#প্রেমতৃষা
#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_১৫
শেষরাতে ভালোই ঠাণ্ডা পড়েছে। আজ ঘুমটা এলার্মের শব্দে অতি কষ্টে ভেঙেছে। তৃষা উঠে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আপন মনে ঘরের মধ্যেখানে। আজকে সকালে নাস্তার টেবিলে সে কাউকেই পায়নি। এমন না যা একেবারে কাউকে পায়নি। সিদ্দিক নেওয়াজের সঙ্গে বেশ ভালোই কথা হয়েছে। কত কী জিজ্ঞেস করলেন তিনি। যখন জানতে পারলেন তার নাতি আর তৃষা একই ভার্সিটিতে পড়ছে তখন তিনি আরো খুশি হয়। তবে মুরব্বি খানিকটা মন খারাপ করে আবার বলেছেন, ‘জানো তো দাদু আমার প্রেমের মাথার ব্রেনটা ছোট থেকেই এমন তীক্ষ্ণ। আজ পর্যন্ত কখনোই রেজাল্ট খারাপ করেনি। একই সঙ্গে জাবিতেও চান্স পেয়েছিল কিন্তু কেন যে সেখানে গেল না। এই শহর, এই শহরের গন্ধ ছেড়ে কোথাও গেলে নাকি তার মন পুড়ে। পোড়া মন নিয়ে তো আর পড়ালেখা হবে না। পড়ালেখায় অনেক ঝামেলার কারণে দুইটা বছর তার নষ্ট হয়। নইলে এতদিনে সে মাস্টার্স শেষ করে বের হয়ে যেত।’
তৃষা কেবল মনোযোগ দিয়ে সবগুলো কথা কানে নিল। খাওয়া শেষে যখন উঠে যাবে তখন সিদ্দিক বললেন, ‘প্রেম তো ভার্সিটি যাবে। ওকে বলে দেব সঙ্গে করে যেন তোমায় নিয়ে যায়। একা মেয়ে মানুষ নতুন শহরে চলাফেরা করাটা বিপদজনক। ‘
এখন তৃষা কী করে বলবে এই শহরে তার জন্য বিপদ মানেই ওই প্রেম নেওয়াজ। সে থাকতে আর বার্তি বিপদের কোনো দরকার আছে? তৃষা কোনোমতে সিদ্দিককে বললেন, ‘না দাদু আমি ম্যানেজ করে নেব। আর ধাক্কা না খেলে মানুষ জীবনের লড়াইয়া টিকতে পারে না। একা একা পথ চিনে না চলতে পারলে জীবনটা নিয়ে এই জায়গাতেই পড়ে থাকতে হবে বুঝলেন তো?’
সিদ্দিক কেবল মুচকি হাসলেন। কী জানি সেই হাসি আবার কোন কথা বলে? তৃষা তৈরি হয়ে নেয়। আজ একটু ফ্যাশন করে ওড়নাটা বুকে ঝুলিয়েছে। গালে একটু বেশি করে ব্লাসন লাগিয়েছে। কেউ যদি কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবে, রোদ তার সহ্য হয় না। এই তাপ গাল ছুঁয়েছে বলেই তো লাল হয়ে গেছে। কিংবা ড্রামা দেখেনি নাকি? নায়িকা লজ্জা পেলে গাল কেমন লাল হয়ে যায়?’ এমন পরিস্থিতি এলে সেও না হয় কিছু একটা বলে দেবে।
তৈরি হয়ে নিচে যেতেই বাড়িতে ঢুকল প্রত্যুষ। তৃষার সঙ্গে দেখা হতেই প্রত্যুষের মুখে হাসি ফুটল। এই যে ওভার নাইট করে এসে শরীরটা যখন ঝিমিয়ে একাকার। কিছুই যখন ভালো লাগছিল না। তখনো প্রত্যুষের মুখে হাসি ফুটল তৃষাকে দেখতে পেয়ে। সকাল সকাল ভালো একটা মানুষের সঙ্গেই তো দেখা হয়ে গেল। তৃষার ওড়নাটা হেঁচড়াচ্ছিল। তা দেখে প্রত্যুষ উঠিয়ে দেয়। বলে, ‘মিস আপনার ওড়নাটা। ওড়নাকে বাঁচিয়ে দিলাম। বদলে কিন্তু কিছু চাই।’
তৃষার সে যে কী লজ্জা! মন চাইবে নাকি? যাহ বাব্বাহ সে তো কবেই দিলো। ঠিক তখনই বাইকের হর্ন বেজে ওঠে। কী যে কর্কশ সেই শব্দ। মাথাটা নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। তৃষা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল বাইকে হেলমেট পড়া প্রেমকে। প্রেম হেলমেটটা খুলে একবার তৃষার ওড়নার দিকে তাকালো। তৃষা পাত্তা দিলো না। প্রত্যুষ তার ওড়না ঠিক করে দিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু প্রেমের শব্দদূষণের জন্য আর বলতে পারল না। তবে তৃষা মুখটা ঘুরিয়ে প্রত্যুষকে বলল, ‘ কী চাই আপনার?’
প্রেম তখন হেলমেটটা পড়তে পড়তে গান ধরল,
~চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও
পাবে না কেউ তোমাকে, তুমি কারো নও
চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও
পাবে না কেউ তোমাকে, তুমি কারো নও
তুমি তো আমার-ই, জানো না হো-ও-ওও
এ হৃদয় তোমার-ই
ও-হো-ওও
তোমাকে ছাড়া আমি, বুঝি না কোনো কিছু যে আর
পৃথিবী জেনে যাক, তুমি শুধু আমার~
তৃষা আর প্রত্যুষ দু’টোই বুঝতে পারছে না এই প্রেমের সমস্যা কী। এর জন্য একটু কথাও বলতে পারছে না দু’জনে। গানটা শেষ হতেই বাইকটা দু’জনের মাঝে চালিয়ে দিতেই তৃষা আর প্রত্যুষ ছিটকে দু’দিকে যায়। কেবল যায় না বরং ওই ব্যাটার জন্য এত সুন্দর একটা সাক্ষাৎকার তৃষার যায় ভেস্তে।
–
ভর্তি হতে না হতেই পরীক্ষা। এমন জীবন তো তৃষা চায়নি। মাথাটা একেবারে দিনকে দিন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কই হারিয়ে যাচ্ছে ওই মেধাবী তৃষাটা? স্যারের বোরিং লেকচারার ফাঁক গলে তৃষা কলমের পেছনটা চিবিয়ে যাচ্ছে। আজকে প্রেম ভাইয়ের সঙ্গে ভার্সিটিতে আর দেখা হয়নি। নইলে তো আবার সালাম মিস হওয়ার অপরাধে লাল সালাম ব্যাক দিত। যেই খতন্নক একটা দস্যু ছেলে। তৃষার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। সে ঝিমোতে ঝিমোতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমটা আচমকা ভাঙে তখন যখন বোতল ভর্তি পানি কেউ তার মুখের ওপর ছুড়ে পারে। নাক-মুখে সেই পানি উঠে যায়। কাশতে কাশতে তৃষার দফারফা অবস্থা। সে সামনে তাকিয়ে দেখল পকেটে হাত দিয়ে প্রেম নেওয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। পুরো ক্লাস তখন হা করে তৃষার দিকে তাকিয়ে আছে। তৃষা একবার সবার দিকে তাকায়। কেউ কেউ মিটিমিটি করে হাসছে। প্রেম একটা ধমক দিয়ে বলে, ‘কারো দৃষ্টি এদিকে এসে পড়লে চোখ দু’টো তুলে মার্বেল খেলব।’ সেই তড়াক কণ্ঠে এক নিমিষেই সবার দৃষ্টি সজাগ হলো। পুরো ক্লাস নিচের দিকে তাকিয়ে পড়ায় মন দিলো। স্যার তখনও থেমে আছে। সে নতুন জয়েন হয়েছে। প্রেমের এমন বেয়াদবি সহ্য হচ্ছে না। কাছে এসে প্রেমকে পেছন থেকে বলল, ‘এটা টোকাই এলাকা পাওনি। এটা ক্লাস এখানে এসব চলবে না। অন্তত আমার ক্লাসে।’
প্রেম পেছনে ঘুরে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘ওহ আর আপনি যে সপ্তাহে তিন দিন নিয়ম করে নিষিদ্ধ পল্লীর হাওয়া গায়ে লাগিয়ে আসেন তা খুব চলবে তাই না স্যার? ‘
স্যারের একেবারে মুখ বন্ধ হয়ে যায়। প্রেম তৃষাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তার হাতের কব্জি শক্ত করে চেপে ধরল। তাতেই কুঁকড়ে উঠল তৃষা। চোখটা দিয়ে জল বের হতেই স্যার ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, ‘মেয়েটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?’
প্রেম গম্ভীর কণ্ঠ ও বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘নিষিদ্ধ পল্লীতে। যাবেন নাকি সঙ্গে? আপনার তো বেশ অভিজ্ঞতা আছে।’
স্যারের আর কিছু বলার মতো অবস্থা রইল না। প্রেম জোর করে তৃষাকে টেনে ক্লাস থেকে বাইরে বের করে পরিচিত সেই ফাঁকা রুমটায় এনে ফেলে দরজার ছিটকিনি ভেতর থেকে লাগাতেই তৃষা বলল, ‘আমি আবার কী ভুল করলাম প্রেম ভাইয়া?’
‘সকালে সালাম দাওনি।’
‘আপনি তো আমার সামনে পড়েননি ভার্সিটি আসার পর কিংবা আপনাকে আমি দেখতেও পাইনি।’
‘তো কী হয়েছে? পাওনি বলে খুঁজে গিয়ে সালাম দিয়ে আসবে না? আর তোমার সঙ্গে তো সকালেই বাড়ির গেটের সামনে দেখা হয়েছিল। দেখতে পাওনি মানে কী?’
‘ওটা তো বাসা।’
‘সেটা আমি জানি। আমাকে জানাতে হবে না। এমনতো আর না বাসায় তোমার ভাতার লাগি আর এখানে সিনিয়র?’
প্রেম তৃষার বুকে কোনোমতে ঝুলানো ওড়নার দিকে কয়েক মুহূর্তের জন্য তাকায়। মুহূর্তেই কপালের পাশ্ববর্তী শিরাগুলো ফুলেফেঁপে ওঠে। সে তৃষাকে চড়া গলায় বলল, ‘ওড়নাটা দাও দেখি আমার হাতে।’
তৃষার এবার সত্যি রাগ উঠে। কিন্তু ডিপার্টমেন্টের সিনিয়রদের সঙ্গে লাগতে গেলে পুরো ভার্সিটি জীবনটা তারা বরবাদ বানিয়ে ছাড়ে। এমনিতে প্রথম দিন এক সালামের জন্যই আজ এতকিছু। না জানে এই ঝামেলা কবে শেষ হবে? তৃষা চুপ করে নিচের দিকে সরি চাইতেই প্রেমের মেজাজটা আরো অতিমাত্রায় চড়াও হয়।
‘এই! তুই কী ওড়না দিবি জুনিয়র?’
‘ভাইয়া সরি বললাম তো।’
‘বলতে বলেছি? এই তো আরেকটা ভুল।’
তৃষা নিচের দিকে তাকিয়ে গুটিয়ে যেতেই প্রেম উঠে এসে তার গায়ের থেকে অনুমতি ব্যাথিত ওড়নাটা গায়ের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হাতে চেচিয়ে ফেলে। তৃষার তখন লজ্জা আর রাগের মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘৃণাও তো কম নেই চোখে। তৃষা একটা ঢোক গিলে বলে, ‘আর হবে না ভাইয়া। ওড়নাটা দয়াকরে দেন। ‘
‘দয়া তো প্রেম করতে জানে না সোনা।’
প্রেম কী একটা ভেবে হঠাৎ করে তৃষার দিকে ওড়নাটা এগিয়ে দিতেই সে খুশি হয়ে যায়। এক হাতে প্রেম ওড়না এগিয়ে দিয়ে ডান পা খানা এগিয়ে দিলে বলে, ‘জুতোটায় ময়লা লেগেছে একটু ওড়নাটা দিয়ে পরিষ্কার করে দাও তো সোনা।’
‘কিন্তু…আ..’
প্রেম তৃষাকে কথা বলার সুযোগ দিলো না। চোখটা রাঙাতেই ভেতরে রাগে গটগট করা তৃষা ওড়নাটা হাতে নিয়ে ঝুঁকে বসল। জুতাটা একটু মুছতেই তৃষার দিকে তার গভীর দৃষ্টি গেল। কেমন যেন লাগতেই বলল, ‘এই সোজা হও। এইবার ওড়না দিয়ে জুতা মুছিয়েছি। পরের বার হয় এই ওড়না পুড়বে নয়তো তুমি। এমন কাজ করতে বাধ্য করো না যেন এই ওড়না দিয়েই ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে হয়। আর হ্যাঁ শুনো ওড়না সামলে চলাফেরা করবে। তুমি বাচ্চা নও যে ওড়না অন্য কেউ সামলাবে।’
তৃষা মাথা নিচে নামিয়ে তখনও কেবল হু বলে জবাব দেয়। তাতে প্রেম খুব একটা খুশি হতে পারে না। সে তড়াক করে তৃষার গায়ের থেকে ওড়নাটা নিয়ে ফোন দিয়ে একটা ছবি তুলে। কাকে যেন পাঠায়। তৃষা কিছু বুঝে উঠার আগেই বলে, ‘আজ কী হয়েছে? কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না কেন? সকালে খাও নি? এই হু,হা শোনার জন্য প্রেম এখানে আসেনি।’
‘তো কী শুনতে চান ভাইয়া? আপনি যা শুনতে চান তাই বলব। আর আমার ওড়না যার মনে চাই সে সামলাবে। এখানে কারো যায় আসার তো কথা না।
প্রেম তৃষার দিকে তাকায়। প্যান্টের পকেট থেকে লাইটার বের করে এগিয়ে দেয় তৃষার দিকে। প্রেম সরু চোখে তৃষার দিকে তাকিয়ে সিগারেটটা ঠোঁটে চেপে ধরার আগে হাক ছাড়ল, ‘সোনা সিগারেটটা ধরিয়ে দাও।’
তৃষার মুখটা আরো কালো হয়ে গেল। মনে মনে হয়তো বলছে, ‘আরে প্রেম আমি তোমার পাছায় আগুন ধরিয়ে দেব। খালি আমায় সময় দাও।’
‘কি হলো তৃষার বাচ্চা! কথা কান দিয়ে যায় না? যাওয়ার অনেক রাস্তার নাম প্রেমের জানা আছে। ট্রাই করে দেখব নাকি?’
