সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
পর্ব_১০৯
ফোনে কথা শেষ হতেই ফোনটি পকেটে ঢুকিয়ে সাদাফ ফিরে গেল অতীতে ।সেই দিনের স্মৃতিতে যেদিন কলেজের অনুষ্ঠান ছিল ।লাস্ট ডে ছিলো । নুরকে নিয়ে গিয়েছিল সে অনুষ্ঠানে।
নুরকে দেখে আগে পরে সব বন্ধুরাই দুষ্টুমি করত ছোট বউ বলে ক্ষেপাতো।দুষ্টুমি করতো ফাজলামি করতো ।সেটাতে কোন মাথাব্যথা ছিল না সাদাফের ।নুর দেখতে এতটাই কিউট ছিল সবাই নুরকে খুব আদর করতে ।পছন্দ করত ।কিন্তু সে অনুষ্ঠানে হঠাৎ করে সাজিদের কুদৃষ্টি নুরের উপর এমন ভাবে পড়ে যেটা মেনে নিতে পারেনি সাদাফ।
সাদাফের সাথে সাজিদের আগে পরে একটু ঝামেলা ছিল কিন্তু মাঝখানে ঠিক হয়ে গিয়েছিল সব।সাজিদের চরিত্রে সমস্যা আগে থেকেই ছিলো।কলেজের কোন এখন মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছিল সাজিদের।তাই ওকে সাদাফ মোটামুটি এড়িয়ে চলতো।
নুর কে কিছুকিছুক্ষণ এর জন্য সাবার কাছে রেখে গিয়ে ছিলো।সাবাও নুরের সাথে ছিলো। কিন্ত নুর জুস খেতে চাওয়ায় সাবা নুর কে দাড় করিয়ে রেখে জুস আনতে যায়।সেই সময় সাজিদ এসেই নুর কে খোলে তুলে নিয়ে চেয়ারে বসে।নুর ছোটার চেস্টা করে। কিন্ত সাজিদ ছাড়ে না। হঠাৎ সেদিন অদ্ভুতভাবে সাদাফ লক্ষ্য করে নুরকে কোলে নিয়ে কিভাবে যেন জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বারবার বউ বলছিল সাজিদ।নুর ছোটার চেস্টা করছে।সেটা সাদাফের একদম পছন্দ হচ্ছিল না ।বন্ধু আছে বন্ধুর জায়গায় কিন্তু নিজের বোন নিজের কাজিন অথবা নিজের পছন্দের কোন মানুষকে তার বন্ধু এভাবে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে এটা মেনে নিতে পারেনি।
সাদাফ দৌড়ে গিয়ে সাথে সাথে নুরকে সাজিদের কোল থেকে ছিনিয়ে নেয় এবং বলে খবরদার নূরকে বাজে ভাবে টাচ করবি না ।কথাটা একটু জোরেই বলে সেটা সাজিদের খুব মাইন্ড এ লাগে ।খারাপ লাগে । সাজিদ উল্টো প্রশ্ন করে ,”কি সমস্যা ?কি এমন করেছি ?এমন একটা ভাব করছিস তার যেন তোর বউকে কোলে নিয়ে চু*মু খাচ্ছি।”
সাদাফ উত্তর দেয় বউ হোক অথবা বোন এইভাবে কোন মেয়েকে কোলে নিয়ে চুমু খেলে সেটাকে আদর করা বলে না সেটাকে অন্য কিছু বলে।
নূর মোটেও কমফোর্টেবল ছিল না ও বারবার তোর কাছ থেকে ছুটতে চাইছিল ।তার মানে তোর স্পর্শ নূরের ভালো লাগছিল না ।এতোটুকু বাচ্চা বুঝতে পারে কোনটা ব্যাড টাচ আর কোনটা গুড টাচ।
“তাই ?এত ছোট মেয়ে বুঝতে পারে কোনটা ব্যাড টাচ কোনটা গুড টাচ?কেন তুই টাচ করে করে শিখিয়ে দিয়েছিস ?”প্রশ্ন করলো সাজিদ।
কথাটা শোনা মাত্রই যেন মাথায় আগুন জ্বলে উঠেছিল সাদাফের ।তবুও হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়েছিল নূর ভয় পাচ্ছিল তাই।নুর এক হাত দিয়ে সাদাফের বা হাত ধরেছিল তাই আগে বাড়ছিল না সাদাফ।
সাদাফ শুধু মুখ দিয়ে বলেছিল ,”অতটুকু কথাই বল যতটুকু বললে এর প্রতিক্রিয়া তুই সহ্য করতে পারবি ।”কথাটি বলার সাথে সাথে সাজিদ ঘুষি লাগিয়ে দিয়েছিল সাদাফের মুখ বরাবর।
ওমনি সাদাফ কে যেন আর কেউ কন্ট্রোল করে রাখতে পারেনি ।ইচ্ছামতো মেরেছিল সাজিদকে ।সবগুলো ঘুষি শুধু মুখে দিয়েছিল এমন অবস্থা করেছিল চেহারার যে দেখে চেনার উপায় ছিল না এটা সাজিদ নাকি অন্য কেউ ।জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছিল সাজিদের। বন্ধুরা অনেক কষ্ট করে আটকায় সাদাবকে।
নূর কান্না করে দেওয়ায় নুরকে কোলে করে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে সাদাফ।এরপরে ঝামেলা যা হবার ফ্যামিলির মধ্যে হয় ।বাবা গিয়ে তাদের সাথে মিটমাট করে কিভাবে কি করে সাদাফের সাথে আর কোন কিছু শেয়ার করেনি ।শুধু চার দিনের মধ্যেই আমেরিকা পাঠিয়ে দেয়।
আমেরিকা যাওয়ার আগেই বাবার রুমে ঢুকে বলেছিল এক শর্তে যাবে যদি নুরকে বিয়ে দেয় ওর সাথে ।
বাবা বলেছিল ,”অসম্ভব এটা কি হয় নাকি ?এত ছোট বাচ্চা তোর সাথে কিভাবে বিয়ে করবে ?তুই একটি বিবাহযোগ্য মোটামুটি পুরুষ মানুষ নূর ছোট একটা বাচ্চা ।বিশ বছর তো তাও তুই বিয়ে কি বুঝিস নূর কি বুঝে?
এভাবে তুই বিয়ে করে এখানে থাকবি নুর ও থাকবে এটা কি হয় নাকি ?”
তখন সাদাফ বলেছিল ঠিক আছে বিয়ের পর বিদেশ চলে যাবে ।নুর বড় হলে তখনই ফিরে আসবে ।কিন্তু নূরকে যদি বিয়ে না দেয় তাহলে কোন ভাবেই সাদাফ বিদেশে যাবে না ।হুমায়ূন রহমান ভেবেছিলেন ছেলে খুব ত্যাড়া ।সেটা উনি জানে আর এই বিয়ের কেউ জানবেও না বুঝবেও না ছয় বছরের নুর ভুলে যাবে সব।
তাই সাদাফের কথা মেনে সেদিন নূরকে মেলায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ছোট্ট লাল টুকটুকে একটি শাড়ি পরিয়ে সাদাফের কোলে বসিয়েই কবুল পরানো হয়েছিল ।কোনো সাইন হয়নি শুধু কবুল করানো হয়েছিল কাজী ডেকে।কয়েকটা চকলেট এর জন্যই মেয়েটা কবুল বলে দিয়েছিল তাও সাদাফের কোলে বসে ।সাদাফ মুচকি হাসলো কথাগুলো চিন্তা করে ।সে অতীতগুলো চিন্তা করে।
সাদাফ একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ।তারপর মনে মনে ভাবল যত যাই হয়ে যাক যেভাবেই হোক সাজিদ কে প্রতিহত করতে হবে। নুরের উপর সাজিতের কেন স্বয়ং নুরের নিজেকেও নিজের কোন ক্ষতি করতে দিবে না সাদাফ।
সাদাফ ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো ক্যাবিনের দিকে ।ফজলুর রহমান সোফায় বসেই শুয়ে পড়েছিলেন ।সামিহা বেগম ঘুমাচ্ছে বেডে ।সাদাফ নুরের পাশে একটি চেয়ার নিয়ে আধশোয়া হয়ে নূরের হাত ধরে বসে রইলেন ।তাকিয়ে রইল নূরের দিকে।
পরদিন সকাল ৯ টা আজ এগারোটার মধ্যে ডিসচার্জ নিয়ে বাসায় চলে যাবেন ফজলুর রহমান নুরকে নিয়ে তাই তাড়াহুড়া করে ফাইলটি নিয়ে ডক্টরের কাছে গেলেন সব ফরমালিটিজ পালন করতে ।সাদাফ এখনো নূরের বেডে মাথা হেলিয়ে ঘুমিয়ে আছে চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে আছে ।সামিহা বেগম উঠে নাস্তা রেডি করছে।
এভাবে নুরের বেডে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে সামিহা বেগমের কলিজাটা যেন জুড়িয়ে গেল ।উনি তো মনে মনে সাদাফ কে ভীষণ ভালোবাসে ।মেয়ের জামাই হিসেবে অনেক পছন্দ করে ওনার তো কোন আপত্তি নেই সাদাফের কোন কিছুতে ।উনি বুঝতে পারে না ফজলুর রহমান কেন বারবার এরকম করছেন ?এবার বাসায় গিয়ে অবশ্যই কথা বলবেন ফজলুর রহমানের সাথে কি হয়েছে জানতে চাইবেন। মনে মনে ভাবলো সামিহা বেগম।
সামিহা বেগম বেডের সামনে এসে দেখলেন নূর পিটপিট করে চোখ খুলছে তাই আর দাঁড়ালেন না ।ভাবলেন মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে সাদাফ দেখবে তখন ভালো লাগবে ।তাই নিজে ধীরে ধীরে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে গেলেন।
নূর চোখ খুলে দেখলো সাদাফ নূরের বালিশের কাছে মাথা হেলিয়ে শুয়ে আছে ।দৃশ্যটি ভীষণ ভালো লাগলো নুরের ।নূর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে ।হঠাৎ করে ধীরে ধীরে চোখ খুললো সাদাফ। দেখলো নূর তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে ।সাদাফ মুচকি হাসলো নূরের দিকে তাকিয়ে।
তারপর ঘুমো ঘুমো ঘোরে লাগা কন্ঠে বললো,”এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ?আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থেকে তো আমাকে মেরে ফেলবি।”
নুর তারপরও তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে সাদাফের দিকে ।সাদাফ বললো কি হয়েছে কিছু বলবি ?এভাবে হাসছিস কেন?
নূর বলল ,”না কিছু বলবো না ।”সাদাফ এভাবে বালিশ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে আড়মোরা ভেঙে বললো রিলিজ দেওয়ার সময় হয়ে গেছে ।বাসায় যা বাসায় গিয়ে সুন্দর করে রেস্ট করবি ।নিজের যত্ন নিবি কেমন?
ঠিকমতো ওষুধ খাবি ।দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটি করবি না ।চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকবি।”
নুর অবাক হয়ে জানতে চাইলো ,”আপনি যাবেন না বাসায় ?”
সাদাফ বললো,” অফিসে জরুরী কাজ আছে ।সেখানে যেতে হবে ।কয়েকদিন সময় দিতে হবে ।আমার বউ কি আমাকে ছুটি দিবে কয়েকদিনের জন্য?”
নুর লজ্জায় চুপ করে রইল ।সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে নূরে চুলগুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বলল ,”বাসায় যা নিজের যত্ন নিস ।আমার জিনিসের যেনো কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয়।”
নূর নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল ,”বিয়ে করেছি যেন কেউ আমার যত্ন নিতে পারে ।নিজের যত্ন যদি নিজে নিব তাহলে বিয়ে করেছি কেন?”
এই প্রথম নূরের কথা শুনে সাদাফ অবাক হয়ে গেল ।ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নূরের দিকে ।তারপর ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বললো,”যেদিন অনুমতি দিবি যত্ন নেওয়ার সেদিন থেকে বুঝবি আমার যত্ন কেমন হয় ।সেই পর্যন্ত একটু সুস্থ থাকিস নিজের যত্ন নিস একা একা।”
চলবে_
Neela ড়াহ্মান
সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
পর্ব_১১০
নুরকে দুপুরে খাইয়ে দিয়ে রেস্ট করার জন্য রুমে রেখে গেলেন নওরিন আফরোজ।নুর ঘুমাচ্ছে ।হুমায়ুন রহমান নিজরুমে বসে ভাবছে ফজলুর রহমান আসলে কি লুকাচ্ছে?হসপিটালে যখন কথা বলছিল কেন জানি মনে হচ্ছিল চোখ বলছে এক কথা মুখে বলছে আর এক কথা ।ভাইকে ছোটবেলা থেকে চিনে হুমায়ুন রহমান তাই বুঝতে পারছে কিছু একটা আছে যা ফজলুর রহমান কারো সাথে এখনো শেয়ার করছে না।
মনে মনে ঠিক করলেন আজকে কথা বলবেন ফজলুর রহমানের সাথে ।কি হয়েছে জানতে চাইবেন ?যেহেতু নিজে থেকে বলছেনা তাই বড় ভাই হিসেবে নিজেই জিজ্ঞেস করতে হবে। নীলা রহমান
এদিকে ফজলুর রহমান দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে রুমে এসে একটু রেস্ট নিচ্ছে ।কিছুক্ষণ পর অফিসে যাবে এমন সময় সামিহা বেগম এসে সামনে দাঁড়ালেন ।জিজ্ঞেস করলেন ,”আপনি সাদাফের সাথে এমন করছেন কেন ?কি করেছে সাদাফ শুনি?”
ফজলুর রহমান হঠাৎ সামিহার করা প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন ।বললেন ,”এমন করছি মানে কি ?কি করেছি সাদাফের সাথে?”
“এই যে ছেলেটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছে বলে ।ছেলেটা কি একা একা বিয়ে করেছে আপনার মেয়েকে ?কবুল বলেনি আপনার মেয়ে? ও কি ভালোবাসে না ?তাহলে শাস্তি একা ছেলেটা কেন পাচ্ছে?”বললেন সামিহা বেগম।
ফজলুর রহমানের যেন আত্মাটা কেঁপে উঠল ।সামিহা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইলেন ।উত্তর দিতে পারলেন না ।বলতে চাইছিলেন ,”বারবার শাস্তি তো আমার মেয়ে পাচ্ছে ।না জানি কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছে ?সাদাফ তো শুধু বাড়ির বাইরে আমাদের মনের বাইরে না ।কিন্তু আমার মেয়ের কপালটা যে পুড়ে গেল সামিহা আমি কাউকে বলতে পারছি না।”কিন্ত বলতে পারলো না কথা গুলো।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন ,”বাড়ির বাইরে গেছে সমস্যা নেই এক সময় বাড়ির ভিতরে আসবে ।ওর নিজের বাড়ি।এগুলো নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না ।নূরের যত্ন নিও ।নূরের খেয়াল রেখো ।মেয়েটা অসুস্থ দেখো যেন আবার ব্যথা না উঠে ।হয়তো বলবে না চেপে যাবে তোমরা বারবার গিয়ে জিজ্ঞেস করবে।”
সামিহা বেগম অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন ফজলুর রহমানের দিকে ।কোন কথার কোন উত্তর ভাবতে লাগলেন।কিন্তু কেন যেন বিষন্ন মনে হল ফজলুর রহমানকে ।তাই আর ঘাটালেন না চুপচাপ উনি রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে চলে গেলেন ।ফজলুর রহমান মনে মনে ভাবলেন ,”সবাই যখন জানবে নুরের এই সমস্যা সবাই সহানুভূতি জানাবে মেয়েটা যে আরো ভীষণ কষ্ট পাবে।
মানুষ যখন মানুষের দুর্বলতা নিয়ে সহানুভূতি জানায় কষ্টটা যে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় সেগুলো হয়তো মানুষ বুঝতে পারে না ।তারা ভাবে তারা সহানুভূতি জানাচ্ছে কিন্তু সহানুভূতি জানানোর বাহানায় যে তাকে আরো বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলছে সেটা মানুষ বুঝতে পারে না।
আল্লাহ না করুক যদি সত্যি সত্যি মেয়েটার সাথে এমন ঘটনা ঘটে যায় যদি অপারেশন করাতে হয় তাহলে হয়তো মেয়েটা কোনদিনও মা হতে পারবেনা ।সাদাফ কি মেনে নিবে?
যদি সাদাফের ভিতরে সন্তানের চাহিদা জন্ম নেয় ?তখন তো মেয়েটা অনেক কষ্ট পাবে !ধুকেধুকে মরবে আমার মেয়েটা !”
ফজলুর রহমান আর কিছুই ভাবতে পারছে না ।থেকে থেকে শুধু ওনার এই কথাটাই মনে পড়ে নূরের কি হবে ভবিষ্যতে।
যে মেয়ের সন্তান হয় না সে মেয়ের সংসার জীবন কেমন হয় এটা প্রত্যেকটা মেয়ের বাবা ভালো বলতে পারবে বা মা বলতে পারবে ।তারা তাদের মেয়েকে নিয়ে আসলে কি চিন্তা করে কতোটা দুর্বিষহ জীবন যাপন করে তার পৃথিবীর অন্য কেউ হয়তো বলতে পারবে না।
এদিকে সাদাফ ফোন দিল সামিহা বেগমের নাম্বারে ।নূর ঘুমাচ্ছে তাই সামিহা বেগম ফোন রিসিভ করে বললেন ,”হ্যাঁ বাবা নূর তো ঘুমাচ্ছে।”
সাদাফ সামিয়া বেগমকে বললো,”ঠিক আছে আম্মু নুর উঠলে আমাকে একটু ফোন দিতে বল ।আর এখন ঘুমিয়েছে তাহলে আর কোন সমস্যা নেই ঘুমাক। নুরের কি আর ব্যথা হয়েছিল ছোট আম্মু?”
সামিহা বেগম উত্তর দিলেন,” না ।সকালে তো ইনজেকশন দিয়ে গিয়েছিল সেই প্রভাবে এখনো ঘুমাচ্ছে ।আর বাড়িতে তো ওষুধ দিয়েছে ঘুম ভাঙলে বুঝতে পারবো।”
সাদাফ বললো ঠিক আছে।
সামিহা বেগম বললেন ,”তুই বাসায় আসবি কখন ?”
সাদাফ বললো,” দেরি হবে আম্মু ।অফিসে একটু ঝামেলায় আছি ।কখন আসতে পারবো বলতে পারিনা নূরের খেয়াল রেখো কেমন?”
নিজ ক্যাবিনে বসে সাদাফ চিন্তা ভাবনা ছিল সাজিদ কে কি করে ধরাশায়ী করা যায় ।এমন সিচুয়েশনে নেই যে ওকে মেরে বা মারামারি করে ওকে ধরাশায়ী করতে হবে ।ওকে ধরাশায়ী করতে হবে কৌশলে সেই কৌশল জানার জন্য হঠাৎ করে মনে পড়ল ফারদিনকে । সাথে সাথেই ডেকে পাঠালো ফারদিন কে রুমে।
ফারদিন আসতেই সাদাফ বললো ,”সাজিদের ব্যাপারে সাজিদের বাবার বিজনেস পার্সোনাল যত ইনফরমেশন আছে সবকিছু কালেক্ট করো ।কি কি ধরনের বিজনেস করে সেই বিজনেসে সাদা কি কালো কি যা আছে সবকিছু খুঁজে বের করে আমাকে দুই ঘন্টার মধ্যে জানাও।
তোমার স্পেশাল টিম কাজে লাগাও ।যেভাবে সম্ভব হয় সাজিদের যত দুর্বলতা আছে সবগুলো আমার কাছে খুঁজে নিয়ে আসো ।ব্যক্তিগত এবং প্রফেশনাল।”
ফারদিন মুচকি হেসে বলল ,”হয়ে যাবে স্যার ।টেনশন করবেন না ।দুই ঘন্টার মধ্যেই আপনাকে অবশ্যই সুখবর দিব।”
বলেই কেবিন থেকে বের হয়ে গেল ফারদিন ।সাদাফ চেয়ারে বসে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নূরের কথাই ভাবতে লাগলো আবার।
সন্ধ্যা সাতটা পার ।তড়িঘড়ি করে অফিসে সাদাফের সামনে ফারদিন জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।তারপর জানালো ,”স্যার সব ইনফরমেশন নেওয়া শেষ ।আপনি বললে একটি একটি করে শুনাই ।”
সাদাফ মুচকি হাসলো। হেসে বলল ,”ঠিক আছে বল।”
“মানি লন্ডারিং এর বিজনেস স্যার গার্মেন্টস ব্যবসার এক্সপোর্টের আড়ালে ভুয়া ইন ভয়েস ও ওভার ভয়েস চলে। বিদেশ থেকে হাওলার মাধ্যমে টাকা আনা হয়। ধরা পড়লে বড় ধরনের অর্থের কেলেঙ্কারি মামলা হবে।
বিলাসবহুল ক্লাবের আড়ালে অবৈধ জুয়ার বিজনেস চলে। ক্লাবের ভিতরে হাই-স্টেক গ্যাম্বলিং রুম ভিআইপি কাস্টমারদের উপস্থিতি গোপনে সিসিটিভি ধারণ করা হয়। একবার যদি প্রকাশ পেয়ে যায় শুধু উনি না বড় বড় লোকের নাম চলে আসবে ।রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ী পর্যন্ত।
এই শেষ নয় স্যার গাড়ির শোরুমেও ভুয়া ব্যবসা চলে।”
সাদাফ জানতে চাইলো যেমন?
“কাগজে গাড়ি দেখানো হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০টি কিন্তু বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই। ইন্সুরেন্সেও মানি ফ্রড।
শোরুম সিল করিয়ে লাইসেন্স বাতিল করা যেতে পারে।
গার্মেন্টসে আন্ডারএজ লেবার রাখা হয়। বিদেশী বাইয়ারদের কানে পৌঁছে দিতে পারলে তারা কন্ট্রাক ক্যানসেল করবে তারা এ ধরনের কোম্পানির সাথে কাজ করে না। বার ও ক্লাবে অবৈধ আমদানি কর ফাকি। ভিআইপি লঞ্জে অবৈধ পার্টি চলে তাও ইলিগেল ড্রাগসহ।
এগুলো খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তবে প্রমাণ চাইলে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ।সবকিছু সিস্টেম হ্যাক করতে হবে সিসিটিভি ফুটেজ চাইলেও কিছুদিন দেরি করতে হবে।”
জানালো ফারদিন সাদাফ মুচকি মুচকি হাসলো ফারদিনের দিকে তাকিয়ে ভাবল ছেলেটা কাজের এই ছেলেটাকে এই জন্যই নেওয়া হয়েছে কথা একটু বেশি বলে কিন্তু কাজগুলো খুব কঠিন ও নিখুঁত ভাবে করে।
চলবে_
Neela Rahman
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯+১০
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১১৪+১১৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭১