Born to be villains Golpo romantic golpo

Born to be villains পর্ব ৮


born_to_be_villains

methuburi_মিথুবুড়ি

পর্ব_৮

❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌

‘পেটের বাঁ দিকটায় অসহনীয় ব্যথা। তলপেটের নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত ধীরে ধীরে অবশ হয়ে আসছে শরীরটা। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়ে ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না ইমামা। কারিবদের পারিবারিক কবরস্থান শহরের অনেক বাইরে।একেবারে জনমানবশূন্য, নির্জন এক প্রান্তে। অনেকটা কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে তবেই পৌঁছাতে হয় লোকালয়ে। আশপাশে নেই কোনো বাড়িঘর, নেই যানবাহনের চিহ্ন। বাধ্য হয়ে হেঁটেই যেতে হবে পাকা রাস্তা পর্যন্ত।

‘এখন ভীষণ আফসোস হচ্ছে ইমামার, তখনই অফিসারের সঙ্গে চলে গেলে ভালো হতো। কিন্তু এখন আর কোনো উপায় নেই হাঁটা ছাড়া। পেটের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেলেও থেমে নেই সে। ঠিক সময়ে বাসায় না ফিরলে ইমান ওয়াসিম সন্দেহ করে বসবেন। একবার ইমান ওয়াসিমের সন্দেহের মুখে পড়ে গেলে সবটা আরও জটিল হয়ে যাবে।

‘কিছুদূর যেতেই হঠাৎ ধুলো উড়িয়ে হিংস্র গতিতে ছুটে আসা একটা বাইক বেপরোয়াভাবে তার সামনে এসে ব্রেক কষলো। চাকার কর্কশ শব্দে আঁতকে ওঠে দু’কদম পিছিয়ে গেল ইমামা। কম্পিত চোখের পাপড়ি জোড়া মেলে সামনে তাকাতেই দ্বিতীয় দফায় চমকে উঠল ইমামা। ঠিক একহাত দূরত্বে সেই ব্ল্যাকমাম্মাটা দাঁড়িয়ে আছে—হঠাৎ অশরীরী আত্মার মতো উপস্থিত হয়ে। ডেনিম জ্যাকেট পরিহিত মানবটার ঘাড় ডানে কাত করা।

‘লাল ধুলোমাটি কুয়াশার মতো চারপাশ ঢেকে রেখেছে। চারিদিক ধোঁয়াটে, নিস্তব্ধ। ধুলোর আস্তরণ একটু একটু করে মিলিয়ে যেতেই ইমামার চোখ সূক্ষ্ম হয়ে ছুটে গেল মানবের হাতের দিকে। সেদিনের মতো আজও তার দৃষ্টি গিয়ে থামল বাঁ হাতের পৃষ্ঠদেশে খচিত সাপের মাথার ট্যাটুতে। ভয়ংকর দেখতে ঘুটঘুটে কালো একটি সাপের মাথা৷ ইমামা ধীরে ধীরে মুখ তুলে তাকাল লোকটার দিকে। হেলমেটের ভেতর কালো নিনজা মাস্কে ঢাকা মুখ বিধায় চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। ঘাড় সোজা না বলে চোখের দিকটাও অস্পষ্ট। তবে ইমামা এটা নিশ্চিত এই মানবের চোখের মণি একদম ঘুটঘুটে কালো নয়।

‘সে গভীর মনোযোগে লোকটাকে পর্যবেক্ষণ করছিল, এমন সময় মানবটা হঠাৎ একটা হেলমেট তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“লিফট লাগবে, ম্যাম?”

‘এই জনমানবশূন্য, নিরিবিলি জায়গা অকস্মাৎ উদয় হওয়া এই অজ্ঞাত মানবের শীতল কণ্ঠে সম্বিত ফিরে পায় ইমামা। হঠাৎ করেই চমকে উঠল সে। তার কাছে কণ্ঠটা বেশ চেনা চেনা লাগল। ইমামার তির্যক দৃষ্টি তড়াক সংকুচিত হয়ে আবারও ছুটে গেল তার দিকে। বিহ্বলিত হয়ে তাকাল মানবের ডান হাতে ধরা হেলমেটের দিকে। তারপর কী যেন ভেবে মাথা নাড়িয়ে সম্মুতি জানিয়ে, তার হাত থেকে হেলমেট নিয়ে বাইকে উঠে বসল। কৃতজ্ঞ গলায় বলল,

“ধন্যবাদ।”

‘মানবের চেহারায় আচ্ছাদিত মাস্কের অন্তরালে থাকা রাশভারি মুখে ফুটে ওঠা শয়তানির ছাপ ইমামার চোখ এড়িয়ে গেল। মানব বাইক স্টার্ট দিতে চাবি ঘোরাতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই ইমামা পিছন থেকে হঠাৎ বলে উঠল,

“আমার ফোনটা একটু ধরবেন, কাইন্ডলি? ফোনের জন্য চুল বাধা যাচ্ছে না।”

‘মানবের চোখে ফুটে উঠে বিরক্তির ঝলক পিছনের সিটে বসা ইমামা রেয়ার মিররে দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেল। তবু সে ফোনটা বাড়িয়ে দিল। মানবটা অগত্যা ফোনটা হাতে নিল, তবে এবারও বাম হাত রেখে আগের মতোই ডান হাতে। ইমামা শুকনো ঢোক গিলল। মুহূর্তের ব্যবধানে আবারও খুচরো অজুহাত খুঁজে ব্যাগটা বাড়িয়ে দিল তার দিকে। এবারও সে ডান হাতেই ব্যাগটা নিল।

‘ইমামা হঠাৎ ডেকে উঠল,

“শুনছেন?”

“জি?”

‘সেই বরফগলা, শীতল কণ্ঠ। ইমামা ঘামতে শুরু করল। সে কাঁধ ঘুরিয়ে আশপাশ দেখল। চারপাশ নির্জন, নিস্তব্ধ। কেউ নেই। শুকনো গলা ভিজিয়ে কোনো রকমে বলল,

“কিছু না, স্টার্ট দেন।”

‘বাইক চলতে শুরু করল। চাকাগুলোর ঘূর্ণনে ধুলো উড়ছে। সেই ইমামার মনের ভেতর জমছে আতঙ্কের মেঘ। সারা শরীর ঘামে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। হাত কাঁপছে, ঠোঁট কাঁপছে। তবু আজ সে পিছিয়ে আসবে না। খুনির এত কাছে এসে ভয় পাওয়া মানে হেরে যাওয়া। সে ইটের জবাব পাটকেল দিয়ে নয়—ইট দিয়েই জবাব দেয় সে। জানের বদলে, জান যাবে।

‘কাঁপা হাতে ব্যাগের ভেতর থেকে রিভলভার বের করল ইমামা। ঠিক যখন পিছন থেকে মানবের ঘাড় লক্ষ্যভেদে কম্পিত হাতে ট্রিগারে চাপ দিতে যাবে, তখনই মানবের জ্যাকেটের ভেতর থেকে একটা চিকন, পাতলা, ঘুটঘুটে কালো সাপ ফণা তুলে বেরিয়ে এলো। মুহূর্তের মধ্যে হিংস্রভাবে হা করে ইমামার মুখে ছোবল মারতে উদ্যত হলো সেটা।

‘ইমামা ভয়ে চিৎকার করে চলন্ত বাইক থেকে ছিটকে পড়ল মাটিতে। তার পড়ে যাওয়া মাত্রই একটু সামনে গিয়ে বাইকটা থেমে গেল। ডেনিম জ্যাকেট পরিষেদ মানব ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল ইমামার কুণ্ঠিত মুখের দিকে। মুখোশের আড়ালে ঠোঁট বাঁকিয়ে, তুচ্ছ ভঙ্গিতে হেসে বলল,

“স্যরি ম্যাম! উফস, স্যরি লাভলি ওয়াইফ৷”

‘বলেই সঙ্গে, সঙ্গে চাকার কর্কশ শব্দ তুলে চলে গেল সে। ইমামা আহত অবস্থাতেও তড়িঘড়ি করে ফোন বের করে বাইকের নাম্বার প্লেটের ছবি তুলে রাখে।


‘ধুলোমাখা শরীরে উপরে যাচ্ছিল ইমামা। তখনই বসার ঘর থেকে ইমনের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। ইমামা পদযুগল থেমে ঘুরে দাঁড়ায়। ইমন বসার ঘর থেকে উঁকি দিয়ে বলল,

“এই আপু, জলদি ফ্রেস হয়ে আয়। একসাথে খাবো।”

‘ইমামা হালকা হেসে, মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে গেল। কিছু সময়ের ব্যবধানে ফ্রেস হয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলে গেল। ইমন তার জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল। সে পাশে বসতেই ইমন মুচকি হাসল বোনের দিকে তাকিয়ে। অতঃপর নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিল। ইমামাও খেতে শুরু করল। মিসেস নিহারিকা রান্না ঘর থেকে তরকারির বাকিগুলো এনে টেবিলে সাজিয়ে রাখছেন।

‘ভাত মাখতে গিয়ে ইমামা টের পেল, হাতের ক্ষতটা বেশ গাঢ়। তখন বাইক থেকে ছিটকে গিয়ে বালির ওপর পড়লেও হাতের তালুর চামড়া কিছুটা ছিলে মাংস বেরিয়ে গেছে। যার কারণে এখন খুব জ্বলছে। ইমামা খাচ্ছে না দেখে দেখে ইমন উদ্বেগ নিয়ে বোনের হাত দেখল। সচকিত চোখে ক্ষতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কথা না বাড়িয়ে সে নিজেই বোনকে খাইতে দিতে শুরু করল। ভাই-বোনের এই স্নেহময়
,স্নিগ্ধস্পর্শী মুহূর্ত দেখে মিসেস নীহারিকা হঠাৎ জ্বলে উঠলেন। তিনি রান্নাঘর থেকে তেড়ে এসে ইমনের মাথায় গাট্টা মেরে ধমক দিয়ে বললেন,

“তোকে বলেছিলাম পাঁচ মিনিটের ভেতর খাওয়া শেষ করে কোচিং-এ যাবি, এসব আদিখ্যেতা দেখাতে কে বলেছে তোকে?”

