#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:২
#তানিশা সুলতানা
“বেডে যাবি আমার?
ট্রাস্ট করতে পারিস একবার খে** ছেড়ে দিবো। নেক্সট টাইম তাকিয়েও দেখবো না।
নুপুর হাত উঁচু করে নওয়ানকে থাপ্পড় মারার জন্য। কিন্তু হাত খানা গাল ছোঁয়ার আগেই নওয়ান নুপুরকে ধাক্কা মেরে সুইমিং পুলে ফেলে দেয়। কোমর ওবদি টলটলে নীল রংয়ের পানির মাঝে নিজের অস্তিত্ব টের পেতেই স্তব হয়ে যায় নুপুর। তারাহুরো করে ওড়না দ্বারা নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা চালায়।
নওয়ান বাঁকা হাসে
” শা*লী দুই ফুট শরীরের এক আনা শক্তি নেই। অথচ ভাব দেখায় ষোল আনার।
লিসেন এ’ম নওয়ান রিশাদ মুসতালিন। তোর মতো বালের তেজ দেখার সময় নেই।
নিরব দু পা এগিয়ে আসে।
“ভাইয়া কি করছিস? ও তোর সাথে দরকারি কথা বলতে এসেছে।
নওয়ান তার ছেলেদের পানে তাকায়। কারোরই সাহস নেই নুপুরের ভেজা শরীরের পানে তাকানোর। সকলেই মাথা নিচু করে ছিলো। এবার নওয়ানের তাকানো দেখে সকলেই সরে যায়। শুধু বল্টু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
নওয়ান নিরবকে বলে
” এই বালের কথা আমি শুনবো কেনো? হু ইজ সী?
নিরব মাথা নিচু করে বলে
“হয়ত কোনো দর
“যা তো বাল। তোর কথা তিঁতা লাগছে।
নিরব বড়বড় পা ফেলে চলে যায়। মূলত পালিয়ে গেলো।
নিরব যেতেই নওয়ান বসে পড়ে সুইমিং পুলের পাশে। ঠোঁটের ভাজে সিগারেট গুঁজে বলে
“ছেলেরা মধু খাওয়ার জন্য মানে সে*** করার জন্য প্রেম করে। ইন্টিমেন্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত পেছনে আঠার মতো লেগে থাকে, কেয়ার করে, ভালোবাসা দেখায়। যখনই মধু খাওয়া শেষ হয়ে যায় আই মিন সে*ক্স করা হয়ে যায় তখন নতুন কাউকে খুঁজে নেয়। তোর বান্ধবীর কি মনে হয়েছিলো? সে জামা খুলে শু***য়ে পড়বে আর আবির তাকে বিয়ে করে ঘরে তুলবে?
এই বল্টু হাস তো একটু।
বন্টু সত্যিই বোকার মতো হেসে ওঠে। নওয়ান এর স্পষ্ট স্বরে বলা কথা গুলোতে নুপুর বিরক্ত হয়। চোখ মুখ কুঁচকে নওয়ানের মুখ পানে তাকায়। দু পা এগিয়ে এসে আঙুল তুলে বলে
” এ’ম শিওর আবির ভাইয়াকে আপনি ভয় দেখিয়েছেন। আপনিই তাকে বদলে দিয়েছেন।
বিরক্ত হলো বোধহয় নওয়ান। আড়াআড়ি ভাবে ভ্রু কুঁচকে বল্টুর পানে তাকায়। মানে সিগারেটে আগুন দাও। বল্টু তাড়াহুড়ো করে লাইটারের সাহায্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয় সিগারেটে। মনের সুখে টান দেয় নওয়ান। এবং হাত বাড়িয়ে নুপুরে হাত খানা ধরে ফেলে। এক টান দিয়ে নিজের দুই পায়ের মাঝে নিয়ে আসে নুপুরকে। মাথা নিচু করে মুখের সামনে মুখ নিয়ে ফু দিয়ে ধোঁয়া ওড়ায়।
কেশে ওঠে নুপুর। মাছি তাড়ানোর মতো হাত নারিয়ে ধোঁয়া সরানোর চেষ্টা চালায়৷ সেই সঙ্গে নওয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালায়। তবে ব্যর্থ হয়৷ নুপুরের এতো নরাচরায় বিরক্ত হয় নওয়ান
“চুপচাপ দাঁড়া বাল। দুটো কথা বলেই ছেড়ে দিবো। দামি কথা বলবো।
সত্যিই নুপুর শান্ত হয়।
“ওই দিকে তাকা।
চোখের ইশারায় বাড়ির মেইন দরজার দিকে তাকাতে ইশারা করে নওয়ান। নুপুর তাকায়। দেখতে পায় স্নেহা নামের মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে কাচুমাচু হয়ে। নুপুর আর নওয়ানকে কাছাকাছি দেখে বোধহয় কষ্ট পাচ্ছে। কেমন মায়া মায়া নয়নে দেখছে।
” আমি না খাওয়া ওবদি ও ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। একটু আগেই কিন্তু বকেছি ওকে ভয়ও দেখিয়েছি।
একটু থেমে নওয়ান আবার বলে
“শোন মিস ইঁদুর
যে থাকার তার ভেতর থেকে কলিজাটা বের করে নিলেও সে থেকে যাবে।
আর যে যাওয়ার তাকে জাস্ট যাও বললেও চলে যাবে।
নুপুর ফোঁস করে শ্বাস টানে। মনে মনে কথা সাজিয়ে কিছুটা নরম স্বরে বলে
“আনু হাসপাতালে। প্রেগন্যান্ট ছিলো ও। ওই জানোয়ারটা
নুপুরকে থামিয়ে নওয়ান বলে ওঠে
” থাম তো বাল
শা***য়ার গল্প শুনতে ইন্টারেস্ট নই।
আই গ্রেস কোথাও এমন পোস্টার লাগাই নি যেখানে লেখা আছে “নওয়ান রিশাদ মুসতালিন প্রেগন্যান্ট ডিভোর্সি নারীদের বিয়ে করতে চাচ্ছে”
সো স্টপ ইউওর মাউথ।
এ যাত্রায় মুক্তি পায় নুপুর। নওয়ান ছেড়ে দেয় তার হাত। পা দুটোও সরিয়ে নেয়। নুপুর তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়ে সুইমিং পুল থেকে। পুরোপুরি ভিজে গিয়েছে। জামাখানা শরীরের সঙ্গে লেপ্টে আছে।
নওয়ান নুপুরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলে
“বডির সাইজ কতো তোর?
এমনিতে দেখে মনে হয় ছো…….
বাকিটা শেষ হওয়ার আগেই নুপুর বলে ওঠে
” মিস্টার বেয়াদব নারীকে সম্মান করতে শিখুন।
নওয়ান সিগারেটে টান দেয় কিন্তু বুঝতপ পারে আগুন নিভে গেছে। বিরক্ত স্বরে বলে ওঠে
“এই বালের জন্য সিগারেটের আগুন নিভে গেলো। এই বল্টু আগুন জ্বালিয়ে দে।
বল্টু ছেলেটা যেনো প্রস্তুত ছিলো। সে চটজলদি পূণরায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। নওয়ান আবারও সুইমিং পুলে পা ডুবিয়ে বসে পড়ে। স্নেহা এক খানা বড় ওড়না নিয়ে দৌড়ে আসে। এবং নুপুরের পানে এগিয়ে দিয়ে বলে
” এটা গায়ে জড়িয়ে নাও।
নুপুর বিনা মন্তব্যে ওড়না খানা শরীরে জড়িয়ে নিয়ে বলে
“ধন্যবাদ আপু।
প্রতিত্তোরে স্নেহা একটু হাসে।
” আপু এই বেয়াদবটাকে বলবেন একটা মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। এই নুপুর শিকদার যদি কখনো জানতে পারে আবির ভাইয়ার বদলে যাওয়ার পেছনে তার হাত আছে। গড প্রমিজ যথাযোগ্য শাস্তি দিবো তাকে। একদ
নুপুরের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই নওয়ান কড়া স্বরে বলে ওঠে
“স্নেহা এই বালরে গেইটের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দে। বালের আলাপ ভালো লাগছে না।
স্নেহা নিচু স্বরে বলে
” তুমি যাও আপু। আমি দেখছি।
নওয়ান আসমান পানে তাকিয়ে ঠোঁটে ভাজে সিগারেট রেখেই গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে
“আমি জাত কুল মানি না
লোক লাজ বুঝি না
শুধু জানি একদিন আসবে গো সঙ্গী
হই
পিরিতি পিরিতি এ যে ভীষমও পিরিতি সই
বন্ধ মনের তালার চাবি আছে কই?”
নুপুর মনে মনে “বেয়াদব” শব্দটা আওড়িয়ে চলে যায় সেখান থেকে। গেইটের কাছে এসে পা জোড়া থেমে যায়। একবার পেছন ফিরে তাকায় স্নেহা নামের মেয়েটির মুখ পানে। কি দারুণ মায়াবী মেয়েটা। মুখ পানে তাকালেই কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়।
___
তলপেটে প্রচন্ড আঘাত পাওয়ার ফলে আনুর অনাগত সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। রক্তের দলা হয়ে সে অংশটা বড় হয়ে উঠছিলো আনুর মধ্যে সেই অংশটা আর নেই। এই খবরটা আনু জেনেছে। সেই থেকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে হাতে স্যালাইন লাগানো। পাশেই মা বাবা আর আট বছরের ছোট বোন অথৈ বসে আছে। সকলের চোখ জোড়া ভেজা। অনেক কেঁদেছে নিশ্চয়। আনু সেইদিকে তাকায় না। তার দৃষ্টি জোড়া মাথার ওপর ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানের পানে।
সেই মুহুর্তে নুপুর আসে কেবিনে। হাতে টিভিন বক্স। নুপুরের সাথে তার মা সোনিয়াও এসেছে।
ভীষণ গম্ভীর তিনি। দেবেন্দ্র কলেজের অনার্স বিভাগের শিক্ষিকা।
তিনি প্রথমেই গিয়ে আনুর সামনে দাঁড়ায়। এবং প্রশ্ন করে
“ভালো আছো?
আনু জবাব দেয় না। শুধু একবার তাকায় সোনিয়ার মুখ পানে। কিছু দিন আগেই সোনিয়া আনুকে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন
” তুমি যে রাস্তায় সে রাস্তাটা তোমার জন্য সঠিক নয়৷ সময় এবং সুযোগ থাকতেই রাস্তা বদলে ফেলো। পথ যতই সুখকর হোক এর শেষটা কিন্তু ভয়ংকর হবে।
আনু সেদিন ভীষণ আত্নবিশ্বাসের সঙ্গে সোনিয়াকে জবাব দিয়েছিলো
“আন্টি আমি সঠিক পথ বেছে নিয়েছি। পথটা যেমন সুখকর এর শেষটা হবে ভয়ংকর সুখকর। তুমি দেখে নিও”
সেইদিনের পর থেকে আনু আর সোনিয়া বেগম এর সাথে কথা বলে না। রীতিমতো দুরত্ব তৈরি করেছেন তার থেকে। আগের মতে ওনাদের বাসায়ও যায় না।
সে আবিরকে খারাপ বলেছে মানে সে আনুর আপন নয়।
আনুর চোখের কোণা বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে। সোনিয়া ভীষণ যত্নসহকারে পানি টুকু মুছিয়ে দেয়। এবং ভরসা দিয়ে বলে
“ইটস ওকে
মানুষ চেনা জরুরি। আর দুই একবার হোঁচট না খেলে মানুষ চেনা যায় না।
এই হোঁচট শিক্ষা নাও আর বাবা মায়ের মুখ পানে তাকিয়ে সামনের দিনগুলো সুন্দর করার চেষ্টা করো।
তোমার হয়ত বাবা মা ছাড়াও অনেকেই আছে। কিন্তু তোমার বাবা মায়ের তুমি ছাড়া কেউ নেই।
___
এক ভাই মা বাবা আর দাদা-দাদিকে নিয়েই নুপুরের পরিবার। নুপুরের বাবা নাসির শিবালয় উপজেলার রানিং চেয়ারম্যান। তার দাদা মেতালেব এক টানা দশ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন৷ এবার বয়স হয়েছে তাই ছেলের কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে নিজে বিরতি নিয়েছে।
সোনিয়ার স্টুডেন্ট পড়াচ্ছে। দাদিট হাঁটুর ব্যাথা বেড়েছে তাই তিনি নিজ কক্ষে শুয়ে আছে। নুপুর বাবা এবং দাদাকে খাবার বেড়ে দেয় এবং নিজেও খেতে শুরু করে।
খাওয়া শেষ করে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে নুপুর। বেওথা থেকে রিকশা নেয় কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু খাল পার তথা শিশু পার্কের কাছে আসতেই ভিড় দেখতে পায়। বিশাল বড় মিছিল বের হয়েছে। রাস্তার সকল রিকশা অটো লাইন বেধে দাঁড়িয়ে আছে। যতক্ষণ না মিছিল শেষ হবে ততক্ষণ তারা যেতে পারবে না।
বিরক্ত হয় নুপুর। শিশু পার্কের সামনে ছাত্রলীগ চত্তর বানানো হয়েছে। মূলত শেখ হাসিনার আমলে বানানো হয়েছিলো চত্তর খানা৷ তখন নাম ছিলো বঙ্গবন্ধু চত্তর। এখন সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে চত্তরের নাম বদলে ছাত্রলীগ চত্তর নাম হয়েছে।
ভীষণ সুন্দর জায়গাটা।
নওয়ান রিশাদ মুসতালিন ছাত্র লীগ চত্তরের রেলিঙের ওপর বসে সিগারেট খাচ্ছে।
কালো রংয়ের সিগারেট খানাকে টেনে চলেছে অনবরত। তার পাশে আরও কিছু সংখ্যক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
নুপুর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রিকশার ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ে। মিছিলের সামনে কয়েকটা ছেলে রয়েছে। তাদের হাতে বিশাল বড় ব্যানার।
মূলত শিক্ষা মন্ত্রী নায়েব তালুকদার এবার প্রধানমন্ত্রী পদে ভোটে দাঁড়াবে৷ তারই মিছিল চলছে।
নুপুর বিরবির করে আওড়ায়
“প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই রাস্তাঘাটে যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছে। হলে কি হবে আল্লাহ জানে।
ভিড়ের এক কোণা দিয়ে চলে যায় নুপুর।
ক্লাস মিস করা যাবে না কোনো মতেই।
এই ফালতু মিছিলের জন্য তো একদমই না।
__
কলেজে নুপুরের সব থেকে কাছের বন্ধু দিপু। দুজনের বন্ধুত্ব দীর্ঘ দশ বছরের। বলা চলে এক সাথেই বড় হয়েছে তারা।
পরপর দুটো ক্লাস শেষ করে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে নুপুর। তার পেছন পেছন দিপুও বের হয়৷
” আনুর কি খবর রে নুপুর?
“কেমন আর থাকবে?
আবির ভাই কেনো যে এমন করলো।
” আবির শালাকে আমার আগে থেকেই পছন্দ না।
কথা বলতে বলতেই ওরা কলেজের সামনে চলে আসে। এখানে ফুসকা ঝালমুড়ি ভেলপুরি এসবের দোকান বসে।
নুপুরকে দেখে দুটো ছেলে বলাবলি করতে শুরু করে
“এই যে সোনিয়া ম্যাম এর মেয়ে। যে মুসতালিন ভাইকে থাপ্পড় মেরেছিলো।
চলবে……………………।।
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৯
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২১
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১ (১ম অংশ+ শেষ অংশ)
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২০
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১০
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৪