নির্লজ্জ_ভালোবাসা
লেখিকাসুমিচৌধুরী
পর্ব ৩৭ (❌কপি করা নিষিদ্ধ❌)
আয়ান আর তিথির গাড়ি বিকট শব্দ করে সোজা খান বাড়ির সামনে থামল। তিথি আতঙ্কে কাঠ হয়ে গাড়িতে বসে রইল, যেন নরকের দরজা খুলতে চলেছে না জানি কপালে কী দুঃখ আছে!
আয়ান গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল, বাড়িটা কেমন জানি অস্বাভাবিক, কবরের মতো থমথমে লাগছে। আয়ান আর কোনো দিক না তাকিয়ে তীব্র গতিতে সোজা বাড়ির ভেতরের দিকে হাঁটা ধরল। তিথি হঠাৎ ভয়ে ও লজ্জায় শাড়ির আঁচলটা সর্বোচ্চ নিচে পর্যন্ত টেনে মাথায় ঘোমটা দিল যেন অভিশাপ নিয়ে আসা এক নতুন বধূ।
আয়ান যখন দামি খয়েরী পাঞ্জাবি পরা অবস্থায় শোকের আবহে অন্ধকার হল ঘরে এসে দাঁড়ালো, তিথিও শাড়ির ঘোমটা ধরে আয়ানের একটু পিছে, শঙ্কিতভাবে দাঁড়ালো।
হিমি খান তনুজা খানের পাশে বসে নীরবে কাঁদছিলেন। হঠাৎ তার চোখ গেল আয়ানের উজ্জ্বল পোশাকের দিকে। আয়ানকে জামাই বেশে আর পাশে একটা মেয়েকে গভীর ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হিমি খানের চোখ আতঙ্কে বিস্ফারিত হয়ে গেল। তিনি যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি শুধু একটা আর্তনাদের মতো শব্দ বের করলেন।
“আ-আ-আয়ান!”
আয়ান নাম শুনে হল ঘরে সবাই চমকে সামনের দিকে তাকাল। আর আয়ান এবং তার পাশে সেই অদ্ভূত ঘোমটা দেওয়া মেয়েটিকে দেখে সবার মাথায় যেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলো। শোকের স্তূপের ওপর এই বর-কনের বেশ দেখে পরিস্থিতি চূড়ান্ত ভয়াবহতার দিকে মোড় নিল।
আরিফুল খান চিৎকার করে তাড়াতাড়ি সোফা থেকে উঠে এসে আয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় গর্জন করে বললেন।
“আয়ান! কোথায় ছিলি এতদিন? আর তোর পাশে এই মেয়েটা কে? দুজন এমন বর-কনে সেজে আছিস কেন?।”
রৌদ্র, শিহাব, তুরা, আরশি, আরফা এমনকি বাকি সবাইও এক মিনিটেই যেন সব কিছু ভুলে গেল। নিথর শোকের মাঝে শুধু হা করে আয়ান আর অদ্ভুত বেশের পাশের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল।
আয়ান তার বাবার কথা বুঝতে পারল না। তিথিকে সবাই ‘এই মেয়ে’ বলছে কেন? তিথিকে কি চিনতে পারছে না? পাগল হয়ে গেল নাকি সবাই?
ভাবতেই আয়ান বিরক্তি নিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে পাশে থাকা তিথির দিকে তাকিয়ে দেখল তিথি ইয়া লম্বা ঘোমটা দিয়ে আছে, যা তাকে অচেনা করে দিয়েছে। আয়ানের মুহূর্তে রাগ চড়ে গেল। আয়ান তিথিকে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আরিফুল খান অধৈর্য হয়ে পুনরায় আবার বললেন।
“কী হলো? বলছিস না কেন? কে এই মেয়েটা?”
