Golpo romantic golpo ডেনিম জ্যাকেট

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৭


#ডেনিম_জ্যাকেট — পর্ব ৭

#অবন্তিকা_তৃপ্তি

— ‘কাব্য ভাই; ঊর্মি আপু ভীষণ সুইট না?’

কুহু কথাটা বলে দারোগা পণ্ডিতের মতো কাব্যের মুখের আদল পড়ার চেষ্টা করলো! কাব্য ভীষণ স্বাভাবিক; একহাতে গাড়ি ড্রাইভ করছে, মুখে চুইংগাম; চিবুচ্ছে সেটা একগালে রেখে। জবাব এলো বেশ রয়সয়েই;

‘হু!’

ছোটলোকি; এক বাক্যের অতি সাধারণ এক জবাব। কুহুর ওতে পোষালো না; মনও ভরলো না এমন উত্তরে!

ও ধৈর্য হারিয়ে; ফের জিজ্ঞেস করলো;

— ‘আপুকে পাবে সে লাকি হবে অনেক। কি বলেন?’

কাব্য ভ্রু কুচকে এইবার তাকালো; মুখের চুইংগাম চিবুচ্ছে না আর!

ভ্রু কুচকে কুহুর দিকে চেয়ে বললো;

— কার বউ করে আনতে চাইছিস? মতলব কি তোর?

কুহু সঙ্গেসঙ্গে নিজেকে শুধরে; কাব্যকে সন্দেহের অবকাশ না দিয়ে বললো;

— ‘কারোর বউ না। আমি তো এমনিতেই বললাম।

কাব্য আর কথাই বাড়াল না এই ব্যাপার! চুইংগাম আরাম করে চিবুতে চিবুতে গাড়ি ড্রাইভ করছে। ঊর্মি আপুর কথা শোনে কাব্যের মুখের স্বাভাবিক আদল দেখে খটকা যা ছিলো; সব ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল। কুহু এইবার ওর জমিয়ে রাখা শেষ প্রশ্নটা করে বসলো;

—আ. .আপনার তাকে কেমন লাগে?

কুহুর বুক কাপতে লাগলো প্রশ্নটা করার পর। কাব্য ভাই যদি ভালো কিছু বলেন; আজ এইখানেই মরে যাবে কুহু। কাব্য ভাই শুধু; এবং শুধুমাত্র কুহুর হবেন; অন্য কারোর না!

কুহু চোখ-মুখ খিছে কাব্যের দিকে চেয়ে রইল অপলক! কুহর মনে শান্তির ফোয়ারা বইয়ে দিয়ে কাব্য পজিটিভ তেমন কিছুই বলল না! বরং নির্বিঘ্নে ড্রাইভ করতে করতে জবাব দিল;

— কেমন লাগবে আবার কি? ব্যাচমেট হিসেবে যেমন লাগার দরকার, তেমনি লাগে।

কুহুর হেসে ফেলল নিঃশব্দে! মুখটা গাড়ির জানালার পাশে ফিরিয়ে বুকের বা-পাশ চেপে মৃদুমৃদু হাসতে লাগলো! কাব্য ভাই বোধহয় সেই হাসি দেখেননি কখনোই! কুহুর এই মৃদু; চাপা খুশির হাসি ভীষণ নজরকাড়া দেখতে লাগছিলো। কাব্য ভাই ওই হাসি দেখলে আজই; সম্ভবত গাড়িতেই নিজের মনের খেই হারিয়ে বসতেন। আফসোস. .কাব্য ভাই চোখ থাকতেও অন্ধ!

কুহুর মনটা উড়ছে তখনও! কাব্য ভাইয়ের সম্পর্ক নেই ঊর্মি আপুর সাথে। খুশিতে মনটা আগডুম-বাঘডুম করে নেচে উঠল। প্রচুর ক্ষুধা লেগেছিল সেই কখন। সেই সকালে বেড়িয়েছে; আর বিকেলের দিকে বাসায় ফিরছে। দুপুরে শুধু সিঙারা খেয়েছিল— তারপর আর কিছু খাওয়া হয়নি। এতক্ষণ টেনশন ক্ষুধা ভুলে থাকলেও; এখন আর থাকা যাচ্ছে না।

কুহু পাশেই কেএফসির দোকান দেখে ফিরে তাকিয়ে বললো;

— কাব্য ভাই. .বার্গার কিনে দিবেন একটা? ক্ষুধা লাগছে।

কাব্য গাড়ি চালাতে চালাতে পাশের কেএফসির দোকান দেখল একবার। তারপর কেএফসিতে না থামিয়ে অন্য এক ফাস্টফুডের দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে; সেখান থেকে একটা বার্গার কিনে এনে কুহুর দিকে এগিয়ে দিয়ে আবার ড্রাইভ এর সিটে বসলো। কুহু বুঝতে পেরেছে. .কাব্য ভাই কেন কেএফসিতে যাননি। অবশ্য ফিলিস্তিনের কথা ওরও কেন মনে ছিলো না . ..মাথায় মারা উচিত ওর!

_______________

শুক্রবার সকালে কাব্যের ছুটি ছিলো! ভার্সিটি নেই; টিউশন নেই তেমন। তাই সারাদিন ঘরে বসেই ছিলো ও। আজ বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলার প্ল্যান করেছে পাড়ার মাঠে। পাড়ায় খেলা হয়না বহুকাল। ভার্সিটির স্পোর্টস টিমে থাকার দরুন ওদিকে মনোযোগ আজকাল বেশি। আজকাল ছুটি আছে দেখে পাড়ার পোলাপানও চেপে ধরেছে. .কাব্যকে এক ম্যাচ খেলাই লাগবে ওদের সঙ্গে। কাব্য তাই বহুদিন পর সিংকের উপর থেকে ক্রিকেট ব্যাটটা বের করে এটাকে ঝালাই করছিল।

ক্রিকেট খেলা হয়না বহুকাল।তাই ব্যাডের অবস্থা যাচ্ছেতাই! কাব্য ব্যাট পরিষ্কার করে বল ঠিক করছে স্কচটেপ দিয়ে। এইসময় দরজায় টোকা পরলো! কাব্য বল রেখে প্যান্টের ময়লা ঝেরে উঠে দরজা খুলে দিল। ওপাশে সাদাত চাচ্চু দাড়িয়ে আছেন। কাব্য তাকে দেখে নম্র গলায ডাকল;;

— চাচ্চু! আসুন!

সাদাত অমায়িক হেসে ভাতিজার দিকে চেয়ে বললেন;

— ছুটির দিনে; ভাবলাম তোমাকে দেখে যাই। আজকাল তো ঘরেই থাকো না।

কাব্য দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো!

— কাজ থাকে চাচ্চু। ভার্সিটিতেই দিন অর্ধেক কেটে যায়: তারউপর টিউশন আছে।

সাদাত কাব্যের ঘরে ঢুকে বিছানায় বসেন। ভীষণ গোছাল এক রুম। কবিতার মুখে কাব্যের প্রশংসা প্রায়ই শোনা যায়। কাব্য নিজেরঘরে নাকি নিজেই গোছিয়ে রাখে। ছেলে হয়ে ও এমন; আর ওনার মেয়েটা হয়েছে ফাঁকিবাজ। এখনো ওদের মায়ের ঘর গুছিয়ে দেওয়া লাগে। কাব্যের রুমের ছোট একটা পড়ার টেবিলে কয়েকটা ফিলোসফি ইংলিশ বই!

পড়ার টেবিলে আইপ্যাড চার্জে দেওয়া; সামনেই একটা মোটা ৫০০ পেইজের খাতা! খাতার পাশেই একটা হাতে বানানো অর্ধেকটা বিল্ডিংয়ের মডেল। মেঝেতে একপাশে ক্রিকেট ব্যাট রাখা; তার পাশে অর্ধেক স্কচটেপ করা বল; বল নিয়েই ব্যস্ত ছিলো হয়তবা।

কাব্য গিয়ে সাদাতের সামনে চেয়ারে বসলো। চাচা-ভাতিজা কখনো ওভাবে মুখোমুখি হয়নি। কাব্য শুরু থেকেই একটু ইন্টোভার্ট হওয়ায় সবার সঙ্গে তেমন মিশুক নয়। আর ওর চাচারা সারাক্ষণ টাকা বানানোতে ব্যস্ত থাকায়; ঘরে ছেলে-মেয়েদের সময় কম দেন। একমাত্র মেঝ চাচ্চু কুহুকে অনেক সময় দেন। কুহু একমাত্র মেয়ে; এবং বহু আদরের-দোয়ার ফল বিধায় কুহু ভীষণ প্যাম্পার হয় সাদাতের কাছে। প্রায়শই সাদাত বউ-বাচ্চা নিয়ে কদিনের জন্যে নিজেকে মুক্ত করে ঘুরতে বেরিয়ে যান।

আজ কাব্য সাদাত চাচ্চুকে নিজের রুমে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হচ্ছিল। চুপচাপ তার সামনে বসে ভাবছিল. . কি কথা বলা যায়? অথচ তেমন কথাই কাব্য খুঁজে পাচ্ছে না আজ।

কথাটা তুললেন সাদাতই; বললেন;

— ক্রিকেট খেলতে যাবে নাকি?

কাব্য ব্যাডের দিকে চেয়ে বললো;

— হু; ছেলেপেলে রিকুয়েস্ট করছে কদিন ধরে। আর বাড়িতেই আছি; ভাবলাম খেলে আসি।

সাদাত বললেন;

— টিউশন কেমন যাচ্ছে?

— পড়াচ্ছি; একটা নাইনের একটা মেয়ে!

— ভালো; এই বয়সে ইনকাম করার চিন্তা আজকাল ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেখাই যায়না। কিন্তু মেয়েছেলে পড়াচ্ছো, সাবধানে থেকো। আজকাল ফেসবুকে কত ঘটনা হয়. . দেখি রোজ!

— ছাত্রী ভালো; ভদ্র ভীষণ। এক্সট্রা কথা বলে না।

তারপর দুজনেই চুপ। কাব্য কথা খুঁজে পাচ্ছে না বলার জন্যে: আর সাদাতও ভাতিজার সামনে কথাটা তুলবেন কিভাবে সেটা ভাবছেন। সাদাত কিছুটা দোনামনা করে এবার আসল কথা তুললেন;

— আসলে. .কুহুর এক্সামের রেজাল্ট তো ভালো না। আমাকে বলললো পড়া নাকি বেশি বুঝে না।

কাব্য শোনে বললো;

— ওকে ইউটিউব চ্যানেল দেখতে বলেছিলাম আমি।

সাদাত বললেন:

— আসলে. . কি বলব তোমাকে! মেয়েটা কাল আমার ঘরে এলো। ভীষণ তাড়াহুড়ো করে বললো. .ওকে টিউশন দিতে! আমি বললাম তোমার কাছে খবর নিতে। তুমি তো পড়েছোই! কিন্তু ও বললো. তোমার কথা।

কাব্য তাকিয়ে রইলো। সাদাত বললেন;

— একবার কি একটু সময় করে দেখিয়ে দিবে? মেয়েটা ভীষণ এলোমেলো আমার; পড়াশোনা করতেই চায়না। তুমি দেখিয়ে দিলে. .

সাদাত বলা শেষ করতেই; কাব্য ভীষণ স্বাভাবিক গলায় বলল:

— সমস্যা নেই আমার, চাচ্চু। সন্ধার পর আসতে বলবেন।

সাদাত খুশী হয়ে গেলেন! ভাতিজা এত ব্যস্ত জীবনেও কিছুটা সময় তার ফাঁকিবাজ মেয়েকে দিচ্ছে; মেয়েটা এইবার ভালো রেজাল্ট করুক. .তাই চান।

সাদাত হেসে; খুশী নিয়ে বললেন;

— আচ্ছা আমি বলবো ওকে। আর ওকে একটুও ছাড় দিয়ো না। আমি তো মুখে বকা দিতে পারিনা; ও কাঁদলে তোমার মেঝো মা আমার ভাত বন্ধ করে দেন। তুমি একটু বকা-ঝকা করে পড়িও!

কাব্য হেসে ফেলল! বলল;

— সমস্যা নেই। বকবো আমি।

সাদাতকে আশ্বস্ত হতে দেখা গেল। উঠে দাঁড়ালেন বিছানা থেকে। কাব্য নিজেও চেয়ার ছাড়ল! সাদাত বেরিয়ে যাওয়ার হঠাৎ বললেন;

— ভার্সিটির ব্যাডমিন্টন খেলায় নাকি ডিস্ট্রিক লেভেলে খেলতে যাচ্ছ?

কাব্য মাথা দুলাল:

— আমাকে ভার্সিটি থেকে ক্যাপেটন সিলেক্ট করেছে।

সাদাতকে খুশি হতে দেখা গেল; গদগদ গলায় বললেন;

— ‘ভালো; এই বয়সে এসবই তো দরকার। পড়াশোনা সারাজীবন থাকবে।

কাব্য মনেমনে হাসে! এই চাচ্চু-বাবারাই ওর খেলার প্রতি ঘোর-বিরোধী ছিলেন শুরুর দিকে। কাব্য একা লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ির গেইট পেরিয়ে খেলতে যেত আগে। ও বড় হওয়ার সাথে সাথে ওদের মধ্যে কত পরিবর্তন হয়ে গেছে।

সাদাত চলে গেলেন। কাব্য আবার দরজা লাগিয়ে ব্যাট-বল ঠিক করতে বসলো।

________

আজ কুহুর মনটাই খুশীখুশী। কাব্য ভাই ওকে আজ থেকে পড়াবেন। কুহু তার খুব কাছাকাছি থাকবে; পাশাপাশি থাকবে. .অবহেলায়; আলগোছে হাতটাও ধরবে একটু-আকটু! কাব্য ভাই যখন গম্ভীর স্বরে পড়াতে বসবেন; কুহু তখন হা করে তাকে গিলবে।

কাঁধে ব্যাগ; আর হাতে একটা খাতা নিয়ে হাসিখুশি কুহু কাব্যদের ফ্ল্যাটে কলিং বেল বাজাতেই শামিমা এসে দরজা খুলে দিলেন। কুহুকে দেখে গালভর্তি হেসে বললেন;

— আয় আয়! বইখাতা সবএনেছিস?

কুহু মৃদু হেসে কাঁধের ব্যাগটা দেখিয়ে বলল;

— এই দেখো; পুরো রেডি হয়েই এসেছি।

শামিমা দরজা লাগিয়ে কুহুর পিছু পিছু আসলেন। কুহু ড্রইং রাম পেরুতেই কাব্য গায়ে টিশার্ট গলাতে গলায় বাইরে বেরুলো।কুহুকে দেখে শান্ত গলায় সোফা দেখিয়ে বললো;

— বস; আমি আসছি।

কুহু সোফার দিকে চেয়ে বললো;

— ড্রইং রুমে পড়ব?

কাব্য ভ্রু কুচকাল;

— তো? আমার বেডরুমে ঢুকতে চাইসিস নাকি?

কুহু লজ্জায় পরে গেল, গাল লাল করে বলল;

— না না! তা কখন বললাম।

কাব্য চলে গেল নিজের রুমে। কুহু মুখটা হুতোম পেঁচার ন্যায় বানিয়ে পড়তে বসলো ড্রইং রুমে। কাব্য এলো; ওর হাতে ইঞ্জিনিয়ারিং এর কি একটা মোটা বই। এসে সোফায় সামনে বসে বইটা টেবিলে রাখল।

কুহু কথা বলতে চাইল শুরুতেই;

— কাব্. .

— ম্যাথ বই বের কর।

কাব্য ওকে থামিয়ে দিল! কুহু কি করবে আর? মাঝপথে কেউ ওর কথা থামিয়ে দিলে ওর ভালো লাগে না একটুও। তাই কাব্য ভাইকেও এখন আর কুহুর ভালো লাগছে না. .কি দরকার এমন বোরিং মানুষের সঙ্গে থেকে? কুহু কাব্য ভাইয়ের বউ হলে ওর কপালে আসলেই দুঃখ আছে. .শার্লিন সঠিকই বলে!

কুহু চুপচাপ; মেজাজ খারাপ নিয়ে ম্যাথ বই বের করলো! কাব্য একহাতে কলম নিয়ে খাতায় লিখে লিখে ম্যাথ বুঝিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু কুহুর ওদিকে কি মনটা আছে? সে তো গালে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে কাব্যের মুখের দিকে। কাব্য যখন জিজ্ঞেস করলো ;

— এটা বুঝেছিস? এই উপপাদ্য দিলে নিজে করতে পারবি?

ভালো করে কাব্যের কথা না শুনেই কুহু শুধু হ্যাঁ- তে ‘হ্যাঁ’ মেলাচ্ছে।

কাব্য দেখতে দেখতে আস্ত একটা চ্যাপটার শেষ করে তবেই থামল। এইবার কুহুর দিকে বই- খাতা এগিয়ে দিয়ে বললো;

— বাকিগুলো সেইম প্যাথ ফলো করে করে যাবি। নেক্সট ১৭.২ আর ১৮.২ করে দেখা এখন।

মানে? কুহুর কি এখন এসব ম্যাথ করা লাগবে? ও তো একদমই শুনেনি কিছু। এইবার কুহু মহা-বিপদে পরে গেল। কুহু আড়চোখে কাব্যকে দেখে। কাব্য আইপ্যাড এ কোনো একটা বিল্ডিংয়ের নকশা বানাচ্ছে। কুহু কি করবে; এলোমেলো প্রশ্ন করা শুরু করল;

—এটা কাদের বিল্ডিং কাব্য ভাই?

কাব্য নকশা আকছে; সেভাবেই জবাব এলো;

— এসাইনমেন্ট!

কুহু আবার বলা শুরু করল;

— আমাদের এমন একটা বিল্ডিং বানাবেন?

কাব্য এইবার আইপ্যাড থেকে মাথাটা তুলল। ভ্রু কুঁচকে কুহুর দিকে তাকাতেই; কুহু ভরকে গিয়ে বলল;

— করছি; করছি।

বলেই বই-খাতা নিয়ে বসে গেল! একবার খাতার পেইজে উল্টে আগের ম্যাথটা দেখে নিলো; কাব্য যেটা করে দিয়েছে। কি সুন্দর কাব্য ভাইয়ের লেখা; অনেকটা ইটালিক ভাবে লিখেন। কুহু জীবনেও পারবে না ইটালিক ফন্টে লিখতে।

আজ কাব্য ভাইকে দেখানোর জন্যে কুহু চুল সুন্দর করে ফ্রেঞ্চ বেণী করেছে, ঠোঁটে-গালে ব্লাশ টিন্ট ব্যবহার করেছে; পাকিস্তানি ড্রেসও পড়েছে! অথচ কাব্য ভাই ওর দিকে না তাকিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়েই ট্যাবে পড়াশোন করছেন। কেমন নিরামিষ একটা লোক!

কুহু ম্যাথ করে ফেলেছে। কাব্য ওর খাতা দেখছে. .ভুল মার্ক করে দিচ্ছিলো। কুহু একসময় গালে হাত দিয়ে হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে;

— আপনি যে রোজ নিজের রুমের বারান্দায় ব্যায়াম করেন; ওপাশের বিল্ডিংয়ের মেয়েগুলো বাজে বাজে ইঙ্গিত করলে আপনার অনেক ভালো লাগে, কাব্য ভাই!

কাব্য ট্যাব থেকে মাথা তোলে; অবাক হয়ে বললো;

— কোন পাশের মেয়ে?

কুহু চোখ-মুখ কুচকে বলল;

— বারান্দার পাশে সবুজ বিল্ডিং; দু তোলার মেয়েগুলো।’

কাব্য মনে করার চেষ্টা করে কিছু;

— ডোন্ট নো; খেয়াল করিনি আমি।

বলেই আবার ট্যাবে মন দিল। কুহুর মেজাজ খিঁচড়ে গেল। বলল;

— আলবাত ভালো লাগার কথাই তো! এইজন্যেই রোজ মেয়েগুলো আপনার জন্যে আমার কাছে চিঠি দেয়; নাম্বার চায়। আপনার তো কিছু না, মজা নিন আপনি; আর জ্বা লাই মরি আমি।’

কুহু বিড়বিড় করে শেষের কথা বলেছে; তাই কাব্য ওটা শুনেনি। কিন্তু শুরুর দিকের কথা শোনে ফেলে, কুহুর ভুলে ভরা খাতা থেকে মাথা তুলে কিছুটা রুষ্ট গলায় বললো;

— এসব আবার কেমন ভাষা? আমি কি ওদের দেখিয়ে ব্যায়াম করি? বারান্দায় না করলে আর কোথায় করবো?

কুহু মিইয়ে গেল; বললো;

— কেন? রুমে!

— ভিটামিন ডি বলে একটা জিনিস আছে, সূর্য লাগে ওটার জন্যে।

কাব্য মহা-বিরক্ত বোঝা যাচ্ছে। কাব্য আবার খাতা দেখছে। কুহু এইটা ম্যাথও ভালো করে করেনি। সবটায় ভুল। প্লাসের জায়গায় মাইনাস করে বসে আছে; ১৮০ জায়গায় ১৬০ লিখে রেখে দিয়েছে!

কাব্য বিরক্ত ভঙ্গিতে ভ্রু-ট্রু কুচকে খাতা দেখছে!

কুহু ওভাবেই কাব্যের দিকে চেয়ে অস্ফুটে বলার চেষ্টা করল;

— কিচ্ছু বুঝেন না আপনি! ওই মেয়েগুলো ওভাবে তাকালে আমার হিংসা হয়; জেলাসি হয়। আপনার কিছু হয়না; সব আমার হয়; আমার বুক পুড়ে যায়। কি নিষ্ঠুর আপনি!

কাব্য এইবার লাল মার্ক করা ভুলগুলো দেখিয়ে বিরক্ত হয়েই বলল;

— বুঝিস নি ম্যাথ বললি না কেন? কিসব ম্যাথ করেছিস এসব? এইবার লাস্ট বুঝিয়ে দেব; এরপর না পারলে মাইর দিব ধরে। মনোযোগ দে!

কাব্য কলম উঁচিয়ে শাসিয়ে উঠল! সবমিলিয়ে কুহুর এইবার ভীষন মন-খারাপ হয়ে গেল! ও মুখটা গোমরা করে বলে উঠল;

— আমি আজ আর ম্যাথ করবো না। বাসায় যাব।

বলে কুহু খাতাপত্র গোছাতে মন দিল।এলোমেলো ভাবে সবকিছু ব্যাগে পুড়ছে; ওভাবে একটা খাতার পেইজ একটু ছিঁড়েও ফেলল।

কাব্য চুপচাপ দেখল; একটু পর শুধু বললো:

—এক ঘন্টা হয়নি এখনো।’

না হোক! তবুও বাসায় যাবো আমি।—

বলে কুহু ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ওভাবেই হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল কাব্যদের ফ্ল্যাট থেকে। কাব্য বসে বসে শুধুই দেখলো কুহুর রাগী মুখটুকু!

শামিমা কুহুর জন্যে কোল্ড কফি বানিয়ে এনেছিলেন সবেই! মেয়েটা কোল্ড কফি আইসক্রিম দিয়ে এত পছন্দ করে! গ্লাস হাতে উনি ড্রইং রুম খালি দেখে অবাক হয়ে বললেন;

— কি রে? কুহু কই?

কাব্য বিরক্ত হয়ে আইপ্যাড বন্ধ করে বলল;

— চলে গেছে।

— ওমা! কেন গেল? এত দ্রুত তোদের পড়া শেষ?

শামিমা আরো অবাক হলেন!

কাব্য মায়ের প্রতি বিরক্ত হয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে আবার ফিরে তাকাল! অতিষ্ট গলায় বললো;

—- আশ্চর্য আম্মু! আমি কিভাবে জানব তোমার ভাতিজি কেন গেল? ওর ইচ্ছে হয়েছে পড়বে না; ফাঁকি দিবে; তাই বেরিয়ে গেল। সবকটা পাগল হচ্ছে দিনদিন! তোমাদের এসবের চক্করে আমিই একদিন পাগল হয়ে যাবো আম্মু, রিডিকিউলাস!

বলে কাব্য হনহনিয়ে নিজের রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিল! ওদিকে কোল্ড কফি হাতে শামিমা অবাক হয়ে ছেলের যাওয়াটুকু দেখে গেলেন। এ দুটোর আজ হলোটা কি?

#চলবে

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply