নিষিদ্ধ_চাহনা
পর্ব_০৫
লেখিকাসারাচৌধুরী
🚫অনুমতি বাদে কপি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ 🚫
রাস্তার ধারে সারি সারি ম্যাপল গাছের সারি।।শরৎের ছোয়ায় কচি পাতা দেখা যাচ্ছে।।টুপ্টাপ বৃষ্টি পড়ছে।। সেই বৃষ্টির কনা সহ পিচ ডালা কালো চকচকে রাস্তায় পড়ছে হলুদ কমাল রঙের মিশ্রনে সৃষ্টি ম্যাপল পাতা।।এ মন সুন্দর্য দেখতেও মন ভরে যায়।।ফাকা রাস্তার পাশে বেঞ্চিতে পড়ন্ত বিকালে বসে প্রকৃতি উপভোগ করে পুরো যুগ পার করে দেওয়া যায়।।
কিরিনা হেটে চলেছে রাস্তার পাশ দিয়ে।। সে বাংলাদেশি।।কানাডাতে স্টাডি করতে এসেছে সে।।।টরেন্টো জেনারেল হসপিটাল(UHN) এর থেকে কিছু টা সামনে আসতেই চোখে পড়লো।।হসপিটালে বাইরে ফরেইন একাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে।।কিনিনা বিষ্ময় সুচক চাহনি নিয়ে সামনে এগোতেই দেখতে পেলো কয়েকজন সেটজে দাঁড়িয়ে আর একজন কে এওয়ার্ড দিচ্ছে।।।পর পর তিনজন এওয়ার্ড প্রাপ্ত হলো সবার গলায় সর্নের মেডেল..একজন মাইকে বলে উঠে..
-দা বেস্ট কার্ডিওলজিস্ট হু গ্রাজুয়েট ফ্রোম দা ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টো অফ দা ইয়ার ডা.সাদি চৌধুরী…!
চারিদিকে করতালি পড়ে গেলো।।।সাদি চৌধুরী সবাই সামনে হাত নাড়িয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করলেন..কিরিনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।।।পুরুষটি অত্যাত্ন গম্ভীর মুখে চিলতে হাসি।।একটু বেশিই ফরসা।।ধুসর রঙের চোখের মনি সাদা তকের সাথে অদ্ভুত ভাবে মানিয়ে গেছে।।হাতে সাদা ডাক্তারি ল্যাব কোট হাতে ভাঝ করে স্টেজ থেকে নিচে নেমে আসে।। সাথে মানুষ তাকে ঘরে ধরে।।এতে সাদি প্রচুর বিরক্ত হয়।।। সে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায় পার্কিং এরিয়ার দিকে।।কিরিনা এখোনো তাকিয়ে আছে সাদা শার্ট এর উপরের দুটো বোতাম খোলা।।। সিল্কি চুল গুলো স্টাইলিশ ভাবে সেট করা।।প্রথম দেখাতেই মেয়েরা কুপোকাত হতে সক্ষম।।সাদি পার্কিং এরিয়া থেকে বেরিয়ে নিজের ব্লাক মার্সিটিজ নিয়ে এগিয়ে চললো তার বাড়িতে।।।সাদির বাড়ি শহর থেকে বেশ ভিতরে নিরিবিলি অঞ্চলে।। দুতলা বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ি।।।সে ডাক্তারির পাশা-পাশি নিজের একটা ৭৫% শেয়ারের বিজনেস সামলাই।।।সাদি নিজের গাড়ি ফাকা রাস্তাই আন্তেই বাম হাত দিকে গাড়ির স্ট্রিয়ারিং চেপে ধরে ফুল স্পীড এ দিলো।।ফলে ক্ষনিকের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো সাদির ব্লাক মার্সিটিজ। চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেলো মুহুর্তেয়।।
দুপুর দুটো বিশ আতিয়া বেগম তাড়াহুড়ো গুছিয়ে নিলেন।।। বাইরে গাড়ি এসে দাড়িয়েছে।।পিহু নিজের অশান্ত মন নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে জেরিন কে নিয়ে।।আতিয়া বেগম এম্বুলেন্স এ নিয়ে ইলিয়াস চৌধুরী কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে এয়ারপোর্টে র উদ্দেশ্য।। সমস্ত রাস্তা পিহুর চোখে পানি জেরিন কাদলেও তা বুজতে দেই নি।।সে চাই তার বেস্ট ফ্রেন্ড আরো ভেঙে ।। জেরিন পিহুকে এয়ারপোর্টে পৌছে দিয়ে এই গাড়িতেই ব্যাক করবে।।আগে জানলে নাবিল ও আসতো।।পিহুর মনে কু ডাকছে সে জানে তার সাথে খারাপ কিছু হবে।। সে জেরিন কে বলে।। কিন্তু জেরিন তুচ্ছ করে কারন সে জানে পিহুর মন খারাপ।।গাড়ি এয়ারপোর্টে পৌছে গেলো চল্লিশ মিনিটে।।পিহু জেরিন কে জরিয়ে ধরে কেদে দিলো।। দুটি দেহ একটি প্রানের বন্ধুত্ব আজ আবার দুটি প্রানে চলে যাবে আলাদা হবে কিছু মাস।।কিছু সময় এর জন্য।। আবার নাও দেখা হতে পারে।।জেরিন নিজেকে আর আটকাতে পারলো না সেও হুহু করে কেদে উঠলো হু হু করে।।আতিয়া বেগমের ফোন পেয়ে হেরিন কে ছেড়ে দিয়ে পিহু এয়ারপোর্টে ভিতরে ঢুকে গেলো।।জেরিন ও গাড়িতে উঠে চলে গেলো বাড়িতে।।চোখে তার পানি মন টা তার ও খারাপ।।।
ইলিয়াস চৌধুরীকে ইতিমধ্যে এমারজেন্সি ফ্লাইট এ তুলে দেওয়া হয়েছে পিহুদের ফ্লাইট আধাঘন্টা পরে।।আর কিছুক্ষন পরে ছেড়ে যাবে এই দেশ।।তাদের বাড়ি।।ছোট বেলায় হারিয়ে ফেলা বাবা মা।।বান্ধুবি।।প্রিয় মানুষ নাবিল ভাই।। প্রিয় কলেজ ক্যাম্পাস।।সবাইকে ছেড়ে নতুন এক দেশে পাড়ি দিবে পিহু।।এটাই নিয়তি।।অচেনা দেশ অচেনা মানুষের ভিড়ে এই ছোট্ট পিহু কি সারভাইব করতে পারবে।।কি আছে তার সামনের জীবনে।। পিহুর ভাবনার মাঝেই মাইকে এনাউন্সমেন্ট হলো তাদের ফ্লাইট এর।।আতিয়া বেগমের হাত ধরে ইমিগ্রেশন শেষ করে প্লেনে চেপে বসলো পিহু।।জানালার সাথে সিট পড়াই বাইরে খোলা পিচ ঢ্লা আলো জলা এয়ারপোর্টের রাস্তা টের পেলো।।প্লেন সময় মতো আকাশে উড়াল দিলো।।।
সময় খুব দ্রুত চলে যায় এই যে চব্বিশ ঘন্টা আগেও পিহু এয়ারপোর্টে ভিতরে চেয়ারে বসে বপ্রিং হয়ে অপেক্ষ করছিলো।।আর এখন মোটা পশম এর জ্যাকেট পড়ে থরথর করে কাপছে।।সাদি তাদের নিতে এসেছিলো কিন্তু এসে ইলিয়াস চৌধুরী কে নিয়ে হসপিটালে চলে গেছে গাড়ি দিয়ে গেছে তার বেস্ট ফ্রেন্ড ফাহাদ এর কাছে।।আতিয়া বেগম আর পিহু গাড়িতে চেপে বসলো।।ফাহাদ গাড়ির ভিউ মিররে পিহুকে এক পলক দেখলো।।পিহু গাড়ির ভিতরে এসে কাপাকাপি থামালো।।শুকনো শরীরে টরেন্টো শহরের ঠান্ডা ওতি মাত্রাই বেশি অনুভব করছে পিহু।।এদিকে পিহু প্রায় চব্বিশ ঘন্টা জার্নিতে বড্ড কাহিল।।কোনো কিছু তেমন খাইনি আতিয়া বেগম এর ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো পিহু।।আতিয়া বেগম একটা শান্ত দীর্ঘশাস ছাড়লেন তার ছেলে আসলো তবে তাকে আর পিহুকে দেখলো সোজা ফাহাদ কে পাঠিয়ে দিয়ে ইলিয়াস চৌধুরী কে নিয়ে সে এম্বুলেন্স এ করে হসপিটাল এ চলে গেলো।।।কিন্তু আতিয়া বেগম দুশ্চিন্তায় ভুগছে পিহুর সাথে যদি আবারো খারাপ কিছু হয় তারপর নিজের মনেই হাসে।।তার ছেলে তো মাফ চ্ব্যেছে আর এতো বছরে নিশ্চয় বদলে গেছে।।
আতিয়া বেগম পিহুকে নিয়ে চিন্তিত আর এদিকে পিহু কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে।।আতিয়া বেগম পিহুর মাথাটা কোলের উপর নিয়ে চুলে হাত বুলাতে লাগলেন।। সারা রাস্তা ফাহাদ কোনো টু শব্দ করেনি।।আতিয়া বেগমের মনে হলো ছেলেটা রোবট তবে ডাক্তার দের মতো পোশাক পরা থাকায় তিনি বুজতে পারেন ছেলেটাও ডাক্তার।।
টরেন্টো শহর থেকে আরো প্রায় দেড় ঘন্টা গাড়ি চললো।।নির্জন হাইওয়ে।।চারিপাশে পাহাড় কিছুক্ষন পর পর দু একটা প্রাইভেট কার চোখে পড়ছে।।আতিয়া বেগম জানালার কাচ দিয়ে দেখলো চারিপাশে উচু নিচু পাহাড় একটা কার শরুম আর একটা কফি শপ।। আর সারি সারি উইন্ডমিল।।তবে এতেই আতিয়া বেগমের মন ভরে গেলো৷। সোজা পাহাড়ি রাস্তা গুলো চকচকে আতিয়া বেগম ভাবে এদেশের মানুষ কত শৌখিন হলে এমন নির্জন পরিবেশ ও এতো সুন্দর করে রেখেছে।।।
অপেক্ষার অবশান ঘটিয়ে সাদির বিশাল দুতলা ডুপ্লেক্স বাড়িটির সামনে এসে গাড়িটি দাড়ালো।।আতিয়া বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বাড়িটার দিকে।। তাদের বাড়ির চেয়েও দিগুন আর বেশি আকর্ষনিয়।।পিহুকে হাল্কা গায়ে হাত দিয়ে নাড়া দিতেই পিহু চোখ খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো।।ফাহাদ নামের লোকটা গিয়ে গাড়ির ডিকি থেকে ল্যাগেজ গুলো নিয়ে বাড়ির সদর সামনে গিয়ে দাড়ালো আতিয়া বেগম অবাক হলেন তাদের একবারো ডাকলো ও না এ কেমন অভদ্র।।ফাহাদ দরজায় কার্ড পুরে পিন চাপলো সাথে সাথে দরজা আনলক হয়ে গেলে ফাহাদ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আলো জালিয়ে দেই।।।তারপর আতিয়া বেগম আর পিহু ও ঢুকে।।বাইরে প্রচন্ড জোরেই বাতাশ বইছে।আবওহাওয়া ঠান্ডা।।ফাহাদ এবার হাতে থাকা কার্ড টা আতিয়া বেগমের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে…..
-“সরি আন্টি।।মাই নেম ইজ ফাহাদ আলভারেজ।।দিস কার্ড ইজ হাইজ পাসওয়ার্ড..!
আতিয়া বেগম বুজলেন ছেলেটি অবাঙালি।।আতিয়া বেগম মাথা নাড়ালেন।।ছেলেটি আর এক মুহুর্ত দেরি করে নাইচ টু মিট ইউ বলে বেরিয়ে পড়ে সাথে সাথে পিহু বলে উঠে…….
চলবে…….
-(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে বলে জাও।।বিদেশি প্লট সম্পর্কে এটা আমার প্রথম লেখা।।নতুন এক ডাক্তার+রোমান্টিক+রিভেঞ্জ রিলেটেড গল্প নিয়ে এসেছি।।ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবা।কেমন হয়েছে বলে জাও)-
Share On:
TAGS: নিষিদ্ধ চাহনা, সারা চৌধুরী
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৯
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১২
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৮
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ২৩
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ৬
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১১
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৬
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১২