Born to be villains Golpo romantic golpo

Born to be villains পর্ব ৩


born_to_be_villains

methuburi_মিথুবুড়ি

পর্ব_০৩

❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌

“বাবা, আমি তোমারই তো মেয়ে ?”

‘ইমান ওয়াসিম চমকে পিছনে ফিরে তাকান। ইমামা দূর থেকে শীতল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চাহনি প্রখর এবং তীক্ষ্ণ। যা খুব সহজে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

‘খানিকটা অপ্রস্তুত দেখালো ইমান ওয়াসিমকে। একধরনের অজানা উদ্বেগ ফুটে উঠল তার নির্ভীক কঠিন মুখে। তিনি দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে দৃঢ়তাপূর্ণ কণ্ঠে আওড়ালেন,

“মানে?”

‘ইমামা সরাসরি বাবার সামনে এসে দাঁড়াল। ভণিতাহীন, শক্ত গলায় সোজাসাপ্টা জানতে চাই,

“তুমি আমার আসল বাবা নও?”

‘ইমান ওয়ামিসের কণ্ঠে অস্বাভাবিক কম্পন,”এ-এসব কী বলছ ইমামা?”

“সত্যিটা বলো বাবা।”

‘ইমামার কট্টর প্রশ্নবাণে ইমান ওয়াসিমের হতচকিত চোখদুটো এদিক-সেদিক তাকিয়ে যেন আশ্রয় খুঁজল। কিন্তু স্বয়ং শয়নশীলা যে আজ নিজে প্রাচীর হয়ে তার সামনে রূঢ়মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। শীতল ঘাম গড়িয়ে পড়ল পুরু ভ্রুজোড়ার কার্নিশ দিয়ে।

‘ইমান ওয়াসিম শক্ত ঢোক গিলে শুকনো চৌচিরে গলাটা সিক্ত করে বললেন,

“এসব বাজে কথা আবার কে দিয়েছে তোমার কানে?”

‘হঠাৎ বাদলে ভিজে উঠল ইমামার কণ্ঠস্বর। মেঘলা আকাশের নির্দয়, বিধ্বংসী বজ্রপাতে আকাশ ভেঙে কালো মেঘেরা আঁচড়ে পড়ল ঢেউহীন যন্ত্রণার ভারে মুষড়ে পড়া মেয়েটির চোখে। নিরবধি যন্ত্রণায় ভরে উঠল চোখের কোল।

“আমি সত্যিটা জানতে চাই। আমি জাস্ট ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি বাবা। ছোট থেকে মানুষের মুখে এসব শুনতে, শুনতে বিরক্ত আমি। সবার মনে এতো কীসের কৌতুহল আমাকে নিয়ে? সত্যি করে বলো না, আমি তোমার মেয়ে বাবা, তাই না?”

‘ইমান ওয়াসিম এগিয়ে এসে ইমামার মাথায় হাত রাখছেন। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে আলোড়ন জাগিয়ে নির্বিকার কণ্ঠে বললেন,

“তুমি আমারই মেয়ে। ওষুধ খেয়েছ?”

‘টুপ করে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল চোখ থেকে। ইমামা উপরনিচ মাথা নাড়িয়ে, বাবাকে জড়িয়ে ধরে হঠাৎ ফুঁপিয়ে উঠল। ইমান ওয়াসিম সময় নিয়ে মেয়েকে শান্ত করে বেরিয়ে গেলেন।

‘ইমামা চোখ মুছে ব্যাগ কাঁধে জড়িয়ে নিয়ে বেরুবে, তখনই ক্রিং, ক্রিং শব্দ ভেসে এলো মুঠোফোন থেকে। আবারও সেই অজ্ঞাত নাম্বার থেকে নোটিফিকেশন। ভীতিসন্ত্রস্ত হৃৎস্পন্দনে অকুতোভয়ী দন্ডিত হৃদয় শিউরে উঠল। ইমামা কাঁপা, কাঁপা হাতে ভিডিওটা ওপেন করতেই ভেসে এলো বিষন্ন সুর,

❝যদি বিরহে থাকে আমিও থাকি
কে বলো শেষে হবে আগে?
কেন যে এতো ভালোবাসা মরে…
শুধু সময় মনে রাখে

এতো শূন্যতা
এ মনে রাখি যে আমি
দেখে তো কেউ তো আর
বলে এ সবই পাগলামি।❞

‘সুরাকারের মুখ দেখা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে শুধু ছায়া অবয়ব। বিষন্নতার অন্ধকারে ডুবে থাকা একটি কক্ষে বসে কেউ গিটারে টুংটাং শব্দ তুলে নিঃসাড় শূন্যতা ঘেরা বুকে গান গাইছে। ভিডিওটা পিছন থেকে এমনভাবে করা হয়েছে যাতে করে শুধু গিটারের মাথা দেখা যাচ্ছে আর অনুভব করা যাচ্ছে গানের প্রতিটি লাইনে মিশে থাকা শীতল আত্মব্যথা।

‘স্কল করে নিচে যেতেই চোখে পড়ল নিঃস্ব শূন্যতায় বিবশ করা আরেকটি বার্তা…

“আমায় ভালোবাসলে না কেন রেড ওয়াইন? আর কেউ না জানলেও, তুমি তো জানতে, আমার মনে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি খুব অসহায়, বড্ড একা যে আমি। আমার হৃদয়ের ধ্বংসস্তূপ তুমি ছাড়া আর কেউ তো দেখেনি, তারপরও কীভাবে পারলে আমাকে ছেড়ে পালিয়ে আসতে? বল না রে জান।”

‘ইমামার মসৃণ কপোলে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফুটে উঠল। মুহূর্তের জন্য বাকশক্তি রহিত হয়ে গেল সে। কী হচ্ছে এসব তার সঙ্গে? কখনো ফোন করে কেউ বলছে—সে ইমামা নয়, আবার হঠাৎই পাঠিয়ে দিচ্ছে নৃশংস খুনের ভিডিও, পরক্ষণেই গেয়ে শোনাচ্ছে গান। এর মানে কী? এর আড়ালে কার হাত থাকতে পারে? না না… কার কার থাকতে পারে৷ কারণ, সুরাকার আর সেই অজানা মানুষ—যে ফোন করে বলেছিল সে ইমামা নয়—তাদের কণ্ঠস্বর সম্পূর্ণ ভিন্ন। দু’টোই প্রাইভেট নাম্বার; যার কারণে ধরা যাচ্ছে না কারা হতে পারে। তবে প্রশ্ন থেকে যায় কে তারা? কী উদ্দেশ্য তাদের? কিছুতেই মস্তিষ্কে ধরা দিল না এসবের উত্তর৷


“আই লাভ ইউ প্লিজ আমার গালফেন্ড হয়ে যাও৷”

‘অপ্রকৃতিস্থ আতঙ্কে চমকে উঠল হিয়া। পরক্ষণেই ফিক করে হেসে দিল গৌরবের ঠোঁটের মিটমিটে হাসি দেখে। হিয়া লাজুক হাসল। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে দুষ্টুমি। হিয়া গৌরবের হাত থেকে ফুলটা হাতে নিয়ে নিয়ে বলল,

“আই লাউ ইউ টু। ওয়েট আমার বয়ফেন্ডের সাথে ব্রেকআপ করে আসছি।”

‘বলে ওঠে দাঁড়াল হিয়া। গৌরব হেঁচকা একটানে হিয়াকে নিজের কোলের ওপর এনে ফেলল৷ তুলোর মতো নরম চিবুক শক্ত করে চেপে ধরে, রক্ত ছলকে ওঠা টগবগে কণ্ঠে বলে উঠল,

“এই ছেমরি এই, কীসের ব্রেকআপ। এক্ষুণি বিয়ে করব চল৷”

‘হিয়াকে কোলে নিয়েই ওঠে দাঁড়াল গৌরব। হিয়া আশপাশে তাকিয়ে চাপা গলায় ডাকল,

“গৌরব!”

‘গৌরব তৎক্ষনাৎ হিয়াকে কোল থেকে নামিয়ে ভদ্র ছেলের মতো আবারও আগের জায়গায় বসে পড়ল৷

“স্যরি ডার্লিং৷ আমি তো মজা করছিলাম। তোমাকে না আজ দারুণ লাগছে জান।”

‘ভেংচি কেটে পাশে বসল হিয়া৷ শুকনো মুখে বলল,

“ধন্যবাদ।”

‘গৌরব অবাক হয়ে জানতে চাইল,”শুধু ধন্যবাদ?”

“না, বিয়ে করব। চল মন্দিরে।”

‘মজার ছলে কিছু বলতে গিয়ে হিয়া হেসে মুখ চেপে ধরল। কিন্তু হঠাৎ করেই গৌরবের চোখে-মুখে নেমে এলো অদ্ভুত শীতলতা। গৌরব হঠাৎ পকেট থেকে সিঁদুরের কৌটো বের করে হিয়ার সিঁথি রাঙিয়ে দিলো লাল রঙে।

‘মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

“মন্দিরে যাওয়ার কী প্রয়োজন?”

‘সিঁদুরের টুকরো লাল রঙে হিয়া স্তব্ধ হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য। শরীরের প্রতিটি কোণে আকষ্মিকভাবে বিদ্যুতের শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল। কাঁপা হাতে সিঁথিতে হাত ছুঁইয়ে ছলছলে নয়নে তাকাল গৌরবের দিকে।

“এটা তুমি কী করলে গৌরব?”

‘গৌরব শান্ত স্বরে বলল,”কেন, ভালোবাসো না আমাকে?”

‘অশ্রু ঝরে পড়ল হিয়ার চোখ থেকে। কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে এলো, তবু কাঁদতে কাঁদতেই বলল,”খুব ভালোবাসি, পাগল।”

‘মুহূর্তেই গৌরবকে জড়িয়ে ধরল হিয়া। গৌরবও বুকের গভীরে টেনে নিল হিয়াকে। স্বামীসুলভ অধিকার নিয়ে রাঙা সিঁথিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বলল,

“তেমার প্রেমে আমি পাগল।”

‘হিয়া আবেগে ভেসে অঝোরে কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,”তুমি সত্যিই একটা পাগল।”

‘গৌরব হেসে উত্তর দিল,”আর তুমি সেই পাগলের বউ।”


“এই গাইসে রা, বিয়ে ডান। চল হানিমুনে যাই সবাই৷”

‘গৌরবের উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে সকলে কপাল কুঁচকে সামনে তাকাল। হিয়ার সিঁথিতে সিধুর দেখে ইমামা আর ইবরাতের কিছুই বুঝতে বাকি থাকে না। ওরা দু’জন ছুটে গিয়ে হিয়াকে জড়িয়ে ধরল। হিয়া লাজে আরক্ত হয়ে একদম জমে আছে। লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না আড়ষ্ট মেয়েটা। এদিকে গৌরব চব্বিশ কপাটি বের করে হাসছে।

‘কারিব নাক কুঁচকে বলল,

“হানিমুনে সবাই?”

‘গৌরব এগিয়ে এসে কারিবের কাঁধে থাবা মেরে বলল,

“আরে দাদুত নানি, সকলে মিলে বাইক রাইডে যাওয়ার কথা বললাম।”

‘ইমামা পিছন থেকে বলল,

“এই তোরা যা। আমি যেতে পারব না।”

‘গৌরব ব্যঙ্গ করল,”তোকে আবার কে কুতকুত দিল? গেলে কী বুকে জন্ডিস হবে, না পিঠে আলসার?”

‘ইমামা চোখ রাঙাল, “চুপ। সারাক্ষণ বাজে কথা। বাবা জানলে সমস্যা হয়ে যাবে। তাছাড়া এখন বের হওয়া ঠিক হবে৷”

“ঠিক ভালো বোঝায় বয়স তোর হয়েছে? এই তো সেদিনও দেখলাম হাফপ্যান্ট পরে ঘুরছিস।”

‘ইমামা জ্বলে উঠল। পায়ের দিকে ইশারা করে চিবিয়ে, চিবিয়ে বলল, “জুতা চিনিস, অসভ্য?”

‘নির্জ্জল সে ঘন মাথা নাড়িয়ে বলল,”না চিনি না। বাটা থেকে একটা কিনে চিনিয়ে দে না দোস্ত৷”

‘ইবরাত ছুটে আসল। গৌরবের সামনে হাত পেতে আমোদিত কণ্ঠে বলল,

“টাকা দে দোস্ত, আমি কিনে দিই।”

‘ইবরাতের কপালে টুক করে টোকা মারল গৌরব। ইবরাত ঝাঁঝিয়ে উঠবে, তার আগেই আরেকটা টোকা মেরে বলল,

“ইসসস, বিষ খাইবার টাকা পাইনা, আবার জুতা লাগাই। মাইয়া মাইনসের যে মনে রং কত।”


“আরে জান লজ্জা পাও কেন?”

‘ওপাশ থেকে শোনা গেল আরক্ত রমণীর চাপা কণ্ঠস্বর,”চুপ।”

‘অর্ক ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল, “ঠোঁটের সাথে ঠোঁট না লাগলে চুপ করানো যাই না জান।”

‘রক্তিম ছাঁচে গমরঙা গালদুটোতে পড়ল কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম লাজ। জবাব আসে না ওপাশ থেকে। অর্কের ঠোঁটে তখনও চাপা হাসির সয়লাব। সে নাজুক মেয়েটার অবস্থা আরেকটু করুণ করে দেওয়ার জন্য বলল,

“জান, হানিমুনে কোথাও যেতে চাও বলো না?”

“তোমার এসব আসতাফফিরুল্লাহ মার্কা কথা রাখবে?”

“আসতাগফিরুল্লার পরই কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ বলার পালা৷ মেয়ে হলে কিন্তু আমার নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখব৷”

“মেয়ের বাপ হতে হলে আগে বেডা হতে হয়। তুই তো শ্লা বেডি।”

‘অর্ক দ্রুত কান থেকে ফোন নামিয়ে ফেলল। গৌরব পাশে এসে দাঁড়ায়। ঠোঁটে বিটলামি হাসির রেশ। অর্ক শক্ত গলায় বলল,

“এই কী বললি তুই?”

‘গৌরব অবুঝ শিশুর মতো বলল,

“কী বললাম শুনিসনি? কানের প্রেসার কমে গিয়েছে? আচ্ছা আয় আগে ঘুরে আসি। পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো নে।”

‘বলে গৌরবের কাঁধ একহাতে সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে টানতে টানতে পিছনের গেইটের দিকে নিয়ে গেল। সামনের গেইটে ইমান ওয়াসিমের পালিত গার্ডরা দাঁড়িয়ে আছে অটলভঙ্গিতে। যেজন্য তার পিছনের গেইট বেছে গিয়েছে। সকলে অনেক জোরাজোরি করে ইমামাকে রাজি করিয়েছে।


‘সকলে মিলে ঠিক করেছে এই কোলাহলময় নগরী ছেড়ে আজ তারা ছুটবে গ্রামীণ পথে। গৌরবের বাইকের পেছনে বসেছে হিয়া, আরেক বাইকে পাশাপাশি কারিব আর অর্ক। ইবরাতের স্কুটির পিছনে হেলান দিয়ে বসেছে ইমামা। শহরের ভিড়-ভাট্টা পেরিয়ে তারা এখন অনেক দূরে৷ যেখানে বাতাস আরও নির্মল, পথ আরও ফাঁকা।

‘তাদের চিৎকার-হাসিতে চারপাশ মুখরিত। রাজপথ যেন মুহূর্তের জন্য তাদের দখলেই চলে গেছে। কারও চোখে বিরক্তি, আবার কেউ ঘাড় ঘুরিয়ে অবাক দৃষ্টিতে দেখছে কীভাবে তরুণ প্রাণগুলো মুক্ত আকাশের নিচে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মাঝেমধ্যেই কোথাও থেমে তারা ছবি তুলছে, কোথাও আবার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উপভোগ করছে নিরুদ্বেগ ভ্রমণের স্বাদ।

‘চায়ের বিল মিটিয়ে কারিব যে-ই অর্কের পিছনে বসতে যাবে, তখনই অর্ক বলে উঠল,

“পিছনে বস জুম্মা মুন্সী,তোকে সোজা জাহান্নামে পৌঁছে দিয়ে আসি।”

‘কারিব মুখে বিস্ময়মিশ্রিত হতবাক ফুটিয়ে, বিরক্তির সুরে বলল,

“একদম আজেবাজে কথা বলবি না বলে দিলাম।”

“খারাপ কী বললাম, হুহহ? শুক্রবার ছাড়া তোকে মসজিদের আশেপাশে দেখা যায় কখনো? শুক্রবারেও তো বোধহয় যাস শুধু স্টোরি দেওয়ার জন্য।”

‘কারিব নির্বিকার, নিরুদ্বেগ। সে বাইরে ওঠে বসতে বসতে বলল,

“যে যেমন, সে অন্যকেও তেমনই ভাবে।”

‘অর্ক তড়াক ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরল। ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি রেখে, ভ্রু নাচাতে, নাচাতে বলল,

“ওকে! আমি ইমামাকে বোনের চোখে দেখি। তুইও কী সেই চোখে দেখিস? দেখলে বল, ইমামা আমার দুঃসম্পর্কের আপন বোন।”

‘কারিব দাঁতে, দাঁত চেপে বলল, “কখনোই বলব না।”

‘কারিবের চোস্ত জবাবে অর্ক তাচ্ছিল্য করে হাসল।

“শ্লা ধান্ধাবাজ।”

‘কারিবের চোয়ালে ক্রোধের স্ফুরণ ঘটেছে। দৃষ্টি শক্ত হচ্ছে ক্রমশ। হঠাৎ করেই রক্ত ছলকে ওঠা তীব্র বলিষ্ঠ কণ্ঠে কারিব বলে উঠল,

“বাইক ছাড়বি না শট মেরে ফেলে দিব?”

‘অর্ক দ্রুত বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলল,

“না না, ব্যাথা পেলে আমার বউ খুব কাঁদবে। খুব ভালোবাসে তো আমায়।”


“এই ইমু অ্যাপস?”

‘ইমামা ইচ্ছাকৃতভাবে সাড়া দেয় না। সে চোখবুঁজে প্রকৃতির শীতল বাতাস আহরণ করছিল। ইবরাত আবারও ডাকল,

“এই ইমু?”

‘ইমামা নিশ্চুপ। ছটফটে সত্তার, অস্থিরচিত্তের আহবান গুলো সজ্ঞানে অবজ্ঞা করে সে ফোন বের করে আকাশের ছবি তুলতে শুরু করল।

‘ইবরাত বুঝল এবারে কাজ হবে না। সে এবার নাম ধরে ডাকল, “আরে এই ইমামা?”

“শুনছি।”

“আমি না কাল স্বপ্নে দেখেছি ফান্সের প্রেসিডেন্ট আমার জন্য বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে এসেছে।”

‘ইমামা ছবি তুলতে তুলতে নিরাসক্ত মুখে বলল,

“খুব ভালো তো। স্বপ্নের জিনিস স্বপ্নেই এসেছে৷”

‘খোশমেজাজ তৎক্ষনাৎ তিরিক্ষি মেজাজে পরিণত হলো।

“ধ্যাৎ।”

‘কিছুক্ষণ পর ইবরাত আবার ডেকে উঠল, “আচ্ছা শুন না!”

“শুনছি।”

‘হঠাৎ বর্ষণের মতো, লজ্জায় লাল হয়ে উঠল ইবরাতের গমরঙা পেলব মুখখানা। ও মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল,

“আমার না তৌফিক কে হেব্বি লাগে৷”

“ওই ছেলের ক্যারেক্টার ভালো না।”

‘ইবরাতের মন খারাপ হলো। তবুও সে বলল, “তাও আমার ভালো লাগে।”

‘ইমামা ফোন রেখে সোজা হয়। রক্তিম চুলগুলো নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে বলল,

“ভালো তো। প্রেমে পড়লে পান্তাকেও বিরিয়ানি মনে হয়।”

‘বাতাসের ঝাপটায় চুলগুলো অনিয়ন্ত্রিত। ইবরাত একহাতে স্কুটি নিয়ন্ত্রণে রেখে, অপর হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল,

“ও কিন্তু আসলেই বিরিয়ানি।”

‘এবার ইমামার কণ্ঠস্বর বেশ গম্ভীর শোনা গেল, “ও বিরিয়ানি না। ও পঁচা ভাত। তোর রুচি খারাপ, তাই ওর মতো নষ্ট একটা ছেলের কথা ভাবছিস৷”

“ভাবি তো কত ছেলেকে নিয়েই, মন তো দিব শুরু একজনকেই৷”

“তা কবে দিচ্ছিস?”

“আগে সামনে পেয়ে নিইনা শ্বশুরের পোলারে, তারপর।”

‘ইমামা সম্মতি জানিয়ে মাথা ঝাকাল,”আচ্ছা।”

“ইমু শক্ত করে ধরিস৷”

‘হঠাৎ ইবরাত স্পিড বাড়িয়ে গৌরবের কাছে চলে আসে। হিয়া দু’হাতে গৌরবকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা ফেলে চোখ বুজেছিল৷ ইবরাতের উচ্চস্বরে ধড়ফড়িয়ে উঠল ও।

“ওই গরু, আরও জোরে চালা। কেস হলে আমি থানা সামলাবো। তুই আরও জোরে চালা বেটা৷”

‘গৌরব চিৎকার করে বলল,

“তোর মরার শখ, তুই জোরে চালা ৷ আমি নিউলি ম্যারিড। এখনও অনেক কাজ বাকি আছে আমার। আমি পাঁচটা মেয়ের বাপ হবো, তাই না জান?”

‘হিয়া চিমটি কাটল গৌরবের বাহুতে। গৌরব কপাল কুঁচকায়৷ এতোক্ষণ নিজেই কত কী বলল, এখন আবার চিমটি কাটে। মেয়েদের মন যে কখন কী চাই, আল্লাহ মাবুদ জানে কেবল।

‘ইবরাত গলা হাঁকিয়ে বলল,

“শুধুমাত্র চাপার জোরে টিকে আছিস রে গরু, নইলে কবে কুত্তা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতো শ্লা।”

‘সাথে, সাথে জ্বলে উঠল গৌরব। নতুন বউয়ের সামনে এতো বড় অপমান সহ্য করতে না পেরে,”দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা” বলেই ঠাস করে ইবরাতের স্কুটিকে মেরে দিল। সঙ্গে, সঙ্গে তাল হারিয়ে ইবরাতের স্কুটি গিয়ে পড়ে গেল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গৌরবের বাইকটাও পড়ে যায়। মাটির রাস্তা ছিল বলে কেউই তেমন ব্যাথা পাইনি। চারজনেই গিয়ে পড়েছে কাঁদায়।

‘বাইক সাইড করে অর্ক আর কারিব দ্রুত তাদের দিকে ছুটে আসলে দেখতে পাই চারজনেই কাঁদায় পড়ে খিলখিলিয়ে হাসছে। তাদের হাসি দেখে দু’জনেও হেসে ফেলল। ওরা ধরাধরি করে বাকিদের কাঁদা থেকে তুলল।

‘ইবরাতের হাতের ব্যাথাটা তেমন ছিল না। কিন্তু ওঠে দাঁড়িয়ে গৌরবকে ঠাসিয়ে একটা চড় দিতে গেলে চড়টা গিয়ে পড়ল ওর কনুইতে। তারপর থেকে ব্যাথায় আর হাত নাড়াতে পারছে না ইবরাত। এজন্য বাধ্য হয়ে ইবরাতের স্কুটি চালাতে হচ্ছে অর্ককে। আর কারিবের পিছনে বসেছে ইমামা।

‘হঠাৎ ইমামার ফোন ভেজে উঠল। ইমামা ইচ্ছাকৃতভাবে কল এড়িয়ে যাচ্ছে। তার মনস্থির করে রেখেছে— থানায় গিয়ে সবটা জানাবে। খুঁজে বের করবে কে ওরা, যারা তাকে এভাবে বিভ্রান্তিতে ফেলছে। তার পরিচয় নিয়ে তাকে হীনমন্যতায় ফেলছে, নৃশংস খুনের ভিডিও পাঠাচ্ছে। রোহিতের লাশ এখনও পাওয়া যাইনি। সে সেই খুনের ভিডিওটাও দেখাবে। দুইদিন ভয়ে মুখ খুলতে না পারলেও এবার আর চুপ থাকবে না।

‘সামনের রাস্তা এবড়োখেবড়ো। না ধরে বাইকে বসে থাকা যাচ্ছে না। ওদিকে ফোনটা বেজে যাচ্ছে অনবরত। এবার না চাইতেও ফোন রিসিভ করল ইমামা। ফোনটা কানে তুলে যেই কারিবের কাঁধে হাত রাখতে যাবে, তখনই ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসে হিংস্র কণ্ঠেের গর্জন,

“এই আল্লাহর বান্দি এই, ওর কাঁধে হাত রাখবি না।”

‘আগত ঝাঁঝাল কণ্ঠের চিৎকার কেঁপে উঠল ইমামা। তার শরীরের কম্পনে কেঁপে উঠল কারিব নিজেও। বাইকের গতি ঠিক রাখতে পারে না সে। বাইকটা আবারও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গিয়ে পড়ল ঝোপে। এবার কনুই ছিঁলে গিয়েছে ইমামার। ইমামা উঠতে যাবে, তখনই একটা কালো গ্লাভস পরা হাত তার দিকে বাড়িয়ে দেওয়া হল, কেউ নতজানু হয়ে বলল,

“উঠুন ম্যাম।”

‘ইমামা চোখ বড় বড় করে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইল। বাংলাদেশে এর আগে এমন মানুষ সে দেখেনি। লোকটা একেবারেই ঘুটঘুটে কালো।শরীরে অদ্ভুত রকমের দৃঢ়তা ও শক্তির ছাপ। গলা শুকিয়ে এলো ইমামার লোকটা শরীর দেখে। শুকনো ঢোক গিলে ধীরে ধীরে লোকটার হাত ধরে সোজা হয়ে দাঁড়াল সে। বিস্ময়ে ভরা চোখে তাকিয়ে থাকল লোকটার দিকে। মন ভরে উঠল অগণিত প্রশ্নে। এত দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কে? তাও আবার এমন নির্জন জায়গায়?

“ধন্যবাদ।”

‘ইমামার কণ্ঠ শুনে লোকটা দাঁত বের করে হাসল। ঘুটঘুটে কালো মুখাবয়বে সেই দাঁত যেন হঠাৎ জোৎস্নার মতো দীপ্তি ছড়াল। ভারি কণ্ঠে, অদ্ভুত এক বিনয়ের সাথে সে জিজ্ঞেস করল,

“আপনি ঠিক আছেন তো, ম্যাম?”

“জ-জী।”

‘এদিকে কারিব খোঁড়াতে খোঁড়াতে উঠতে থাকল। বাকিরা দৌড়ে এলো কাছে। হিয়া উৎকণ্ঠায় ইমামার কনুই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে থাকে। ইবরাতও ইমামার মতো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে৷ তার চোখেমুখেও একই রকম বিস্ময়। সে অস্পষ্ট সুরে বলে উঠল,

“ও আল্লাহ গো! এ কী মানুষ, নাকি কালো আলুর বস্তা?”

‘ইমামা বিরক্ত হয়ে ইবরাতের দিকে তাকাল। তারপর আবার সামনে চোখ ফেরাতেই তার বুক কেঁপে উঠল। লোকটা নেই! এত অল্প সময়ের মধ্যে কোথায় গেল সে? তখনই ইমামার ফোন কেঁপে উঠল। কিছুক্ষণ আগেই যে নাম্বার থেকে কল এসেছিল, সেই নাম্বার থেকেই এবার এসেছে একটি মেসেজ…

“তুমি স্বাধীন পাখি, মুক্ত পাখি।
তবে তোমার আকাশ—আমার খাঁচা।”

📌কি, মজা পাচ্ছেন তো পড়ে? টুইস্ট, টুইস্ট ফ্লেভার পাচ্ছেন?

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply