born_to_be_villains
methuburi_মিথুবুড়ি
পর্ব_০৬
❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌
“শহরে যেন সাইকোপ্যাথের মেলা। গত কয়েক সপ্তাহে দুইদিন পরপরই উদ্ধার হচ্ছে ষোলো বছর বয়সী মেয়েদের বি-কৃ-ত ম-র-দেহ। প্রতিটি লা-শে–ই মিলছে একই ধাঁচ, একই কায়দায় কা-টাছেঁ-ড়া, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সিরিয়াল কি-লা-রের উপস্থিতির।
‘আজ সকালে শহরের উপকণ্ঠ থেকে উদ্ধার হয়েছে আরেক প্রতি-তার পঁ-চা গ-লি-ত লা-শ। এবারও মুখাবয়ব বিকৃত, চোয়াল থেকে দাঁত উপড়ে ফেলা, ঠোঁট কাটা। তবে আশ্চর্যের বিষয় শরীরে কোনো ধ-র্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা এর পেছনে হয়তো কোনো সাইকোপ্যাথ, অথবা কোনো নারী-বিষাদে পুড়ে যাওয়া সিরিয়াল কিলার লুকিয়ে আছে। বিস্তারিত জানতে সাথে থাকুন।”
‘ঘড়িতে তখন এগারোটা পয়তাল্লিশ। ইমামা ভেতরের চাপা ভারি নিশ্বাস নির্গত করে রিমোট চেপে টিভি অফ করে দেয়। জ্বরতপ্ত শরীর এখনও বেশ দূর্বল। বুকের সাথে চেপে ধরা সাইকো থ্রিলার বইটা সম্মুখে উন্মুক্ত করে ফের নজর বুলালো সোভিয়েত রাশিয়ার কুখ্যাত সাইকোপ্যাথ আন্দ্রে চিকাতিলোর উদ্দেশ্য দ্য কিলার বুক অফ সিরিয়াল কিলারস এর লেখক টম ফিলবিনের বলা উক্তিতে…
“Appearing in public with blood on your hand and face is hardly the kind of thing that will go unnoticed, but it is often the kind of sloppy mistake that ultimately leads to the capture of serial killers. Ted Bundy, when wanted for murder, drove a car at night in Florida without a taillight and was pulled over. David Berkowitz, the Son of Sam, carelessly got a parking ticket that led to his capture. Dennis Rader communicated with police via computer, trusting them after he asked whether they could track him electronically. It’s easy to wonder if these are just careless mistakes, or if some part of these serial killers wants to be stopped.”
‘ইমামা বইটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে এখন এটিই একমাত্র বেঁচে থাকা বই। যদি পড়ার জন্য রুমে না আনত, তবে হয়তো বাকি বইগুলোর সঙ্গে এটিও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যেত।
‘ইমামা উঠতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল। সেই প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল! সাবলীল ভঙ্গিতে কল রিসিভ করল সে। ওপাশ থেকে গাঢ় ফিসফিসে কণ্ঠে ভেসে এলো কিছু ভারি শব্দ,
“When I used my knife, it brought psychological relief. I know, I have to be destroyed. I was a mistake of nature.”
‘কলের এই ভয়াবহ বক্তব্য সরাসরি সোভিয়েতের কুখ্যাত সাইকোপ্যাথ আন্দ্রে চিকাতিলোর কথার সঙ্গে মিলে যায়। টাইমিংটা এতটাই অদ্ভুত যে বিস্ময়ের কারণ হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু ইমামার মুখে ক্লান্তি ছাড়া আর কিছুই নেই। সে এতটাই অবসন্ন যে এখন আর কোনো কিছুই তার ভেতর ঢেউ তুলতে পারছে না।
‘গত তিনদিনে ইমামার জীবনে ঘটে গেছে একের পর এক নৃশংস ভয়াবহতা। সেদিনের সেই এসিড হামলার পর থেকেই আতঙ্কে তার সারা শরীর কাঁপছে, জ্বরে পুড়ছে। ইমামার ভাষায় ওটা কোনো সাধারণ অপরাধী নয়, ওটা একটা দানব। কেউ স্বাভাবিক থেকে এমন নিষ্ঠুর পরিকল্পনা করে কাউকে এসিডে ডুবিয়ে মারার চেষ্টা করতে পারে?
‘জ্বরে কাবু হয়ে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায় ইমামার। ইমান ওয়াসিম দিশেহারা। একদিকে সমাজ, দায়িত্ব; অন্যদিকে তার মেয়ে। মেয়ের প্রতি বেশ দূর্বল ইমান ওয়াসিম। মেয়ের এক চিলতে অসুস্থতা ভঙ্গুর করে রাখে তাকে৷ অন্যদিকে মা হিসেবে মিসেস নীহারিকা একেবারেই অনুভূতিহীন, ভাবলেশহীন।
‘মেয়ের জন্য ইমান ওয়াসিম স্ত্রীকে চিকেন থাই সুপ বানানোর ফরমায়েশ দিয়েছিলেন। কিন্তু মিসেস নীহারিকা ঠোঁট বাঁকিয়ে নাখোশ করেন। চোখ রাঙানোতেও কোনো কাজ হয় না। কাজের লোকও সেদিন ছুটিতে। শেষমেশ বাধ্য হয়ে অনলাইনে খাবার অর্ডার দেন তিনি। পরবর্তীতে ইমান ওয়াসিম নিজ হাতে এক চামচ ইমামার মুখে তুলে দিতেই ওর মুখাবয়ব বিকৃত হয়ে উঠে। স্বাদটা ছিল অচেনা, বিদঘুটে। ও খেতে পারেনি আর। কিছুক্ষণ পর ইমান ওয়াসিম মেয়েকে ঔষধ খাইয়ে বেরিয়ে যেতেই ফোনে আসে এক ভিডিও৷ সেই প্রাইভেট নাম্বার থেকে। আবারও সেই সুরাকার!
‘স্ক্রিনে দেখা যায় তার প্রিয় পোষা কুকুর রোমিওকে কীভাবে চাপাতির আঘাতে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, এরপর সেই মাংস দিয়েই রান্না হচ্ছে সুপ। সবকিছু বুঝে যেতে এক মুহূর্তও লাগে না ইমামার। চোখের দৃষ্টি ফাঁকা হয়ে যায় তৎক্ষনাৎ। গা গুলিতে উঠে মুখ শুকিয়ে আসে। পরমুহূর্তেই এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখের ভেতর পুরো হাত ঢুকিয়ে দিতেই খাদ্যনালী নিগড়ে বেরিয়ে আসে সমস্ত খাদ্যকণা।
‘সাইকোটার নিষ্ঠুরতা এখানেই থেমে থাকেনি। ইমামার জীবনের সবচেয়ে বড় শখ ছিল ফুল আর বই। সেই ভালোবাসার জন্যই ইমান ওয়াসিম মেয়ের জন্য সুইমিং পুলের পাশে তৈরি করে দিয়েছিলেন এক স্বপ্নের জায়গা। ফুলে ঘেরা ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। সেখানে বসেই ইমামা খুঁজে পেতো নিজের শান্ত রূপ, নিজের পৃথিবী। পুড়ন্ত বিকেলের নরম আলোয় ফুলের গন্ধে আর পাতা উল্টানোর শব্দে ভরে উঠতো তার নিঃসঙ্গ সময়। কিন্তু সেই বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষটা শান্তিটুকুও ছিনিয়ে নিলো। ড্রোনের মাধ্যমে উপর থেকে ফেলে দেওয়া ছোটবোমে মুহূর্তেই আগুনে জ্বলে ছারখার হয়ে গেলো ইমামার শখের বাগান আর বইগুলো।
‘চোখের সামনে তিল-তিল করে গড়ে তুলা নিজের স্বপ্ন, শখকে এভাবে পুড়তে দেখে, রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে সেদিন প্রথমবারের মতো সেই সুরাকারকে কল দেয় ইমামা। কল রিসিভ হতেই অগ্নিবৎ নারী রূপে চিৎকার করে উঠেছিল,
“তুই কে, জানোয়ারের বাচ্চা?”
‘তার গগনচুম্বী চিৎকারের অন্ধকারের অভিশপ্ত রাজা অট্টহাসিতে মেতে উঠেছিল। তার অট্টহাসির ঝংকারের ইমামার জ্বরতপ্ত পলকা দেহ থরহরিকম্প করে উঠে। বিচ্ছিরি হাসির শব্দ কমে আসতেই ভেসে এলো হিমশীতল কণ্ঠ,
“ম্যাড বিস্ট৷ আই’ম ম্যাড বিস্ট৷”
‘রক্তঝরা ক্রোধে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে, ক্রোধসংবলিত অশ্রুতে ইমামা ফের চিৎকার করে উঠল,
“কুত্তার বাচ্চা, তুই শুধু আমার সামনে আয়। আমার রবের কসম, তোর মৃত্যু আমার হাতেই হবে। একবারে নয়, একটু একটু করে তোকে মারব।”
‘কোনো উত্তেজনা নেই, রাগ নেই। শুধু বরফগলা শীতল কণ্ঠ,”আমি তো সেদিন থেকেই মরছি রে জান,জ্ঞান ফেরার পর যখন তোকে আমার পাশে পাইনি৷”
“এই, কে তুই? তোকে চিনি না আমি। কাউকে ছেড়ে আসিনি আমি, আর কতবার বলবো?”
‘হঠাৎ শীতল কণ্ঠে ক্রোধের উত্তাল ঢেউ,”আমাকে চিনো না? হাহ! না চিনেই একবছর সংসার করে ফেললে? বেড শেয়ার করলে, আমার বাচ্চা পেটে ধরলে?”
‘ইমামার পায়ের নিচটা যেন ভূকম্পে কেঁপে উঠল।
“কি-হহহহহ?”
‘হিংস্র চিৎকার আসে,”ছলনাময়ী, আমার সাজানো জীবনটাকে ধ্বংস করার জন্য তোকে প্রতি মুহুর্তে মরতে হবে।”
“আমাকে ধ্বংস করতে গিয়ে তুই নিজেই জ্বলছে যাবি। তোর ধ্বংসের শেষ পাতায় তুই আমার নামই লেখবি। মিলিয়ে নিস।”
“তোমার প্রেমে আমি বহু আগেই ধ্বংস হয়েছি, মাই লাভ।”
‘কটকট শব্দ তুলে কল কেটে গেল। তারপর ইমামার ফোনে সুরাকারের নাম্বার থেকে আর কোনো ফোন বা মেসেজ আসেনি। এসেছে অপরটি থেকে। যতবারই কল এসেছে, ততবারই তাকে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া ও ওষুধ খাওয়ার জন্য ধমকানো হয়েছে। একজন তাকে আতঙ্কের সুগভীর অন্ধকার গর্তে ফেলে দিচ্ছে, অপরজন তাকে পদে পদে বিস্ময়ের উত্তাল সমুদ্রে ঠেলে দিচ্ছে। এই বিষয়ে অফিসার মাহেশের সাথে আলোচনার ফুরসত মেলেনি। সে তার কেস নিয়ে খুবই ব্যস্ত। এবার যা করার ইমামা নিজেই করবে। সে জানে—আজ সে যা করতে যাচ্ছে তা বিকৃত মস্তিষ্কের পরিচয় দেয়। তবে এছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা নেই। সে যা নিয়ে সন্দিহান, নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে এই কাজটা করতেই হবে।
‘এখন বাজে ঠিক বারোটা। ঈগলটির আসার সময় হয়ে গেছে। ইমামা ধীরে উঠে কিচেনে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো হাতে কিছু ছোট মাছ নিয়ে। গ্লাভস পরে সেগুলোর ওপর নিঃশব্দে বিষ মিশিয়ে জানালার ধারে রেখে দিল। আর নিজে প্রতীক্ষায় বসে রইল। প্রতিদিনের মতোই কর্কশ এক হুংকারে বাতাস ছিঁড়ে এলো ঈগলটি। বিশাল ডানা দু’টো ঝাপটাতে ঝাপটাতে নেমে এল জানালার সামনে। ইমামার বুকের ভেতর কাঁপছে। মনে মনে প্রার্থনা করছে ঈগলটা যেন মাছ না খায়।
‘কিন্তু আজ কিছুটা আলাদা। ঈগলের ঠোঁটে নেই কোনো চিরকুট, নেই কোনো ফুল। তার লম্বা তীক্ষ্ণ ঠোঁটের ফাঁকে ঝুলছে একটুখানি সাদা বিড়ালছানা। পলকের মধ্যে ঈগলটি সেটাকে ইমামার কোলে ছুঁড়ে দিয়ে জানালায় স্থির হয়ে দাঁড়াল। চমকে উঠে ইমামা ছানাটিকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরল। তারপর তাকাল ঈগলের দিকে, অতঃপর বিষমাখা মাছের দিকে। ঈগলটি বিষমাখা মাছের দিকে একবারও ফিরল না, বরং পা দিয়ে ঠেলে নিচে ফেলে দিল।
‘ইমামা শুকনো ঢোক গিলল। ভেতরে ভেতরে কিছুটা স্বস্তি পায়। ও নেড়েচেড়ে বিড়ালছানাকে দেখতে থাকে। তখনই কর্কশ শব্দ তুলে আবারও যান্ত্রিক ফোনটা বেজে উঠল। দখিনা বাতাসের ঝাপটায় পর্দা এলোমেলো ভাবে উড়ে এসে তার মুখে পড়ে। জানালার গ্রিলে ভুতুড়ে কম্পন। ইমামা শিউরে উঠল। প্রকম্পিত হাতে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে উঠল ভারি কণ্ঠস্বর,
“আমার পোষা প্রাণী আমার নির্দেশ ছাড়া শিকারেও যায় না সিলি গার্ল।”
‘শিরদাঁড়া বেয়ে বরফস্পর্শী শিহরণটা তরতর করে গড়িয়ে পড়ল। অবিদিত এক অদ্ভুত শঙ্কা মুখ জুড়ে আতঙ্কের ছাপ ফেলে যায়। ইমামা শঙ্কিত মুখে ঘাড় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এদিক-ওদিক দেখতে থাকে। তারমানে কী তার ধারণায় সঠিক— তাকে সার্বক্ষণিক চোখে রাখা হচ্ছে? কিন্তু কে সে? সেই সুরাকার, নাকি সেই ক্রিমিনাল আর নাকি……
“ডু ইউ লাইক হার?”
‘ইমামার চোয়াল শক্ত হলো। সে অভিব্যক্তি অত্যন্ত স্বাভাবিক রেখে চাপা গলায় বলল,”এসবের মানে কী?”
“ক্যাটস আর বেটার দ্যান ডগস ফর গার্লস।”
‘গতি হারায় হৃদস্পন্দন। লোকটা কী বোঝালো? তাহলে কী সে….না না, পজিটিভ কিছু ভাবতে চাইল না ইমামা। সে শক্ত গলায় কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ওপাশের ব্যক্তিটি বলে উঠল,
“হার নেইম ইজ মায়া। জাস্ট লাইক ইউ….একদম মায়া, মায়া।”
“আপনি আমার রুমে হিডেন ক্যামেরা লাগিয়েছেন ?”
‘তার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি,”ইয়েস বেবিগার্ল।”
“ছিঃ!”
‘ইমামার ভেতরটা কামড়ে ধরল তার বদ অভ্যাসের কথা মনে হতেই। অস্বস্তিতে গুম হয়ে আসে মন। সে-ও যেন পড়তে পারল মেয়েটার ভেতর, জটিল ধাঁধার মতো বুঝতে পারল তার অস্বস্তির কারণ। লোকটা বোধহয় বাঁকা হাসল, সামান্য শব্দ এলো ওপাশ থেকে। সে হেসেই চাতুরী করে বলল,
“আমি মানুষটা খারাপ হলেও আমার চরিত্র ভালো। আমি কিছুই দেখিনি, রিল্যাক্স।”
‘ইমামা তবুও শান্ত হতে পারল না। সে দ্রুত বিড়াল ছানাটিতে বিছানায় রেখে পুরো ঘরজুড়ে আবারও চিরুনী তল্লাশি চালালো। তবে বরাবরের মতো এবারও পরিশ্রম বৃথা। ফলাফল শূন্য!
‘লোকটা হাসছে শব্দ করে। ভারি কণ্ঠের ভয়ংকর হাসি যেন শূল হয়ে কাটা দিচ্ছে গায়ে। ইমামা কান চেপে ধরে চিৎকার করে উঠল,
“কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন ক্যারেমা?”
“যেখানে রাখলে তোমার ক্লিয়ার ভিউ দেখা যাবে।”
‘ইমামা আবারও চিৎকার করতে যাবে, তখনই বিড়ালছানাটা ছোট ছোট পায়ে লাফিয়ে তার কোলে উঠে বসল। জিভ দিয়ে হাত চাটছে, নাক ঘষছে পেটের সঙ্গে। সে যেন আপ্রাণ বোঝাতে চাইছে সে ভালোবাসা চায়, একটু আদর চায়। স্ফটিক অগ্নির মতো জমে থাকা ক্রোধে হঠাৎ নেমে এলো নরম বর্ষণ। ইমামা ছানাটাকে তুলে নিয়ে আদর করল, চুমু খেল, গালের সঙ্গে চেপে ধরে রাখল।
‘ইমামা মৃদু হেসে বলল,”তোর নাম বুঝি মায়া? তুই তো সত্যিই মায়া। মুহূর্তেই আমাকে মায়ায় ফেলি দিলি রে, মায়া।”
‘অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে স্ক্রিনের সামনে বসে থাকা লোকটার ঠোঁটেও যেন তখন এক বিন্দু হাসি ফুটে উঠল। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে সে গাম্ভীর্যহীন কণ্ঠে সাবলীলভাবে জানতে চাইল,
“হ্যাপি?”
“খুবববববববব।”
“ওয়ান মোর উইশ?”
“আমার বইগুলো?”
“নোপ।”
“কেনো, কেনো?”
“কজ, দেয়ার আর ফিকশনাল ম্যান।”
“কেন, আপনি জেলাস?”
“আই’ম নট জেলাস; আই’ম বার্নিং ইনসাইড।”
‘ইমামা চুপ করে গেল। তাদের কথোপকথন শুনলে মনে হবে ছোট্ট এক অভিমানী কন্যা যেন নির্ভয়ে তার সকল ইচ্ছে জানাচ্ছে কোনো সান্তা বা জাদুকরকে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। ইমামার ঠোঁটের কোণে জমে হয়েছে রহস্যের ছায়া। কণ্ঠে মিষ্টি সুর থাকলেও মুখে পাথরসম স্থিরতা। এক অদৃশ্য ছলনা লুকিয়ে আছে তার চোখে। স্ক্রিনের ওপাশের মানুষটা সে ছলনা টের পেলেও মুখে ফুটিয়ে তুলল বাঁকা হাসি। আগের মতোই নির্লিপ্ত সুরে বলল,
“ওয়ান মোর উইশ, বেইবি?”
‘ইমামা মুচকি হেসে জবাব দিল,”আপনি কী ম্যাজিশিয়ান, নাকি কোনো ফিকশনাল ক্যারেক্টার, যে সব ইচ্ছে পূরণ করে?”
“ফিকশনাল ফর আদার্স, বাট রিয়েল ফর ইউ।”
‘একটু থেমে,
“ইউর রিয়েল ম্যান।”
“মাই ম্যান?”
“ইয়েসসস,বেইব।”
‘ইমামা ধীরে, ধীরে উঠে দাঁড়াল। নিঃশব্দ পায়ে এগিয়ে গেল কেবিনেটের দিকে। ভেতর থেকে বের করল সেই কালো কোটটা। যেটার প্রতিটি ভাঁজে লুকিয়ে আছে এক অচেনা গন্ধ, এক অদ্ভুত টান। সে কোটটা মুখের সঙ্গে চেপে ধরল, গভীরভাবে ঘ্রাণ নিল। ফোনের ওপাশে কোনো শব্দ নেই। না হুংকার, না নিঃশ্বাস।
‘সেই পার্টি নাইটের পর থেকে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছে। ইমামা যখনই কোনো ছেলের সংস্পর্শে গেছে বা একটু বেশি কথা বলেছে, তখনি হঠাৎ কোনো না কোনোভাবে বাধা এসেছে। এমনকি একবার তার কাজিন রুমে এসে বিছানায় বসেছিল—সে পাশে বসতেই প্রাইভেট নাম্বার থেকে একের পর এক কল আসতে শুরু করে। এমনটা একবার নয়, অসংখ্যবার হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল যখনই সে এই কোটটা বুকের সঙ্গে চেপে ধরে, ঘ্রাণ নেয়, গায়ে দেয় তখন কোনো কল আসে না, কোনো বাধা আসে না।
দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে আর দেরি হলো না।
‘ইমামা ঠোঁট শক্ত করে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ল,”আপনিই সেই কোট ম্যান, রাইট?”
‘ওপাশের লোকটা বরাবরের মতো আজও ইমামার বুদ্ধির তারিফ না করে পারল না। ঠোঁটের কোণে গর্বের হাসি ফুটল। গালের ভেতর জিভ ঘুরিয়ে মৃদু হেসে, তার চিরচেনা গম্ভীর স্বরে বলল,
“উফফ ডার্লিং, ইউ আর সো ব্রেভ। তবে আর না। এখন থেকে আপনাকে বোকা হতে হবে। দুই চালাকের একসাথে সংসার হয় না। একজন যদি ধূর্ত হয়, আরেকজনকে বোকা হতে হয়। আর আপনাকে প্রোটেক্ট করতে আমার চোখ-কান সবসময় খোলা রাখতে হয়। গট ইট?”
“সংসার?”
“সংসার? ডিড আই সেড দ্যাট?”
“ইয়েস, জাস্ট নাও।”
‘সে একটু নরম স্বরে হেসে বলল,”ওকে… রিমেম্বার দ্যান।”
“হোয়াট?”
“নাথিং, বাট…
“বাট?”
“জাস্ট মেক আ উইশ। আই’ম অলওয়েজ হিয়ার ফর ইউ।”
‘হঠাৎ ঈগলটা কর্কশ শব্দে ডেকে উঠল। ইমামা চমকে জানালার দিকে এগোল। নিচে দিকে চোখ পড়তেই নিঃশ্বাস আটকে গেল তার। দেয়ালের ওপারে নিঃশব্দ অন্ধকারে অর্ধশত কালো পোশাকধারী দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের হাতে লাল গোলাপের গুচ্ছ তুলোর মতো ধরা। আলোহীন রাতেও জ্বলছে তাদের রঙে। বাতাসে গোলাপের গন্ধ আর ঈগলের ডাকে মিশে এক অদ্ভুত সুর তৈরি করেছে মুহূর্তেই। ইমামার দিঘল বিস্মিত চোখ বিস্ফারিত। বুকের ভেতর হু-হু করছে। এসব কী হচ্ছে? এই শহরের চাঁদহীন রাতে কে এমন নাটক সাজিয়েছে তার জন্য? ওই লোকটা? কোট ম্যাম! ক্রিমিনাল! কে জানে? নাকি কোনো শয়তান বা প্রেমিক যে তার কষ্টটা মুছে দিতে চাইছে এই অদ্ভুত রোমান্সে।
“আই’ম আ কনফিডেন্ট লেডি। আমাকে এতো সহজে বোকা বানানো যায় না আ.কে।”
‘মৃদু হাসির শব্দ এলো। মেয়েটা অত্যাধিক চালাক। সহজে গলে যাওয়ার পাত্র নয়।
“এনি মোর উইস?”
“যা চাইব, তাই পাবো?”
“চেয়ে দেখতে পারেন৷”
“বাংলার মাটিতে আমি স্নো ফল দেখতে চাই।”
“উমমম! ওয়েট….
‘ইমামার চোখ লেগে এসেছিল। হঠাৎ হেলিকপ্টারের পাখার ঝাপটানোর শব্দে চমকে উঠে বসল। জানালার কাছে ছুটে যেতেই থমকে গেল। এ কি সত্যি, সত্যি স্নো? স্বপ্ন না বাস্তব? ইমামা নিজেকে ধাতস্ত করতে বাইরে হাত বাড়াল। ধূসর সাদা ফেনা তার হাতে পড়ল৷ মূহুর্তে শীতল স্পর্শে হৃদয়টা নেচে উঠল। গম্ভীরতা, যা এতক্ষণ ধরে ধরে রেখেছিল তাকে, তা আর টিকে থাকল না। সে ছুটে গেল খোলা বারান্দায়। মাথার ওপরে দু’টো হেলিকপ্টার ঘুরপাক খাচ্ছে৷ বাতাসে স্নোর নরম ঝরনা। ইমামা দু’হাত মেলে আকাশের দিকে ছড়িয়ে দিল। হাত-পা ছড়িয়ে বাচ্চাদের মতো নাচতে লাগল। এতোক্ষণে ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছে প্রাণখোলা স্বচ্ছ, নির্মল হাসি।
‘সে হাসছে, অথচ দূর থেকে অশ্রুসিক্ত চোখে কেউ তাকিয়ে আছে তার দিকে। ওয়াসিম ভিলার কিছুটা দূরে, অন্ধকারের আড়ালে দাঁড়িয়ে সেই ব্ল্যাকমাম্মা। ডেনিম জ্যাকেট পরা মানুষটির চোখে এক নিঃশব্দ কাতরতা, দৃষ্টি নিবদ্ধ খোলা বারান্দায় উচ্ছ্বাসে মেতে থাকা ইমামার দিকে। হেলমেট আর কালো মুখোশে মুখ দেখা না গেলেও, অশ্রুর দীপ্তি লুকোনো যায় না। সে কাঁপা হাতে ফোন বের করে ইমামাকে মেসেজ পাঠাল,
“তোমার আমার প্রেমের, আমি কি একাই স্মৃতির বাহক?”
‘তখনই উপর থেকে ঝাল এসে পড়ল তার ওপর। সামনে ঝকে আসছে অজস্র গাড়ি। হঠাৎ প্রশ্ন বেজে উঠল—এ কি তার জন্য ফাঁদ ছিল? এতো আয়োজন করে তাকে ডাকা হয়েছে ফাঁদে ফেলার জন্য? তৎক্ষনাৎ মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে উঠল সুরাকারের। কিন্তু সে তো আর ছোট খেলোয়াড় নয়। দ্রুত পকেট থেকে লাইটার বের করে ঝালে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মুহূর্তেই নিজেকে মুক্ত করল। তারপর বাইকে স্পিড তুলে ছুটল সামনে। তবে পিছন থেকে ধেয়ে গাড়ি থেকে বাদামি চোখের সেই লোকটার বন্দুকের গুলি লাগল তার পিঠে। তীব্র এক ঝাঁকুনি খেল শরীর। তবুও সে থামল না।হঠাৎ করেই ব্যস্ত রাস্তায় মিলিয়ে গেল সে ছায়ার মতো৷
❌
‘আশা রাখছি এই পর্বে তিন হাজার রিয়েক্ট উঠবে…🫠।
রিচেক দেওয়া হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কাল রিচেক দিয়ে দিব। আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে, অনুভূতি জানাতে ভুলবেন না 🤍।
Share On:
TAGS: born to be villains, মিথুবুড়ি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
Born to be villains পর্ব ৫(প্রথমাংশ+শেষাংশ)
-
Born to be villains পর্ব ১১
-
Born to be villains পর্ব ৪
-
Born to be villains পর্ব ১৪(প্রথমাংশ+শেষাংশ)+বোনাস
-
Born to be villains পর্ব ১৩
-
Born to be villains পর্ব ১৫
-
Born to be villains গল্পের লিংক
-
Born to be villains পর্ব ৮
-
Born to be villains পর্ব ৩
-
Born to be villains পর্ব ২