Golpo romantic golpo অন্তরালে আগুন

অন্তরালে আগুন পর্ব ৬


#অন্তরালে_আগুন

#পর্ব:৬

#তানিশা সুলতানা

হুজুর এক কোণায় দাঁড়িয়ে কাঁপছে৷ নওয়ান রিশাদ মুসতালিনকে তিনি চিনে। শিক্ষা মন্ত্রীর বেপরোয়া বেয়াদব ছেলের কার্যকলাপ সম্পর্কেও ধারণা রয়েছে। এই তো এশার নামাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন। বেওথা ব্রিজের সামনে তালুকদার বাড়ির পাশে যে মসজিদ রয়েছে। সেখানে ইমামতি করেন তিনি। তার বাসা কাছাকাছিই।

ইমাম সাহেবকে চার পাঁচটা ছেলে চেংদোলা করে কাঁধে তুলে নেয়। উনি অনবরত জিজ্ঞেস করতে থাকে

“কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়? কে তোমরা?

কিন্তু যখনই তাকে বেওথা ব্রিজে নিয়ে আসা হয়। দেখতে পায় ব্রিজের ওপরে কালো রংয়ের বাইকের ওপর শুয়ে সিগারেট খাচ্ছে নওয়ান রিশাদ মুসতালিন। মানে সেই তাকে তুলিয়ে আনিয়েছে। ইমাম সাহেব এর মুখ খানা চুপসে যায়। তিনি নিচু স্বরে নওয়ানের উদ্দেশ্যে বলে

” বাবা আমাকে ক

বাকিটা শেষ করার আগেই নওয়ান জবাব দেয়

“বিয়ে করবো।

ব্যাসস এই টুকুই। তারপর বাইকে বসে মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে যায়। আর ছেলে গুলো পেছন পেছন যেতে থাকে ইমাম সাহেবকে কাঁধে নিয়ে।

নুপুর নিজের বাবা মাকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়েছিলে কিছু মুহুর্ত আগেই। নওয়ান কৌশলে তার কোমর জড়িয়ে ধরে। পরপরই নিজের বেল্ট দ্বারা হাত জোড়া বেঁধে দেয়। কিন্তু মুখ বন্ধ হচ্ছে না। শেষমেশ পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখটাও বেঁধে ফেলে।

“তোকে সুস্থ ভাবে বিয়ে করতে চাইলাম ইঁদুর। বাট তুই যে বাল সুস্থতা কাকে বলে জানিসই না। যে গরু যেভাবে ঘাস খেয়ে অভ্যস্ত তাকে ঠিক সেভাবেই ঘাস খাওয়ানো উচিত।

কি রে বল্টু ঠিক বললাম?

বল্টু নামের ছেলেটা কেবলার মতো দাঁত কেলিয়ে অনবরত মাথায় এবং তোতাপাখির মতো বলতে থাকে

” হ ভাই এক্কেরে ঠিক কইছেন।

নুপুরের ইচ্ছে করছে বল্টু নামের ছেলেটার দাঁত গুলো ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। আর নওয়ান নামক বেয়াদবটাকে খু/ন করতে।

নওয়ানের নজর পড়ে হুজুরের দিকে। এক কোণায় দাঁড়িয়ে কাঁপতে দেখে বিরক্ত হলো বোধহয়। চোখ মুখ কুঁচকে সিগারেটে টান দিয়ে নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে বলে

“ওই শালা বিয়ে করা আমায়। বালের মতো দাঁড়িয়ে থাকার জন্য এনেছি তোকে?

হুজুর কেঁপে ওঠে। কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়ে ফ্লোরে। হাতে থাকা খাতা খানা খুলে কলমের মুখা খুলে নেয়।১০৫ নাম্বার বিয়ে করাবেন উনি। কিন্তু কি লিখবে বুঝতে পারে না।

হুজুর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে

“স্যার কি লিখবো? না মানে ছেলের নাম মেয়ের নাম তাদের পরিচয় কিছুই তো জানি না।

নাওয়ানের ঠোঁটের ফাঁকে থাকা সিগারেট খানা শেষ। সেটায় শেষ টান দিয়ে শুন্যে ছুড়ে ফেলে। একদম নাসির এর পায়ের কাছে গিয়ে পড়ে। পাশে নামিয়ে রাখা সিগারেট এর প্যাকের থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের ফাঁকে গুঁজে নেয়। বল্টু লাইটারের সাহায্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তখুনি। নওয়ান পায়ের ওপর পা তুলে বসে বলে

“তামিম দেখতো শালা কি চায়।

তামিম নামে ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে হুজুরের পাশে বসে পড়ে। নরম স্বরে জিজ্ঞেস করে

“কি কি লাগবে বলুন আমি এনে দিচ্ছি।

হুজুর নওয়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে তামিমকে বলেন

“ছেলে এবং মেয়ের স্মার্ট কার্ড তাদের বাবা মায়ের আইডি কার্ড এসব কিছু লাগবে।

তামিম বাকি ছেলেদের ইশারা করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঢুকে পড়ে সোনিয়ার বেডরুমে। এবং কিছু নুপুরের বেড রুমে। দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে আনে সোনিয়া এবং নাসিরের ভোটার আইডি কার্ড। নুপুরের জন্ম নিবন্ধন কার্ড পেয়েছে কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড পাইনি।

তামিম সেগুলো হুজুরের হাতে তুলে দেয় এবং বলে

“মেয়ের তো ১৮ হয়নি। তার স্মার্ট কার্ড নেই।

“ঠিক আছে। এবার ছেলের ভোটার আইডি কার্ডও লাগবে।

নওয়ান বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলো। প্রয়োজনীয় সব বল্টুর কাছে। সে ঝড়ের গতিতে সকল কাগজপত্র নামিয়ে দেয় হুজুরের সামনে।

হুজুর তার মত করে লিখতে থাকে। একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করে

“কাবিন কত লিখবো?

নাওয়ান বিরক্ত স্বরে জবাব দেয়

“এই বাল রে বিয়ে করতে আবার কাবিন লিখতে হবে?

বাল ছাল লাগবে না।

হুজুর নিচু স্বরে বলে

“বাবা অল্প হলেও কাবিন করতে হয়। সবাই করে।

নওয়ান দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে বলে

“সবাই যেটা করে আমি সেটা করে না। আমি ডিফারেন্ট। নওয়ান যেটা বলে সেটাই ঠিক বাকি সব ভুল?

বুজেছেন?

হুজুর অনবরত মাথা নারায়। মানে সে বুঝেছে।

“কোনো কাবিন টাবিনের দরকার নাই।

হুজুরের আর কিছু বলার সাহস হয় না। সে চুপচাপ তার কাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে কবুল বলার সময় আসে প্রথমে মেয়েকে কবুল বলতে হবে। হুজুর তার খাতাখানা নিয়ে নুপুরের দিকে এগিয়ে আসে। বলল

“এই বিয়েতে আপনার সম্মতি থাকলে কবুল বলুন।

বল্টু আবারও কেবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলে

” আফার তো মুখ বান্দা। কবুল কইবো কেম্বা?

নওয়ান নুপুরের পানে তাকায়। চোখ দুটো দিয়েই বোধহয় তাকে ধ্বংস করে দিবে।

“হুজুর কাবিন না করলে কি হয়?

হুজুর জবাব দেয় না। নওয়ান আবার বলে

“কাবিন লিখুন ও আমার থেকে ডিভোর্স চাইলে পঞ্চাশ কোটি টাকা দিবে আমায়। নাহলে ওর দুইডা কিডনি আর চোখ দিয়ে দিবে।

হুজুরের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। তামিম শুকনো ঢোক গিলে বলে

” কাবিন না করাই তো ভালো ছিলো।

হুজুর আমতা আমতা করে বলে

“বাবা কাবিন নিয়ে মজা করা যায় না।

চটে যায় নওয়ান। হুজুরের কলার টেনে ধরে বলে

” ওই শালা আমি তোর বিয়াই লাগি যে মজা করবো?

লেখ কাবিন।

হুজুর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নওয়ান যা যা বললো তাই লিখে।

এবার কবুল বলার পালা।

এখানেও আপত্তি নওয়ানের। মূলত সে নুপুরের মুখের বাঁধন খুলতে চাচ্ছে না। বকবক করে মাথা খেয়ে নিবে। তাই বলে

“কবুল বললো কি না বললো সেটা কে দেখবে? তোর খাতায় সাইন করা। যেটা মিডিয়াকে দেখাতে পারবো।

হুজুর বিরক্ত হয়ে বলে

” সব কিছুর তো একটা নিয়ম আছে।

নওয়ান বল্টু তামিম এবং বাকি ছেলেদের মুখ পানে তাকিয়ে বলে

“তোরা শুনেছিস ইঁদুর কবুল বলেছে৷

তামিম বলে

” হ্যাঁ ভাই শুনেছি।

“ব্যাসস হয়ে গেলো। এবার ওকে দিয়ে সাইন করাতে হবে তাই না?

এবার হুজুর বিরক্ত হয় বলে

“স্যার আমাকে মেরে ফেলুন। তবুও এই বিয়ে পড়াতে বলিয়েন না। কাবিন নেই কবুল বলা যাবে না। তাছাডা বিয়ে কেমনে হবে? বাপের জন্মে এমন বিয়ে দেখিনি। পাপ হচ্ছে আমার।

নওয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে

” মুখ বন্ধ রাখ শালা।

নুপুরের দিকে ঘুরে বসে। সিগারেট খানা হাতের আঙুলের ফাঁকে নিয়ে বলে

” তোর বাপ আমার বাপের ক্যারিয়ার প্রায় ধ্বংস করে দিছে। এখন সেটা ঠিক করতে তোকে বিয়ে করা ইমটেন্ট।

সস্তার থ্রেট দিবো না আমি।

বাটট আমাকে বিয়ে করলে বাপ মায়ের মুখটা দেখতে পারবি।

বুঝেছিস?

নুপুর শুধু তাকিয়ে থাকে নওয়ানের মুখ পানে। তামিম হাত এবং মুখ খুলে দেয় নুপুরের। নওয়ান ভেবেছিলো ইঁদুর এখন চামচিকার মতো লাফালাফি করবে কান্নাকাটি শুরু করে দিবে।

কিন্তু নওয়ানকে অবাক করে দিয়ে বীণা বাক্যে খাতায় সাইন করে দেয় নুপুর।

হুজুর সহ বাকি সবাইও বেশ অবাক হয়৷

“কি ভাবছেন মিস্টার বেয়াদব?

কেনো সাইন করলাম?

বলতে বলতে নওয়ানের দিকে একটু এগিয়ে যায় নুপুর। ফর্সা চোয়ালে নিজের নরম তুলতুলে হাত খানা রাখে।

চলবে…

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply