওয়ান। সোনিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলে
“বেয়াদব একটা।
___
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে আবির। মাথার উপর ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটো বন্ধ করতে পারছে না। ক্ষণে ক্ষণে আনুর মুখটা মনে পড়ছে। জীবনে অনেক মেয়ের সাথে সে কথা বলেছে। অনেক মেয়েকে পতিতালয়ে দিয়ে এসেছে। কিন্তু কোনদিনও কারো জন্য খারাপ লাগেনি। বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা করেনি।
কারো জন্য চিন্তা হয়নি। তবে আনুর জন্য চিন্তা হচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে এক ছুটে আনুর কাছে গিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনতে। বাবা মায়ের হাতে তুলে দিতে। হঠাৎ করে প্রচন্ড কান্না পায় আবিরের। ছেলে মানুষের কাঁদতে নেই। যতই কঠিন পরিস্থিতি আসুক। জীবন তাকে যতই ঠকাক। সবকিছুকে পেছনে ফেলে ছেলে মানুষকে সর্বক্ষণ হাসতে হয়।
তবে আবির পারেনা। মাঝেমধ্যে বুকের ভেতরটা ভারী হয়ে ওঠে। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করে।
তাতে যদি মনের মধ্যে চেপে থাকা কষ্ট একটু কমে।
এই মুহূর্তে মাথা নিচে থাকা বালিশ খানা মুখের উপর রেখে হু হু করে কেঁদে উঠে আবির। হাতে ক্যানেলো লাগানো ছিলো। নরা লাগতেই ক্যানেলোতে র*ক্ত উঠে যায়। তবে সে দিকে হুশ নেই আবিরের।
সে অনবরত বিলাপ বকতে থাকে
” আমায় ক্ষমা করো আনু। আমি তোমার জীবনটা শেষ করে দিলাম।
____
রাত বারোটা বেজে আটচল্লিশ মিনিট। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে বই পড়ছে স্নেহা। না না আজকে সে না মনের অপেক্ষায় বসে নেই। কিছুক্ষণ আগে মায়ের সঙ্গে অসম্ভব ঝগড়া হয়েছে। স্নেহাকে বিয়ে দিতে চান তিনি। কিন্তু এই মুহূর্তে স্নেহা বিয়ে করতে রাজি নয়। সেটা নিয়ে মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য। শেষ মুহূর্তে বাধ্য হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসেছে।
নুপুরের সবে পড়া শেষ হলো। একটুখানি কফি বানানোর উদ্দেশ্যে কিচেনে যেতে নিলেই তার নজর পড়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসা স্নেহাকে।
ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে নুপুরের। চট করে কিচেনে ঢুকে ফট করে দুই মগ কফি বানিয়ে নিয়ে আসে।
স্নেহার পাশে বসে একটা মগ তার দিকে এগিয়ে দেয়।
এবং বলে
“আপি জানো আমি খুব ভালো কফি বানাতে পারি। একটু খেয়ে বলো তো কেমন হয়েছে?
স্নেহা নুপুরের হাত থেকে কফির মগ নেয় এবং তাতে চুমুক দেয়। মিথ্যে বলে নি নুপুর। আসলেই বেশ ভালো হয়েছে।
নুপুর আবার বলে
” আপি তখন ওভাবে কথা বলার জন্য স্যরি। আসলে আমার বন্ধুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।
স্নেহা প্রতিত্তোরে বলে
“আমি বুঝেছি। আর ওসব মনেও রাখিনি।
ঘুমাওনি যে।
“উনার জন্য অপেক্ষা করছি। উনি আমার বন্ধুকে খুঁজে দেবে।
উনি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে প্রথমে স্নেহা বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারে।
চলবে
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৬
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৬
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১১
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১০