তৃষা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে প্রেমের হাত থেকে লাইটার নিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে সিগারেটটা ধরানোর চেষ্টা করে। তবে দূরত্বটা একটু বেশিই হয়ে যাওয়ার ফলে চেষ্টা করেও পারছে না। প্রেমের সেই দৃশ্য দেখে মোটেও হাসি পায় না। তাকে মানুষ শেষ কবে হাসতে দেখেছে মনে নেই। প্রেম তৃষার হাত ধরে তাকে নিজের কাছে টেনে আনে। তৃষার ভারি নিঃশ্বাস তার গায়ে পড়তেই প্রেম চোখে চোখ রাখল। নিরবতা ভেঙে হঠাৎ বলে উঠল, ‘গরম নিঃশ্বাস আমার গায়ে পড়লে তোমার নিঃশ্বাস নেওয়ার পথ আমি প্রেম বন্ধ করে দেব। আমার গরম সহ্য হয় না। সো নিঃশ্বাস দূরে গিয়ে ফেলো নয়তো অফ করে রাখো।’
তৃষা মুখ বুঝে কেবল সহ্য করছে। ভার্সিটিতে সিনিয়রের সঙ্গে ঝামেলা করলে স্যাররাও আসেনা বাঁচাতে। তাই তৃষা সারা রাত ভেবে ঠিক করেছে প্রেম নেওয়াজের সঙ্গে তর্কে যাবে না। কারণ গু যত নাড়ানো হবে তার গন্ধ ততই ছড়াবে। সব কথা মেনে চললে একসময় প্রেম নিজেই বিরক্ত হয়ে তাকে বিরক্ত করা ছেড়ে দেবে। তাই এত প্যাচানোর দরকার নেই জিলাপির মতো। তৃষা সিগারেটটা ধরিয়ে দিতেই প্রেম লাইটার কেড়ে নিয়ে তাকে দূরে ঠেলে দেয়। তারপর তারই দিকে চেয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। হাতের ওড়নাটার দিকে একবার তাকিয়ে লাগিয়ে দেয় সেখানে আগুন। তৃষার মনেও ঠিক এমন করেই আগুন জ্বলছে। কারণ সে ভাবতেও পারেনি প্রেম তার ওড়নাটাই পুড়িয়ে দেবে। ওড়নাটা তার কী এমন ক্ষতি করেছে? কিছুক্ষণের মধ্যেই কেউ একজন রুমের দরজা নক করতেই প্রেম উঠে গিয়ে দরজা সামান্য ফাঁকা করে একটা শপিং ব্যাগ নিলো। সেখান থেকে একটা একই রকম দেখতে ওড়না বের করে প্রেম তার শরীরে ভালো করে তা জড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘গলায় ঝুলানোর জন্য ওড়না দেওয়া হয়নি। যে-ভাবে ওড়নাটা পড়িয়ে দিয়েছি তেমনই যেন সবসময় থাকে। এখানে ভালো ঘরের ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা করতে আসে।ওড়না এমন ভাবে গলায় ঝুলিয়ে চলাফেরা করে নোংরা পট্টির মেয়েলোক। অযথা এখানকার পরিবেশ নষ্ট করবে না।’
তৃষা তখনও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এই লোক তাকে ছোঁয়ার বাহানা কখনো ছাড়তে চায় না। তৃষা একটা ঢক গিলে বলল, ‘এবার আমি আসতে পারি কী?’
‘আসল কাজ তো করলামই না। এত তাড়া কিসের? ডায়রিয়া, আমাশয় কিছু কী হয়েছে? হলে স্যালাইন আনিয়ে দিচ্ছি তবুও কাজ শেষ না করে ছাড়ছি না।’
‘কী কাজ?’
‘আগে শার্টটা তো খুলতে দাও। তারপর বলছি।’
তৃষা একটা ঢোক গিলে বলল, ‘মানে?’
চলবে?
(গল্প চলে এসেছে। আচ্ছা প্রেম নেওয়াজকে এক বাক্যে বর্ননা করতে হলে আপনি কিভাবে করবেন? কমেন্ট করে জানান।)
#প্রেমতৃষা
#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_১৬
ছাউনিটার চারপাশে শহুরে বিশৃঙ্খল আবহ। পুরান ঢাকার সরু রাস্তাগুলো বৃষ্টিতে ভিজে চকচকে হয়ে উঠেছে। দুই পাশে পুরোনো দালান, কার্নিশ থেকে টুপটাপ করে পানি ঝরছে। লোহার গেট আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লালচে দেয়াল বৃষ্টির পানিতে আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। গেটের সামনে জমে থাকা কাদামাখা পানিতে রিকশার চাকায় ঢেউ উঠছে বারবার। রাস্তার পাশেই সারি সারি ফুচকা-চটপটির দোকান, বৃষ্টিতে ওদের টিনের ছাউনি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। দোকানিরা তাড়াহুড়ো করে ভেজা পলিথিন টেনে রেখেছে খাবারের ওপর। একপাশে চায়ের দোকান, কেটলির ধোঁয়া বৃষ্টির ভেজা হাওয়ার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। গরম চায়ের গন্ধে ভিজে মাটির গন্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ছাউনিটার নিচে শিমলার মতো আরও কয়েকজন দাঁড়িয়ে। কারও হাতে বই, কারও হাতে ভেজা ছাতা। অটো আর সিএনজি চালকেরা সুযোগ বুঝে বেশি ভাড়া হাঁকছে, “ভাই, বৃষ্টি, কম ভাড়ায় যাবো না…!” চারদিকে পানি জমে যাওয়ায় গাড়ি-রিকশার হর্ন আর পানির ছিটে একসঙ্গে মিশে শহরের নিজস্ব কোলাহল তৈরি করছে। আকাশটা ভারী ধূসর, সূর্যের আলো একটুও নেই। হাওয়াটা কেমন ভ্যাপসা, কিন্তু বৃষ্টির জন্য খানিকটা স্বস্তিও আছে।
ছাউনিটা পুরনো লোহার তৈরি। ওপরে ঢেউটিন, চারপাশে আধা ভাঙা দেওয়াল। বৃষ্টির পানি টুপটাপ করে ফোঁটা ফোঁটা পড়ে ছাউনি থেকে। কিছু জায়গা চুঁইয়ে ভেতরেও ঢুকছে। ভেতরে দুটো লম্বা বেঞ্চ আছে, কাঠের রঙ মলিন হয়ে গেছে, কোথাও কোথাও ভিজে পিচ্ছিল। চারদিকে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ, এক কোণে আবর্জনা জমে কাদার সঙ্গে মিশে গেছে। সেই বেঞ্চগুলো দখল করে বসে আছে কিছু বখাটে ছেলে। ওরা এখানে প্রায়ই আড্ডা দেয়। সিগারেটের ধোঁয়া ছড়ায়, উঁচু গলায় গল্প করে। আজ বৃষ্টির কারণে আরও খামখেয়ালি হয়ে উঠেছে। শিমলাকে ভেজা কামিজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওদের চোখ চকচক করে উঠল। একজন মুচকি হেসে কনুই দিয়ে পাশের জনকে ঠেলল,
“দ্যাখ দ্যাখ, ভিজে গেছে পুরোটা…”
আরেকজন সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল,”ছাতা নাই বুঝি? আমাদের ছাতার নিচে আসলে তো ভিজতে হতো না।”
তৃতীয়জন একটু জোরে হেসে উঠল, “ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আরো ভিজবে, কাছে এসে গরম গরম গল্প করলেই তো পারো। আমরা তোমায় শুঁকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”
ওদের দৃষ্টি শিমলার গায়ে এসে বিঁধছে বারবার। কেউ খোলা চোখে তাকাচ্ছে, কেউ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে। শিমলা অস্বস্তিতে একপাশে সরে দাঁড়াল, কিন্তু ছাউনির নিচে জায়গা কম। ওরা ইচ্ছে করেই আরও কাছে সরে আসছে।
বৃষ্টি তখনও ঝমঝম করে নামছে। রাস্তাটা কাদা-পানিতে ভরে গেছে। ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে শিমলা যখন ছেলেগুলোর কথায় অস্বস্তি চেপে রাখার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই পাশ দিয়ে এক ঝটকায় একটা বাইক এসে ধীর হলো। কালো হেলমেট পরে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তাকিয়ে নিল চারপাশে। সে আর কেউ নয়, অংকুর আহনাফ। ছাউনির ভেতরের হাসাহাসি আর শিমলার বিব্রত মুখ একসঙ্গে তার চোখে ধরা পড়ল। বাইক থামিয়ে হেলমেটটা সামান্য খুলতেই চোখেমুখে রাগের ঝলক দেখা গেল। ভিজে চুল কপালের ওপর লেপ্টে আছে, তবুও তার দৃষ্টি দৃঢ়। অংকুর বাইক থেকে নেমে শিমলার দিকে এগিয়ে গেল। শিমলার চোখে তখন বিস্ময় আর স্বস্তির একসঙ্গে। বেঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেরা হকচকিয়ে গেল। কিছুক্ষণ আগে যারা হেসে খুনসুটি করছিল, তারা এখন কেমন গম্ভীর হয়ে একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল। অংকুর এসেই একটা ছেলের ঘাড়ে হাত রেখে বলল, ‘ওহে জুনিয়র তোমার ডিপার্টমেন্ট কী? আর সামনের মেয়েটাকে কতখানি ভালো লেগেছে?’
ছেলেগুলোর বুঝতে বাকি আর রইল না। ক্ষমা চাওয়া শুরু করল। তাতে কী আর অংকুরের মন ভরে? দুই-চারটে কিল ঘুষি দেওয়া তো তার জন্য একেবারে ফরজ কাজ বলা চলে। সে তাই করে। সেই আঘাত করতে গিয়ে হাতটা কেটেও যায়। তবুও পরোয়া করে না অংকুর। সে শিমলার সামনে এসে গম্ভীর গলায় বলল, “চলো, বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করার দরকার নেই। আমি নিয়ে যাচ্ছি।”
শিমলা আঁতিপাঁতি করে বলল, ‘মানে।’
‘মানে তুমি আমার সঙ্গে যাবে। আমি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসব।’
শিমলা চোখের চশমাটা ঠিক করে অংকুরের বাইকে বসল। অংকুর বলল, ‘হাতটা কাঁধের ওপর রাখো। আর শুনো মেয়ে একদিন বৃষ্টিতে ভিজলে মহা ক্ষতি হবে না। অসুখ করবে? তবুও চলো একসঙ্গে ভিজি, এক সঙ্গে অসুস্থ হই। ব্যথাগুলো একসঙ্গে অনুভব করি, তীব্র জ্বরে তোমাকে যাতে আমার বার বার মনে পড়ে কেবল এতটুকুর জন্যই আমার যে প্রেমব্যাধির বড্ড প্রয়োজন।’
শিমলা সেই কঠিন কথার কোনো সহজ মানে খুঁজল কিংবা কখনো খুঁজবে কিনা তা জানা নেই। তবে তার ঠোঁটের কোণে হাসি ঠিকই ঠিকরে পড়ল।
–
তৃষাটা ক্লাসে এসে হাঁপিয়ে শেষ। শেষ ক্লাস আজকের মতো। এক্ষনি লেকচার শেষ হয়ে যাবে। এখন আর প্রেম ভাই তাকে না ছাড়লেও পারত। শার্টটা খুলে ওই লোক পিঠে মুভ লাগিয়ে তৃষাকে দিয়ে মালিশ করিয়েছে পিঠটা। কেবল কী তাই? কপালটাও মালিশ করিয়ে নিয়েছে। চুলগুলো টেনেও দিতে হয়েছে। কী একটা জীবন। পরের দাসত্ব করতে করতেই জীবনটা শেষ হবে তৃষার। ছুটির পর আজ তৃষা একাই বের হলো আজকে। শিমলা একটা ক্লাস করেই বাড়ি চলে গিয়েছিল। মনে হয় কিছু একটা হয়েছে। তৃষা গেটের কাছে আসতেই দেখল প্রত্যুষের গাড়ি। প্রত্যুষের গায়ে একটা নেভীব্লু ব্লেজার। সে চোখে রোদচশমা লাগিয়ে এক হাত পকেটে গুঁজে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চালাচ্ছে। তৃষা কাছে এগিয়ে আসতেই বলল, ‘আরে আপনি?’
‘এই পথে কাজে এসেছিলাম। ভাবলাম বাসাতেই তো যাওয়া হবে লাঞ্চের সময়। যাওয়ার সময় তোমাকে সঙ্গে করেই নিয়ে যাই।’
তৃষার ভেতরের সব ক্লান্তি আর কষ্ট এক মুহূর্তই দূর হয়ে গেল। সে গাড়িতে উঠে বসতে যাবে তার আগেই প্রত্যুষ বলল, ‘এই ওয়েট।’ বলেই সে গাড়ির দরজা খুলে দিলো।’ তৃষার তো এবার লজ্জায় মরে যাওয়ার মতোই দশা হয়েছে। কি যে সে করবে। এই প্রত্যুষ তাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই না? তৃষা জানত তাকে ভালো না বেসে থাকা একেবারে অসম্ভব বিষয়। সে ভালোবাসার মতোই একটা মেয়ে। কী করে প্রত্যুষ তাকে না ভালোবেসে থাকতে পারে? গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগমুহূর্তে প্রত্যুষের ফোনে একটা কল এলো। সে রিসিভ করতেই অফিসার ইমারজেন্সি অফিসে আসতে বলল। বিবাহিত নারীদের যেই লোকটা খুন করেছে তাকে নাকি একজন দেখেছে। লোকটাকে অফিসে আনা হয়েছে। প্রত্যুষ তৃষার দিকে একবার তাকাল। তারপর সবটা খুলে বলল, ‘সরি তুমি কিছু মনে করো না আমার ইমারজেন্সি অফিসে যেতে হবে।’ তৃষার মন একটু তো খারাপ অবশ্যই লাগল। সে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘সমস্যা নেই। আপনি যে আমায় নিতে এসেছেন এটাই অনেক।’
তৃষা গাড়ি থেকে নামার আগেই হঠাৎ প্রত্যুষের চোখ গেল প্রেমের দিকে। সে সবেমাত্র বাইকে উঠে বসেছে। বাসাতেই তো সে যাবে। প্রত্যুষ গাড়ি থেকে নেমে প্রেমকে ডাকল। প্রেম প্রথমত প্রত্যুষকে দেখে সরু চোখে তাকালো। এই আইনের লোক হলো এলার্জির আব্বা। সে চাইতেও বাইক নিয়ে কাছে আসতেই প্রত্যুষ বলল, ‘তৃষাকে নিতে এসেছিলাম। আমার ইমারজেন্সি কাজ পড়ে গেছে। তুই তো বাসায় যাচ্ছিস। যা না ওকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আয়। বৃষ্টি আপাতত বন্ধ হয়েছে। একটু পরে আবার নামবে নামবে ভাব।’
প্রেম ভাবলেশহীন ভাবে জিজ্ঞেস করল, ‘তো সে কোথায়?’
‘আমার গাড়িতে।’
‘নামতে তো বলো।’
প্রত্যুষ গাড়ির দরজা খুলে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়। ‘নামো।’
তৃষা একটু অবাক হয়। ইশ খালি লজ্জা আর লজ্জা। সে ডান হাতটা একটু বেশিই লজ্জা নিয়ে প্রত্যুষের হাতের ওপর রাখল। প্রেমের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থমকে গেল সেই হাতের দিকে। সে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল, ‘জলদি। খালি আইনের লোকেদেরই ইমারজেন্সি থাকে না। তাদের থেকেও বেআইনিদের থাকে।’
প্রেমকে দেখে তৃষার মুখটা পেঁচার মতো হয়ে গেল। কিন্তু প্রত্যুষ যেহেতু ওই হারে বজ্জাতটার বাইকে বসতে বলেছে তখন তো আর তৃষা তার কথা অমান্য করতে পারে না। ফিউচার স্বামীর কথা না শুনলে পাপ লাগে। এত বড় পাপ তৃষা কী করে করবে? তৃষা বাইকে উঠে বসতেই প্রত্যুষ বলল, ‘আস্তে চালাবি। মেয়ে মানুষ তো।’
‘প্রেম জোরেই চালাবে। তৃষার আবার জোরেই পছন্দ। তাই না তৃষা?’
তৃষা থতমত খেয়ে গেল। এই লোক দেখি তাকে ফাসানোর চেষ্টা করছে। তৃষা মেকি হেসে বলল, ‘হ্যাঁ প্রত্যুষ আমার আবার জোরে না হলে চলে না। ইয়ে মানে…’
প্রত্যুষ হেসে বলল, ‘কথাটা মাথায় রাখলাম।’
পাশ থেকে প্রেম আবার বলে উঠল,’মাথাতেই রাখো। মুখে আর আনার দরকার নেই।’
বাইকের গতি ৩০০ এর কাছাকাছি। তৃষা খামচে ধরে আছে প্রেমকে। বার বার জিজ্ঞেস করছে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? মোটামুটি ভালো একটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রেম বাইকটা থামায়। এতক্ষণ এই তৃষা চেঁচিয়ে তার কানটা ঝালাপালা করে দিয়েছে। তৃষা বাইক থেকে নামার পর চারপাশ ভালো করে দেখল। এখানে খালি জঙ্গল আর জঙ্গল। এই লোকের কেন যে এত জঙ্গল পছন্দ।
‘কোথায় এসেছি আমরা?’
প্রেম জবাব দেয় না। সামনে একটা ইটের ঘর। বৃষ্টি শুরু হয়েছে বলে প্রেম তৃষার হাতটা ধরে জলদি তাকে ওই ঘরটায় নিয়ে যায়। তৃষা ততক্ষণে চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে যখন প্রেম তার গালে কষিয়ে একটা চড় লাগায় তখন চুপসে যায় তৃষা। এই জন্যই গুরুজন বলে, ‘সোজা কথায় কাজ না হলে আঙুল বাঁকাতে হয়।’
ইটের বাড়িটিতে বাইরে থেকে ভাঙা, বিধ্বস্ত লাগলেও ভেতর থেকে অন্যরকম। তা তৃষা তখন বুঝে যখন প্রেম পকেট থেকে চাবি বের করে তালা খুলে। ভেতরে একটাই বিরাট রুম। বাথরুম, রান্নাঘর বারান্দা সবই একই জায়গায়। প্রেম এসেই গা থেকে শার্টটা খুলে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দেয়। লোকটা মাশাল্লাহ যেই ঘাম দিয়েছে। ওই যে সিক্স প্যাকটা আছে না? ওটা বেয়ে টুপটুপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। সেই বিন্দু গুলো মুক্তোর মতো চিকচিক করছে। প্রেম তৃষার দিকে তাকাতেই সে চোখ নিচে নামিয়ে ফেলল। তা দেখে প্রেম বলল, ‘নেওয়াজ বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দাও তোমার বান্ধবীর বাবা অসুস্থ। আজকে তুমি ওদের বাড়িতেই থাকবে।’
‘মানে কী? আপনি কি করতে চাইছেন আমাকে বলবেন?’
‘কল কর তুই।’ ধমকে উঠল প্রেম।
তৃষা আতঙ্কে ফোনটা হাতে নিয়ে কাঁপা ভঙ্গিতে কলটা শেষ পর্যন্ত করতে বাধ্য হলো। পুরোটা সময় প্রেম কেবল তাকিয়ে ছিল তৃষার হাতের দিকে। ডান হাতের কব্জির দিকে। কথা শেষ হতেই প্রেম তৃষার কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। তৃষা তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘এখানে কি করতে এনেছেন বলবেন? আর এখানে আমাকে জোর করে আঁটকে রাখার মানে কী?’
‘আমার মন চেয়েছে তাই।’ বলেই প্রেম রান্না ঘরে যায়। সেখান থেকে একটা চাকু নিয়ে এগিয়ে আসে তৃষার দিকে। তৃষার মাথায় তখনো কিছুই ঢুকছে না। প্রেম এসে তার পাশে বসল। চাকুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘প্রত্যুষ তোমার বড় তাই না?’
‘হুম। ‘
‘তাহলে নাম ধরে ডাকলে কেন?’
‘মন চেয়েছে তাই।’
‘এখন যদি আমিও তোমার জিহ্বাটা কেটে ফেলি? না মানে আমার মনেরও তো একটা চাওয়া-পাওয়া আছে।’
‘প্রেম ভাই আপনি একটা সাইকো তা জানেন? কারণ কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব করা সম্ভব নয়।’
‘আমি সাইকো? যেহেতু সাইকো বলেই দিয়েছো তাহলে তো সাইকোনেস দেখাতে কোনো সমস্যা নেই।’
‘আমি বাড়ি যাব।’
‘বাড়ি তো আমারই। আমি যখন নিয়ে যাব তখনই যাওয়া হবে তোমার।’
প্রেম তৃষার সেই ডান হাতের কব্জি টেনে তাকে নিজের কাছে টেনে আনে। হাতটা জোরপূর্বক রাখে তার বুকের ওপর। তৃষার চোখ যায় ডান পাশের বুকের ওপর করা ট্যাটুর ওপর। প্রেম সেই হার্ট আকৃতির ট্যাটুর ওপরই তৃষার হাতটা রেখে বলে, ‘এই হৃদয়ে এত আঘাত দিচ্ছো কেন?’
‘আপনি ছাড়ুন আমাকে।’ তৃষা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চেঁচিয়ে উঠল। পুনরায় বলল, ‘আপনি নোংরা বুঝলেন? কালো রঙ আপনি। আপনার হাতে হাত রাখলেও মানুষ অন্ধকারের ডুবে যাবে।’
তৃষা উঠে যেতেই প্রেম এবার একটা ধমক দেয় জোরেশোরে। হাতটা ধরে বলে, ‘যা আমার তা অন্য কারো হলে আমি সবার আগে ওই জিনিসটাকেই নষ্ট করে দেই। আমার জিনিসে অন্য কারো স্পর্শ তো দূরের কথা, দৃষ্টিও আমার সহ্য না।’ কথাটা বলতে দেরি কিন্তু তৃষার ডান হাতটায় চাকু দিয়ে আঘাত করতে বিন্দু মাত্র দেরি করল না প্রেম। ব্যথায় তৃষা চিৎকার যে করবে তার উপায়ও নেই। মুখটা চেপে ধরে অনবরত ধমকে যাচ্ছে প্রেম। ডান হাতের কব্জি থেকে রক্ত পড়ছে। গড়িয়ে পড়ছে তৃষার চোখ দিয়ে পানি। প্রেম ব্যথার জায়গায় আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল, ‘আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন না করলে এই প্রেম তোমার জীবন জাহান্নাম বানিয়ে ছাড়বে তৃষা। খোদার কসম মেরে বুড়িগঙ্গায় লাশ ভাসাব।’
চলবে?
Share On:
TAGS: ইশরাত জাহান জেরিন, প্রেমতৃষ্ণা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৯+২০
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১১+১২
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৩০(বিবাহ স্পেশাল পর্ব)
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৮+৯+১০
-
প্রেমতৃষা গল্পের লিংক
-
প্রেমতৃষা পর্ব ২+৩
-
প্রেমতৃষা পর্ব ২৯+সারপ্রাইজ পর্ব
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১
-
প্রেমতৃষা পর্ব ২৩+২৪
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৪+৫