আয়ান তার বাবার কথায় অপরাধীর মতো সামান্য মাথা নিচু করল। মুহূর্তে তার মনে হলো, এই কঠিন সত্যটা কি লুকিয়ে রাখা সম্ভব? মিথ্যা দিয়ে আর কতদিন এই সম্পর্কটা বাঁচিয়ে রাখা যাবে? ভুল বোঝা বুঝির জন্য ওদের বিয়েটা হয়েছে, কিন্তু এখন এইটা অমোঘ সত্য আয়ানের স্ত্রী তিথি।
আর আয়ান মিথ্যা বলা ঘৃণা করে। তাই মৃত্যুভয় সত্ত্বেও সাহস নিয়ে মাথা নিচু রেখেই, প্রায় ফিসফিস করে বলল।
“বাবা, আমি বিয়ে করেছি।”
আয়ানের এই দুইটি শব্দ যেন হল ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটালো। শোকস্তব্ধ পুরো বাড়ি দ্বিতীয়বার বজ্রাঘাতে চমকে উঠল। হিমি খান নিজের শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ছুটে আয়ানের সামনে এসে অবিশ্বাসের চরম সীমায় পৌঁছে ভেঙে যাওয়া গলায় বললেন।
“বিয়ে? বিয়ে করেছিস মানে? তুই এই শোকের বাড়িতে এসে আমাদের সাথে মজা করছিস?”
আয়ান তার মায়ের কথা এক বর্ণও বুঝতে পারল না। ‘শোকের বাড়ি’ মানে কী? কার মৃত্যু হয়েছে? আয়ান বাড়ির সকলের দিকে রুদ্ধশ্বাসে তাকাল সবাই তো বসে আছে, তাহলে শোকের বাড়ি কেন বলছে? হঠাৎ আয়ানের চোখ গেল তুরার দিকে। আয়ান তুরাকে দেখে পাথরের মতো জমে গেল তুরা আবার কখন এলো? তার থেকেও বড় ধাক্কা খেল শিহাবের পাশে রৌদ্রকে দেখে।
আয়ানের কাছে যেন সবকিছু নিয়তি-নির্ধারিত কোনো দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। আয়ানের ভাবনার মাঝেই হিমি খান এবার উন্মাদিনীর মতো বললেন।
“আয়ান! বল মেয়েটা কে! এখনই বল, কোথা থেকে ধরে এনেছিস?”
আয়ান এবার সামান্য জোড় নিয়ে, হতাশায় নত কণ্ঠে বলল।
“মা, আমি সত্যি বলছি, ও আমার স্ত্রী। বিয়ে করেছি আমি ওকে। বিশ্বাস না হলে তোমরা তিথি…।”
বাকিটুকু বলার আগেই, বিদ্যুতের ঝলকের মতো আয়ানের গালে শব্দ করে একটি থাপ্পড় পড়ল। হিমি খান ক্ষিপ্ত হয়ে থাপ্পড় মারলেন আয়ানের গালে। তিনি শোকে ও রাগে ফুঁপিয়ে কেঁদে বললেন।
“ছিহ্! এই দিনটার জন্য লজ্জা করল না তোর? এই শিক্ষা দিয়েছি আমরা তোকে? আমাদের পরিবারের সম্মান কি কোনো মূল্য ছিল না যে এইভাবে একা একা বিপত্তি ডেকে আনলি?”
থাপ্পড়ের শব্দে তিথি ঘোমটার আড়ালে মুর্ছিত হবার মতো কেঁপে উঠল। তিথির মনে হলো, আয়ানের এই অপমান তার নিজেরই পাপের ফল। তিথি হঠাৎ সমস্ত ভয় বিসর্জন দিয়ে, ঘোমটা না সরিয়েই হিমি খানের পা জড়িয়ে ধরে, কান্নায় ভেঙে যাওয়া কণ্ঠে বলল।
“মেরো না কাকি! আয়ান ভাইয়ার কোনো দোষ নাই। সব দোষ আমার। আমিই তোমাদের বলছি, বিশ্বাস করো।”
তিথির পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে বাড়ির সকলের যেন হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হয়ে গেল। এক নিদারুণ নীরবতা নেমে এলো। এক মুহূর্তে হিমি খান থমকে গেলেন তিথির কণ্ঠ শুনে। হিমি খান বাড়ির সকলের দিকে বিভ্রান্ত চোখে তাকালেন। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে তিথির কাঁধ ধরে তুললেন। তিনি ভয়ে ভয়ে তিথির দীর্ঘ ঘোমটাটা ধীরে ধীরে সরিয়ে দিলেন। তিথি সাথে সাথে মাথা নত করে মাটিতে চোখ রাখল।
শিহাব আরশির পাশে মুহূর্তের স্তব্ধতা কাটিয়ে, তিথির মুখ দেখে ভয়ে বিস্ফারিত হয়ে গেল। যে মেয়েটার শেষকৃত্য তারা করেছে, সে এখন তাদের সামনে! শিহাব নিজের জ্ঞান হারিয়ে যেন আরশিকে ঢাল বানিয়ে সকলের মাঝে আকাশ কাঁপানো চিৎকার করে উঠল।
“আআআআ! তিথির ভূ ভূ ভূউত! সরা ওকে!”
তিথির মুখ দেখে সবার মুখ ফুলের মতো না, কিন্তু রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেল। সেই ভয়াবহ শোকের মধ্যে অবিশ্বাস্য এক আনন্দ নেমে এলো। হিমি খান আর রাগ দেখানোর সুযোগ পেলেন না। তিনি চিৎকার করে তিথিকে জড়িয়ে ধরলেন, কান্নার বাঁধ ভেঙে গেল তার। তুরাও আর নিজেকে সামলাতে পারল না। ঝড়ের বেগে ছুটে এসে সেও তিথিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল।
শিহাব তখনো আরশিকে ঢালের মতো জাপটে ধরে ছিল। সে চোখের পলক না ফেলে ওদের দিকে তাকিয়ে ভয়ে দাঁত কিড়মিড় করে ফিসফিস করে বলল।
“আরশি, দেখ! ব্যাপারটা কী হলো বলো তো! আয়ান কি সত্যি সত্যি তিথির ভূতকে মন্ত্র পড়ে বিয়ে করে নিয়ে আসল নাকি? ও কি এখন আমাদেরকে মারবে?”
আয়ান কিছুই বুঝল না তিথিকে দেখে সবাই এমন উন্মাদ আচরণ করছে কেন?আশিক খান হাওমাও করে শিশুর মতো কান্না করতে করতে বললেন।
“আমার মেয়ে তিথি! আমার মেয়ে ফিরে এসেছে!”
কথাটা বলেই তিনি এগিয়ে এসে তিথিকে পাছে পালিয়ে যায় এই ভয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। আয়ানের মাথা ভোঁ ভোঁ করছে, কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না।এদিকে তিথি ভাবছে, মাত্র দুই দিন বাড়িতে ছিল না, তাই বুঝি সবাই এমন কাঁদছে। তিথিও সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল।
“তোমরা আমাকে মাফ করে দিও। আমি আসলে বুঝতে পারিনি, আমার একটু ভুলের জন্য এত বড় তুলকালাম ঘটে যাবে।”
তিথির কথায় সবার কান্না বিদ্যুৎ চমকের মতো থমকে গেল। আনোয়ার খান এগিয়ে এসে গলার স্বর প্রায় হারিয়ে বললেন।
“তোর ভুল মানে? কী বলছিস তুই?”
তিথি সাথে সাথে সব কিছু এক নিঃশ্বাসে শুরু থেকে খুলে বলল সেইদিন আয়ানের গাড়িতে চুইংগাম লাগাতে যাওয়া। রাতে গ্রামের চেয়ারম্যানের কাছে ধরা পড়া, আর সেই ভুল বোঝাবুঝির জন্য জোর করে বিয়ে হয়ে যাওয়ার সেই অবিশ্বাস্য কাহিনি। যা শুনে সবার মুখ অবাক বিস্ময়ে আবারো স্তব্ধ হয়ে গেল।
শিহাব তখন আরশিকে ধরে কাঁধের ওপর মাথা রেখে নিজেদের কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বিড়বিড় করে বলল।
“তার মানে আমরা তিন দিন ধরে একটা জ্যান্ত, ফুটফুটে মানুষকে মৃত বানিয়ে,তাকে কবর দিয়ে, তার জন্য আহারে বসে ছিলাম? আরে বাহ্! খান বাড়ি, তোদের মাথাকে স্যালুট! তোরা সেরা, রে সেরা!”
বিয়ের কথা শুনে কেউ আর কোনো প্রশ্ন তুলল না। তিথি যে বেঁচে আছে, সেই অবিশ্বাস্য স্বস্তিতেই সবার মুখে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ছাড়া আর কোনো শব্দ ফুটল না।
পরক্ষণেই আশিক খান কুণ্ঠিতভাবে আরিফুল খানের দিকে তাকালেন। তিনি নিশ্চিত, এখন ডিভোর্সের কথা উঠবে। কিন্তু আরিফুল খান আশিক খানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুহূর্তে তাকে নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে বললেন।
“অভিনন্দন, বেয়াই সাহেব! আমার বড় ভাই থেকে একেবারে আপন বেয়াই সাহেব হয়ে গেলে!”
আয়ান আর তিথির চোখ বিস্ফোরণে বড় বড় হয়ে গেল। এ কেমন নাটকের মোড়? আয়ান হতভম্ব হয়ে বলল।
“তোমরা কী বলছো এগুলা? ভাই কখনো বেয়াই সাহেব হয় নাকি?”
আনোয়ার খান আয়ানকে স্নেহভরে কিন্তু দৃঢ়তার সাথে বললেন।
“তিথি তোর কী হয়?”
“আমার ছোট বোন।”
“চুপ কর, বেয়াদব! বিয়ে করেছিস, এখন বলছিস বোন হয়!”
আয়ান সাথে সাথে আনোয়ার খানের দিকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না এমন চোখে তাকিয়ে বলল।
“তার মানে তোমরা আমাদের এই আজব, ভুল বোঝাবুঝির বিয়েটা মেনে নিয়েছ?”
আরিফুল খান উচ্ছ্বাসে তেজে উঠলেন, তার কণ্ঠে একবিন্দুও দ্বিধা নেই।
“অবশ্যই!”
আনোয়ার খান আবার বললেন।
“শুধু মেনেই নেইনি! আমি আগামীকালই আবার ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দেবো! আমি এক সেকেন্ডও দেরি করছি না, এখুনি সব আয়োজনের ব্যবস্থা করছি!”
আনোয়ার খানের উচ্ছ্বসিত ঘোষণা যেন বোমার মতো ফাটার পর সারা বাড়িতে আনন্দের ঢেউ বইয়ে দিল। যে হল ঘরটা পাঁচ মিনিট আগেও শোকের আঁধারে ডুবেছিল, সেই হল ঘরে মুহূর্তে ঢাকের আওয়াজ না বাজলেও আনন্দের এক অদৃশ্য ডুল বেজে উঠল। তিথি এই আকস্মিক ঘোষণা শুনে লজ্জায় মাথা তুলতে পারল না। পাশ থেকে আরফা এসে তিথির কাঁধ জড়িয়ে ধরে খলবল করে বলল।
“ওরে বাবা! ভাবি! আমার ছোট বোন থেকে একেবারে আজীবনের ভাবি হয়ে গেলি রে!”
তিথি লজ্জায় রক্তিম, আর আয়ান যেন জীবন্ত বরফে পরিণত হলো সব কিছু তার বোধশক্তির বাইরে।
এই উন্মাতাল আনন্দের মাঝে শিহাবের হঠাৎ মনে হলো যদি আয়ান-তিথির অবিশ্বাস্য ভুল মানা যায়, তবে রৌদ্র-তুরার প্রেমের বিয়ে কেন মানা যাবে না?
হ্যাঁ, শিহাব তুরাকে ভালোবাসে, কিন্তু এখন এই ভালোবাসাটা গলা টিপে খুন করতে হবে, কারণ সে আরশির স্বামী, আর তুরা রৌদ্রের স্ত্রী তাদের মাঝে হিমালয় পর্বত সমান দূরত্ব। রৌদ্রের সেই কঠিন সত্য মনে পড়ল ভাগ্য যা দেয় না, তা কান্না করেও পাওয়া যায় না। আর রৌদ্র বারবার বলেছিলো, শিহাব, আরশিকে কখনো কষ্ট দিস না! হয়তো তোর ভাগ্যে তুরা ছিল না।
শিহাব তুরার দিকে তাকাল। তুরা অকৃত্রিম হাসিতে সবার সাথে মজা করছে! এই দৃশ্য শিহাবকে চূড়ান্ত মুক্তি দিল, তুরাও তো রৌদ্রের সাথে হাসি খুশি আছে।আরশির সেই শিক্ষা, ভালোবাসা হলো প্রিয়জনের সুখ দেখতে পারা। এই কথাগুলো ভাবতেই শিহাব আরশির দিকে তাকাল দেখল, আরশিও কি শান্ত, স্নিগ্ধ হাসি খুশি।
শিহাব আরশির দিকে তাকিয়ে বুকে জমে থাকা পাহাড় সমান কষ্ট দীর্ঘশ্বাসের সাথে বাইরে ফেলে দিল। নতুন এক দায়িত্ব ও ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে শিহাব এবার ঘোষণা থামিয়ে সবার নিস্তব্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল।
“যদি আপনারা কেউ কিছু মনে না করেন, তবে আমি আপনাদের আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিতে চাই।”
শিহাবের কথায় আনন্দের কোলাহল থেমে গিয়ে সবাই চুপ করে তার দিকে তাকাল। আনোয়ার খান এগিয়ে এসে ব্যস্ত কণ্ঠে বললেন।
“হ্যাঁ, বলো বাবা, কী বলবে?”
শিহাব ধীর স্থিরভাবে রৌদ্রের দিকে তাকাল। রৌদ্রও শিহাবের দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে। শিহাব রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত একটি হাসি দিয়ে আনোয়ার খানকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
“আসলে আপনার ছেলে একদম ঠিক কথাই বলেছে যে ভাগ্য দেয় না, তাকে হাজার কান্না, জোর করেও পাওয়া যায় না। আর আপনার মেয়েটাও ঠিক কথা বলেছে ভালোবাসা হচ্ছে ত্যাগ। প্রিয় মানুষকে অন্য জনের পাশে হাসি খুশি দেখে তার সুখ কামনা করা, এটাই হচ্ছে আসল মুক্তি।”
শিহাবের কথায় কেউ কিছু বুঝল না। হল ঘরে বিরাট এক নীরবতা নেমে এলো। সবাই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল। রৌদ্র কৌতুহল ও ভয় নিয়ে তাকিয়ে আছে। আনোয়ার খান মাথা নেড়ে বললেন।
“আমি আসলে তোমার এই গূঢ় কথা বুঝলাম না, বাবা।”
শিহাব এবার তুরার দিকে তাকাল। তুরা অপরাধীর মতো লজ্জায় অদ্ভুতভাবে মাথা নিচু করে ফেলল। আবার শিহাব রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিলেন।
“যদি আয়ান তিথির ভুল বোঝাবুঝির, জরুরি বিয়েটা আপনারা মেনে নিতে পারেন, তাহলে আরেকটা বিয়ে, যা দুজন দুজনের নিখাদ ভালোবাসার সেটাও মেনে নিতে পারবেন না আপনারা?”
আবারো সবাই হতবাক। শিহাবের কথায় কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু আরশি, তুরা, রৌদ্র তারা তিনজনেই ভয়ে জমে গেল। তারা বুঝতে পারছে, তাদের গোপন অধ্যায় ফাঁস হতে চলেছে।
শিহাব মুখ খুলে আনোয়ার খানকে কিছু বলতে যাবে, রৌদ্র তাড়াতাড়ি না সূচক মাথা নেড়ে প্রায় কেঁদে ফেলার মতো ইঙ্গিত করল। শিহাব আবারো সেই শান্ত হাসি দিয়ে, রৌদ্রের বারণ বুঝেও এক সেকেন্ডও দেরি না করে, সবার উদ্দেশে চূড়ান্ত ঘোষণা দিলেন।
“তুরা আর রৌদ্রেরও বিয়ে হয়েছে! দুজন একে অপরের প্রতি তীব্র ভালোবাসার টানে বিয়ে করেছে। আপনারা যদি আয়ান তিথির ভুল বোঝাবুঝির বিয়ে মেনে নিতে পারেন, তবে একটা পবিত্র প্রেমের সম্পর্ককেও আপনারা অবশ্যই মেনে নিবেন। আমি আশা করি, আজ এই মুহূর্ত থেকে আপনারা তুরা আর রৌদ্রকেও আপনাদের পরিবারের অংশ করে নিবেন।”
রানিং…!
Share On:
TAGS: নির্লজ্জ ভালোবাসা, প্রিঁয়ঁসেঁনীঁ
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৬
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা গল্পের লিংক
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ১৯
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৫৬
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ১৩
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ২৪
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৫০
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪৪
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ১০
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ১৭