সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
neela_rahman
পর্ব_৫৯
প্রায় এক ঘন্টা কেবিনে কথা হলো দুই ভাইয়ের মধ্যে ।কথা বলার এক পর্যায়ে ফজলুর রহমান দাঁড়িয়ে গেলেন ।বললেন ,”আপনি নূরকে মেয়ে মনে করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।আর যেহেতু বলেছেন সাদাফ আমার সন্তান আমার প্রথম সন্তানের মত তাহলে আজকে থেকে সাদাফের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যা নেয়ার আমি নিব ।আশা করি আপনি সেদিন সাদাফের বাবা হয়ে কথা বলবেন না।
যেহেতু সাদাফ কে আমার কোলে তুলে দিয়ে বলেছিলেন ও আমার প্রথম সন্তান তাহলে সাদাফের জন্য সিদ্ধান্ত এখন থেকে আমি নিব ।যদি আমার উপরে বিশ্বাস থাকে অবশ্যই আমার উপরে ছেড়ে দিবেন। আপনি এর মধ্যে আর কখনোই আসবেন না।
এটা তাহলে আমাদের বাবা আর ছেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে ।আর এখন আপনার সাথে আমার কি কথা হয়েছে না হয়েছে এটা শুধু আপনি আর আমি জানি ।তবে এখন থেকে সাদাফের প্রত্যেকটি বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিব আমার সিদ্ধান্তকে আপনার সম্মান করতে হবে ।যদিও আমি আপনার ছোট ভাইজান কিন্তু সাদাফ এখন থেকে আমার সন্তান। তাই ওর ব্যাপারে ওর জীবনের ব্যাপারে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবথেকে আগে অধিকার আমার ।যেমন আপনি নূরের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন আমাকে কখনো জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেন না সেরকম আজকে থেকে সাদাফের ব্যাপারেও আমি সিদ্ধান্ত নিব।
হুমায়ূন রহমান চিন্তিত মুখে চেয়ে রইলেন ছোট ভাইয়ের দিকে ।
তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ,”আচ্ছা ঠিক আছে এখন থেকে সাদাফের সব বিষয়ে তুই সিদ্ধান্ত নিবি আমি আর কখনো তোদের দুজনের মধ্যে ইন্টারফেয়ার করব না ।ভালো হলেও তোর খারাপ হলেও তোর আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব।”
কথাটি শুনে ফজলুর রহমান ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যায়।
এদিকে সাদাফ আজ আর ফ্যাক্টরি বা অফিসিয়াল কোন কাজে যায়নি ।হাতের ব্যথা যেন পুরো শরীরে ছড়িয়ে গিয়েছে ।জ্বর জ্বর ভাব যে কোন মুহূর্তে শরীর কাপিয়ে জ্বর চলে আসবে। হোটেল রুমে শুয়ে শুয়ে ভাবল নূরের সাথে একটু কথা বলে নেওয়া যাক ।এরপর যদি জ্বর বেশি চলে আসে তখন তো নূরের সাথে কথা বলা যাবে না তাই নূরের নাম্বারে ফোন দিলো সাদাফ। নীলা রহমান লেখিকা
ফোন ধরেই সাদাব কিছু বলবে তার আগেই ওপাশ থেকে শুনলো সামিহা বেগমের কন্ঠ ।সামিহা বেগম হ্যালো হ্যালো করছে ।বুঝতে পারল নূর ফোনের আশেপাশে নেই। ছোট আম্মুর ফোনটাই তো নূরের কাছে থাকে তাই সাদাফ হালকা একটু কে সে বলল,” আম্মু আমি।”
সামিহা বেগম সাদাফের কন্ঠ শুনে বলল ,”সে তো বুঝতে পেরেছি তুই। নাম্বার তো সেভ করা ।তো তোর কি হয়েছে গলাটা এরকম ভারি ভারি লাগছে কেন বাপ?”
সাদাফ ভারি ভারি কন্ঠে বলল ,”কিছু না আম্মু এমনেই ভালো লাগছিল না ।তাই শুয়ে ছিলাম ।নুর কোথায়?”
সামিহা বেগম মুচকি হাসলেন ।তারপর বললেন ,”নূর তো গোসলে গিয়েছে আসলে আমি তোকে ফোন দিতে বলবো।”
সাদাফ বলল ,”ঠিক আছে আম্মু ।ফোন দিতে বল আর শোনো তোমরা ভালো আছো ?সবকিছু ঠিক আছে ওইখানে?”
সামিহা বেগম দুষ্টুমি করার ছলে বললেন ,”আজ বুঝি মনে হলো মায়েদের কথা ?কই দুই তিন দিন হয়ে গেল গিয়েছিস একটিবারও তো ফোন দিয়ে কাউকে কথা বললি না।
না ভাবিকে না আমাকে ।এই ছেলে বুঝি আমরা পেলে ছিলাম বড় করেছিলাম ।তিনদিন ধরে বাড়ির বাইরে অথচ এক মা কেউ ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিলি না।”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।হেসে বলল ,”পর তো আমার মায়েরা করে দিয়েছে ।তিন দিন ধরে যে ছেলেটা বাইরে ঠিকমতো খেতে পারছে কিনা ঠিকমতো সবকিছু করতে পারছে কিনা কই ফোন দিয়ে তো খোঁজ নিলে না ?”
হঠাৎ করে সামিহা বেগম বলে উঠলেন,” আমরা খোঁজ না নিলে কি হয়েছে কেউ তো নিয়েছে।
পরে সাথে সাথে দাঁত দিয়ে জিভ কে*টে বললেন,” নিশ্চয়ই তোর বাপ চাচারা নিয়েছে। আর আমরা তো ফোনের আশেপাশে এত থাকি না জানিস ই তো সারাদিন বাড়ির কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকি যৌথ পরিবার তো।”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।জানে ছোট আম্মু কি বলতে চেয়েছিল ?তাই বলল ,”আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু ।নুর আসলে আমাকে একটু ফোন দিতে বল ।একটু দরকার ছিল।”
সাদাফ ফোন রাখার সাথে সাথে সামিহা বেগম ফোন রেখে দেখলেন ওয়াশরুমে এখনো গোসল করছে নূর ।তাই ভাবল একটু পরে এসে বলবে ।তাই ফোন রেখেই সামিহা বেগম রুম ছেড়ে বের হয়ে গেলেন।
সাদাফ শুয়ে শুয়ে অপেক্ষা করছে নূরের ফোনের জন্য এমন সময় ফোন বেজে উঠলো ।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সাইমনের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।
সাদাফ সায়মনের ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলল ।সাইমন বলল ,” কি অবস্থা কেমন আছো ব্রো?”
সাদাফ সরল মনে বলল ,”শরীরটা ভালো নেই হাতে আবার একটু ব্যথা পেয়েছি। জ্বর জ্বর ভাব।মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। কি বিষয়ে ফোন দিয়েছিস ?তুই তো ফোন দিস না জরুরি প্রয়োজন ছাড়া।”
সায়মন ধীরে ধীরে আমতা আমতা করে বলল ,”টাকা লাগবে ৩০০০ ।তোমার বাপ চাচার কাছে তো টাকা চাওয়া যায় না তারা মনে করে আমি একদম পুরাই ভাদাইমা যা দেয় তাই লস। তাদের চোখে আমি পুরো একটা লস প্রজেক্ট ছাড়া আর কিছু না। এখন বলছিলাম যে টাকাটা ভীষণ দরকার আজকে এই মুহূর্তে দাও তো।”
সাদাফ বলল ,”ঠিক আছে ফোন রাখ ।আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি তাহলে। আর আমার জ্বরের কথা কাউকে বলিস না ওষুধ খেয়েছি ঠিক হয়ে যাবে একটু ঘুমালেই।”
কথাটি বলেই সাথে সাথে ফোন রেখে টাকা সেন্ড করে ঘুমিয়ে পরল সাদাফ।শরীরে আর কুলাচ্ছে না ।শরীর ছাপিয়ে যেন জ্বর চলে আসছে ।তাই কখন ঘুমিয়ে গেল বলতেও পারে না সাদাফ।”
সাদাফ পিটপিট করে চোখ খুলল ।খুলে আবিষ্কার করল সামনে হুমায়ূন রহমান বসে আছে ।একটি হসপিটালের কেবিন মনে হল ।সাথে সাথে সাদাফ ঘুম কন্ঠে জিজ্ঞেস করল কোথায় আমি?
হুমায়ূন রহমান ছেলের দিকে তাকালেন। মলিন চেহারার দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া হল হুমায়ূন রহমানের। তারপর বললেন ,”হসপিটালে ঢাকা।”
সাদাফ আশেপাশে চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখল হসপিটালে ক্যাবিন ফাঁকা কেউ নেই ।রুমে শুধু হুমায়ুন রহমান ।সাদাফ সাথে সাথে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”নুর?”
হুমায়ূন রহমান ছেলের দিকে তাকালেন। তারপর নিস্প্রাণ চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন,” নিজের চিন্তা কর আগে নিজে বাচ।”
সাদাফ বলল ,”এটাই আমার চিন্তা ।”
হুমায়ূন রহমান সাথে সাথে বললেন ,”তোকে কি করে বুঝাবো এখন থেকে আর নূরের চিন্তা তোর ,,,,,,,,,,,আর কিছু বলতে পারলেন না ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে।”
চলবে……….
Neela Rahman
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭+৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৭+৩৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৭
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৭+১৮+১৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৪