সুখময়যন্ত্রনাতুমি
পর্ব_১০১
neela_rahman
আজ রাত ৯ টা বেজে গেল ।এখনো অফিস থেকে ফেরেনি ফজলুর রহমান ও হুমায়ুনুর রহমান।
নওরিন আফরোজ ও সামিহা বেগম রান্নাঘরে কথা বলছেন ।নওরিন আফরোজ জিজ্ঞেস করলেন ,”আজ এত দেরি হবে তোকে কিছু বলে গিয়েছিল নাকি?”
সামিহা বেগম তরকারি নাড়তে নাড়তে বললো,” না ভাবি আমাকে তো কিছু বলে যায়নি উনি ।তোমাকেও কি কিছু বলে যায়নি ?ঘটনা কি দুই ভাই আজ এত লেট করছে ?আজ অব্দি কখনো তো এরকম লেইট করে অফিস থেকে বাসায় ফিরেনি ।কোন ঝামেলা হলো নাকি?”
নওরিন আফরোজ চিন্তা করছেন কি করবেন ।সায়মনকে কি অফিসে পাঠাবে কিনা ?সাদাফ কে জানাতে মন সায় দিচ্ছেনা ।ছেলেটার জ্বর এমনিতে ।কিছুক্ষণ পর নূরকে নিয়ে আসবে ।উনারা অফিস থেকে বের হওয়ার আগেই দিয়ে যেতে বলেছে তবে সাদাফ এ যে কেন এখনো ফিরছে না ?মনে মনে টেনশন করতে লাগলেন।
নূর গাড়িতে বসে ভাবছে গতকাল রাত থেকে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ঘটনা।
গতকাল রাতে যখন সাদাফ যখন প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিল নূর কোনভাবে আটকাতে পারছিল না । স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছিলো নুর ও।সাদাফ নুর কে জড়িয়ে ধরতেই হঠাৎ নুরের ভীষণ পেটে ব্যথা শুরু হয়।সাদাফ যখন বুঝতে পারল নুরের এই চিৎকার বা আর্তনাদ অন্য কোন কারণে সাদাফ নুরকে ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,” কি হয়েছে ?তুই এত চিৎকার করছিস কেন ?আমি তোকে এত জোরে তো ধরিনি ?খুবকি ব্যাথা পেয়েছিস নুর ?”
নুর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল ,”আমার পেটে ভীষণ ব্যথা করছে ।”
সাদাফ জিজ্ঞেস করল ,”কেন ?”
নুর সাদাফের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল ,”মনে হয়,,,,,, আর বলে শেষ করতে পারল না নুর ।সাদাফ সাথে সাথে বলল ,”পিরিয়ড হয়েছে? ডেট মনে ছিল না ?আগে হয়েছে নাকি?”
নূর সাদাফ কে বলল ,”পিরিয়ডের ডেট তো এখন নয় আরো দেরি ছিল ।তাই কোন প্রিপারেশন নিয়ে আসিনি ।আরো ৪-৫ দিন বাকি ছিল কিন্তু হঠাৎ করে এখন কেন হয়ে গেল?আমার সম্পুর্ন ড্রেস……… আচ্ছা আচ্ছা আমি দেখছি।বললো সাদাফ।বুঝতে পেরেছে সাদাফ নুরের নষ্ট হয়ে গেছে।কি করবে ভাবতে ভাবতেই নতুন একটা টাওয়েল এনে নুরের সামনে দিয়ে বললো ,”বিছানায় বিছিয়ে নে।রাত টা পার কর।সকালে ড্রেস এনে দিবো।”
সাদাফ দেখল নূরের চেহারা পরিবর্তন হচ্ছে ।তার মানে ভীষণ ব্যথা করছে মেয়েটির ।তাই বলল,” তুই বস আমি এখুনি আসছি ।”বলে জ্বর শরীরে ধীরে ধীরে উঠে সাদাফ রান্না ঘরের দিকে চলে গেল ।কিছুক্ষণ পর পানি গরম করে একটি হট ওয়াটার ব্যাগ নিয়ে আসলো ।সাথে নিয়ে আসলো গরম রং চা।
এসেই নূরের দিকে চা টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,”এটা গরম চা ।একটু একটু করে খা ভাল লাগবে ।আর পেটের মধ্যে এই হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে রাখ আমি বাহিরে যেয়ে ওষুধ নিয়ে আসছি ।”
নুর বলল ,”পাগ*ল হয়ে গেছেন ?রাত বাজে কয়টা ?আপনি এতো রাতে বাহিরে ওষুধ আনতে যাবেন ?সাদাফ বলল ,”তোর পিরিয়ডের জন্য তো আমার কাছে কোন ওষুধ নেই তবে হ্যাঁ নাপা আছে সেটা খেলে চলবে?”
নুর বলল ,”হ্যাঁ চলবে ।এমনিতেই গরম পানির ছ্যাকা দিচ্ছি একটু ভালো লাগছে আপনি প্লিজ শান্ত হয়ে থাকুন আপনার জ্বর।”
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে ধমক লাগিয়ে বললো ,”চুপ থাক তোর কাছ থেকে শিখতে হবে কি করবো?ব্যথায় চেহারা নীল হয়ে যাচ্ছে তোর ।নাপা এনে দিচ্ছি খেয়ে তুই শুয়ে থাক ।আমি পেটের মধ্যে ছ্যাকা দিয়ে দিচ্ছি।”বলেই নাপা এনে নুরের দিলো।নুর ও খেয়ে নিলো।
নুর লজ্জা পেয়ে গেল ।বলল ,”না না লাগবে না ।আমি নিজেই পেটের মধ্যে ছ্যাক দিতে পারব ।”
সাদাফ বলল ,”একদম চুপ করে শুয়ে থাক ।আমি ছ্যাকাদিয়ে দিচ্ছি।
বিয়ে করেছি আমি তোকে ।স্বামী হই তোর আর ভুলে যাস না এতক্ষণে এই পেটে আমি হাত দিয়ে রেখেছিলাম। তাই এখন স্যাক দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।”
ব্যথায় এতটাই কাতর হয়ে যাচ্ছে নূর যেন লজ্জা পেতো ভুলে গেল ।চুপচাপ শুয়ে পড়লো ।সাদাফ ধীরে ধীরে পেটে থেকে কামিজটি সরিয়ে উন্মুক্ত উদরে গরম পানির হট ওয়াটার ব্যাগ রাখলো।
এভাবে অনেকক্ষণ পানির গরম স্যাক দিতে দিতে ধীরে ধীরে নূরের ব্যথাটা একটু কমলো ।সাদাফ নুরের মাথায় ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ।বলল ,”তুই ঘুমানের চেষ্টা কর ।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ।ধীরে ধীরে ব্যথাও কমে যাবে।”
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই স্যানিটারি ন্যাপকিন ওষুধ যা যা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবকিছু নিয়ে এসেছে সাদাফ।
সাথে নিয়ে এসেছে নতুন একটি ড্রেস ।গতকাল রাতে ড্রেসের কিছু কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সাদাফ লক্ষ্য করেছে তাই নূরকে না জানিয়ে একটি ড্রেস নিয়ে এসেছে ।এই ড্রেস পরেই নূর বের হবে।
নূর পিটপিট করে চোখ খুলতেই সাদাফ গুড মর্নিং জানালো ।তারপর বলল ,”ব্যথা কমেছে নুর ?”
নুর হালকা মাথা ঝুঁকিয়ে একটু সায় জানাতেই সাদাফ বললো ,”ঠিক আছে ওঠ ফ্রেশ হো। নাস্তা করবি নাস্তা নিয়ে এসেছি আমি।”
নুর একা একা বিছানা থেকে উঠতে চাইলে সাদাফ সাথে সাথে নূর কে বিছানা থেকে নিজের কোলে তুলে নিল ।তারপর বলল ,”চল আমি ওয়াশরুমে দিয়ে আসছি ।কষ্ট করে হেঁটে যেতে হবে না ।”
বলে ওয়াশরুম পর্যন্ত নূরকে নামিয়ে দিয়ে ,”বলল এবার ভিতরে যা।”
মনে মনে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে নুর।এসেছে সাদাফ ভাইয়ের সেবা করতে জ্বর এসেছে তাই অথচ এসে নিজেই সেবা নিয়ে যাচ্ছে।
১০-১৫ মিনিট পর নূর ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে দেখল বেডরুম এই নাস্তা সাজিয়ে বসে আছে সাদাফ।নুরকে দেখে বলল ,”আয় হেটে আসতে পারবি নাকি আবার কোলে করে নিয়ে আসবো ?”হাসতে হাসতে কথাটি বলল সাদাফ।
একসাথে দুজনে বসে নাস্তা করল ।সাদাফ একটু একটু করে রুটি ছিঁড়ে নূরকে খাইয়ে দিচ্ছে ।নূরের আজকে নিজের কাছে নিজেকে কেমন প্রিন্সেস মনে হচ্ছে ।যেভাবে সাদাফ নুরের সেবা করছে মনে হচ্ছে ওর চেয়ে বেশি ভাগ্যবতী বোধ হয় আর কেউ নেই।
এইভাবে সারাদিন রেস্ট করতে দিল নূরকে ।বলল ,”বাবা যখন অফিস থেকে ফিরবে ঠিক তার আগেই তোকে বাড়িতে দিয়ে আসবো ।এখন তো তারা অফিসে চলে গিয়েছে তাহলে আজকের দিনটা ছুটাছুটি না করে এখানে রেস্ট কর ।”
নুরু সাদাফের কথা মত বিছানায় শুয়ে রইলো ।আসলে নূরের ব্যথা তেমন একটা কমেনি।যদিও সব ওষুধ খেয়েছে কিন্তু কখনো এরকম হয় না। পিরিয়ড হলে নরমাল ব্যথা হয় ওষুধ খেলে চলে যায় কিন্তু আজ কোন ওষুধেই যেন কাজ হচ্ছে না ।তবে যখন একটু পর পর সাদাফ গরম পানির ছ্যাকা দিয়ে দিচ্ছে তখন একটু ব্যথা প্রশমিত হচ্ছে।
দুপুরে খাওয়ার পর যে নূর ঘুমিয়ে ছিল ঘুম থেকে উঠেছে সেই আটটায় ।এর মধ্যে আর নূর ঘুম থেকে জাগেনি ।সাদাফ বারবার চিন্তা করছে নরমাল পিরিয়ড হলে তো কখনো নূর কে এরকম ঘুমাতে বা সারাদিন ব্যথায় কাতরাতে দেখেনি।
বিদেশ থেকে আসার দুই এক দিন পরই দেখেছিল নূরের পিরিয়ড অবস্থা কিন্তু তখন স্বাভাবিক সাধারণ চলাফেরা করেছে নূর ।কখনো নূরকে এইভাবে ব্যথায় কাতরাতে দেখেনি সাদাফ।
এসব চিন্তার মাঝেই যখন নুরের ঘুম ভাঙলো দেখল আটটা বাজে ।সাথে সাথে সাদাফের দিকে তাকিয়ে ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বলল ,”আটটা বেজে গিয়েছে ?বাবারা নিশ্চয়ই অফিস থেকে চলে এসেছে ?”
সাদা বললো,”না এখনো রওনা দেয়নি ।তুই রেডি হয়ে নে আমরা এখনই বের হব ।”
বলেই সাদাফ নিজেও রেডি হয়ে নিল।
বর্তমান গাড়িতে নূরের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে সাদাফ বলল ,”আজ অনেক বেলা হয়ে গেল ।রাত হয়ে গেল এখনো বাবা বাসায় ফিরল না ।তুই কি জানিস কিছু?”
নুর বলল ,”না অফিসের কোন ব্যাপার তো আমি জানি না ।রিমা আপু বা সাইমন ভাইয়া আমাকে কিছু জানায়নি ।আপনাকে জানায়নি ?আমিতো সারাদিন ঘুমিয়ে ছিলাম।”
সাদাফ ভাবনার মধ্যে পড়ে গেল ।কি হতে পারে ?কখনো বাবাকে বা ছোট বাবাকে এরকম এত রাত পর্যন্ত অফিসে থাকতে দেখেনি ।সাদাফ ভাবল অফিসে একটা ফোন করবে ।ফোন করে জেনে নিবে কি অবস্থা বর্তমানে।
এদিকে সায়মন নিজের রুমে বসে ছিল হঠাৎ দেখল রিমা রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছে তাই আস্তে করে ডাক লাগালো ,”এই রিমা চা নিয়ে আসো।”
রিমা চমকে উঠল ।সাথে সাথে ডানদিকে ঘুরে তাকালো ।দেখল দরজা খোলা ।চেয়ারে বসে ছিল সাইমন। রিমা রুমে ঢুকে বলল ,”আমাকে কিছু বললে ?”
সাইমন বলল ,”জি হ্যাঁ তোমাকে বলেছি ।”
রিমা আবারো চমকালো ।রিমাকে তুমি করে কেন বলছে ?রিমা অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল ,”আমাকে তুমি করে বলছ কেন?”
সায়মন হালকা এদিক ওদিক তাকিয়ে ধীরে ধীরে বলল ,”স্বামী স্ত্রী একজন আরেকজনকে তুমি করে বলে ।এতে ভালোবাসা বাড়ে ।তোর ভাইয়ের মতো না তুই তুকারি করবো।”
রিমা বলল ,”খবরদার ভাইয়ের কথা বলবে না ।আর কবে থেকে তুমি করে বলা শুরু করলে স্বামী স্ত্রী কবে থেকে হলাম?”
সাইমন রিমার দিকে তাকিয়ে বললো,”বাহ! এর মধ্যে ভুলে গেলি ?গতকাল রাতে যে কবুল পড়লি ?আমি এখন তোর স্বামী হই সম্মানের সাথে কথা বলিস না কেন ?বেয়াদব নারী।”
রিমা রাগে ফুসতে ফুঁসতে বললো,”বেয়াদব নারী মানে ?কিসের বিয়ে কিসের কি ?মাথাকি ডিস্টার্ব হয়ে গেছে ?তোর সাথে রাতে একটু দুষ্টুমি করেছি সেটা কি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছিস?”
সায়মন পড়ার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল ।দাঁড়িয়ে রিমার হাতে কনুই ধরে নিজের কাছে এনে বলল ,”একবার কবুল যখন বলেছিস তাহলে বলেছিস ।রাত থেকেই তুই আমার স্ত্রী ।আর ভাই বোন দুজন এক রকম হয়েছিস ।ভাই ও বউকে তুই করে বলে বোন তার স্বামীকে তুই করে বলে ।দুইটাই নরকবাসী হবে।”
চলবে__
Neela ড়াহ্মান
সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neelarahman
পর্ব_১০২
সাদাফ নুর কে নিয়ে বাড়ির গেটে এসেই নুরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”বাসায় যেতে পারবি ?নাকি আম্মুকে ফোন দিব তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ?”
নুর যেন একটু লজ্জাই পেল ।বললো ,” না আমি যেতে পারব ।”
কিন্তু এমন সময় বাসা থেকে বের হয়ে এলেন নওরিন আফরোজ ।উনি তো জানতেন সাদাফ আসবে তাই দরজার কাছাকাছি ছিলেন।
সাদাফ তাকিয়ে দেখলেন নওরিন আফরোজ দ্রুত পায়ে হেঁটে ওদের কাছে আসছে ।সাদাফ গাড়ি থেকে নেমে একটু এগিয়ে গিয়ে বলল ,”কি হয়েছে মা ?এভাবে আসছো কেনো ?”
নওরিন আফরোজ বললেন ,”দেখ না বাবা রাত কত হয়ে গেল তোর বাবা তো এখনও এলো না ।ছোট বাবাও আসেনি ।ফোনও ধরছেনা ।আমার তো খুব টেনশন হচ্ছে দেখবি একটু অফিসে ফোন করে কি হলো?”
সাদাফ ও মনে মনে ভেবেছিল অফিস থেকে এখনো বের হয়নি কেন ?তাই সাদাফ সাথে সাথে মোবাইল বের করে অফিসে ফোন লাগালো ।ফোন রিসিভ করলো ফারদিন।
ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই সাদাফ হ্যালো বলতেই ফারদিন বলল জি স্যার বলুন ।
সাদাফ জানতে চাইলো,”অফিসের কি অবস্থা ?বাবা এখনও অফিস থেকে বের হয়নি কেন ?”
ফারদিন বললো ,”কি হয়েছে কিভাবে যে বলি?”
সাদাফ বললো,” বলো কি হয়েছে?”
ফারদিন বললো,” কি হয়নি স্যার সেটাই জিজ্ঞেস করুন।” সাদাফ বলল ,”কি হয়নি বল।”
ফারদিন আমতা আমতা করে বলল ,” তাহলে কি হয়েছে সেটাই বলি ।স্যার আপনি দ্রুত অফিসে চলে আসেন যদি পারেন ।বড় স্যাররা তো মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে কিছুই বুঝতে পারছে না ।অবস্থা খুবই খারাপ ।ফোনে বলা যাবে না ।আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন স্যার ।”বলেই ফোন রেখে দিল।
সাদাফ বুঝতে পারল অফিসে হয়তো কোন ঝামেলা হয়েছে কিন্তু মাকে ও নুরকে বুঝতে না দিয়ে ফোনটি রেখে নওরিন আফরোজের দিকে তাকিয়ে বলল ,”মা নুরকে নিয়ে ভিতরে যাও ।নূরের শরীরটা ভালো না একটু জ্বর জ্বর ভাব ছিল ।বাসায় ওকে নিয়ে রেস্ট করতে দাও আর আমি অফিসে যেয়ে দেখছি চিন্তা করতে হবে না।”
নওরিন আফরোজ নুর এর দিকে তাকিয়ে দেখলেন আসলে চেহারাটা কেমন অসুস্থ অসুস্থ হয়ে গিয়েছে ।যেন মনে হচ্ছে রাজ্যের ব্যাথা ।কপাল কুঁচকে আছে ।কপালে হাত দিয়ে বলল ,”তোর কি হয়েছে রে মা এরকম লাগছে কেন চেহারাটা জ্বর এসেছিল?”
নূর বড় মার দিকে তাকিয়ে বলল ,”না আম্মু চলো ভিতরে যাই ।আমার ভালো লাগছে না একটু শুয়ে থাকব ।সাদাফ বুঝতে পারল নূরের ভীষণ খারাপ লাগছে কিন্তু এই মুহূর্তে অফিসে যেতে হবে তাই এদিকে আর সময় ব্যয় না করে বলল ,”তোমরা ভিতরে যাও আমি অফিসে গিয়ে তোমাকে ফোন দিয়ে জানাচ্ছি।”
২০ মিনিটের মধ্যে ড্রাইভ করে সাদাফ চলে আসলো অফিসে ।সাদাফ অফিসে প্রবেশ করা দুই তিন মিনিটের মধ্যে খবর হয়ে গিয়েছে সাদাফ এসেছে ।ফারদিন দৌড়ে দৌড়ে সাদাফের কেবিনে এসে হুমায়ূন রহমান ও ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”স্যার ছোট সাহেব এসেছে ।”
সাথে সাথে হুমায়ুন রহমানের মুখে একটু হাসি খেলে গেল যেন সব টেনশন এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল হুমায়ূন রহমানের। ফজলুর রহমান ও খুশি তবে চুপ করে রইলেন।
ফারদিন সাথে সাথে বলল ,”আমি আপনাদের জন্য কফি নিয়ে আসছি ।অনেকক্ষণ ধরে টেনশন করছেন আর স্যারের তো কফি না খেলে মাথায় বুদ্ধি খুলে না।”
বলেই তিন জনের জন্য কফি আনতে চলে গেল ফারদিন ।সাদাফ ধীরে ধীরে দরজার নব ঘুরিয়ে দরজা খুলে দেখল বাবা এবং বড় বাবা বসে আছে ।কেন যেন মনে হল কয়েক যুগ ধরে তাদের দেখেনা অথচ মাত্র তিন দিন হলো তাদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই।
সাদাফ ভিতরে এসেই ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”কি হয়েছে তোমরা এখনো বাসায় যাও নি কেন ?বাসায় সবাই টেনসনে আছে তাই বাধ্য হয়ে আমাকে আসতে হল।
এখনো বসে আছো কেন কি হয়েছে ?কিছু বলবে অফিসের কোন ঝামেলা?”
হুমায়ূন রহমান কোন কথাই বলতে পারছেন না ।কপালে দুই আঙ্গুল দিয়ে ঘষতে ঘষতে বলল ,”সব ব্লেন্ডার হয়ে গেছে ।কি করে কি হলো কিছুই বুঝলাম না ।শিপমেন্ট ক্যানসেল হয়েছে প্রোডাকশনে নাকি কি ফল্ট আছে ? কিন্তু আমাদের ডেটাবেস এর সাথে সে প্রোডাকশনের ডাটার কোন মিল নেই ।কে রাতারাতি চেঞ্জ করেছে কিছু বুঝতে পারছি না।
এদিকে বাইয়ার রা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে দুদিনের মধ্যে যদি যথোপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারি সাথে সাথেই চুক্তি ও ক্যান্সেল করে দিবে ।চুক্তিটা যদি বাতিল করে দেয় তাহলে বিশাল অংকের জরিমানা দিতে হবে যেহেতু ফল্ট আমাদের দিক থেকে।
সাথে যোগ করলেন ফজলুর রহমান। বললেন ,”প্রোডাকশনের মিটিং অলরেডি আমি দেখেছি আধাঘন্টা পরে হবে তুই প্রোডাকশনের সবার সাথে কথা বল ।ইন্ডিভিজুয়ালি কথা বল আর প্রত্যেকটা ডেটা ভালো করে চেক কর ।হয়তো যা আমাদের চোখে পড়ছে না তা তোর চোখে পড়তে পারে ।যেভাবেই হোক ব্যাপারটা সলভ কর শুধু টাকার ব্যাপার না আমাদের সারা জীবনের রেপুটেশনের ব্যাপার।”
সাদাফ এক মিনিট ভেবে বলল ,”সবাইকে ডেকেছেন মিটিং এর জন্য ?”
হুমায়ুন রহমান বলল ,”হ্যাঁ শুধু একজন ছুটিতে আছে ।”
বলল ,”কে ছুটিতে আছে ?”
হুমায়ন রহমান বলল ,”আকাশ আহমেদ নামে একটি ছেলে তিন মাস হল জয়েন করেছিল ৩ /৪ দিন আগে প্রোডাকশন টিমে ওর পোস্টিং দেওয়া হয়েছে ।তবে ওর মা নাকি জরুরী বিভাগে ভর্তি তাই গতকাল থেকে ছুটিতে আছে।”
এমন সময় রুমে ঢুকলো ফারদিন ।ফারদিনের দিকে তাকিয়ে বলল ,”আকাশ আহমেদের বায়োডাটা যা যা কাগজপত্র আছে সবকিছু নিয়ে এসো ।ওর পার্সোনাল ডিটেলস যা যা জানোর সবকিছু নিয়ে এসো।”
আকাশ আহমেদ মনে মনে নামটা কয়েক বার আওড়ালো সাদাফ কেন যেন পরিচিত লাগছে আকাশ আহমেদ নামটা ।কে হতে পারে বুঝতে পারছে না কোথাও তো শুনেছেন নামটা।
এদিকে বাসায় আসতেই নূরের সত্যি সত্যি সারা শরীরে জ্বর চলে আসলো ।নওরিন আফরোজ ও সামিহা বেগম বললো ,”ভালো মেয়েটা গেল জ্বর কিভাবে আসলো ?”
নওরিন আফরোজ বলল ,”মনে হয় পিরিয়ড হয়েছে রে পেটে ব্যথা তলপেটে ব্যথা ।”আমি গরম পানির ছ্যাকা দিয়ে দিচ্ছি তুই পানি পট্টি দিয়ে দেওয়ার জন্য পানি নিয়ে আয়।
এদিকে রিমা এখনো জানেনা নুর বাসায় এসেছে নূরের শরীর অসুস্থ ।নূরের রুমে কাছে যেতে দেখতে পেল নুরের অবস্থা। দৌড়ে রুমে ঢুকতেই দেখল একজন মাথায় পানি পট্টি দিচ্ছে আরেকজন তলপেটে হটওয়াটার ব্যাগ ধরে রেখেছে।
রিমা সাথে সাথে দৌড়ে এসে বলল ,”কি হয়েছে মা ওর কি শরীর অসুস্থ জ্বর এসেছে ?ব্যথা করছে কোথাও ?এমন লাগছে কেন চেহারাটা এত মলিন?”
চলবে_
Neela Rahman
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৭
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৯
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৯৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৩
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১০০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২০+২১+২২