Golpo romantic golpo সুখময় যন্ত্রণা তুমি

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৫+১৬


#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি

#neela_rahman

#পর্ব_১৫

বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সবার রাত দশটা বেজে গেল ।খাবার অর্ডার দিয়েছে একটু পরে খাবার পার্সেল চলে আসবে বাইরে খাওয়া দাওয়া করলে আরো সময় নষ্ট হবে তাই খাওয়া দাওয়া করেনি ।

এদিকে রিমা এবং নূর দুজনেরই মন খারাপ ।কারন জানাই।কিন্তু নওরিন আফরোজ ও পুরো গাড়িতে চুপচাপ রয়েছে ।তেলে বেগুনে জ্বলে আছে হুমায়ুন রহমান ভয়ে ও কিছু বলতে পারছে না । নীলা রহমান লেখিকা।পোল আসলেই খুলে গিয়েছে ।ভার্সিটি লাইফে কোন কোন মেয়ের সাথে একটু টাং*কি মা*রতে চেয়েছিল সবকিছু বলে দিয়েছে বন্ধু করিম মোল্লা।

এগুলো শোনার পর থেকেই চোখে চোখে বুঝাচ্ছে বাড়িতে চলো খবর আছে ।হুমায়ুর রহমান আসলেই ভয় পাচ্ছে বিবাহিত জীবনের এত বছর পার হয়ে গেল বউকে এভাবে রাগ করতে দেখেনি ।আজ কিনা কি শুনল সেই ভার্সিটি লাইফের কথা সেগুলো শুনে বউ তেলে বেগুনে জ্বলে আছে।

ফজলুর রহমান মনে মনে হাসছে চাইছিলো না ভাইয়ের পোল খুলতে কিন্তু ভাবি জোর করায় কিছু কথা বলতে গিয়েই করিম মোল্লা যে শুরু হলো তাকে আর থামানো গেল না।

সামিহা বেগম রাগ করে রয়েছে স্বামী ফজলুর রহমানের উপর ।কেন বলতে গেল শুধু শুধু ভাবি মন খারাপ হলো। রা*গ করে রয়েছে আল্লাহ জানে বাসায় গেলে কি হবে।

রাত দশটা ডিনারে টেবিলে সবাই একত্রে বসেছে ।পরিবেশ থমথমে ।সবাই কেমন চুপচাপ ।কেউ কিছু বুঝতে পারছে না ।ভয়ে জিগ্গেস ও করছে না।নওরিন আফরোজ জোরে জোরে সব প্লেট গ্লাস রাখতে লাগলো। হুমায়ূন রহমানে শুকনো ঢোক গিলছে বারবার।

সাদাফ একবার তাকালো নুরের দিকে ।দেখল নূর চুপচাপ মাথা নিচু করে খাচ্ছে ।বুঝলো কাজ হয়েছে ভিতরে ভিতরে খুব জ্ব*লছে মেয়েটা। নীলা রহমান

এদিকে সাইমন রিমার দিকে তাকিয়ে বলল ,”তরকারিটা একটু দে তো রিমা !”

রিমা চুপচাপ কোন কথা নেই ।চুপচাপ তরকারির বাড়িটা এগিয়ে দিল সাইমন কে।সায়মন তো অবাক হয়ে গেল ।এখানে দুটো কথা ওকে শোনানো উচিত ছিল কিন্তু মুখে কোন কথাই বলল না রিমা চুপচাপ রইলো।

মনে মনে ভাবলো রিমা তো এমন নয় একটা কথা বিনিময়ে দুইটা খোঁচা না মা*রলে কোন কাজ করে না।কি এমন হলো আজ রিমা এতো চুপ।

সবাই একরকম চুপচাপ খাওয়া-দাওয়া করে যার যার রুমে চলে গেল ।সাদাফ গেল নিজের রুমে যাওয়ার সময় দেখল নূর কোন কথাই বলল না ।পেছনে ফিরে একবার তাকালো না ।চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল ।তাই সাদাফ ও নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো ।

জানে নূর কষ্ট পাচ্ছে সাদাফের বিয়ের কথা শুনে কিন্তু মেয়েটা যে বড্ড অবুঝ ।কিন্তু এই বয়সে ওর এটলিস্ট এটা বোঝা উচিত সাদাফ নুরের কাছে কি চায় কেন চায় ওর প্রতি সাদাফের অনুভূতি কি ?এটা তো বুঝতে পারছে না এমনকি ও নিজে সাদাফের প্রতি কি অনুভব করে সেটাও বুঝতে চায় না।

কিন্তু অনেক সময় হয়েছে এখন বুঝতে হবে সাদাফ ওর কি ?যদি এতে ওর মন খারাপ করিয়েই ওকে বোঝাতে হয় তবে তাই সই । নীলা রহমান লেখিকা।কিন্তু সাদাফ চায় নূর যেন বুঝতে পারে সাদাফের প্রতি ওর ফিলিংস কি অনুভূতি ঠিক কি ধরনের।

রাত বাজে একটা ।নূরের কোনভাবে ঘুম আসছে না বারবার বিছানায় এদিক ওদিক করছে ।কোনভাবেই মানতে পারছে না সাদাফ ভাইয়ের বিয়ে হবে পাশের রুমে সাদাফ ভাইয়ের সাথে অন্য কোন একটা মেয়ে থাকবে ।

অন্য একটা মেয়ের সাথে সাদাফ ভাই সবসময় ঘুরতে যাবে অন্য একটা মেয়ের সাথে সাদাফ ভাই এক বিছানায় ঘুমাবে সব সময় থাকবে নূর থাকবে পেছনে পেছনে কোনভাবে এটা মানতে পারছে না নূর।

অন্য কোন মেয়েকে সাদাত ভাই মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখবে সব সময় সুন্দর বলবে শাড়ি চুড়ি গয়না অন্য একটি মেয়ের জন্য কিনে আনবে এটা কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না নুর ।চুপচাপ বিছানায় উঠে বসলো নুর।

চোখ বন্ধ করে কল্পনা করলো সাদাফ ভাই অন্য কোন মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায়।যা যা নুরের সাথে করেছে তা এখন অন্য কারো সাথে করছে।চু*মু খাচ্ছে ।নুর সাথে সাথেই চোখ খুলে ফেললো।

ছটফট করছে নুর। ভিতরে জ্ব*লছে ভিষন।কেনো এতো অস্থির লাগছে বুঝতে পারছে না নুর।রুমের এদিক ওদিক পাইচারি করতে লাগলো ।তারপর হঠাৎ মনে পড়ল ওর রুমে ওর মায়ের ফোন আছে ।

পড়ালেখার জন্য বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে মাঝেমধ্যে ফোন এনে রাখে ।এখানে নিশ্চয়ই সাদাফ ভাইয়ের নাম্বার আছে ।তাই কি যেন মনে করে সাদাফ ভাইয়ের নাম্বারে ফোন লা*গালো।

দুই তিন রিং হওয়ার সাথে সাথেই সাদাফ ফোন ধরল ।ফোন স্কিনে তাকিয়ে দেখল ছোট আম্মুর নাম্বার কিন্তু সাদাফ জানে ছোট আম্মু এত রাতে ফোন দেয় নি দিয়েছে তার ছোট্ট রাজকুমারী।

সাদাফ ফোন রিসিভ করে কানে নিয়ে বলল ,”হ্যালো এত রাতে জেগে আছিস কেন ?ঘুমাস নি কেন ?আর এই ফোন তোর কাছে কেন?”

নূর ভয় পেয়ে গেল । ফোন ধরে বাঘের মত তর্জন গর্জন শুরু করে দিয়েছে লোকটা।এতগুলো প্রশ্ন করেছে কোন প্রশ্নের উত্তর দিবে নুর?

নুর আমতা আমতা করে বলল ,”আম্মুর ফোন মাঝেমধ্যে আমার কাছে থাকে তাই আর ঘুম আসছিল না তাই এমনি ভাবলাম আপনাকে একটা ফোন দেই।”

সাদাফ মুচকি হাসলো ।কিন্তু হাসির কোন শব্দ হলো না ।কপালে এক আঙুল দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে বলল ,”তা কি মনে করে ফোন দিয়েছিস ?কিছু বলবি?”

নুর কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না ।চুপ করে রয়েছে । নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পারছে না সাদাফ।সাদাফ ও অপরপ্রান্তে চুপ করে রইল ।কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙ্গে সাদাফ প্রশ্ন করল ,”আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছিস নূর ?বলতে চাইলে বল সমস্যা নেই।”

নূর যেন এই কথাটির অপেক্ষায় ছিল ।সাথে সাথে কাল বিলম্ব না করে জিজ্ঞেস করে বসল ,”আপনি কাকে বিয়ে করবেন এক মাস পর??”

সাদাফ এবার যেন আরেকটু বেশি হাসলো ।কিন্তু হাসির কোন শব্দ হলো না ।কিছুক্ষণ পর বলল ,”যাকেই বিয়ে করি তাতে তোর সমস্যা কি? আর আমার বিয়ের কথা নিয়ে রাত একটার পর তুই আমাকে ফোন দিয়েছিস ?এই কথা তো কালকেও জিজ্ঞেস করতে পারতি ।আমার বিয়ে নিয়ে তোর এত মাথা ব্যথা কেন?”

নূরের রাগ হচ্ছে ।অভিমান হচ্ছে ভীষণ ।জ্বা*লাপোড়া হচ্ছে মনের ভিতরে ।কোনমতে ফোস ফোস করতে করতে বলল ,” আপনি বিয়ে করতে পারবেন না। কেন বিয়ে করবেন ?আপনার কি এমন বয়স হয়েছে আপনার বিয়ে করতে হবে ?পাশের বাড়িতে একটা লোকের তো 30 বছর চলে কই সে তো এখনো বিয়ে করল না।”

নূরের অভিমানী কন্ঠে কথাগুলো শুনে ভিতরে ভিতরে অনেক মজা পাচ্ছে সাদাফ কিন্তু বাহিরে কড়া কন্ঠে বলল ,”সেই লোক বিয়ে করছে না কারণ সেই লোকের চা‘‘হিদা নেই আমি বিয়ে করবো কারন আমার চা‘‘হিদা আছে ।এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।”

নূরের যেন এবার কান্না পাচ্ছে ।কান্না আটকাতে পারছে না ।নাক টেনে টেনে প্রশ্ন করল ,”তারপরও আপনাকে বিয়ে করতেই হবে?”

সাদাফ এবার একটু সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞেস করল ,”আমি বিয়ে করলে তোর সমস্যা কি নুর ?এসব কথা বলে তুই কি প্রমাণ করতে চাইছিস ?কে বিয়ে করল না কে বিয়ে করেছে তা দিয়ে তো আমাদের মাথা ব্যথা নেই ।আমার বিয়ের সাথে তো সম্পর্ক কি ?তুই কেন চাচ্ছিস না আমি বিয়ে করি সেটা বল।”

নূরের এবার রা‘গ হলো ভীষণ রা‘‘গ হলো ।বিয়ে যখন করবে অন্য কাউকে তাহলে নূরের সাথে এতদিন এগুলো কি করেছে ?তাই নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে বসলো ,”এমনি আমি চাইনা আপনি বিয়ে করেন ।এটা আমার সহ্য হবে না ।

আপনার রুমে অন্য একটা মেয়ে থাকবে। আপনি অন্য একটা মেয়ের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন আপনি অন্য কাউকে সুন্দর বলবেন অন্য কাউকে নিয়ে আইসক্রিম খাওয়াবেন চটপটি খাওয়াবেন অন্য কাউকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন শাড়ি কিনে দিবেন চুড়ি কিনে দিবেন আমি এসব রংঢং দেখতে পারবো না এই বাড়িতে।

আপনার রুমে অন্য কোন মেয়ে ঢুকতে পারবে না ব্যাস এটাই শেষ কথা।”

নূরের কান্না মাখা কথাগুলো শুনে সাদাফ ভীষণ মজা পেল ।সাদাফ চাইছে নুর নিজে থেকে বুঝতে পারুক সাদাফ ওর জন্য কি ?বোকা মেয়েটা জেলাস তো হচ্ছে কিন্তু জেলাসির কারণটা এখনো বুঝতে পারছে না ?শুধু চাইছেনা সাদাফের রুমে কেউ থাকুক ।কিন্তু সাদাফের মনে যে নূর আছে সেটা কি কখনো বুঝতে পারবে মেয়েটা?

সাদাফ আর একটু খেপানোর জন্য বলল ,” ঠিক আছে শাড়ি চুরি আমি তোর জন্য কিনে দিবো ।সুন্দর আমি তোকে এ বলব ।আইসক্রিম ফুচকা খাওয়ানোর সময় আমি তোকে ও নিয়ে যাব এখন খুশি ?মাঝেমধ্যে তুই আমার রুমে আসতে পারবি আমি আমার বউকে বলে দিব তোকে যেন না না করে রুমে ঢুকতে।”

নূর এবার ভীষণ রাগের মাথায় বলে বসল ,”তারপর আপনি বিয়ে করবেন ?”

সাদাফ বললো ,”হ্যাঁ বিয়ে শুধু সুন্দর বলার জন্য আর আইসক্রিম ফুচকা খাওয়ানোর জন্য করে না ।বিয়ে করার আরো অনেক কারণ থাকে ।সেই সব কারণের জন্য বিয়ে করতে হবে কারণ তোর সাথে তো আর এইসব করতে পারবো না তুই তো আমার রুমে রাতে থাকতে পারবি না ।

হয়তো আসবি যাবি ঘুরে ফিরে চলে যাবি কিন্তু আমার রুমে সারাক্ষণ থাকতে পারবি না।বিয়ে করলে বউ আমার সাথে রাতে ঘুমাবে ।আমার সাথে ঘুম থেকে উঠবে ।আমার সাথে সাথে থাকবে এজন্য বউ দরকার ।বুঝতে পেরেছিস এবার ?এবার ঘুমা।

আর হ্যাঁ সামনের মাসে বিয়ে করবো এটা ফাইনাল ।এটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখিস ।আর এই কয়দিনের মধ্যে উত্তর খুঁজে বের কর আমার বিয়ে নিয়ে তুই এত জেলাস কেন ।উত্তর খুঁজে তারপর আমাকে বলিস।

কিন্তু সামনের মাসে যে বিয়ে হবে এটা ফাইনাল। বউ ছাড়া আমি আর এক রাতে ঘুমাবো না।রাতভর আদ*র করার জন্য বউ দরকার। তুই তো সামনে গেলেই ছাড়ুন ছাড়ুন বলে চলে যাস এ জন্য বউ দরকার।”

কথাটা বলেই সাথে সাথে সাদাফ ফোন কেটে দিল ।আর খুব হাসলো মনে মনে ।এই মেয়েটাকে এভাবেই শা*য়েস্তা করতে হবে এ ছাড়া আর কোন পথ নেই।

চলবে………………….

Neela Rahman

কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ

#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি

#neela_rahman

#পর্ব_১৬

পরের দিন সকাল ।নাস্তার টেবিলে বসে সবাই ।আজকে নুর এখনো নামে নি।রিমা চুপচাপ।সায়মন বুঝতে পারছে না কি হল ।গাজীপুর থেকে ফেরার পর সায়মনের কোন ব্যাপারে আর নাক গলাচ্ছে না রিমা ।

এমনকি আজকে কি পড়ে বের হবে কি খাবে কোথায় যাবে কোন ব্যাপারে কোন খোঁজ খবর নেই রিমার।সায়মন তো এটাতে অভ্যস্ত ছিল সকালে উঠে জানতে পারতো আজকে তাকে কি পড়ে যেতে হবে ।

কারণ রিমার পছন্দ না হলে সেই কালারটা পর্যন্ত পড়তে পারতো না আর একসাথে বের হয়ে ওকে কলেজ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসতে পারত না।

গতকাল রিমা কলেজে যায়নি ।আজকে যাবে তবে একবারও বলেনি কোন কালারের শার্ট বা গেঞ্জি পড়বে কোন ইনস্ট্রাকশন দেয়নি সাইমনকে ।সাইমন অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো রিমার কথা। নীলা রহমান

এদিকে রিমা চুপচাপ নাস্তায় মনোযোগ ।সায়মন কি করছে না করছে সেদিকে মনোযোগ নেই ।অভিমান হয়েছে খুব ভাই বোন ঠিকই জানে ওর গার্লফ্রেন্ড আছে প্রেম করে অথচ রিমা কোন শার্টটা পড়বে সেটা ঠিক করে দিলেও কার সাথে প্রেম করবে সেটা জানার অধিকার রিমার হলো না।আর গার্লফ্রেন্ড কেন থাকতে হবে ?

রিমা তো সব কাজই করে দেয় ওর।সব জায়গায় ঘুরতে যায় চটপটি ফুচকা আইসক্রিম সব ওকে নিয়েই খায় ।কোথাও বেড়াতে গেলে ওকে নিয়ে যায় । নীলা রহমান লেখিকা।ও কি পড়বে না পড়বে কি খাবে সব কিছু ঠিক করে দেয় রিমা ।তাহলে গার্লফ্রেন্ড ওর জীবনে প্রয়োজন কি ছিল ?

আর গার্লফ্রেন্ডকে সময় বা দেয় কখন ?ওর সাথে থাকে সারাসারাক্ষণ তাহলে কতটা চুপিচুপি কাজ করেছে সাইমন ভাবতে ভীষণ অভিমান হলো রিমার।

অবচেতন মনে এসব ভাবতে লাগলো রিমা।

এদিকে সাদাফের চোখ জোড়া শুধু খুঁজে চলেছে নূরকে ।নূর এখনো নামেনি ।মনে মনে ভাবছে সাদাফ,” কালকে তাহলে একটু বেশি বলে ফেলল ?মেয়েটা এখনো নামছে না কেন ?কিন্তু ওর সাথে যে একটু কঠোর হওয়া জরুরী যতক্ষণ পর্যন্ত ও ওর ভিতরে ইনার ফিলিংস বুঝতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত সাদাফ কারো সাথে বিয়ের কথাও বলতে পারছে না।এগোতে পারছে না।”

নওরিন আফরোজ মোটেও সহজ নন ।উনি জোরে জোরে প্লেট চামচ গ্লাস টেবিলের উপর রাখতে লাগলেন ।সামিহা বেগম রান্না ঘরের দিকে গিয়ে বললেন ,”ভাবি ছেড়ে দাও না ।কি না কি করেছে ভাইয়া তখন ছিল আনমেরিড ভার্সিটিতে পড়তো একটু দুষ্টুমি ফা*ইজলামি করতেই পারে ।এখন কি সেইরকম ?

তোমাকে বিয়ে করার পর কি সে কখনো অন্য কোন মেয়েকে টি*জ করেছে ?ফা*জলামি করেছে ?তাহলে এখন কেন এসব নিয়ে ঝগড়া করছো ?ভাইয়ার সাথে বাচ্চারাও দেখছে মান সমান থাকবে বল বাচ্চারা জানলে?”

নওরিন আফরোজ সামিহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”শুরু হয়ে গেল না তোর চা*মচামি ভাইয়ের ?তুই কি বুঝবি আজকে যদি ফজলুরের সম্পর্কে বলা হতো তাহলে তুই বুঝতি আর বাচ্চারা জানুক বাপে কি কি গু*ল খে‘‘লিয়ে এসেছে।

আর ওনার সম্পর্কে উনার এই র*ঙ্গলিলা সম্পর্কে আমার আরেকজনের কাছ থেকে কেন জানতে হবে ?বিয়ের প্রথম দিনেই তো বলতে পারত যে আমি এরকম এরকম করেছি এরকম এরকম হয়েছে তাহলে তার মানুষের কাছ থেকে আমার শুনতে হতো না ।

আমি তো কত গর্ব নিয়ে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াতাম আমার হাজব্যান্ড শুধুমাত্র আমাকে ভালবাসে জীবন আর অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখেনি।

এখন তো দেখছি বান্ধবীর নাম করে ইনা মিনা ডিকা তার জীবনে কম ছিল না।”

সামিহা বেগম হাসলেন ।হেসে বললেন ,”রাখো না ভাবি ভাইয়া কিন্তু অনেক অনুতপ্ত নিশ্চয়ই রাতভর তোমার কাছে মাফ চেয়েছে ।”

নওরিন আফরোজ চুপ করে রইলেন ।মনে মনে স্মরন করতে লাগলেন রাতের কথা।

রাতে ঘরে ঢুকেই আমতা আমতা করে হুমায়ন রহমান বলেছিলেন ,”নওরিন প্লিজ ওইসব তো তখন ভার্সিটি ছিলাম ।২০ / ২১ বছর বয়স ছিল ।তখন কি করেছি না করেছি সেটা নিয়ে সংসারে গে*ঞ্জাম করলে চলবে?

দেখো ওই সময় কি করেছে তা নিয়ে তার মাফ চাইতে পারবো না তবে তোমাকে বলা হয়নি সেজন্য আমি সরি ।তবে আমি কিন্তু কারো সাথে প্রে‘‘ম করিনি ওরা আমাকে পছন্দ করত আমি জাস্ট ওদেরকে না করিনি ।ও একটু হাই-হ্যালো করেছি এ পর্যন্তই কিন্তু তুমি কিন্তু আমাকে চরি*ত্রহীন ট্যাগ লাগাতে পারো না নওরিন।”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাস বলে ফেললেন হুমায়ূন রহমান।

নওরিন আফরোজ কথাগুলো ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।

নওরিন আফরোজ সামিহা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বললেন ,”হয়েছে অনেক ওকালতি এখন এই ডেজার্ট টা ধর টেবিলে নিয়ে যাই আর নূর নামছে না কেন ?”

বলেই সাথে সাথে উপরের দিকে তাকিয়ে ,”নূর এই নূর নাম তো মা ।নামছিস না কেন ?তোকে তো আমি সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে এলাম ?এখন তো তুই ঘুমাচ্ছিস না ।তাড়াতাড়ি নাম ।”

জোরে জোরে বলতে বলতে টেবিলে কাছে চলে আসলেন নওরিন আফরোজ।এসেই হুমায়র রহমানের দিকে তাকিয়ে ঠোট ভেংচি কেটে সবাইকে ডেজার্ট সার্ভ করতে লাগলো ।

তারপর আবার উপরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”নুর নামছিস না কেন তাড়াতাড়ি নাম মা দেরি হয়ে যাচ্ছে ।সাদাফ চলে যাবে তো।নাস্তা খেয়ে তাড়াতাড়ি স্কুলে যেতে হবে তো আয়।”

নুর চুপচাপ সিড়ি বেয়ে নাম ছিল ।কারো দিকে তাকায়নি চুপচাপ এসে টেবিলে বসে হালকা একটু নাস্তা করে চুপচাপ বসে রইল ।সাদাফ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো সবকিছুই ।মাথা তুলে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত ।অভিমান মনে হয় একটু বেশি হয়ে গেছে কিন্তু এটা ওর প্রাপ্য ।ওর বুঝতে হবে ওর মন কি চায়। নীলা রহমান

নুর রেডি হয়ে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে ।সাদাফ পার্কিং থেকে গাড়ি বের করে নূরের কাছে নিয়ে এসে নূরকে ইশারা করে বলল ,”ভিতরে ঢুকে বসতে ।”

নূর গাড়িতে ভিতরে ঢুকে বসলো ঠিকই কিন্তু তাকিয়ে রইল জানালা দিয়ে অন্য পাশে ।সাদাফের দিকে ফিরেও তাকালো না।

সাদাফ নুর কে আরেকটু খেপানোর জন্য বলল ,”স্কুলের পর রেডি হয়ে গেটে দাঁড়িয়ে থাকিস আজকে তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাব ।”

নুরের কৌতুহল হচ্ছে অনেক জানার জন্য তারপরও কৌতুহল দমিয়ে হালকা ভাবে জিজ্ঞেস করল ,”কোথায় ?”

সাদাফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো ,”আজকে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিব।

এক মাস পর যে তোর ভাবি হবে তাকে আগে থেকে দেখবি মিশবি ।তোরা ওকে দিলেই তো সবকিছু হবে।”

বলেই আর নূরের দিকে তাকালো না সাদাফ।গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিল ।তাকালে দেখতে পারতো একজোড়া চোখ অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে ।

সাদাফের দিখে তাকিয়ে ছল ছল নয়নে নূর ভাবতে লাগলো ,”কেন সাদাফ ভাইকে বিয়ে করতে হবে ?কি এমন বয়স হয়ে গেছে?

বিয়ে যখন করবে তাহলে নুরের সাথে এসব কি ছিলো।নুর কে চায়না সাদাফ ভাই আর। ভালো বাসিও তো বলেনি কোনদিন। গার্লফ্রেন্ড ছিলো তাহলে চু*ম্মা চা*টি কেনো করতো? সাদাফ ভাই তো নুর কে কোন কথা বলেনি।

কি অধিকার আছে নুরের সাদাফ ভাইকে বিয়ে করা থেকে আটকানোর ?তবে কি নূরকে চোখের সামনে সাদাফ ভাইকে বিয়ে করতে দেখতে হবে ?সাদাফ ভাই নতুন বউ নিয়ে বাড়িতে ঢুকবে এটাও দেখতে হবে? নতুন বউ নিয়ে সাদাফ ভাই নিজের রুমে থাকবে সেই রুমে ঢুকতে হলে নূরের এখন থেকে অনুমতি লাগবে ।কথাগুলো ভাবতে পারছে না নূর ।

সাথে সাথে ছলছল চোখ দিয়ে মনে হয় দু এক ফোঁটা অস্রু গড়িয়ে পড়ল ।নুর সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই স্কুল চলে আসলে নূর সাদাফের সাথে আর কোন কথা বলল না ।দরজা খুলে বের হয়ে হনহনিয়ে চলে গেল স্কুলের ভিতর।

সাদাফ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো নূরের জাওয়া ।লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখেছিল নূরের চোখ থেকে পানি পড়ছে ।কিন্তু সাদাফ আগবাড়িয়ে তা মুছতে যায়নি বা কিছু বলেনি ।নূরকে বোঝাতে হবে নূর মনে মনে কি চায় ?

সাদাফের প্রতি নুরের অনুভূতি কেমন ?নিজে থেকে এসে বলতে হবে নূর কি চায়। কেনো অন্যান্য কাজিনদের মতো সাদাব কে দেখেনা ?সাদাফ কে ভালোবাসে এটা নূরে নিজের মুখে স্বীকার করতে হবে।

চলবে……………

Neela Rahman

কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply