#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:১
#তানিশা_সুলতানা
“তুমি দেখছো তাকে
ভাবছো যাকে
আসলে সে মানুষ নয়
সে বেঁচে আছে পৃথিবীর এক কোণে
সে মৃত মানুষের চিৎকার শুনে।
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ এর সামনে বিশাল একটা মাঠ রয়েছে। মাঠের ঠিক বা পাশে মেইন রোডের পাশে শহিদ মিনার অবস্থিত। সেই শহিদ মিনারে সামনে বসে গিটারের টুংটাং আওয়াজ তুলতে তুলতে গান গাইছে নওয়ান রিশাদ মুসতামিন। এই কলেজের প্রাক্তন স্টুডেন্ট সে। এই তো বছর পাঁচেক আগে ইংরেজিতে অনার্স শেষ করেছে।
এখনো মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়ে এখানেই আড্ডার আসর জমায়। তাদের সঙ্গ দিতে উপস্থিত হয় কলেজের শত শত স্টুডেন্ট। আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়। রিশাদের গিটারের আওয়াজ শুনতেই অনেকেই উপস্থিত হয়েছে। গানের গলা বড্ড সুন্দর। তার গান পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে।
ভীষণ পরিচিত এবং ছাত্রজনতার পছন্দের মুখ নিশাদ। যে কোনো প্রোগ্রাম মিছিল বা আন্দোলনে ছাত্রদের একবার ডাকলেই তারা হাজির হয়ে যায়। তার বিনিময়ে অবশ্যই মেটা অঙ্কের টাকা খরচ করে সে।
গান শেষ হতেই করতালির আওয়াজে চারিদিক মুখোরিত হয়। নিশাদ বাঁকা হাসে। গিটার গলায় ঝুলিয়ে পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাকেট বের করে। এবং এক খানা সিগারেট ঠোঁটের ভাজে পুরে নেয়। লাইটারের সাহায্যে সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে দেয় একটা ছেলে। তার নাম বল্টু। সর্বক্ষণ ছায়ার মতো রিশাদ এর পেছনে লেগো থাকে সে।
হঠাৎ ভিড়ের মাঝ থেকে একটা ছেলে বলে ওঠে
“মুসতালিন ভাই
কলেজের পেছনের ঝোপের আড়াল থেকে এক জোড়া কাপল পাওয়া গেছে। কি করবো তাদের?
রিশাদ বিরক্ত হলো বোধহয়। চার বছর আগেই বিশাক বড় একটা সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে সে। সেখানে স্পষ্ট করে লেখা আছে “কলেজের কোনো স্টুডেন্টকে কলেজের পেছনে মেয়ের সাথে দেখা গেলে কঠোর সাজা দেওয়া হবে। কলেজ পড়াশোনার জায়গা অশ্লীল কার্যক্রম করার জায়গা নয়”
এই চার বছরক হাতে গোটা কয়েকটা কাপলে ধরা হয়েছে কলেজের পেছন থেকে। রিশাদ তাদের কঠোর সাজা দিয়েছে। আজকেও তার ব্যতিক্রম হবে না।
তাই নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে বলে
“ধইরা আন। ছেলেটার পাখি দেখবো। উত্তেজনা আর পাওয়ারে ভরা পাখি দেখতে হইবো তো।
আরেকটা ছেলে বলে
“ভাই ওই যে পুকুর পাড়ে দাঁড়ায় আছে।
__
“কাঁদছিস কেনো আনু? কি হয়েছে তোর? আর আবির ভাই আপনিই বা ভয় পাচ্ছেন কেনো?
