Born to be villains Golpo romantic golpo

Born to be villains পর্ব ৪


born_to_be_villains

methuburi_মিথুবুড়ি

পর্ব_০৪

❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌

‘অফিসার মাহেশের মুখোমুখি বসে আছে ইমামা। মাঝখানে শুধু একটি ডেস্কটপ, এটুকুই দূরত্ব। জড়বৎ মূর্তির মতো নিশ্চল, আনত মুখে বসে আছে সেই কতক্ষণ ধরে। ইমামার অভিব্যক্তি দেখে অফিসার মাহেশের বিজ্ঞ দৃষ্টি সূক্ষ্মভাবে টের পাচ্ছে—মেয়েটা কিছু বলতে চাচ্ছে, অথচ বলতে পারছে না। আরও কিছুক্ষণ সময় দিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে কথোপকথন শুরু করলেন অফিসার মাহেশ।

“মিস ইমামা?”

‘কিছু সময়ের নিরবতা ভেঙে ক্লান্ত-ক্লিষ্ট অবয়ব তুলল ইমামা। শ্রান্ত দৃষ্টি। অফিসার মাহেশ প্রশ্নবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে তার অবসাদগ্রস্ত মুখপানে। ইমামা শব্দ করে নিশ্বাস ছাড়ল।

“আমার মনে হয় খুনগুলার সাথে আমি কোনো না কোনোভাবে জড়িত, অফিসার মাহেশ।”

‘অফিসার মাহেশ শূন্য অভিব্যক্তিতে ইমামার অবসন্ন মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। মনে হলো মেয়েটা আজ বড্ড ক্লান্ত। কণ্ঠে একধরনের ভঙ্গুরতা ফুটে উঠেছে। প্রথমদিনের সেই তেজ, সেই ঝাঁঝ নেই আজ। নিস্তেজ চোখে আজ কোনো প্রতিরোধের আগুন ছিল না।

‘পানির গ্লাসটা ইমামার দিকে এগিয়ে দিয়ে,পেশাদার কণ্ঠে বলতে শুরু করলেন অফিসার মাহেশ,

“দেখুন মিস ইমামা, আমি জানি না আপনার মনের ভেতর কী চলছে। তবে আজ আপনাকে দেখে একেবারেই ঠিক মনে হচ্ছে না। হয়ত কোনো কারণে আপনি আপসেট। আবার এটাও হতে পারে, সেদিন আমার কথাগুলো আপনাকে কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলি—রোহিতের লাশ আমরা পেয়েছি৷ আর সেটি ছিল ভয়ঙ্করভাবে বিধ্বস্ত। শরীরের ভেতর কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অক্ষত ছিল না। চোখ, ঠোঁট, দাঁত সব উপড়ে ফেলা হয়েছে। হৃদপিণ্ড শরীরেই রেখে দেওয়া হয়েছিল, তবে সেটিকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আসলে শরীরের একটি অংশও অক্ষত অবস্থায় ছিল না। তদন্ত করেই আমরা জানি রোহিত দীর্ঘদিন আপনাকে বিরক্ত করছিল। আর সিড, যার সঙ্গে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছিল৷ সেও চরিত্রগতভাবে ভালো ছিল না। দুইয়ে, দুইয়ে চার মিলিয়ে সেখান থেকেই প্রাথমিকভাবে আমরা আপনাকে সন্দেহ করি। কিন্তু আরও গভীরে খোঁজ নিতে গিয়ে অন্য চিত্র উঠে আসে। দেখা যায় রোহিত আর সিড অসংখ্য মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে, আর তাদের ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করেছে।আমাদের ধারণা ওদের মধ্যেই কোনো ভুক্তভোগী প্রবল আক্রোশ থেকে কোনো সিরিয়াল কিলারকে দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এত নৃশংসভাবে খু’ন করা কোনো মেয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। খু-নি নিশ্চয়ই অন্য কেউ।”

“খুনি দু’জন।”

‘অফিসার মাহেশ থমকালেন। চোখ ছোট, ছোট করে ইমামার দিকে তাকাতেই ইমামা আবারও বলল,

“খুনি একজন নয়, খুনি দু’জন।”

‘অফিসার মাহেশের চাহনিতে প্রশ্ন। ইমামা তার ফোনটা বের করল। সেদিনের পাঠানো সেই খুনের ভিডিওটা অফিসারের সামনে তুলে ধরে বলতে শুরু করল ইমামা,

“এটা রোহিতের খু-নে-র ভিডিও। কিছুদিন আগে এটা আমাকে একটি প্রাইভেট নাম্বার থেকে পাঠানো হয়েছিল। ভিডিওটি দেখলেই বোঝা যায়, খু-নি একজন বামপন্থী। সিডের লা-শ নিশ্চয়ই দেখেছেন? একজন বামপন্থীর পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় এককো-পে গ-লা আলাদা করা৷ বাম হাতে এত শক্তি থাকে না। সুতরাং সিডকে খু-ন করা ব্যক্তি আলাদা। তবে এটা স্পষ্ট, দুজনেই সা-ই-কো। কিন্তু এই সাই-কোর মধ্যেও কিন্তু প্রকারভেদ থাকে। যেমন এক ধরনের সাইকো থাকে, যারা অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়। তারা সেই ব্যক্তিত্বই খু-নের সময়ও ধরে রাখে। বলতে পারেন তারা সৌখিন প্রজাতির। এরা র-ক্ত ঝরানোতে আনন্দ খোঁজে, কিন্তু সেই র-ক্ত যদি নিজের গায়ে লেগে যায়, তখন তা ঘৃণা করে। এদের খু-ন হয় ধীর এবং পরিকল্পিতভাবে। তারা সময় নিয়ে খু-ন করে। কিন্তু এর লক্ষ্য ভিক্টিমকে য-ন্ত্রণা দেওয়া নয়। শরীরের অংশ কে-টে নেওয়াকে এরা একটি নকশার চোখে দেখে। সিডকে যে খু-ন করেছে সে এমন একজনই হবে। ওর শরীর থেকে মাং-স এত সূক্ষ্ণভাবে কেটে নেওয়া হয়েছে একফোঁটা যে র-ক্তও ছিটকে যায়নি। কিন্তু যখনই পেট কাটতে গিয়ে র-ক্ত ছিটকে তার শরীরে গিয়ে লাগে, তখনই সে উন্মাদ হয়ে এককো-পে শরীর থেকে গলা আলাদা করে ফেলে। শরীরে টুকরোগুলোও আর কাটা মাথাটা নিশ্চয়ই দেখেছেন অফিসার।

‘তাছাড়া, আরেক ধরনের সাইকো আছে—যারা হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং সহিংসতায় আনন্দ খুঁজে পায়। এরা খু-ন করে উল্লাসের সঙ্গে। রক্তে শরীর ডুবিয়ে নৃশংস কার্যক্রম শুরু করে। যা শুরুতেই ভিডিওতেই দেখা যাচ্ছে। এদের নৃশংসতা বর্বরতার সঙ্গে মিশে থাকে। তারা ভিক্টিমের আর্তনাদে আনন্দ খুঁজে পায়। এজন্য এদের খু-ন সবচেয়ে নৃশংস হয়। আমার মনে হয় রোহিতকে যে খু-ন করেছে সে মোটেও সাধারণ কেউ নয়।”

‘অফিসার হা করে তাকিয়ে আছে ইমামার দিকে। বিস্ময়ের ঢেউ তার চোয়ালে আঁচড়ে পড়ছে। অবাক হয়ে বললেন,

“আপনার কথা শোনে তো আপনাকেই সাইকো মনে হচ্ছে। সাইকো সম্পর্কে এতোকিছু জানেন কীভাবে?”

‘ইমামা শান্ত মুখে বলল,”আই’ম আ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বাফ।”

‘অফিসার মাহেশ চেয়ারের হেলান দিয়ে বসলেন। ঠোঁট প্রসার করে হালকা হাসি দিতেই বাঁ গালের টুকরো সৌন্দর্য ফুটে উঠল। বাঁ গালের সেই সৌন্দর্য ধরে রেখেই অফিসার মাহেশ নিরেট ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লেন,

“পছন্দের রাইটার?”

“ক্যালভিন কৌহিলো। সি.কে নামে পরিচিত। হি ইজ আ রাইটার ফ্রম মেক্সিকো। দ্য ফার্স্ট ডে আই স’ দ্য মার্ডার ভিডিও, ইট ফেল্ট লাইক আ ক্যারেক্টার স্ট্রেইট আউট অফ হিজ বুক। ইট সিমড অ্যাজ ইফ মাই ফেভারিট ক্যারেক্টার, দ্য সিরিয়াল কিলার আর-কে, হ্যাড কমিটেড দ্য মার্ডার। হি ইজ আ ব্রিলিয়ান্ট রাইটার।”

‘অফিসার মাহেশ ঠোঁট উল্টালো,”কী জানি! নোবেল পড়া হয় না তেমন। গুগলে সার্চ করে দেখতে হবে৷”

“পাবেন না৷ নেটে তার ব্যাপারে কোনো ইনফরমেশন দেওয়া নেই।”

“অদ্ভুত৷”

‘ইমামা নৈঃশব্দ্য গম্ভীর ভঙ্গিমায় মাথা নাড়াল। অফিসার মাহেশ বললেন,

“ভিডিওটা আমি রাখলাম। দেখছি কতদূর আগানো যায়৷”

‘ইমামা কিছু বলল না। চুপ হয়ে গেল৷ অফিসার কিছুক্ষণ দাম্ভিক স্থির দৃষ্টিতে ইমামার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে বলে উঠলেন,

“স্যরি ফর ইন্টারাপ্ট,বাট আপনাকে দেখে মোটেও মনে হয় না, বাগদত্তার অকস্মাৎ মৃত্যুতে আপনি ব্যথিত। আমার জানা মতে লং টাইম ধরে আপনাদের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। এতোদিনে কি বিন্দুসম অনুভূতিও জাগেনি সিডের জন্য?”

‘ইমামা চোখ রাখল অফিসারের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দাসুলভ দৃষ্টিতে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা অবজ্ঞা করে সে এক চিলতে হেসে বলল,

“আমি মানুষটা সাধারণ, কিন্তু একটু অন্যরকম। এটাকে অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য-ও বলা চলে। কেউ জান কুরবান করে ভালোবাসলেও তার প্রতি বিন্দুমাত্র অনুভূতি কাজ করে না, আবার না দেখা মানুষটার জন্যও মন অস্থির হয়ে ওঠে। সিডের সাথে আমার কখনোই ভালো সম্পর্ক ছিল না। সত্যি বলতে ওকে আমার পছন্দ-ও ছিল না। হি ইজ নট মাই টাইপ। শুধুমাত্র বাবার জন্য বিয়েটাতে রাজি হয়েছিলাম। যদিও মনকে বুঝিয়ে, শুনিয়ে মানিয়ে নিয়েছিলাম ততদিনে। কিন্তু পার্টিতে সেদিন ওকে অন্যকারোর সাথে দেখার পর মনে হলো, ওর থেকে জঘন্য করে এক্সিস্ট করে না। হাজারো নারীতে আসক্ত পুরুষ কখনোই বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কের যোগ্য নয়।”

‘একটু থেমে,

“আর আমি এই কথাটা খুব বিশ্বাস করি—Out of side, out of mind”

“না দেখা মানুষটা?” সুচারু চোখে তাকালেন অফিসার।

‘তৎক্ষনাৎ একধরনের উদ্বেগ ফুটে উঠল ইমামার পাথুরের কোমল মুখে। বুকের ভেতর তীব্র এক চাপ অনুভূত হল। অপরাধীর মতো ন্যায় দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সে। আবারও পিনপতন নীরবতা বিরাজমান কক্ষ। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ দু’টো ছোট পলি ব্যাগ নিঃশব্দে অফিসার মাহেশের দিকে এগিয়ে দেয় ইমামা। অফিসার ভ্রু কুঁচকে পলির দিকে তাকান। ভেতরে কিছু চুল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে একজন নারী এবং পুরুষের। ইমামা কেমন যেন জড়োসড়ো হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যেই। নিজের আড়ষ্টভাব দূর করতে একটু পরপর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে।

“আপনার আর আপনার বাবার?”

‘অকস্মাৎ কেঁপে উঠল ইমামা অফিসারের সন্দিহান গলায়। সরাসরি তীরের মতো ছোঁড়া অফিসারের কট্টর প্রশ্নবাণে দ্বিধাজড়িত চোখদু’টো এবার তুলল ইমামা। অযাচিত কারণেই হঠাৎ দুই চোখ বাষ্পাকুল হয়ে উঠল। অফিসার তার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছুঁড়তে যাবে তার আগেই ইমামা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠল,

“এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট আসার পর কথা হবে।”

‘অফিসারের শান্ত, দূরদর্শী চোখ দু’টোতে ধরা পড়ে যায় ইমামার আবেগশূন্য চেহারা অথচ প্রস্তর বুকের বাঁদিকের অস্থিরতা, অসহনীয় ব্যাথা। তিনি আর কথা বাড়ালেন না। অস্থিরচিত্তে পলি দু’টো ড্রয়ারে রেখে দিলেন।

‘ইমামা আলগোছে চোখের পানি মুছে নেয়। জানে না সে যা করছে, তা সঠিক কি না। তবু আপাতত আর কোনো উপায় নেই তার কাছে। টানা তিনদিন প্রতিদিন লাল গোলাপ পাওয়ার পর সন্দেহবাতিক হয়ে উঠেছিল ইমামা। আর সেই সন্দেহের মাঝেই ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। চতুর্থ দিন আর ফুল নয়, জানালার পাশে পড়ে ছিল ছোট্ট একটি চিরকুট। তাতে রক্ত দিয়ে বারবার লেখা থাকে কেবল মাত্র একটি বাক্য….

“ইউ আর নট ইমামা।”

‘ফুল আর চিরকুটের ব্যাপারে ইমামা কিছুই জানায়নি ইমান ওয়াসিমকে। একাই গোপনে তদন্ত চালিয়ে যেতে থাকে সে। গোপনে জানালার পাশের সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজে দেখার পর যা ধরা পড়ল, তা ছিল আরও অবিশ্বাস্য৷ কোনো মানুষ নয় বরং একটি ঈগল রোজ রাতে জানালায় ফুল আর চিরকুট রেখে যায়।

‘ইমামা বোকা নয়, আবার ভীতু মেয়েও নয়। দ্রুত বুঝে নেয় এখানে দু’জন আলাদা ব্যক্তি জড়িত। একজন ফুল, চিরকুট আর ফোনের পেছনে; আরেকজন সেই রহস্যময় সুরাকার। সুরাকরের উদ্দেশ্য এখনও তার কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু ফোন করা ব্যক্তির বার্তাটি খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারে ইমামা। সেই কারণেই আজ সে ইমান ওয়াসিমের সঙ্গে নিজের চুলও সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছে ডিএনএ টেস্ট করানোর জন্য।

‘অফিসার মাহেশ উঠে দাঁড়ালেন। বলবেন,

“আজ উঠি তবে?”

‘ইমামা তড়িঘড়ি করে বলে উঠল, “আমার আরেকটা সাহায্যের প্রয়োজন৷” ওর কণ্ঠে ইতস্তত ভাব৷”

‘অফিসার আবারও বসলেন চেয়ারে,”যেমন?”

‘অস্বস্তিতে গুম হয়ে আসছে মন, তবুও অপারগ হয়ে তাকে বলতেই হল,”আমি একজনকে খুঁজে বের করতে চাই।”

‘সেদিনের পার্টির ঘটনা সবটা খুলে বলল ইমামা। খুঁজে দিতে বলল সেই কোট ম্যানকে। পরিশেষে এটাও বলল,

“আমি চাইলে সেদিনের গেস্টদের লিস্ট ধরে তাকে খুঁজে বের করতে পারি। কিন্তু এমনটা করতে গেলে আমার বাবার কানে খবরটা পৌঁছে যাবে৷ যা একদমই অনুচিত হবে। বিষয়টা আমার জন্য যতটা কঠিন, আপনার জন্য ঠিক ততটাই সহজ, অফিসার। আশা করি বুঝতে পারছেন আমি কী বলতে চাইছি। যে করেই হোক, আমি তাকে খুঁজে বের করতে চাই।”

“কে সে?”

“জানি না কে সে! বাস্তবে সামনে নেই সে, তবু আচানক করে আমার অনুভবের গভীরে জায়গা করে নিয়েছে।”

‘অফিসার মাহেশ শূন্য চোখে ইমামাকে নিরীক্ষণ করে, ওর কণ্ঠের আকুলতা, ভেতরের অস্থিরতা টের পেয়ে হঠাৎ করেই বলে উঠল,” ইউ আর ফলিং মিস ইমামা।”

‘চমকে উঠল ইমামা। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে বসল,”আম আই রিয়েলি ফলিং ফর আ স্ট্রেঞ্জার্স?”


‘অফিসার মাহেশের অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে, তখনই ইমামার ফোন বেজে উঠল। আবারও সেই প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল। ইমামা তৎক্ষনাৎ কল রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো আদুরে সম্বোধন,

“হ্যালো প্রিন্সেস।”

‘ইমামা দাঁতে, দাঁত পিষল,”কে আপনি?”

‘যদিও সে জানে এইই সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি যে ফুল আর চিরকুট পাঠায়। ইমামা এখন খুব সূক্ষ্মভাবে দু’জনের কণ্ঠ স্বর আলাদা করতে পারে। বর্তমানে যে কলে আছে—তার কণ্ঠ ভারী, গুরুগম্ভীর। আর সেই সুরকার—যে শুধু গান গায় আর আবেগী বার্তা পাঠায়। তার কণ্ঠ বরফের শীতল আর শান্ত।

“গুড জব প্রিন্সেস।”

‘চমকে উঠল ইমামা। গমগমে গলায় জানতে চাইল,”মানে?”

‘ওপাশের রহস্যময় মানবটা সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হঠাৎ করেই হিসহিসিয়ে বলে উঠল,”আমিও চাই, তুমি আমাকে অনুভব কর, রেড৷”

‘সাথে সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ইমামার ভিতরে শীতল শিহরণ বয়ে গেল। আতঙ্কিত চোখে চারপাশে তাকাল সে। কোনো সন্দেহভাজন চোখে পড়ল না. দ্রুত একটা সিএনজি দাঁড় করিয়ে চেপে বসল। কাউকে না জানিয়ে ভার্সিটির ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এখানে এসেছিল সে৷

‘ইমামা সিএনজিটি ছাড়িয়ে যাওয়া মাত্রই রাস্তার অপরপ্রান্তে চোখে পড়ল সেই ব্ল্যাকমাম্মা। তবে আজকের চেহারায় সেই দিনের পরিচিত ভারি হেলমেট নেই। মাথায় কালো ক্যাপ, মুখে কালো মাস্ক, কানে গুঁজা সাদা এয়ারপড, আর গায়ে সেই ডেনিম জ্যাকেট। সব পরিচিত, সব রহস্যময় অথচ কেমন চেনা-অচেনা।

‘সিএনজি চোখের আড়ালে অদৃশ্য হতেই সে ফোন বের করে ইমামার ফোনে আবারও একটি মেসেজ পাঠাল,

“যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে কি কখনও ছেড়ে আসা যায়? ইউ নেভার, ইভার লাভড মি, রেড ওয়াইন।”


‘ইমামা তড়িঘড়ি করে ক্লাসে যাচ্ছিল, তখনি কোথা থেকে কারিব ছুটে এসে ইমামার সামনে দাঁড়ায়। ইমামাকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে এক শ্বাসে বলতে থাকে,

“আজকে থেকে তুই আমার বোন ইমামা। আমার তো কোনো বোন নেই, আজ থেকে তুই আমার আপন বোন। বিশ্বাস কর তোকে শুধু বোনের চোখে দেখি আমি। ভাই হিসেবে তোর প্রতি আমি সবসময় কোমল থাকব। তোর সব বিপদে, আপদে এই ভাইকে পাশে পাবি। কথা দিছি, শ্রেষ্ঠ ভাই হবো আমি।”

‘বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল ইমামা৷ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ওর বিস্ময়াকুলে কৃষ্ণকালো মনিদুটো স্থির হল কারিবের আতঙ্কিত মুখে। কোনো কারণে খুব ভয় পেয়ে আছে কারিব। কপাল বেয়ে শীতল ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। ইমামা কিছু একটা আচঁ করতে পেরে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ছুটে আসল গৌরব। ও চুলগুলো এলোমেলো, শার্টের বোতাম দু’টো ছেঁড়া। ঝড়ের বেগে, পাহাড়ি চঞ্চল নদীর মতো ছুটে এসে সে বলতে শুরু করল—হিয়া তাকে স্বামী নির্যাতন করেছে, তাও বিয়ের তিনদিনের মাথায়। এর যথাযথ কোনো কারণ নেই। কারণ, একটাই—সে সিগারেট খাচ্ছিল, এজন্য হিয়া তার মুখ থেকে সিগারেট নিয়ে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে রিভেঞ্জ হিসেবে সে হিয়ার ব্যাগ থেকে কিছু মেক-আপ আইটেম ফেলে দিয়েছিল, তারপর থেকেই তার উপর শুরু হয় এই মানবিক নির্যাতন।

‘এই ফাঁকে কারিব সেখান থেকে সরে গেল। সে গেইটের কাছে যেতেই দূর থেকে চোখাচোখি হল সেদিনের সেই মোটা, কালো লোকটার সাথে। লোকটা তার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে কিছু একটা বোঝাল। ভয়ে অনবরত শুকনো ঢোক গিলতে, গিলতে চলে গেল কারিব।

‘কালো লোকটা একটা দামি গাড়িতে উঠে বসল। কাউকে ফোন দেয়। কল সাথে, সাথে রিসিভ হয়ে ওপাশ থেকে ভেসে আসে ভারি, গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর,

“কাজ হয়েছে?”

“জী বস! শুধু ভয় দেখিয়েছি৷”

“গুড জব। এন্ড এনাদার ওয়ান?”

“স্যরি বস, এখনও ট্রেস করতে পারিনি৷”

“ট্রিগার কে নিয়ে রাতের ফ্লাইটে ব্যাক কর।”

“কিন্তু বস ব্ল্যাকহক?”

“ও, ওখানেই থাকবে বি ওয়ানের সঙ্গে। তোমার ওখানে থেকে আর কাজ নেই। তোমার জন্য মানুষ কাটা ঠিক আছে। গভীর জলের মাছ ধরা তোমার মোটা মাথা দিয়ে সম্ভব নয়।”

‘অপমানের ছাপে লোকটার কালো মুখ আরও কালো হয়ে উঠল। তবে সে রাগ না করে উলটে দাঁত বের করে হাসল। হেসে মাথা চুলকাতে, চুলকাতে বলল,

“ইয়ে মানে বস, আমিও খুঁজে বের করতে পারব।”

‘ওপাশ থেকে টগবগে কণ্ঠে ধমক ভেসে এলো,

“জাস্ট ডু হোয়াইট আই সেড।”


‘ঘড়িতে সময় তখন সাতটা। অনবরত বাজতে থাকা ফোনের কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙে গেল ইমামার। বালিশের নিচ থেকে হাতরে ফোনটা বের করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো গৌরবের কাঁপা কণ্ঠস্বর,

“ইমু, জলদি আয়। কারিব সুইসাইড করেছে।”

সবাই মন্তব্য করবেন। নতুন গল্প লেখার আগ্রহ এমনিতেই পাচ্ছি না। আপনাদের রেসপন্স আমার অনুপ্রেরণা। জানাবেন কেমন হয়েছে,,,,৷

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply