Born to be villains Golpo romantic golpo

Born to be villains পর্ব ১


“আহহহ! সিড লাগছে…সিড….

‘উত্তেজনায় কাঁপতে থাকা রমণীর গোঙানি যেনো আরও বেপরোয়া করে তুলল যুবকটিকে। শক্ত হাতে খামচে ধরল মেয়েটির কাঁধের ফিতে। অতঃপর এক টানে ছিঁড়ে ফেলল। অসহায় শরীরের কোমল অংশ জড়িয়ে নিল তার বেপরোয়া ওষ্ঠ দ্বারা। কখনো কামড়ে, কখনো অস্থির চুম্বনে। মেয়েটি আরক্ত কায়া ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়ল বাথরুমের সিঙ্কে। নিস্তব্ধ বাথরুমে কেবল শোনা যাচ্ছিল তাদের ভারী নিঃশ্বাস।

‘সিড একসময় মুখ তুলল মেয়েটির কণ্ঠা থেকে। ঘোরে ডুবে তাকাল লিপস্টিক ঘেঁটে যাওয়া রঙিন ওষ্ঠদ্বয়ে। নেশালো দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও আঁকড়ে ধরল ওষ্ঠজোড়া। তার অস্থির স্পর্শে মেয়েটি সিডের বুকের শার্ট চেপে ধরল হাতের নখে। এই আপত্তিকর চাক্ষুষ অবলোকন করে দরজার আড়াল থাকা রমণীর বুক কেঁপে উঠল। তৎক্ষনাৎ বিস্ময়াকুলে থাকা স্থির কৃষ্ণকালো আঁখিদ্বয়ের শুকনো কোল ভরে উঠল অশ্রুতে।

‘যখন সিড তার বেল্ট খুলতে উদ্যত হয়, তখনই জড়বৎ মূর্তির মতো নিশ্চল দাঁড়িয়ে মেয়েটির ঠোঁট থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এল তীব্র ঘৃণার শব্দ,

“ছিঃ!”

‘রমণীর মুখনিঃসৃত ক্ষীণ শব্দটি কর্ণকূহরে পৌঁছাতেই সিড চমকে উঠল। চকিতে সামনে তাকাতেই বরফগলা হিমস্পর্শী শিহরণ শিরদাঁড়া বেয়ে গড়িয়ে পড়ল তড়াক। সাদা গাউন পরা এক মেয়ে দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। মেয়েটি ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে স্তম্ভিত সিডের মুখাবয়বে। সিডের গলা শুকিয়ে এলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে ঢোক গিলল। এদিকে অপর অর্ধনগ্ন মেয়ে তড়িঘড়ি করে নিজেকে ঢেকে সিডের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।

‘সামনে থাকা মেয়েটি সিডের অপ্রস্তুত মুখের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,

“দুইদিন পর আমাদের বিয়ে আর তুমি এখানে ফোস্টিনোষ্টি করছ? ছিঃ সিড, ছিঃ।”

‘সহসা তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দিতে পারল না সিড। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বেল্ট ঠিক করল সিড। অতঃপর হঠাৎ করেই বাঁকা হেসে গা-ছাড়া ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকিয়ে প্রশ্নের বিপরীতে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,

“সো হোয়াট?”

‘সাদা গাউন পরা মেয়েটি অগ্নিবৎ নারীর মতো তেজদীপ্ত পদচ্ছাপে দু’কদম এগিয়ে এলো। তার চোখে অশ্রুর সাথে তীব্র জ্বালা। সে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল,

“যে-ই আমি জীবনে কখনও পরপুরুষের দিকে ফিরেও তাকাইনি সে-ই আমার বাগদত্তা—তুমি; তুমি কিনা আমার অগোচরে বাইরের মেয়েদের সঙ্গে ফোস্টি নোষ্টি
করছ?”

‘সিডের কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। সে ঠান্ডা গলায় হেসে অনুতাপ কিংবা ভয়ের বিপরীতে কটাক্ষ করে বলল,

“আহহ! এজন্যই তোমাকে আমার সহ্য হয় না। এগুলোকে নষ্টামি বলে না, এগুলোকে এনজন বলে। আমাদের বয়সী ছেলেরা একটু এমন করেই। ইউ আর সো ব্যাকডেটেড বেইবি।”

‘আত্মগ্লানি এবং লজ্জার পরিবর্তে এহেন চোস্ত জবাবে
মেয়েটির ভেজা চোয়ালের পেশিগুলো শক্ত হয়ে উঠল। চোখের কৃষ্ণাভ তাঁরায় জ্বলজ্বল করে উঠল অগ্নিশিখা। মেয়েটি খেঁকিয়ে উঠল,

“এসবই যদি করবে, তাহলে আমাকে বিয়ে করছ কেন?”

‘শেষের কথাতে চেঁচিয়ে উঠতেই সিড ঝট করে মেয়েটির মুখের সামনে আঙুল তুলে চিবিয়ে, চিবিয়ে বলল,

“চুপ! তোকে আমি বিয়ে করছি না। তোর বাপ তোকে আমার সাথে বিয়ে দিচ্ছে শুধুমাত্র নমিনেশনের জন্য।”

‘মেয়েটির সকল তেজ যেনো এক নিমিষেই নিভে গেল। বুক ভেঙে আবারও ফুঁপিয়ে উঠল সে। পাথুরে কোমল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। সিড বাঁকা হাসল। ঠোঁট কামড়ে মেয়েটার মুখের কাছে মুখ এনে কুণ্ঠাহীন স্বরে বলল,

“ডোন্ট ক্রাই বেবি গার্ল, তুমি হবে আমার ঘরের রাণী। এসব বাইরের মেয়েরা সারাজীবন বাইরেরই থাকবে। আমার ঘরে রাণী হয়ে থাকবে তো তুমি। আমার প্রথম সন্তান আসবে তোমার গর্ভ থেকেই।”

‘মেয়েটি শক্ত ঢোকের মাধ্যমে কান্না গিলে নিল। এবার ঠোঁট বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে হেসে উঠল,

“হাহহ! তোমার কী মনে হয়, এতোকিছুর পরও আমি তোমাকে বিয়ে করব?”

‘সিড সোজা হয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ঠোঁট কামড়ে রহস্যময় ভঙ্গিতে হাসল। সময় নিয়ে শার্টের বোতাম লাগিয়ে ঠোঁটের এক কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে ধীরে ধীরে বলল,

“বিয়ে তো আমি এখন করতামই না, তাও আবার তোর মতো একটা রোগীকে। শুধু ড্যাডের কথা ফেলতে পারি না বলে করছি। সংসারের প্যাঁচে জড়ানোর মতো ছেলে সিড তালুকদার নয়। তবে তোমাকে বিয়ে করার পেছনে আরেকটা কারণ আছে বেইবি গার্ল। বিশ্বাস করো ইমামা বেইবি গার্ল, তোমার মতো সুন্দর মেয়ে আমি আমার জীবনে আর একটাও দেখিনি। শুধুমাত্র তোমার রূপের জন্যই আমি তোমাকে বিয়ে করছি। কারণ, ছেলেরা ঘরের জন্য অলওয়েজ বেস্টটাই চায়।”

‘তারপর, একটু থেমে তাচ্ছিল্য ভরা চোখে তাকিয়ে বলল,

“আর কী বললে, আমাকে বিয়ে করবে না? পারো তো গিয়ে তোমার বাবার সামনে বলো। যদি সাহস থাকে যাও, বিয়ে ক্যান্সেল করো।”

‘শেষ কথাগুলো অবজ্ঞার সাথে ছুঁড়ে দিল সিড। ইমামার চোখ আবারও অশ্রুতে ঝাপসা হয়ে এলো। ওর কণ্ঠ কাঁপছে, থুতনি বারবার ভেঙে আসছে। কিন্তু না! ইমামা এবার আর কাঁদল না। সিডকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ করেই শব্দ করে হাসতে শুরু করল ইমামা। হাসতে হাসতে অকস্মাৎ পা থেকে চার ইঞ্চি হিল টি খুলে ফেলল। তারপর আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হিলের তীক্ষ্ণ, ধারালো অংশ দিয়ে সুতীব্র এক আঘাতে সুবিশাল আয়নাটা এক লহমায় ভেঙে ফেলল। সিড ভরকে যায় ইমামা এরূপ শীতল আচরণে। ইমামা এক টুকরো কাঁচ তুলে নিল। ধীরে, ধীরে এগোতে থাকল সিডের দিকে। ইমামা যতো এগোয়, সিড ততই পিছিয়ে যায়। সিডের শরীর গিয়ে ঠেকল দেয়ালের সাথে।
ইমামা বরফগলা শীতল হাসি ছুঁড়ে দিল সচকিত সিডের শঙ্কিত মুখে।

“আমি ইমামা ওয়াসিম কারোর অপশন না। যেটা আমার, সেটা শুধুই আমার। আর যেটা আমার হবে না, সেটা অন্য কারও হবে না ইউ বাস্টার্ড, সিড তালুকদার।”

‘বলে ক্ষিপ্রগতিতে কাঁচের টুকরোর তীক্ষ্ণ অংশটি সিডের প্রাইভেট পার্টসের ভেতর চালিয়ে দিল ইমামা। সিড চিৎকার করে উঠার আগেই ইমামা কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে।


‘গুলশানের অভিজাত রেস্টুরেন্টটা আজ আলো-ঝলমলে সাজে সেজেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর একমাত্র নাতনির জন্মদিন বলে কথা। চমকপ্রদ আয়োজনের শেষ নেই। লাল-কালো কার্পেটে মোড়ানো প্রবেশপথ আর সোনালি ঝাড়বাতির আলোয় ঝলসে উঠছে ভেতরের পরিবেশ। সুগন্ধি ফুলের সাজ আর মৃদু ওয়েস্টার্ন মিউজিক মিলেমিশে তৈরি করেছে এক রাজকীয় আবহ।

‘পার্টি কেন্দ্রে, পুলের একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর জামাতা স্ট্রিফেন। স্ট্রিফেন একজন সফল ব্যবসায়ী। যদিও নামেই সে ব্যবসায়ী। প্রকৃতপক্ষে সে কালো জগতের ভয়ঙ্কর খেলোয়াড়। ইতালিয়ান এই নাগরিকের সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডের কত শত ছায়ামূর্তির লিংক আপ রয়েছে তা আজও গোপন। তার ডাকেই আজকের আসরে ইতালি থেকে এসেছে নামি-দামি সব কুখ্যাত লোকজন।

‘স্ট্রিফেনের চারপাশে তার কয়েকজন পার্টনার ওয়াইন গ্লাস হাতে ডিঙ্কসে মগ্ন। অথচ এই ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে চিনে নিতে কোনো অসুবিধা হচ্ছিল না এখানকার সবচেয়ে সুউচ্চ ও সুর্দশন লোকটাকে। গাঢ় গম্ভীর সে নির্বিকার ভঙ্গিতে লেমন মিন্টের গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। সে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির মতন বাজপাখির চোখে বারবার চারপাশ স্ক্যান করছে সকলের অগোচরেই।

‘কিন্তু এই জমকানো পার্টির ভিড়েও সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কাড়ছিল তার হাত। লোকটার হাতভরা ট্যাটু যেনো গল্পের খণ্ডচিত্র। অবাক করে দেওয়ার মতো অদ্ভুত শিল্পকলা। কব্জির কাছে ক্রস করা দুটি তলোয়ার, মাঝখানে খোদাই করা “Dos Mundos” আর “Dos Reyes”। যার অর্থ—দুই পৃথিবী, দুই রাজা। তলোয়ারের পাশেই ডানা মেলা এক দেবদূত। যেটা দেখতে এমন যেনো যুদ্ধক্ষেত্রে নামার আহ্বান জানাচ্ছে কেউ। আর তার নিচে স্পষ্ট জ্বলজ্বলে অক্ষরে লেখা “R” আর “K”।

‘একইসাথে পুলসাইডের ঝলমলে আলোয় লোকটার বাঁ হাতটা যেনো তার নিজস্ব এক পৃথিবী তৈরি করে নিয়েছে। চাঁদের অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত প্রতিটি কলা পরপর খোদাই করা তার হাতে। তার ঠিক পাশেই অনন্তের প্রতীক “∞”—নিঃশব্দে ঘোষণা করা সীমাহীন সময় আর অসীম ক্ষমতার দম্ভ। প্রতিটি আঙুলগুলোতেও প্রতীকী খোদাই। কনিষ্ঠ আঙুলে জড়িয়ে থাকা সাপটা যেনো নিজেই নিজের লেজ গিলে জন্ম-মৃত্যুর চক্রকে অমর করে রেখেছে। অনামিকায় দীর্ঘায়িত নর্থ স্টার দিশাহীন অন্ধকারে আলোর পথপ্রদর্শক। মধ্যমায় আঁকা মানবচোখ শীতল অথচ ভয়াল৷ যেনো সব আড়াল ভেদ করে দেখতে পাচ্ছে অদৃশ্য অন্ধকারের গভীরতম গোপন।

‘পার্টির সকলের নজর তার দিকে থাকলেও তার দৃষ্টিতে ছিল রহস্য। রহস্যময় মানবটা যখনই গ্লাসে চুমুক বসাতে যাবে তখনই হঠাৎ এক ক্রন্দনরত রমণী অপরদিক থেকে ছুটে এসে ধাক্কা খেল তার সঙ্গে। লোকটার হাতে ধরা লেমনেট মিন্টের গ্লাসটা মুহূর্তেই নিচে পড়ে বিকট শব্দে চুরচুর হয়ে ভেঙে গেল। লোকটা যে-ই না হিংস্র গর্জন দিয়ে উঠবে তার আগেই মেয়েটি কাঁপা কণ্ঠে তড়িঘড়ি মাথা নত করে বলল,

“সরি! সরি! আই’ম সো সরি!”

‘মেয়েটির ভেজা, অসহায় ফিসফিসে কণ্ঠে লোকটার রূঢ় মুখ মুহূর্তেই থমকে গেল। চোখ থেকে কালো সানগ্লাস সরিয়ে চোখ মেলে তাকাতেই যেনো বজ্রাহত হলো। অশ্রুসিক্ত সেই মুখের দীপ্ত ব্যথায় উদ্ভাসিত হলো তার সমুদ্র নীল চোখ।

‘ক্ষমা চেয়ে মেয়েটি মুখ না তুলেই হাতের পিঠে চোখ মুছতে মুছতে দৌঁড়ে চলে গেল। লোকটা গম্ভীর ভঙ্গিতে গ্রীবা বাঁকিয়ে চেয়ে রইল মেয়েটির যাওয়ার পানে। মেয়েটির, সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মির ন্যায় রক্তিম কেশরাশির দীপ্তি লোকটার দৃষ্টিকে আবারও আলোকিত করে তুলল। মেয়েটি আড়ালে মিলিয়ে গেলেও তার চোখ সরে না।

‘সবটা লক্ষ্য করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্রিফেন ঠোঁট বেঁকিয়ে ক্রূর হাসি দিয়ে রহস্যময় মানবকে বলল,

“সো বিউটিফুল, নাহ?”

‘দৃষ্টি তখনও সরেনি। মেয়েটি অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পথপানে পাথরের মতো গম্ভীর মুখে চেয়ে থেকে লোকটা গুরুগম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,

“হু ইজ শি?”

‘স্ট্রিফেন ঠোঁট বাঁকিয়ে উত্তর দিল,”ইমামা ওয়াসিম। আমার শালার বাগদত্তা।”

‘শেষের কথাগুলো আদৌ লোকটার কর্ণকুহরে পৌঁছালো কিনা, তা বোঝা গেল না। তার সমুদ্র নীল চোখে তখনও অচঞ্চল, নিঃস্পন্দ এবং নির্বিকার। কিছু মুহূর্ত পর হঠাৎই তার কালচে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি খেলে গেল। নিঃশব্দে সে উচ্চারণ করল,

“শি ইজ নট ইমামা।”

‘ঠিক তখনই মিউজিক বক্সের সুর ভেসে এল। শব্দে আড়াল হয়ে গেল লোকটার ফিসফিসে উক্তি। কেক কাটার সময় হয়ে যাওয়ায় স্ট্রিফেন সকলকে তাড়া দিয়ে নিয়ে গেল কেক কাটিং স্পটে। চারপাশ ফাঁকা হয়ে গেলেও লোকটা নড়ল না। তার দৃষ্টি গিয়ে ঠেকল কিছু দূরে, ঠিক সেই জায়গায়, যেখানে পড়ে ছিল তার হাত থেকে ছিটকে যাওয়া লেমনেট মিন্ট। এক বিড়াল এসে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জিভ দিয়ে চাটতে শুরু করল তরলটুকু। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিড়ালটির মুখ থেকে ফেনা বের হতে লাগল। তারপর অচিরেই কাঁপতে কাঁপতে হঠাৎ করেই বিড়ালটি নিস্তেজ হয়ে পড়ল ঘাসের উপর।


‘বাগানের এক কোণে বসে অশ্রুসিক্ত মুখে কাঁদছিল ইমামা। সিডের সাথে তার প্রণয়ের কোনো সম্পর্কই ছিল না। সম্পূর্ণ পারিবারিক সিদ্ধান্তেই এই বাগদান এগোচ্ছিল। অথচ সিড যে এতটা দুশ্চরিত্রের মানুষ, তা ইমামা কোনোদিন কল্পনাও করেনি। আজ যদি সে সিডকে খুঁজতে খুঁজতে ওয়াশরুমে না যেত, তাহলে হয়ত সিডের সেই আসল রূপ কোনোদিনই তার চোখে ধরা পড়ত না।

‘স্মৃতির সেই মুহূর্তগুলো মনে পড়তেই ইমামার বুক ফেটে কান্না বেড়ে গেল। ঘাসের উপর বসে হাঁটুর ভাঁজে মুখ লুকিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদছিল ইমামা। অথচ ভরা পার্টিতে একবারও কেউ খোঁজ নিতে আসেনি তার। হয়ত তার অনুপস্থিতি কারোর নজরেই ধরা পড়েনি। এ ভাবনাতে আবারও ফুঁপিয়ে উঠল ইমামা। তখনই পাশ দিয়ে যাচ্ছিল সেই অদ্ভুত রহস্যময় মানব টা। কান্নার শব্দ প্রথমে উপেক্ষা করলেও হঠাৎ চোখে পড়ল সে-ই লাল কেশরাশি। তার পদক্ষেপ হঠাৎই থেমে গেল। দূর থেকে বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করল ইমামাকে। হাঁটুর ভাঁজে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকা মেয়েটির পিঠের চুলগুলো সামনে ঝুঁকে। মুষড়ে পড়া দেহের পলক কাঁপছে কান্নার তোড়ে। পিঠদেশ অনাবৃত অথচ ক্রন্দনরত মেয়েটার নিজের অবস্থার দিকে খেয়াল নেই বিন্দুমাত্র।

‘কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎই, চিতাবাঘের মতো নিঃশব্দ পদক্ষেপে কাছে এগিয়ে এল সে-ই লোকটা। কাছে এসে দৃষ্টি সরিয়ে নিল অন্যদিকে। তারপর নিঃশব্দে নিজের কোট খুলে আলতোভাবে ইমামার পিঠের উপর চাপিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল সোজা পথে। একবারও পিছনে ফিরে তাকাল না।


‘একটি কাঁচের ঘর। নিস্তব্ধ, অন্ধকারাচ্ছন্ন। কাঁচের ফাঁক গলিয়ে পশ্চিম দিকে দেখা যাচ্ছে একটি ছোট ঝরনা। বাইরের ঝরনার টুপটাপ শব্দ ভেতরে প্রতিধ্বনির মতো ভাসছে। চারদিকে বিশাল বৃক্ষের ছায়া যেন কাচের দেয়ালে আঁকাবাঁকা দানবীয় ছায়া ফেলে রেখেছে। ঘরের মাঝখানে এক মানবদেহ ঝুলছে। আধো আলোয় মুখটা এতটাই ছায়াঘেরা যে তার বেদনার আকৃতি কেবল আঁচ করা যাচ্ছে কিন্তু বোঝা যায় না। পাশের টেবিলে সাজানো ধারালো অ’স্ত্র-গুলো অ-শুভ মৃদু ঝিলিক দিচ্ছে। কালো ওভারকোটে ঢাকা এক মানব নীরবে বসে ই-স্পা-তের ঘর্ষণে ছু-রি-র ধার শানাচ্ছে। কিঁচ, কিঁচ শব্দটা পুরো ঘর জুড়ে ঠান্ডা শীতলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

‘ছু-রি-টা তীক্ষ্ণ হয়ে উঠতেই সে উঠে দাঁড়াল। অতঃপর ধীর, গম্ভীর পদক্ষেপে এগিয়ে গেল ঝু-ল-ন্ত দে-হটার দিকে। প্রথমে প্লায়ার্স দিয়ে একে একে নখ গুলো টে-নে ছিঁ-ড়ে ফেলল। র-ক্তে;র গরম ছিটে কাচে ছোপ ছোপ লাল দাগ টেনে দিল। নখ উঠতে থাকতেই দে-হটা ঝাঁকুনি খেয়ে ছটফট করল। কিন্তু মুখে বাঁধা কাপড়ের কারণে কোনো চিৎকার বের হল না। এরপর ছু-রি-র ধার দিয়ে প্রতিটি আঙুল একে একে কে-টে ফেলল সে। চপ! চপ শব্দ ধ্বনিত হয়! মাং-স ছিঁ-ড়ে হা-ড় থেকে আলাদা হওয়ার ক-র্ক-শ শব্দে কাচের ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠল। দুর্বোধ্য দেহটা কাঁপছে। শ্বাস নিতে গিয়ে হাঁফাচ্ছে। তবুও কোনো আওয়াজ নেই।

‘তারপর হঠাৎ সে এক কোপে গোড়ালি থেকে পা আলাদা করে দিল। ঝুলন্ত দেহটা প্রবল এক ঝাঁকুনি খেল। নিচে রাখা পাত্রে পা থেকে গলগল করে র-ক্ত পড়তে থাকে। মোটা হাড়ের ফাঁক গলে তরল ম-জ্জা বের হয়ে আসছে। সেই তরল ওভারকোট পরিহিত মানব ঠান্ডা নিষ্ঠুরতায় সংগ্রহ করল। অতঃপর তার ঠোঁটে শয়-তা-নি হাসি ফুটে উঠল। ছু-রি দিয়ে সে ঝুলন্ত দেহটার গাল চি-রে দিল। তারপর পাত্রের র-ক্ত আর হা-ড়ে-র মজ্জা মিশিয়ে সেই তরল মুখ দিয়ে জোর করে ভেতরে ঢেলে দিল। লোকটা পাগলপ্রায় যন্ত্রণায় কাঁপতে লাগল, চোখ উল্টে গিয়ে শিরদাঁড়া ছটফট করে উঠল। পুরো শরীরটা কাঁপছে। কিন্তু মুখ থেকে বেরোচ্ছে শুধু দমবন্ধ করা হুউঁহ… হুউঁহ.. শব্দ।

‘কাঁচের ঘরটার ভেতর র-ক্তে-র গন্ধ ঘন কুয়াশার মতো ছড়িয়ে পড়েছে। আধো আলোয় নিস্তব্ধ ঘরটা যেনো পরিণত হয়েছে এক জীবন্ত নরকে। ওভারকোটে ঢাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন মানবটা, যার কালো ক্যাপের আড়ালে মুখের একটুকরো রেখাও ধরা পড়ে না, সে এবার সত্যিকারের নরকের খেলা শুরু করল। তার হাতে ঝলসে উঠল ধারালো ছু-রি। ঝুলন্ত দেহটার কা-টা গোড়ালির অংশে ছু-রি-টা বসিয়ে সে ঠান্ডা নির্লিপ্ততায় এক ইঞ্চি, এক ইঞ্চি করে কে-টে উপরে উঠতে লাগল। প্রতিটি কো-পে মাং-স ছিঁ-ড়ে যাওয়ার কক্‌কক্‌ শব্দ কাচের ঘরের ভেতর প্রতিধ্বনির মতো বাজতে থাকে৷

‘ধীরে ধীরে ছুরির ধার যখন নাভীর কাছে পৌঁছাল, তখনই অন্তরের অশান্ত অন্ধকার প্রকাশ পেল। দেহটা হঠাৎ ফেটে গিয়ে পেটের ভেতরের না;ড়িভু-ড়ি থকথক করে বেরিয়ে ঝরে পড়ল নিচে। গরম তরল র-ক্ত ঝরনার মতো গড়িয়ে এলো মেঝেতে। কিছু অংশ ছিটকে গিয়ে লেগে গেল কালো ওভারকোটে। ঠিক সেই মুহূর্তে যন্ত্রণার সবটুকু উপভোগ করা মানুষটার ধৈর্য ভেঙে গেল। চোখের ভেতর লুকোনো দা-ন-ব জেগে উঠল। সে এক প্রচণ্ড আক্রোশে ঝাপটে ধরল ছু-রি-টা। অতঃপ এক কোপে ঝুলন্ত দেহটার মাথা শরীর থেকে আলাদা করে দিল। মাথাটা ঝুলে গিয়ে দুলতে থাকল, র-ক্ত ছিটকে কাচের দেয়ালে লাল দাগ এঁকে দিল। পরক্ষণেই সে নিজের ওভারকোটটাকে ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে ছুঁড়ে ফেলে দিল মেঝেতে। অন্ধকারে ঢাকা তার শরীর মুহূর্তেই অন্য এক রূপ নিল। মুখটা এখনও কালো ক্যাপের নিচে ঢাকা। তবে অন্ধকার ফাঁক গলে বেরিয়ে এলো কণ্ঠের গা শিউরে দেওয়া বিকৃত, খসখসে হাসি।

‘হাসিটা প্রতিধ্বনিত হয়ে কাঁচের দেয়াল বেয়ে ফিরে এলো। এ যেনো চারপাশে আরও শত শত ছায়া দাঁড়িয়ে একই সাথে হাসছে। বাইরের ঝরনার নিরীহ স্রোত হঠাৎই যেনো এই হাসির সাথে তাল মিলিয়ে উঠল টুপটাপ, টুপটাপ মৃ-ত্যু-র ঢোলের মতো। ঘরের বাতাসে এখন গা ঘিনঘিনে র-ক্তে-র গন্ধ ঘন হয়ে জমে আছে। না-ড়ি-ভু-ড়ি-র থকথকে টুকরো মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মেঝের দিকে তাকালে মনে হবে কারও ভক্ষণ অপেক্ষমাণ শিকার। সে-ই ছায়ায় ঢাকা মানুষটা তখনও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের ছু-রি থেকে তখনও র-ক্ত টপ টপ করে পড়ছে। প্রতিটি ফোঁটা হতে যেনো ঘোষণা হচ্ছে এখানেই মৃত্যু শেষ নয় বরং শুরু। মানে, খেলা শুরু।


‘নিচ থেকে ভেসে আসা হরিতক শব্দে চোখের পাতায় আলতো করে লেগে থাকা অবশিষ্ট ঘুমের রেশটুকু কেটে গেল। তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটুকু কাটিয়ে গা ঝাড়া ভঙ্গিতে, চোখমুখ কুঁচকে উঠে বসল ইমামা। চোখদুটো মৌমাছি দংশনের মতো ফুলে আছে। চোখের নিচে রাত্রি জাগরণের স্পষ্ট ছাপ। গোলাপ বর্ণের মুখাবয়বের অবস্থা করুণ। কাল সারারাত কেঁদেছে ইমামা। সচক্ষে দেখা সেই বিভৎস দৃশ্য আর ধোঁকা টা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না সে। কোনোভাবে যে বিয়েটা আটকাবে সেই উপায়টুকুও নেই। ইমান ওয়াসিম এই বিয়ে কখনোই ভাঙতে দিবেন না।

‘গায়ে ওড়না চাপিয়ে উঠে দাঁড়াল ইমামা। বাতাসে ভেসে আসা আওয়াজ অনুসরণ করে নিচে যেতে, যেতে টিভিতে চলতে থাকা নিউজটা শুনলো। কাল রাত থেকে ডিজিপির ছেলে মিসিং। সদর দরজার সামনে ভীড় দেখে সেদিকে এগিয়ে গেল ইমামা। ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতেই প্রথমে চোখে পড়ল ইমান ওয়াসিমের চিন্তিত মুখ। ইমামা পাশে ফিরে দেখল তার ভাই ইমনের আতঙ্কভরা মুখ। তারপর একে, একে সকলের অভিব্যক্তি অবলোকন করল —প্রত্যেকের চোখমুখে একই ভয়ের ছাপ। তাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই বুকের ভেতর হিম নেমে এলো তার।

‘একটা কফিন। ভেতর সিডের দেহের টুকরো, টুকরো অংশের ওপর রাখা তার কাটা মাথাটা। ভয়ংকর দৃশ্যটা দেখে ইমামার মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে গেল ভয়ে। শরীর শীতল হয়ে উঠল। ওদিকে ইমান সাহেব উৎকণ্ঠিত মুখে বারবার কারো সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। ইমামা কাঁপতে কাঁপতে হঠাৎ লক্ষ্য করল সিডের মাথার ওপরে একটা ছোট্ট চিরকুট রাখা। কাঁপা হাতে সেটা তুলে নিতেই ওর সারা শরীর শিউরে উঠল। চিরকুটের অক্ষরগুলো রক্ত দিয়ে লেখা,,

“তোমার চোখে মানায় কেবল আমার লাভ টর্চারের অশ্রু, মাই ফাকিং ডার্ক রেড।”

Born_to_be_villains

methuburi_মিথুবুড়ি

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply