সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
পর্ব_৫৪
রাত ১২ টা ছুই ছুই।নওরিন আফরোজ আজ বিছানা গোছাতে একটু দেরি করে ফেলেছে । ছেলেকে বিদায় দিয়ে রান্নাঘর পরিষ্কার করে তবেই ঘরে এসেছে ।তাই হুমায়ূন রহমান চেয়ার-টেবিলে বসে একটি বই নিয়ে বসে ছিল। বই পড়া কেমন হচ্ছে না জাস্ট একটু চোখ বুলার ছিল বারবার একটার পর একটা পিকটা উল্টা ছিল আসলে কি যে করতে চাচ্ছে উনি নিজেও জানে না খামখেয়ালি মনে বারবার ছেলেটার কথায় মনে পড়ছে যাবার সময় শেষ বার বলেছিল না গেলে কি নয়?
ছেলেটার জন্য মন বড্ড আনচান করছে ।হাতটা কা*টা কি করে খাবে ?নিজেও ভেবেছে কয়েকবার কিন্তু ওকে না পাঠালে যে হতো না ! নুর যে ভীষণ আবেগী হয়ে পড়েছিল ওর প্রতি ।এটা শুধুই বয়সন্ধিকালের আবেগ নাকি সাদাফ এর প্রতি ভালোবাসা উনি এই সাত দিনে পরীক্ষা করে দেখতে চান।
তারপর না হয় জোড় গলায় ফজলুর রহমানকে বলবে ওর মেয়েকে চাই ।যদি নূরের ভালোবাসা এটা ভালোবাসা না হয়ে শুধুমাত্র বয়সন্ধিকালের আবেগ হয় তাহলে ওকে আরো সময় দিবে বড় হওয়ার ।সাদাফকে কোন মতে বুঝিয়ে নিবে।
এসব ভাবতে ভাবতে নওরিন আফরোজ এর বিছানা গোছানো শেষ হয়ে গেলে।বিছানায় বসেই নওরিন আফরোজ বলল ,”কি করছেন ?বই তো পড়ছেন না শুধু দেখি পেইজ উল্টাচ্ছেন কিছু নিয়ে কি ভাবছিলেন?”
হুমায়ুন রহমান চোখ তুলে তাকালেন নওরিন আফরোজের দিকে ।নওরিন আফরোজ বিছানা গুছিয়ে মাত্রই বসেছেন ।বয়স আর কতই হবে! ৪২। গুনে গুনে ১৪ বছরের ছোট হুমায়ুন রহমানের থেকে ।হঠাৎ সাদাফের বলা কথা মনে পড়ে গেল ।”আমার মাও তো ছোট ছিল আপনি তো ছাড় দেন নি।” কথাটা ভেবেই মুচকি হাসলো হুমায়ণ রহমান।
বিয়ের দিনের কথা মনে পড়ে গেল হুমায়ূন রহমানের ।আসলে খুব ছোট্ট ছিল নওরিন ।আদর করে নুরিন বলে ডাকত ।এখন ল*জ্জায় আর নুরিন বলে ডাকা হয় না ।অনেক সুন্দরী ছিল শুকনা পুরো যেন নূরের মত ।তাইতো নূরের নামটা নুরিনের এর সাথে মিল রেখেই রেখেছিলেন হুমায়ূন রহমান। নীলা রহমান লেখিকা
চেয়ার ছেড়ে উঠে বইটি ছোট টেবিলে রাখল ।চোখে চশমাটি খুলে রেখে ধীরে ধীরে এক পা দু পা করে এগিয়ে আসলো নওরিন আফরোজের সামনে ।তারপর বিছানায় বসে নওরিন আফরোজ এর হাতে হাত রাখল ।রেখেই তাকিয়ে বলল ,”তোমাকে কতদিন এই নামে ডাকা হয় না নুরিন বলোতো?”
নওরিন আফরোজ সাথে সাথে চোখ তুলে তাকালেন হুমায়র রহমানের দিকে ।একরাশ ল*জ্জা যেন ঘিরে ধরল নওরিন আফরোজ কে।যেন মনে হল সেই বিবাহিত জীবনের প্রথম দিনগুলোর কথা ।যখন সাদাফ মাত্র পেটে এসেছিল তখন পর্যন্ত নুরিন বলে অনেক আদর করে ডাকতো ।কত কিছু নিয়ে আসতো ফুল জিলাপি কত কিছু লুকিয়ে লুকিয়ে।
ভীষণ করে মনে পড়ে সেই দিনগুলো নওরিন আফরোজ এর।সংসারে চাপে এখন আর এসব কিছুই হয়ে ওঠেনা ।”আপনার মনে আছে সাদাফ যখন পেটে ছিল তিন চার মাস হবে একদিন রাতে জিলাপি খেতে খুব ইচ্ছে করলো কোথা থেকে কোথা থেকে আপনি জিলেপে খুঁজে নিয়ে এসেছিলেন আমার ঝন্য?”
“হুম মনে আছে নুরিন।তবে আজ বায়না করো না।কাল এলে দিবো।” মুচকি হেঁসে নওরিন আফরোজ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো হুমায়ূন রহমান।
নওরিন আফরোজ সন্তপর্নে নিজের মাথাটি এলিয়ে দিল হুমায়ন রহমানের বুকে ।তারপর বলল ,”কি করে ২৭ বছর পার করে ফেললাম তাই না? এখনো মনে পড়ে সেই দিনই তো আপনার সংসারে প্রথম এসেছিলাম ।এসেই ঘর ভর্তি মানুষ, পরিপূর্ণ যৌথ সংসার দেখে কতই না ভয় পেয়েছিলাম ! না জানি কে আমাকে কিভাবে নিবে ! না জানি কত কাজ করতে হবে ! না জানি উঠতে বসতে কত বকা খেতে হবে !কিন্তু ভাগ্য করে একটা শশুর-শাশুড়ি পেয়েছিলাম ।দেবর পেয়েছিলাম জা পেয়েছিলাম। আপনাকে পেয়েছিলাম কতটা ভাগ্যবতী ছিলাম আমি তাই না ?আর এখন তো আমার সাদাফ বিয়ের উপযুক্ত হয়ে গেছে ।আমার আদরের লক্ষী সো*নাটা। দুইদিন পর ওর বিয়ে হবে নাতিপুতি হবে আমিও দে ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘুরবো কত স্বপ্ন আমার এখনো জানেন? আমার মত নূর ছোট্ট ছোট্ট পায়ে লাল শাড়ি পরে টুকটুক করে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াবে ।সাদাফের বউয়ের জন্য যে আমি নুর কে ছাড়া কাউকে কল্পনা করতে পারি না সাদাফের বাবা।
ফজলুর সাথে কথা বলেন যেভাবেই হোক নুরকে আমার সাদাফের জন্য চাই ।না হলে যে হবে না। সেদিন শত চেষ্টা করে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরে যেমন আমার জন্য আমার সাদাফের জন্য জিলাপি নিয়ে এসেছিলেন আজ আমাদের জন্য আমার সাদাফের জন্য নূরকে এনে দিন ।আমি সাদাফের চোখে দেখতে পারি নুরের জন্য এক আকাশ সমান ভালোবাসা।”নীলা রহমান
“ঠিক আছে কথা বলব ।এখন ঘুমিয়ে পড়ো ।”বললো হুমায়ূন রহমান।
কখন ঘুমিয়ে পড়ল হুমায়ন রহমান নওরিন আফরোজ ঠিক জানা নেই তবে হঠাৎ ফোনের রিং শুনে ঘুম ভেঙে গেল হুমায়ূন রহমানের।
হুমায়ূন রহমান ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল সাদাফ।ভয় পেয়ে গেলেন ।সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে বললেন ,”রাত বাজে একটা এত রাতে ফোন দিয়েছিস? কিছু হয়েছে বাবা?”
সাদাফ বললো,”তোমার ভাতিজি আদরের মেয়ে ফোন করে কান্নাকাটি করছিল তাই তোমাকে জানানোর জন্য ফোন দিলাম।”
হুমায়ূন রহমান একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন ।তারপর নওরিন আফরোজের দিকে তাকিয়ে বিছানা থেকে উঠে একটু সাইডে গিয়ে ধীরে ধীরে বললেন,”কোন কালের শ*ত্রুতামি করছিস তুই আমার সাথে ?আরেকটু হলে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো।এত রাতে ফোন আসছে তোর কি হয়েছে এই ভেবে। আর এই কথাটি কি সকালে বলা যেত না ?এত রাতে ফোন করে বলতে হয় ?বাবা-মার প্রতি কি একটু দায়িত্ববোধ নেই তোর কুলাঙ্গার ছেলে?”
দায়িত্ববোধ আছে দেখে ফোন করেছি ।এদিকে তোমার ছেলে বউ যে কেঁদে কেঁদে পাগল হয়ে যাচ্ছে শ্বশুর হিসেবে তোমার দায়িত্ব নেই ?তুমি তো ঠিকই বউ নিয়ে ঘুমাচ্ছ মজা করে আর আমাকে এত রাতে পাঠিয়ে দিয়েছো একা একা এখন মশার কামড় খাচ্ছি আমি।
রাত জেগে তোমার মেয়ের কান্না আমি একা শুনবো কেন ?ঠিক আছে গুড নাইট এখন তুমি শান্তিতে ঘুমাও।”
হুমায়ূন রহমান:![]()
![]()
![]()
![]()
![]()
![]()
এটা কি সেই জিলাপি প্রভাব নুরিন যে জিলাপি আমি এনে খাওয়াতাম তোমাদের মা ছেলেকে ?এই ছেলে যে এখন আমার সুগার লেভেল বাড়িয়ে দিবে?”
চলবে………..
Neela rahaman
তাবীরের_তেহজীব নতুন গল্প আসবে সবাই আমার এই গল্পটা যেভাবে ভালোবাসা দিয়েছেন আশা করি নতুন গল্পটাকেও সেভাবে ভালোবাসা দিবেন।
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৫+৩৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৭+১৮+১৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৩
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭০