#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:১২
#তানিশা সুলতানা
এই তো কিছু মুহুর্ত আগের ঘটনা। স্নেহা নিজ কক্ষের বেলকনিতে বসে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলাচ্ছিলো। তখনই খেয়াল করে নুপুর বাসায় ফিরছে। ওর ক্লান্ত মুখশ্রী দেখে বড্ড মায়া হলো স্নেহার। ভাবে
“নিশ্চয় সকাল থেকে কিছু খায় নি।”
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বেলকনি ছাড়ে সে। কক্ষে প্রবেশ করতেই অনুভব করে তার ফোন বাজছে। নিশ্চয় আপু কল করেছে। তাই ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে ফোন খানা তুলে। মুহুর্তেই বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে তার। “শখের পুরুষ” নামে সেভ করা নওয়ান কল করেছে। জীবনে প্রথমবার। স্নেহার কতো শখ ছিলো। কতো ইচ্ছে কতো আকুতি। নওয়ান তাকে একবার কল করবে, কেমন আছো জিজ্ঞেস করবে।
ভাবতে ভাবতেই কল খানা রিসিভ করে স্নেহা। কানে তুলতেই শুনতে পায় নওয়ান রিশাদ মুসতালিন এর শান্ত কন্ঠস্বর।
“স্নেহা আমার ইঁদুর কিছু খায় নি এখনো। তাকে খাওয়াবি যেভাবেই হোক। ওকেহহহ?
ব্যাসস কল কেটে দেয়। নুপুর কিছু খায় নি।তাকে খাওয়ানোর জন্য কল করেছে। স্নেহা মৃদু হাসে। বদমেজাজি রগচটা সিগারেটখোর নওয়ানও প্রেমে পড়ে গেলো?
বাহহহহ।
শুধু আফসোস একটাই তার প্রেমিকা স্নেহা হতে পারলো না।
___
বই হলে নুপুরের আর কিছুই লাগে না। উপন্যাস হোক কিংবা ক্লাসের বই। সবই পড়তে ভালো লাগে। বেলকনিতে পায়চারি করতে করতে ফুরফুরে বাতাসে পড়তে কি যে মজা লাগে। আর নওয়ান এর কক্ষের বেলকনি একটু বেশিই আদূরে। বেওথা নদীর ফুরফুরে হাওয়াও কলিজা শীতল হয়ে যায়। এই মুহুর্তে নুপুরের হাতে বাংলা বই। বহি পীর নাটক খানা পড়ছে গভীর মনোযোগ দিয়ে।
হঠাৎ করে
“আই ফাক ইউওর এটিটিউট”
এমন এক খানা কথা কানে আসতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে নুপুর। বেয়াদবটা চলে এসেছে।
দাঁতে দাঁত চেপে বই খানা বন্ধ করে ফেলে। তারপর বেলকনিতে থাকা দোলনায় বসে পড়ে।
নওয়ানের কানে ফোন। ঠোঁটের ভাজে সিগারেট। দুই হাত মেলে দাঁড়িয়েছে বল্টু শার্ট খুলে দিচ্ছে।
ফোনের ওপাশের মানুষ কি বললো বোঝা গেলো না। তবে নওয়ান যে দ্বিগুণ রেগে গেলো সেটা বোঝা গেলো।
সিগারেট খানাকে থু করে ফেলে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“বেইশ্যা তোর কলিজা কেটে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো আমি।
” আমি বলেছি মানে তুই বেইশ্যা।
কল কাট প্রসিস্টিউট
বলে নিজেই কল খানা কেটে দেয়। তারপর ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে এক খানা সিগারেট ঠোঁটের ভাজে গুঁজে নেয়। বল্টু সঙ্গে সঙ্গে লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
নওয়ান সিগারেটে টান দিয়ে আরাম করে বসে পড়ে চেয়ারে।
“বল্টু এমপির মেয়ের উত্তেজনা বেড়েছে। কি করবি বুঝছিস তো?
বল্টু ভদ্র বাচ্চাদের মতো মাথা নারায়৷
” ভাই তাইলে কি আমি যামু?
নওয়ান কিছু বলবে তার আগেই নুপুর বলে ওঠে
“যাবেন না। এক পা নরলে খবর আছে।
বল্টু যেনো ভয় পেলো। মাথা খানা নিচু করে ফেলে।
নুপুর বল্টুর সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” লজ্জা করে না?
এই খারাপ লোকটার পেছন পেছন ঘুরতে লজ্জা লাগে না?
বল্টু দুই দিকে মাথা নারিয়ে বোঝায় “লাগে না লজ্জা”
“উনি একটা খারাপ মানুষ। আপনি ওনার সাথে চলবেন না। আর যেনো কখনো আপনাকে না দেখি।
এবার যান।
বল্টু চলে যায়৷ তবে দরজা ওবদি গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। নুপুরের পানে তাকিয়ে বলে
” ভাই মৃত্যু আগ পর্যন্ত ভাইয়ের সাথে থাকমু। বউকে ছাড়তে পারমু কিন্তু ভাইকে ছাড়তে পারবো না।
বলেই সে এক দৌড়ে চলে যায়। নওয়ান বাঁকা হেসে সিগারেট টানতে থাকে। এই প্রথমবার নুপুরকে খোলা চুলে দেখলো সে। হাঁটুর একটুখানি ওপর পর্যন্ত লম্বা ঘন কালো সিল্কি চুল গুলো দেখে ঘোর লেগে যাশ নওয়ানের। ইচ্ছে করে ওই চুলে মুখ ডুবিয়ে স্মেইল নিতে। কালো রংয়ের থ্রি পিচে অন্য রকম দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ খানাও অদ্ভুত লাগছে।
নওয়ান চোখ বন্ধ করে ফেলে।
জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে ওঠে
“এই মেয়ে কারণে অকারণে আমার সামনে আসবে না। তোমার হটনেসে পাগল হয়ে ছুঁয়ে দিলে তো আবার ধ*র্ষ*ণ মামলায় ফাঁসিয়ে দিবা।
নুপুর দুই হাত এগিয়ে নেয় নওয়ানের গলা চেপে ধরার জন্য। কি মনে করে আবার থেমে যায়। নওয়ান ভয় পাওয়ার ভঙ্গিমায় চোখ মুখ কুঁচকায়।
” আপনার মৃত্যু আমার হাতেই লেখা আছে।
নওয়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে
“হাতে নয়
তোর লিপস এ লেখা আছে।
নুপুর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। নওয়ান আঁখি পল্লব বন্ধ করে কিছু মুহুর্ত পড়ে থাকে স্থির হয়ে। সিগারেট প্রায় শেষের পথে। সেটায় শেষ টান দিয়ে পূণরায় ছুঁড়ে মারে অজানা গন্তব্যে।
__
নায়েব তালুকদার বাসায় ফিরলো এই মাত্র। ওই তো সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকছে। আমিনা বেগম আজকে একটুখানি সেজেছে। নীল রংয়ের শাড়ি, চুল গুলো খোলা, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চোখ ভর্তি কাজল। একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তাকে। তবে নায়েব সেদিকে ফিরেও তাকালো না। নিজের মতো ফোন দেখতে দেখতে কক্ষে ঢুকে পড়লো। আমিনাও পেছন পেছন কক্ষে যায়।
নুপুরের বেশ শখ জাগে “কক্ষে ঢুকে একটুখানি প্রশংসা করে কি না দেখার”
তাই চুপিচুপি জানালা দিয়ে উঁকি দেয়৷
দেখতে পায় নায়েব তালুকদার শার্ট খুলে ছুঁড়ে মারলো আমিনার মুখে।
চাপা স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“খা****কির বাচ্চা
তুই ইরাবতীকে কল কেনো করেছিলি?
জানোয়ার আমার ছেলেকেও জানিয়েছিস এসব?
আমিনা অনবরত মাথা নারিয়ে “না বোঝায়” মানে নওয়ানকে কিছু বলে নি।
নায়েব বড় বড় পা ফেলে আমিনার দিকে এগিয়ে আসে। দুই হাতে গলা চেপে ধরে দেওয়ালের সঙ্গে ঠেসে ধরে। এবং আগের ন্যায় বলে
“শুধুমাত্র ছেলের জন্য তোকে সহ্য করছি। নাহলে মেরে পুতে দিতাম।
ছেড়ে দেয় আমিনাকে। তারপর কাবাড থেকে নিজের জামাকাপড় বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
নুপুরের কপালে ভাজ পড়ে।
তাদের দুজনকে দেখলে যে কেউ বলবে “হ্যাপি কাপল”
অথচ তারা হ্যাপি না। ভীষণ অসুখী।
“আসলে মানুষ বাইরে যেটা দেখায় ভেতরে সম্পূর্ণ ভিন্ন”
আর তালুকদার বাড়ির ইট পাথরের মধ্যেও রহস্য লুকিয়ে আছে।
একটা জাহান্নামের জেলখানা এই বাড়িটা।
বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে নুপুরের। সে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। উদ্যেশ্য একটুখানি বাগানে যাবে।
সদর দরজার সামনেই নিরবের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। রাজনৈতিক কাজে নায়েব তালুকদারের আগেই সে ঢাকা গিয়েছিলো।
বাড়িতে নুপুরকে দেখে একটু অবাকই হলো নিরব। তবুও হাসি মুখে বলে
“তুই এখানে?
আমার খোঁজে এসেছিস?
নুপুর মলিন হাসে।
” কোথায় গিয়েছিলি তুই?
কতো কিছু ঘটে গেলো।
“কি ঘটেছে? তুই ঠিক আছিস তো? আমার কাছে এই কয়দিন ফোন ছিলো না৷ তাই কন্টাক্ট করতে পারি নি। আর ইউ ওকে নুপুর?
বলতে বলতে নুপুরের হাত খানা ধরতে যায়। পেছন থেকে নওয়ান বলে ওঠে
” ডোন্ট টাচ হিম
সী ইজ মাই ওমেইন।
নিরব ভ্রু কুঁচকায়
“বুঝলাম না।
নুপুর নওয়ানের পানে এক পলক তাকিয়ে নিজেই হাত ধরে নিরবের।
তারপর তাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে
” চল বলছি তোকে।
নওয়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে ওদের চলে যাওয়া দেখে। তারপর বিরবির করে বলে ওঠে
“জানোয়ারের বাচ্চা তোর হাত ভেঙে গুড়িয়ে দিবো আমি।
চলবে?
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২২
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৬
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৫
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৪
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৩