আনু জড়িয়ে ধরে নুপুরকে। নাক টানতে টানতে বলে
” নুপুর আমরা খারাপ কাজ করি নি। শুধু কথা বলছিলাম। আমাদের কথা বলাটা জরুরি ছিলো।
নুপুর আনুকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে বলে
“তুই কাঁদিস না প্লিজজ। আমি দেখছি ব্যাপারটা। শান্ত হ
তখুনি সেখানে উপস্থিত হয় রিশাদ এবং তার দলবল। কলেজ এর মাঠ বিশাল বড়। মাঠের ডান পাশে রাস্তা এবং বা পাশে পুকুর ঘাট। পুকুর ঘাটের এই দিকটা শুনশান নিরব। এখান থেকে শহিদ মিনারটা স্পষ্ট দেখা যায়। রিশাদ মূলত নুপুর এবং আনুকে দেখতে দেখতেই এগোচ্ছিলো। মেয়েদেরকে তার জঘন্য লাগে। আর প্রেম করা মেয়েরা তো তার দুচোখের বিষ। ঠিক কতোটা উত্তেজনা থাকলে একটা মেয়ে অচেনা বা,দুই চারদিনের চেনা পুরুষের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়, চিপাচাপায় গিয়ে অশ্লীল কাজকর্ম করে। তাদের মুখে থু।
রিশাদের উপস্থিতিতে ঘামতে শুরু করে আবির। এক পলক আনুর মুখের দিকে তাকিয়ে রিশাদের দিকে এগিয়ে যায়। বড্ড অনুন্নয়ের স্বরে বলে
” ভাই ওকে যেতে দিন। যা বলার আমাকে বলুন।
রিশাদ আবিরের বুকে ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দেয় এবং বড় বড় পা ফেলে আনুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“বে***শ্যা কাকে বলে জানিস?
তোর মতো মেয়েদের। জানোয়ার তোর বাপ মা কলেজে পাঠিয়েছে পড়ালেখা করতে। আর তুই চিপায় ঢুকিস হাতাহাতি করতে?
ওই বল্টু এই শালীরে পতিতালয়ে দিয়ে আয়৷ ওর কতো তে
বাকিটা শেষ করার আগেই রিশাদের গালে নরম হাতের শক্ত থাপ্পড় পড়ে। কেঁপে ওঠে সকলেই। রিশাদ আড়াআড়ি ভাবে ভ্রু কুচকে ফেলে। ঠিক যে জায়গাটায় থাপ্পড় পড়েছে সেখানে হাত দিয়ে মাথা তুলে তাকায়।
ছোট্ট একটা মেয়ে। হাইটে রিশাদ এর বুক ওবদি পড়েছে। সাদা রংয়ের হিজাব বাঁধা মাথায়। নাকের পাটাতন ফুলে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। কাজল কালো চোখ দুটো জ্বলছে ক্রোধের আগুনে। যেনো সেই আগুন জ্বালিয়ে দিবে নওয়ান রিশাদ মুনতালিনকে। সে
কাঁধে থাকা ব্যাগ ফেলে আঙুল তাক করে রিশাদের দিকে এবং বলে
” মাইন্ড ইউওর ল্যাঙ্গুয়েস। আমার বন্ধুকে একটাও বাজে কথা নয়।
আবিরের হাঁটু কাঁপছে। সে হাত জোর করে বলে
“নুপুর প্লিজজ তুমি আনুকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাও। ভাই প্লিজজ ওদের যাওয়ার অনুমতি দিন।
” কেনো চলো যাবে?
এতোগুলো মানুষের সামনে আনুকে অপমান করা হলো আর আমি মুখ লুকিয়ে চলে যাবো?
আবির নুপুরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক পলক দেখে নেয়। তারপর বলে ওঠে
“এই বল্টু সিগারেট ধরা।
বল্টু তারাহুরো করে একটা সিগারেট ধরিয়ে রিশাদ এর হাতে নেয়। নুপুর চোখ দুটে ছোট ছোট করে ফেলে। কতো বড় বেয়াদব হলে অনুতপ্ত না হয়ে স্যরি না বলে সিগারেট ধরাচ্ছে।
নুপুরের ভাবনার মাঝেই রিশাদ এক পা এগিয়ে তার কাছাকাছি আসে। মুহূর্তের মধ্যে বা হাতে নুপুরের কোমর জড়িয়ে ধরে ডান হাতে থাকা সিগারেট বাম গালে চেপে ধরে।
চিৎকার করে ওঠে নুপুর। আনুও শব্দ করে কেঁদে ওঠে। আবির রিশাদ এর পায়ের কাছে বসে পড়ে।
” ভাই ওকে ছেড়ে দিন। আমাকে মেরে ফেলুন। তবুও ওদের ক্ষমা করুন।
আবিরের কথা কানে তোলে না রিশাদ। বোধহয় শুনতেই পেলো না। সে তো গায়ে হাত তোলা মেয়েটার চিৎকার করে কলিজা ঠান্ডা করছে।
নুপুরের চোখ দুটো লাল হয়ে উঠেছে। গলার রগ ফুটে উঠছে। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করছে। প্রচন্ড যন্ত্রণায় কলিজা কাঁপছে।
রিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” আমি যাকে বে***শ্যা বলবো সে বে**শ্যা। আমি যা বলবো তাই হবে। খা**কির বাচ্চা তুই আমাকে থাপ্পড় মারিস কোন সাহসে? এরপর থেকে সাহস দেখানের আগে নিজের মুখটা আয়নায় দেখিস।
বলেই ছেড়ে দেয় নুপুরকে। ছটফট করতে থাকা নুপুর শান্ত হয়ে যায়। জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যাচ্ছে গাল। তবে ক্রোধ এবং অপমানের কাছে সেই কষ্ট কিছুই না। পোরা গালে হাত ছুঁয়িয়ে নুপুর তাকায় রিশাদের মুখ পানে।
“আমার পা ধরে ক্ষমা চা
আর এখান থেকে চলে যা।
নুপুর স্পষ্ট স্বরে জবাব দেয়
“ক্ষমা? তাও আপনার মতো জানোয়ারের থেকে? মরে গেলেও না।
আনু নুপুরের হাত ধরে। অনুন্নয়ের স্বরে বলে
” নুপুর ক্ষমা চেয়ে নে বোন।
তোর গালে বরফ লাগাতে হবে।
নুপুর পূণরায় আঙুল তুলে
“আপনার মতে জানোয়ারের মুখে থু।
বলেই আনুর হাত ধরে সেখান থেকে চলে যায় নুপুর। আরও কিছু কথা শোনাতো কিন্তু গালে প্রচন্ড জ্বালা করছে। মনে হচ্ছে জানটা বেরিয়ে যাবে।
ওরা চোখের আড়াল হতেই আবিরের বুক বরাবর লাথি মারে রিশাদ। খানিকটা দূরে সরে পড়ে আবির।
” শালা তুই ওই মেয়েকে বিয়ে করলে তোর বাপ মায়ের মুড্ডু কেটে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো আমি। মাইন্ড ইট
বলেই সে চলে যায়। অসহায় আবির সেখানেই বসে থাকে কিছু মুহুর্ত।
#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:১ এর শেষ অংশ
#তানিশা_সুলতানা
ছোপ ছোপ র/ক্তের দাগ বিছানা জুড়ে। সাদা বেডশিট র/ক্তে লাল হয়ে আছে। এলোমেলো কক্ষ। ড্রেসিং টেবিলের আয়না ভেঙে মেঝেতে পড়ে আছে। পড়ার টেবিলের বই গুলো ফ্লোর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যেনো ছোটখাটো একটা ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছে এই কক্ষ জুড়ে। অবচেতন আনু বিছানার মাঝখানে শুয়ে আছে অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায়। হাত জোঠা খাটের সঙ্গে বাঁধা।
এলেমেলো চুল, বিষন্ন চেহারা, ঠোঁট ফেটে র/ক্ত গড়াচ্ছে। চোখ দুটো ফুলে উঠেছে। দুই গালে লেপ্টে আছে নোনাজল। গায়ে চাপানো কামিজের চেইন খোলা। আনুর ইচ্ছে করছে চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলতে কিন্তু পারছে না। পা দুটো অবশ হয়ে আছে। নারাতে পারছে না। তলপেটে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। অনুভব করতে পারছে র/ক্ত ঝড়ছে।
প্রেগন্যান্সির কিট খানা অযত্নে ফ্লোরে পড়ে আছে। সেখানে দুটো দাগ স্পষ্ট।
অনেক দিন যাবত শরীর খারাপ তার। সাইন্স এর স্টুডেন্ট হওয়ার ফলে ভালো করে জানে প্রেগন্যান্সির স্টেপ গুলে। তাই তো শরীর খারাপের কারণ জানতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করেছে। এবং ফলাফল পজেটিভ।
সেই মুহুর্তেই আবিরকে কল করে বাসায় ডাকে আনু। এবং জানায় তার প্রেগন্যান্সির কথা।
“আনু তুমি পাগল হয়ে গেছো? আমি সবে অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়াশোনা করছি। কোনো জব নেই, বাবারও কারি কারি পয়সা নেই।
এই মুহুর্তে তো তোমাকে বিয়েই করতে পারবো না। বাচ্চার দায়িত্ব কিভাবে নিবো?
প্রেগন্যান্সি পজিটিভ এসেছে দেখার পরে যতটা না ভয় পেয়েছিলো আবিরের এরকম কথায় তার থেকেও বেশি ভয় পেয়ে যায় আনু। বরাবরই বন্ধু মহলে গর্ব করে বলে এসেছে ” গোটা দুনিয়া আমার বিরুদ্ধে চলে গেলেও আবির কখনোই হাত ছাড়বে না। সে সর্বদা আমার সঙ্গে থাকবে।”
কিন্তু আজকে আবিরের থেকে এমন কথা শুনে মনে হয় পায়ের তলার মাটি সরে গেছে।
” আবির কি বলছো তুমি? আমি কি করবো এখন?
আবির আনুর দুই গালে হাত রাখে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে
“জান প্লিজজ নষ্ট করে ফেলো। এই বাচ্চা আমাদের চাই না।
আনু ধাক্কা দিয়ে আবিরকে সরিয়ে দেয় নিজের থেকে। এবং কাঁদতে কাঁদতে অনুন্নয়ের স্বরে বলে
“ও আমাদের সন্তান। কি করে মেরে ফেলবো ওকে? এটা পাপ।
বিরক্ত হয় আবির। আনুর পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখা বই গুলো ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে
“বাল। কেয়ারফুল থাকতে পারিস না? কয় টাকা লাগতো একটা পিল কিনে খেতে? আজাইরা প্যারা দিতে আসছে। শা***য়া
মেরে ফেলতে না পারলে তুই ও মর।
আমাকে টানবি না এসের মধ্যে।
চলে যেতে নেয় আবির। আনু তার পা জড়িয়ে ধরে।
” আবির এমনটা করিও না। তুমি তো আমায় ভালোবাসো। এভাবে ফেলে যেয়ো না। আমি মরে যাবো।
আবির লাথি মেরে আনুকে সরিয়ে নেয়। তাল সামলাতে না পেরে ছিঁটকে পড়ে আনু। খাটের পয়ার সাথে মাথা লেগে বেশ খানিকটা কেটে যায়। গল গল করে রক্ত ঝড়তে থাকে সেখান থেকে।
তবুও থেমে থাকে না আনু। পূণরায় গিয়ে পা জড়িয়ে ধরে
“আমায় মারো, কাটো, বকো, তবুও ফেলে যেয়ো না। সারাজীবন তোমার পায়ের কাছে পড়ে থাকবো আমি। আমায় ছেড়ে দিও না।
আবির হাঁটু মুরে বসে আনুর সামনে। ডান হাতে গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” হুমম ভালোবাসি তোকে।
এখনো ভালোবাসবো।
বলেই গাল ছেড়ে দেয়। এবং দরজা বন্ধ করে। পূণরায় আনুর সামনে এসে তাকে কোলে তুলে নেয়। বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে বড্ড যত্নসহকারে কাটা স্থান হতে রক্ত মুছে দিতে থাকে।
“আনু বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলো প্লিজজজ।
তোমার বাবা মা জানলে কষ্ট পাবে। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না এখনই।
” আবির আমি মরে যাবো তবুও বাচ্চাটা নষ্ট করতে পারবো না।
প্রচন্ড রেগে গেলো আবির। কঠিন কিছু গালি আওড়িয়ে আনুর ওষ্ঠজোড়া দখল করে নেয়। মনের মধ্যে যত রাগ পুষে রেখেছিলো সবটা ঝাড়তে থাকে ওষ্ঠে।।
সেখানেই ক্ষান্ত থাকে না। উম্মাদের ন্যায় আনুর জামা টেনে খুলতে শুরু করে। বাঁধা দেয় আনু। আবিরের হাত চেপে ধরে আহত স্বরে অনুন্নয় করে বলে
“আবির প্লিজজ
সেসব শোনার মুডে নেই আবির। খাটের এক কোণায় পড়ে থাকা ওড়না খানা তুলে নিয়ে খাটের সঙ্গে আনুর হাত জোড়া বেঁধে দেয়।
তারপর বেপরোয়া পাগলা ঘোড়ার ন্যায় ভোগ করতে থাকে আনুর দেহ খানা। একপর্যায়ে প্রচন্ড আঘাত করা হয় তলপেটে। সেই আঘাত খানা এতোই গভীর ছিলো যে চোখ উল্টে ফেলে আনু। গলা দিয়ে আওয়াজ বের করতে পারে না।
শুধু কিছু মুহুর্ত ছটফট করতে থাকে। মরণ যন্ত্রণায় অনুভব করছে। মনে হচ্ছে এর চাইতে মরণও ভালো। তারপর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে দেহখানা।
ঠিক কতক্ষণ পরে আনু ছাড়া পায় সেসব জানে না। তবে আবিরের বলা শেষ কথা গুলো স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে
” এই বাচ্চা আমার না অন্য কারো সেটার কি প্রমাণ আছে? রিলেশনশিপ এর ছয় মাস পরেই ইন্টিমেন্ট হয়েছিলি আমার সাথে। না জানি আরও কতো ছেলেকে দেহ বিলিয়েছিস।
তোর মতো মেয়েকে বিয়ে করার থেকে পতিতালয়ের বে*শ্যাদের বিয়ে করা অনেক ভালো।
বলেই আনুর ফোন খানা হাতে নেয় আবির।
“আমি চলে যাওয়ার পরে নিশ্চয় এই ফোন দিয়েই কল করবি আমায়? শালী
বলতে বলতেই ফোন খানা ছুঁড়ে মারে ড্রেসিং টেবিলের পানে। মুহুর্তেই ফোনসহ আয়না খানা ভেঙে গুড়িয়ে যায়।
” এন্ড অফ ইউওর স্টোরি আনু।
নিজের শার্ট খানা গায়ে চাপাতে চাপাতে বেরিয়ে যায় আবির। আনুর চোখের কোণা বেয়ে দুফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে।
“আমি যাকে আমার সবটা দিয়ে ভালোবাসেছি সে আমায় কখনো ভালোই বাসে নি।
যার জন্য সবটা ছেড়ে দিয়েছি আজকে সেই আমাকে ছেড়ে দিলো। মরণ যন্ত্রণা বোধহয় এটাকেই বলে?
____
মানিকগঞ্জ জেলার সব থেকে সুন্দর এবং বিলাসবহুল বাড়িটি হচ্ছে তালুকদার মহল। বেওথা ব্রিজের অপজিট পাশে গুটিকয়েক মুদি দোকান এবং এক খানা মাদ্রাসা রয়েছে। সেই মাদ্রাসার পাশে অবস্থিত এই বাড়ি খানা সকলেরই নজর কাড়ে। পনেরো জন কর্মচারী প্রতিদিন বাড়িটা পরিচর্যা এবং সুন্দর রাখার দায়িত্বে রয়েছে।
বিশাল বড় লোহার গেইটের সামনে দুজন দারোয়ান অনবরত পাহাড়ায় থাকেন। শ খানেক সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে বাড়ি সব রাস্তা জুড়ে। শিক্ষা মন্ত্রীর বাড়ি বলে কথা।
সেই গেইটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে নুপুর। কিভাবে ঢুকবে ভেতরে এটাই ভেবে পাচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রীর বাড়ি। এমনি এমনি নিশ্চয় ঢুকতে দেবে না।
আর নুপুরে এই বাড়িতে ঢুকতেই হবে। কথা বলতেই হবে নওয়ান নামক অসভ্য বেয়াদব পুরুষটির সঙ্গে।
” এই মেয়ে তুমি কে? এখানে কি করছো?
পালোয়ানের মতো লম্বা আর কুচকুচে কালো রংয়ের একজন গেইট খুলে নুপুরকে জিজ্ঞেস করে। কালো মুখের কালো মুচ আর হাতে বন্দুক দেখে একটুখানি ঘাবড়ে যায় নুপুর। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে
“কাকু আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিবেন?
অসভ্য না না নওয়ান নেতার সাথে দেখা করাটা খুব জরুরি।
“অনুমতি নেই ভেতরে ঢোকার। চলে যাও।
বলেই পালোয়ানটা আবার ভেতরে ঢুকতে নেয় নুপুর বলে ওঠে
” কাকু আপনি ভীষণ সুন্দর। আর আপনার মুচ গুলো তো অসাধারণ। মনটাও কতো সুন্দর। এখন সুন্দর মানুষ এভাবে ঝাঁঝালো কথা বললে কলিজায় আঘাত লাগে তো।
পালোয়ানটা বোধহয় নুপুরের পামে ফুলে উঠলো। মুচে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
“ভেতরে
বাকিটা শেষ করার আগেই নুপুর বলে
” সুন্দর পুরুষদের মুখে না আর কুকুরের পেটে ঘি দুটোই মানতে পারি না আমি। হার্ট অ্যাটাক করার আগে হ্যাঁ বলে ফেলুন কাকু প্লিজজ
লোকটা কিছু বলার আগেই পেছন থেকে কেউ বলে ওঠে
“নুপুর তুই এখানে?
পেছন ফিরক তাকায় নুপুর। আরেহহ এটা নিরব। নুপুরর বন্ধু। একই সাথে পড়াশোনা করে ওরা।
” এটা তোদের বাসা?
“হ্যাঁ
ভেতর চল।
আংকেল ঢুকতে দিন ও আমার বন্ধু।
নুপুর খুশি হয়ে নিরবের সাথে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
” নিরব নওয়ান অসভ্যর সাথে দেখা করবো দোস্ত। খুব বেশি দরকার।
“হুমম আমি বুঝতে পেরেছি। ওই তো ভাইয়া।
নিরবের দৃষ্টি অনুসরণ করে নুপুরও তাকায় সেদিকে। দেখতে পায় সুইমিং পুল এর পাশে শুয়ে আছে অসভ্যটা। ঠোঁটের ভাজে সিগারেট। পরনে হাতা কাটা ব্যান্ডের টিশার্ট কালো রংয়ের আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট।
নেতা সাহেব এর পাশে বসে আছে তিন চারটা ছেলে।
নুপুর জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
” নিরব আমার সাথে চল দোস্ত।
“হুমম চল।
ওরা এগোতে এগোতে সেখানে একটা মেয়ে চলে আসে। ভয় পেয়ে আছে বোধহয়। কেমন কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। সাদা রংয়ের জামা পড়নে। কি মিষ্টি দেখতে।
মেয়েটাকে দেখেই নওয়ান ঠোঁটের ভাজ থেকে সিগারেট সরিয়ে নেয়। ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে বলে
” স্নেহা কি চাই?
স্নেহা বোধহয় কেঁপে উঠলো। শুকনে ঢোক গিলে বলে
“খেতে এসো।
নওয়ান উঠে বসে। পা ডুবিয়ে দেয় সুইমিং পুলের পানিতে। বড়বড় ঝাঁকড়া চুল গুলো হাত দ্বারা পেছনে ঠেলে বলে
” কে হই আমি তোর?
স্নেহা জবাব দেয় না।
নওয়ান ধমকের স্বরে বলে ওঠে
“স্পিক আপ ইডিয়েট। হু ইজ মি?
গলা কাঁপতে থাকে স্নেহার। কাঁপা স্বরে জবাব দেয়
” চাচাতো ভাই।
“ইয়েস
এ’ম ইউওর ব্রাদার। তো ভাই ডাকার জন্য কি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে দিয়ে ইনভিটিশন কার্ড পাঠাতে হবে?
স্নেহার চোখ পানি জমে। সেটাকে লুকিয়ে ধরে আসা স্বরে বলে
” ভাইয়া
“গুডড
এবার যাহহ। পরে খাবো আমি।
স্নেহা চলে যায়। নুপুর ভ্রু কুঁচকায়। কেমন অসভ্য এতো গুলো মানুষের সামনে নিজের বোনের সাথে বাজে বিহেভিয়ার করলো। এর থেকে বাজে ছেলে দুনিয়ায় দুটো আছে?
নুপুর বড় বড় পা,ফেলে এগিয়ে যায়।
নুপুরকে দেখেই বন্টু বলে ওঠে
” ভাই পেছনে দেখুন
নওয়ান আবারও ঠোঁটে সিগারেট পুরে নেয়। এবং পেছন ঘুরে তাকায়। নুপুরকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে
“এই বাল এখানে আইছে কেন?
নুপুর দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে নেয়।
” আপনার সঙ্গে কথা আছে আমার।
“তুই যে পরিমাণ হট। তোকে দেখে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বেডে নিতে ইচ্ছে করছে।
একবার টেস্ট করতে দে। তারপর কথা বলবো।
চলবে….
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৪
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১১
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১২
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৬
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৮