#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
#neela_rahman
#পর্ব_১৭
লাঞ্চ আওয়ারে সাদাফ অফিসে বসে বসে ভাবছিলো স্কুল জীবনের বান্ধবীর কথা।খুব সুন্দরী ছিল হঠাৎ করে ওর কথা মনে পড়ল।
যদি ওর সাথে শুধুমাত্র বন্ধুত্ব এবং সাবা এখন বিবাহিত তবে সেটা তো নূর জানে না ।নুরকে দেখানোর জন্য হলেও সাদাফের একটা গার্লফ্রেন্ড দরকার তাই সাবা কে ফোন করে ফেলল সাথে সাথে।
২ রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোন ধরলো সাবা।বলল ,”কিরে এত বছর পর হঠাৎ ?ভাগ্যিস নাম্বারটা সেভ করে রেখেছিলাম না হলে তো চিনতেই পারতাম না কে ফোন দিয়েছে।”
সাদাফ বললো ,”ন্যা*কামি বন্ধ কর ।দেশে এসেছি সেটা ভালো করে জানিস কই একবার তো দেখা করতে এলি না ।আমি না হয় ব্যস্ত থাকতে পারি তোরা এত ব্যস্ত ছিলি না।”
তারপর আমতা আমতা করে সাদাফ বলল ,”দোস্ত আমাকে একটা সাহায্য করতে হবে।”
সাবা বলল ,”ও এর জন্য ফোন দিয়েছিস ?তাইতো বলি সাদাব সাহেব কেন ফোন দিল।
তা ঝেড়ে কাশ কেন ফোন দিলি ?”
সাদাফ আমতা আমতা করে বলল ,”একজনকে জেলাস করতে হবে তুই আমার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার নাটক করবি ।রেস্টুরেন্টে চলে আয় আজকে তিনটার দিকে ।ওকে আমি নিয়ে আসবো।”
সাবা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো কে সেই একজন ?
সাদাফ চুপ করে রইল ।কিছুক্ষণ পর সাবা বলল ,”ওই থাম থাম তোর সেই ছোট্ট বাবুটা না তো ?যাকে মাঝে মধ্যে কোলে করে নিয়ে আসতি কলেজে? নীলা রহমান
সাদাফ তুই এখনো সেটাতে আটকে আছিস ?ও তো ছোট্ট একটা বাবু ।তখন তো ভাবতাম দুষ্টুমি করিস ফা*জলামি করিস বয়স অল্প দুষ্টুমি করে হয়তো বউ বউ বলিস এখনও ওকে নিয়ে আটকে আছিস?”
সাদাব বলল ,”আটকে নেই ওকে নিয়েই ছিলাম ওকে নিয়েই থাকবো সারাজীবন।এখন আমাকে সাহায্য করতে হবে মেয়েটা বড্ড অবুঝ আমাকে পছন্দ করে কিন্তু নিজে বুঝে না যে আমাকে আসলে ভালোবাসে ।
তুই ওকে এই অনুভূতি গ্রো করতে সাহায্য করবি।ভালো বাসা কি বুঝাবি।ভালোবাসা মানে যে চাচাতো ভাইয়ের উপরে একটু বেশি অধিকার করা না এটা ওই মেয়েটার ঘি‘‘লুর মধ্যে দিয়ে দিস।
এমনভাবে অভিনয় করবি যেন ও বুঝতে পারে সাদাফের উপরে ওর অধিকার কতটুকু সাদাফ কে ও কতটুকু চায় এই অনুভূতিটুকু ওর ভিতরে জাগিয়ে দে ।ছোট মানুষ বুঝতে পারে না কিন্তু ঠিকই ভালোবাসে।বুঝাবি যে সাদাফ কে চাচাতো ভাই হিসেবে না সাদাফকে একজন পুরুষ হিসেবে ভালোবাসে সেটা ওকে বুঝিয়ে দে।”
সাবা হাসতে হাসতে বলল ,”বাব্বা সাদাফ কি ভালবাসার উপর পিএইচডি করেছে ?যে মেয়ে বুঝেই না ভালোবাসা কি সেই মেয়ে তোকে ভালোবাসে সেটা তুই বুঝে গেলি ?তাহলে তুই বলে দে।”
সাদাফ হাসলো আর কিছু বলল না ।বলল ,”এতটুকু উপকার কর তিনটার দিকে রেস্টুরেন্টের ঠিকানা পাঠাচ্ছি চলে আয় ।আমি ওকে নিয়ে ঠিক টাইম মতো পৌঁছে যাব ।”
সাবা বললো ,”আচ্ছা ঠিক আছে বাকি কথা পরে হবে ।”
বলেই ফোন রেখে দিল ।
সাদাফ সাথে সাথে বের হয়ে গেল নুরকে পিক করার জন্য।
স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ।দূরে তাকিয়ে দেখছে নুর বেনি দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে আসছে।
সাদাফের ঠোঁটের কোণে খেলে গেল একটু দুষ্টমিষ্ট হাসি ।নূর গেইট পার হয়ে সামনে চলে আসলে সাদাফ মেকি ব্যস্ততা দেখিয়ে বললো ,”নূর তাড়াতাড়ি আয় আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে।”
নূর মনে মনে খুব কষ্ট পেল ।একতো গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবে দ্বিতীয় এই রোদের মধ্যে নূর এতো দূর রাস্তা হেঁটে আসলো একটু জিজ্ঞাসা করল না নূর তোর কি খা‘রাপ লাগছে ?তুই এত ঘেমেছিস কেন?
মন খা‘রাপ নিয়েই গাড়িতে উঠে বসল নুর।কিছুতো করার নেই ।বলেছে যখন নিয়ে যাবে তখন তো নিয়েই যাবে ।তাই চুপচাপ গাড়িতে বসে মাথা নিচু করে রাখল।
সাদাফ আর চোখে সব কিছুই লক্ষ্য করছিল কিন্তু আজকে নুরকে একটু জ্বালাবে তাই নূরে প্রতি কোন কনসার্ন দেখাবে না ।
তবে মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছে আসলে মেয়ের গালগুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে ।এতো রোদে ছাতা কেন নিয়ে আসেনি মনে মনে খুব রা‘‘গ হলো নূরের উপর।
তবে মুখে কিছু না বললেও গাড়ির এসিটা বাড়িয়ে দিল যাতে একটু ঠান্ডা লাগে চেহারায়।
১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই চলে এলো কাঙ্খিত রেস্টুরেন্ট এর দিকে ।সাদাফ গাড়ি থেকে নেমে নূরকে বলল ,”তাড়াতাড়ি নাম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে অনেকক্ষণ হলো তোর ভাবি।”
ভাবি শব্দ টা কানে খুব লাগলো নুরের।তাই নূর বলল ,”আমি ওখানে আপনাদের মাঝে কি করব ?আমি বরং গাড়িতেই বসে থাকি আপনি দেখা করে আসুন ।”
সাদাফ বলল ,”না না তোকে দেখাতেই তো নিয়ে আসলাম আমি তো রোজ দেখি সব সময় দেখতে পারবো আজকে তো তোকে দেখা করানোর জন্য নিয়ে এসেছি।
আর তাছাড়া আমার বউ কেমন হবে তোর একটা মতামত আছে না ?তুই যেমন চাবি তেমন হবে।”
বলে সাদাফ হেঁটে সামনের দিকে যেতে লাগল ।
নূর পিছনে হাঁটতে হাঁটতে ভেংচি কেটে বলল ,”আমার মতামতের দাম আছে ?আমি কি বলেছি তোকে বিয়ে করতে শ*য়তান?”
অবশ্য মনের কথা মনেই রয়ে গেল নূরের ।বুক ফেটে কান্না আসছে নূরের কিন্তু কান্নাও করতে পারবেনা ।কান্না করার অধিকার নেই ।কি বলে কান্না করবে চাচাতো ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড দেখতে এসে কান্না করেছে ?কিছুই বুঝতে পারছে না নুর এখন কি করবে।
ভিতরে ঢুকেই দেখলো নূর সুন্দর একটি মেয়ে বসে আছে ।অসম্ভব সুন্দরী আর খুব স্মার্ট ।
সাদাফ কে দেখে দাঁড়িয়ে গেল সাবা ।সাথে সাথে উঠে এসে সাদাফের এক হাত ধরে বলল ,”তুমি এসেছো ?ও বুঝি তোমার ছোট বোন ? কেমন আছো নুর ?আসো বসো। বসে বসে কথা বলি ইস রোদে একেবারে ঘেমে লাল টমেটো হয়ে গেছো ।তাইনা সাদাফ?তোমার ছোট্ট বোনটা তো একদম লাল টমেটো মত।
যে কেউ দেখলে মন চাবে একেবারে একটু লবণ লাগিয়ে টমেটোর মত গাল দুটোকে খে*য়ে ফেলি।”
সাদাফের হাসি আসছে কিন্তু খুব কষ্টে হাসি আটকে সাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”হ্যাঁ চলো বসো এখানে ।তোমারও তো অনেক গরম লাগছে তাই না ?তাড়াতাড়ি চলো বাতাসে। এখানে একেবারে তুমিও ঘেমে গিয়েছো তাড়াতাড়ি চলো ।”
নুর দুজনের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল ।একটু আগে নুর ও তো গরমে অনেক ঘেমে গিয়েছিল গাল লাল হয়ে গিয়েছিল কই সাদাফ ভাই তো একটিবারও বলল না নুর তোর কেমন লাগছে?
কথাগুলো ভাবতেই নূরের ভীষণ মন খা*রাপ হলো ।চুপচাপ হেটে এসে সাদাফ ও সাবার অপজিটে আরেকটি চেয়ার টেনে বসলো নূর ।হঠাৎ মাথা তুলে দেখল সাবা সাদাফের হাত ধরে বসে আছে ।একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কি কি কথা যেন বলছে।
দ্রুত চোখ সরিয়ে ফেলল নুর ।অন্য দিকে তাকিয়ে রইল ।কথা শুরু করলো সাবা ।বলল ,”তা নুর তুমি এখন কোন ক্লাসে পড়ো এসএসসি দিবে বুঝি?”
নুর ছোট্ট করে উত্তর দিল হ্যাঁ ।
সাবা নুরের দিকে তাকিয়ে সাদাফকে ইশারা করে বলল ,”জানো আমাদের রিলেশন কখন হয়েছিল ?যখন আমরা ক্লাস নাইনে পড়ি ।তখন থেকে আমাদের দুজনের মধ্যে প্রেম শুরু হয়ে গিয়েছিল । সাদাফ আমাকে সবার সামনে ফুল দিয়ে প্রপোজ করেছিল ।
আমি তো ল*জ্জা শেষ হয়ে গিয়েছিলাম না করতে পারিনি ।সেদিন থেকে আমাদের মধ্যে প্রেম চলছে আর তুমি তো দেখছি অনেক বোকা ।আচ্ছা তোমার কি কোন বয়-ফ্রেন্ড আছে?
সাথে সাথে সাদাফ একটি ফোন ধরার বাহানায় একটু দূরে চলে গেল।
সাবা বলতে শুরু করল।,”মানে এই সময় তো মনে একটু কাউকে ভালো লাগে অনুভূতি জাগ্রত হয় ।বাবা ভাই বন্ধু ছাড়াও অন্য কোন পুরুষের দিকে মানুষ আকৃষ্ট হয় ।তোমার জীবনে কি এরকম কেউ আছে যাকে তোমার ভালো লাগে ?”
নুর সাথে সাথে চট করে তাকালো সাদাফের দিকে ।সাদাফ ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত।
সাবা আবার বলল ,”জানো সাদাফ কিন্তু ভীষণ রো*মান্টিক তোমাকে যে কি বলে বুঝাবো তুমি তো বোন তাই জানো না ভীষণ রো*মান্টিক ও।”
নুরের ভীষণ খারাপ লাগতে শুরু করলো ।কিন্তু প্রশ্নগুলো মনে মনে ভাবতে শুরু করল ।
“কোন পুরুষ মানুষকে পছন্দ হয় ।অনুভূতি জাগ্রত হয় বাবা ভাই বা বন্ধু ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে ভালো লাগতে শুরু করে এই বয়সে।
কিন্তু নূর তো বাবা ভাই বা বন্ধু ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সাথে এভাবে মিশে নি তবে সাদাফ ভাইকে ওর কোন সময় নিজের ভাই বলে মনে করেনা ।সাদাফ ভাইকে কখনোই সাইমনের মত ভাবে না নুর ।
তাহলে কি নুর কোন ভাবে সাদাফ ভাইকে কে আলাদা কোন পুরুষ মানুষ ভাবে ? যখন সাদা ভাই ওকে স্পর্শ করে তখন নূরের এমন কেন লাগে ?কই সাইমন ভাই টাচ করলে তো রকম লাগে না?
সাদাফ ভাই নুরের দিকে নরমাল দৃষ্টিতে তাকালেও নূরের ভিতরে যেন কম্পন সৃষ্টি হয়ে যায় কই সাদাফ ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে তো কত কথা বলে নূর কখনো একটু অন্যরকম ফিলিংস হয় না।
সবচেয়ে বড় কথা সাইমনে বিয়ের কথা ভাবলে নূরের বুকের ভিতরে কিছু হয় না কিন্তু সাদাফ ভাই বিয়ে করবে সাদাফ ভাইয়ের রুমে অন্য কোন মেয়ে থাকবে ভাবতেই শিউরে উঠে নুর।এই যেমন সাবা সাদাফের হাত ধরে বসে আছে নূরের বুকের ভিতর র*ক্তক্ষরণ কেন হচ্ছে কেন বারবার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে নূরের নুর জানে না।”
কথাগুলো মনে মনে ভাবতে লাগলো নুর।
হঠাৎ নুরের মনে হলো যে কোন মুহূর্তে চোখে পানি চলে আসবে তাই সাবা কে বলল ,”আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি ।”
বলে নুর সাথে সাথে ওয়াশরুমের দিকে গেল ।সাদাফ দূর থেকে খেয়াল করল নূর টেবিল থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে গেল তাই সাদাফ ফোনটি রেখে ওয়াশরুমের দিকে গেলো।
সাদাফ এতোখন ফোনে ছিল সেটি সাবার ফোন থেকে ফোন ছিল ।সাবার প্রত্যেকটি কথা সাদাফ শুনেছে।
কিন্তু নূরের কি রিঅ্যাকশন হয় সেটি সাদাব স্ব*চক্ষে দেখতে চায় তাই নূরের পেছনে পেছনে ওয়াশরুমের দিকে গেল।
গিয়ে দেখল নূর ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছে সাদাফের ভীষণ খারাপ লাগলো ।বুকটা যেন ফে*টে যাচ্ছে সাথে সাথে সাদাফ নুরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ।নুর হঠাৎ সাদাফকে নিজের চোখে সামনে দেখে হক চকিয়ে গেল ।বলল ,”আপনি এখানে?”
সাদাফ নুরের গালে দেখল এখনো এক ফোঁটা পানি রয়ে গেছে ।সাদাফ একটু ঝুঁকে নিজের ঠোঁট দিয়ে অশ্রু ফোটা টুকু শু*ষে নিলো।নাক দিয়ে নূরের গালে ঘষতে ঘষতে বড় করে একটি নিঃশ্বাস নিল।
নূর আমতা আমতা করে বলল ,”বাহিরে যে বসে আছে উনাকেই বিয়ে করবেন?”
সাদাফ ধীরে ধীরে কানে কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল ,”হুম।তোর পছন্দ হয়েছে?”
নুর অভিমানী স্বরে বলল ,”আমার এখানে কেন এসেছেন? গার্লফ্রেন্ড এর কাছে যান।যাকে বিয়ে করবেন।”
সাদাফ বলল ,”শান্তির খোঁজে এসেছি ।”
নুর বলল ,”কেন গার্লফ্রেন্ডের কাছে শান্তি নেই ?”
সাদাফ ধীরে ধীরে বলল ,” না। নেই।
আমার হাজারটা গার্লফ্রেন্ড হলেও শান্তি শুধু তোর মাঝে।
বিয়ের পরেও আমার শান্তি শুধু তোর মাঝে থাকবে ।আজীবন আমার শান্তি শুধু তোর মাঝে।”
বলেই নূরের গালে ভালোবাসার স্পর্শ দিল সাদাফ।
নুর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
চলবে……….
Neela Rahman
কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ
#সুখময_যন্ত্রনা_তুমি
#neela_rahman
#পর্ব_১৮
নুর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল ।সাদাফের হালকা কিন্তু গভীর স্পর্শ নুর নিতে পারছে না চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো।
সাদাফেরও কেমন যেন ভিতর সব এলোমেলো লাগছে । ঘোর লাগা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল নূরের পানে ।
নুরের এই চোখ বন্ধ করে থাকা উপরে ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে রাখা জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া এই সৌন্দর্যগুলো সাদাফ কে শুধু নিজের দিকে টানছে নুর।মনে হয় সারাদিন সারারাত দেখলেও যেন মনের পিপাসা মিটবে না। সাদাফ নুরের গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে বড় করে একটি নিজ নিঃশ্বাস নিল। অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর পর ধীরে ধীরে সাদা মুখ তুলে তাকালো আবার নূরের দিকে।
এটা রেস্টুরেন্টের ওয়াশ রুম তাই এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না ।নুর কে কেন এনেছে তাও তো ভুলতে বসেছে সাদাফ।সাদাফের মনে পড়ে গেল আবার নিজেদের প্ল্যানের কথা তাই নূরের কানে কানে বলল ,”চল বাহিরে তোর ভাবি অপেক্ষা করছে।”নীলা রহমান
বলেই দ্রুত পায়ে সাদাফ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেল ।নূর থেকে গেল সেই ভাবেই ।নুর কে কিছু টা ধাতস্থ হওয়ার সুযোগ দিয়ে গেল সাদাফ।
কারণ সাদাফ সামনে থাকলে নূর স্বাভাবিক হতে পারবেনা তাই আগে বের হয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর নূর ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো ও দেখলো সাদাফ ভাই নেই ।চলে গিয়েছে ।শেষের কথাটা বারবার কানে বাজছে নুরের ।
“বাহিরে তোর ভাবি অপেক্ষা করছে।”
নুর ধীরে ধীরে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে দেখল সাদাফ খুব সুন্দর করে ঘনিষ্ঠভাবে সাবার সাথে বসে আছে। হেসে হেসে কথা বলছে কই নূরের সাথে তো কখনো এভাবে হেসে হেসে কথা বলেনি সাদাফ ভাই।
নুরের যেনো দৃশ্যটি সহ্য হচ্ছে না। ভিতরে কোথাও পু*ড়ছে ভিষন।
নুরকে দেখেই সাবা বলল ,”আসো তাড়াতাড়ি এসো খাবার চলে এসেছে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
বলেই সাদাফের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো ।তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”জানো আমরা যাদের ভালবাসি তাদের আগলে রাখতে হয় যত্ন করে
রাখতে হয় ।
এই যে দেখো না তোমার সাদাফ ভাই আমাকে কত ভালোবাসে ।কেন ভালোবাসে জানো ? কারণ আমি তার যত্ন করি তার কথা শুনি তাকে ভালোবাসি তাকে আগলে রাখি।
তার জন্যই তো সে আমাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকিয়েই দেখে না।
তোমার সাদাফ ভাই যদি অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে আমি তো হিং*সা জ্ব*লে পু*ড়ে শেষ হয়ে যাই ।মনে হয় ভিতরে আমার দা*ও দা*ও করে জ্ব*লছে আমি থাকতে কেন সে আরেকজন মেয়ের দিকে তাকাবে।
ভালোবাসা মানেই হচ্ছে আমরা যাকে ভালোবাসি সে শুধু আমার ।তার জন্য আমার যা করা লাগে আমি সবকিছু করব ।তাকে ভালোবাসি বলবো তাকে যত্ন করব তাকে নিজের করে রাখবো।
যেনো অন্য কোন মেয়ে আমার ভালবাসার মানুষের আশেপাশে ঘেষতে না পারে বুঝলে ?এটাই হচ্ছে ভালোবাসা ।
তোমাকে কখনো এরকম ফিল হয় নূর?
যেমন ধরো একটা খেলনা তোমার খুব পছন্দের কিন্তু অন্য কেউ সেটা নিয়ে খেলতে চাইছে তখন কি তোমার জেলাস ফিল হয় না ?ভিতরে ভিতরে খারাপ লাগে না ?ভালোবাসা ও তাই ।যেটা আমার সেটা শুধুমাত্র আমার অন্য কেউ কেন নিবে?”
নূর মনোযোগ দিয়ে শুনলো সবার কথাগুলো ।মনে মনে ভাবলো”তাইতো যে জিনিসটা আমার সেটা আরেকজন নিয়ে নেয় তাহলে তো সেটা আমার থাকবে না ।অন্য কারো হয়ে যাবে।”
তাই সাথে সাথে বলল ,”আমার খেলনা পুতুল আমি কখনো কাউকে দিতাম না । নীলা রহমান লেখিকা।সবকিছু আমার নিজের কাছে রেখে দিতাম যত্ন করে এখন খেলি না তাও তালা মে*রে রেখে দিয়েছি কারণ এটা আমার।”
সাদাফ মনে মনে হাসলো ।চিন্তা করল হয়তো ডোজ এ কা*জ হচ্ছে ।তাই চুপচাপ রইল ।সাবা বলল ,”মানুষের ক্ষেত্রেও তাই যে মানুষটা তোমার তাকে যত্ন করে আগলে রাখতে হবে ।নিজের কাছে রাখতে হবে ।অন্য কেউ কেন নিয়ে যাবে?”
খাওয়ার পর্ব শেষ ।এরপর সাদাফ একটু বাহিরে গেল স্মো*কিং করার জন্য ।এই ফাঁ*কে সাবা নুর কে আরেকটু অন্ত*রঙ্গভাবে বুঝাতে শুরু করলো যে আসলে কা*জিনের ভালোবাসা বা একটা পুরুষ মানুষের ভালবাসা কেন আলাদা হয় !
সাবা বলতে শুরু করল,”তুমি তোমার বাবা ভাইদের ছাড়া অন্য কোন ছেলেকে নিয়ে হয়তো কখনো ভেবে দেখনি ।তাহলে তুমি বুঝতে পারতে ভালোবাসা কি জিনিস ।
ধরো এই যে তোমার ভাই সায়মন সাদাব এরা হচ্ছে তোমার ভাই বা কাজিন ।কখনো এমন হয়েছে কোন একটা ছেলে একটু স্পর্শে তোমার ভিতরে ক*ম্পন সৃষ্টি হয়েছে ?এলোমেলো করে দিয়েছিল তোমাকে।
শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যাবে মনে হবে নিঃশ্বাস নিতে পারছ না ।হৃ*দয় স্পন্দন থেমে যাবে ।চোখ খুললে তাকে দেখবে চোখ বন্ধ করলেও তাকে দেখবে ।কখনো এরকম ফিল হয়েছে কারো জন্য ?যদি হয় তাহলে সেটাই ভালোবাসা।
নূর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করল ।দেখলো চোখ বন্ধ করে শুধু সাদাফ ভাইয়ের চেহারা দেখা যায় ।সাইমন ভাইয়ের চেহারা তো নূরের চোখে আসলো না।
তারপর নূর সাথে সাথে আবার চোখ খুলে ফেলল ।সাবা জানে নূর কি মনে করার চেষ্টা করছে বা বোঝার চেষ্টা করছে কিন্তু না বোঝার ভান করে বলল ,”এই যে ধরো তুমি চোখ বন্ধ করলে যদি চোখ বন্ধ করার পর কোন একজন পুরুষ মানুষকে তুমি দেখো তাহলে তুমি তাকে ভালোবাসো ।
আর যদি তাকে ভালোবাসো তাহলে তাকে যত্ন করে রাখতে শেখো তাকে নিজের বলে দাবি করা শিখো।
সে যেন কখনো অন্য কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতে না পারে সেজন্য তোমাকেও তো ভালোবাসি কথাটা বলতে হবে ।
তোমার বুঝতে হবে তুমি তাকে কি হিসেবে চাও বন্ধু হিসেবে চাও ভাই হিসেবে চাও বাম মনের মানুষ হিসেবে চাও।
যেমন আমি চোখ বন্ধ করলে শুধু সাদাফকে দেখতে পাই তার মানে আমি সাদাফকে ভালোবাসি ।
কথাটি শুনেই সাথে সাথে নূরের চোখ জোড়া যেন জ্ব*লজ্বল করে উঠলো ।এখন আর সাবার মুখ থেকে সাদাফের কথা শুনতে পারছে না নুর তাই চুপচাপ রইলো ।কিছু বলছে না ।এক হাত দিয়ে আরেক হাতে নখ
খুটছে ।
সাবা ভালো করে অবলোকন করলো নূরের কার্যক্রম। নূরের প্রত্যেকটি অ*ঙ্গভঙ্গি নুরের প্রত্যেকটি পোসচার সব ভালো করে খেয়াল করছে ।এবং বুঝতে পারছে নূরের ভিতরে যে অনুভূতি জাগাতে চেয়েছিল তা অলরেডি জাগিয়ে ফেলেছে এখন শুধু ওর বুঝতে বাকি।
সাদাফ বাহিরে গিয়েই ফোনে লাইনে থাকে সাবা কি বলছে নুর কি রিয়েকশন দিচ্ছে তা জানার জন্য এতক্ষণ সবগুলো কথাই শুনছিল সাদাফ ।
তাই সাদাফ এখন ভিতর দিকে আসছে কারণ জানে সাবার কথা বলা শেষ ।নুরকে বোঝানো ও শেষ এখন নূরের নিজে নিজে অনুভব করতে হবে সেই অনুভূতি সাদাফ কে জানাতে হবে।
সাদাফ ভিতর এসেই বললো ,”খাওয়া শেষ তাহলে চল বাসায় যাব ।দেরি হয়ে যাচ্ছে ।সবাই চিন্তা করবে ।”
তারপর সাবা কে বলল ,” তুমি তাহলে আজকে একা একটু চলে যাও ।আমি ওকে নিয়ে বাসায় যাই ।স্কুল ছুটি হয়ে গেছে ।বাসায় সবাই চিন্তা করবে ।”
“ওকে ! ঠিক আছে।” বললো সাবা।
সাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাদাফ নুর কে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।
গাড়িতে উঠে নুর একবার আড় চোখে তাকালো সাদাফের দিকে ।হঠাৎ খুব ল*জ্জা জেকে ধরেছে নূরকে ।চোখ খুললে সামনে সাদাফ চোখ বন্ধ করলে ও সাদাফ শুধু বারবার সাদাফ কে দেখছে নুর।
তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছে নূর সাদাব ভাই আর সাইমন ভাই আলাদা ।নিজের ভাই আর সাদাব ভাই এক নয় ।সাদাফ কে কোনো পুরুষের চোখে দেখে নূর এবং সাদাফের প্রতি অনুভূতি গুলো আলাদা এখন বুঝতে পারছে নুর ।
সাদাফকে কেন ওর এত ভালো লাগে কেন সাদাফের স্পর্শে নূরের ভিতরে ক*ম্পন সৃষ্টি হয় ।কারণ সাদাফ অন্য কেও না নিজের ভালোলাগার মানুষ।
তুই ভাবতে ভাবতেই মুহূর্তে আবার নূরের মন খারাপ হয়ে গেল সাদাফের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো কিন্তু সাদাত ভাই তো সাবা আপুকে পছন্দ করে কিন্তু এদিকে যে নূর সাদাব ভাইকে ভালোবাসে তাহলে সেটার কি হবে ?
যেখানে সাবা আপু বলছে ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাখতে হয় নিজের করে রাখতে হয় কিভাবে রাখবেন নূর যেখানে সাদা ভাই নিজেই সাবা আপুকে ভালোবাসে।
তো এটাও তো সত্য সাদাফ ভাই আর সাবা আপুকে একসাথে দেখতে পারছে না নুর ।তাহলে সারা জীবন একই বাড়িতে কিভাবে দেখবে ?পাশের রুমে সাদাফ ভাই সাবা আপুকে নিয়ে এক রুমে থাকবে এটা কোনভাবেই সহ্য করতে পারবে না নূর।
সাবা আপুকে ভালোবেসে বার বার নূরের কাছে কেন আসে তাহলে??এ প্রশ্নের উত্তর সাদাব ভাই কেন দেয় না ?এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সাদাফ ভাই কে।”
সাদাফের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো নূর ।এদিকে সাদাফ জানে নূরের ভিতরে এখন অনেক প্রশ্নের ঝড় উঠেছে ।সাদাফ চায় এই প্রশ্নের সাথে নূর একাই মোকাবেলা করুক ।উত্তর খুঁজে বের করুক ।সাদাফ সব প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি। কিন্ত সময় টা নুরের ঠিক করতে হবে।
চলবে…………..
Neela Rahman
কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ
#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
#neela_rahman
#পর্ব_১৯
রাত বাজে ১২ টা।নূর ঘুমাতে পারছে না ।বারবার ঘুরে ফিরে সাদাফ ও সাবার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলোর কথা মনে পড়ছে ।আচ্ছা তাদের মধ্যে যদি সম্পর্ক থাকে এতো ভালোবাসা থাকে তাহলে সাদাব ভাই কেন বারবার নূরের কাছে আসে ।
আর ওয়াশরুমে ওইখানে কেন বলছিল নূরের কাছে ওর সব শান্তি ।এ কথার মানে কি ?একথা উত্তর নূরের জানতেই হবে না হলে ঘুম যে চোখে ধরা দিবে না।সাথে সাথে মায়ের ফোন দিয়ে ফোন লাগালো সাদাফের
নাম্বারে । নীলা রহমান।
সাদাফ বসে ছিল ফোন নিয়ে জানতো নূর আজকে ফোন দিবে।পা*গলি টা ঘুমাতে পারবে না।
প্রথমবার ফোন ধরল না সাদাফ।দ্বিতীয়বার ফোন এলে ২-৩ রিং হওয়ার পর ফোন ধরে ঘুম ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল ,”হ্যালো এত রাতে ফোন দিয়েছিস কেন?”
নুর কিছু বলছে না ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাসে শব্দ শুনতে পাচ্ছে সাদাফ।সাদাফের যেন নেশা ধরে যাচ্ছে নূরের শ্বাস প্রশ্বাসে শব্দ শুনে ।তারপরও নীরবতা ভেঙে সাদাফ বলল ,”কিছু বলবি নাকি এমনি রাতের বেলা ফোন দিয়েছিস আমাকে বিরক্ত করতে?”বললো সাদাফ।
নূর সাথে সাথে বলল ,”আমার ফোন আপনার কাছে বিরক্ত মনে হচ্ছে?”
“না মনে হচ্ছে কোকিল রাত বারোটার দিকে ফোন করে আমাকে গান শোনাচ্ছে ।কি বলবি বল ঘুমাবো আমি।”বললো সাদাফ।
নুর একটু থেমে সাদাফের কাছে জানতে চাইল,”আপনি কি সত্যি সত্যি সাবা আপুকে ভালো বাসেনা??”
সাদাফ মুচকি হাসল। জানতো এরকম প্রশ্ন করবে পা*গলীটা ।উত্তর না পেয়ে ঘুমাতে পারবে না ।সাদাফ চায় নুর জেগে জেগে চিন্তা করুক সাদাফের কথা ভাবুক।
সাদাফ বলল ,”বাসলে তোর কি ?তোর কি সমস্যা?”
নুর বুকের ভিতর খুব সাহস সঞ্চয় করে বলল ,”হ্যাঁ অনেক সমস্যা ।আপনি কাউকে ভালবাসতে পারবেন না।”
সাদাব মুচকি হেসে বলল ,”কেন পারব না ?আর আমি কাউকে ভালবাসলে কি তোকে জিজ্ঞেস করে বাসতে হবে ?”
নুর বলল ,”হ্যাঁ জিজ্ঞেস করে বাঁচতে হবে।
সাদাফ জানতে চাইলো,” কেন জিজ্ঞেস করতে হবে ?”
নুর আমতা আমতা করে বলল ,”আপনি তো গতকাল বলেছিলেন আমার পছন্দ হলে তবেই বিয়ে হবে ।ধরে নিন আমার পছন্দ হয়নি ।আমি এই বিয়েতে রাজি না ।তাই আপনি বিয়ে করতে পারবেন না।
তারপরেও যদি আপনি বাড়াবাড়ি করেন আমি বড় বাবা আর আব্বুর কাছে আপনার নামে নালিশ করব।”
সাদাফ তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসলো ।অবাক হয়ে গেল কি বলছে এই পা*গলি মেয়েটা !নালিশ করবে মানে ?
তারপর জিজ্ঞেস করল ,”নালিশ করবি ?কি নালিশ করবি তোর বাবাদের কাছে শুনি?
আর সাবার মধ্যে অপছন্দের কি আছে বল শুনি।”
নূর আমতা আমতা করে বলল ,”জানি না তবে আপনার সাথে একটুও মানায় নি।বেশি লম্বা।এতো লম্বা মেয়ে রা কিউট হয়না।আর আমি নালিশ করব আপনি প্রেম করেন। গার্লফ্রেন্ড আছে তারপরও আপনি আমার সাথে …………….বলেই নূর চুপ হয়ে গেল ।আরেকটি কথা বলতে পারল না ।সাদাফ মুচকি হাসলো ।
ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,” লম্বা হলে তো কতো সুবিধা।ছেলে মেয়ে লম্বা হবে। রোমান্স করতে সুবিধা হবে।সবাই বলবে বাহ কি লম্বা বউ।তোর মতো লিলিপুট তা বুঝবে না।”
“কি বললেন আমি লিলিপুট?? আপনার কাধ বরাবর আছি।মেয়েরা এই হাইটেই সুন্দর।মেয়ে মেয়ে লাগে।”বললো নুর।
সাদাফ আবার বললো,”থেমে গেলি কেন বল কি করেছি তোর সাথে ?আর কি বলে আমার বিয়ে আটকাবি ?আমার বিয়ের বয়স হচ্ছে আমি বিয়ে করবো তুই কিভাবে আমার বিয়ে আটকাবি।
আর শোন তুই বাবা দের কাছে গিয়ে বিচার দিলে আমিও মায়েদের কাছে বলব ,”আমার বউ দরকার ।তাদের কাজে হেল্প করার জন্য একটা লোক দরকার ।
তুই তো দিন রাত পড়ে পড়ে থাকিস আমার আম্মুদের কোন হেল্প বা কাজে আছি আসিস না ।তাই তাদের জন্য একটা ছোট্ট রাজকন্যা পরীর মত বউ এনে দিব ।যাতে তাদের হেল্প হবে তাদের সাথে গল্প করবে ।”
নূর সাথে সাথে বলল ,”হেল্প হবে মানে ?গল্প তো আমিও করি ।আমিও তো চাইলে হেল্প করতে পারব ।কেন আপনার বাহিরে থেকে লোক আনতে হবে?”
সাদাফ ধীরে ধীরে একটু ঘোর লাগা কণ্ঠে বলল ,”না হয় তুই তাদের সাথে গল্প করবি হেল্প করবি কিন্তু আমার যে প্রয়োজন গুলো আছে সেগুলো কি তুই করবি??
“কি প্রয়োজন আছে আপনার ?”জানতে চাইলে নুর সরল কন্ঠে ।
সাদাফ বলল ,”এই যে এত রাতে ঘুম আসছে না তোর সাথে ফোনে কথা বলছি এখন যদি একটা বউ থাকতো আমার রুমে আমার পাশে আমার চুলগুলো টেনে দিত ।মাথায় বিলি কে*টে দিত ।কত ভাবে সেবা যত্ন করতো ।আমিও আরামে ঘুমিয়ে যেতাম। কিন্ত কেও এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যাবে না।মাথা ব্যাথা নিয়েই ঘুমাতে হবে।তাই একটা বউ দরকার।
তুই কি আমার শিয়রের পাশে বসে আমার মাথায় বিলি কে*টে দিবি ?চুলগুলো টেনে দিবি ?মাথা ব্যথা হলে বসে বসে মাথা টিপে দিবি ?তুই তো কিছুই করবি না।”
একটু থেমে সাদাফ আবার বললো,”তুই তো আমার চাচাতো বোন যখন তখন এগুলো করতে পারবি।কিন্তু আমি তো শুধু তোর চাচাতো ভাই না ।একজন পুরুষ মানুষ ।একজন পুরুষ মানুষের আরো অনেক কিছু লাগে সেটা কি তুই করতে পারবি?
বউ তার স্বামীর চোখ দেখে বলে দিতে পারে তার কি প্রয়োজন তুই তো কখনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখিস না ?তুই তো কিছুই বুঝতে পারিস না নুর?
একটা সিম্পল প্রশ্ন তোর নিজের মনকে করতে বলেছিলাম করেছিলি ?তুই উত্তর পেয়েছিস সেই প্রশ্নের??কখনো সে উত্তরটা আমাকে দিয়েছিস ? নীলা রহমান লেখিকা।আমি কেন সবার থেকে আলাদা ?কেন তুই তোর ভাইয়ের বিয়ে আটকানোর কথা চিন্তা করিস না আমারটার কথা চিন্তা করিস?”
এদিকে রুমের ভিতর ছটফট করছে সাইমন ।আজ ৩-৪ দিন হয়ে গেল রিমা ওর সাথে যেচে গায়ে পড়ে কোন কথা বলছে না ।ও কি পড়বে না পড়বে কিছু বলছে না ।
যা ইচ্ছা তাই খাচ্ছে কিছু বলছে না ।সি*গারেট খেতে গেলেও কিছু বলছে না ।আর নেওয়া যাচ্ছে না ।সহ্য হচ্ছে না সাইমনের ।সাথে সাথে ফোন ঢুকালো রিমার নাম্বারে।
দুইবার রিং হতেই রিমা ফোন ধরল ।ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সাইমন উত্তেজিত হয়ে বলল ,”সমস্যা কি তোর রিমা ?কি হয়েছে ?সা*পের পাঁচ পা দেখেছিস ?তুই ঠিকমত কথা বলছিস না কি পড়বো না পড়বো কাপড় চোপড় ঠিক করে দিয়ে যাসনি।
কাল যে আমার প্রেজেন্টেশন শার্ট আয়রন করেছিস?? এখন বলিস না যে তুই জানিস না।পুরো সিডিউল তোর মুখস্ত।তোর জন্য বন্ধু দের সাথে আড্ডা দিতে পারিনা ক্লাসের রুটিনটা পর্যন্ত তোর মুখস্ত।”
রিমা কোন কথা না বলে সাথে সাথে ফোন রেখে দিল কথা বলবে না এ বে*য়াদব লোকটার সাথে।
এদিকে সাদাফ বারবার জানতে চাচ্ছে ,”কেন নূর প্রশ্নের উত্তর দে ?”
নূর কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না ।এতোটুকু বুঝতে পারে নুর না চাচাতো ভাই হিসেবে না ওকে শুধু মাত্র একজন পুরুষের রূপেই দেখে নূর তাই ওর ছোঁয়ায় ওর কথায় নূরের এমন অনুভূতি হয় যা অন্য কারো জন্য হয় না।
নূর তারপর চোখ বন্ধ করে খিচে উত্তর দিল ,”জানিনা কিচ্ছু জানি না ।শুধু এতটুকু জানি আপনি কাউকে বিয়ে করতে পারবেন না ।কক্ষনো না ।আপনার ঘরে অন্য কোন মেয়ে আসতে পারবে না ।
যদি আসে তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে সাদাফ ভাই আমি খুব খারাপ কিছু করে ফেলব।পরে আমার দোষ দিতে পারবেন না। আর ভালো করে শুনে রাখুন সাবা আপুর সাথে আপনার বিয়ে হবে না আপনি করতে পারবেন না ।”বলেই সাথে সাথে ফোন রেখে দিল নুর।
সাদাফ ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। জানে নুরের এখন খুব জ্ব*লছে ।ভীষণ য*ন্ত্রণা হচ্ছে নূরের ভিতরে কিন্তু এই যন্ত্রণা যে সুখময় যন্ত্রনা সেটা বুঝতে নূরের আর বেশি সময় লাগবে না ।সেদিন দূরে নেই যেদিন নূর নিজে থেকে এসে বলবে ,”ভালবাসি সাদাফ ভাই।”
সাদাফ ফোনটা পাশে রেখে মাথাব্যথা নিয়েই বিছানায় শুয়ে রইল ।সত্যি মাথা ব্যথা করছে ভীষণ ।ঘুমাতে পারছে না তাই নিজের হাত দিয়ে নিজের চুল টানতে লাগলো সাদাফ।
লাইট অফ করে ঘুমিয়ে ছিল সাদাফ। ঠিক দশ মিনিট পর হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হলো ।সাদাফ মুচকি মুচকি হাসছে জানে এটা আর কেউ না পা*গলি নূর এসেছে ।ঠিকই এখন শিওর এর পাশে বসে বসে মাথা টিপে দিবে বিলি কে*টে দিবে ।তাই চোখ বন্ধ করে রইল সাদাফ।
চলবে………….
Neela Rahman
কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৫+১৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭+৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯+১০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি গল্পের লিংক
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৭+২৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৩+২৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩১+৩২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৩+৩৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৯