Golpo প্রণয়ের ব্যাকুলতা

প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৩


প্রণয়েরব্যাকুলতা সাদিয়া পর্ব১৩

  • ভালোবাসা কিসের ভালোবাসা?
  • কেন আপনি বুঝতে পারছেন না? নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করছেন।
  • তোমার সাথে আমি ভান করতে যাবো কেন আজব।
  • আমি ভালোবাসি আপনাকে। শুনেছেন ভীষণ ভালোবাসি।
  • কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না।

এক পলকে থমকে গেল মৌমিতার দুনিয়া। পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেল। বারবার কানে শুধু একটা কথাই বাজছে ” আমি তোমাকে ভালোবাসি না। “

পা দুটো উঁচু করে দুই হাত দিয়ে তাদের শার্টের কলার আঁকড়ে ধরলো মৌমিতা। চেঁচিয়ে বলল – কেন মিথ্যে বলছেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন। আপনার ঐ চোখে আমি আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।

তাজ মৌমিতার হাত থেকে নিজের শার্টের কলার ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল – ভুল দেখেছো তুমি। আমি তোমাকে ভালোবাসি না, আর না কখনো বেসেছি।

আবার চেঁচিয়ে উঠলো মৌমিতা, বলল – ভালোই যদি না বাসেন তাহলে আমাকে কেন ভালোবাসা শিখালেন। কেন আমার মরুভূমির মতো মনটায় ভালোবাসার ফুল ফোটালেন। সেদিন আমাকে চু’মু দেওয়া। আমার জন্য অস্থির হওয়া, আমাকে বারবার ছেড়ে না যাওয়ার কথা বলা এগুলো কি সব মিথ্যে ছিল ?

  • হ্যা মিথ্যে ছিল, আমি তোমাকে জাস্ট বন্ধু ভেবেই এগুলো করেছি কিন্তু তুমি তো অন্য কিছুই ভেবে নিয়েছো।

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো মৌমিতা, বলল – বন্ধর সাথে এসব করা যায় জানতাম না তো। যাক ভালোই বললেন , আজ আপনি আমার চোখ খুলে দিলেন। আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো । ধন্যবাদ আপনাকে।

  • মৌ…….

হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিল তাজকে। শক্ত কন্ঠে বলল – আর কিছু বলতে হবে না আপনাকে।‌ সবটা বুঝতে পেরেছি আমি।

পা থেকে টেনে হিচড়ে নুপূর জোড়া খুলে ফেলল মৌমিতা। ছুড়ে মারলো তাজের মুখের উপর। দৌড়ে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। তাজ কুড়িয়ে নিল নুপূর জোড়া। দৌড় লাগালো মৌমিতার পিছনে। দৌড়ে সিঁড়ি থেকে নামার সময় পা পিছলে পড়ে গেল মৌমিতা। পায়ে ব্যথা পেয়েছে, হাতের কিছুটা ছিলে গেছে। আঁতকে উঠলো তাজ। এগিয়ে গেল মৌমিতার দিকে। মৌমিতর হাতটা ধরতে নিতেই মৌমিতা শক্ত কন্ঠে বলল – ছোঁবেন না আপনি আমাকে। আপনার সেই অধিকার নেই।

একা একাই উঠে দাঁড়ালো সে। খোড়াতে খোড়াতে সিঁড়ি থেকে নেমে গেল। রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালো রিকশার জন্য। রিকশাও পাচ্ছে না আজ। তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো মৌমিতা। রাস্তার পাশ ধরে আনমনেই হাঁটা শুরু করলো সে।

তাজের কাঁধে হাত রাখলো রাদীফ। তাজ মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। রাদীফ দীর্ঘশ্বাস বলল – মেয়েটার কষ্ট কমানোর জন্য তোকে বললাম সত্যিটা বলে দিতে তুই তো মেয়েটাকে সেই কষ্টটাই দিলি।


অন্ধকার রুম, হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে তাজ। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো, হাত কেটে রক্ত ঝড়ছে। রুমের সব আসবাবপত্র ভাঙচুরে মাটিতে পড়ে আছে। ছেঁড়া বালিশগুলোর সাদা তুলো মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মাথা চেপে উঠে দাঁড়ালো তাজ। অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে তার । মনে হচ্ছে কেউ কলিজাটা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঐ মেয়েটাকে ছাড়া ও একদম থাকতে পারবে না। ঐ মেয়েটাকে যে ওর ভীষণ প্রয়োজন। আজ মৌমিতাকে যতটা না কষ্ট দিয়েছে তার অধীক কষ্ট হয়েছে ওর নিজের। নিজেকে এই মুহূর্তে বদ্ধ উন্মাদ মনে হচ্ছে। হুট করেই একটা সিদ্ধান্ত নিল তাজ। সে মৌমিতাকে ছাড়বে না, কিছুতেই ছাড়বে না। একটা দিনে ও বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে যে মৌমিতাকে ছাড়া ওর বেঁচে থাকা অসম্ভব। ও মৌমিতাকে ওর অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবটা বলবে । সব মেনে ওর সাথে থাকলে ভালো না হয় জোর করে রেখে দিবে নিজের বন্দীনি বানিয়ে।


কলেজ গেটে দাঁড়িয়ে আছে তাজ। আজ আর বইয়ে মুখ গুজে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসেনি। সকাল সকাল কলেজে এসেই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে। মৌমিতা গেট থেকে ঢুকলেই যেন তার সাথে দেখা হয়। মৌমিতার সাথে কথা বলে ক্ষমা চেয়ে নিবে, সবটা ঠিক করে নিবে সে । তবুও মৌমিতাকে তার কাছ থেকে দূরে যেতে দিবে না , এক বিন্দু দূরেও না। কাল সারারাত ঘুম হয়নি তাজের, সকালের মুখ দেখার আশায় বিছানায় বসে ছিল ঘাপটি মেরে। কখন সকাল হবে আর কখন মৌমিতার সাথে কথা বলবে।

তাজের আকাশ পাতাল ভাবনার মধ্যেই মৌমিতা আর নীরা গেট থেকে ঢুকলো। মেয়েটার মুখটা একদিনেই কেমন চুপসে গেছে, চোখ গুলো ফোলা ফোলা। নিশ্চই কাল সারারাত কেঁদেছে। তাজ এগিয়ে গিয়ে মৌমিতার সামনে দাঁড়ালো, শান্ত কন্ঠে বলল – মৌ…….

মৌমিতা কোনো পাত্তা দিল না। পাশ কাটিয়ে চলে গেল তাজের। একবার ফিরেও তাকালো না তাজের দিকে। ছ্যাত করে উঠলো তাজের কলিজাটা। পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। তবে কি মৌমিতা ওর সাথে আর কথা বলবে না? আর ভালোবাসবে না ওকে? ও কি কাল একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছিল মেয়েটাকে। তাজ মনে মনে বলে উঠলো – না না মৌমিতা আমার, শুধু মাত্র আমার। আমি ওকে আমার থেকে দূরে যেতেই দেব না। ভুল যখন আমি করেছি সেই ভুলটাও আমিই সুধরে নেব।

ক্লাস টাইম শেষ। মৌমিতার ক্লাসের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে তাজ। আজ আর সে লাইব্রেরীতে গিয়ে বসে থাকেনি। কারন সে জানে মৌমিতা তার উপর তীব্র অভিমান পুষে রেখেছে। ক্লাস শেষেই মৌমিতা আজ আর তার খোঁজে লাইব্রেরীতে ছুটে যাবে না। অপেক্ষা করতে করতে ঠোঁট কামড়ে সামনে তাকালো তাজ। সাথে সাথেই বুক থেকে তীব্র ব্যথা উঠে গেল। মৌমিতা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসছে। ছেলেটাও হাসছে। ওদের হাসি যেন তাজের শরীরটায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখনই এখানেই ছেলেটাকে চড়িয়ে গাল দুটো লাল করে দিতে। রাগ উঠে যাচ্ছে ভীষণ। নিজেকে সংযত করতে হাতের তালু মুষ্টিবদ্ধ করে নিল তাজ। হঠাৎ ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালো তাজ। রাদীফ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। তাজের চাওনি দেখেই ঠোঁট থেকে হাসি উবে গেল রাদীফের। উঁকি মেরে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো মৌমিতা একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। ওহ তাহলে এই ব্যাপার। এই জন্যই রেগে আছেন জনাব।

রাদীফ মিনমিনে গলায় বলল – ওরা প্রজেক্টের ব্যাপারে কথা বলছে।

ভ্রু কুঁচকে এলো তাজের, চোখ দুটো ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল – মানে?

জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল রাদীফ, মেকি হেসে বলল – আমি ক্লাসে গ্রুপে গ্রুপে ভাগ করে ওদের একেক গ্রুপকে একেক প্রজেক্ট করতে দিয়েছি। তো ঐ ছেলেটা ওদের গ্রুপেই পড়েছে।

কটমট করে রাদীফের দিকে তাকালো তাজ। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – সংসার পাতার আগেই তুমি আমার সংসারে আগুন লাগানোর পাঁয়তারা করছো? তুমি তো দেখছি ঘর শত্রু বিভীষণ কাকাই।

তাজ রাদীফের দিকে একবার তাকিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মৌমিতা আর ছেলেটার দিকে। মৌমিতা এখনও ছেলেটার সাথে দাঁত কেলিয়েই যাচ্ছে। কি এমন কথা বলছে যাতে মুখ থেকে হাসি যেন সরছেই না। ইচ্ছে তো করছে দাঁতগুলো সব ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো করে ফেলতে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না তাজ। ধপধপ পা ফেলে মৌমিতার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মৌমিতা ভাবলেশহীন সে একবারও তাজের দিকে তাকালো না। সে এখনও হেসে হেসে ছেলেটার সাথে কথা বলেই যাচ্ছে ‌।

তাজের রাগ আকাশ ছুঁই ছুঁই। এই টুকু পুঁচকে মেয়ে কিনা ওকে ইগনোর করছে। তাজ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অগ্নী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ভয়ে চুপসে গেল ছেলেটা। সে ইতমধ্যে তাজের রাগ সম্পর্কে কিছুটা হলেও জেনেছে। ছেলেটা মৌমিতার কাছ থেকে কোনো রকম বিদায় নিয়ে চলে গেল। মৌমিতাও পা বাড়ালো বাসার উদ্দেশ্যে। পিছন থেকে খপ করে মৌমিতার হাতটা ধরলো তাজ। মৌমিতা তাজের দিকে না তাকিয়েই বলল – হাতটা ছাড়ুন।

হাতটা ছাড়লো না তাজ, আরও শক্ত করে হাতটা ধরলো। অপরাধীর কন্ঠে বলল – তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

হাতটা ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিল মৌমিতা। রুক্ষ কন্ঠে বলল – কিন্তু আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই।

  • স্যরি।

ভ্রু কুঁচকে তাকালো মৌমিতা, বলল – কেন?

  • আমার কালকের ব্যবহারের জন্য স্যরি। আমি বড় একটা ভুল করে ফেলেছি, প্লিজ মাফ করে দেও আমাকে।

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো মৌমিতা, বলল – আপনি কোনো ভুল করেননি। আপনি তো শুধু সত্যি বলেছেন। ভালোবাসা তো আর জোর করে হয় না। আপনি ভালো মানুষ আমার সাথে একটু দু চারটা ভালো ব্যবহার করেছেন আমিই বোকার মতো সেটা ভালোবাসা হিসেবে ধরে নিয়েছি। আমার তো আপনাকে আরও ধন্যবাদ দেওয়া উঠিৎ আপনি আমার চোখে আঙুল দিয়ে আমার ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন। আর স্যরি আমি আপনাকে অনেক বিরক্ত করেছি, মাফ করবেন। আপনাকে আর আমি কখনও বিরক্ত করবো না। ভালো থাকবেন।

  • মৌ……

কোনো কথা শুনলো না তাজের। লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল মৌমিতা। চোখে তার মুক্তর দানার মতো পানি চিকচিক করছে। অনেক কষ্টে এতক্ষন তাজের সামনে নিজের কান্না আটকে রেখেছিল সে। বুকটার মধ্যে তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply