Golpo চোরাবালির পিছুটানে

চোরাবালির পিছুটানে পর্ব ২


চোরাবালির_পিছুটানে (০২)

জেরিন_আক্তার

রাহা সাথে সাথে শোয়া থেকে উঠে বসলো। তার মাথায় ঢুকছে না কি করে এখানে এলো। এমন সময় তার বাবা রুবেল চৌধুরী রুমে ঢুকলেন। রাহা তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,

“বাবা আমি এখানে কি করে এলাম? আমি তো বাহিরে গিয়েছিলাম!”

রুবেল চৌধুরী বলেন,

“তুমি নাকি তোমার বান্ধবীর সাথে ঘুরতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে আর তোমার বান্ধবীর ভাই তোমাকে দিয়ে গিয়েছে!”

রাহা কপাল কুচকালো। সব তার কাছে গোলমাল লাগছে। এই বান্ধবী, বান্ধবীর ভাই কোথায় থেকে এলো। আর তাকে কেনোই বা তখন সেন্সলেস করে দিয়েছিলো।

রুবেল চৌধুরী বলেন,

“আম্মু বাহিরে ডাক্তার এসেছে তোমাকে চেকাপ করতে চায়!”

রাহা খানিকটা ঘাবড়ে যায়। এখন যদি ডাক্তার আসে তাহলে ডাক্তার ধরে ফেলবে সে প্রেগন্যান্ট। আর বাড়ির সবাইও জেনে যাবে। এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।

রাহা তার বাবাকে বলে,

“বাবা তুমি ডাক্তারকে চলে যেতে বলো। আমি ঠিক আছি। আমার কিচ্ছু হয়নি। আর রাস্তায় রিক্সা দিয়ে যাওয়ার সময় মাথাটা চক্কর দিয়েছিলো।”

রুবেল চৌধুরী রাহার সামনে বসে বলেন,

“তবুও চেকাপ করে রাখা ভালো!”

রাহা বলে,

“বাবা আমি এখন চেকাপ করবো না। আমার কিচ্ছু হয়নি। এখন একটু ঘুমাতে পারলে শরীরটা আবার ঠিক হয়ে যাবে। আর তুমি চলে যেতে বলো নাহলে আম্মুকে চেকাপ করতে বলো!”

রুবেল চৌধুরী মেয়ের কথার সাথে কিছুতেই পেরে উঠলেন না। চলে গেলেন ডাক্তারের কাছে। রুবেল চৌধুরী চলে যেতেই রাহা বিছানায় থেকে নেমে দরজা বন্ধ করে দিলো। এরপরে সামনেই দেখলো তার ব্যাগটা। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখতে ব্যাগটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসলো। ব্যাগে টাকা পয়সা সব ঠিকই আছে। এমনকি ফোনও আছে। চোর হলে তো এগুলো নিয়ে যেতো, রেখে যেতো না। রাহার ব্যাগ থেকে সব বিছানায় নামালো। সাথে একটা চিরকুট পেলো। সাথে সাথে চিরকুটটা খুলে দেখলো কিছু লিখা আছে।

—রাহা,

সন্তান হলো আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। আর এইটা মেরে ফেলা পাপ হবে আপনার।

                                                      ..........

এই টুকুই লেখা আছে চিরকুটে। রাহা বেশ অবাক হলো। সে মা হতে চলেছে এইটা তো কেউ জানে না। তাহলে এই চিরকুটে যে লেখা তাহলে কে লিখলো এই চিরকুটটা। রাহা চিরকুটটা নিয়ে দুকরে কেঁদে উঠে। অচেনা একজন বলছে এই বাচ্চা রাখতে আর তার নিজের ভালোবাসার মানুষ, তার স্বামী বলছে বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলতে। রাহা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। দোটানায় পড়ে গিয়েছে।

রাতের খাবার খাওয়ার জন্য রুমানা চৌধুরী এলেন রাহার রুমে। রাহা তার মায়ের সাথে চলে গেলো নিচে। খাবার টেবিলে এসে বসলো রাহা। রাশেদ চৌধুরী রাহার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“রাহা আম্মু, তোমার শরীর এখন কেমন লাগছে? নিচে আসতে গেলে কেনো? খাবারটা উপরেই পাঠিয়ে দিতো!”

রাহা বললো,

“না বড় আব্বু এখন ভালোই লাগছে তাই নিচে এসেছি! আর আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করো না তো বড় আব্বু!”

রাশেদ চৌধুরী নরম গলায় বলেন,

“তোমায় নিয়ে চিন্তা করবো না তো কাকে নিয়ে করবো। এখন তুমিই আমাদের চোখের মনি। তোমার কিছু হলে আমাদের কারোরই চোখে ঘুম থাকে না। আর মিষ্টিতো চলেই গেলো আমাদের ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে। মেয়েটা কোনো যোগাযোগ করে না আমাদের সাথে।”

রাহা মাথা নত করে রইলো। পাশে থেকে রুমানা চৌধুরী বলেন,

“ভাই সব হয়েছে আমার ছেলের জন্য।”

রাশেদ চৌধুরী বলেন,

“তোমার ছেলে আর আমার মেয়ে দুজনের ভুলের জন্যই ওরা বাড়িছাড়া। ভুল বুঝাবুঝি করে দুজনে দুই-প্রান্তে। অনেক তো মিল করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কেউ রাজি না।”

মিষ্টি বাড়ির সবাইকে যেদিন ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলো সেদিন রাদিফ তা অস্বীকার করে। রাদিফ তার কিছুদিন পরেই জাপানে চলে যায়। মূলত রাদিফ জাপানে থেকেই পড়াশোনা করতো। এখন বিজনেস করে। সেখানেই এখন রয়েছে। আর মিষ্টি তার ফুফুর সাথে গ্রামে থাকে। রাশেদ চৌধুরী আর রুবেল চৌধুরী গিয়েছিলাম মিষ্টিকে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু মিষ্টি আসেনি।

সায়মা চৌধুরী রাহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,

“খেয়ে নে, খেয়ে রুমে গিয়ে রেস্ট নে তাহলেই দেখবি ভালো লাগবে। মিষ্টি আর রাদিফের যখন ভালো লাগবে তখন আসবে।”

রাহা খাবার খেয়ে সাথে সাথে নিজের রুমে চলে এলো। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে সাথে সাথে ওয়াশরুমে চলে গেলো। এতক্ষন খুব কষ্টে বমিটা আটকে রেখেছিলো।

রাহা চোখ-মুখ ধুয়ে রুমে এসে বিছানায় বসলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো রাদিফ কল দিয়েছে। রাদিফ সেই ঝামেলার পরে বাড়ির কারো সাথে তেমন কথা বলে না। শুধু রাহার সাথেই যোগাযোগ রেখেছে।

রাহাও ভেবে রেখেছিলো তার ভাইকে কল দিয়ে বাচ্চার কথাটা জানাবে। রাহা কল দিলো রাদিফকে। রাদিফ কল রিসিভ করে বলে,

“হ্যালো রাহা ভালো আছিস?”

“হ্যা ভাইয়া ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”

“ভালো আছি।”

রাহা নিচু স্বরে বলে,

“ভাইয়া তোমার সাথে কিছু কথা আছে!”

“হ্যা বল!”

রাহা ইতস্তত বোধ করলো।

“ভা ভাইয়া আগে বলো তুমি কোনো রাগারাগি করবে না!”

রাদিফ হেসে বলে,

“তু্ই বল! আর কখনও কি দেখেছিস আমি তোর উপরে রাগ করেছি!”

“না!”

“তাহলে এই ভাইকে বল!”

রাহা নিচু স্বরে বলে,

“ভাইয়া আমি আর রাজ ভাইয়া দুজন-দুজনাকে ভালোবাসি এমনকি লুকিয়ে বিয়ে করেছি।”

এই শুনে রাদিফ মুচকি হেসে বলে,

“কি বলছিস তু্ই? তু্ই রাজকে বিয়ে করেছিস? এতো ভালো কথা! তবে আমি অনেকদিন আগে রাজের সাথে কথা বলেছিলাম বললো তোকে নাকি ভালোবাসে। আর তোরা বাড়িতে জানিয়েছিস?”

“না ভাইয়া জানাইনি!”

এই শুনে রাদিফ বলে,

“জানাসনি কেনো?”

রাহা তৎক্ষণাৎ কেঁদে বলে উঠে,

“ভাইয়া রাজ এখন আমায় অস্বীকার করছে। বলেছে আমাকে ভালোবেসে প্রতিশোধ নিয়েছে।”

এই শুনে রাদিফ কিছুক্ষণ থমকে গেলো। জিজ্ঞাসু সুরে বলে,

“কিসের প্রতিশোধ?”

“তুমি মিষ্টিকে সবার সামনে অস্বীকার করেছো বলে সেইটার প্রতিশোধ নিয়েছে আমার সাথে। ভা ভাইয়া এখন রাজের সন্তান আমার গর্ভে। আমি ওকে বলেছি বাড়িতে জানাতে কিন্তু ও আমায় অস্বীকার করেছে, এই বাচ্চাকেও অস্বীকার করেছে।”

এই শুনে রাদিফের মেজাজ তিরিক্ষে উঠে যায়। চোয়ালে শক্ত করে বলে,

“প্রতিশোধ! ও প্রতিশোধের কি বোঝে! ও তোকে বিয়ে করে অস্বীকার করছে আর এইটাকে প্রতিশোধ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আমি মিষ্টিকে কেনো অস্বীকার করেছি কেউ জানতে চেয়েছে! আর রাজ, না জেনে তোর সাথে এমন করেছে। আমি ওকে ছাড়বো না।”

রাহা নাক টেনে বলে,

“ও বলেছে ১ তারিখের মধ্যে বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলতে। কিন্তু ভাইয়া আমি এই বাচ্চাটা নষ্ট করতে চাইনা। আমি এই বাচ্চাটাকে দুনিয়ার আলো দেখাতে চাই।”

রাদিফ চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনলো। বোনের সাথে কোনো রাগারাগি করতে চায়না।। তাই ঠান্ডা গলায় বলে,

“তু্ই কাঁদিস না! কাদা বন্ধ কর! আমি যা বলছি শোন! ও যখন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এতদূর পর্যন্ত গিয়েছে এখন বাচ্চাটাকে অস্বীকার করছে তু্ই বাচ্চাটা নষ্ট করিস না। এতে পাপ হবে।”

রাহা অস্থির কণ্ঠে বলে,

“কিন্তু ভাইয়া আমি একা এই বাচ্চাটাকে মানুষ করবো কি করে? রাজ এখন আমায় অস্বীকার করেছে, আমি এখন বাবা,বড় আব্বু কাউকে বলতে পারছি না। আর এই বাচ্চা দুনিয়ায় এসে ওর বাবাকে চাইলে কি বলবো?”

রাদিফ কিছুটা নরম হয়ে শুধালো,

“বাচ্চা এসে তার বাবাকে চাইলে কি বলবি এইটা পরে দেখবি। আগে বাচ্চাটাকে নিয়ে তোকে ভালোভাবে বাঁচতে হবে। তু্ই আমার বোন না। আমার বোন তো স্ট্রং। আমার বোন হেরে যাওয়ার মেয়ে নয়।”

এরপরে রাহা আজকের ঘটনাটাও রাদিফ কে বললো। সব শুনে রাদিফ শক্ত গলায় বলে,

“তু্ই একদম বাড়ির বাহিরে যাবি না আর। আর শোন, বোন আমার কাঁদিস না তু্ই। আমি আসবো! রাজের মুখোমুখি হবো। হয় মরবো নাহয় মারবো।”

রাহা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। রাদিফ ফিরে এলে রাজের সাথে তার ঝামেলা হবেই। রাজেরও রাদিফের উপরে রাগ রয়েছে তার বোনকে অস্বীকার করার কারণে। আর রাদিফেরও রাগ বাড়ছে তার বোনকে অস্বীকার করার কারণে। রাহা দুজনকে মুখোমুখি আনার মতো ভুল করবে না। প্রয়োজন পড়লে সেই চলে যাবে। রাহা ঠিক করলো সেই বাড়ি থেকে চলে যাবে। কিন্তু কোথায় যাবে, কি করবে এইটা তার ভাইই ঠিক করে দেবে। রাহা চোখ মুছে বলে,

“না ভাইয়া তুমি এসো না। আমি ঝামেলা চাইনা ভাইয়া। রাজ বাড়িতে নেই। চট্টগ্রাম গিয়েছে। ফিরবে ১ তারিখে এর মধ্যে কিছু একটা করতে হবে নাহলে রাজ আমার বাচ্চাটাকে শেষ করে ফেলবে। এখন এই বাচ্চা আর নিজেকে বাঁচাতে হলে এই বাড়িতে থেকে চলে যেতে হবে আমাকে! লাগবে না আমার রাজকে, আমি আমার বাচ্চা একাই মানুষ করে ওকে দেখিয়ে দিবো ভাইয়া। তোমাকে আমার পাশে চাই। কিন্তু ভাইয়া আমি বাড়ি ছেড়ে কোথায় গিয়ে থাকবো?”

রাদিফ কিছুক্ষণ ভেবে বলে,

“তোকে অন্য কোথাও রেখে আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না। তু্ই আমার কাছে চলে আসতে পারবি? শুধু আমার কাছে চলে আয় তু্ই, এরপরে রাজ সহ রাজের চৌদ্দগুষ্টির উপরে প্রতিশোধ নিবো।”

এই বলে রাদিফ কঠিন গলায় বলে,

“রাজ প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বড্ড ভুল করলো। এখন প্রতিশোধের খেলা কতটা জঘন্যতম ওকে বোঝাবো।”

রাহা আগেই বুঝতে পেরেছিলো তার ভাই ঠিক কতটা রেগে যাবে। ভাইয়ের কথা মতো বিদেশে চলে যাবে কিন্তু হাতে মাত্র কয়েকটা দিন আছে এরমধ্যে কি করে চলে যাবে। রাহা বলে,

“তোমার কাছে চলে যাবো কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি কি করে যাবো? আমার ভিসা নেই!”

রাদিফ পরক্ষনেই বলে,

“রাহা…তু্ই কি সাইমনকে ভুলে গিয়েছিস?”

চলবে….

ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না। আর এই পার্টটা ভালো লাগলে রেসপন্স করবেন!!!!!!

[হেশট্যাগ ব্যবহার ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply