Golpo romantic golpo তোমার হাসিতে

তোমার হাসিতে পর্ব ১২


তোমার_হাসিতে (১২)

ফারহানাকবীরমানাল

বাড়ির পরিবেশ থমথমে। কেউ কোন কথা বলছে না। মামা মুখ ভার করে বসে আছেন। মামি নিঃশব্দে তাকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। আমি মামার পাশে বসলাম। নরম গলায় বললাম, “পুলিশ কিছু করতে না পারলে আমরা করব। হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না।”

“কীভাবে কী করবে?”

“তেমন হলে প্রাইভেট ডিটেকটিভের সাথে কথা বলব। আজকাল অনেকেই গোয়েন্দাগিরিকে পেশা হিসাবে নিয়েছে। পারিশ্রমিকে বিনিময়ে কাজ করে।”

“গোয়েন্দা? দেখো কী করবে। যা ভালো মনে হয় তাই করো। আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।”

মামা চোখ বন্ধ করে ফেললেন। পাশ থেকে এক মহিলা বলে উঠল,

“এত বড় ছেলে হারিয়ে গিয়েছে– এই কথা মানা যায় না। দেখো গিয়ে, কোন মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। এদিকে তোমরা হেদিয়ে ম’র’ছ।”

শান্ত চোখে মহিলার দিকে তাকালাম। বরফ শীতল গলায় বললাম, “আপনিও কী পালিয়ে এসেছিলেন?”

মহিলা থতমত খেয়ে গেল। হিসহিসিয়ে বলল, “এই ছেলেটা কে? ক’দিন তোমাদের ক্ষেতে ধান কাটলো সে না?”

“জ্বি আমিই সে। আমার আরও একটা পরিচয় আছে৷ বাদশার বন্ধু। আমার বন্ধুকে পাওয়া যাচ্ছে না, কোথায় কী অবস্থা আছে সে-সবের কিছুই জানি না। আর আপনি তার নামে অপবাদ দিচ্ছেন? কোন সাহসে?”

মহিলা ভীষণ রেগে গেল। রেগেমেগে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল মামা তাকে থামিয়ে দিলেন। নরম গলায় বললেন, “সবাই যে যার কাজে যাও। আমাদের একটু একা থাকতে দাও।”

মহিলা হিসহিস করতে করতে বেরিয়ে গেল। বাদশার মামা বললেন, “এখন লোকে এমন নানান কথা বলবে। সেগুলোকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।”

“দুঃখিত মামা। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।”

মামি বললেন, “সাজ্জাদের পায়ের অবস্থা কেমন? সুস্থ লাগছে?”

“জ্বি মামি। পায়ের অবস্থা ভালো। খানিকক্ষণ হাঁটলে সামান্য ব্যথা করে।”

“ভেতর পর্যন্ত শুকায়নি। ওষুধপত্র খাও। দুপুরে খেয়েছ?”

ডানে বামে মাথা দোলালাম। মামি বললেন, “মুখ হাত ধুয়ে খেতে এসো। বিকেলে দারোগা সাহেবের আসার কথা। তিনি এলে কথাবার্তা বলে যেও।”

হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসলাম। আয়োজন মন্দ নয়। টমেটো ভর্তা, ডিম আলুর তরকারি, তেলাপিয়া মাছ ভাজা, চালতার ডাল। মামাও আমার সাথে খেতে বসেছেন। তবে মুখে কিছু তুলছেন না। প্লেটে ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন।

“মামা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

“হ্যাঁ, বলো।”

“বাদশার ফোন কোথায়? কল দিয়েছিলেন?”

“সে কথা তো জানি না বাবা। বাড়িতে নেই। নম্বর বন্ধ। ফোনের লোকেশন পাওয়া যাচ্ছে না।”

“ওর সাথে কারো ঝামেলা হয়েছে? এক দু’দিনের মধ্যে কথা কাটাকাটি?”

“তেমন কিছু তো কানে আসেনি। গায়ের মধ্যে কারো সাথে কিছু হলে অজানা থাকার কথা না।”

মামা খানিকক্ষণ চুপ করে রইলেন। পাংশুমুখে বললেন, “একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

“কী কথা?”

“বাদশার কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে? প্রেম ভালোবাসার? পালিয়ে যেতে পারে এমন ধরনের?”

ডানে বামে মাথা দোলালাম। অস্পষ্ট গলায় বললাম, বলতে পারছি না।”

বাদশার ব্যাপারে এমন কিছু আমার জানা নেই। কখনো নিজে থেকে কিছু বলেনি। আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করাও হয়নি। শীতের সকালে তীব্র কুয়াশা চারদিকে যেমন আচ্ছন্ন করে রাখে। কিছুই দেখা যায় না। আমাদের ব্যাপারও তেমন। কিছু বোঝা যাচ্ছে না।

শেষ বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। দারোগা সাহেব এলেন না। মামা কল দিতে বললেন, “জরুরি কাজ পড়ে গেছে। কাল সকালে আসব।”

মামা বললেন, “সাজ্জাদ এখানে থাকবে? নাকি বাড়িতে যাবে?”

“বাড়িতে যাব।”

আমি আর দেরি করলাম না। বাড়ির দিকে চলে এলাম। সদর দরজা পর্যন্ত এলে ফুফু বলল, “সাজ্জাদ তোর সাথে দেখা করতে দু’জন লোক এসেছে। বসার ঘরে অপেক্ষা করছে।”

বিস্মিত মুখে বসার ঘরে ঢুকলাম। লোক দু’টো আমার অপরিচিত। আগে পরে দেখিনি। তারা আমাকে দেখে হাসল। এই হাসি তৈরি হাসি। মানুষকে ভোলানোর জন্য মানুষ এমন করে হাসে। আমি তাদের সালাম দিলাম। শুকনো গলায় বললাম, “আপনাদের তো ঠিক চিনলাম না।”

মাঝবয়সী লোকটা বলল, “তুমি বাদশার বন্ধু সাজ্জাদ?”

“জ্বি আমি, বাদশা কোথায়?”

“সে কথা বলতে পারছি না। গতকাল থেকে ফোনে ট্রাই করছি। মোবাইল বন্ধ।”

“আমার খোঁজ করছিলেন কেন?”

“বাদশার সাথে একটা কাজের কথা হয়েছিল। আসলে আমাদের সাইডে একজন লোক দরকার। পড়াশোনা জানে, হিসেবের কাজ করতে পারবে এমন৷ সে তোমার কথা বলেছিল। বেতন খারাপ না। দিনে পাঁচশ। তবে কার্যদিবস অল্প। সাত আটদিন।”

কী জবাব দেব, বুঝে উঠতে পারলাম না। বাদশা আমার জন্য এত চেষ্টা করেছে। অথচ আমি ওর জন্য কিছুই করতে পারছি না। কোথায় আছে না আছে, কী করছে না করছে, কিছুই জানে না। হঠাৎই নিজেকে খুব অসহায় লাগতে শুরু করল। লোকটা বলল, “রাজি থাকলে কাল সকালে নদীর পাড়ে চলে এসো। আমার নম্বর রেখে দাও।”

কথোপকথন দীর্ঘ হলো না। তারা চলে গেল। তারা চলে যেতেই দাদি এলেন। বিরক্ত মুখে বললেন, “সারাদিন কোথায় ছিলি?”

“এমনি একটা কাজে বেরিয়ে ছিলাম। কেন কিছু লাগবে?”

“সকালে গিয়ে তোর রাঙা দাদিকে নিয়ে আসবি।”

“আনব।”

ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। রাঙা দাদি ঝগড়াঝাটি করে চলে গিয়েছিলেন। ঝগড়ার কারণ খুব তুচ্ছ। ছোট চাচা বাড়ির সবার জন্য বিরিয়ানি এনেছিল। ভাগাভাগি করে খেতে গিয়ে মায়ের জুটল না। রাঙা দাদি ভীষণ রেগে গেলেন৷ তীব্র এবং তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, “যে বাড়িতে এত বেইনসাফি কাজ কারবার হয় সেই বাড়িতে আমি থাকব না। ছোটর বিয়ে উপলক্ষে এসেছিলাম। ঠিক করেছিলাম বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর যাব। কিন্তু না, এ বাড়িতে থাকলে আমার ঈমান আমল ঠিক থাকবে না।”

ফুফু বলল, “ঈমান আমল নিজের কাছে। মানুষের জন্য ঈমান আমল নষ্ট হয় না।”

রাঙা দাদি বললেন, “সে কথা আমি জানি। তবে তুই হয়তো জানিস না, চোখের সামনে অন্যায় দেখে যে চুপ করে থাকে, সে-ও সেই অন্যায়ের সাক্ষী দেয়।”

“এখানে অন্যায়ের কী দেখলে? কার সাথে অন্যায় করেছি?”

“এই বয়সে নেকা পনা করিস না। আমার কথা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিস।”

“না বুঝতে পারছি না। ছোট ভাই কী জনে জনে বিরিয়ানি এনেছে?”

রাঙা দাদির আরও রেগে গেলেন। তর্কের এক পর্যায়ে তিনি কাপড়চোপড় গুছিয়ে বেরিয়ে গেলেন। দাদি বললেন, “আমার বোনটাকে যে কোন চিনি পড়া খাইয়েছে! সে আমাদের সব কাজে দোষ দেখতে পায়। যা-ই করি না কেন তাতেই আমাদের দোষ।”

মা পাশে দাঁড়ানো ছিল। তবে কিছু বলল না।

ঘড়িতে রাত দশটা। ফুফু আমার ঘরে এলো। ক্লান্ত গলায় বলল, “ভাত বেড়ে দিয়েছি। খেতে আয়।”

ফুফুর অবস্থা কাহিল। বাড়ির সব কাজ তার করতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই দাদির সাথে তর্ক লেগে যাচ্ছে। ছোট চাচা এসব দেখে ভীষণ বিরক্ত। সে তানহাকে বলেছে– বিয়ের পর তারা আলাদা থাকবে। এইসব একান্নবর্তী পরিবারে ভীষণ ঝামেলা। শত কাজ করেও লোকের মন পাওয়া যায় না। তানহাকে এসব ঝামেলায় পড়তে হবে না।

ছোট চাচার কথায় ফুফু ভীষণ বিরক্ত। দাদিকে বলেছে– “তোমার ছোট ছেলে বিয়ের আগেই বউয়ের ভালো-মন্দ দেখতে শুরু করেছে। এখন থেকেই আলাদা বাসা নেবে।”

দাদি অবশ্য কিছু বলেননি। ভাবলেশহীন মুখে শুধু শুনেছেন। চেহারা বলছিল– তিনি ফুফুর কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না।

রাতে খাওয়ার সময় তিমুকে পুরষ্কারের কথা বললাম। শুনে তার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ঝলমলে গলায় বলল, “অবশেষে আমার একটা স্বপ্ন সত্যি হলো! সত্যিই খুব ভালো লাগছে।”

“তিমু, আমার একটা কথার জবাব দিবি?”

“কী কথা?”

তিমু চোখ ছোট করে ফেলল। সরল গলায় বললাম, “এসব স্বপ্ন জেগে দেখিস নাকি ঘুমিয়ে?”

সে হেসে ফেলল। অদ্ভুত সুরে বলল, “কিছু জেগে দেখি, কিছু ঘুমিয়ে। স্বপ্ন সবসময় ঘুমিয়ে দেখতে হবে এমন কথা কোথাও লেখা নেই।”

“আচ্ছা।”

“তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

“হ্যাঁ, বল।”

“জায়েদার খবর কী? তার সাথে তোমার দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি?”

“জায়েদার খবর জানি না। দেখা হয়নি।”

“তোমার মোবাইলও নষ্ট। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। খুব বেশিদিন যোগাযোগ বন্ধ রেখো না।”

“এ কথা কেন বলছিস?”

“যোগাযোগ না থাকলে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।”

“তিমু, তুই কী জানিস– বয়সের তুলনায় তুই খুব বেশি পাকা কথা বলিস?”

“উঁহু! আমার বয়স কত এটা কোন বড় ব্যাপার না। সবসময় সবকিছু বয়স দিয়ে হিসাব করা যায় না। এমনও মানুষ আছে যারা সত্তর বছর বয়সেও সাত বছরের বাচ্চাদের মতো আচরণ করে।”

“তা করে।”

“তাহলে?”

“কিছু না।”

তিমুর সাথে কথা বাড়ল না। ছোট চাচা খেতে বসল। দাদি ভাত বেড়ে দিলেন। ছোট চাচা বলল, “সাজ্জাদ তোর সাথে একটা কথা আছে।”

আমার খাওয়া প্রায় শেষ। শান্ত চোখে চাচার দিকে তাকালাম। চাচা বলল, “কাল খুব ভোরে ফুলের দোকানে গিয়ে একগুচ্ছ গোলাপ কিনে আনবি।”

“ফুল লাগবে কেন?”

“তানহাকে দিতে হবে। সকালের দিকে আমার ঘুম ভাঙে না। খাওয়া শেষে টাকা নিয়ে যাস।”

“আচ্ছা।”

“তোর মা কবে আসবে?”

আমি খুব সহজ এবং শান্ত গলায় বললাম, “মা আসবে না।”

চাচা কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে গেল। তারপরই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে খেতে শুরু করল।

ছোট চাচার কাছ থেকে ফুল কেনার টাকা এনে শুয়ে পড়লাম। মাথায় নানান ধরনের দুশ্চিন্তা। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চিন্তা বাদশা কোথায়? জলজ্যান্ত একটা ছেলে এভাবে উবে যাবে? যদি সে কোন মেয়েকে নিয়ে যায় তবুও তো কেউ জানবে। কখনো না কখনো আমার চোখেও পড়ত! দু’হাতে মাথার চুল খামছে ধরলাম। হতাশ গলায় বললাম, “আল্লাহ আমাকে হতাশ করে দিয়েন না। সাহায্য করেন।”

চিন্তার সাগরে ঢুবে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম। মা বাড়িতে নেই। সারাদিন পর বাড়ি ফিরে মাকে না দেখলে সবকিছু কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এই অনুভূতির কোন ব্যাখ্যা হয় না।

ঘুম ভাঙল ঘুম ভোরে। ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগতে লাগতে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। বরফ শীতল পানি। হাত মুখে লাগলে শরীর অবশ হয়ে যায়।

নামাজ শেষ করে বাইরে বের হলাম। চারদিক কুয়াশায় ঢাকা। হাত দুয়েক পর আর কিছু স্পষ্ট দেখা যায় না। এত ভোরে ফুলের দোকান খোলেনি। দোকানের সামনে ভাঙা বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠাৎই তানহা সেখানে এলো। আমাকে দেখে সামান্য বিস্মিত হলো। সরু গলায় বলল, “আপনি এখানে?”

মাফলারে নাক পর্যন্ত ঢাকা। তানহার আমাকে চিনে ফেলার কথা না। সে চিনলও না। ছোট চাচার নাম বলল। ডানে বামে মাথা দুলিয়ে বললাম, “দুঃখিত। আপনি যার নাম বলছেন সে আমি নই।”

তানহা একটু হতাশ হলো। একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আজ সকালে তার এখানে ফুল কিনতে আসার কথা। আপনাকে দেখে মনে হলো হয়তো আপনিই সেই মানুষ।”

“না, আমি সে না।”

তানহা খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে চলে গেল। দোকানদার তখনও আসেনি। আমি বসেই রইলাম। দোকানদার এলে ফুল কিনে তবে বাড়িতে ফিরলাম। ছোট চাচা বলল, “এত দেরি করেছিস কেন?”

“দোকান খুলতে দেরি হয়েছে।”

“ওহ আচ্ছা!”

চাচাকে তানহার কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। তবে আমি কিছু বললাম না। যে আমাকে বিশ্বাস করে না, তাকে বলা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। এই বোকামি দু’বার করে ফেলেছি। এবার শক্ত-পোক্ত প্রমাণ হাতে নিয়ে তবেই কোন কথা বলব।

সকালের নাস্তা সেরে রাঙা দাদিকে আনতে গেলাম। তিনি আমাকে দেখে ভীষণ খুশি হলেন। পান খাওয়া টকটকে লাল ঠোঁট নাচিয়ে বললেন, “শেষ পর্যন্ত তোকেই পাঠিয়েছে। যাক তবু ভালো।”

“তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিন। আমার অনেকগুলো কাজ বাকি আছে।”

“কী কাজ?”

“আমার এক বন্ধুকে পাওয়া যাচ্ছে না। ওর খোঁজে পুলিশ আসবে। সেখানে থাকতে হবে। আর আমাকে…”

কথা শেষ করলাম না। নদীর পাড়ে কাজে যাব এ কথা এক্ষুনি বলতে চাই না। ইসস! দেরি হয়ে গেল। ওই লোক দু’টো নিশ্চয়ই আমার অপেক্ষা করছে। লোক দু’টোর কথা মনে পড়তেই বিদ্যুৎ চমকের মত একটা কথা মাথায় এলো– বাদশা ওই লোকেদের কীভাবে চিনত? আর চিনলেও আমাকে কিছু বলল না কেন? কাজের কথা কবে হয়েছে? তাছাড়া সেদিন বাদশা আমাকে দেখতে এসেছিল। জায়েজার ব্যাপারে বলল। সে নাকি আমার খোঁজে কলেজে এসেছিল। সবগুলো ব্যাপার একসাথে মেলাতে চেষ্টা করলাম–

১. বাদশা নিখোঁজ। কোথায় গিয়েছে, না গিয়েছে কেউ কিছু জানে না। পুলিশ এখনও কোন তথ্য পায়নি।

২. শেষবার বাদশা আমার সাথে দেখা করতে এসে শুধু জায়েদার ব্যাপারে কথা বলল। জায়েদা আমাকে খুঁজতে কলেজ পর্যন্ত চলে গিয়েছে। কিন্তু যে লোক দুটো কাল আমার সাথে দেখা করল। তাদের ব্যাপারে কিছুই বলেনি। কাজের সন্ধান আমাকে না জানানোর কী আছে?

৩. তানহাকে আমি একটা ছেলের হাত ধরে দাঁড়ানো দেখেছিলাম৷ সেই ছেলের সাথে তানহার ছবিও দেখেছি। অথচ ছোট চাচা বলল– ওই ছেলে তানহার ভাই, সে ভাই নাকি আমার মা’রা গিয়েছে।

৪. আজ সকালে তানহা ফুলের দোকানে ছোট চাচার খোঁজ করল। তারপর চলে গেল।

এই চারটে ব্যাপার একটা সাথে একটা কোন সম্পর্ক নেই। তবুও আমার মনে হচ্ছে এই ব্যাপারগুলো একসাথে জোড়া লাগানো। কিন্তু জোড়াটা কোথায়?

সময় নষ্ট না করে নদীর পাড়ে চলে গেলাম। নদীর পাড়ে সিমেন্টের খাম্বা, পাথর আর বালি ফেলে রাখা। কালকের লোক দু’টো দাঁড়িয়ে কিসব হিসেব-নিকেশ করছে৷ তাদের একজন আমাকে দেখে এগিয়ে এলো। কোমল গলায় বলল, “তুমি এসে গেছো?”.

“জ্বি এলাম। যদি কাজ বুঝিয়ে দিতেন, তাহলে একটু সুবিধা হতো।”

“নিশ্চয়ই। এই যে পাথর, খাম্বা এগুলো নিতে লোক আসবে। তোমার কাজ হচ্ছে কে কয় বস্তা কী নিলো খাতায় হিসাব করে রাখা।”

“জ্বি আচ্ছা।”

লোকটা আমায় চেয়ার এলো দিল। এক গাল প্রাণখোলা হাসি নিয়ে বলল, “কাজ বেশিকিছু না। চেয়ারে বসে পা দোলাবে আর খাতায় হিসাব লিখবে।”

আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। কাজ যতটা সহজ মনে করেছিলাম ততো সহজ হলো না। একসাথে তিনটার কাজ করে– খাম্বা, পাথর, বালি। চোখের পলক পর্যন্ত ফেলানোর সময় নেই।

চলবে

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply