#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:১১
#তানিশা সুলতানা
নওয়ান যে ছেলেটাকে মারছে তাকে চিনে নুপুর। নেহাল এর বন্ধু রনি। ভীষণ ভালো ছেলে। মাঝেমধ্যেই তাদের বাসায় যেতো। রাজনীতির প্রতি প্রবল ঝোঁক। যখন দেবেন্দ্র কলেজে পড়তো তখন ছোটখাটো এমপি মন্ত্রীর প্রোগ্রামে দেখা যেতো তাকে।
নুপুর এগিয়ে যায়। নওয়ান এর বাহু ধরে বলে ওঠে
“ওনাকে মারিয়েন না। মরে যাবে।
নওয়ান থামে। হাতের আঙুলের ভাজে থাকা সিগারেট ঠোঁটের ভাজে পুরে তাকায় নুপুরের মুখ পানে। মুহূর্তে একরাশ বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। হিজাব নেই মাথায়। ওড়না গলার সাথে ঝুলানো। বিগড়ানো মেজাজটা আরও বিগড়ে যায়। নিজের বাহুতে থাকা নুপুরের হাতখানা ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে দেয় এবং
ঝাঁঝালো স্বরে বলে ওঠে
“এখানে কি চাই?
বড্ড সাহস নিয়ে নুপুর জবাব দেয়
” ক্ষমতা আছে বলেই অপব্যবহার করবেন না। একটা নির্দোষ নিরিহ ছে
বাকিটা শেষ করার আগেই দুই হাতে নুপুরের গলা চেপে ধরে নওয়ান।
“নিজের লিমিটের মধ্যে থাকবি। ফা***কিং বিয়ে করেছি বলে অধিকার দেখাতে আসবি না। এক্কেবারে জানে মেরে দেবো।
বলেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পিস ঢালা রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে নুপুর। দুহাতের কনুই ছিলে যায়। হাটুতেও বেশ ব্যথা পায়। ফর্সা গলাটা লাল হয়ে গিয়েছে। জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে নুপুর। দুই হাতে ফোসকা পড়া জায়গাটা বালু লেগে যায়।
রনি নামক ছেলেকে কাতরাতে কাতরাতে বলে
” নুপুরকে ছেড়ে দিন। ওকে মারিয়েন না।
বল্টু চাপা স্বরে বলল
ভাই কি করছেন আপনি?
ছেলেরা নুপুরের পানে তাকিয়ে আছে। বড্ড মায়া হচ্ছে তাদের। বোধহয় বেশি আশ্চর্য হয়েছে।
নওয়ান রিশাদ মুসতালিন যখন গতকাল বিয়ের খবর ফেসবুকে পোস্ট করেছিলো। তখন সবাই ধরেই নিয়েছিলো “প্রেমে পড়েই বিয়ে করেছে”
কিন্তু এখন তার বিহেভিয়ার দেখে সকলেই শিওর হয়ে গেলো শুধুমাত্র নাসির শিকদারের ওই কথার জন্যই বিয়ে করেছে।
নুপুর দাঁতের দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ায়। ঘৃণা ভরা নয়নে নওয়ানকে এক পলক দেখে বড় বড় পা ফেলে সেখান থেকে প্রস্থান করে। নওয়ান সেদিকে এক পলক তাকিয়ে রনির সামনে হাঁটু মুরে বসে পড়ে।
“দেখলি ওকে?
সী ইজ মাই উমেইন।
প্রপোজ, লাভ লেটার, রোজ, লাইক, ইমপ্রেস এসবের ফা***** চিন্তা মাথাতে আনলেও জানে মেরে দিবো।
সী ইজ মাই।
এন্ড ইভার এন্ড ইভার এন্ড ইভার
গট ইট?
____
কলেজে আসতে মায়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। যেনো তুমি জানতেন নুপুর আসবে।
বিশাল বড় সাইজের একটা ট্রলি নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। নুপুর কে দেখে ঠোঁট কামড়ে কেঁদে ওঠেন।
নুপুরের ও কান্না পায় তবে নিজেকে সামনে নেয়। মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলে
“তুমি জানতে আমি আসবো?
সোনিয়া ওড়নার কোনায় চোখের পানি মুছে নেয়। নুপুরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
“আমার মেয়ে হার মানবে না। পড়ালেখা ছাড়বে না। আমি জানতাম যাই হয়ে যাক সে কলেজে আসবেই।
নুপুর জবাব দেয় না শুধু একটু হাসার চেষ্টা করে।
সোনিয়া আবার বলে
“কেমন আছো জিজ্ঞেস করবো না। শুধু বলবো হার মানবে না। এর শেষ দেখে ছাড়বে।
নুপুর মাথা নাড়ায়।
মায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে মায়ের বানিয়ে আনা খাবার খেয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ে নুপুর। বড্ড একা একা লাগছে। সকলেই কেমন কোণা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তার দিকে। ইতিমধ্যেই গোটা বাংলাদেশেই তার বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তার জন্যই বোধহয় সকলের এই অদ্ভুত দৃষ্টি।
এই মুহুর্তে আনু বড্ড মিস করছে সে।
অনু কোথায় আছে? এখন কেমন আছো? সবকিছু ভুলেছে? আবির ভাই ই বা কোথায়? এখন কেনো তাকে কলেজে দেখা যায় না?
না না কালকে আনুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। যেতে হবে তার বাড়িতে। আবির ভাইয়ের ব্যাপারেও খোঁজ নিতে হবে। সবটা এভাবে ছেড়ে দিলে হবে না।
ভাবনার মাঝে ক্লাসে স্যার ঢুকে পড়ে। পর পর সবগুলো ক্লাস শেষ করতে করতে বিকেল হয়ে যায়। নুপুর ট্রলি ব্যাগ খানা ঠেলতে ঠেলতে বের হয় ক্লাসরুম থেকে।
নিত্যদিনের ন্যায় আজকেও কলেজের মাঠে শহীদ মিনাদের সামনে ভিড়। নওয়ান গানের আসর জমিয়েছে। সকালে একজনকে বিদম পিটিয়প এখন জনাবের গান গাওয়ার মুড হয়েছে। তার গিটারের সুরে গোটা কলেজ মুখরিত। রাস্তায় চলমান গাড়ি রিকশা থেমে গিয়েছে। সকলেই মনোযোগ দিয়ে শুনছে নওয়ানের গান।
“জীবন খাতায় প্রেম কলঙ্কের দাগ দাগাইয়া
ছাড়িয়া যাইও না বন্ধু মায়া লাগাইয়া।
নুপুর সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে কলেজের গেট দিয়ে বেরিয়ে যায়। একখানা রিকশা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো তাকে দেখতে বলে ওঠে
“আপা রিকশায় উঠুন।
নুপুর রিকশা ওয়ালাকে ইগনোর করে আরো দু পা এগিয়ে যায়। কিন্তু রিক্সাওয়ালা হাল ছাড়ে না। পুনরায় বলে
“আপা নেতা সাহেব বলে দিছে। আপনারে নিয়ে যাইতেই হইবো। দয়া করে রিক্সায় উঠুন। নাহলে আমার রিক্সা ভেঙ্গে দিব।
নুপুর কথা বাড়ায় না চুপচাপ রিকশায় উঠে পড়ে। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে নওয়ানের পানে তাকাতেও ভুলে না। ঐ তো দু পা মেলে দিয়ে বসেছে শহীদ মিনারের মিনার ঘেঁষে। ব্যস্ত ভঙ্গিমায় আঙুল নারিয়ে গিটারে সুর তুলছে এবং চোখ দুটো বন্ধ করে গান গেয়ে চলেছে। ফর্সা মুখশ্রী ঘামে ভিজে যবুথবু। এ্যাডমস এ্যাপেলস গানের তালে নরছে। সাদা রঙের শার্টের বুকের কাছে তিনটে বোতাম খোলা। ফর্সা বুকের কালো লোক গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বড় বড় চুলগুলো এলোমেলো। এক কানের দুল, হাতে কতগুলো চুড়ি বয়লা, আঙুলে আংটি, গলায় মোটা চেন, এক্কেবারে পারফেক্ট বখাতে।
নুপুর নজর ফিরিয়ে নেয় রিকশা যেতে যেতে কানে ভাসে
“বেহায়া লাথি মাইরা দিস না ভাগাইয়া।
ছাড়িয়া যাইও না বন্ধু মায়া লাগাইয়া
___
বাসায় ফিরতেই মুখোমুখি হতে হয় সবিতা তালুকদারের। পায়ের উপর পা তুলে ড্রয়িং রুমে বসে ছিলেন তিনি। যেনো নুপুরের জন্যই অপেক্ষা করছেন।
“কোথায় গিয়েছিলে? আর কি নিয়ে আসলে?
নুপুর জবাব দেয় না। তাকে পুরোপুরি ইগনোর করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে নওয়ানের কক্ষে ঢুকে পড়ে। পেছন থেকে ভেসে আসতে থাকে সবিতা তালুকদারের অকথ্য ভাষার গালিগালাজ।
কক্ষে প্রবেশ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সে। লাগেজ খুলে একসেট থ্রি পিচ বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। সকাল থেকে গা গিনগিন করছে। এখন বেশ আরাম লাগছে।
গোসল সেরে বের হতেই দেখতে পায় স্নেহা খাটের ওপর বসে আছে। নুপুরকে দেখে একটু হেসে বলে
” তোমার হাতের কি অবস্থা?
সকালে তো খেয়েও যাও নি। আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। চলো দুজন এক সাথে খাবো।
নুপুর মৃদু হেসো বেলকনিতে নিজের জামাকাপড় মেলে দিয়ে আসে।
স্নেহা ততক্ষণে ভাত মাখানো শুরু করে দিয়েছে। নুপুর এসে পাশে বসতেই এক লোকমা ভাত তার মুখের সামনে ধরে
“হাত দিয়ে খেতে গেলে ঝাল লেগে জ্বলবে। আমি খাইয়ে দেই?
নুপুর মাথা নারিয়ে স্নেহার হাত থেকে ভাতের লোকমা মুখে পুরে নেয়।
“তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো আপু?
কেনোই বা এতো যত্ন করো?
” ও মা ভালোবাসবো না?
আমার ভালোবাসার ভালোবাসা তুমি। এই পৃথিবীর সব থেকে ভাগ্যবতী নারী। আমার ইচ্ছে করে তোমাকে কলিজার মধ্যে ভরে রাখতে।
চলবে
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৬+২৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৫(৫.১+৫.২)
-
অন্তরালে আগুন গল্পের লিংক
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১০
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৯
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২