Golpo romantic golpo অন্তরালে আগুন

অন্তরালে আগুন পর্ব ১৪


#অন্তরালে_আগুন

#পর্ব:১৪

#তানিশা সুলতানা

একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে নওয়ান। রাত দুটো বেজে চুয়াল্লিশ মিনিট। বেওথা ব্রিজের মাঝখানে বাইক থামিয়ে ব্রিজের ওপরে বসে আছে নওয়ান। দৃষ্টি মাথার ওপরে থাকা বিশাল আসমানের পানে। বেওথা নদীর ঠান্ডা হাওয়ায় নওয়ানের এলোমেলো চুল গুলো উড়ছে। ল্যামপোস্টের আলোতে তার মুখ খানা বড্ড মায়া মায়া লাগছে।

বল্টু পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যেই তিন খানা কয়েল জ্বালিয়ে ফেলেছে। তবুও যাতে নওয়ানকে মশা না কামড়ায় তাই গামছা দিয়ে হাওয়া করে যাচ্ছে।

নওয়ানের পায়ের কাছে অনেক গুলো সিগারেট এর আধ খাওয়া টুকরো পড়ে আছে।

মূলত তিন ঘন্টা যাবত এক টানা সিগারেট টেনে যাচ্ছে।

বাইকের ওপরে ফেলে রাখা ফোন খানা অনবরত বেজে চলেছে। নওয়ান ঠিক জানে মা, বাবা আর স্নেহা কল করছে। তারা ছাড়া এই মাঝ রাতে তাকে কল করার কেউ নেই।

বল্টুর বাসা থেকেও কল আসছে। তবে সে ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে। নওয়ান যতক্ষণ বাসায় না ফিরবে সে ততক্ষণ যাবে না।

না না নওয়ান জোর করে তাকে রাখে নি৷ বা চলে গেলেও বকবে না।

বরং ইতিমধ্যেই অনেকবার বলেছে “বল্টু বাসায় যা”

দুটো থাপ্পড়ও মেরেছে চলে যাওয়ার জন্য। তবুও বল্টু এক চুল নরে নি।

চারিপাশ স্তব্ধ। বেওথা ব্রিজের পাশে থাকা ছোট্ট বাজারের সব গুলো দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে দুই একটা গাড়ি আসছে যাচ্ছে।

সিগারেগে শেষ টান দিয়ে বাকি অংশটা নদীতে ছুঁড়ে ফেলে নওয়ান। ফু দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে বলে

“বল্টু আই থিংক আই এম ইন লাভ

বল্টু হাবলার মতো নওয়ানের মুখ পানে তাকিয়ে থাকে। ইংরেজি ঠিকঠাক বুঝতে পারে না সে। টেনেটুনে পিএইচসি মানে ফাইভ পাশ করেছিলো। তারপর আর স্কুলে যাওয়া হয় নি।

নওয়ানও বুঝতে পারে তার কথা বল্টু বোঝে নি। তাই ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হেসে বলে

“বাসায় যাহহ।

বল্টু মাথা নিচু করে বলে

” আপনি কখন যাবেন?

“এখনই যাবো। যাহ তুই।

বল্টু যেনো বিশ্বাস করলো না। নিজের হাতে থাকা গামছা খানা নারিয়ে পূণরায় সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

তখনই কয়েকটা বাইক এসে থামে ওদের সামনে। হাতে লাঠি নিয়ে কয়েকটা ছেলে নেমে আসে বাইক থেকে। এবং নওয়ানকে আঘাত করতে যায়।

বল্টু ছেলে গুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে আটকানোর শেষ করে।

খুব বেশি কষ্ট করতে হয় তাকে। নওয়ান রেগে একজনের থেকে লাঠি ছিনিয়ে নেয় এবং একাই সবাইকে মারতে থাকে। শেষ মুহুর্তে একটা ছেলে নওয়ানের হাতে চাকু বিঁধিয়ে দেয়।

সকলেই বাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। বল্টু চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। নিজের শার্ট খুলে নওয়ানের রক্তাক্ত হাত খানা বেঁধে দেয়।

“এ’ম ফাইন। ঠিক আছি আমি। উত্তেজিত হচ্ছিস কেনো?

” ভাই আপনে কথা বলিয়েন না। তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলুন।

নওয়ানের হাত টেনে তাকে বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে। বাইক খানা পড়ে থাকে সেখানেই।

তালুকদার বাড়ির মেইন গেইটে দুই খানা দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের হাতেই বড় সাইজের বন্দুক। বল্টু গিয়ে তাদের ডাকতেই গেইট খুলে দেয়। রক্তাক্ত নওয়ানকে দেখে তারাও উত্তেজিত হয়ে যায়। ধরতে আসে

নওয়ান কড়া নয়নে তাকাতেই তারা পিছিয়ে যায়।

___

স্নেহা এবং আমিনা ড্রয়িং রুমে বসে ছিলেন। কারোর চোখেই ঘুম নেই। স্নেহার দুচোখে টলমল করছে অশ্রুকণা। লোকটা কোথায় গেলো? ঠিক আছে তো সে?

মীরা কয়েকবার ডেকে গিয়েছে স্নেহাকে। এবং বকেছেও। তবুও ড্রয়িং রুম থেকে সরাতে পারে নি তাকে।

স্নেহা আরেকবার কল করতে যাচ্ছিলো নওয়ানকে। তখনই সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকেন জনাব।

আমিনা বেগম খানিকটা রেগে এগিয়ে যায় ছেলের দিকে। কড়া স্বরে বলে

“আব্বা কল কেনো ধরছো না?

মাকে টেনশনে রাখতে ভালো লাগে?

নওয়ান এক হাতে জড়িয়ে ধরতে যায় আমিনাকে। তখুনি স্নেহা বলে ওঠে

” আপনার হাতে র*ক্ত কেনো?

আমিনার বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। নজর দেয় হাতে। সাদা রংয়ের শার্টটা র*ক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। ফ্লোরেও কয়েকটা র*ক্ত পড়েছে।

চিৎকার করে ওঠে আমিনা।

নায়েব তালুকদার ঘুমিয়েছিলেন। আমিনাড চিৎকারকে ধরফরিয়ে ওঠে। এবং দৌড়ে ড্রয়িং রুমে চলে আসে।।

একে একে বাড়ির সকলেই উপস্থিত হয় সেখানে। নওয়ানকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

মুহুর্তের মধ্যেই বাড়িতে ডাক্তার আনা হয়। তিনটে সেলাই দিতে হয়েছে নওয়ানের হাতে।

নায়েব শক্ত গলায় বলে দেয়

“রাত দশটার পরে বাসা থেকে বের হবে না তুমি।

নওয়ান মাথা নারিয়ে সম্মতি জানায়৷

তারপর সবাইকে ঘুমতে বলে ডাক্তারকে বিদায় করে নিজ কক্ষে আসে।

__

গোটা সময় স্নেহা এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলো। নওয়ানের সামনে যায় না এখন আর সে। এই যে মানুষটার হাত কেটে গেলো। স্নেহার ইচ্ছে করছে কাছে গিয়ে দেখতে কতোটা কেটেছে। ডাক্তার ঠিকঠাক সেলাই করলো কি না? কি কি ঔষধ দিলো? কখন কখন খেতে হবে?

নওয়ান তো কখনোই টাইম টু টাইম ঔষধ খাবে না। মেঝো মায়ের তো মনেই থাকবে না।

এই মুহুর্তে নুপুরকে খুব দরকার ছিলো।

নিজের অস্থিরতা কমাতে নিজ কক্ষে চলে যায় স্নেহা। দরজা আটকে কেঁদে ওঠে হাউমাউ করে। নিজের হাতে নিজে গালে এলোপাতাড়ি থাপ্পড় মারতে থাকে।

” আল্লাহ আমি কি করবো?

এতো বেহায়া কেনো আমি? যে আমার না তার জন্য আমার হৃদয়ে এতো মায়া কেনো?

আমার হৃদয় থেকে তার জন্য মায়া কমিয়ে দিন আল্লাহ।

যাকে কপালে রাখেন নাই তাকে ভুলে থাকার পথ দেখান আমায়।

এতো কষ্ট সইতে পারছি না আমি। একটু শান্তি দিন আমায়।

_____

গোটা কক্ষ অন্ধকারে ডুবে আছে। এসির পাওয়া বাড়ানো। বিছানা থেকে গুঙানোর আওয়াজ আসছে।

নওয়ানের কপালে ভাজ পড়ে।

সে বড় বড় পা ফেলে বিছানার কাছে যায়। দেখতে পায় দুটো কম্বল গায়ে চাপিয়েও ঠকঠক করে কাঁপছে নুপুর। মুখ দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ বেরুচ্ছে। ঠিক যেমনটা অসুস্থ থাকলে বের হয়।

নওয়ান এসি বন্ধ করে দেয়। তারপর নুপুরের পাশে আলতো করে হাত রাখে কপালে। প্রচন্ড জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।

” শীটট

নওয়ান তারাহুরো করে ওয়াশরুমে চলে যায়। বালতি ভরে পানি আনে। এক টা পলিথিন বালিশের ওপর নিয়ে তারপর নুপুরের মাথাটা বালিশে দিয়ে মগ ভরে পানি নিয়ে মাথায় ঢালতে থাকে।

আরাম পেলো বোধহয় নুপুর।

বিরবির করে বলে ওঠে

“মিস্টার বেয়াদব আপনি খুব খারাপ। আমি আপনাকে ঘৃণা করি।

নওয়ান ঠোঁট বাঁকায়। মাথায় পানি ঢালা বন্ধ করে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে দেয়।

তারপর দুটো বালিশ এক করে আধশোয়া হয়ে নুপুরকে বুকের মধ্যে নিয়ে দুই হাতে আগলে নেয়।

নুপুর পূণরায় বলে ওঠে

“নওয়ান রিশাদ মুসতালিন আমায় ছোঁবেন না। আপনার ছোঁয়া আমার কাছে বিষাক্ত মনে হয়।

রেগে গেলো কি নওয়ান? বোঝা গেলো না ঠিক। নুপুর পিটপিট করে চোখ খুলে বোঝার চেষ্টা করে। পূণরায় চোখ বন্ধ করার আগেই নওয়ান তাকে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। এবং নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয় নুপুরের গলায়। প্রথমে ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে গোটা গলা। নুপুরকে একটুখানি জ্বালানোর উদ্দেশ্য থাকলেও এবার বেসামাল হয়ে যায় পড়ে নওয়ান। নিঃশ্বাস ভাড়ি হয়ে ওঠে। বেহায়া হাত দুটো বেপরোয়া ভঙ্গিমায় বিচরণ করতে থাকে নুপুরের স্পর্শ কাতর স্থানে।

নুপুর দুর্বল স্বরে বলে

“বেয়াদব ছেড়ে দিন আমায়।

অপবিত্র ওষ্ঠ দ্বারা আমায় স্পর্শ করবেন না। মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া হাতে আমায় ছোঁবেন না।

নওয়ান মুখ তুলে। নুপুরের শুষ্ক ওষ্ঠে শুকনে চুমু খেয়ে হাঙ্কি স্বরে বলে

” আমার সমস্ত অপবিত্রতা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক তোমার ছোঁয়ায়।

নুপুর জবাব দেয় না। হয়ত শুনতে পেলো না। গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। নওয়ান নুপুরের বুকে মাথা রেখে নিজেও চোখ বন্ধ করে।

ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি। প্রচন্ড গরমে জান যায় যায় অবস্থা।

এসি বন্ধ থাকায় মুহুর্তেই ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে নওয়ান। তবুও তার ঘুম পাচ্ছে। নুপুরের নরম বুকটাকে বালিশ বানিয়েছে বলেই কি?

হয়ত তাই।

কিছু মুহুর্তের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে নওয়ান।

চলবে

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply