সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
neela_rahman
পর্ব_৫১
পরের দিন সকালে নাস্তার টেবিলে হুমায়ুন রহমান হঠাৎ করে সাদাফ এর দিকে তাকিয়ে বললেন ,”তোমাকে একটু বগুড়া যেতে হবে সেখানে আমাদের যে ব্রাঞ্চ আছে সেখানে এক সপ্তাহের মত লাগবে কিছু কাজ আছে করে তারপর আসবে।”
সাদাফ ভদ্র ছেলের মত তাকালো বাবার দিকে ।মনে মনে সাদাফ জানে হয়তো সাদাব কে একটু দূরে সরাতেই এই প্ল্যান করেছে তার বাবা কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না ।কারণ অফিসের আসলেই প্রয়োজন ছিল বগুড়ায় কিন্তু সেখানে চাইলেও বাবা নিজে যেতে পারতেন বা অন্য কাউকে পাঠাতে পারতেন। নীলা রহমান লেখিকা
অথবা ছোট বাবা ও যেতে পারতেন ।কিন্তু সে জায়গায় সাদাফকে পাঠাতে চাইছে তার মানে উনি সিচুয়েশনটাকে অন্যভাবে হ্যান্ডেল করতে চাইছে।
সাদাফ সাথে সাথে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”জি আচ্ছা ।ঠিক আছে চলে যাব ।”
নুর সাথে সাথে মাথা তুলে তাকালো। একবার সাদাফের দিকে দেখলো সাদাফ চুপচাপ খাচ্ছে ।হুমায়ূনর রহমানের দিকে নূর তাকাল। তারপর মনে মনে ভাবলো এক সপ্তাহ সাদাফ ভাইকে দেখতে পারবে না ?তাহলে কি করে থাকবে নুর ?নুর যে এখন এক ঘন্টাও সাদাফকে না দেখে থাকতে পারেনা।
সকালটা আর ঠিকমতো নাস্তা করতে পারলো না নুর ।বারবার শুধু সেটাই মনে আসছিল সাদাফ এক সপ্তাহের জন্য চলে যাবে ।এক সপ্তাহ নুর কি করে থাকবে ?সাদাফ ভাই যদি নূরকে ভুলে যায় এক সপ্তাহ পরে এসে।
এমনও তো হতে পারে সেখানে সাবা আপুর সাথে আবার দেখা হয়ে গেল ।বা সাবা আপু কে সাথে করে নিয়ে গেল ।অথবা সেখানে গিয়ে নতুন কোন মেয়ের সাথে পরিচয় হয়ে গেল। নীলা রহমান লেখিকা
দুনিয়াতে কত কিছুই তো হতে পারে এমন কি হতে পারত না সাদাফ ভাইয়ের না যাওয়া লাগত ।এখানেই থাকতো সাদাফ ভাই ।সকাল থেকেই তাই মন খারাপ করে গোমরা মুখে বসে আছে নূর।
বিকাল হয়ে এলো নুর ড্রয়িং রুমে বসে আছে ।কতক্ষনে সাদাফ আসবে সাদাফ কে একটু দেখবে ।রাতেই তো চলে যাবে বগুড়া ।কিন্তু এখনো সাদাফ আসছে না ।নূরের কেমন যেন লাগছে এখনই আনচান আনচান করছে মনের ভিতর।
হুমায়ূন রহমান বসে চা খাচ্ছেন ফজলুর রহমান এসে জয়েন করলেন ।চা হাতে নিবে অমনি নুরের এরকম ছটফটানি দেখে ফজলুর রহমান বললেন ,”নূর মা এদিকে আয় তো?কি হয়েছে এত ছটফট করছিস কেন ?এক জায়গায় একটু শান্ত হয়ে বস না।”
নূর চুপচাপ এসে বাবা ও বড় বাবার মাঝখানে বসল বসে একবার হুমায়ুন রহমানের দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বলতে পারল না ।আর একবার ফজলুর রহমানের দিকে তাকালো ।ফজলুর রহমান বলল কিছু বলবি নুর আমতা আমতা করছে কিছু বলবে কি বলবে না।
হঠাৎ বোমা ফাটালো নুর ঠাস করে ।বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”সাদাফ ভাইয়ের জায়গায় তুমিও তো যেতে পারো বগুড়া ।তোমরা তো সারাদিন বাসায় বসে থাকো ।সাদাফ ভাই এখানে থাকুক এমনি হাত কেটে গেছে ওনার।”
ফজলুর রহমান মেয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন ।যেখানে অপোজ করার কথা ছিল সাদাফের সেখানে ওনার মেয়েই অপোজ করছে সাদাফ যেন না যায় ।নুর কি তাহলে আসলেই সাদাফের প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে গিয়েছে যে এখন আর সাদাফের কিছু মুখ ফুটে বলতে হয় না ।
সাদাফের সব কথাগুলো নূর বলে দেয়।
হুমায়ূন রহমান ফজলুর রহমানের দিকে তাকালেন ।ফজলুর রহমান ও ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলেন হুমায়ূন রহমানের দিকে।
নূরের কথার কোন উত্তর ফজলুর রহমান দিতে পারল না ।ফজলুর রহমান বলল ,”মা উপরে যাও গিয়ে পড়তে বসো ।সামনে পরীক্ষা ।”
নুর আর কোন কথা বলল না ।একবার বড় বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চাইল ।হুমায়ন রহমান ও চুপ করে গেলেন।
নুর হুমায়র রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”ও বাবা তুমি বলো না বাবা যাক উনার তো হাত কেটে গিয়েছে ।হাতে না জানি কত ব্যথা ভীষণ যন্ত্রণা হবে ।কিভাবে কাজ করবে বলো তো ?যদি ওইখানে গিয়ে কিছু হয়ে যায় হাতে?”
হুমায়ূন রহমান বললেন ,”মা তুমি পড়তে যাও ।সমস্যা হলে তো সাদাফ বলতো ।যেহেতু সাদাফের কোন সমস্যা নেই তার মানে ও যেতে পারবে ।তুমি যাও মা পড়তে বসো।”
নুরের মনটা ভেঙে গেল ।শেষ সুযোগ টুকু যেনো আর কাজে লাগলো না ।আর উনিই বা কেন বললেন না যাবে না ?আমার হাতে সমস্যা ।
খুব অভিমান হলো এখন সাদাফের উপর নূরের।
নূর ধুপ ধাপ পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেল ।রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে পড়ার টেবিলে বসে ভাবতে লাগলো কিভাবে থাকবে সাদাফকে ছাড়া ।হঠাৎ নুরের মনে পড়ে গেল গতকাল রাতে শাড়ি পড়ে যখন সাদাফের রুমে গিয়েছিল সেই কথা।
হঠাৎ যেন একরাশ লজ্জা নুরকে ঘায়েল করে ফেললো।
গতকাল রাতে কি নির্লজ্জ মার্কা কথাগুলোই না বলেছিল সাদাব ভাই ।ঠিক চিন্তা করলে এখনো নূরের গায়ের লোমকূপ গুলি দাঁড়িয়ে যায়।
নূর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল ।আর মনে করতে লাগলো কালকের কথাগুলো।
সাদাফ নুর কে শাড়ী পড়াতে পড়াতে বললো,”ছেলে মেয়ের মধ্যে মন থেকে ভালোবাসা ছাড়াও আরেকটা সম্পর্ক হয়। সেটা একটু এডাল্ট সম্পর্ক যেটা শুধু মনের না শরীরের একটা চাহিদা সৃষ্টি হয় ।
একটা পুরুষ একটা নারী দেহ কে খুব কাছ থেকে পেতে চায় ।শারীরিকভাবে একটু ছুঁতে চায় ।সেটাকে এডাল্ট সম্পর্ক বলে। নীলা রহমান
আর যখন পুরুষটা তার চাওয়া মোতাবেক না পায় তখন সে এভাবে প্রতিনিয়ত আমার মত জ্বলতে থাকে।”
নুর বললো,”আপনি তো আমাকে ছুয়েই আছেন।যখন তখন ছুঁতে পারেন।তাহলে?
সাদাফ বললো,”আরো ঘনিষ্ঠ ভাবে ছুঁতে চাই। যেভাবে ছুয়ে দিলে কলি থেকে ফুটে ফুল হবি।যেভাব ছুয়ে দিলে তুই আমাকে পাওয়ার যন্ত্রনা অনুভব করবি।”কানের কাছে ফিসফিস করে বললো সাদাফ।
কথাগুলো মনে পড়তেই সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেল নূরের ।নূর সাথে সাথে চোখ খুলে ফেললো।
ফজলুর রহমান হুমায়ুন রহমান দিকে তাকিয়ে বললেন ,”ভাইজান কিছু মনে করবেন না নূর আসলে বুঝে বলেনি ।বাচ্চা মেয়ে তাই বলে ফেলেছে ।সাদাফের জন্য হাতে কেটেছে তাই।”
হুমায়ূন রহমান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ফজলুর রহমানের দিকে ।তারপর বললেন ,”তুই কি আসলে মনে করিস নুর বাচ্চা মেয়ে নুর কিছু বুঝতে পারিনি ।শুধুমাত্র হাত কেটেছে তাই সাদাবকে যেতে দিতে চাচ্ছে না তুই কি সত্যি এটা মনে করিস?”
ফজলুর রহমান বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেন না ।মিথ্যা ওনার মুখ দিয়ে আসবে না আর সত্য টা মুখ ফুটে বলতে চাচ্ছে না ।
সত্যি এটাই নূরকে যতই বাচ্চা মনে করুক নুর এখন সাদাফের প্রতি এমন আসক্ত হয়ে গিয়েছে যে বাবা চাচা কারো সামনে লজ্জা পাচ্ছে না সাদাফকে নিজের অধিকার করতে।নুর যে সাদাফ কে ভালোবাসে তা এখন স্পষ্ট কিন্তু নূরের ভালোবাসা আর সাদাফের ভালোবাসা কি এক ?সাদাফ কি নূরকে সেই ভাবে চায় যেভাবে নূর সাদাফ কে ভালোবাসে?”মনে মনে ভাবল ফজলুর রহমান।
চলবে………..
বিদ্যুত নেই।তাই পোস্ট করতে দেরি হলো। দুঃখিত।
সকল লিংক এক সাথে
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩১+৩২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬২
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৯+৩০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৩+১৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