‘ভাইকে মারতে দেখে ইমামা প্রতিবাদ করে উঠল, “মা, ওকে মারছ কেন?”

‘মিসেস নীহারিকা রণমুর্তির রূপ ধারণ করলেন মুহুর্তেই। ইমামার ওপর চিড়বিড়িয়ে উঠলেন তিনি,

“তুই চুপ, একদম চুপ। আমাদের মা-ছেলের মধ্যে একদম আসবি না তুই।”

‘ইমানা আহত চোখে বলল,”মা, আমিও তোমার মেয়ে।”

‘সবসময়ের মতো মিসেস নীহারিকা আজও অল্পতেই চিৎকার, চেচামেচি শুরু করলেন,”তুই আমার মেয়ে না। আমি মানতে পারি না তোকে। আর কখনো আমাকে মা বলে ডাকবি না।”

‘আপাত ক্ষোভে গজগজ করতে করতে রান্না ঘরের দিকে হাঁটা ধরলেন তিনি। ইমামা ওঠে মায়ের পিছু, পিছু গেল। বুক ধরা কান্না গিলে কাঁপা গলায় বলল,

“যদি কখনো প্রমাণ হয়, আমি সত্যিই তোমার মেয়ে না, তখন কী করবে?”

‘মিসেস নীহারিকা থমকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকান। অস্পষ্ট এক উৎপীড়ন সৃষ্টি হয় তার ভেতর। কিয়ৎক্ষণ নিস্পৃহ চোখে ইমামার বিবর্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শীতল কণ্ঠে বললেন,

“যদি এমনটা কোনোদিন প্রমাণ হয়, তাহলে সেদিন স্বইচ্ছায় তোমাকে কাছে টেনে নিব আমি। সেদিন তুমি আমাকে মা বলে মেনে না নিলেও, তোমাকে মেয়ে হিসেবে কাছে টানতে চাইবো আমি। ছোট থেকে যেই ভালোবাসাগুলো চেয়ে এসেছ তুমি, সবটা দিবো তোমায়।”

‘হনহনিয়ে চলে গেলেন মিসেস নীহারিকা। ইমামার থুতনি ভেঙে আসে। হঠাৎ করে বুকের ভেতর টান দিয়ে ধরল, কিন্তু কারণটা ঠিক বোঝা গেল না। বুক হিম হয়ে দুই চোখ বাষ্পাকুল হয়ে উঠে। সে ছুটে যায় ভাইয়ের কাছে। ইমনের মাথাটা শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,

“ইমন, আমি তোর কী?”

‘ইমন সরলহাস্যে বলল,”আমার ইমায় আপু।”

“তুই আমার কী?”

“মিষ্টি ভাই।”

“সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে আমাদের সম্পর্কটা কী?”

‘ইমন বোনের উষ্ণ বুকে বিড়ালছানার মতো মিইয়ে গিয়ে দৃঢ়তাপূর্ণ কণ্ঠে বলল,

“আমরা ভাই-বোন।”

‘ইমনের চিত্ত শীতল প্রত্যুত্তরে ইমামা বুক ভরে নিশ্বাস টানল। ঠোঁটে এক চিলতে আলোড়ন খেলল। বুক মথিত দীর্ঘশ্বাস আলগোছে ছেড়ে চুমু খেল ভাইয়ের চুলে৷ রান্নাঘর থেকে ভাইবোনের আবেগমিশ্রিত ক্ষণ দেখে আড়ালে চোখ মুছলেন মিসেস নীহারিকা।


‘নিশুতি রাত। রূপালী থালার মতো গোল চাঁদ ওয়াসিম ভিলার ওপর খাঁড়া হয়ে আছে। ঘড়িতে সময় বারোটা চৌদ্দ।

‘ইমামা গুনগুন করে গান গাইছে, আর কেবিনেট থেকে একের পর এক জামা বের করে বিছানায় রাখছে। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের পর লাল সিল্কের গাউনটা বেছে নিল সে। গাউনটা আলাদা করে রেখে বাকি কাপড়গুলো আবার কেবিনেটে রাখতে যাবে, তখনই চোখ পড়ল সেই কালো কোটটার দিকে। কিছুদিনের গড়ে ওঠা বদঅভ্যাসে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সে আবারও কোটটা নাকের কাছে তুলে ঘ্রাণ নিতে থাকে। মন-মঞ্জিলে যেন হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো লেগে আছে পুরুষালি শরীরের সেই সুঘ্রাণ। এই ঘ্রাণে বিমুগ্ধ হয়ে বরাবরই ইমামার মন খুব অস্থির হয়ে উঠে, ঠিক যেমন এখন হৃৎস্পন্দন বেগতিক উঠানামা করছে। আবার অকারণেই, আনমনে হাসি ফুটে ওঠে ওষ্ঠপুটে।

‘ইমামা প্রসন্ন মুখে গাউন হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল চেঞ্জ করার জন্য। ফান্দে পড়িয়া বগা যেমন কান্দে, তেমনি মাইক্কার চিপায় পড়ে বদঅভ্যাস থেকে বেরুতে হয়েছে তাকে। তখন অফিসার মাহেশের কাছ থেকে আনা মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে ইমামা পুরো রুমে চিরুনি চল্লাশি চালিয়ে মোট চব্বিশটা হিডেন ক্যামেরা উদ্ধার করেছে। ভাবা যায় একটা মানুষ এতটা ডেস্পারেট আর বিকৃতমনা হলে শুধুমাত্র একটা রুমের মধ্যেই চব্বিশটা ক্যামেরা সেট করে রাখে, তাও আবার বেডরুমে!

‘হঠাৎ বাথরুমের ভেতর থেকে মুখ বাড়িয়ে রুমে উঁকি দিল ইমামা। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে সেট করা ক্যামেরাগুলোর দিকে তাকিয়ে মনখারাপের স্বরে বলল,

“আমার সব বন্ধুরা রাতে পার্টি করে, শুধু আমিই পারি না। বাবা আমাকে রাতে বের হতে দেয় না। আচ্ছা বলো তো, আমার এই ইচ্ছে কি কোনোদিনই পূরণ হবে না? …না, হবে—অবশ্যই হবে। আমি জানি, আমার ইচ্ছেও পূরণ হবে। কারণ, একজন বলেছিল, ‘চেয়েই দেখুন না’। আমি দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসছি।”

‘প্রথমে কথাগুলো অভিমানের সুরে বললেও শেষের কথাগুলোতে ছিল নিশ্চয়তা। যেন সে শতভাগ নিশ্চিত
তার চাওয়াগুলো বাস্তব হবেই। সে বলছিল এমন ভঙ্গিতে, ঠিক যেমন করে আধুনিক সমাজের মানুষ সিরিকে বলে— “হেই সিরি, প্লে দিস সং।”

‘কয়েক মিনিট বাদেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো ইমামা। খোলা জানালায় উঁকি দিতেই দেখতে পেল, নিচে একটা মই রাখা। ঠোঁটের কোণে ধীরে ধীরে ফুটে উঠল তৃপ্তির হাসি। সে জানত এমন কিছুই ঘটবে। খেলা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তবে এবার ইমামা একা খেলবে না, খেলাবে। দু’জন অজ্ঞাত মানুষ—যারা দু’জনেই প্রবল, দু’জনেই তার প্রতি ভয়ংকর রকমের আসক্ত। নয়ত কেউ এভাবে কারো পিছু পড়ে থাকে না। যদিও তাদের উদ্দেশ্য এখনও স্বচ্ছ নয়। কিন্তু ইমামা একদিন সবটা ঠিকই জেনে নিবে।

‘ইমামা এবার তাদের সেই আসক্তিকেই অস্ত্র বানাবে। তাদের পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করাবে, একে অপরের বিরুদ্ধে খেলাবে। তার জন্য তাকে আপাতত একজনের দিকে ঝুঁকতে হবে। আর সেই একজন আর.কে-কে বেছে নিয়েছে সে। তবে কেন সে আর.কে-কেই বেছে নিয়েছে তা সে নিজেও জানে না। হয়ত কৌশল,অথবা কোনো অজানা টান নাকি অন্যকিছু? তবে সে এটা খুব ভালো করেই জানে, সে যদি সুরাকারকে খুঁজে না-ও পায়, আর.কে কখনো হার মানবে না। সে ঠিকই তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে খুঁজে বের করবে। তাই কোনো সুযোগই সে হাতছাড়া করতে রাজি নয়।

‘সতর্কতায় ভর করে ইমামা ধীরে ধীরে মই বেয়ে নামতে লাগল দুইতলা থেকে। মাটিতে পা রেখে সর্তক চোখে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিল। নিঃসাড় শূন্যতা ঘেরা চারপাশ। বুক ভরে শ্বাস টেনে ইমামা নির্ভয়ে বাড়ির পিছনের গেইটের দিকে হাঁটা ধরল। একটা বিষয় লক্ষ করে খুবই আশ্চর্য হয় ইমামা। সে মই দিয়ে নামার সময় দু’জন গার্ড তাকে দেখেছে। অথচ, তারা এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, যেন তারা কিছুই দেখেনি।

‘বাড়ির পিছনে যেতেই ইমামা দেখতে পেল এখানেও দেয়ালের দু’পাশে দু’টো মই রাখা। ইমামা সাবধানে মই দিয়ে ওপাশে চলে গেল। তারপর শব্দহীন পদচ্ছাপ আর অস্থির নিশ্বাসের সাথে ছুটে রাস্তায় পৌঁছাতেই দেখতে পেল অন্ধকারে ছায়া শিকারীর মতো একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ইমামা শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে গেল। দেখতে পেল ফ্রন্ট ডোর খোলা, সিটের ওপর চাবি রাখা। ইমামা কুটিল হেসে গাড়িতে উঠে বসল। তারপর ড্রাইব করে সোজা অফিসার মাহেশের দেওয়া লোকেশনে চলে গেল।

‘নির্দিষ্ট জায়গায় অফিসার মাহেশ আগেই এসে অপেক্ষা করছিল ইমামার জন্য। ইমামা কালো গাড়িটা একপাশে রেখে নিঃশব্দে উঠে বসল তার গাড়িতে। গাড়িতে উঠে অফিসারের দিকে তাকাতেই ইমামার ভ্রু কুঁচকে যায়।
অফিসারের ভাবসাব অন্যরকম, একটু অচেনা।
ইমামা যেমন লাল গাউন পরে এসেছে,তেমনি মাহেশ ফর্মাল ছেড়ে পরেছে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। বুকের দু’টো বোতাম খোলা বিধায় সুবিস্তৃত,শক্তপোক্ত সুঠোম বুক দৃশ্যমান। এটা নিছক ফেক ডেট হলেও, তাদের দু’জনকে দেখলে খুব সহজেই মনে হতে পারে তারা সত্যিই এক প্রেমিকযুগল। ইমামাকে এভাবে তাকাতে দেখে অফিসার কপাল কুঁচকে বলল,

“কী হয়েছে? সুন্দর দেখলেই এভাবে তাকিয়ে থাকতে হয়?”

‘ভেবাচেকা খেলে গেল ইমামা। সে দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। ইতস্তত কণ্ঠে বলল,

“আজব তো, আপনি এতো সেজে এসেছেন কেন?”

‘হঠাৎ আকাশচুম্বী ধমক দিয়ে উঠল অফিসার,”চুপ!”

‘ইমামা থরথর করে কেঁপে ওঠে রক্তিম চোখে তাকাল অফিসারের দিকে। অফিসারের চোয়ালের পেশিগুলো টানটান। নাকের পাটা রাগে ফুঁসছে। সে আবারও মৃদু ধমকালো,

“সুন্দরী মেয়ের সাথে ডেটে এসেছি। একটু সেজে না আসলে তো পাবলিক পাড়ার ছোকরা ছেলে ভেবে কেলানি দিবে৷”

“আপনাকে পাড়ার ছোকরাদের মতোই লাগছে অফিসার।”

‘ধ্বংসাত্মক, বিস্ফোরক বোমার মতো বিস্ফোরিত হল অফিসার। বোয়াল মাছের মতো চোখ বড় বড় করে অবাক বিস্ময়ের সাথে বলে,

“কি-হ? সত্যি?”

‘ইমামা গুরু গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নাড়াল, “হাঁ। পাড়ার ছোকরা পোলাপানগুলোই সামনের বোতাম খুলে রাখে।”

‘মুখ বিকৃত করে ঘাড় একটু পিছিয়ে নিল অফিসার মাহেশ। ভাব এমন যেন কী গজবের কথা শুনে ফেলেছে। নাক সিটকিয়ে বলল,

“ক্ষ্যাত মেয়ে, এটা যে স্টাইল সেটাও জানে না।”

“কি?! আমি ক্ষ্যাত?” ইমামা চোখ বড় বড় করে তাকাল।

‘অফিসার ঠোঁটের কোণে কৌতুকমিশ্রিত হাসি টেনে বলল,

“না না, আপনি তো আমার মেডাম ফুলি।”

“মেডাম ফুলি মানে?”

“এই যে গালের ভেতর বেলুন ভরে, বাঘিনীর মতো আমার দিকে তেড়ে এলেন।”

‘এটা সত্য রাগ হলে ইমামার গাল ফুলে যায়। কিন্তু তাই বলে ‘মেডাম ফুলি’ ডাকবে এই লোক? আজব! সে ঝাঁঝিয়ে উঠল,

“আবার বাঘিনী! আপনি আসলেই একটা অসভ্য লোক।”

‘অফিসার দাঁত বের করে হেসে বলল,”পুরুষ মানুষ অসভ্যই হয়। যেগুলো সভ্য হয়, সেগুলোর মেশিনে ফিটিং থাকে না।”

“মানে?”

“মানে বুঝবেন না, বাচ্চা মানুষ।” বলে গাড়ি স্টার্ট দিল সে।

“এক্সকিউজ মি! আই’ম টুয়েন্টি ফোর!” ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল ইমামা।

‘অফিসার তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,”সো হোয়াইট? আমার থেকে ছয় বছরের ছোট, তাও যেনতেন না—একদম বাচ্চা ছোট।”

‘ইমামা বিরক্ত হয়ে চ’ বর্গীয় শব্দ ছুঁড়ে দিয়ে সিটের এক কোণে আরও গুটিয়ে গেল। বিরবির করে বলল,

“বুড়ো লোক একটা।”

‘অফিসারের কান এড়ায়নি। সে বাঁকা হেসে বলল,

“ভদ্রলোক বলে, জবাবটা দিলাম না।”

‘ইমামা আর কথা বাড়ানোর প্রয়োজন বোধ করল না। অফিসারও নীরব রইল। দু’জনের মাঝে হালকা উত্তেজনা জমে উঠলেও কেউ মুখ খোলেনি। অফিসার শাণিত দৃষ্টিতে চারপাশ পরখ করতে করতে এগোচ্ছিল সামনে। হঠাৎ তার চোখ গিয়ে থামল পিছনের এক লাল গাড়ির উপর।পরমুহূর্তেই ঝাঁঝালো উত্তেজনায় চেঁচিয়ে উঠল সে,

“মনেহয় শিকার পেয়ে গেছি!”

‘ইমামা ধড়ফড়িয়ে উঠল। জানালার বাইরে মাথা বাড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে অস্থির গলায় বলল,

“কি-হ! কোথায়? কোনটা?”

‘অফিসার মাহেশ গম্ভীর গলায় ধমক দিয়ে বসলো,

“আরে চুপ! এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? সোজা হয়ে বসুন। ভালো করে রাইট সাইডে দেখুন—পিছনের লাল গাড়িটা।”

‘ইমামা সোজা হয়ে বসলেও স্থির হতে পারল না। রেয়ার মিররে চোখ রেখে বলল,

“হাঁ, হাঁ, অনেকক্ষণ ধরেই দেখছি গাড়িটা।”

“ভুল না হলে ওটাই আমাদের শিকার,” ঠান্ডা স্বরে বলল মাহেশ।

‘ইমামা প্রশ্নবিহ্বল চোখে তার দিকে তাকাল।

“কীভাবে বুঝলেন? সে তো বাইকার!”

‘অফিসার গ্রীবা বাঁকিয়ে ইমামার চোখে চোখ রেখে কুটিল হেসে তাচ্ছিল্য করল,”বোকা মেয়ে।”

‘ইমামা শুকনো ঢোক গিলে নরম স্বরে অনুনয় করল,

“প্লিজ, বুঝিয়ে বলুন না।”

“ওয়েট।”

‘বলে হঠাৎ স্পিড বাড়িয়ে দিল অফিসার। ইমামা কেঁপে উঠে সিটবেল্ট শক্ত করে ধরে বসল। পরমুহূর্তেই অফিসার মূল রাস্তা ছেড়ে মোড় নিয়ে ঢুকে পড়ল এক নির্জন গলিতে। আশ্চর্যজনকভাবে লাল গাড়িটাও তাদের পিছু নিল। মুহূর্তেই সবটা পরিষ্কার হয়ে গেল ইমামার কাছে। সে তালি বাজিয়ে উচ্ছ্বসিত গলায় বলতে লাগল,

“ওয়াও! দ্যাটস গ্রেট, অফিসার!” আরও কিছু বলার আগেই তার কণ্ঠ থেমে গেল। চোখ বড় বড় করে ফিসফিসিয়ে বলল,”ওয়েট… এতোগুলো কালো গাড়ি এল কোথা থেকে?”

‘এক ঝাঁক কালো গাড়ি হঠাৎ করে উদয় হয়ে লাল গাড়িটার পিছু নিল সারিবদ্ধভাবে। অফিসারের কপালে গভীর ভাঁজ পড়ল। চিন্তিত গলায় আওড়ালো,

“স্ট্রেঞ্জ!”

‘ইমামা তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে “ওরা আপনার লোক?”

‘অফিসার না বোধক মাথা নাড়ায়। ইমামা চিন্তিত গলায় বলল,”তাহলে?”

‘হঠাৎ সে চেঁচিয়ে উঠল,”আইসসসসসসস!”

“কি?” ইমামার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে যায়।

‘অফিসার চোখমুখ খিঁচে কপাল চাপড়াতে লাগল আর বলতে লাগল,”কপাল! কপাল! কপাললললল!”

‘এবার অধৈর্য হয়ে ইমামা চেঁচিয়ে উঠে,”আরে, কী হয়েছে বলবেন তো!”

‘অফিসার আগে একটু স্থির হয়ে নিল। তারপর ঠান্ডা, ভারী গলায় বলল,

“একদিনে দু’টো শিকার। কিন্তু আমার প্রস্তুতি ছিল একটার জন্য। আমি শুধু একজনের জন্য মাঠে নেমেছি।।”

‘ইতিমধ্যে ইমামার চোখেমুখে বিস্ময় ছড়িয়ে পড়েছে। ও অনবরত শুকনো ঢোক গিলে যাচ্ছে টানটান উত্তেজনায়। ইমামা থতমত কণ্ঠে বলল,

“মানে, দু’টো সাইকো এখন একসাথে মাঠে?”

“ফাকিং ইয়েস,” দাঁত চেপে বলল অফিসার।

“কিন্তু এখন কীভাবে বুঝব, কে কারিবের খুনি আর কে সিডের?”

“সেটাই তো ভাবছি,” গম্ভীর গলায় বলল অফিসার। তার কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর হলো। ইমামা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবতে লাগল। অফিসার একহাতে গাড়ি চালাতে চালাতে অন্য হাতে ফোন বের করল। ব্যস্ত গলায় বলল,

“ওয়েট, আমি টিমের কাছে হেল্প চাইছি।”

‘বাঁধা দিয়ে কুণ্ঠিত কণ্ঠে ইমামা বলল,”ততক্ষণে দেরি হয়ে যাবে, অফিসার। আমাদের হাতে সময় খুব কম।”

“তাহলে এখন কী করব?”

“আমরা যাকে ধরতে এসেছি, আগে তাকেই ধরি।”

“কিন্তু কীভাবে বুঝব কে কারিবের খুনি, আর কে সিডের?”

‘ইমামা একটু থেমে হঠাৎ বলল,”লাল গাড়ি।”

‘অফিসার কপাল কুঁচকে তাকাল,”হুহ?”

“হ্যাঁ, লাল গাড়ি।”

“শিওর?”

‘ইমামা শক্ত ঢোক গিলে নৈঃশব্দ্যে মাথা নাড়ল। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে এটাই সুরাকার। কারণ, এতদিনে সুরাকারের সাথে অন্য কারও সম্পৃক্ততা টের পায়নি সে। মনে হয়নি তার সাথে অন্য কেউ জড়িয়ে আছে। তবে শুরু থেকেই মনে হয়েছে, আর.কে.-এর নিজস্ব এক সংগঠন আছে। তার দীর্ঘ, অদৃশ্য হাত ছড়ানো আছে সর্বত্র। আরেকটা জিনিসও তাকে ভাবিয়েছে। আর সেটা হল কালো রঙ। প্রথম দিন থেকেই এ রঙটা যেন তার প্রতিটি কাজ অনুসরণ করছে। লোকটার দেওয়া উপহার, তার পোষা ঈগল, কোট—সবই কালো। এমনকি আজকের গাড়িটাও কালো, আর যেসব গাড়ি লাল গাড়িটাকে ঘিরে ধরেছিল, সেগুলোও একই রঙের। মানে কালো রঙ। এইসব খুঁটিনাটি মেলাতে মেলাতেই ইমামা সঙ্কেত দিল অফিসার মাহেশকে। ইমামার ইশারায় অফিসার রহস্যময় হাসি ছুড়ে হঠাৎ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে উঠে,

“ওকে জানু, এবার দেখাবো আমার খেলা।”

‘বহু বছরের প্রশিক্ষণ আর তীক্ষ্ণ দক্ষতায় মুহূর্তের মধ্যে সে লাল গাড়িটাকে কালো গাড়িগুলোর ফাঁদ থেকে সরিয়ে এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গেল। তারপর হঠাৎ ইমামার দিকে তাকিয়ে চোখে এক ঝলক ইঙ্গিত ছুড়ে জানালা দিয়ে লাফিয়ে উঠল গাড়ির ছাদে। পরিকল্পনা মতো ইমামা তৎক্ষনাৎ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ঘুরিয়ে দিল লাল গাড়ির দিকে। দুই গাড়ি মুখোমুখি হতেই বজ্রের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল মাহেশ। সামনের কাঁচ ভেঙে সোজা ভেতরে ঢুকে পড়ল সে। শুরু হলো ভয়ংকর ধস্তাধস্তি। কিছুক্ষণের মধ্যে মাহেশ লোকটাকে গলা চেপে ধরে টেনে বের করে আনল গাড়ির বাইরে। রক্তঝরা ক্রোধে লোকটাকে মাটিতে ফেলে ইচ্ছেমতো মারতে থাকে।

‘ইমামা গাড়ি এককোণে রেখে ছুটে গেল ঘটনাস্থলে। তার ভয়ার্ত দৃষ্টি ছুটে গেল মার খেতে থাকা লোকটার হাতের দিকে। কিন্তু না, লোকটার দু’হাতে ট্যাটুর চিহ্নও ছিল না। ইমামা চিৎকার করে বলল,

“ইট’স নট হিম।”

‘অফিসার মাহেশ চমকপ্রদ হয়ে ইমামার দিকে তাকাল। বিরক্তে কপাল খিঁচে বলে,”হোয়াট?”

‘ইমামা শূন্য মুখে মাথা নাড়ায়,”হুমমম। আমরা তাকে ট্র্যাপে ফেলেনি, সে আমাদের ট্র্যাপে ফেলেছে।”

‘অফিসার মাহেশের কপালের পাশের রগ গুলো হিংস্রভাবে ফুলে উঠেছে। সে রক্তাক্ত লোকটার কলার চেপে ধরে রাগান্বিত কণ্ঠে জানতে চাইল,

“সত্যি করে বল, কে তুই?”

‘লোকটা গোঙাতে, গোঙাতে বলে,”আমাকে দয়া করে ছেড়ে দিন। আমি কিছু জানি না। আমাকে টাকা দেওয়া হয়েছে পিছু নেওয়ার জন্য।”

‘অফিসার মাহেশ কিছু বলতে যাবে তখনি সেই কালো গাড়িগুলো তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠল ইমামা,

“ওরা একে নিতে এসেছে অফিসার।”

“এটা আমার কেস। কান যখন পেয়েছি, টান দিয়ে মাথাটাও আমিই আনবো। আপনি গাড়ির পিছনে যান। এদিকটা আমি দেখছি।”

‘বলে অফিসার লোকটার কব্জি মুচড়ে এক ঝটকায় হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিজের হাতেও পরল অপর পাশটা। ইমামা তার নির্দেশে দ্রুত গাড়ির আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। ঠিক তখনি উপস্থিত হয় মাহেশের ট্রিম। এবার নীরব রাত মুহূর্তের মধ্যে ফেটে যায় গুলির শব্দে। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ভয়াবহ গোলাগুলি। ইমামা কাঁপতে থাকে প্রতিটি বিস্ফোরণের শব্দে। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ আওয়াজ যেন গুলির প্রতিধ্বনির সাথে মিশে যায়।

‘কিন্তু হঠাৎ দূর থেকে ভেসে আসে গিটারের সুর। চেনা, গভীর, বিষণ্ণ সেই সুর। ইমামার চোখ স্থির হয়ে যায়। শরীর হঠাৎ এক ঘোরে ভরে ওঠে। ধীরে ধীরে সে উঠে দাঁড়ায়। অজান্তেই পা বাড়ায় সুরের দিকে। কারও অদৃশ্য টান যেন টেনে নিচ্ছে তাকে। ঠিক সেই সময় কালো গাড়ি থেকে নেমে আসা বাদামি চোখের লোকটার ফোন বেজে ওঠে। পর্দায় জ্বলজ্বল করছে ‘Boss’ নামটা। তার গলা শুকিয়ে আসে। ফোনটা কাঁপা হাতে তুলে নিয়ে কিছু বলার আগেই ওপাশের গর্জন ভেসে আসে,

“হোয়ার ইজ শি?”

‘লোকটার চোখ আতঙ্কে বড় হয়ে ওঠে। দ্রুত চারপাশে তাকায়। না, ইমামা কোথাও নেই!

‘এদিকে গিটারের সুর অনুসরণ করতে করতে অনেকটা দূর এগিয়ে যায় ইমামা। একটা নির্জন, খোলা মাঠে পৌঁছাতেই দেখতে পেল সেই ব্ল্যাকমাম্মাটা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুষ্ক ঢোক গিলে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় ইমামা। যতই সামনে যাচ্ছে, বুকের ভেতর ভয় তত জেঁকে বসছে। তবুও থামে না। হঠাৎ গিটারের সুর মিলিয়ে অন্ধকারের ভেতর হারিয়ে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা গ্যাসবোমা এসে পড়ে তাদের মাঝখানে। মুহুর্তেই চারদিক ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। সেই ধোঁয়ার আড়াল ভেদ করে ধীরে ধীরে এক অবয়ব ফুটে ওঠে—সুরাকার। আজ মুখে নেই নিনজা মাস্ক, মাথায় নেই হেলমেট, নেই সেই পরিচিত ডেনিম জ্যাকেটও। গায়ে একটা কালো হুডি। তবুও ধোঁয়ার আবছায়ায় তার উপস্থিতি অনস্বীকার্য।

‘ইমামা নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে তার হাতের সেই গিটারটার দিকে। ওটাই কি তবে সেই গিটার, যে গিটার বাজিয়ে সে পাঠাতো প্রতিটি গানের ভিডিও?

‘ইমামা তার মুখ দেখার চেষ্টা করে। অথচ, দিনের সেই ভয়ংকর মুহুর্তের কথা মনে হতেই, অজান্তেই সে এক একপা পিছিয়ে যায়। আর ঠিক তখনি ধোঁয়ার ভেতর থেকে ভেসে আসে বিষণ্ন সেই সুর,

“Tujhe paa ke jawab mila hai asal,
Tu hai wo sawal Khuda ka,
Tu mila hai ye meri dua ka asar,
Tu mujhse door na jana,
Tere nazron ka dil pe hua hai asar,
Tu mere mehboob hai, janam…”

‘সুর থেমে যেতেই ইমামার অট্টহাসি ছিঁড়ে দিল চারপাশের নিস্তব্ধতা। তার ভারি, বিকৃত হাসিতে কেঁপে উঠে বাতাস। সামনে দাঁড়ানো মানুষটা আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। সে অবাক, নিশ্চুপ। হঠাৎ ইমামা গাউনের নিচ থেকে, হাঁটুর বেল্টে গোঁজা রিভলভারটা বের করল। তারপর সরাসরি তাক করল তার দিকে। তখনও সামনের মানুষটার চোখে কেবল অবিশ্বাস। তবুও সে নড়ল না, একটুও প্রতিরোধ করল না।

‘ইমামা ঠাণ্ডা, তেজি স্বরে চিৎকার করে বলল,

“বলেছিলাম না, আমাকে সহজ ভাবে নিস না। সুযোগ পেলে জান নিয়ে নেব। গুড বাই, সুরাকার।” বলে ট্রিগারে আঙ্গুল বসাল সে। বিকট শব্দে ছিন্ন হলো নীরবতা,

ঠাসসসসসস…

লেখিকার মন্তব্য (‘পর্ব ৬-এ রিয়েক্ট তিন হাজার প্লাস, অথচ পর্ব ৭-এ দুই হাজার। এতো পার্থক্য, বৈষম্য? আপনাদের যদি রিয়েক্ট দিতে কষ্ট হয়, তবে আমারও লিখতে কষ্ট হয়। আপনারা যদি মর্জি মতো রেসপন্স করতে পছন্দ করেন, তবে আমিও মর্জিমাফিক লিখতে পছন্দ করি। পরবর্তী পর্ব আশাজনীয় রেসপন্স আসলেই আসবে, আমার মর্জি অনুযায়ী🫰।)

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply