সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
neela_rahman
পর্ব_৬৬
রাত্রি প্রহর দশটা । নওরিন আফরোজ এখনো রুমে আসেনি ।রান্নাঘরে কাজকর্ম শেষ করছে।হুমায়ূন রহমান নিজের ঘরে বসে বসে চিন্তা করছে ফজলুর রহমান পরবর্তীতে কি করবে বা কি বলতে পারে! অবশ্যই নিঃসন্দেহে ফজলুর সাদাফের ভালো চাচ্ছে কিন্তু সাদাফ কিভাবে এক্সেপ্ট করবে বিষয়গুলোকে বুঝতে পারছে না ।ছেলেকে উনি ভালো করে চিনে।
যদি ফজলুর কোন শর্ত দেয় সাদাফ কি সেগুলো মানবে কি মানবে না ?
হুমায়ূন রহমান বুঝতে পারছে ফজলুর হয়তো সাদাফের জন্য কিছু শর্ত দিবে কিছু নিয়ম দিবে সেগুলো পালন করলেই হয়তো নূরের হাত সাদাফের হাতে দিবে ।কিন্তু সাদাফ যে অধৈর্য ওকি পারবে সবগুলো কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে? নীলা রহমান
মাঝখানে ভাই ও ছেলের মধ্যে নিজে যাতা কলে পিষে শেষ হয়ে যাবে ।হুমায়ুন রহমান না পারবে ছেলের পক্ষ নিতে না পারবে ভাইয়ের পক্ষ নিতে।
এসব ভাবতে ভাবতে চোখের চশমাটি খুলে মাথাটা উপরের দিকে দিয়ে সোফায় শরীর এলিয়ে দিল হুমায়ন রহমান ।ছেলেকে নিঃসন্দেহে অনেক ভালোবাসে হুমায়ূন রহমান ।না হলে ছোটবেলা ওর এরকম একটা আবদার হুমায়ূন রহমান কোনদিনও মানতেন না।
বলতেই হয় ছেলের প্রতি এক ধরনের অন্ধ ভালোবাসা থেকে উনি সাদাফের কথা মেনে নিয়েছিল ।তবে খুব কি ক্ষতি হয়েছিল সাদাফের কথা মেনে নেওয়ায়? মনে মনে ভাবছে হুমায়ূন রহমান।
এতে কারো কোনো ক্ষতি তো হয়নি ।হ্যাঁ হয়তো যা ফজলুর রহমানের জানা উচিত ছিল বা নূরের জানা উচিত ছিল তা ওরা জানতে পারেনি।কিন্তু সাদাফ তো কথার বরখেলাপ করেনি বা কোনভাবে কারো কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি।যা যা শর্ত দিয়েছিল সেই শর্ত সব পালন করেছে সাদাফ।
রুমে দরজা নক হতেই সাদাফ রুমের ভিতরে আসতে বলে বললো,”দরজা খোলা আছে ভিতরে আসো।”
সাদাফ দরজার দিকে তাকালো ।দেখল দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করছে ফজলুর রহমান ।সরু চোখে তাকালো ছোট বাবার দিকে ।মনে মনে ভাবল এত রাতে এখানে কি কথা বলতে এসেছে?
ফজলুর রহমান ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে সাদাফের বেডের সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,”কেমন অবস্থা এখন শরীরের ?”
বলতে বলতে বিছানায় সাদাফের পায়ের কাছে বসতেই সাদাফ পা গুটিয়ে নিল।
ফজলুর রহমান খেয়াল করলেন ছেলেটা এমনি ভীষণ ভালো, আদব-কায়দা কোন কিছুতেই যেন ছেলেকে পিছনে ফেলা যাবে না শুধু রাগটা একটু বেশি।
যা আগে জানতো না এই ইদানিং জানছে।
চাচার দিকে তাকিয়ে বলল ,”ভালো আছি ছোট আব্বু ।হঠাৎ এত রাতে কিছু বলবে?”
ফজলুর রহমান সাদাফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন ।তারপর বললেন আমি একটি ছবি পেয়েছি সাদাফ।তোমার ড্রয়ারে একটি বক্সের ভিতরে ছিল ।ছবিটি সম্পর্কে জানতে চাই।
যদি আমি তোমাকে ছেলে মনে করে থাকি আর তুমি আমাকে সত্যি সত্যি বাবা মনে করে থাকো তাহলে আজ একটি কথাও লুকাবে না আমার কাছ থেকে ।যা সত্যি সব বলবে যদিও আমি সত্যিটা জানি আমি আমার ছেলের মুখ থেকে শুনতে চাই।
সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ফজলুর রহমানের দিকে ।বুঝতে পারল ছবিটি ছোট আব্বু দেখেছে এবং বুঝতে পেরেছে ।
সাদাফ কোন ভূমিকা করলো না ।সরাসরি বলল ,”সেদিন নূরের সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল।”
ফজলুর রহমান থ হয়ে গেল সাদাফের মুখ থেকে সরাসরি এ কথা শুনে। ভেবেছিল হয়তো সাদাফ লুকানোর চেষ্টা করবে বা ভয় পাবে কিন্তু চিত্র পুরাই ভিন্ন।
সাদাফ বলতে শুরু করলো।”আমার বিদেশে যাওয়ার তিন দিন আগে এই শর্তে আমি বিদেশে গিয়েছিলাম ।শুধু বাবা জানতো ব্যাপারটা আর কেউ না।
আমি বিদেশে চলে গেলে যদি নূরকে অন্য কেউ বা কোথাও বিয়ে দিয়ে দাও সেজন্য আমি বিয়ে করে রেখে যেতে চেয়েছিলাম।ওই মুহূর্তে আমার মাথায় এটাই এসেছিল তাই এটাই করেছি।
যেই সত্যটা শুধু আমি আর বাবা জানতাম আজ থেকে তুমি জানলে ।আমি নুর কেউ কোনদিনও বুঝতে দেইনি বা জানতে দেইনি ও আমার বিবাহিত স্ত্রী।”
ফজলুর রহমান অবাক হবেন নাকি নিজ ছেলে সমতুল্য ভাতিজার সততায় আরেকবার মুগ্ধ হবেন বুঝতে পারল না ।রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল ,”তখন নূরের কত বয়স ছিল ?বলতে পারো ?”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।হেসে বল ,”দশ বছর ।”
তারপর ফজলুর রহমান সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল ,”১০ বছরের একটা মেয়ে বিয়ের কি বুঝে?”
সাদাফ ধীরে কিন্তু দৃঢ় কন্ঠে বলল ,”ওর বুঝতে হবে না আমি বুঝি ও আমার বিবাহিত স্ত্রী এতটুকুই যথেষ্ট ওর সাথে আমার সারা জীবন পার করে দেওয়ার জন্য।আর তোমার মা মানে আমার দাদীর ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিলো।এটা ভুলে যেয়ো না।”
ফজলুর রহমান অবাক হয়ে বলল,”তারপরেও তোমার কি মনে হয় না তোমার আর ওর যখন বিয়ে হয়েছে তখন ওর এটলিস্ট বিয়ে কি সেটা বোঝা উচিত ছিল । ধরো তুমি বিদেশে ছিলে আমরা কেউ জানতাম না ও যদি অন্য কাউকে পছন্দ করে ফেলে বা আমরা কোন সিচুয়েশনে পড়ে ওকে বিয়ে দিয়ে দিতাম?”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।বললো,”না পারতে না ।আমার বিবাহিত স্ত্রীকে বিয়ে দেওয়ার অধিকার কারো নেই। তোমারও নেই ।ওই মুহূর্তে অবশ্যই আমি বলতাম ও আমার বিবাহিত স্ত্রী যদিও প্রয়োজন পড়ে নি বলার আজ পড়েছে তাই আজ বললাম। আজ থেকে তুমি জানলে তাই আশা করি সামনে এরকম কোনদিন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করবে না।”
“তুই কি অনুরোধ করছিস নাকি আমাকে জোর গলায় থ্রেট দিচ্ছিস?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো ফজলুর রহমান
“থ্রেট দিচ্ছি না তবে অনুরোধ করছি ও করছি না ।যা সত্যি তোমাকে জানাচ্ছি ।নূর জন্ম থেকেই আমার ।তুমি ওকে আমার কোলে তুলে দিয়ে প্রমিজ করে বলেছিলে আজ থেকে ওর সব দায় দায়িত্ব আমার ।সেদিন থেকেই নূর আমার তারপরও আমি দশ বছরের সময় আবার বিয়ে করেছি। নীলা রহমান
আল্লাহকে হাজির নাজির সাক্ষী রেখে আমি বিয়ে করেছি। হয়তো নূর অতটা বুঝতো না কিন্তু ও কবুল করেছে আমার নামে। ধর্মীয় মতে নুর আমার স্ত্রী ।এটা তুমি অস্বীকার করতে পারবেনা।”
ফজলুর রহমান একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন ।এই তিন দিনে ফজলুর রহমানের রা*গ অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছে তবে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”হ্যাঁ নূর হয়তো কবুল বলেছে কিন্তু ও কি কবুল মানে বুঝত ?ও কি এখনো জানে ও তোর স্ত্রী ?জানে না ।তাহলে তুই যেটাকে বিয়ে মনে করছিস সংসার মনে করছিস ও তো এগুলো কিছুই জানে না।”
সাদাফ বলল ,”জানেনা তাহলে জানাবো ।আজ থেকে ঠিক ১৫ দিন পর ওর সাথে আমার বিয়ে হবে।
তোমরাই আনুষ্ঠানিকভাবে নূরকে আমার হাতে তুলে দিবে ।সেদিন না হয় নূর জানবে বিবাহিত কিন্তু যেহেতু তোমরা জানো নূর আমার বিবাহিত স্ত্রী তাই তোমরা নুরকে সেভাবেই ট্রিট করবে ।আমার স্ত্রী হিসেবে ট্রিট করবে।”
“আমি যে তোর বাবা হই তোর কি একটু বুক কাপছে না আমার সাথে এভাবে কথা বলতে ?”বললো ফজলুর রহমান।
সাদাফ মুচকি হাসল ।বলল ,”না তুমি এখন শুধু আমার বাবাই না আমার শ্বশুর হও ।যেহেতু জেনে গিয়েছো তাই এখন থেকে ওপেনলি তুমি আমার শ্বশুর ।সম্পর্ক তোমার সাথে আমার দুইটা তাই অধিকারও বেশি।”
ফজলুর রহমান বলল ,”যদি আমি না মানি ?”
সাদাফ মুচকি হেঁসে বললে ,”ওই যে বললে আমি তোমার ছেলে আজ হোক কাল হোক তুমি মানবেই যদি ছেলে মনে করে থাকো। যদি তোমার চোখে আমি সুযোগ্য পাত্র হয়ে থাকি তাহলে অবশ্যই মানবে।”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করল ফজলুর রহমান ,”তুই কি শুরু থেকেই এরকম ছিলি নাকি আমি তোকে চিনতে ভুল করেছি?”
“আমি শুরু থেকেই এরকম বাবার সাথে আজকে থেকে তোমার সাথেও ।তবে আমাকে চিনতে ভুল করনি তোমাদের সন্তান হিসেবে আমি কখনো কোনো খারাপ কাজ করিনি ।এমন কোন কাজ করেনি যাতে তোমাদের মাথা নত হয়ে যায়।
তবে নূরের ব্যাপারটা ভিন্ন ।নূরের ব্যাপার নিয়ে আমি কারো সাথে কখনো কম্প্রোমাইজ করব না তোমাদের দুই ভাইয়ের সাথেও না।”
বললো সাদাফ।
ফজলুর রহমান আর কি বলবে কোন ভাষা খুঁজে পেল না ।চুপচাপ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” তোর সাথে আমার পরে কথা হবে তুই সুস্থ হয়ে নে। তুই এখন সুস্থ না।”
বলেই সাদাফের দিকে আড় চোখে একবার তাকিয়ে মাথা নাড়াতে নাড়াতে রুম থেকে বের হয়ে গেল ফজলুর রহমান ।সাদাফ মুচকি মুচকি হাসলো ।সাদাফ ভাল করে জানে তার দুই বাবা তাকে অনেক ভালবাসে এক সময় না একসময় সাদাফের অন্যায়টা ঠিকই ক্ষমা করে দিবে।
রাত বাজে এগারোটা ।সাদাফের খুব কফি খাওয়ার নেশা উঠে গিয়েছে ।সাদাফ ভাবলো এত রাতে মা কে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না সারাদিন কা*জকর্ম করে তাই কি করবে বুঝতে না পেরে ফোন দিল নুরকে ।একটু কফি খাওয়ার জন্য ।
নূর ফোন পেয়ে নিচে গেল কফি তৈরি করতে ।কফি তৈরি করে দরজার নক করলে সাদাফ ভিতরে আসতে বলল ।নুর কাপা কাঁপা হাতে কফি নিয়ে দরজায় দাঁড়ালো।
বলল ,”কফি চেয়েছিলেন ?এত রাতে ?”
সাদাফ বলল ,”হ্যাঁ কফি নিয়ে ভিতরে আয়।”
দু পা এগিয়ে কফি টেবিলে রাখতে চাইলে সাদাফ বললো আর ,” আর একটু কাছে আয় ।”
নুর আরেকটু এগোলে ।সাদাফ বললো ,”আর একটু কাছে আয় ।”
নূর কফিটা টেবিলে রেখে দৌড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বলে গেল,”আমি জানি আপনি এখন আমাকে কি জন্য ডাকছেন এখন আমি সবকিছু বুঝতে পারি।”
সাদাফ নুরের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল ।অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল ,”কি জন্য?”
নুর বললো,” চুম্মা চাটি করতে?”
সাদাফ অবাক হয়ে বলল,” কি? তোকে বলেছি আমি সেই জন্য ডাকছি ?বেশি চালাক হয়ে গিয়েছিস ?আজকাল পাকা অনেক হয়েছিস ।আমি হাতের ব্যান্ডেজটা টাইট করার জন্য ডাকছিলাম।”
চলবে………..
Neela Rahman
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৩+২৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৫+২৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪১
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৫
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৯