জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_১৭
“কি করতে হবে?’
আদ্রিস বিছনায় শুয়ে আদ্রিতাকে সামনে বসতে বলে,
” এখানে বস।”
আদ্রিতা গিয়ে সেখানে বসে।
আদ্রিস মাথাটা রাখে আদ্রিতার কোলে। আদ্রিতার কোলে মাথা রাখতেই চোখ বন্ধ করে নেয় আদ্রিস। আদ্রিতা, আদ্রিসের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে।
আদ্রিসের খুবই রিলাক্স লাগছে।
এখনো ওর মনে আছে। অতিরিক্ত পড়ালেখার প্রেসার থাকলে আদ্রিস সব সময় আদ্রিতার থেকে এভাবে মাথা টিপিয়ে নিত।
আদ্রিস হুট করেই যেন ছোট বেলায় চলে গেল।
বাচ্চাটা গাড়ির ভেতর কাঁদছিল। তার বাবার রক্তে রাঙা হয়ে আছে আদ্রিসের হাত।
রক্তমাখা হাতে সিগারেট জ্বালিয়ে নেয় আদ্রিস।
হটাৎ পাশ থেকে রেভেন এসে বলে,
“বস ভেতরে কেউ আছে।’
আদ্রিস ফিরে তাকায়। আদ্রিসকে তাকাতে দেখে বাচ্চাটা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গিয়েছে। রাশিয়ান বাচ্চাটা অনেক কিউট। কান্নার কারণে গাল দু’টো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।
বাচ্চাটা ভয়ে কাঁপছে।
” কি করব ওকে?’
আদ্রিস কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এরপর ফিরে তাকায়।
হটাৎ করেই গাড়িটা বিরাট এক বিস্ফোরণ ঘটে।
অনেক গুলো লোক আদ্রিসের সামনে ভিক্ষা চায় নিজের জন্য, নিজের জীবনের জন্য কিন্তু আদ্রিস কারোর উপরেই সদয় নয়।
রক্তই যেন তার নেশা।
হটাৎ করেই চোখ খুলে যায় আদ্রিসের।
সে অনুভব করে সে নরম কিছুর উপরে শুয়ে আছে। আদ্রিস মাথা তুলে তাকায়। আদ্রিটা বেডের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে।
আদ্রিস তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার মায়াবী মুখশ্রীর দিকে।
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে আদ্রিসের ভেতর থেকে।
রিলাক্স হয়ে গেছিল কিছুক্ষণের জন্য। চোখটাও লেগে এসেছিল। আদ্রিস ঘড়ির দিকে তাকায়। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।
আদ্রিস উঠে বসে। আদ্রিসের নড়াচড়া অনুভব করে আদ্রিতার ঘুমও ভেঙে যায়। আদ্রিতা নড়াচড়া করে ওঠে। হটাৎ ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে। ব্যাথায় মৃদু চিৎকার করে আদ্রিতা।
“আহ। “
আদ্রিস ফিরে তাকায়।
“কি হয়েছে?”
আদ্রিতা, আদ্রিসের দিকে তাকায়। তার এক হাত ঘাড়ের পেছনে।
“কিছু না ঠিক হয়ে যাবে।”
“এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আয়। “
“আচ্ছা।’
আদ্রিতা উঠে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আদ্রিস সে দিকে তাকিয়ে থাকে।
এরপর নিজের হাতের দিকে তাকায়।
লিভিং রুমে সবাই বসে আছে। আদ্রিতাকে নিচে নামতে দেখে ঐশী ভ্রু কুঁচকে তাকায়,
” মামনি এই আদ্রিতা কি এতটা সময় আদ্রিসের সাথে ছিল?”
মাধবী বেগম আড় চোখে একবার তাকায়।
“জানিনা৷”
“ও উপরে কেন ছিল?’
প্রিয়া চোখ উল্টায়,
” এত যখন শখ নিজেই জিজ্ঞেস করে এসো ভাইয়ার থেকে।”
“কি বলছো এগুলো আপু?”
প্রিয়া ভেতর ভেতর একটা সয়তানি হাসি দেয়।
এগিয়ে আসে ঐশীর কাছে,
“তুমিনা চাইছো ভাইয়ার কাছে যেতে। যাওনা গিয়ে জিজ্ঞেস করো। তোমারত রাইটস আছে।”
“ওয়াউ আপু। তুমি সত্যি দারুণ। যাই বলো আমি।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ যাও।”
মেয়েটা প্রিয়ার কথা শুনে গদগদ হয়ে উপরে চলে যায়। প্রিয়া বাঁকা হাসে,
“এবার শুধু ড্রামা দেখার পালা।”
ওদিকে আদ্রিতার ঘুম পুরোটা হয়নি। গ্যাস জ্বালিয়ে দুধ চাপিয়ে দিয়ে ঝিমাচ্ছে সে।
“এমন কেন লাগছে? এত ক্লান্ত আমার কখনো লাগেনি।”
পেছন থেকে একজন সার্ভেন্ট এসে দ্রুত দুধে নাড়া দেয়। ওটা উতল দিচ্ছিল আদ্রিতা খেয়াল করেনি।
“ও সরি সরি।”
“না সমস্যা নাই, কিন্তু তোমার ধ্যান কোন দিকে আদ্রিতা?”
“একটু ঘুম আসছে এই আর কিছুনা।”
আদ্রিতা কফির ভেতর দুধ ঢেলে নেয়। এরপর বেরিয়ে যায়। সার্ভেন্ট আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
“ভালো মানুষের ভাত নেই। আদ্রিতার মত এমন নিষ্পাপ বাচ্চাকে এই নিষ্ঠুর পরিবার বলেই কষ্ট দেয়।”
আদ্রিসের দরজায় টোকা পড়ে। আদ্রিস ভাবে হয়ত আদ্রিতা এসেছে তাই না দেখেই বলে,
“আয়৷”
ঐশী ভেতরে গিয়ে দেখে আদ্রিস টেবিলে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। চোখে চশমা। আদ্রিসকে এমন সাদা গ্লাসে দেখতে কেন জানিনা বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে।
ঐশী গদগদ হয়ে এগিয়ে যায়।
“আদ্রিস ভাইয়া।”
আদ্রিস ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ঐশীকে দেখে বিরক্ত হয়ে যায়।
“হোয়ার দ্যা হেল আর ইউ ডোইং হেয়ার মিস ঐশী।”
“ও মা এমন বলছো কেন আমিকি আসতে পারিনা?”
“না।”
“কেন?”
“আমার পছন্দ না তাই। “
ঐশী পাশ থেকে চেয়ার টেনে আদ্রিসের পাশে বসে।
“নাহ আমিও দেখব তুমি কি কাজ করছো।”
আদ্রিস বিরক্ত হয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়।
“সমস্যা কি তোমার?”
“ও মা কি সমস্যা হবে?”
“বিরক্ত কেন করছো?”
“বিরক্ত কই করলাম? তুমি কফি খাবে?”
“বের হও।”
“না।”
“বিরক্ত করোনা ঐশী।”
“কেন বিরক্ত করলে কি করবে?”
আদ্রিস দাঁত কিটমিট করতে করতে বলে,
“কি করব?”
ঐশী গালে হাত দিয়ে টেবিলে কনুই রাখে,
“হ্যাঁ কি করবে?”
“আমি রাশিয়া হলে তোমাকে কি করতাম জানো?”
“ঘুরতে নিয়ে যেতে?”
আদ্রিস দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এমন ঘুরতে নিয়ে যেতাম যেটা জীবনের শেষ ঘুরতে যাওয়া হতো।”
ঐশী কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিতা কফি হাতে ভেতরে প্রবেশ করে,
“আপনার কফি।”
আদ্রিতা মাথা নিচু করে হাঁটছিল। ঐশীকে সে দেখেনি।
ঐশী, আদ্রিতাকে দেখে প্রচন্ড রেগে যায়।
“সব সময় এ রুমে কি তরো?”
আদ্রিতা মাথা উঁচু করে তাকায়। এরপর আদ্রিসের দিকে তাকায়। আদ্রিস মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে হয়ত তার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। আদ্রিতা, ঐশীকে ইগনোর করে, আদ্রিসের সামনে কফিটা রাখে, আদ্রিসের ঘাড়ে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি ঠিক আছেন? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”
আদ্রিস,আদ্রিতার হাত ধরে বসে।
“আই এম নট ওকে”
“মাথা টিপে দেব?”
আদ্রিতা খুবই কনসার্ন দেখাচ্ছে আদ্রিসের প্রতি। আর যাই হোক আদ্রিসের শারীরিক কষ্ট সে দেখতে পারবে না কখনোই।
“প্লিজ।’
আদ্রিতা, তখন আদ্রিসের মাথা টিপে দেওয়া শুরু করে। পাশ থেকে সব দৃশ্য দেখে ঐশী লুচির মড ফুলে উঠেছে।
আদ্রিস, চোখ বন্ধ রেখেই বলে,
” ইউ ক্যান গো নাই মিস ইরিটেটিং গার্ল।”
“হোয়ারট? ইউ সেইড ইটিটেটিং গার্ল। টু মি?”
“ইয়াহ।’
ঐশী রেগে মেগে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
” তোকেত দেখে নেব আদ্রিতা৷ আমাকে ইগনোর করিস। দেখ কি করি এবার আমি।”
আদ্রিতার সে দিকে কোন খেয়াল নেই। সে এই মুহুর্তে আদ্রিসের দিকে খেয়াল দিতে ব্যাস্ত।
কিছুক্ষণ পর আদ্রিস কফিটা শেষ করে।
আদ্রিতাকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিস ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
“হোয়াট?”
“আপনি ঠিক আছেন?’
” হুম। চিন্তা নাই তোকে মা না বানিয়ে মরব না।”
আদ্রিতা বেবদ বনে গেল।
“আমি কখন বললাম আপনি মরে যাবেন? বালাই ষাট মরুক আমার শত্রু।’
আদ্রিস কথাটা শুনে হেঁসে ফেলে শব্দ করে। আদ্রিসের হাসির শব্দ কানে আসতে আদ্রিতার ভেতরটা ধক করে ওঠে। সে আদ্রিসের দিকে তাকিয়ে রয়। ওনার হাসিটা আসলেই মারাত্মক সুন্দর। কিন্তু আফসোস হাসে কম।
” কিসের ষাট বললি?”
“কিছুর ষাট না।”
আদ্রিতা কথাটা বলে কফির খালি মগটা নিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।।
“আরে কই যাচ্ছিস ওয়টে।”
আদ্রিতা ছুট পেয়েছে সে কি আর বন্দি থাকে। আদ্রিস তাকিয়ে রইল দরজার দিকে। চাইলে ঠেকাতে পারত কিন্তু করল না সেটা।
“এখনোত ফিউচার পড়ে আছে আদ্রিতা। এখন অনেক কিছু বাকি। কন্ট্রোলেস হওয়া বাকি।”
রাত শেষ হয়ে ভোরের আলো ছড়িয়েছে চারিদিকে।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে চারিদিকে ঘন কুয়াশা ঘেরা আবহাওয়া দেখে আদ্রিতা নিজেকে আর বেঁধে রাখতে পারল না।
তার শীত ভালো লাগে। পাহাড়ের চুড়ায় দাঁড়িয়ে মেঘ স্পর্শ করার ভীষণ শখ তার। কুায়াশা ঘেরা সকাল তার ভীষণ পছন্দ। আকাশের মেঘ গুলোও বুঝি এমনই হয়।
আদ্রিতা গরম কাপড় পড়ে বাগানে চলে আসে। হাতে দুটো আঙ্গুর আর এক টুকরো আপেল। কারণ সে জানে পিকো আসবেই।
আদ্রিতার চিন্তা ভাবনা সত্যি হলো। পিকো বাগানেই ছিল। আদ্রিতাকে দেখে সে উড়ে আসে। আদ্রিতা পিকো খেতে দেয়।
“তুই কিভাবে জানলি আমি এখানে থাকব?”
পিকো নিজের খাবার এনজয় করছে। আদ্রিতা নিষ্টি হেঁসে পিকোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
আদ্রিতা ভাবে যে দেশে স্নো পড়ে সেই দেশ গুলো কি সুন্দর হয়। বরফের সাদা চাদরে ঢেকে থাকে। দেখতে কতটা সুন্দর লাগে।
পিকো খাবার খেয়ে উড়ে যায়। আদ্রিতাও দেখে বেশ সময় হয়ে গিয়েছে। কাল আদ্রিসকে খুব একটা সুস্থ মনে হয়নি। ব্রেকফাস্ট টা ভালো করে বানানো উচিত। যে ভাব সে কাজ। আদ্রিতা ভেতরে চলে আসে। তার হাত পা মুখ ঠান্ডা হয়ে আছে। বাহিরে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে সবাই ব্রেকফাস্ট করছিল। আজ ছুটির দিন কারোরই কাজ নেই।
সকাল হওয়ার সাথে সাথে কুয়াশা কেটে রোদ উঠেছে। মাধবী বেগম খেতে খেতে আদ্রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“বাগানে কিছু মরিচের গুড়া নাড়া আছে। এক ঘন্টা পর উঠিয়ে এনো আদ্রিতা।”
আদ্রিতা কথাটা শুনে একবার বাবার দিকে তাকায়।তার মরিচের গুড়ায় এলার্জি আছে। তার বাবাত জানে। কাজটা সার্ভেন্ট কে দিয়ে করালে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে কি। কিন্তু বাবার কোন প্রতিক্রিয়া নেই। আদ্রিস সেত একটা ফেন কলে ব্যাস্ত। কানে এয়ারপড। কথা বলছে রাশিয়ান ভাষায়। আর খাচ্ছে।
“ঠিক আছে বড় মা। “
ওদিকে ঐশী বাঁকা হাসে।
সে কিছু পরিকল্পনা করছে তা স্পষ্ট।
বাগানের ডান দিকে একটা ফ্যান সেট করছে ঐশী। মিশু তার লাগাতে লাগাতে বলে,
“ঐশী তুমি সিওর কাজ হবে? যদি সবাই আমাদের উপর রেগে যায়?”
“চুপ থাকো আপু। এরপর দেখো না কি হয়।”
আদ্রিতা ঘন্টা খানেক পর বাগানে আসে। মরিচ গুঁড়া গুলো বয়ামে উঠাতে হবে। হাতে করে চামচ নিয়ে এক দুই চামচ উঠানোর সাথে সাথে হটাৎ কোথা থেকে হাওয়া এসে সব মরিচ গুঁড়া আদ্রিতার মুখের উপরে পড়ল। নিঃশ্বাসের সাথে ভেতরে প্রবেশ করেছে।
আদ্রিতা দ্রুত সরে এসে কাশি দিতে শুরু করে।
আদ্রিতার মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।
আদ্রিতা হেঁটে ভেতরে যাবে সম্ভব হচ্ছে না। চোখ জ্বলছে। নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বেহাল।
আদ্রিতা মনের জোড়ে এক চিৎকার দিয়ে ওঠে।
ওদিকে ঐশী আর মিশুও সরে গিয়েছে।
চলবে?
[ উম সামনে কি হবে আমি কিউরিয়াস ]
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৭
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৬
-
জেন্টাল মন্সটার গল্পের লিংক
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৩