#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:১৩
#তানিশা সুলতানা
“মানুষের জীবনে এমন অনেক ইচ্ছে থাকে যা কখনো পূরণ হয় না”
আনুর সেই অপূর্ণ ইচ্ছেটা হচ্ছে আবির। এতো অপমান, অবহেলা, অভিযোগ সব কিছু এক পাশে রেখে মনটা এখনো ওই পাষাণ নির্দয় লোকটার জন্য আনচান করে। বেহায়া চোখ দুটো ওই মানুষটাকেই দেখতে চায়।
ফোনের স্কিনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনু। সেখানে আবির এবং তার সুন্দর একটা ফটো ভেসে রয়েছে। দুজনের ঠোঁটের কোণেই মিষ্টি হাসি লেগে আছে। কি সুন্দর দেখাচ্ছে তাদের।
আনুর আঁখি পল্লবে অশ্রুকণা টলমল করছে। যখন তখন গড়িয়ে পড়বে।
বাবা মা বোন বাসা থেকে বের হতে পারে না। মানুষ কথা শোনায় তাদের। আনুকে দেখলে তো মুখ চেপে হাসে।
ওই মানুষটার জন্য সমাজের চোখে হাসির পাত্রী হয়ে গিয়েছে আনু।
একটা মানুষকে মন থেকে ভালোবেসেছিলো, তাকে ধরে রাখার জন্য নিজেকে তার কাছে উৎসর্গ করেছে।সমাজ এবং ওই মানুষটার চোখে নষ্ট নারী হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
অথচ কেউ একবার চিন্তা করলো না
“একটা মেয়ে একটা ছেলেকে ঠিক কতোটা ভালোবাসলে নিজের সম্মান তার হাতে তুলে দিতেও দ্বিধাবোধ করে না”
কেউ বুঝলো না আনু ঠিক কতোটা অসহায় হয়ে আবিরের কাছে নিজেকে সপে দিয়েছিলো।
বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে আনুর।
ঠিক তখনই হাতে থাকা ফোন খানা বেজে ওঠে। স্কিনে আননন নাম্বার দেখাচ্ছে।
আনু কল খানা রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে অতি পরিচিত কন্ঠস্বর
“আনু আমাকে ক্ষমা করে দিবে?
চমকায় আনু। বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে।
” আমি ভুল করেছি আনু। আসলে তুমি হঠাৎ করে এমন কথা জানালে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।
পরে রিয়েলাইজ করতে পারলাম
পরিবার হারালে তাদের আবার ফিরে পাবো কিন্তু তোমাকে হারালে আর কখনোই ফিরে পাবো না।
আনু আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। অনেক দূরে চলে যাবো তোমাকে নিয়ে। ছোট একটা অল্প টাকার একটা জব তুমি আর আমি ব্যাসস আর কিছু লাগবে না।
আনু কিছু বলো?
আনু অনেক কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না। অস্বাভাবিক ভাবে গলা কাঁপছে। বেহায়া নয়নের বেহায়া অশ্রুকণা অনবরত গড়িয়েই চলেছে। তাকে থামানোর সাধ্য আনুর নেই।
“আনু আমি খুব খারাপ করেছি তোমার সাথে। ভুল করেছি। আর কখনো করবো না। বিশ্বাস করো আমায়। একটা সুযোগ দাও। তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না আমি।
ফিরিয়ে দিলে সু*ইসা*ইট করে ফেলবো।
আনু শুধু স্ফুরণ স্বরে বলে
“আমি যাবো তোমার সাথে”
_____
মানিকগঞ্জের এমপি শাহাবুদ্দিন খান এবং তার একমাত্র মেয়ে সাইমা খান সুইসাইড করেছে। নিজ বাসায় বিষ পান করে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে। গোপন সূত্রে জানা যায় এমপির কন্যার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো শিক্ষা মন্ত্রী নায়েব তালুকদারের সঙ্গে। বহুবার তাদের এক সঙ্গে দেখা গিয়েছে। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রীর জন্য এখন পর্যন্ত বিয়ে করে নি সাইমা।
আন্দাজ করা হচ্ছে বাবা এবং মেয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হওয়ায় দুজনই সুইসাইডের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তালুকদার বাড়ির ড্রয়িং রুমে অবস্থিত বিশাল মনিটরের নিউজখানা চলছে। নায়েব তালুকদার মজনু তালুকদার নওয়ান নিরব রাশেদুল সবিতা সকলেই খাবার টেবিলে বসেছে লান্স করার উদ্দেশ্যে। নুপুর এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে দুই হাত ভাজ করে। তার মনোযোগ টিভিতে। আমিনা বেগম খুবই যত্ন সহকারে সকলের প্লেটে খাবার সার্ভ করছে। এমন মুহুর্তে নুপুর বলে ওঠে
“ওনারা সুইসাইড করে নি। নায়েব তালুকদার ওনাদের চায়ের কাপে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলো।
সকলেই তাকায় নুপুরের মুখ পানে।
নিরব বলে
” তুই এসবের মধ্যে আসবি না।
“কেনো আসবো না? পুলিশরা বোকা আর ঘুষখোর হলে আমাকে তো কথা বলতেই হবে।
নওয়ান চোয়াল শক্ত করে ধমকের স্বরে বলে
” জাস্ট সাট আপ ইডিয়েট। আমার বাবা এসে নেই।
“আপনার বাবাই এসবের মধ্যে আছে। ভালো করে দেখুন টি টেবিলে চায়ের কাপ পড়ে আছে তাতে আধখাওয়া চা তার পাশেই আপনার বাবার রুমাল। মানে উনি সেখানে গিয়েছিলো।
আপনার বাবা কাল রাত বারোটায় বাসায় ফিরেছে। পুলিশের ধারণা মতে এমপি এবং তার মেয়েও মারা গিয়েছে ১১-১১:৩০ এর মধ্যে।
তাছাড়া আমি আপনার বাবাকে কথা বলতে শুনেছিলাম কারো সঙ্গে। কি জানি একটা পয়জনের নাম বলেছিলো তাকে।
সো
নায়েব তালুকদার ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। বেশ যত্ন করে ভাত মেখে মুখে পুরে নেয়। তারপর বলে
“আব্বা তোমারই সামনে তোমার বাবাকে খুনি প্রমাণ করে দিলো। বাহহহহ
আমিনা বেগম মাথা নিচু করে আছে। অনেক কষ্টে কান্না আটকে রেখেছেন। নুপুর যে সত্যি কথা বলছে সেটা আমিনা জানে। গতকাল রাতে যখন নায়েব বাসায় ফিরলো তখন তার চোখ দুটো লাল ছিলো। হাত পা কাঁপতেছিলো। না না এই প্রথমবার কাউকে মে*রে ফেললো এমনটা নয়। তবে এই প্রথম এমন কাউকে মারলো যাকে ছাড়া দুইডা সেকেন্ড ভালো থাকতে পারতো না নায়েব।
” দিন বদলায় সেই সথে বদলে যায় মানুষের মনমানসিকতা। আমিনাকে যখন বিয়ে করে ঘরে তোলে তখন প্রায় প্রতি রাতেই বেশ দেরি করে বাড়ি ফিরতো নায়েব। আমিনার পাশে শুয়ে শুয়েই কথা বলতো সায়মার সাথে। দুজন বুদ্ধি করেছিলো অনেকটা দূরল চলে যাবে। পরিবারের মায়া ত্যাগ করবে।
নায়েব যেদিন সাইমাকে নিয়ে চলে যাবে সেইদিনই জানতে পেরে যায় আমিনা প্রেগন্যান্ট। কেনো জানি নায়েব আর যেতে পারে না৷ আর না সাইমার সঙ্গে কথা বলে। মানুষটা বদলে গেলো। আমিনাকে ভালোবাসতে শুরু করে। যত্ন নেয় তার।
নয়মাস পরে যদি ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান আসলো সেদিন থেকে নায়েব বদলে গেলো। তার হৃদয়ে যত ভালোবাসা ছিলো সবটা চলে গেলো ওই বাচ্চাটার কাছে।
হাতে গোনা কয়েকবার নওয়ানের ডায়াপার বদলেছে আমিনা।
তাছাড়া সব সময় সবটা নায়েব করতো। বাচ্চাকে খাওয়ানো ডায়াপার বদলানো সব৷
আমিনার ভাবনার মাঝেই শুনতে পায় নুপুরের কন্ঠস্বর। সে আগের ন্যায় তেজি স্বরে জবাব দেয়
“খু*নিকে খু*নি প্রমাণ করে দেওয়া কঠিন কিছু নয়। তবে ভালো মানুষকে খারাপ প্রমাণ অনেকটা কঠিন। সময় শ্রম কষ্ট অপেক্ষা সব কিছুর বিনিময়ে কিছু মুহুর্তের জন্য খারাপ করা যায় না।
আসলে গোলাপ ফুলের ওপরে যতই আবর্জনা ফেলা হোক। গোলাপ তার নিজস্ব সুঘ্রাণ এবং সৌন্দর্যের দ্বারা আবর্জনাকে এড়িয়ে নিজের সৌন্দর্ষ মেলে ধরতে সক্ষম হবেই।
নায়েব ঠিক বুঝতে পারে উদাহরণটা কেনো দেওয়া হলো।
নওয়ান নিজের সামনে থাকা প্লেট খানা ছুঁড়ে মারে নুপুরের দিকে। কাঁচের প্লেট গিয়ে লাগপ নুপুরের কপালে। আর্তনাদ করে ওঠে নুপুর। মুহুর্তেই কপাল কেটে রক্ত গড়াতে থাকে। প্লেট খানাও ফ্লোরে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
স্তব্ধ সকলেই। শুধু নায়েব তালুকদারের ঠোঁটের কোণে হাসি। রাশেদুল সবিতা আর মজনুও বেশ খুশি হয়েছে। নিরব চিৎকার করে ওঠে। দৌড়ে গিয়ে ধরে নুপুরকে।
নওয়ানের পানে রক্তচক্ষে তাকিয়ে বলে
” তুমি ভীষণ খারাপ ভাইয়া। তোমার থেকে খারাপ মানুষ দুনিয়ায় দুটো নেই।
নওয়ান দাঁড়িয়ে পড়ে। নুপুরের দিকে তাকিয়ে আঙুল তুলে বলে
“মাই ফাদার ইজ এ সুপারম্যান। হি ইজ দ্যা বেস্ট। তাকে নিয়ে কোনো কথা বলার আগে দু বার ভেবে নিবি।
নেক্সট টাইম একই ভুল করলপ মেরে মাটিতে পুঁতে রেখে দিবো।
নওয়ান চলে যেতে নেয়। নুপুর বলে ওঠে
” আপনার বাবা একজন খারাপ মানুষ। এটা আমি শুধু আপনার সামনেই নয় গোটা দুনিয়ার সামনে বলবো। আর আপনার বাবাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা।
বলেই নুপুর সেখান থেকে চলে যায়। নওয়ানও সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়।
রাশেদুল বলে ওঠে
“ভাইয়া এই মেয়েকে এখানে রাখা বিপজ্জনক।
মজনু বলে
” একে এখানে রাখাই সেভ। বেশ চালাক আর বুদ্ধিমতি সে। তাকে কড়া নজরে রাখতে হবে। নির্বাচনের আগে এই মেয়েকে চোখের আড়াল করা যাবে না।
____
আকাশপাতাল ভেবে চলেছে নুপুর। কি হয়ে গেলো? গতকাল রাতে আমিনাকে ইরাবতীর কথা বলছিলো নায়েব। আর আজকে শোনা গেলো সাইমার মৃ*ত্যুর খবর। ওই লোকটার নেক্সট টাইম তাহলে ইরাবতী। কে এই ইরাবতী? কি সম্পর্ক তাদের? তবে আজকে একটা বিষয় নুপুর খেয়াল করলো। নওয়ান বদমেজাজি, বেয়াদব, অসভ্য তবে হয়ত পাপি নয়। সে শুধু তার বাবাকে ভালোবাসে। আর তাকে সাপোর্ট করে। ব্যাসস নিজে বড়সর কোনো পাপকাজে লিপ্ত নেই।
স্নেহা হয়ত ঠিকই বলে।
ভাবতে ভাবতেই কপালে হাত দেয় নুপুর। র/ক্ত শুকিয়ে জমাট বেঁধে গেছে। ব্যাথায় টনটন করছে।
চোখ মুখ কুঁচকে বিরবির করে বলে ওঠে
“বেয়াদব।
জানোয়ার কোথাকার।
একদিন আপনাকে আমি খু/ন করে দিবো।
চলবে..
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৪
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২০
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২১
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১১
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২২
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১ (১ম অংশ+ শেষ অংশ)